সুগন্ধি ফুল পর্ব-৪৬

0
283

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৪৬
#জান্নাত_সুলতানা

বাহিরে আলো ফুটতে অনেক দেরি। আব্রাহাম তখন ওয়াশ রুমে। এখনো আজান হয় নি। মেহরিন নিজের ভেজা চুল গামছা দিয়ে বেশ কয়েকবার মুছে ফেলেছে। দ্রুত শুঁকিয়ে নিতে হবে চুল। আব্রাহাম চলে যাবে এখন। পরে চুল ভেজা থাকলে মা নিশ্চয়ই সন্দেহ করবে। এদিকে আব্রাহাম চাইছে না সে এখানে এসছে শাশুড়ী সেটা জানে। মেহরিন গামছা রেখে আব্রাহাম এর হুডি আর প্যান্ট চেয়ার থেকে এনে বিছানায় ভাজ করে রাখলো। তখন হুডির পকেটে কিছু লাগলো মেহরিন এর হাতে। সে কৌতূহল নিয়ে একবার দেখার জন্য উদ্যত হয়েও পরক্ষণেই সেই চিন্তা বাদ দিলো। বিছানায় রেখে যখন চলে যাবে তখন আব্রাহাম এর গম্ভীর স্বর ভেসে আসে,

-“ওটা বের করে নাও। নাকের ফুল আর একটা চেইন আছে। ভাইয়া গতকাল ফিরেছে। বিশেষ করে এটা দিতেই আসা হয়েছিল।”

মেহরিন এর বড্ডো হাসি পেয়ে গেলো। বোকা সে। তবে অতোটা নয়।

-“আচ্ছা এগুলো দিতে এসছেন তাহলে।”

আব্রাহাম অপ্রস্তুত হলো। মেয়ে টা তাকে নিয়ে উপহাসের সুর তুলছে। মনে মনে এটা ভাবছে না তো, গিফট দিতে এসে,,, আব্রাহাম আর ভাবে না। কি অদ্ভুত। সে নিজের সাফাই কেনো দিচ্ছে? ভেজা চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে সে এসে প্যান্ট হাতে তুলে নিলো। মেহরিন এর কথায় সম্মতি দিয়ে বললো,

-“হ্যাঁ।”

মেহরিন ঠোঁট টিপে হাসলো। গিফট দিতে এসছে এটা তো একটা বাহানা মাত্র। তবে আর কিছু বললো না। আলো ফোটার আগে আব্রাহাম বেরিয়ে গেলো। মেহরিন এর দেহ দুর্বল হলে-ও মন চনমনে হয়ে উঠলো। কোনো এক পুরুষ রাতবিরেত তার জন্য আসবে এ যেনো স্বপ্ন বলা চলে। তবে আজ তা বাস্তব। সে আপন মনে এই প্রেমিক রূপে থাকা অপ্রেমিক কে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করে দিয়েছে বহু আগে থেকে।

——

-“কি করা হচ্ছে সুগন্ধি ফুল?”

ঘুমঘুম স্বরে আবরাজের প্রশ্নে চমকে উঠলো ফিজা। ত্বরিত নিজের হাতের ফোন লুকিয়ে ফেলার পায়তারা করে। বালিশের তলায় রাখতে গিয়ে ঠিকঠাক স্থান খুঁজে পায় না। তার আগেই হাতে ধরে ফেলে আবরাজ। ফিজা ঠোঁট কামড়ে ধরে। কি হবে এখন? আবরাজ ফোন চেক করবে? এ-সব ভাবতে মেয়ে টার গলা শুঁকিয়ে আসে। কাঠকাঠ হয়ে পানির তেষ্টা অনুভব করলো। আবরাজ এরমধ্যে আবার বললো,

-“লুক এট মি।”

ফিজা অন্য দিকে তাকিয়ে। আবরাজ এক হাতে ফোন আরেক হাতে মেয়ে টার চোয়াল চেপে ধরে নিজের দিকে করে। ফিজা পিটপিট করে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“কিছু বলবেন?”

-“গিভ মি দ্য ফোন।”

-“টাইম দেখবেন তো? আটটা সতেরো ব,,,

-“শাট আপ সুগন্ধি ফুল।”

চমকে উঠলো ফিজা। চালাকি কাজে লাগে না। আবরাজ হেঁচকা টানে ফিজা কে নিজের কোলে তুলে বসিয়ে ফোন টা নিজের হাতে নিয়ে নিলো। পুরুষালী শক্ত হাতের থাবা থেকে ফিজা ফোন টা রক্ষা করতে পারে না। আবরাজ একদম দুজনের চোখের সামনে রেখেছে ফোন। ফোনের লক খুলতে ভেসে উঠলো একটা ভিডিও। মেয়ে টা শাড়ী পরছে। মোমবাতির আগুনের আলোতে মেয়ে টার ফরসা শরীর ও আগুনের ন্যায় জ্বলজ্বল করছে। ফিজা এক চোখ খুলে সামনে দেখলো। তখন ও ভিডিও প্লে হচ্ছে। ফিজার লজ্জায় কান গরম হয়ে এলো। আবরাজ শব্দ করে হেঁসে উঠলো। তারই ফোনে মেয়ে টা নিজের ভিডিও দেখছে। ফিজা তখন সাফাই দিলো,

