যে থাকে আঁখি পল্লবে পর্ব-১৯+২০

0
22

#যে_থাকে_আঁখি_পল্লবে
#পর্ব-১৯

অফিস থেকে একটু আগে বেরিয়ে কাপড়ের দোকানগুলোতে ঢু মারছিল রুজাইফ। উদ্দেশ্য সবার জন্য কিছু শপিং করা। এখানে আসার পর থেকে কোন কেনাকাটা হয়নি কারো জন্য। ভেবে দোকানগুলোতে ঢু মারছিল। এমন সময় একটা দোকানে নজর আঁটকে গেলো। দ্রুত পা চালিয়ে “সোভার” নামের শোরুমটাতে ঢুকে গেলো ও। নেড়েচেড়ে দেখছে কাপড়গুলো। বেশ সুন্দর কালেকশন। নামের মতোই সোভার কাপড়গুলো। নাদিরার জন্য দু’টো জামা পছন্দ করে কাউন্টারে জমা রাখলো। পরক্ষনেই সেঁজুতির কথা মনে এলো। মেয়েটা নাদিরার সাথে থাকছে। নাদিরাকে দিলে ওরও মন খারাপ হতে পারে ভেবে ওর জন্য ড্রেস দেখতে লাগলো। একটা গোলাপি আর বেগুনি কম্বিনেশনের ড্রেস তুলে নিয়ে সেলসগার্লকে দিলো কাউন্টারে রাখতে। একে একে দিদা, ফুমা, ফুপা, নাহিয়ান সবার জন্য কিনলো। কাউন্টারে বিল করতে গিয়ে মহিলার সাথে আবার চোখাচোখি হলো। রুজাইফ অসস্তি নিয়ে নজর ফিরিয়ে নিলো। এই শোরুমে ঢোকার ওর থেকে মহিলা ওকে দেখে যাচ্ছে। কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে এবং প্রতিবারই রুজাইফ বিব্রত হয়েছে। বিল পেমেন্ট শেষে মহিলা ডাকলো-“কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”
রুজাইফ অবাক হয়ে মাথা দুলায়-“বলুন।”
“তুমি কি রত্নপুরের তৌফিকুর রহমানকে চেনো?”
রুজাইফ চমকে গেলো। ফ্যাকাশে চেহারা নিয়ে কাঁপা গলায় জানতে চাইলো-“আপনি চেনেন তাকে? কে আপনি?”
মহিলা হাসলো-“ঠিকই অনুমান করেছিলাম তাহলে। তুমি তোফিক ভাইয়ের ছেলে রুজাইফ না?”
চোখ দুটো একদম স্থির হয়ে গেলো রুজাইফের। কে এই মানুষটা? এতো ভালো ভাবে কিভাবে চেনে তাকে?
“আপনি আমাকে কিভাবে চেনেন?”
মহিলা আন্তরিক গলায় বললো-“তুমি আমাকে ভুলে গেছো? আমি তোমার শিমু আন্টি। তোমার স্কুলের টিচার ছিলাম।”
চরম অবাক হলো রুজাইফ৷ কখনো ভাবেনি এই মানুষটার সাথে আবার কোনদিন দেখা হবে তার। সাথে সাথে ফ্লাশব্যাকে চলে গেলো রুজাইফ। স্মৃতির জানালায় ভেসে উঠলো হাজারো স্মৃতি। অনেক মানুষের চেচামেচি আর খিলখিল হাসির শব্দে কানে তালা লেগে গেলো যেন। কান চেপে ধরে রুজাইফ। সে কিছু শুনতে চায় না, না পুরনো কিছু মনে করতে চায়। না অতীতে ফিরে যেতে চায়। ওর গায়ে হাত পড়তেই চমকে উঠলো।
“কি হয়েছে বাবা? শরীর খারাপ করছে?”
মহিলা উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলো। রুজাইফ নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা নাড়ে-“ঠিক আছি আমি। কিন্তু আপনি এখানে কিভাবে?”
