#যে_থাকে_আঁখি_পল্লবে
#পর্ব-৭
ফজরের নামাজ পড়ে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো ফজিলাতুন্নেছা। চারপাশ দেখে গুটিগুটি পায়ে বাড়ির পেছন দিকে এলো। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা কবরস্থানের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। স্বামীর কবরটা চোখের সামনে থাকলেও তার নজর অন্য আরেকটা কবরের উপর। ঘাস লতাপাতায় জঙ্গল হয়ে আছে কবরটা। কি নিদারুণ অবহেলা ঠিক যেমনটা দাফনের সময় করেছিল। ফজিলাতুন্নেছার বুকের ভেতরটা হুহু করে। দোয়া পড়তে পড়তে কান্নায় কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে৷ পড়া থামিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলো পারলোনা। বহুদিন পরে চোখের সামনে কবরটা দেখে পুরনো স্মৃতিটা হামলে পড়েছে যেন। ফজিলাতুন্নেছা দু’হাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়লো-“আব্বা, ও আব্বা, তুই কেমন আছিস আব্বা? তোর কষ্ট হয়? বাপের কত প্রিয় আছিলি তুই সেই তোর কবর এতো অযতনে পরে আছে। আমার আব্বা, মাকে ক্ষমা করিস বাজান। তোরে দেখে রাখতে পারি নাই।”
বিরবির করতে করতে কেঁদে যায় ফজিলাতুন্নেছা। দীর্ঘ বিশ বছরের না দেখার তৃষ্ণা আজ কান্না হয়ে ঝরে পড়ছে৷ চোখের জল যেন থামছেই না।
অনেকটা সময় পার হওয়ার পর ফজিলাতুন্নেছা থামলো। সময় নিয়ে দোয়া পড়লো। তারপর বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো। বেশি কান্নার ফলেই হয়তো মাথা ঘুরছে তার। শরীরটা থেকে থেকে টলে উঠছে। হাঁটতে হাঁটতে তাই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে সে। কিছুটা থিতু হয়ে আবার হাঁটছে। বাসায় ঢুকবে এমন মুহূর্তে মাথাটা এমন ঘুরে উঠলো যে সামলাতে না পেরে উল্টে পড়ে গেলো ফজিলাতুন্নেছা। কপাল মেঝেতে লেগে খানিকটা ফুলে গেলো। চোখে অন্ধকার দেখছে ফজিলাতুন্নেছা। চেয়েও উঠতে পারছে না। অগত্যা মেঝেতেই পড়ে রইলো।
অন্য কারো কামরায় শুচ্ছে বলেই হয়তো ঠিকঠাক ঘুম হচ্ছে না সেঁজুতির। গতকালকেও সাতসকালে ঘুম ভাঙে গেছিল আজও গেলো। বিরক্ত হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে হাই তুললো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো। বারান্দা থেকে নিচে ঝুঁকে দেখলো কেউ বের হয়নি এখনো। দুম করে কিছু পড়ার আওয়াজটা কানে আসতেই সচকিত হলো। চোখ দিয়ে চিরুনি অভিযান চালালো। তাদের পুরনো বাড়ির সামনে ফজিলাতুন্নেছাকে পড়ে থাকতে দেখে হতচকিত হলো। কোন কিছু না ভেবেই ছুটে দোতলা থেকে নামলো সেঁজুতি। সন্তোর্পনে দরজা খুলে পা টিপে টিপে বেরিয়ে এলো। এরপর উঠোন পেরুলো ঝড়ের বেগে। ফজিলাতুন্নেছাকে ধরে ডাকলো, শরীর ঝাকা দিলো-“শুনতেছেন? এই আপনি শুনতেছেন? কি হইছে আপনের?”