-“আমি এটা ইচ্ছে করে দেখি নি। বিশ্বাস করুন। আপনার ছবি দেখছিলাম তারপর হঠাৎ এটা সামনে চলে আসায়।”

মিথ্যা ঢাকতে গিয়ে সত্যি বলে ফেলেছে মেয়ে টা। কি আশ্চর্য কথাবার্তা। আবরাজ তখন ও ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি স্থির। হিমশীতল চাহনিতে দেখতে থাকে কোমরে শীফন শাড়ির হাতে কুঁচি গুঁজতে থাকা ফরসা হাত টার দিকে। ফরসা কোমরে একটা তিল জ্বলজ্বল করছে। আবরাজ সেটার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে। ফিজা নিজে কে বড্ডো অসহায় লাগে। আবরাজ ফোন টা রেখে বউয়ের বাঁকানো কটিদেশ হাত ছুঁয়ে দিলো। মেয়ে টার নরম তুলতে শরীর টা শক্ত পুরুষালী পুরুষের হাতে বন্দী করে নিলো। হিমবাহের ন্যায় শীতল কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“আই নিড সাম ফাস্ট মর্নিং কিস।”

মেয়ে টার শরীর ঝিমিয়ে আসে। কথার খেই হারিয়ে যায়। রাতে এতো পাগলামি করেও আবার এখন শুরু হয়েছে। ফিজা শরীর টা ব্যথায় যেনো টনটন করছে। আবরাজ এর হাতের বাঁধন দৃঢ় হয়। চোয়াল চেপে ধরে মুখ এগিয়ে আনে ফিজার। শক্ত পুরুষালী ঠোঁট দ্বারা চেপে ধরে নরম ঠোঁট। এক সময় গলা থেকে ঘাড়ে এসে থামে। সেখানে দাঁত দিয়ে কামড়ে দিয়ে তবে ছাড়ে ফিজা কে। ফিজা কিছু বলে না। আবরাজ হাস্কি আওয়াজে বলে,

-“তোমার নেশা আমার সর্বাঙ্গে ছেয়ে আছে। তোমাকে দেখলে আমার নিজে কে মাতাল মাতাল লাগে, সুগন্ধি ফুল।”

পারফিউম এর মাতাল করা সুবাসে ফিজার ঘোর লেগে যাচ্ছে। আবরাজ ততক্ষণে ওয়াশ রুম চলে গিয়েছে। ফিজা তখন ও বসে আছে। গায়ের কম্ফর্টার টেনে ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।
আবরাজ শাওয়ার নিয়ে এক্কেবারে বেরিয়ে এলো। পরনে একটা টাওয়াল মাত্র। চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। ফিজা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাব ছিল। পানির ঝাপটা মুখে পড়তে চমকে উঠলো কিছু টা। ত্বরিতে সামনে দৃষ্টি ফেলে দেখলো নিজের ব্যাক্তিগত পুরুষ টা দাঁড়িয়ে তার সামনে। নিষ্প্রভ দৃষ্টে তাকিয়ে আবরাজ বউয়ের দিকে। এই চাহনির ব্যাখা ফিজা জানে। সে সব অগ্রাহ্য করলো আপাতত। বরং বালিশে হেলান দিয়ে বসে নিজের গায়ের পোশাক ঠিকঠাক করতে করতে আবরাজ কে স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলো,

-“এখন কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”

-“বউয়ের দিকে যে হাত বাড়িয়েছে সেই হাত টা কে সাইজ করতে যাচ্ছি।”

আবরাজ ঝুঁকে এলো। ফিজার চোয়াল টা আলতো করে চেপে ধরে কপালে চুমু খেলো। ফিজার সেদিকে খেয়াল নেই। আবরাজ এর কথায় মেয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়। অস্ফুটে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে,

-“জুনায়েদ!”

আবরাজ এর আলগোছে চোয়াল চেপে রাখা হাতের বাঁধন দৃঢ় হলো। বিছানায় এক হাঁটু রেখে ফিজার কোমর এর নিচে এক হাত রাখলো। আচমকাই হেঁচকা টানে ফিজার দেহটা নিজের সাথে ঘনিষ্ঠ করলো। চক্ষু গরম করে চাইলো বউ দিকে। যেনো চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিতে চাইলো। চোয়ালে চাপ প্রয়োগ করে ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“আই এম সেইং শুয়োর টার নাম তুমি মুখে নিবে না সুগন্ধি ফুল। গট ইট?”

এহন কঠোরতায় ফিজার দেহ মন কম্পিত হলো। চোখ পিটপিট করে তাকাতে আবরাজ ওর গলার দিকের টপস টা আবারও টেনে নামিয়ে নিলো। ফিজা আঁড়চোখে একবার সে দিকেও দৃষ্টিপাত করে। তবে টুঁশব্দ করে না৷ নাম মুখে নেওয়াতে এমন করছে না জানি এখন জুনায়েদ কবিরের হয়ে সাফাই দিলে কি করবে। চুপ থাকা শ্রেয় মনে হলো। তবে তারচেয়ে বেশি যেটা ভাবাচ্ছে জুনায়েদ এখন কোথায়? আবরাজ নিশ্চয়ই এতো সহজে জুনায়েদ কে পেয়ে যাবে না। ফিজার ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আবরাজ এর দৃষ্টি শীতল হলো। কিছু সময় শান্ত দৃষ্টে চেয়ে রইলো বউয়ের আলাভোলা, মায়াবী মুখ টার দিকে। এরপর চোয়াল ছেড়ে বউয়ের এলোমেলো চুলে হাত চালালো। কিছু না বলে আবরাও কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ওঠে চলে গেলো। ফর্মাল শার্ট এর ওপর ওয়েস্ট কোট টা পড়ে ব্লেজার হাতে নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করলো। একবার পেছনে তাকালো না পর্যন্ত। এতো ধমকা ধমকি করে একবার সরি ও বললো না। ফিজার মন রাগে অভিমানে টইটম্বুর হয়ে আবার শুয়ে পড়লো। ওঠে যে ফ্রেশ হবে সেই ইচ্ছে শক্তি টুকু আপাতত নেই। শরীর দুর্বল সাথে এই আবরাজ খান নামক পুরুষ টার কথায় সে মর্মাহত।

—–

জুনায়েদ এর শরীরে হাড় গুলো ভেসে উঠেছে এই কয় দিনে। পেটের দিকে পাঁজর গুলো দূর থেকে অনায়াসে গোনা যাচ্ছে। চোখ মুখ শুঁকিয়ে গর্তে চলে গিয়েছে। চোয়াল টা নেতিয়ে পরেছে। বলিষ্ঠ দেহ টা দিয়ে যেকোনো নারী কে বিছানায় নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট ছিলো। এখন আকর্ষণীয় এই শরীর এর করুণ অবস্থা। হাতের চকচকে ট্যাটু টার অবস্থা জীর্ণশীর্ণ হয়ে ধূসর দেখাচ্ছে। পরিপাটি চুল গুলোর অবস্থা এলোমেলো। ধূসর রঙের চোখ জোড়ার মনি টা বড্ডো ক্লান্ত। আবরাজ এর শান্তি লাগে। তবে বুকে আগুন জ্বলছে। কিসের আগুন? ওই যে বউয়ের দিকে নজর দিয়েছে। আবরাজ এর ব্লেজার টা সাব্বির হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবরাজ কফির মগে বেশ তৃপ্তি নিয়ে ঠোঁট বসিয়ে চুমুক দিচ্ছে। আর জুনায়েদ কে দেখছে। মানুষ একবার ভুল করলে ক্ষমা করা যায়। ছাড় দেওয়া যায়। কিন্তু কতবার সেই মহান ব্যাক্তির রোল প্লে করা যায়? আবরাজ যেনো ক্লান্ত। জীবনে কখনো যা সে করে নি বউয়ের কথা ভেবে ভেবে সেভাবে চলার চেষ্টা করছিলো। তবে কিছুতেই তাকে সেভাবে চলতে দিচ্ছে না পরিস্থিতি বলো আর কিছু বেঈমান মানুষ নামক কিট বলো। জুনায়েদ তবুও একটু নুয়ে পড়ে নি। কি কঠোর দৃষ্টিতে আবরাজ এর পানে চেয়ে। আবরাজ কফি টা শেষ করে একজন গার্ড এর হাত থেকে একটা হকি স্টিক হাতে তুলে নিলো। সেটা নিয়ে গাড়ির সাথে ঠেশ দিয়ে রাখলো। ওয়েস্ট কোট এর বুকের দিকের একটা বাটন খুলে শার্ট এর হাতা গুটিয়ে কনুইয়ের ওপর সুন্দর করে ভাজ করে রাখলো। গাড়ির সাথে রাখা হকি স্টিক টা আবার হাতে তুলে লম্বা লম্বা কদম ফেলে এগিয়ে গেলো শক্তপোক্ত মেঝেতে পরে থাকা জুনায়েদ এর দিকে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]