চারুলতা তোমার জন্য পর্ব-০৯

0
22

#চারুলতা_তোমার_জন্য
#৯ম_পর্ব

চারু বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। মস্তিষ্ক কাজ করছে না। কি শুধাবে বুঝতে পারছে না। শ্রাবণের তীক্ষ্ণ, ধারালো দৃষ্টি সর্বাঙ্গে ছ্যাকা দিচ্ছে। বারবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে যেন বলে দিচ্ছে,
“তুই বিশ্বাসঘাতক”

অথচ চারু কিছুই করে নি। শ্রাবণের হয়ে কাজ করতে শত আপত্তি থাকলেও চারু নিষ্ঠাবান। সে কখনো কাজে ফাঁকি দেয় নি। শ্রাবণের কম অত্যাচার তো সহ্য করে নি সে। এই কোম্পানির সব ডিল, কোটেশন, টেন্ডার সবকিছুই তার হাতের উপর থেকে যায়। কমদিন তো চাকরি করছে না। অথচ সে একবারও কোনো খারাপ পন্থা অবলম্বন করে নি। তবে এই অপবাদ কেন? চারু অপমান গিলে দরাজ স্বরে বললো,
“আমি এক টাকাও খাই নি স্যার, না আমি আমাদের কোটেশনের কথা কাউকে ফাঁস করেছি। আমি হয়তো অর্থনৈতিক মন্দায় থাকতে পারি কিন্তু লোভী বা দূর্নীতিবাজ নই”
“আচ্ছা?”

শ্রাবণের ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি। চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে এলো সে। চারুর মুখোমুখি এসে টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। তাচ্ছিল্য ভরে বললো,
“তাহলে আমাকে এই ছবিটার ব্যাখ্যা দিতে পারবেন”

বলেই একটি ছবি টেবিলের উপর রাখলো। চারু কৌতুহল বশত ছবিটা দেখতে এগিয়ে গেল। ছবিতে সে, রুশান এবং রুশানের বন্ধু সরব। তিনজনার হাস্যজ্জ্বল মুখ। যে দেখবে সেই ভাববে না জানি কত বছরের পরিচিতি। অথচ সেদিনই প্রথম পরিচয় সরবের সাথে। ছবিটা কোটেশনের আগের বিকেলের। রুশান আগ্রহ করে পরিচয় করাতে চাইলো তার বন্ধুদের সাথে। সরব ছাড়াও সেখানে অনেক স্কুল বন্ধু ছিলো রুশানের। এই ছবি থেকে মোটেই প্রমাণিত হুয় না সে কোম্পানির কনফিডেনশিয়াল তথ্য অন্যকে বলছে। চারুর উৎকুণ্ঠা বাড়লো। সে উদ্বিগ্ন, কম্পিত স্বরে বললো,
“গত সপ্তাহে আমি এবং বাগদত্তা একটি রেস্টুরেন্টে তার কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাই, ছবিটা সেখানের। এ থেকে কিছু প্রমাণ হয় না”
“এই ছেলেটাকে চিনেন আপনি?”
“আমার বাগদত্তার বন্ধু, সরব নাম। একই স্কুলে পড়েছে তারা”
“টেন্ডারপ্রাপ্ত এ.এন কোম্পানিতে সে চাকরিরত। ওদের ম্যানেজিং টিমের মেম্বার”

কথাটা শুনতেই পিলে চমকালো চারুর। এ তথ্যটা তার জানা ছিলো না। চারুর মস্তিষ্ক কাজ করছে না। সে অধৈর্য্য হয়ে বলল,
“তাতে কি প্রমাণ হয়?”
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফোরমেশন, কোটেশনটা তারা শেষমূহুর্তে বদলেছে। রিসেন্টলি আপনার একাউন্টে পাঁচলক্ষ টাকাও ঢুকেছে। এবার কি ব্যাখ্যা করবেন?”
“স্যার এই টাকাটা আমার বাগদত্তাই রেখেছে। এই শুক্রবার আমাদের বিয়ে। দেনমোহরের টাকা সে আমার একাউন্টে এখনই দিয়েছে”
“কত মিথ্যে বলবেন আপনি?”