শিমুর চেহারা কিছুটা ম্লান হলো। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো-“কোনরকমে বেঁচে আছি বাবা। ওই ঘটনার পর এখানে আর থাকার উপায় ছিলো না। নিজের পরিবার যায়গা দেয়নি আমাকে। বাধ্য হয়ে ঢাকায় চলে গেছিলাম। ওখানেই একটা স্কুলে পড়াতাম। বছর পাঁচেক ঢাকায় ছিলাম। তারপর আবার ফিরে এলাম। শোরুম দিয়েছি সাত বছর হবে। যা ইনকাম হয় ভালোই চলে আমার।”
“পরিবার?”
রুজাইফের প্রশ্নে শিমু খানিকটা উদাস হয়ে উত্তর দিলো-“বিয়ে হয়েছিল একটা। পরে উনি কিভাবে কিভাবে যেন ওই ঘটনা জেনে যান। এরপর আর সম্পর্ক আগায়নি। এক মেয়ে নিয়ে আমি এখানে এসে থিতু হয়েছি। মেয়েটা এবার ক্লাস সিক্সে।”
রুজাইফ কিছুটা সহজ হলো এবার। মৃদুস্বরে বললো-“আমি সহকারী জজ হিসেবে এখানে এসেছি। দিদাকে নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকছি।”
শিমুর চোখ দুটো বিস্মিত হলো। আন্তরিক হাসি দিয়ে বললো-“কতো বড় হয়ে গেছো বাবা। তুমি সফল হয়েছ দেখে খুশি হলাম। কিন্তু ওই বাড়িতে কিভাবে?”
রুজাইফ ঘড়ি দেখে হাসলো-“সে অনেক কথা। অন্য একদিন আসবো তখন কথা হবে। আজ আসি আন্টি।”
শিমু ছলছল নয়নে তাকালো-“রুজাইফ, তোমার কি কখনো আমার উপর রাগ হয়েছিল? কখনো ঘৃনা করেছো আমাকে?”
রুজাইফ ক্ষনকাল তাকিয়ে রইলো শিমুর মুখের দিকে। অসহায় মুখখানাতে তুমুল আগ্রহ। রুজাইফ বললো-“আমার রঙীন শৈশবে আপনার অবদান আছে আন্টি। পড়ালেখার শুরুটাও আপনার হাতে। রাগ ছিলো না তা বলবো না তবে দিদা বলেছিল সে ঘটনায় আপনার কোন দোষ ছিলো না আসলে। আর যে দোষী না তাকে কি করে ভুল বুঝি?”
শিমুর নয়ন জলে সিক্ত-“তোমার দিদার মতো মানুষ হয় না রুজাইফ। পুরো দুনিয়ায় মানুষ একদিকে আর উনি একদিকে। ওই বিপদে একমাত্র উনি আমাকে ভুল বোঝেনি। যখন পরিবার দেখলো না তখন উনি আমায় আগলে নিয়েছিল। হাতে টাকা দিয়ে বলেছিল অন্য কোথাও যেয়ে থাক এদিকে আসিস না। মানুষটার কারণেই হয়তো আজও বেঁচে আছি আমি। ওনার অবদান কখনো ভুলবো না আমি।”
রুজাইফ সৌজন্যের হাসি দিলো। শিমু নাক টেনে কান্না গিলে নিলো-“কখনো যদি আমাকে প্রয়োজন হয় তাহলে ডেকো। তোমাদের যে কোন দরকারে আমি এগিয়ে যাব বিনা প্রশ্নে। তোমাদের সামান্য উপকারে আসতে পারলেও নিজেকে ধন্য মনে করবো।”
“আচ্ছা আন্টি। দোয়া করবেন আমার জন্য। আজ আসি।”
“এসো বাবা।”
রুজাইফ বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো। আজম আলী আড়চোখে দেখলো রুজাইফকে। গাড়িতে আজ একটু বেশি চুপচাপ বসে রইলো সে। না চাইতেও অনেক পুরনো স্মৃতি হামলে পড়ছে হৃদয় গহীনে। রাস্তার পাশের দৃশ্য দেখার ভান করে বাইরে তাকিয়ে থাকে সে। ভেজা আঁখি থেকে জল গড়িয়ে পড়তে চায়। অনেক কষ্টে নিজেকে প্রবোধ দেয় রুজাইফ। মনে মনে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হলো পুনরায়। অবিচার করা মানুষগুলোকে সাজা পেতেই হবে। কোন মাফ হবে না ওদের।

