ভালোবাসা হাত বাড়ালো পর্ব-১১+১২

0
10

#ভালোবাসা_হাত_বাড়ালো
#লেখনীতে_মেহেরীন
#পর্ব – ১১+১২

আরোহীর চাকরিটা হয়েই গেছে, দু মাস হলো কাজে জয়েন করেছে। বর্তমানে পড়াশুনা ও জব দুটোই চলছে। প্রথম মাসের বেতনের অর্ধেকটা এনে আরোহী তার শাশুড়ির হাতে দিয়েছিলো বাকি অর্ধেক নিজের মাকে পাঠিয়েছে। শুরু থেকেই রওশন বেগম এ চাকরির বিরুদ্ধে ছিলেন, যদিও সেটা একান্তই ছিলো আরোহীর প্রতি তার রাগ কিন্তু বৌমা চাকরি পাওয়ার পর উনি মনে মনে খুশি হয়েছিলেন বটে যদিও সেটা কাউকে বুঝতে দেননি। আরোহী যখন বেতনের টাকা এনে ওনার হাতে তুলে দিলো তখন রওশন বেগমের রাগ যেনো পড়তে শুরু করলো। আরোহীর জব নিয়ে এখন উনি কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেন না, এমনকি বিয়ের পর থেকেই আরোহী ওনার মন রক্ষা করে চলার সকল চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসবও রওশন বেগমকে আরোহীর প্রতি দুর্বল করে তুলছে। এক সকালে আরোহী এসেছিলো রান্না করতে, চাকরি শুরুর পর থেকে রান্না করার তেমন সুযোগ সময় কোনোটাই পাচ্ছেনা তাই ভেবেছিল আজ রাঁধবে কিন্তু রওশন বেগম আগেই এসে রান্নার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন…

— তুমি এখানে কেনো?

— ভাবছিলাম আজ সকালের রান্নাটা যদি আমি…

— প্রয়োজন নেই, আমিই করে নেবো

— কিন্তু মা, একবেলার রান্নাটা অন্তত আমি…

— এখনও এতটা বুড়ি হয়ে যাইনি আমি যে চারজনের রান্না করতে পারবো না, এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। নিজের কাজে মন দাও

যদিও রওশন বেগম কিছুটা রূক্ষভাবেই কথাগুলো বললেন কিন্তু আরোহীর খারাপ লাগেনি উল্টে মনে হয়েছে উনি কেয়ার করেন বলেই আরোহীকে সকালবেলা রান্না করতে দিচ্ছেন না। কিছুদিন যাবত রাতে নীল যখন স্টাডি বা কোনো বিষয়ে প্রাকটিস করে তখন আরোহী ওকে চা বানিয়ে খাওয়ায় যদিও ওর বানানো চা তেমন পারফেক্ট হয় না। কিন্তু নীল কখনো অভিযোগ করেনি, নীল ব্যস্ত থাকে বলে ওকে বিরক্ত না করার সুবাদে আরোহী কখনো ওকে চায়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাও করেনা। কিন্তু আজ হঠাৎই আরোহীর জানতে ইচ্ছে হলো, পড়তে বসে কিছুতেই মন বসছিল না। পরে সরাসরি জিজ্ঞাসাই করে ফেললো…

— চা কেমন হয়েছে?

— চা যেমন হয় তেমনি!

— এ কেমন কথা? আমি আপনাকে রোজ চা করে খাওয়াই কিন্তু আপনি ভালো মন্দ কিছুই বলেন না, আপনি তো চা খোর তাহলে কেমন হয়েছে সেটা তো বলবেন নাহলে আমি বুঝব কিভাবে আপনার কেমন লাগছে?

নীল ও আরোহী একে অপরকে কথা দিয়েছে যে কখনো কোনো বিষয়ে কথা হলে কেউ কারো মন রক্ষার্থে কিছু বলবেনা। ভালো লাগল ভালো আর মন্দ হলে সরাসরি বলবে…

— মন্দ বানাও না আবার অতো ভালোও হয় না, তবে প্রাকটিস করতে থাকো। আস্তে আস্তে পারফেক্ট চা বানানো শিখে যাবে

আরোহী কিছু বললো না তবে ওর একটু খারাপ লাগলো, নীল ওর জন্যে এতকিছু করছে সেখানে নীলের পছন্দসই এক কাপ চা ও ঠিকমতো বানাতে পারছেনা? আরোহী মনে মনে জেদ ধরলো যে ভালোভাবে চা বানানো শিখেই ছাড়বে। এসব ভাবতে ভাবতেই বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পড়ছিল আরোহী, পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছে। নীল টের পেয়ে আরোহীর হাত থেকে বই সরিয়ে রেখে ওকে ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে লাইট বন্ধ করে দিলো।
__________________________

বিয়ের একমাস পরে আরোহীর স্বামী নতুন একটা গাড়ি কিনেছিলো কারণ তার চাকরিতে দূরে পোস্টিং হচ্ছিলো। যাওয়া আসার সুবিধার জন্যেই গাড়ি কিনেছিলো সে, আরোহীরও নিজের স্বামীর সঙ্গেই যাওয়ার কথা ছিলো। দিনগুলো মোটামুটি সুখেই কাটছিল। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পর একদিন আরোহী ঘুরতে যাওয়ার বায়না করে তাই শীতের এক সকালে আরোহীকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিলো ছেলেটা। সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে ফেরার সময় রাস্তায় এক বড় দুর্ঘটনা ঘটে, সেখান থেকে আরোহী অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওর স্বামী ঘটনাস্থলেই প্রাণত্যাগ করে। অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন ওদের হসপিটালে নেওয়া হচ্ছিলো সে দৃশ্য কিছুটা মনে আছে আরোহীর। সেই ছেলেটার নিথর দেহ, স্ট্রেচারের বাইরে একটা হাত ঝুলছিলো আর খোলা চোখ এসব আরোহী দেখেছিলো। পুরোনো এই দৃশ্যগুলো স্বপ্নে দেখামাত্রই সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসলো আরোহী, ভয়ে ঘেমে নেয়ে উঠেছে মেয়েটা। স্বপ্ন দেখে আরোহী ছটফট করছিলো তখন নীলেরও ঘুম ভেংগে যায়।দ্রুত উঠে বসে বাতি জ্বালিয়ে দেখলো আরোহী ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে। নীল দ্রুত একগ্লাস পানি এনে ওকে খাইয়ে ধীরে ধীরে পিঠে হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করলো…

— আর ইউ ওকে? কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?

আরোহী মাথা চেপে ধরলো…

— ওই অ্যাক্সিডেন্টের মুহূর্তটা…এতগুলো দিন পেরিয়ে গেছে তাও ভুলতে পারিনি। মনে হচ্ছে যেনো সেদিনের ঘটনা, জানিনা আর কতদিন লাগবে আমার এই দুঃস্বপ্ন থেকে রেহাই পেতে

— সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন তুমি শুয়ে পড়ো, ঘুমানোর চেষ্টা করো

— এভাবে আর ঘুম আসবেনা, একটা ওষুধ..

— আবার ওষুধ? বারণ করেছি না তোমাকে যে কোনো মেডিসিন নেবেনা? আগেও তো ওষুধ ছাড়া ঘুমাতে পারতে না কিন্তু এখন ওই সমস্যা তো অনেকটা কমেছে

— ঐটা আর এটা আলাদা ব্যাপার নীল!

— একই ব্যাপার, ঘুম প্রাকৃতিক একটা বিষয় সেটা প্রাকৃতিকভাবে আসাই ভালো।মেডিসিনের বাজে অভ্যাস বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে তোমাকে এখন থেকে।

আরোহী শুয়ে পড়লো কিন্তু নীল এখনও হেলান দিয়ে বসে আছে দেখে প্রশ্ন করলো…

— আপনি কি করবেন?

— তোমাকে ঘুম পাড়াবো

— আমি বাচ্চা নই নীল, তাছাড়া আপনার সকালে হসপিটালে যেতে হবে। রাতে ঠিকমতো না ঘুমালে সারাদিন ক্লান্ত লাগবে, আমার চিন্তা করতে হবে না আপনাকে, আমার ঘুম চলে আসবে

— হয়ে গেছে আপনার বকবক? এবার ভদ্র মেয়ের মতো শুয়ে চোখ বন্ধ করুন। নিজের ভালোমন্দের খবর নেই, এসেছে আমার চিন্তা করতে। ঘুমাও চুপচাপ!

ধমক শুনে চুপ করে গেলো আরোহী, বিয়ের পর আজকেই প্রথম এমন ধমকে কথা বললো নীল। মাথায় অনেকক্ষণ হাত বুলিয়ে দেওয়ার পর আরোহী ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমন্ত আরোহীকে দেখে নীল বিড়বিড়য়ে বললো…

— একটু আগেই বলছিলো ঘুম আসবে না, এখন কে ঘুমালো?

নীল আলতো করে আরোহীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মেয়েটা যখন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে তখন নীল নিজেও শুয়ে পড়লো। যদিও তখন মধ্যরাত হয়ে এসেছে, ঘুম হয়তো আসবে না কিন্তু আরোহীকে ঘুমাতে দেখেই স্বস্তি লাগছে নীলের। ঘুমের ওষুধ খেতে বাঁধা দেওয়ার পর থেকেই নীল আরোহীকে স্বাভাবিকভাবে ঘুম পাড়ানোর জন্যে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে আসছে যদিও প্রতি রাতে এতে কাজ হয় না। অনেকসময় মেয়েটা রাতে একদমই ঘুমাতে পারেনা তবে পূর্বের তুলনায় আরোহীর ঘুম অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। এক শুক্রবারের বিকেলে আরোহী তৈরি হচ্ছিলো কোথাও যাওয়ার জন্যে। নীল একটু বাইরে গেছিলো, ফিরে এসে দেখলো আরোহী তৈরি হচ্ছে।

— বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান হয়েছে?

— না, অন্য একটা জায়গায় যাচ্ছিলাম

— কোথায়?

— উম্ম! আসলে ওইদিন রাতে অনেকদিন পর শুভ, মানে আমার প্রাক্তন স্বামীকে স্বপ্নে দেখেছিলাম, মনটা ভালো লাগছিলো না। তাই ভাবলাম আজ গিয়ে ওর কবর জিয়ারত করে মসজিদে কিছু টাকা দিয়ে আসবো। সরি, আপনাকে না বলেই…

— আমি কি সঙ্গে যেতে পারি?

চমকে উঠলো আরোহী! প্রথমে কথাটা বলতে কিছুটা ইতস্ততবোধ করছিলো ও, ভেবেছিল নীল আবার কি না কি ভাববে কিন্তু নীল যে এতো সহজেই বিষয়টা মেনে নিয়ে সঙ্গে যেতে চাইবে ভাবতেই পারেনি আরোহী!

— আ..আপনিও যাবেন?

— কেনো নয়? তুমি একটু দাড়াও, আমি দু মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসছি। এরপর একসঙ্গে বেরোবো

সেদিন আরোহীর সঙ্গে গিয়ে কবর জিয়ারত করলো নীল, সেখান থেকে ফেরার সময় প্রাক্তন শ্বশুরের সঙ্গে দেখা হয় আরোহীর। উনিও এসেছিলেন ছেলের কবর দেখতে। আরোহীকে দেখামাত্র ভদ্রলোক নিজেই এগিয়ে এসে কথা বললেন, আরোহী নীলকেও ওনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। ভদ্রলোক আফসোসের স্বরে বললেন…

— ছেলেটা আমার এভাবে চলে যাবে কখনো ভাবিনি, কিন্তু তুমি যদি বাড়িতে থাকতে তাহলে অন্তত দুঃখ কিছুটা ঘুচতো যে ছেলে না থাকুক ছেলের বউ তো আছে। কিন্তু শুভর মায়ের জন্যে সেটাও সম্ভব হলো না।

আরোহী চুপচাপ শুনলো, আরোহীর স্বামীর মৃ’ত্যুর কিছুদিন পরেই ওর শাশুড়ি ছেলের মৃ’ত্যুর দায় আরোহীর ওপর দিয়ে ওকে অপয়া বলে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এরপর এই দুবছর অসহ্য যন্ত্রণায় কেটেছে মেয়েটার। ভদ্রলোক নীলকে বললেন…

— এইটুকু বয়সে মেয়েটা অনেককিছু সহ্য করেছে বাবা, আবার ওর জীবনে কেউ এসেছে জেনে ভালো লাগলো। মেয়েটা অনেক ভালো, ওর পাশে থেকো সবসময়

— অবশ্যই আঙ্কেল, দোয়া করবেন

ভদ্রলোক আরো কিছুক্ষণ কথা বললেন, এরপর বিদায় নিলেন। নীলও আরোহীকে নিয়ে বাইরে এলো, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আরোহী বললো…

— জানেন, আমি ছোটো থেকে বাবার আদর পাইনি। যখন বিয়ে করে শুভদের বাড়িতে গেছিলাম শুভর বাবাকে পেয়ে মনে হয়েছিল যেনো শ্বশুর না নিজের, একটা বাবা পেয়েছি কিন্তু আমার কপালে সেই সুখ সহ্য হয়নি

— সৃষ্টিকর্তা কার জীবনে কোন টুইস্ট লিখে রেখেছে কেউই জানেনা, যেটা হবে আমরা চাইলেও সেটা বদলাতে পারবো না। তাই কি হতো সেটা ভেবে আফসোস করার থেকে যা হয়েছে সেটা মেনে নেওয়াই উত্তম। তাই নয় কি?

— হুমম, যা হওয়ার সেটা হবেই। আপনি আমি কেউই ফেরাতে পারবো না তবে বাবার মত আরেকজন শ্বশুর পেয়েছি আমি। আপনার বাবা অনেক ভালো নীল। জানিনা আল্লাহ আমাকে এ কেমন ভাগ্য দিয়েছেন। না পাওয়া জিনিসগুলো পাই ঠিকই কিন্তু হারিয়ে ফেলি

নীল আরোহীকে নিজের দিকে ঘোরালো, দু কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বললো…

— এবার তেমন কিছুই হবেনা, থিঙ্ক পজিটিভ!
_________________________

নীলের হসপিটালে সেই গণ্যমান্য এক ব্যবসায়ীর অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে, যার দায়িত্বে ছিলো নীলের অপনেন্ট আরিয়ান। অপারেশন সফল হওয়ার পর থেকেই ডা. আরিয়ান যেনো হাওয়ায় উড়ছে। রিপোর্টারদের সাক্ষাৎকারও দিয়েছে সে, পূর্বের তুলনায় চারদিকে নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে তার। নীল কখনো কোনো বড় সার্জারির পরেও রিপোর্টারদের সঙ্গে দেখা করেনা তাই নীলের খ্যাতি অনেকটা কম বটে। এদিক থেকে নিজেকে নিয়ে গর্বে যেনো সাত আসমানের ওপর উড়ছে আরিয়ান। সকলে আরিয়ানের থেকে এই সফলতার সুবাদে ট্রিট চাইলো। এই হসপিটালের হার্ট সার্জনরা সকলে পিকনিকে যাবে বলে কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নিজেকে, আরিয়ান ট্রিট হিসেবে জানায় এই পিকনিকের সব খরচ সে বহন করবে। এই কথা শুনে সকলে খুশি। সকলের মতো নীলও আরিয়ানকে অভিনন্দন জানালো, তখনই আরিয়ান বাঁকা হেসে বললো…

— তা কি বুঝলেন ডা. ইশতিয়াক? নিজের হোমওয়ার্ক কিন্তু আমি ভালোভাবেই করেছি আর সফলও হয়েছি

— হ্যাঁ, আপনার সার্জারি ফুটেজ দেখেছি আমি। আপনার হাত বেশ পাকা হয়েছে, গুড জব! কিন্তু একদিন হোমওয়ার্ক করলেই তো কাজ হয় না, এটাকে বারবার রিপিট করতে হবে। মাসের একদিন টপ করে বাকি মাসগুলো আশা করি হেলায় কাটাবেন না, হোমওয়ার্ক করতে থাকবেন

আরিয়ানের মুখের হাসি উবে গেলো…

— আপনি আমার কোনো সফলতাতেই সন্তুষ্ট হননা তাইনা?

নীল হাসলো! — আপনি আমাকে সন্তুষ্ট করতে সার্জারি করেন নাকি? জানা ছিলো না তো? তাছাড়া আপনার ব্যর্থতা সফলতায় আমার কিছু লাভ লোকসান হবেনা। যা হবার আপনার হবে

— সত্যিই কি তাই? আমি সফল হলে আমার নাম হবে তখন তো আপনার নামডাক কমে যাবে, লোকসান হবে আপনার। তখন কি হবে?

— আরিয়ান, লাভ লোকসান বিজনেসে হয় আর আমাদের প্রোফেশন বিজনেস নয়। আমরা যদি বিজনেস করতে শুরু তাহলে তো মনুষ্যত্ব বলতে কিছুই থাকবেনা

আরিয়ানকে বুঝিয়ে বিশেষ লাভ নেই জেনেও নীল সুযোগ পেলেই চেষ্টা করে ওকে বোঝানোর, এখন ডাক্তার হিসেবে আরিয়ানের এই আচরণ মোটেও শোভনীয় নয় কিন্তু সে যে ভীষণ জেদী। নীল ভালোর জন্যে কিছু বললেও সেটা আরিয়ানের কাছে নেগেটিভ বিষয়ই মনে হয়!
_____________________________

অনেকদিন পর নিজের বাড়িতে এলো আরোহী, আশফের অবশেষে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়েছে আর একটা মেয়েকেও পছন্দ হয়েছে ওর তাই আরোহীকে আসতে বলেছে। কাল মেয়ের বাড়িতে পাকা কথা বলতে যাবে সকলে, তাই আরোহী আজ অফিজ থেকেই সোজা এ বাড়িতে চলে এসেছে। মেয়েকে বাড়িতে আসতেই ওর মা বরাবরের ন্যায় বাঁকা ভঙ্গিতে বলে বসলো…

— শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর তো দেখি আমাদের একেবারে ভুলেই গেছিস, খুব সুখে যে আছিস বোঝাই যাচ্ছে

— তুমিও তো কোনদিন আমাকে মনে করো না মা, এতদিন হয়ে গেছে আমি ও বাড়িতে কিন্তু তুমি ভুলেও তো একটা ফোন করলেনা

— এসেই আমার ভুল ধরা শুরু করেছিস দেখছি, তোর এই স্বভাব আর গেলো না। ও বাড়িতেও কি শাশুড়ির মুখে মুখে এভাবে তর্ক করিস নাকি?

— মা, তুমি এমন কেনো করো বলোতো? আমার সঙ্গে কেনো সবসময় এমনভাবে কথা বলো যেনো আমি তোমার শত্রুর মেয়ে?

আশফের আজ বাড়িতেই ছিলো, মায়ের কথাবার্তা সে শুনেছে। আরোহী জবাব দেওয়ার আগেই ওর ভাই এসে বললো…

— মা! তোমার কি একটুও ক্লান্ত লাগেনা? আরোহী সবে বাড়িতে পা রাখলো আর তুমি অমনি শুরু হয়ে গেছো? আরোহী, তুই যা তো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমার ঘরে চলে আয়

ভাইয়ের কথামত আরোহী নিজের ঘরে চলে গেলো, এখানে দাঁড়িয়ে থেকে মায়ের তিক্ত কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই ওর। ফ্রেশ হয়ে গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বসলো আরোহী…

— অবশেষে তুমি বিয়ে করার জন্য রাজি হলে ভাইয়া, আমি খুব খুশি হয়েছি। এবার দ্রুত বিয়ে করে সংসার শুরু করো নাহলে কদিন বাদে বুড়ো হয়ে যাবে

— তোরা সবাই যে আমার বিয়ে নিয়ে এতো উঠেপড়ে কেনো লেগেছিস কে জানে, তবে এবার বিয়েটা করেই ফেলবো আর চিন্তা করতে হবেনা। তা, তোর শ্বশুরবাড়ির সবাই কেমন আছে? তোর সঙ্গে তোর শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো তো?

— সবাই ভালো আছে আর ওখানকার সবাই অনেক ভালো ভাইয়া। আমার শ্বশুর অনেক ভালো, শাশুড়ির সঙ্গেও সম্পর্ক মন্দ না। অন্তত আমার মায়ের তুলনায় ভালোই

— যাক, তুই ভালো থাকলেই আমার চিন্তা কমে। কালকে নীল কি আসতে পারবে না?

— না ভাইয়া, ওর কাজ আছে তার ওপর কাল তো ওয়ার্কিং ডে। হসপিটাল থেকে আবার এখানে আসা ওর জন্যে ঝামেলা হয়ে যাবে। পরে বরং একদিন এসে সবার সঙ্গে দেখা করে যাবে

ভাইয়ের সঙ্গে আজ বহুদিন পর বসে ইচ্ছেমত গল্প করলো আরোহী, পরদিন আশফেরের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিল সকলে। পাকা কথা হয়ে গেছে, সামনেই বিয়ে। ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ায় আরোহীও এবার সম্পূর্ন চিন্তামুক্ত। হসপিটাল থেকে বেরোনোর পর আজ হাতে কিছুটা সময় থাকায় নীল গেছিলো তানভীরের সঙ্গে দেখা করতে। অনেকদিন পর বন্ধুকে কাছে পেয়ে তানভীরও গপ্প জুড়ে দিয়েছে!

— তোর বউয়ের সঙ্গে আমাকে কবে দেখা করাবি?

— ওর সঙ্গে দেখা করে কি করবি?

— আমার জন্যেই সব হলো আর তুই কিনা আমাকেই তোর বউয়ের সঙ্গে একদিন দেখা করালি না? বিয়েটা করলি আমাদের কাউকে দাওয়াত দিসনি নীল, এই দুঃখ কিন্তু আমার রয়ে গেছে। তার ওপর এখনো আরোহীকে ভাবী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলি না?

— নতুন করে পরিচয় করানোর কি আছে? তুই তো ওকে আগে থেকেই চিনিস

— আরে বাবা, সে তো আলাদা পরিচয় ছিলো আর এখন পরিচয় আলাদা। দেখ, আমি কিছু জানিনা। আরোহীকে একদিন নিয়ে আসিস দেখা করবো। একদিন না হয় লাঞ্চ বা ডিনার করলাম একসঙ্গে?

— ওকে!

বন্ধুর সাথে আড্ডা শেষে বাসায় ফিরে ডিনার করলো, খাওয়া শেষে মা বাবার সঙ্গে বসেছে নীল। এরই মধ্যে রওশন বেগম বললেন…

— নীল, দেখ আমার কথায় রাগ করিস না কিন্তু তোরা দুজনেই এখন যেভাবে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিস একে অপরকে সময় কিভাবে দিবি? আরোহী এই চাকরিটা এক বছর পরে করলে পারতো না?

— এক বছর পর কেনো?

— আরে একটা বাচ্চা হওয়ার পর না হয় চাকরি করতো, আমি বাচ্চা পালতাম ওর তো কোনো ঝামেলাই হতো না

মীর সাহেবের সঙ্গে এ বিষয়ে কয়েকদিন ধরেই আলাপ করছিলেন রওশন বেগম, মীর সাহেব স্ত্রীকে বরণ করেছিলেন এসব প্রসঙ্গ তুলতে কিন্তু কে শোনে কার কথা?

— তুমি আবার শুরু করলে? তোমাকে তো বলেছিলাম এসব আলাপ এখনই করো না

— তুমি একটু থামো তো, কয় মাস হয়েছে ওদের বিয়ের হ্যাঁ? কয়দিন দেখেছো তুমি ওদের একসঙ্গে বসে একটু কথা বলতে? সেই সকালে যায় আর দুজনেই রাতে ফেরে। সংসার জীবনের একটা ব্যাপার আছে তো নাকি?

— মা, তুমিও এখন ওই টিপিক্যাল শাশুড়ির মত বিহেভ করছো? এখনই বাচ্চা দিয়ে কি করবে?

— আমি তোদের ভালোর জন্যেই বলছি নীল, তুই আরোহীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বল। দুজনেই কাজে এতো ব্যস্ত হয়ে গেলে পরে একে অপরকে সময় দিতে পারবি না। দূরত্ব বাড়বে, তখন কি হবে?

রওশন বেগম আরো অনেক কথা বললেন কিন্তু নীল সেগুলো শুনেও না শোনার ভান ধরলো, এরই মাঝে আরোহীর ফোন এসেছে দেখে উঠে দাঁড়ালো নীল…

— আমি একটা জরুরি বিষয়ে কথা বলছি নীল, আমার পুরো কথা না শুনে তুই কোথায় যাচ্ছিস?

— জরুরি ফোন এসেছে মা, তোমার বাকি কথা জমিয়ে রাখো আমি কাল শুনে নেবো!

— দেখেছো? বিয়ের পর থেকে ছেলে আমার একটা কথায় পাত্তা দেয়না। আমি কি ওর খারাপ চাইছি? আমি তো এমনও বলছি না যে আরোহী জব বাদ দিক

— তোমারও কি মনে হয় না ও বিয়ে করার পর থেকেই ওর জীবনের ব্যাপারে তুমি একটু বেশিই হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছো? ওদের ব্যক্তিগত বিষয় এটা, ওরা যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখনই হবে। আমরা জোর করলে তো লাভ নেই!

স্বামীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন রওশন বেগম, ইদানিং নীলের জীবন সম্পর্কিত কিছু বললেই মীর সাহেব ভীষণ বিরক্ত হন। কয়েক দফা ছোটখাটো ঝগড়াও হয়েছে এই নিয়ে, এই রাতের বেলা আবারো ঝগড়া বাধানোর ইচ্ছে নেই রওশন বেগমের!

চলবে…

#ভালোবাসা_হাত_বাড়ালো
#লেখনীতে_মেহেরীন
#বোনাস_পর্ব

নীল রুমে গিয়েই বারান্দায় চেয়ারে টেনে বসলো, পুরো একটাদিন পর আরোহীর সঙ্গে কথা হচ্ছে। মেয়েটাকে মিস করেছে অনেক। ওপাশ থেকে আরোহী জিজ্ঞাসা করলো…

— কি করছেন?

— নাথিং! তোমার বাসায় কেমন সময় কাটাচ্ছ?

— চলছে ভালোই, উম্ম! আপনার আজকে দিন কেমন কেটেছে?

— নট ব্যাড, কিন্তু তুমি নিজেই আমাকে কল করবে এটা অপ্রত্যাশিত ছিলো। মিস করছিলে বুঝি আমায়?

— ত..তেমন কিছুনা। আসলে কালকে আমি হুট করেই এই বাড়িতে চলে এলাম এরপর আর আপনার সঙ্গে কথা হলো না তাই ভাবলাম একটু খোঁজ নেই

— ওহ কাম অন, মিস করলে সেটা স্বীকার করতেই পারো। আমি বরং একটু খুশিই হবো

— হুমম! একটু মিস করছিলাম

আরোহী ভনিতা না করে স্বীকার করেই নিলো, নীল হাসলো। মেয়েটা তাহলে একটু মিস করাও শুরু করেছে?

— গুড, এই একটু একটু মিস করা থেকেই আরো বড় অনুভূতি তৈরি হবে এরপর ধীরে ধীরে… ইউ উইল ফল ইন লাভ উইথ মি!

আরোহী নিরবে নীলের কথাগুলো শুনলো, ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে নীল ভাবলো আরোহী হয়তো এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছে না তাই তৎক্ষণাৎ প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো…

— তুমি কি কালকেই ফিরবে নাকি আরো থাকবে?

— কালই ফিরবো। উম্ম! একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো নীল?

— বলো

— আপনি কি কোনোভাবে আমায় আগে থেকেই চিনতেন?

— হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?

নিরব রইলো আরোহী, নীলের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকেই নীলের কথাবার্তা এবং আচরণে আরোহীর মনে হয় যেনো নীল ওকে বহুদিন ধরে চেনে। নীলের ভাষ্যমতে আরোহীর ছবি দেখে ওর পছন্দ হয়েছিলো বলেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো কিন্তু আরোহীর এ কথা সম্পূর্ন বিশ্বাস হয় না। একটা মেয়ের ছবি দেখেই কি একটা ছেলে তার প্রতি এতটা দুর্বল হতে পারে?

— ও কিছুনা, এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম।

এরপর অন্য বিষয় নিয়ে আরো কিছুক্ষণ দুজনের আলাপ হলো, ফোন রাখার পর নীল চেয়ার থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। ভেবে পাচ্ছেনা আরোহী আজ হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো করলো? সে কি কিছু টের পেয়ে গেছে? প্রথম দেখায় ভালোবাসার বিষয়টা শুনে অনেকেই মজা করতে পারে কিন্তু নীলের কাছে আরোহীকে দেখা সেই প্রথম মুহূর্ত ছিল খুবই সুন্দর একটি অনুভূতি। নীরবে দু বছর ধরে ভালোবাসার পর হঠাৎই আরোহীকে এভাবে পেয়ে যাবে তা নীলের কল্পনার বাইরে ছিলো। সেই দু বছরের এক তরফা ভালোবাসার গল্পটা নীল আরোহীকে জানাতে চায়না, কিছু ঘটনা নিজের মনে রাখাই ভালো!
________________________________

ডা. আরিয়ান তার কলিগদের নিয়ে পিকনিকে গেছে, সবাই গেলেও নীল সেখানে যায়নি কারণ ওখানে গেলেই আরিয়ান একটা ঝামেলা পাকাতে পারে। তাই নীল ওখানে না গিয়ে তানভীরের ইচ্ছা পূরণের জন্যে আরোহীকে দেখা করতে নিয়ে এসেছে, এ সুযোগে নীলের কাছ থেকে ডিনার ট্রিট পাওয়ার জন্যে উৎসুক হয়ে আছে তানভীর। ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলো, কিন্তু খাওয়া শুরু করার আগেই নীলের একটা জরুরী ফোন এলো। জরুরী ফোন দেখে বাকিদের খেতে বলে নীল উঠে এলো কথা বলার জন্য, কিন্তু ওরা খাওয়া শুরু না করে নীলের অপেক্ষা করতে থাকলো। টুকটাক আলাপের এক পর্যায়ে কথার ফাঁকে তানভীর বলে উঠলো…

— ইউ নো হোয়াট আরোহী? ভালোবাসার বিষয়ে এখন নীল আমার আইডল হয়ে গেছে। আমার বন্ধুকে না দেখলে জানতাম না যে এভাবেও কাউকে ভালোবাসা যায়, এতগুলো দিন একজনকে মনের মধ্যে রেখে ঘুরেছে নীল। আমি বন্ধু হয়েও কিছু বুঝতে পারিনি

আরোহীর হাসি মুখটা মুহুর্তের মধ্যেই কালো হয়ে গেলো…

— নীল কাউকে ভালোবাসতো?

— এখনও তো বাসে, কেনো তুমি জানো না?

— নীলের জীবনে কেউ ছিলো সে কথা আমার জানা ছিলো না, আসলে ও কোনোদিন এসব ব্যাপারে আমাকে বলেনি

— কি বলছো? ও তোমাকে কিছুই বলেনি? অবাক করা বিষয় তো, আমি ভেবেছিলাম তুমি জানো

— আমি ঠিক বুঝলাম না, ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো ওর কারো সঙ্গে? আমি কি ওদের মাঝে চলে এসেছি? কিন্তু নীল তো নিজেই…

— তুমি নিজেই তোমাদের মাঝে কিভাবে আসবে?

তানভীরের কথার মানে বুঝলো না আরোহী, ওর মুখ দেখে তানভীর অবাক হয়ে গেলো…

— তুমি সত্যিই কিছু জানো না? আমি তো ভাবছিলাম তুমি না বোঝার ভান করছিলে। নীল তো তোমাকে দু বছর আগে থেকেই পছন্দ করে। তোমার বিয়ে হয়ে গেছে জানার পরেও তোমার প্রতি ওর ভালো লাগা কমেনি, ভাগ্যেরও কি খেল দেখো। যাকে মনে মনে চেয়ে এসেছিলো তাকে পেয়েই গেছে

তানভীর বিস্তারিত সবকিছু আরোহীকে বলে, সব জানার পর আরোহী যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে। নীলের প্রতিটা কথা ও আচরণেই আরোহীর আগেই কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু বিষয়টা যে এমন কিছু হবে সেটা ভাবতে পারেনি এমনকি এতদিনে নীল নিজেও কখনো ব্যাপারটা বুঝতে দেয়নি।

— নীল আমাকে কখনো এসব ব্যাপারে বলেনি

— ও বোধহয় তোমাকে কিছু জানাতে চাইনি! উফ! আই অ্যাম সরি, ও নিজে যখন বলেনি আমারও এই কথাগুলো শেয়ার করা হয়তো ঠিক হলো না

তানভীর গিল্টি ফিল করছে, নীল যে আরোহীকে কিছু বলেনি এ বিষয়ে ওর ধারণা ছিলো না। ওর মুখে সব জানার পর আরোহী কিছুক্ষণ নিরব রইলো। নীলের ওর প্রতি টান আছে এটা জানা ছিলো কিন্তু এই টান যে এতদিনের সেটা শুনে নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আরোহীর। এমন কেউ কিভাবে ওর জীবনে এলো?

— ধন্যবাদ তানভীর, আপনি না বললে আমি হয়তো কখনো জানতেই পারতাম না যে নীলের জীবনে আমি ঠিক কতটা জায়গা জুড়ে আছি। উনি যে নিরবে আমাকে এতদিন ধরে নিজের মনে জায়গা দিয়ে রেখেছেন সেটা হয়তো উনি আজীবন মনের মাঝে লুকিয়েই রাখতেন। এটা জানতে পেরে আমার খুব ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ

তানভীর আর কথা বলার সুযোগ পেলোনা ততক্ষণে কথা শেষে নীল এসে নিজের জায়গায় বসতেই লক্ষ্য করলো তানভীর আরোহী দুজনেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে, ভ্রু কুঁচকে নিলো নীল…

— কি হয়েছে? তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে?

তানভীর আমতা আমতা করে বললো…

— মনে হচ্ছে আমি একটা ভুল করে ফেলেছি, তুই জানতে পারলে আবার আমাকে ধরে পে*টাবি না তো? দেখ ভাই, আমি সত্যিই জানতাম না, জানলে মুখ বন্ধ রাখতাম

— কোন বিষয়ে কথা বলছিস?

আরোহী হেসে বললো…

— তেমন কিছুনা, ওই আপনাদের কলেজ লাইফের কিছু ঘটনা শেয়ার করেছিলো। আমরা খাওয়া শুরু করি? হবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে

সকলে মিলে ডিনার করে নিলো, রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে তানভীর চলে যেতেই ওরাও ফুটপাথ ধরে হাঁটতে শুরু করলো…

— তানভীর তোমাকে কিছু বলেছে?

— কই না তো

— তাহলে ও কিসের কথা বলছিলো?

— আপনিই তো বলেন আপনার কোনো গোপন রহস্য নেই, তাহলে আপনার বন্ধু কি বলেছে সেটা জানার চেষ্টা কেনো করছেন?

— ইয়াহ, আমার কোনো রহস্য নেই কিন্তু ও কিসের কথা বলছিলো সেটা তো জানা উচিত আমার।

— বাদ দিন না ওসব। আজ অনেক গরম পড়েছে, চলুন আইসক্রিম খাই। আপনি ডিনার ট্রিট দিলেন এখন আমি আপনাকে আইসক্রিম ট্রিট দেবো

— ওয়াও! বউয়ের ট্রিট তো মিস করার প্রশ্নই ওঠেনা। চলো!

পরে এক দোকান থেকে আরোহী দুটো আইসক্রিম কিনলো, এবং সেটা খেতে খেতেই হাঁটতে শুরু করলো। নীলের হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটছে আরোহী, পূর্বে নীল নিজেই কয়েকবার আরোহীর হাত ধরলেও আজই প্রথমবার আরোহী স্বেচ্ছায় ওর হাত ধরেছে। অন্যান্যদিনের তুলনায় মেয়েটাকে বেশ আনন্দিতও দেখাচ্ছে, নীল কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করলো…

— আজকের পরিবেশটাই অন্যরকম লাগছে, মনে হচ্ছে আমি নতুন একজন মানুষের সঙ্গে হাঁটছি। কি ব্যাপার বলুনতো?

আরোহী মুচকি হাসলো…

— সবসময় তো আপনিই হাত বাড়ান, ভাবলাম আজ না হয় আমি হাত বাড়াই

আরোহীর এই আকস্মিক বদলে নীলের মনে কিছু প্রশ্ন জাগছে বটে তবে সে পাল্টা প্রশ্ন করলো না, এই মিনিটে রাতের রাস্তায় আরোহীর সঙ্গে পথ চলতে ভালোই লাগছে। এই মুহূর্তটা অহেতুক আলাপে নষ্ট করতে চায়না নীল, ওর দিকে তাকিয়ে আরোহী মনে মনে ভাবলো…

— আপনি এতদিন নীরবে নিজের মতো করে আমায় ভালোবেসে গেছেন নীল, আমাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেননি। এবার আমার পালা। আমিও এখন থেকে আপনার পথ অবলম্বন করবো, আপনাকে ভালোবাসার সম্পূর্ন চেষ্টা করবো

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]