চিৎকার করে উঠলো শ্রাবণ। তার চিৎকারে চারুর সাথে সাথে শান্ত, বদ্ধ ঘরটাও কেঁপে উঠলো। নিস্তব্ধতাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে বললো,
“ইউ কুড হ্যাভ টোল্ড মি ইফ ইউ নিডেড মানি। আমার সাথে ধোকাবাজি কেন করতে গেলেন? এই টেন্ডারের পেছনে আমাদের পুরো কোম্পানির কত পরিশ্রম ছিলো। এক মাস ধরে আমরা এই টেন্ডারের জন্য কাজ করছি। না জানে কতবার মিটিং করেছি, আর আপনি? এ.এন.এম কোম্পানি এভরি ম্যাটেরিয়ালের পার ইউনিটে আমাদের থেকে একটাকা কম রেখেছে। আপনি এবার আমাকে বুঝান, এটা কো-ইন্সিডেন্স কি করে হয়? তারা ঠিক ফাইনাল সময়ের আগে নিজেদের কোটেশন বদলালো, আর ঠিক আগের দিন আপনি তাদের ম্যানেজিং টিমের একজনের সাথে আপনি মিট করেছেন। টেন্ডারের দিন বিকালে আপনার একাউন্টে টাকা ঢুকছে, সব কো-ইন্সিডেন্স?”
“স্যার আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি কিছু করি নি”
“ওকে, আমি আপনাকে তিন-দিন সময় দিচ্ছি। আপনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলে আই ইউল ফরগিভ ইউ। বাট যদি না পারেন, তবে জালিয়াতির শাস্তি পেতে প্রস্তুত থাকবেন”

চারুর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেন। মাথা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তরতর করে ঘামছে সে। চাকরিটা চলে গেলে কি হবে সেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই ঝিমিয়ে আসছে হাত পা। তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই যে সে জালিয়াতি করে নি। অথচ শ্রাবণের কাছে যথেষ্ট কারণ আছে তাকে অবিশ্বাস করার। শ্রাবণের ক্রুর নয়নে শুধু নিজের প্রতি অবিশ্বাস ই দেখতে পেলো যেন চারু। নত মস্তকে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। তিনদিনে কি করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে সে?

****

ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে আছে চারু। মনটা বড্ড অশান্ত। আকাশে মেঘ জমেছে। বাতাস ছেড়েছে। একটু পর ধরিত্রী ভিজে যাবে অসময়ের বর্ষণে। অথচ চারু নিরুত্তাপ। অফিস থেকে ফিরেছে সাতটা নাগাদ। গোসল করেছে অনেক সময় ধরে। মা খেতে বললেও তার ক্ষুধা নেই। বাড়িতে ফুপুরা এসেছে। আগামী শুক্রবার বিয়ে। বিয়ের আয়োজন পুরোদমে চলছে। অথচ চারুর কিছু ভালো লাগছে না। রুশানের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। সে ফোন ধরছে না। হাতে সময় মাত্র বাহাত্তর ঘন্টা। সে নিজেকে কি করে নির্দোষ প্রমাণ করবে—কিছুই মাথায় আসছে না। রুশান যখন তার একাউন্টে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলো তখন ই নিষেধ করা উচিত ছিল। দেনমোহরের টাকা পরে দিলেও সমস্যা ছিলো না। চারু আবার ফোন দিলো রুশানকে। এবার ফোন ধরলো সে। সাথে সাথেই চারু চটে প্রশ্ন করলো,
“কোথায় ছিলে তুমি? কখন থেকে ফোন করছি তোমাকে”

ওপাশ থেকে নিষ্পৃহ স্বর,
“ব্যস্ত ছিলাম। সামনে বিয়ে, কাজের কি অভাব আছে! বল কি করবে?”
“তুমি কোথায় এখন?”