বাড়িতে এসে সবার জন্য কেনা কাপড় যার যার হাতে ধরিয়ে দিলো। সেঁজুতিকে দিতে কেন যেন অসস্তি হচ্ছিল। সবাই খুব খুশি নতুন কাপড় পেয়ে। বিশেষ করে নাদিরা রীতিমতো মতো লাফাচ্ছে। সেঁজুতির মুখে হাসি থাকলেও চেহারা মলিন। ফজিলাতুন্নেছা তা দেখে রুজাইফকে বললো-“সবার জন্য এনেছিল সেজুতির জন্য আনিসনি? ও তো আমাদের কাছেই থাকছে এখন।”
রুজাইফ ইতস্তত করে একটা প্যাকেট ফজিলাতুন্নেছার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ফজিলাতুন্নেছার মুখে হাসি ফুটলো। ব্যাগটা হাতে নিয়ে সেঁজুতিকে ডাকলো-“এই মেয়ে, এদিকে আয়।”
সেঁজুতি পায়ে পায়ে এগুলো-“জ্বি দাদী।”
ব্যাগটা সেঁজুতির দিকে বাড়িয়ে দিলো-“নে ধর, এটা তোর জন্য।”
সেঁজুতির মুখে প্রাপ্তির আনন্দ ফুটে উঠলো। মিষ্টি হাসিতে উদ্ভাসিত হলো তার চেহারা-“ধন্যবাদ দাদী।”
ফজিলাতুন্নেছা হাসলো-“ধন্যবাদ আমাকে না দিয়ে। ওকে দে। ওই মনে করে তোর জন্য কিনে এনেছে।”
সেঁজুতি ভয়ে ভয়ে রুজাইফকে দেখলো। মুখ ফুটে কিছু বললো ন অবশ্য। রুজাইফ উঠে দাঁড়ালো-“আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি দিদা। খিদে লেগেছে খাবার দিতে বলো।”
নুমা বললো-“তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।”
রুজাইফ চলে গেলো। সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে শুনলো নাদিরা বলছে-“সেঁজুতি পু, তোমার জামাটা বেশি সুন্দর। কেমন পরীর মতো লাগছে, তাই না দিদা?”
রুজাইফ পিছু ফিরে দেখলো একবার। সেঁজুতি জামাটা গায়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর উজ্জ্বল শ্যামা গাত্রবর্ণে জামাটা আসলেও বেশ মানিয়েছে। প্রশংসা বাক্য শুনে লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সেঁজুতিকে দেখে রুজাইফ মুগ্ধ হলো। এই বিচ্ছু মেয়েটা লজ্জা পেতেও জানে? পরক্ষনেই গম্ভীরতায় ছেয়ে গেলো রুজাইফের মুখচোখ। ফজিলাতুন্নেছার দিকে তাকিয়ে তার হৃদয় থেকে দীর্ঘ শ্বাস নির্গত হলো। দিদা এই মেয়ের কান্ড জানলে ভীষণ কষ্ট পাবে। বিশ্বাস ভঙ্গ হবে দিদার। এমনটা হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। চিন্তিত হয়ে রুজাইফ ঘরে দোর দিলো।

★★★

জেলায় বিজ্ঞান মেলা হবে। চারজনের একটা টিম করে দেওয়া হয়েছে সেঁজুতিদের যেখানে সেঁজুতি টিম ক্যাপ্টেন। আজ শহরে এসেছে তাদের প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিতে। হাতে দশদিন সময় বলে ক্লাসের এক সহপাঠীকে সাথে নিয়ে চলে এসেছে জিনিস কিনতে। কেনাকাটা শেষ করে দেখলে বিকেল গড়িয়ে গেছে। এদিকে সাথের সহপাঠী বলছে, সে আজ আর বাড়ি ফিরবে না। এখানে কাছেই তার খালার বাসা সেখানে রাতটা থেকে যাবে। সেঁজুতির চেহারা ফ্যাকাশে হলো। একা একা কিভাবে বাড়ি ফিরবে সে? আগে কখনো একা এতোদূর আসেনি। কিন্তু ভয়ের কথা সহপাঠীকে জানাতে সংকোচ হলো। মেয়েটা ওকে রেখো চলে যেতেই সেঁজুতি আশেপাশে তাকিয়ে ঢোক গিললো। এদিকটা বেশ ব্যস্ত এলাকা হলেও এখন ফাঁকা হয়ে আছে। হয়তো বাড়ি ফেরার সময় বলে। দাঁড়িয়ে না থেকে হাঁটতে শুরু করলো সেঁজুতি। হাঁটতে হাঁটতে বাজার পর্যন্ত চলে এলো। এদিক থেকে গাড়ি যায় রত্বপুরের। সেঁজুতি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। কোন গাড়ি দেখতে না পেয়ে একজনের কাছে জানতে চাইলো গাড়ি কখন আসবে। সে জানালো কিছুক্ষণ আগেই এলো গাড়ি ছেড়ে গেছে। আরেকটা আসতে হয়তো পনেরো মিনিট লাগবে। সেঁজুতি দাঁড়িয়ে রইলো। ঘড়ি দেখছে বারবার। আর কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। একা একা কি করবে তখন? দুশ্চিন্তায় ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে সেঁজুতি। বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে। আরও অসহায় লাগছে এই ভেবে আজ ফোনটা ভুলে বাসায় ফেলে এসেছে।

রুজাইফ অফিস থেকে বেরিয়েছে। মনমেজাজ অত্যাধিক খারাপ তার। তার বেঁধে দেওয়া একমাসের সময়সীমা প্রায় শেষের পথে। কিন্তু সাজেদদের পক্ষ থেকে কোন আওয়াজ নেই। সন্দেহ হয়েছিল রুজাইফের। এরা নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবে যাতে সম্পদের হক ছাড়তে না হয়। সেই থেকে একজন লোক লাগিয়ে রেখেছে ওদের পেছনে। সেই লোক মারফত খবর পেয়েছে ওরা জমি বিক্রি করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে সেই জমিগুলো যেগুলো তমিজউদদীন রুজাইফকে দিয়েছে। এটা শোনার পর থেকে রুজাইফের মাথা অত্যাধিক গরম হয়ে আছে। এরা জমি বিক্রি করবে তবুও রুজাইফকে তার অংশ বুঝিয়ে দেবে না। তমিজউদদীন তার ছেলেদের এতোটা অথর্ব বানিয়েছে? এদের সাথে যত ভদ্র থাকার চেষ্টা করছে ততই যেন অভদ্র হয়ে উঠছে এরা। এবার শুধু একটা ভুল করুক জেলের ভাত না খাইয়ে ছাড়বে না এদের।

“স্যার।” ড্রাইভার আজমের ডাকে ঘোর ভাঙে রুজাইফের। দেখলো গাড়ি থেমে আছে। সে বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলো-“কি হয়েছে? ডাকছো কেন আর গাড়ি থামিয়েছ কেন?”
আজমের মুখ কাচুমাচু হলো-“স্যার, পিছনে ওই আপারে দেখলাম খাঁড়ায় রইছে। তারে দেইখা মনে হইলো কোন ঝামেলা হইছে?”
রুজাইফ ভ্রু কুঁচকে বললো-“কোন আপা?”
“ওই যে গাড়িতে বালু দিছিল ওই আপা।”
“সেঁজুতি! সে এখানে আসবে কেন?”
রুজাইফ আশেপাশে তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করলো। আজম বললো-“আমিও তাই ভাবতেছিলাম স্যার। এইজন্য দেইখা গাড়ি থামাইলাম। বাজারের ওইখানে খাঁড়ায় আছে। আপনে কইলে গাড়ি ঘুরামু।”
রুজাইফের একবার মনে হলো যা খুশি হোক তার কি। ওই বদমাশ মেয়ে যেখানে খুশি থাক জাহান্নামে যাক। ওকে নিয়ে এতো ভেবে লাভ কি? ওই বংশের মেয়ে ওদের মতোই বদ। পরক্ষণেই দিদার কথা মনে এলো। দিদা জানলে ভীষণ রাগ হবে। রুজাইফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়ি ঘুড়িয়ে নিতে বললো। আজম বেশ খুশি হলো। সে আনন্দচিত্তে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো। সেঁজুতির কাছে যেয়ে গাড়ি দাঁড় করালো। রুজাইফ দেখলো মেয়েটা ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি উদভ্রান্ত। রুজাইফ ডাকলো-“এই মেয়ে, এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে? বাড়ি যাবে তো? উঠে এসো গাড়িতে।”
রুজাইফের গাড়ি দেখতেই যেন জানে পানি পেলো সেঁজুতি। এতোটা শান্তি লাগলো যে ছুটে এসে রুজাইফকে জড়িয়ে ধরতে মন চাইলো। কিন্তু রুজাইফের ‘এই মেয়ে’ ডাক শুনে তার অনুভূতি বুড়িগঙ্গার পঁচা পানিতে তলিয়ে গেলো যেন। সেঁজুতি নড়াচড়া না করে দাঁড়িয়ে রইলো। রুজাইফ চেচিয়ে উঠলো-“আসবে নাকি চলে যাব?”
সেঁজুতি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো-“এই মেয়ে আবার কেমন ডাক? আমার একটা সুন্দর নাম আছে। নাম ধরে না ডাকলে আপনার গাড়িতে যাব না।”
সেঁজুতির কান্ডে রুজাইফ বাক হারা হলো। এই মেয়েটা জাস্ট ইম্পসিবল। বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে থেকেও নিজের মুড বাঁচিয়ে চলছে। চড়িয়ে দাঁত ফেলে দিতে পারলে শান্তি পেতো। রুজাইফ দাঁতে দাঁত চেপে বললো-“ঠিক আছে। তাহলে তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। আসতে হবে না আমার গাড়িতে। আজম গাড়ি চালাও।”
সেঁজুতিও পাল্টা জবাব দিলো-“আমিও দাদীকে বলে দিব তার আদরের নাতি আমাকে বিপদে ফালায়া চলে গেছে। আমার কিছু হইলে সেই দায়ী থাকবে। আজম ভাই সাক্ষী থাকবে। তাই না আজম ভাই?”
আজম মাথা দুলিয়ে সায় জানায়। আবার রুজাইফে নজর যেতে মাথা নেড়ে না করে তবে গাড়ি চালু করলো না। মিনমিন করে অনুরোধ করলো-“স্যার, ছোট মানুষ তো নাম ধরে না ডাকলে মন খারাপ হয়। একটু নাম ধরেই ডাকেন না হয়। ওকে না নিলে সমস্যা হবে। সন্ধ্যা হয়া আসতেছে।”
রুজাইফ হা করে তাকিয়ে আজমকে দেখলো। স্বল্প পরিচিত একটা মেয়েকে নিয়ে আজম এতো চিন্তা কেন করছে? শুধু আজম না বাড়ির সকলে সেঁজুতিকে নিয়ে বেশি বেশি ভাবে। কি আছে এই মেয়ের মধ্যে? কি করে মানুষের মন জয় করে? ভেবে সদুত্তর না পেয়ে রুজাইফ বাধ্য হয়ে ডাকলো-“সেঁজুতি মহারানী, আপনি দয়া করে গাড়িতে আসন গ্রহন করুন।”
সেঁজুতি ছুটে এসে গাড়িতে বসলো-“হয়েছে থাক থাক, এতোটাও ঢং করতে বলতে বলিনি।”
রুজাইফ অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে সেঁজুতিকে ভস্ম করে। আজম বেশ মজা পেয়ে হাসছিল। রুজাইফ তাকাতেই তার মুখের হাসি গায়েব হলো। আমতা আমতা করে জানতে চাইলো-“বাড়ি যাব স্যার?”
রুজাইফ ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর দিলো-“নাহ, কাজি অফিস যাবে। বিয়ে করবো আজ।”
“হ্যাহহহ! কারে?” আজমের চোয়াল ঝুলে গেলো।
“কেন? এই যে পিছনে যে বসে আছে, যার আগে পিছে সবাই ঘুরছো তাকে কি আমার বউ হিসেবে মানায় না?”
রুজাইফের উওর শুনে আজম মুখ হা করে একবার সেঁজুতি আরেকবার রুজাইফকে দেখলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সেঁজুতি বেচারির অবস্থা হলো দেখার মতো। বোয়াল মাছের মতো মুখ করে সে মিররে তাকিয়ে রুজাইফকে দেখছে। আর রুজাইফ হুট করে এমন কথা বলে যেন নিজেই ফেঁসে গেছে। আজম আর সেঁজুতির চেহারা দেখে হাসি পেলো। সেই সাথে বাঁচাল মেয়েটার মুখ বন্ধ করতে পেরে ওর মজা লাগছে, ভীষণ মজা লাগছে। বলা যায় পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।

চলবে—
©Farhana_Yesmin

#যে_থাকে_আঁখি_পল্লবে
#পর্ব-২০

সেঁজুতি ম্লান মুখে ঘরে ঢুকতেই শ্যামলী ছুটে এলো। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো-“মারে, এতো কি রাগ করলি যে মারে ভুইলা গেলি? আমারে তোরা ভালো বাসোস না। একটা মাইয়ারে তো দেখার ভাগ্য হয় না। এখন তুইও এমুন করতেছোস।”
সেঁজুতি মিনমিন করলো-“মা কি কও এইগুলা? তোমারে খুব ভালোবাসি আমি।”
“কচু বাসোস। এতদিনে একবারও মারে দেখতে আইছোস?”
সেঁজুতি মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে-“পড়ালেখার চাপ মেলা। তারউপর চোখ কান খোলা রাইখা চলতে হয়। সময় পাই না মা।”
শ্যামলী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সেঁজুতিকে দেখলো। মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে দেখতে নাকি চোখের ভুল?
“এই ছেড়ি এইদিকে আয়।”
দাদীর ডাকে বিরক্ত হলো সেঁজুতি। বুড়ী সবসময় বেটাইমে ডাকে। সে এগিয়ে গেলো শামসুননাহারের কাছে। বড় চৌকিতে বসে আছে সে। সেঁজুতি কাছে যেতেই শামসুননাহার তার হাত ধরে টানলো। ফিসফিসিয়ে জানতে চাইলো-“পাইছোস কিছু?”
সেঁজুতি মাথা নাড়ে। শামসুন্নাহার মুখ বাঁকাল-“কেন পাস না? না পাইলে খবর তো বাইর করতে পারোস। মাইয়া মানুষ পুরুষরে ঘায়েল করার কত কায়দা জানে। তোরা কি জানোস? দুই বইন মিলা খালি বাপের মাতা খাইতে পারোস।”
শ্যামলী মৃদুস্বরে প্রতিবাদ করলো-“আম্মা, এইসব কি কন আপনে? আমার মাইয়ারে কি করতে কইতেছেন? ছিহহ।”
শামসুননাহার তেতে উঠলো-“এতো ছি ছি করিস না বউ। সব যখন দখল কইরা নিব তখন বুঝবি। এখন তো ঘর গেছে, পরে পথে বসা লাগবে। ওই পোলা থ্রেট দিছে, এক কানি জমি কম দিলে আমার পোলাগো জেল খাটাইব। তো আমি কি এখন বইসা বইসা পোলাগো জেলে যাওয়ার অপেক্ষা করুম?”
“তাই বইলা আমার মাইরারে আকাম করতে কইবেন? আর কাউড়ে নজরে পড়ে না আপনের?”
শামসুন্নাহার মুখ ঝামটা দিলো-“বেশি বকবক করিস না বউ। তোর এক মাইয়া বাপের মুখে চুন কালি দিয়ে পালায়া বিয়া করছিল। আরেক মাইয়ার লাইগা আমার সাজেদের মাইয়ারে বলি হওয়া লাগছে। তো তোর মাইয়ারা কি রানী? যা মন চায় তাই করবো? বাপের কোন কামে না আইলে এই মাইয়া দিয়া করবি কি? তুই যেমন আকাইম্মা বেডি মাইয়াগুলারে ওমন বানাইছোস। এক বেডারে বশ করতে পারে না। খালি জবান চলে আমাগো লগে।”
শ্যামলী বাকহারা হলো শাশুরীর বাক্যবানে। সেঁজুতির গা গুলিয়ে এলো দাদীর কথায়। কি বাজে ইঙ্গিত দিচ্ছে তাকে। তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো-“দাদী, উনারে বোকা পাইছো তোমরা? জমির কাগজ ঘরে রাইখা দিব?”
শামসুন্নাহার মাথা নাড়ে-“ঘরেই রাখছে। নিজের জমির কাগজ মানুষ অফিসে থোয় না। ওর অফিস চেক করছি আমরা।”
সেঁজুতি চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো-“অফিসে চেক করছো? কেমনে?”
শামসুন্নাহার ধমক দিলো-“তা জাইনা তোর কি কাম? তোরে যে কাম দিছি সেইটা ঠিক মতো কর। ওর কাছ থিকা কাগজ আনবি যেমনে পারোছ। দরকার লাগলে ওরে তোর রুপ দিয়া পাগল করবি।”
“ছিহহহ দাদী, এইসব কি কও তুমি?”
সেঁজুতি আঁতকে উঠলো। শামসুননাহার হুমকি দিলো-“ঠিক কতা কই। হোন, তুই কিছু করতে না পারলে সবচেয়ে বেশি ভুগবো তোর বাপ। যা কিছু থাকবো সব পাইবো তোর দুই চাচা। মাঝখানে তোরা নিঃস্ব হইবি। তোর বাপে স্কুলের কাম করছে সারাজীবন, সন্তানের মতো স্কুলরে আগলায় রাখছে। স্কুল ওই পোলা দখল করলে তোর বাপে কি করবো? চিন্তা কর, এমুন হইলে তোর বাপ সহ্য করতে পারবো?
“দাদী! এমুন কইরা কইতে তোমার বুক কাঁপে না? আব্বা কি তোমার পোলা না?”
“আমার কতা বাদ দে। তোগো তো বাপ হয়। বাপের লাইগা কি করোস সেইটাই দেখুম আমি।”
সেঁজুতির কেমন হাসফাস লাগে। দম আঁটকে আসতে চায়। রুজাইফ বড্ড চালাক। সেঁজুতির অভিসন্ধি বুঝলে কি করবে ভাবলেও বুক কাঁপে তার। রুজাইফের ঠান্ডা চোখজোড়ার কথা ভেবে গা কাঁপুনি দিলো তার। শামসুন্নাহার ডাকলো-“শোন, কাছে আয়।”
সেঁজুতি পায়ে পায়ে এগিয়ে আসতেই তার হাতে কিছু গুঁজে দিলো-“খাওনের মধ্যে মিলায় দিলে ঘুমাইব ওরা তুই নিশ্চিতে খুঁজতে পারবি।”
সেঁজুতি ভয় পেয়ে হাতের জিনিস ছুঁড়ে ফেলে দিলো-“আমি ওই বাড়ি যামু না আর।”
শামসুন্নাহার রেগে গেলো-“কাম না হওয়া পর্যন্ত তুই ওই বাড়িতেই থাকবি। এই বাড়িতে তোর জায়গা নাই।”
সেঁজুতি কেঁদে দিলো-“মা, দাদী কি কয় এইসব?”
শ্যামলী অসহায় চোখে মেয়েকে দেখলো। শামসুন্নাহারের সামনে কিছু বলার সাহস হলো না।
“শোন, যা কইছি তা না করলে তোর কপালে খারাপি আছে। তোর লাইগা তোর বাপ ভুগবো এইটা যদি না চাস তাইলে যা কইতেছি তাই কর। যা এখনি ওই বাড়িতে ফিরা যা। আর যাওয়ার সময় এইডা নিয়া যা।”
সেঁজুতি চোখের জলে নাকের জলে একাকার হয়ে কাঁদতে কাঁদতে রুজাইফের বাড়িতে ফিরে এলো। কি বিচ্ছিরি ফাঁদে আঁটকা পড়েছে সে। কি করবে এখন?

★★★

দু’দিন হলো বাড়ির পরিবেশ কেমন সুনসান নীরব পায়। নীচে বসার ঘরে বেশিরভাগ সময় দিদা আর ফুমা টিভি দেখে। মাঝে মাঝে হাশেমকেও দেখা যায় তাদের সাথে। আগে সেঁজুতিরা মিলে হৈহল্লা করতো ইদানীং একদমই চুপচাপ চারপাশ। আজ না পেরে নুমাকে জিজ্ঞেস করে ফেললো-“বাসা এতো শান্ত কেন ফুমা? ওরা কেউ বাসায় নেই নাকি?”
নুমা মাথা দুলায়-“রুমেই আছে ওরা। কিন্তু সেঁজুতির কি যেন হয়েছে। ও চুপচাপ থাকে বলে ওরাও চুপ হয়ে গেছে।”
“ওই মেয়ের আবার কি হয়েছে?”
“জানি না। মন মরা হয়ে থাকে সবসময়।”
রুজাইফ জবাব না দিয়ে দোতলায় উঠে এলো। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে নিচে নামতে গিয়ে নাদিরার ঘরে উঁকি দিলো।
“নাদিরা, খেতে যাবি না?”
নাদিরা আর সেঁজুতি টেবিলে বসে ছিলো। রুজাইফকে দেখে সেঁজুতি সংকোচে গুটিয়ে গেলো। নাদিরা দাঁড়িয়ে বললো-“দা ভাই, দেখো আপু খেতে যাবে না বলছে।”
রুজাইফ সেঁজুতিকে দেখলো একনজর। সেঁজুতি মাথা নিচু করে বসে আছে। নাদিরাকে বললো-“তুই নাহিয়ানকে ডেকে নিয়ে নিচে যা আমি আসছি।”
নাদিরা মাথা দুলিয়ে চলে গেলো। সেঁজুতির বুক টিবটিব করছে। এই লোকটা নাদিরাকে চলে যেতে বললো কেন? কি করবে তার সাথে? সেঁজুতি ভয়ে গাট হয়ে বসে রইলো।
রুজাইফ ডাকলো-“সেঁজুতি, কি হয়েছে তোমার?”
সেঁজুতি তাকালো না। ওভাবেই বসে থেকে মাথা নাড়লো-“কিছু না।”
“তাহলে মন খারাপ করে আছো কেন?”
“এমনিতেই।”
সেঁজুতির এই শীতল কন্ঠ কেন যেন ভালো লাগছে না রুজাইফের। চটপটে চঞ্চল মেয়েটাকে উচ্ছ্বাস প্রকাশে মানায়। এরকম চুপচাপ বসে থাকা মানায় না। রুজাইফের কি হলো সে জানে না। সেঁজুতির সামনের চেয়ারে বসলো-“দেখি তাকাও তো, বলো আমাকে কি হয়েছে।”
সেঁজুতি তাকালো না। রুজাইফের কোমল গলা শুনে তার বুকে উথাল পাতাল হচ্ছে। চোখ ভিজে যাচ্ছে আপনাতেই। রুজাইফ আচমকা সেঁজুতির চিবুক ধরে মুখটা তুললো। সেঁজুতি ভয়ে চোখ বুঁজে ফেলতেই ওর নেত্র বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। রুজাইফের বুকটা জ্বলে গেলো যেন। মেয়েটা কাঁদছে কেন? এমন কি হলো? সে কাঁপা হাতে আঙুল দিয়ে ওর চোখের জল মুছে নিলো। অস্থির হয়ে জানতে চাইলো-“কাঁদছো কেন মেয়ে? কি হয়েছে বলবে তো?”
সেঁজুতি ভেজা চোখ দুটো মেলে চাইলো। রুজাইফের সাথে চোখাচোখি হলো। রুজাইফের নয়নে চিন্তার আভাস দেখে অবাক হলো খানিকটা। সেঁজুতি গলায় অভিমান ঢেলে বললো-“আপনে কি আব্বার থিকা স্কুল কাইড়া নিবেন?”
রুজাইফ থমকে গেলো। বুঝতে চাইলো সেঁজুতি কি বলতে চাইছে আসলে। কেউ হয়তো কিছু বলেছে মেয়েটাকে। রুজাইফ বললো-“এসব নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে সেঁজুতি। তুমি ছোট মানুষ পড়ালেখা করো মন দিয়ে। এসো খেতে এসো।”
সেঁজুতি মাথা নাড়ে-“নাহ, আগে বলেন আপনে সত্যিই আমার আব্বার থিকা স্কুল নিয়া নিবেন?”
রুজাইফের চেহারা কঠোর হলো-“ওটা আমারই ছিলো মাঝে তোমার বাবা স্কুলের দেখভাল করেছে। নিজের জিনিস কি করে কেড়ে নেওয়া হয় বলবে?”
রুজাইফের কথাটা মেনে নিতে পারে না সেঁজুতি।স্কুলটা বাবার অনেক প্রিয়। সারাটা জীবন এই স্কুলের উন্নতির জন্য অনেক খেটেছে। সে কথা মনে করে সেঁজুতির নয়নের জল থামলো না। ওর করুন মুখপানে চেয়ে কড়া কথা বলতে যেয়েও বলতে পারে না রুজাইফ। উল্টো মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাকলো-“চলো খেয়ে নেবে। সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।”
সেঁজুতি নড়লো না। রুজাইফ ধমকে উঠলো-“খেতে আসবে নাকি কালই তোমার বাবাকে স্কুল থেকে বের করে দেব?”
সেঁজুতি চমকে উঠে দাঁড়ায়। ভীত কন্ঠে বলে উঠলো-“আমি যাইতেছি। আপনে যা কইবেন আমি শুনবো তাও আমার আব্বারে কিছু কইরেন না।”
রুজাইফ মাথা নাড়লো-“নিজের কাজ মন দিয়ে করো তাহলে ভেবে দেখবো তোমার কথা।”

পরের কয়েকটা দিন সেঁজুতি লক্ষী বালিকা সেজে রইলো। অভুত পরিবর্তন এলো ওর আচরণে। সন্ধ্যায় রুজাইফ আসার আগে সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে পড়তে বসছে। প্রায় দিনই চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে সবাইকে। রুজাইফ অবাক হলেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুপচাপ সেঁজুতিকে চোখে চোখে রাখে। একটা অফিশিয়াল দাওয়াত ছিলো বলে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হলো তার। দেখলো বসার ঘরে নাদিরা নাহিয়ান আর সেঁজুতি মিলে চা খাচ্ছে। নাদিরা রুজাইফকে দেখে হাসলো-“চা খাবে দা ভাই? আজ সেঁজুতি আমাদের কমলা চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে। দিদা আর মা বাবাও খেয়েছে।”
রুজাইফ বললো-“দিদা কি ঘুমিয়েছে?”
“হুমম। কত রাত হয়েছে দেখেছো? আমরাও ঘুমাতাম তোমার জন্য জেগে আছি।”
“আমি চলে এসেছি তোরা ঘুমিয়ে যা।”
নাহিয়ান উঠে দাঁড়ায়-“ব্রো চা বেশ মজা। খেয়ে দেখো। আরাম পাবে।”
রুজাইফ মাথা নাড়ে-“এখন না। গোসল করে খাবো এককাপ। খুব ক্লান্ত লাগছে।”
নাদিরা মাথা দুলাল-“আচ্ছা, তোমার চা দিয়ে আসছি ঘরে।”

গোসল করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো রুজাইফ। এতো ক্লান্তিতে চায়ের কথা বেমালুম ভুলে গেলো। চোখ দুটো কখন বুজেছে টের পায়নি। কত রাত হবে জানে না। খুট করে আওয়াজ হতেই ঘুম চটে গেলো। ছায়ামুর্তিটিকে খুব সাবধানে নড়াচড়া করতে দেখে প্রথমে ভয় পেলেও পরে পরিচিত নারী অবয়ব চিনতে ভুল হলো না তার। পরক্ষণেই চা খাওয়ানোর রহস্য পরিস্কার হলো তার। ভীষণ রেগে গেলো রুজাইফ। এই মেয়ে আবারও ভুল করলো? এবার তো ওকে মাফ করা যাবে না। শাস্তি ওকে পেতেই হবে আজ। রুজাইফ ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো বিছানায়। দেখলো নারী মুর্তিটি তার টেবিলের লকারটা ভাঙার চেষ্টা করছে মন দিয়ে। মাঝে মাঝে রুজাইফকে দেখছে তাকিয়ে। মেয়েটা তার কাজে মন দিয়েছে এমন সময় হুট করে হ্যাচকা টানে বিছানায় গড়িয়ে পড়লো সেঁজুতি। ভয়ে চেচিয়ে উঠতে চাইলেও পারলো না। ওর মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরা হয়েছে। ওর কানের কাছে ফিসফিস হলো-“আবারও আমার ঘরে এসেছ তুমি? তবে আজ আর মাফ পাবে না তুমি। এই অপরাধের সাজা তোমাকে পেতেই হবে সেঁজুতি। বলো কি শাস্তি চাও?”
রুজাইফকে স্বজ্ঞানে পেয়ে ভয়ে জ্ঞান হারানোর অবস্থা হলো সেঁজুতির। কি হবে এখন? কি বলবে রুজাইফকে?

চলবে—
©Farhana_Yesmin