চোখ মেলে ফজিলাতুন্নেছা। সামনে উজ্জ্বল শ্যামবর্নের একটা মায়াবী মুখ উঁকি দিচ্ছে। ফজিলাতুন্নেছা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-“হঠাৎ মাথাটা ঘুরায় উঠলো। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলাম কিভাবে যেন। এখন ওঠার চেষ্টা করে পারতেছি না। চোখে আন্ধার দেখতেছি। তুমি একটু ধরলে উঠতে পারবো।”
সেঁজুতি ইতস্তত বোধ করে। মুরুব্বি মানুষ ফেলে যাওয়াও যায় না। ফজিলাতুন্নেছা জবাবের আসায় তাকিয়ে আছে দেখে সেঁজুতি তার হাত বাড়িয়ে দিলো-“নেন ধরেন আমাকে। দেখি উঠতে পারেন নাকি।”
নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়েই ফজিলাতুন্নেছাকে টানলো সেঁজুতি। বার কয়েক চেষ্টার পর যখন উঠে দাঁড়ালো সেঁজুতির শরীর ঘেমে গেছে। ফজিলাতুন্নেছা সেঁজুতি কে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অসহায় মুখ করে বললো-“আমাকে একটু ঘরে দিয়ে আসো সোনা৷ নাইলে আবার পড়ে যাব লাগে।”
সেঁজুতি ফজিলাতুন্নেছার কাঁধ জড়িয়ে ধরে বললো-“চলেন তাড়াতাড়ি।”
অনেক কষ্টে পা টেনে টেনে হেঁটে এলো ফজিলাতুন্নেছা। বসার ঘরে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো। রোমেলা তাকে দেখেই হাউমাউ করে উঠলো-“ও ভাবি, কি হইছে তোমার?”
ফজিলাতুন্নেছা ভয় পেয়ে গেলো। বারবার উপরে তাকালো। রোমেলাকে ইশারা করলো-“চুপ করো বুবু, চেঁচাইয় না। রুজাইফ টের পাইলে খুব হাঙ্গামা করবেনে।”
রোমেলা এবার গলার স্বর খাদে নামিয়ে জানতে চাইলো-“কি হইছে তোমার?”
সেঁজুতি বললো-“মাথা ঘুরায় পড়ে গেছিল উঠানে। আমি দেখে ধরে নিয়ে আসলাম।”
“একা একা কই গেছিলা ভাবি? আমাকে ডাকলানা কেন?”
“তুমি ঘুমায় ছিলা তাই বিরক্ত করি নাই। একটু শুয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাব। বুবু, রুজাইফকে কিছু বইলো না। আমি একটু শুয়ে থাকি। তুমি পারলে সকালে রুটি ভাজি আর ডিম ভেজে দিয় রুজাইফকে।”
রোমেলা মাথা দুলালো-“তুমি চিন্তা কইরো না ভাবি। আমি সকালের খাওন বানাইতেছি। তুমি শুয়ে ঘুমাও গা।”
সেঁজুতি দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হচ্ছিল। সে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফজিলাতুন্নেছা ডাকলো-“ও সোনা, তোমার নাম কি গো?”
“ও মাজেদুরের মাইয়া সেঁজুতি।” রোমেলা জবাব দিলো। ফজিলাতুন্নেছা খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেঁজুতিকে দেখলো-“খুব মিষ্টি চেহারা হইছে মাশাল্লাহ। আমাকে চেনো তো? আমি তোমার দাদী হই কিন্তু। রুজাইফ আমাকে দিদা বলে তুমিও দিদাই ডাইকো।”
সেঁজুতি জবাব দিলো না। মনে মনে মুখ ভেংচি কাটলো, তোমারে দিদা কইতে ঠেকা পড়ছে আমার। তোমার ওই কুংফু পান্ডা নাতিই দিদা ডাকুক। সে নিরীহ মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তার আসলে চিন্তা হচ্ছে ভীষণ। কেউ যদি জেনে যায় সে ঘরে নাই তাহলে কি হবে? সেঁজুতি ইতিউতি করে। ফজিলাতুন্নেছা বললো-“আমাকে একটু তোমার দাদার ঘরে দিয়ে আসো। বইসা থাকতে কষ্ট হইতেছে।”
সেঁজুতি মাথা দুলিয়ে ফজিলাতুন্নেছাকে ধরলো। ধীর পায়ে হেঁটে তমিজউদ্দিনের কামরায় গেলো ওরা। ফজিলাতুন্নেছাকে শুইয়ে দিয়ে সেঁজুতি বিদায় নিলো-“আমি যাইগা।”
ফজিলাতুন্নেছা মমতাভরে ওর মাথায় হাত বুলালো-“মন চাইলে আইসো আমার কাছে। কোন বাঁধা নাই আমার তরফ থিকা বরং খুশি হবো আমি। হাজার হোক সবাই তমিজউদ্দিনের বংশ।”
বসার ঘরে রোমেলাকে পেলো না। সেঁজুতি বেরিয়ে আসবে এমন সময় দোতলায় নিজের কামরার দিকে নজর গেলো। প্রিয় কাময়ার দরজার সামনে প্রিয় পর্দাটা ঝুলতে দেখে থমকে গেলো তার পা৷ খুব মন চাইছে নিজের রুমটা একবার দেখতে। ওটায় কি কেউ থাকে? কে থাকবে? ওই কুংফু পান্ডা? ওই বেডা নিশ্চয়ই মেয়েদের কামরায় থাকবে না? একবার দেখেই আসি না হয় প্রিম কামরাটা। ভূতগ্রস্তের মতো পায়ে পায়ে দোতলায় উঠে এলো সেঁজুতি। এক অমোঘ টান অনুভব করছে নিজের মধ্যে। দ্বিধান্বিত পা জোড়া থেমে যেতে চাইলেও মনের ইচ্ছের কাছে ধোপে টেকে না। নিজের অতিপরিচিত কামরার সামনে দাঁড়ালো সে। চাপানো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো ভয়ে ভয়ে। ঢুকেই ফাঁকা কামরা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। নিজের প্রিয় জিনিসগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়, ড্রেসিং টেবিলের আয়নার ঘুরেফিরে নিজেকে দেখে। কিছুক্ষণ চেয়ারে বসে টেবিলের জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করে। গোছানো বিছানা দেখে তার ঘুম পায়। পরক্ষণেই মনে পড়ে বিছানায় চুলকানির গুঁড়ো ছিটিয়েছিল। সাবধানে আলমারি থেকে আরেকটা চাদর বের করে বিছিয়ে নেয় সে। তারপর গুটিসুটি মেরে শুয়ে গেলো। অতি পরিচিত বিছানায় শরীর ঠেকাতেই আরামে চোখ মুদে এলো তার। দু হাতে বালিশ আঁকড়ে ধরে কিছুক্ষণের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সেঁজুতি।
★★★
বিশ্রী স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেলো রুজাইফের। তাড়াহুড়ো করে দোতলা থেকে নেমে এলো। দিদার ঘরে ঢুকলো। তাকে চুপচাপ ঘুমাতে দেখে বুকটা ধক করে উঠলো। এতো বেলায় দিদা শুয়ে আছে কেন? কোনদিন তো এমন হয় না? প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে দিদা। রুজাইফ ভয় পেয়ে দিদার কপালে হাত দিলো। মন দিয়ে শ্বাস চলছে কিনা দেখলো। দিদার কপাল খানিকটা গরম দেখে স্বস্তি পেলো সে। মৃদুস্বরে ডাকলো-“ও দিদা, তুমি ঠিক আছো? আজ এখনো শুয়ে আছো যে?”
ফজিলাতুন্নেছা চোখ মেললো সাথে সাথে। রুজাইফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো না মোটেও। দুই একদিন পর পর রুজাইফ স্বপ্ন দেখে তার কাছে ছুটে আসে। সে শুয়ে থেকেই জানতে চাইলো-“আবার স্বপ্ন দেখছিস?”
রুজাইফ নিরবে মাথা দুলায়। ফজিলাতুন্নেছা মৃদু হাসলো-“কতবার বলবো যে সকালের স্বপ্ন শয়তানে দেখায়। ফজরে না উঠলে এমনই হবে বুঝলি?”
রুজাইফ মাথা চুলকে লাজুক হাসলো-“সকালে উঠতে চাই দিদা কিন্তু ঘুম না ভাঙলে কি করবো বলো?”
“বুঝেছি। রাত জেগে ফোন দেখলে এমনই হবে। এবার যা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আয়। অফিস যেতে হবে তো?”
“যাচ্ছি। তুমি নামবে? হাত ধরবো?”
“নাহ। আরেকটু শুয়ে থাকি। নাস্তা হলে রোমেলা বু ডাকবে বললো।”
রুজাইফ মাথা নেড়ে রুম থেকে বেরোয়। চেহারা জুড়ে চিন্তার রেখা। দিদা কি ব্যাথা পেয়েছে কোনভাবে? চেহারাটা কেমন যেন লাগলো। আনমনা হয়েই দোতলায় উঠলো সে।
এদিকে ফজিলাতুন্নেছা শোয়া থেকে উঠে বসতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। বারবার চেষ্টা করে ব্যাথায় কুকড়ে উঠছে। কোমড়ে ভীষণই ব্যাথা, একদম নড়াচড়া করতে পারছেন না। চিন্তা হলো তার। রুজাইফ টের পেলো হাঙ্গামা বাঁধাবে নিশ্চিত। তার আগেই ব্যাথার ওষুধ খেতে হবে। ফজিলাতুন্নেছা রোমেলাকে ডাকতে লাগলো নিচু স্বরে।
খানিকটা সময় শরীর চর্চা তারপর গোসল সেরে অফিসের পোশাক গায়ে চাপিয়ে তৈরি হয়ে নিলো রুজাইফ। কোটটা হাতে নিয়ে কোনার ঘরের দিকে পা বাড়ালো। দু’দিন হলো সকালে বেরুনোর আগে এই ঘরে একবার উঁকি দেয়। আজও দিবে ভাবলো কিন্তু দরজা চাপানো দেখে ওর ভ্রু কোঁচকায়। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই অভূতপূর্ব দৃশ্যটা ওর নজরে এলো। কালকের মেয়েটা গুটিসুটি মেরে বিছানায় শুয়ে আছে। রুজাইফ এগিয়ে এসে মেয়েটার মুখের উপর ঝুকলো। গভীর নিঃশ্বাসের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আরেকটু মনোযোগ দিতেই টের পেলো মেয়েটার চেহারায় অদ্ভুত প্রশান্তি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীসন আরামে ঘুমাচ্ছে। রুজাইফ চরম বিস্ময়ে বিস্মিত। এই মেয়ে এখানে এলো কি করে? কেউ দেখেনি একে? এ কেমন পাগল রে বাবা? আরেকজনার ঘরে এসে এভাবে কেউ ঘুমায়? পরক্ষণেই মনে হলো, হয়তো এই কামরাটায় মেয়েটাই থাকতো। নিজের রুম ছেড়ে দিয়ে ভালো লাগছে না। লুকিয়ে চুরিয়ে এসে ঘুমাচ্ছে। ভাবনাটা মাথায় আসতেই রাগার বদলে হেসে দিলো রুজাইফ। মন দিয়ে দেখতে লাগলো মেয়েটাকে। দেখতে বেশ কিউট আছে। লম্বা বেনীটা বালিশের উপর হেলায় পড়ে আছে। বুঁজে তাকা নয়নের পাপড়িগুলো হুটহাট কেঁপে উঠছে। চিবুকের মাঝ বরাবর সুক্ষ্ণ একটা ভাজ পড়ায় আদুরে ভাব স্পষ্ট হয়েছে। বালিশটা বুকে জড়িয়ে ডান হাতটা গালের নিচে রেখে কেমন ভাবুকের মতো শুয়ে আছে। একদম কিশোরী বালিকা যেন। বয়স কত হবে মেয়েটার? আঠারোর বেশি হবে বলে মনেহয় না। রুজাইফ দেখলো চুলগুলো বাতাসে ওড়াউড়ি করে মেয়েটার চোখের উপর পড়ছে আর বিরক্ততে ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছে মেয়েটার। দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই চোখে ঘোর লাগে রুজাইফের। নিচু হয়ে হুট করে ফু দিয়ে চুল উড়িয়ে দিলো এমন সময় চোখ মেলে চাইলো সেঁজুতি। মুখের উপর রুজাইফের মুখ ভয়ে চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় রুজাইফ হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো। রাগ উঠে গেলো মুহুর্তেই। হিসহিসিয়ে বললো-“আরেকজনার ঘরে এসে ঘুমিয়ে আছো আবার চিৎকার করে লোক জানান দিতে চাইছো? প্ল্যান কি তোমার?”
সেঁজুতির চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সে স্বজোড়ে মাথা নাড়লো। রুজাইফ বললো-“কি? কি বলতে চাও? তুমি আসেনি, ভূত নিয়ে এসেছে তোমাকে?”
সেঁজুতি আবারও মাথা নাড়ে। রুজাইফ বললো-“তুমি নিজেই তো আস্ত ভুতনি। ভূতের এতো সাহস হবে যে তোমায় এখানে নিয়ে আসবে? ভূত তোমাকে দেখে ভয় পেয়ে পালাবে আরও। বলো কেন এসেছ এ ঘরে? সাহস হলো কি করে?”
সেঁজুতি রুজাইফের হাত ছাড়াতে চাইলে রুজাইফ শাসাল-“হাত সরাচ্ছি খবরদার চেচামেচি করবে না। ঘরের বাইরে আওয়াজ গেলে তোমার খবর করে ছাড়বো।”
রুজাইফ হাত সরিয়ে নিতেই সেঁজুতি ঘনঘন শ্বাস নেন। একটু ধাতস্থ হয়ে তেড়ে এলো-“মাইরা ফেলতে চাইছেন আমারে? এমনে কাউরে ধরে? শা*লা কুংফু পান্ডা কোথাকার।”
রুজাইফ ও তেতে উঠলো-“এই কি বললে? শা*লা বললে কাকে?”
“আপনাকে।”
ভয় না পেয়ে জবাব দিলো সেঁজুতি। রুজাইফ কঠোর গলায় বললো-“আমি তোমার শা*লা লাগি কোনদিক দিয়ে? বরং তোমার ভাই আমার শা*লা হইতে পারে।”
“আমার ভাইয়ের ঠেকা পড়ছে আপনার শা*লা হওয়ার।”
রুজাইফ বাঁকা হাসলো-“পড়তেও পারে।”
সেঁজুতি উঠে দাঁড়ায়-“এই সরেন তো যাইতে দেন আমাকে। ফাউল কথা কবেন না একদম।”
রুজাইফ পথ আঁটকে দাঁড়ায়-“এখন কোথায় যাবে?”
“নিচে যামু৷ ঘরে আমারে না পাইলে আব্বা হাউকাউ করবো।”
“এখন এভাবে যাওয়া চলবে না৷ কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।”
সেঁজুতি থমকে গেলো। ভেবে দেখলো রুজাইফের কথা ভুল না। কেউ তাকে আসতে দেখে নাই। এখন যাইতে দেখলে সমস্যা। তার বাড়ির কেউ দেখলে তো বিশাল ঝামেলা হবে৷ ভয়ে চুপসে গেলো সেঁজুতি। সে রুজাইফের দিকে তাকালো। লোকটা কেমন করে তাকিয়ে আছে দেখো? বেয়াদব বেডা। রুজাইফ জানতে চাইলো-“কি নাম তোমার? কোন ক্লাসে পড়ো?”
সেঁজুতি ঝাঁঝিয়ে উঠলো-“আপনারে কমু কেন?”
“বলবে না? আচ্ছা ঠিক আছে তোমার বাবাকে ডেকে আনি। দেখাই তার মেয়ের কীর্তি।”
রুজাইফ পা বাড়াতেই সেঁজুতি বলে উঠলো-“সেঁজুতি। আমার নাম সেঁজুতি। কলেজে ভর্তু হইছি এই বছর।”
নাম শুনে চমকিত হলো রুজাইফ। এতো সুন্দর নাম আশা করেনি সে। অবশ্য এই চেহারার সাথে নামটা মিলে যাচ্ছে কেন যেন। ওকে নীরব দেখে সেঁজুতি ক্ষোভ ঝাড়লো-“সব দোষ আপনের। কোনথে আইসা আমাগো ঘর দখল কইরা নিছেন। এতো শখ কইরা ঘরখান সাজাইছিলাম, এখন অন্য কোথাও ঘুম আসে না ঠিক মতো৷”
রুজাইফ কৌতুকের ভাব করলো-“তাই? আর এতোদিন যে তোমার বাপ চাচারা আমাদের ভাগের জিনিস খাইতেছে তাই কি হবে? বাই দা ওয়ে তুমি কার মেয়ে? হেড মাস্টারের?”
“মোটেও আমার বাবা চাচা কারো জিনিস মাইরা খায় নাই। মিছা কইতেছেন আপনে।”
রুজাইফ এবার দুইকদম এগিয়ে এসে সেঁজুতির গাল চেপে ধরলো-“আমি মিথ্যে বলি না ডেয়ার গার্ল। মিথ্যেবাদী তোমার বাবা চাচাসহ পুরো গুষ্টি।”
ব্যাথা ককিয়ে উঠলো মেয়েটা। তার মধ্যেই সাপের মতো ফোঁস করলো-“আপনেও এই গুষ্টির পোলা। গুষ্টিরে গাইল দেওয়া মানে নিজেরে গাইল দেওয়া।”
সেঁজুতির জবাব শুনে কথা হারালো রুজাইফ। এতটুকু পুঁচকে মেয়ে কেমন কথার পিঠে কথা বলছে দেখো! এতটুকু ভয়ডর নেই!
চলবে—
© Farhana_Yesmin