রুশান চুপ করে গেলো। আশেপাশে সোরগোল শোনা যাচ্ছে। রুশান একটু একরোঁখা স্বরে বললো,
“কি কাজ সেটা বল”
“রুশান, আমি মস্তবড় বিপদে পড়ে গেছি তোমার বন্ধু আর তোমার জন্য। আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি। আমার উপর জালিয়াতির মামলা অবধি হতে পারে”
“কি বলছো এসব”
“আমি ঠিক বলছি। বসের ধারণা আমি কোটেশন লিক করেছি। এর বিনিময়ে আমি তাদের কাছ থেকে টাকা খেয়েছি। আমার কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না। প্লিজ হেল্প মি আউট। আমার ইনোসেন্সের কোনো প্রমাণ নেই আমার কাছে। তোমার বন্ধু সরব যে টেন্ডারপ্রাপ্ত কোম্পানিতে চাকরি করে সেটা আমি কি করে জানবো? তুমি প্লিজ সরবের সাথে আমাকে কন্ট্যাক্ট করার ব্যবস্থা করে দাও। একমাত্র ওই আমাকে সাহায্য করতে পারবে”

চারুর কণ্ঠ ধরে আসছে। কথা গোছাতে কষ্ট হচ্ছে। মাথা কাজ করছে না একেবারেই। ওপাশের মানুষটিকে চিন্তিত লাগলো না। বরং নিরুত্তাপ স্বরে বললো,
“আচ্ছা, দেখছি কি করা যায়?”
“দেখছি মানে কি? ইউ হ্যাভ টু ডু সামথিং। শ্রাবণ তালুকদার আমাকে ছেড়ে দিবেন না। উনার জায়গায় আমি হলে আমিও এমন স্টেপ ই নিতাম। একটা র‍্যাটকে তো কোম্পানিতে রাখা যায় না। প্লিজ রুশান ডু সামথিং”
“এখানে আমি কি করতে পারি চারু?”
“মানে কি? আমি এত বড় ঝামেলায় পড়েছি আর তুমি বলছো আমি কি করতে পারি? এখানে আমার মান সম্মানের ব্যাপার। বিনা দোষে আমার চাকরি যাবে। আমার উপর মামলা হতে পারে। ইউ নো হাউ কর্পোরেট ওয়ার্কস। তুমি এতোটা গা ছাড়া ভাব কি করে দিচ্ছো? সরব কিন্তু তোমারই বন্ধু। সেদিন তুমি জোর না করলে আমি কখনোই যেতাম না”
“তুমি নিজের কেয়ারলেসপনার দায়ভার আমার উপর চাপাচ্ছো? সিরিয়াসলি চারু?”

চারু স্তব্ধ হয়ে গেলো। রুশানের এমন আচরণ অকল্পনীয় ছিলো। বিশাল বড় ধাক্কা লাগলো যেন। ওপাশ থেকে রোষমিশ্রিত স্বর কিঞ্চিত নরম হলো। রুশান একটু থেমে বললো,
“সরি চারু, আসলে আমি অনেক প্রেসারে আছি। প্লিজ মাইন্ড করো না। আমি সরবের সাথে কথা বলছি। ডোন্ট ওয়ারি”

চারু উত্তর দিল না। রুশান আবার বললো,
“সরি চারু, আমি বুঝতে পারছি তোমার অবস্থা। একটু সবুর কর। আমি সরবের সাথে কথা বলে তোমাকে জানাচ্ছি”

রুশান ফোন কেটে দিলো। চারু এখনো পুতুলের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে। মনটা কেমন ঝিমিয়ে এসেছে। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। মনে হচ্ছে একটা শক্ত কাঁধ যদি তার পাশে থাকতো তাহলে হয়তো এতটা অসহায় লাগতো না। চারু সর্বদা আত্মনির্ভরশীল মেয়ে। পৃথিবীতে তুমি একা এসেছো, যাওয়ার সময়ও তোমাকে একাই যেতে হবে। পুলসিরাত একা পার হতে হবে, কবরের প্রশ্নের সম্মুখীন একাই হতে হবে; তাহলে অন্যের উপর ভরসা করে কি লাভ! অথচ আজ মনে হচ্ছে একজন মানুষ খুব প্রয়োজন। যখন মন ঝিমিয়ে আসবে, নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে যাবে, সব দিক অন্ধকার হয়ে যাবে—সেই মানুষটি বলবে,
“আমি আছি”

****

শ্রাবণের সামনে যেতেও লজ্জা লাগছে যেন চারুর। কোনো এক অজানা কারণে নিজেকে দোষী মেনে নিয়েছে সে। কারণ তার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার কোনো উপায় নেই। সরব অফিসের কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছে বলে জানিয়েছে রুশান। কোনো উপায়ে সরবের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না চারু। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম কোনো স্থানে সে নেই। দুদিন চলে গেছে চোখের পলকে। আজ তৃতীয় দিন। চারু নতমস্তক শ্রাবণের সামনে গেলো। টেবিলে একটি খাম রাখলো। শ্রাবণ চোখ তুলে পূর্ণদৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। গম্ভীর স্বরে বললো,
“এটা কি মিস মেহেনাজ?”
“আমার রেজিগনেশন লেটার”
“হোয়াট?”

চারু ধরা স্বরে বললো,
“আমি কোনো দোষ করি নি স্যার, কিন্তু নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার কোনো ওয়ে আমার নেই। পাঁচ লক্ষ টাকাটা সত্যি আমার বাগদত্তাই আমাকে দিয়েছে। এই যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট। এটা আমার বাগদত্তার একাউন্ট। সরবকে আমি সেদিনই কেবল দেখেছিলাম। ও এখন চট্টগ্রামে। নয়তো আমি ওর সাথে কথা বলে সব সর্টআউট করে নিতাম। আমি কোম্পানি থেকে লোন করেছি, আমার চাকরির এখনো মেয়াদ ফুরায় নি। আমাকে জরিমানা দিতে হবে। আমি কষ্ট করে হলেও দিয়ে দিব। শুধু প্লিজ আমার নামে মামলা দিবেন না। আমি জানি আমি অহেতুক আবদার করছি। কিন্তু দয়া করে আমার নামে মামলা দিবেন না”

শ্রাবণ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। চারু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। কথা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। নাক টানছে একটু পর পর। শ্রাবণের দৃষ্টি নরম হলো। চেয়ার ছেড়ে তার সামনে দাঁড়ালো। একটি রুমাল এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ইউ নো, মিস মেহেনাজ, ইউ আর আ ডাউনরাইট ফুলিশ ওম্যান”

চারু ফ্যালফ্যালিয়ে চেয়ে রইলো। রুমালটা সে নিলো না। শ্রাবণ তার হাতে রুমালটা দিয়ে বললো,
“চোখ মুছুন, বিশ্রী লাগছে আপনাকে”

চারু দ্রুত রুমালটা নিল। শ্রাবণ নির্বিকার চিত্তে তাকিয়ে রইলো। বুকে হাত বেঁধে গম্ভীর স্বরে বললো,
“প্রথমে আমার আপনার উপর খুব মেজাজ খারাপ হয়েছিলো। কিন্তু তারপর ভাবলাম, যদি কোটেশন লিক করার ইচ্ছে থাকলে আপনি কোম্পানি থেকে লোন করতেন না। আমি ভেবেছিলাম আপনি এতো বুদ্ধিমান নিজেকে দাবি করেন হয়তো নিজ থেকেই সবটা ধরতে পারবেন। বাট আমি ভুল”
“মানে?”
“মানে টা স্পষ্ট, আপনি কোটেশন লিক করেন নি। বাট আপনার বাগদত্তা করেছে। রিসেন্টলি পাঁচদিন হলো সে কোম্পানি সুইচ করেছে। তাও কোন কোম্পানি জানেন?”

চারু হতভম্বের মত তাকিয়ে রয়েছে। মুখে কোনো কথা নেই। শ্রাবণ তার মোবাইলটা চারুর সম্মুখে ধরলো। একটা ভিডিও যেখানে স্ক্রিন রেকর্ড করা সরব এবং রুশানের চ্যাট বক্সের। রুশান সেখানে সরবকে বলছে,
“যদি আমি তোকে কোটেশন ম্যানেজ করে দি, আমাকে তোদের কোম্পানির প্লেসমেন্ট আর পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে”
“ধরা পড়লে”
“চারু ফাঁসবে”

চারু মাথা ঘুরাচ্ছে, পা দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। রুশান এমন জঘন্য কিছু করতে পারে তা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। শ্রাবণ গম্ভীর স্বরে বললো,
“এই চ্যাট অরিজিনাল। একচুয়ালি আমার এক বন্ধু একটা স্প্যাম লিংকের মাধ্যমে সরবের মোবাইলে এক্সেস নেয়। সেই এক্সেস এর দাঁড়াই এই সব প্রুফ কালেক্ট করি আমরা। আই এম সরি ফর মিস বিহেভিং। বাট দোষটা আপনারও। এতো গোপনীয় তথ্য আপনি আমরা মোবাইলে রেখেছেন। আর মোবাইলের এক্সেস আপনার বাগদত্তাকে দিয়েছেন। সে শুধু আপনাকে ব্যবহার করেছে”

চারু নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে। চোখ থেকে শুধু পানি পড়ছে তার। মস্তিষ্ক কাজ করছে না। রুশান কি করে পারলো তাকে ঠকাতে। চারু পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইলো কিছুসময়। তাকে বিধ্বস্তের মতো লাগছে। শ্রাবণ তাই ধীর স্বরে বললো,
“আমার মনে হয় আপনার নিজের বাগদত্তার সাথে কথা বলা উচিত”

****

দিনের আলো শুষে গিয়ে নিকষ আলো আঁধার নেমেছে ধরনীতে। একটা ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছে চারু। রুশানকে খুঁজতে তার নতুন অফিসে গিয়েছিলো। কিন্তু দারোয়ান জানিয়েছে সবাই চলে গেছে। রুশানের বাসায় ফোন করাতে তার ছোট ভাই ধরেছে। সে জানিয়েছে রুশান তার বন্ধুদের সাথে আছে। রুশান ফোন ধরছে না। রুশানের ভাইয়ের কাছ থেকে এক বন্ধুর নাম্বারও চেয়ে নিয়েছে। বন্ধুকে ফোন দেওয়াতে সে রুশান তার সাথে নেই। হয়তো ক্লাবে আছে। রুশান প্রায়ই ক্লাবে যায়। রুশান ক্লাবে যায় ব্যাপারটা একেবারেই অজানা ছিলো চারুর। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। রুশানকে একেবারে অচেনা একটি মানুষ লাগছে যেন। আর কত সত্য আছে যা চারু জানে না?

ক্লাবে প্রবেশ করবে কি না দ্বিধায় মন পিষছে। এমন জায়গায় এই প্রথম এসেছে চারু। কেমন অস্বস্তি লাগছে। তবুও রুশানের মুখোমুখি সে হবে। রুশান তাকে কিভাবে ঠকালো? বিশ্বাস কি এতোটাই ঠুংকো? ইচ্ছে হলো ভেঙ্গে দিলাম! তাই অস্বস্তিগুলো গিলেই প্রবেশ করলো সে। জোরে গান চলছে, মানুষ পাগলের মতো নাচছে, শিশার গন্ধে গমগম করছে জায়গাটা। মাতাল, অর্ধমাতাল মানুষগুলোর ভিড় ঠেলে খুঁজতে লাগলো সে রুশানকে। লাগাতার তাকে ফোন করছে চারু। অথচ সে ফোন তুলছে না। ক্লাবে তন্নতন্ন করে খোঁজার এক মুহূর্তে পা আটকে গেলো চারুর। রুশান এক কোনার সোফায় বসে রয়েছে। সে একা নয়, একটি মেয়ে তার সাথে রয়েছে। তারা অসম্ভব ঘনিষ্ঠভাবে বসে রয়েছে……………………….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি