চারুলতা তোমার জন্য পর্ব-০৭

0
21

#চারুলতা_তোমার_জন্য
#৭ম_পর্ব

চারু স্থবির নয়নে তাকিয়ে রয়েছে তার সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির দিকে। সেই মুখশ্রী, সেই কণ্ঠ, সেই নমনীয়তা। শুধুমাত্র সময়ের চক্রটাই বদলে গেছে। যে মানুষটি একসময় তার হাসির কারণ ছিলো, আজ সে কেবলই এক দলা ধূসর স্মৃতি। সেই স্মৃতিটাকে আয়েশ করে কোনো এক বিকেলে উলটে পালটে কেবল দেখা যায়। চারুর হাতপা শক্ত হয়ে গেছে। চায়ের স্বাদটাও গলায় তিক্ত লাগছে। চারু নিজেকে সামলালো। কোনো উত্তর দিলো না। তার অনেক ব্যস্ততা, এমন ভঙ্গি করে সে পা বাড়ালো যাবার জন্য। তখনই পেছন থেকে তার হাত টেনে ধরলো মানুষটি। বিষন্ন স্বরে বলল,
“কথাও বলবে না চারু?”
“আমাদের কথা বলার সম্পর্ক কি আছে রুশান?”

রুশান থমকালো। তার চোখমুখের বিষন্নতা গাঢ় হলো। তবে হাতখানা ছাড়লো না। স্মিত স্বরে শুধালো,
“আজ আমাদের সম্পর্কটার শেষটা তুমি টেনেছিলে”

চারু মৃদু হাসলো। হাতটা ছাড়ালো রুশানের হাত থেকে। খুব হালকা গলায় বললো,
“তুমিও তখন আমাকে আকড়ে ধরো নি রুশান। আমাকে যেতে দিয়েছো”

চারু দাঁড়িয়ে রইলো না। তার অন্তস্থল ভার হয়ে আসছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। অবিচলিত থাকার অভিনয়টা হয়তো বেশিক্ষণ করা সম্ভব হবে না। এখনই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়বে পানি। তার দৃঢ় ব্যক্তিত্বটা হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। চারু দ্রুত পা চালালো। পেছনে একরাশ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তার অতীত।

****

শ্রাবণ ঘড়ি দেখছে। তার চোখে মুখে বিরক্তি। মেয়েটি কখন গিয়েছে। এখনো আসছে না। চা খেতে কত সময় লাগে! চারুকে যেতে দেওয়াটাই ভুল ছিলো। বলা উচিত ছিলো,
“আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকো”

বিরক্তিতে “চ” সূচক শব্দ করে উঠলো শ্রাবণ। ড্রাইভারকে কঠিন স্বরে বললো,
“মিস মেহেনাজকে খুঁজে নিয়ে আসো”

ড্রাইভার তৎক্ষণাৎ চারুকে খোঁজার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো। কিন্তু তাকে কোথাও যেতে হলো না। চারু চলে এসেছে। তাকে একনজর নিপুণভাবে দেখে নিলো শ্রাবণ। চারুর মুখ ফুলে গেছে। চোখ ভেজা, চোখের কাজল বিশ্রীভাবে লেপ্টে গেছে। নাক লাল হয়ে আছে। সাজসজ্জাটা এলোমেলো। মুখ ধুয়ে এসেছে সে। তবুও তার দৃষ্টির বিষন্নতা চিৎকার করে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। শ্রাবণ খুব শান্ত স্বরে শুধালো,
“আর ইউ ওকে, মিস মেহেনাজ?”

চারু মাথা নাড়ালো। শ্রাবণের চোখ ছোট ছোট হয়ে গেলো। মেয়েটি মিথ্যে বলছে। শ্রাবণ খুব একটা উদ্বেগ দেখালো না। ড্রাইভারকে বললো,
“মিস মেহেনাজের বাসায় চলো”

চারু একটু অবাক হলো। উদ্ভ্রান্ত কণ্ঠে শুধালো,
“অফিসে যাব না?”
“নাহ! মুড নেই”

আর কোনো কথা হলো না দুজনের মধ্যে। সারাটা রাস্তা চারু চুপ করে বসে রইলো। আকাশ মেঘলা। বৃষ্টি হবে হবে করছে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। নুয়ে পড়ছে রাস্তার ধারে চিকন গাছগুলো। চারুর বাড়ির সম্মুখে থামলো গাড়ি। চারু নামলো। ধন্যবাদ জানালো নতমস্তক হয়ে। শ্রাবণ তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে ততক্ষণ অবধি অপেক্ষা করলো যতক্ষণ চারু বাড়ির ভেতর চলে না যায়। চারুর ঘরের পর্দাটা এখনো দেওয়া। শ্রাবণ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর গম্ভীর স্বরে আদেশ দিলো ড্রাইভারকে,
“চলো”

****

চারু ঘরে আসতেই গা এলিয়ে দিলো বিছানাতে। তার শরীর চলছে না। মনটা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে আছে। চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে বারেবারে। রুশান, রুশান আখতাব। ছেলেটি তার জীবনের এক বিশাল অংশ জুড়ে ছিলো। তার সাথে ভয়ংকর প্রেম ছিলো চারুর। ভয়ংকর প্রেম যে প্রেম মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণ নাস্তানাবুদ করে দিতে পারে।

তাদের পরিচয় হয়েছিলো কলেজে। রুশান চারুর সমবয়সী। তাদের প্রথম কথা বলা শুরু হয়েছিলো কোন একটা নোটের বাহানায়। চারু মনোযোগী ছাত্রী। প্রথম বেঞ্চে বসে সুন্দর করে নোট করা ছিল তার অভ্যাস। যেমন তেমনভাবে নোট সে করতো না। একেবারে সুন্দর করে নানা রঙ্গের কলম দিয়ে হেডলাইন দিয়ে নোট করতো সে। তার কাছে থাকতো নানা রঙ্গের কলম। সেই কলম ছড়িয়ে রাখতো বেঞ্চের উপর। সবগুলোর মুখটি খোলা। তার মনোযোগ নিবদ্ধ স্যারের দিকে। স্যারের বলা এক একটা শব্দ সে খাতায় তুলতো। তার এই স্বভাবের জন্য তার নাম হলো নোটকুমারী। রুশানের বন্ধুমহল ছিলো পৃথিবী খ্যাত ফাজিলের দল। তারা ক্লাসে কলমও কখনো আনতো কিনা সন্দেহ। একটা খাতাই থাকতো সবার সামনে। সেই খাতা ঘুরে ঘুরে নয় জনের সামনে যেত। অথচ স্বভাবের একেবারে অমিল দুটো মানুষ একে অপরের প্রেমে হাবুডুবু খেলো। যে সে হাবুডুবু না। আকণ্ঠ ডুবে যাওয়া। আবেগের জোয়ারে একে অপরকে ভাসিয়ে দেওয়ার মতো প্রেম।

প্রেমের সূত্রপাত যে কবে হয়েছে সেটা হয়তো চারুও বলতে পারবে না। রুশান হুট করে একদিন তার পাশে এসে বসলো, মুখে হাত দিয়ে বললো,
“এই নোটকুমারী, ক্যাশ ফ্লোটা বুঝিয়ে দাও”

চারু হতভম্ব চেয়ে রইলো। তারপর চোখমুখ কুঞ্চিত করে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“স্যার যখন পড়াচ্ছিলো, কি করছিলে তখন?”
“তোমাকে দেখছিলাম। আচ্ছা তুমি এতো সুন্দর কেনো বলতো? আমি তো স্যারের দিকে কন্সেন্ট্রেটই করতে পারি না। এতো সুন্দর হতে কে বলেছে তোমাকে? আমি জগৎ চিন্তা ছেড়ে তোমাকে দেখি শুধু”

চারু লজ্জা পেলো। ঠোঁটকাটা ছেলে রুশান। এর সাথে কথা বলে লাভ নেই। তাই সে তাকে পড়াটা বুঝিয়ে দিলো। রুশান তার দিকে চেয়ে রইলো। বড্ড বেলেহাজ পুরুষ। দৃষ্টি হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়। চারু ক্যাশ ফ্লো বুঝিয়ে বলল,
“বুঝেছো?”
“তোমার নাম্বারটা দিবে? বাড়ি যেয়ে যদি ভুলে যাই তাহলে ফোন করে ক্লিয়ার হব”
“আমি কাউকে নাম্বার দেই না”
“ছিঃ ছিঃ এতোটা কিপ্টে হতে হয় না। নাম্বার চেয়েছি, কিডনি নয়। অবশ্য আমি কিডনি চাইবোও না। চাইবো শুধু তোমার হৃদয়। দিবে আমাকে?”

অশ্লীল ছেলে, চারু চোখ গরম করে চাইলো। রুশান ভ্রুক্ষেপ দেখালো না। তার চোখের দৃষ্টি আগের মতো। সে নির্লজ্জের মতো চারুর গাল টিপে দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
“এতো রেগো না। রাগলে আমার তোমাকে চুমু খেতে ইচ্ছে করে। সবার সামনে চুমু খেলে তুমি লজ্জা পেয়ে যাবে”

চারুর দৃষ্টিতে কাঠিন্য বাড়লো। রুশান সেই দৃষ্টিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেলো। ছেলেটা কোথা থেকে তার নাম্বার জোগাড় করলো চারু বুঝতে পারলো না। প্রথমে হোয়াটস এপে খোঁচাখোচি শুরু হলো। বড্ড অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলতো ছেলেটা। একদিন বললো,
“এই চারু, তোমাকে চুমু খেতে খুব ভালো লাগছে। হৃদয় জ্বলছে”

চারু সেই ম্যাসেজ দেখে মাথায় হাত দিয়ে ফেললো। তারা চুমু কখন খেলো? সে উত্তর দিলো,
“কি অসভ্য কথা? আমাকে চুমু কখন খেলে”
“এই তো মাত্র”
“হ্যা?”
“ভয় পেলে। যাক ভয়ের জন্য কথা তো বললে। ভয় পেও না। আমি সিগারেটের ফিল্টারে তোমার নাম লিখে তা ঠোঁটের ফাঁকে রেখেছি। অর্থাৎ আমি তোমাকে ঠোঁটের ফাঁকে রেখেছি। সেই অর্থে তো তোমাকে চুমুই খাচ্ছি”

চারু হেসে ফেললো। নির্লজ্জ ছেলেটার এই অদ্ভুত অদ্ভুত কথার মায়ায় সে নাস্তানাবুদ হলো। একটা সময় এই কথা বলা অভ্যাস হয়ে গেলো। অভ্যাস কখন দুজনের মাঝে প্রেমের সঞ্চার করলো সেটার খোঁজ কেউ রাখে নি। নোটকুমারী আকণ্ঠ প্রেমে ডুবলো ফাজিলের সরদারের। ধীরে ধীরে প্রেমের বেড়াজালে নিজেকে অর্পন করেছিলো তারা। পৃথিবী নিয়ে ভাবতে নারাজ দুজন। তাদের বিস্তার তখন নিজেকের আপন কল্পনামহলে। সেই কল্পনামহলে চির ধরলো। কালবৈশাখী তীব্র ঝাপটা এসে তাদের প্রেমের সেই সুন্দর মুহূর্তগুলো ছিন্নভিন্ন করে দিলো।

এক গোধুলীতে অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলো। খুব দ্বিধান্বিত হয়ে ফোন ধরলো চারু। ওপাশ থেকে খরখরে এক মহিলার কণ্ঠ,
“এটা কি চারুর নাম্বার?”
“জি আমি চারু বলছি”
“আমি রুশানের আম্মা বলছি”

চারু থতমত খেলো। উত্তেজনা তার মস্তিষ্ককে শূন্য করে দিলো। সে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো যেন। আমতা আমতা করে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম, আন্টি”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম”

চারু চুপ করে রইলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। রুশানের আম্মু একটু থেমে বললো,
“দেখো চারু, আমার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলার ইচ্ছে নেই। যা বলবো সোজাসাপ্টা। রুশান আমার বড় ছেলে। সে আমার অহংকার। আমি অনেক স্বপ্ন দেখি তাকে নিয়ে। তাই আমি চাই না, সে এখন এসব নোংরামীতে জড়াক। প্রেম করার জন্য জীবন পরে আছে। আগে ভবিষ্যত। রুশান ফেলের পর ফেল করছে। আমার ছেলে এতো খারাপ ছাত্র নয়। আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না সমস্যা কোথায়! অবশেষে বুঝলাম ঝামেলা কোথায়? তুমি আমার ছেলের ভবিষ্যত নষ্ট করছো। তাই আমি চাই তোমরা আর যোগাযোগ না কর। বন্ধু আমাদেরও ছিলো। কিন্তু পড়াশোনা আগে। তোমার পাল্লায় আমার ছেলের ভবিষ্যৎ, ক্যারিয়ার সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই না। আমার ছেলে গোল্লায় যাবে আমি সেটা দেখবো এমনটা হবে না”

মহিলার এমন কথায় হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলো চারু। ছোটবেলা থেকে তার আত্মসম্মান প্রবল। রুশানের রেজাল্ট খারাপের সাথে চারুর কোনো যোগসূত্র নেই। সে তো নিজেই তার ভবিষ্যত সম্পর্কে অসচেতন। ফলে রুশানের আম্মার কথাগুলো প্রবলভাবে আত্মসম্মানে আঘাত হানলো চারুর। প্রেমের গভীরত্বের মধ্যেও ফাটল ধরলো। রুশানকে বলতেই সে স্বাভাবিক স্বরে বলল,
“মায়ের কথায় কান দিও না”
“উনি আমাকে যা নয় তাই বলবে আমি কান দিব না?”
“না দিবে না”
“উনিও কিন্তু ভুল কিছু বলেন নি। তুমি যদি আজ সুন্দর করে পড়াশোনা করতে তাহলে উনি আমাকে কথা শুনাতেন না”
“চারু, আমি দুটো প্রেমের কথা বলতে আর শুনতে এসেছি। ঝগড়া করতে আসি নি”
“এসেছোই কেনো? আমি তোমাকে কখনো বলি নি আমার প্রেমে পড়ো”
“এখন প্রেমে পড়ে অন্যায় হয়েছে”
“হয়েছে, একশবার হয়েছে। আর তোমার আম্মু আমার নাম্বার কোথায় পেলেন। উনি এভাবে আমাকে কঠিন কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন তোমার জন্য। তুমি নিজের ভবিষ্যতের প্রতি অসচেতন। অথচ দায়ভার আমার নিতে হচ্ছে। কেন?”

রুশান নিরুদ্বেগ স্বরে বললো,
“এখন কি প্রেম করতে হলেও ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে”
“তুমি ফাজলামি ছাড়, রুশান। আমি সিরিয়াস। আমার অসহ্য লাগে তোমার ফাজলামি। তোমার আম্মু এখনই আমাকে অপছন্দ করছেন না। আমাদের ভবিষ্যৎটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে চিন্তা করেছো”
“ধ্যাত শালা, একটু দুদন্ড প্রেম করবো তাও শান্তি নেই। ফ্যাচর, ফ্যাচর। এতো খারাপ লাগলে আমার সাথে প্রেম করেছো কেন? অসহ্য”

রুশানের রুক্ষ্ণ কথায় আহত হলো চারু। বিষন্ন কণ্ঠে বললো,
“ভুল করেছি”

সম্পর্কের বিচ্ছেদটা সেদিন ঘটে নি। ঘটেছিলো আরোও পরে। যখন তিক্ততা শেখরে উঠে গিয়েছিলো। রুশান তাকে আটকানর প্রচেষ্টাও করে নি। বিচ্ছেদটা যত সহজ ভেবেছিলো ততটা সহজ ছিলো না চারুর জন্য। মায়ার বেড়াজাল তার হৃদয়কে প্রতিমুহূর্তে কাঁদাতো। সেই কান্নাগুলো সাক্ষী এই চার দেওয়াল। চারু নিজেকে ভাঙ্গতে দেয় নি। সকলের সম্মুখে স্বাভাবিক থেকেছে। কিন্তু আড়ালে নিজের দুঃখগুলোকে গড়লের মতো গিলতে হয়েছে তাকে। আজও তাই হচ্ছে। অতীতের সেই স্মৃতিগুলো আবার তার ক্ষত হৃদয়কে আঘাত করছে। চোখ ভিজে আছে চারুর। চোখে রাজ্যের ঘুম। কখন ঘুমিয়ে পড়লো হুশ রইলো না।

****

শাওয়ার ছেড়ে একটা সাদা টিশার্ট গায়ে দিলো শ্রাবণ। চুল মুছে নি। পানি গড়িয়ে পড়ছে ঘাড়, গলা বেয়ে। রুমে একটা মৃদু পাওয়ারের বেগুনী আলো। আলো সহ্য হচ্ছে তার। সে এসে তার রকিং চেয়ারে বসলো। কোলে ল্যাপটপটা রাখলো। তখনই ফোন বেজে উঠলো কর্কশ স্বরে। বিরক্তি নিয়েই ফোন ধরলো শ্রাবণ। ওপাশ থেকে শুনলো কিছু। শ্রাবণ সহজ গলায় বললো,
“যা ইচ্ছে কর”

ফোন রেখে দিল। ল্যাপটপের ডেস্কটপে চারুর একটি ছবি। সে হাতে ভর দিয়ে চোখ বুজে আছে নিজ টেবিলে। ছবিটার দিকে একনয়নে তাকিয়ে রইলো শ্রাবণ। তার দৃষ্টির ধার কমলো, ছলকালো এক নেশা, ঘোর। একা একাই বললো,
“তুমি কাঁদছিলে কেন চারুলতা? কার জন্য?”

*****

শুক্রবার দিন, চারু আজ বাসায়। অফিস ছুটি। শ্রাবণও তাকে কোনো কাজে ডাকে নি। জল্লাদ শুক্রবার ব্যস্ত থাকবে তাই চারুকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে যেন তাকে ফোন না দেয়। চারু মনে মনে বললো,
“তোকে আমি ফোন দিব, খেয়ে কাজ নেই আমার?”

এরমধ্যেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। মা এসে জানালেন,
“আজ বাসায়ই থাকবি তোকে দেখতে আসছে”

চারু না করতে পারলো না। মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন সব বাবা-মার থাকে। চারুর বাবা-মা ব্যতিক্রম নন। ছেলেপক্ষ নাকি চারুকে এককাপড়ে নিয়ে যাবেন। ছেলে খুব ভালো চাকরি করে। বাবা-মা খুবই আনন্দিত। চারু প্রথমে নির্বিকার থাকলেও বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না। কারণ ছেলেটি আর কেউ নয় বরং রুশান। চারু হতবাক হলো। তার মনে হলো মাটি কাঁপছে। এখনই সে পড়ে যাবে। রুশানের মা নিজ হাতে তাকে আংটি পড়ানোর জন্য এসেছেন। চারু এবং রুশানকে যখন আলাদা কথা বলার সুযোগ দেওয়া হলো। চারু কঠিন স্বরে বললো,
“তুমি এখানে কি করছো?”
“তুমি বলেছিলে না, আমি তখন তোমাকে আটকাই নি। হ্যা, আটকাই নি কারণ আমার সেই যোগ্যতা ছিলো না। আজ আমার সেই যোগ্যতা আছে। তাই আজ তোমাকে আটকাতে চাই। এখন কেউ তোমাকে বলবে না তুমি আমার জীবন নষ্ট করছো”

চারু তাকিয়ে রইলো রুশানের দিকে। হৃদয় কাঁপছে তার। চোখ ভিজে যাচ্ছে। খুব আনন্দে হৃদয় ভরে উঠেছে যেন। সে অপেক্ষায় ছিলো রুশানের? হয়তো ছিলো।

****

চারুকে খুব হাসিখুশি লাগছে। শ্রাবণ স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার সামনে একটা মিষ্টির প্যাকেট। দামী মিষ্টি। সে মিষ্টি খায় না। চারুলতা সেটা জানে। ফলে হালকা স্বরে বললো,
“এগুলো কি?”
“আমি জানি আপনি মিষ্টি খান না স্যার। কিন্তু আমি চাই আপনি মিষ্টিটা খান। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে স্যার। এই মিষ্টি তার”…………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি