#বড়োজা
#Nadia_Afrin
২৯
লতা আপা তার বাড়ি নিয়ে যায় আমায়।পথিমধ্যে রাশেদ স্যারের সম্পর্কে বলে।
লোকটা শুরু থেকেই অসৎ ছিল।তাই পতন হয়েছে এতো করুণ ভাবে।
সৃষ্টির এই জগতে অন্যের ওপর বল প্রয়োগ করে,অন্যায় করে কেউ পার পায়নি।দেরি করে হলেও ধ্বংস হয়েছে।
আমার নিজের জীবন দিয়েই এটা বুঝেছি আমি। অন্যায়কারীরা দিন শেষে ধ্বংস হয়েছে।কোটিপতিও ফকির হলো চোখের সামনে।
আমার জীবনে দুঃখ থাকলেও সৎ ছিলাম আমি।তাই সফলতা পেলাম শেষ পর্যন্ত।
লতা আপা ধীরে ধীরে আকাশদের বাড়ির রাস্তায় ঢুকছে।চিরচেনা এই রাস্তাটা চিনতে আমার খুব অসুবিধা হলোনা।
আপার দিকে সরু চোখে তাকাতেই তিনি শুধু বললেন,”আমায় অনুসরণ করো।বুঝবে সবটাই।”
আর কিছু বললাম না আমি।
পরণে ছিল দামি বোরখা আমার।গরমের জন্য হিজাব বাধতে পারিনি।মাথার সঙ্গে কোনোমতে পেচিয়ে মাস্ক পড়ে এসেছিলাম।
দমকা হাওয়ায় মাথার হিজাব খুলে কাধে এসে পড়ে।মাস্ক খোলাই ছিল তখন।
দ্রুতই মাথা ঢেকে নেই।ইতিমধ্যেই কিছু মহিলা আমায় দেখে আলোচনা শুরু করেছে।একপ্রকার ফিসফিস শুরু হলো।
যে যার বাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় এসে দাড়ায়।
আমার দিকে ইশারা করে বলে,”এই সেই তন্নি!
সেই তন্নি!
আমি ধীরে ধীরে হেঁটে যাই।
একজন আরেকজনকে ডেকে বাড়ি থেকে বের করে।উৎসুক জনতা আমায় দেখে ভীষণ অবাক।কেউ কেউ ফিসফিসিয়ে কী কী যেন বলছে।
সেদিনও এই পথে হেঁটেছিলাম আমি। নিঃশ্ব হাত ছিল সেদিন।
আজও আমি হাঁটছি।তবে আজ আমি পরিপূর্ণ।যেই সম্মান সেদিন পাইনি,আজ তা পাচ্ছি।
এই মানুষগুলো সেদিন ও কানাঘুষা করেছিল আমায় নিয়ে।সেদিন আমার নিন্দা করতেই ব্যস্ত ছিল।
আজ তারা আমার সফলতায় হিংসা করছে।
সৃষ্টির এই জগতে কঠোর পরিশ্রম করলে সবই সম্ভব।
আমার সফলতা দেখে হয়ত অনেকেই বলে এতোকিছু পেয়েছি এতো কম সময় কী করে?
কী এমন কাজ করলাম আমি!
সময়টা কম হলেও আমার পরিশ্রম ছিল অক্লান্ত।
কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি কাজের দায়ে।কড়া রোদের মাঝে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি।আমিই জানি আমি কী করেছি।
আমার একটা দিনের পরিশ্রম লোকের সাত দিনের সমান।
যখন দুঃখ ছিল আমার জীবনে,কেউ বলেনি দুঃখ কেন এলো?কীভাবে এলো?
আজ যখন সফল হয়েছি প্রশ্ন তোলে সকলেই।
সৃষ্টিকর্তা কাকে কখন কোন পজিশনে রাখে তা বোঝা বড়ো দায়।
আমার দুঃখের ভার কম ছিল না।তাই এই সুখটাও প্রাপ্য।
একবার ভাবুন জীবনে কী না সহ্য করেছি আমি।
সৎ থেকেছি বলেই কিন্তু সফলতা পেয়েছি।অসৎ থাকলে কখনোই পেতাম না।
তাই বলি,সততা ও পরিশ্রম দিয়ে দুনিয়ার সব অসাধ্য সাধন করা যায়।হয়তো কেউ দ্রুতই পেয়ে যায়,কেউ বা একটু দেরিতে।
এসব ভাবতে ভাবতে ঠিক আকাশের বাড়ির পাশে এসে থামে লতা আপা সঙ্গে আমিও।এক দৃষ্টিতে বাড়ির দিকে তাকিয়ে রই।রং চটা,জানালা ভাঙা,মাঝে মাঝে দেয়াল ভাঙা একটা বিদঘুটে দেখতে বাড়ি।
ছেলে মেয়েকে নিয়ে পেছনে পেছনে আসছে।
মেয়ের হাতে একটা ক্যামেরা ছিল।
মেয়ে ক্যামেরাতে বাড়ির ছবি তুলে বলে,”বাড়িটা কেমন পুরোনো।যেন ভুতের বাড়ি।এটা কার বাড়ি ভাইয়া?”
আলিফ মুচকি হাসে।অথচ চোখে পানি।
মুচকি হেসে বোনের উদ্দেশ্যে বলে,”এটা একসময়ের রুপকথার বাড়ি ছিল।এখানে একটা মিষ্টি রাণী ও তার দুই রাজকন্যা-রাজপুত্র থাকতো।
দুষ্টু রাজা ডাইনির কবলে পড়ে রাণী সহ রাজকন্যা-রাজপুত্রদের তাড়িয়ে দেয়।
এরপর এই রুপকথার বাড়ি ভুতের বাড়িতে পরিণত হয়।”
মেয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বলে,”এটাতো ঠিক রুপকথার গল্পের মতো।
আচ্ছা ঐ রাণী,রাজকন্যা-রাজপুত্র কোথায় আছে?”
পাশ থেকে আমি বলি,”তারা এখন তাদের নিজস্ব রাজপ্রাসাদে রাজরাণী হয়ে আছে।আগের চেয়ে ভালো আছে।”
মেয়ে বেজায় খুশি।
ছোট্ট বাচ্চাটা বুঝতেই পারছে না এই রাজকন্যা-রাজপুত্র ওরা নিজেরাই।
লতা আপা বলেন,”চলো তন্নি।এই পাশের বাড়িতেই ভাড়া থাকি আমি।”
তার বাড়িতে প্রবেশ করি আমরা।
উনার ছেলে-মেয়েরা বড়ো হয়ে গেছে।পড়াশোনা করেনা কেউই।কাজ করে খায়।
আপার স্বামী রিক্সা চালানো ছেড়ে দিয়েছে।একটা কম্পানির ঝাড়ুদার পদে আছেন।
আপা আমাদের বিছানায় বসতে দিয়ে বলে,”এই বাড়িটাই ভাড়া নিয়েছি আমি।ওদের নাটক দেখি মাঝে মাঝেই।ভালোই লাগে।
একঘরে হয়ে আছে ওরা।প্রায় প্রায়ই এলাকার ছেলেরা বাড়িতে ঢিল ছুড়ে মারে।কোনো সম্মান নেই বলতে পারো।
আকাশদের কম্পানি নিলামে উঠেছে সেই কবেই।চাকরির চেষ্টা করেছিল।হয়েও ছিল একটা।বউয়ের জন্য সেটাও গেছে।বউ সকালে তাকে অফিস যেতে দিতে চায়না।ওর সঙ্গে ঘুমোতে বলে বেলা অব্দি।জোর করে যেতে নিলে অশান্তি করে।এভাবে করতে করতে ঐ চাকরি গিয়েছে।
বর্তমানে সে বেকারই বসে আছে।
মাঝে মধ্যে দিন মজুর হিসেবে কাজ করে।
রিঙ্কির বাচ্চা পেটে হয়েছিল।শুনেছি নষ্ট করেছে।আকাশ ভাই তোমায় খুঁজেছে ভীষণ।সে তোমার আমার সম্পর্কের বিষয়ে জানতো।তাই আমায় অনুরোধ করেছে একবার তোমার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে।
তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে চায় সে।ছেলে-মেয়েকে ফিরে পেতে চায়।
সব হারিয়ে সন্তানের মর্ম বুঝেছে।এই বোঝা আগে বুঝলে এমন কঠিন পরিস্থিতি হতোনা।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
আপা আর কিছু বলার আগেই দরজার ওপার থেকে ডেকে ওঠে কেউ আমার নাম ধরে।
ভ্রু কুচকাই আমি।
এগিয়ে যাই।বাইরে বের হয়ে এগিয়ে যেতেই দেখি আকাশের মা দাড়িয়ে আছে।পিছে আমার ছেলে ও মেয়ে।
আমাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন তিনি।
ইশারাতে এগিয়ে আসতে বলে।
ছেলে মেয়েকে নিয়ে এগিয়ে যায়।পিছে যাই আমিও।
আলিফ তার দাদিমাকে জিজ্ঞেস করে,”কেমন আছো দাদিমা?”
উনি হুহু করে কেঁদে মাটিতে বসে পড়ে।কান্না শুনে বেড়িয়ে আসে বড়োজা।
বড়োজার দিকে তাকিয়ে আমি প্রচন্ড অবাক।
এ কী অবস্থা মানুষটার?
কালো রঙে,কুচকানো চামড়া,চেহারায় মলিন ভাব।
রোগা শরীরে মাথায় চুল নেই বললেই চলে।
আমায় দেখে দৌড়ে আসেন তিনি।
পায়ে এসে পড়ে সোজা।
দু-হাতে পা জড়িয়ে ধরে বলে,”আমায় ক্ষমা করে দাও তন্নি।
আমায় মাফ করো।ভুল করেছি আমি।এই ভুলের কোনো কূলকিনারা নেই।
পাপের মাশুল গুণছি হারে হারেই।
তোমার সংসার ভেঙে সুখি হইনি আমিও।একই দষা হয়েছে আমারও।
আমার স্বামী অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছে।
না জানিয়েই আমায় ডিভোর্স দিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে চিঠি লিখে।অনেক খুঁজেছি তাকে।কেস ও করেছি।পাইনি।যে নিজ থেকে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।লোকে সব দোষ দেয় আমাকেই।
এরপর ভেবেছিলাম ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাকি জীবন কাঁটিয়ে দেব।
একটু ভালোর পথে এসেছিলাম।সংসারে মন দিলাম।মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে বড়ো করলাম।ঐ মেয়ে এক বস্তির ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে।
ছেলেটা নেশার জগতে চলে গেছে।
আমার আর এই জীবনের কোনো মানে নেই তন্নি।
পেটের দায়ে আজ আমি অন্যের বাড়ি কাজ করে খাই।রিঙ্কি পালিয়ে গেছে সব টাকা ও গহনা নিয়ে।ওর কোনো খোঁজ নেই।বাবাও ত্যাগ করেছে আমাকে।আমিই নাকি নিজের ও ছোটবোনের জীবন নষ্ট করেছি।চাকরির জন্য শহরে যাবো ভেবেছিলাম।কিন্তু সেই পরিস্থিতিও নেই আমার।মরণ রোগে ধরেছে।ব্রেন টিউমার হয়েছে।হয়ত বাঁচবো না।রোদে যেতে পারিনা।শহরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়।তাই বাড়ির আশেপাশেই অন্যের ঘরে কাজ করি।অন্যের জুঠাবাসি খেয়েই কাঁটছে আমার দিন।কতো গাল-মন্দ শুনি।কাজে ভুল হলে মার অব্দি খাই।
বাড়িটা বিক্রি করেছিলাম লুকিয়ে।জমিও ওভাবেই বিক্রি করেছি।সামনের মাসে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।
কোথায় গিয়ে উঠবো জানিনা।
যাওয়ার জায়গা নেই।”
আমি কঠোর স্বরে বলি,”বাড়ি বিক্রির আগে এসব মনে ছিল না আপনার?
আমায় তাড়িয়ে নিজে সুখে থাকতে চেয়েছিলেন।সেই সুখটাই আপনায় ধোঁকা দিয়ে চলে গেল।
কাউকে ঠকিয়ে কেউ সুখি হতে পারেনা।
আমার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ আমার নিজের করতে হলোনা।
সৃষ্টিকর্তা আপনার পাপের শাস্তি আপনায় ফিরিয়ে দিলেন।
আমার সাজানো সংসার ভেঙেছেন আপনি।বাচ্চাদের এতিম করেছেন।
সেই আপনিও আজ একই পরিস্থিতিতে।বলতে গেলে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে।
আপনি একটা মানুষের জন্য আমার জীবনে ডিভোর্স,দুঃখ-কষ্ট,মিথ্যা অপবাদ,কলঙ্ক সব সয়েছি।
আপনি কেন্দ্রীক কম দুঃখ যায় নি আমার।
তবে এতোকিছুর পরও আজ আমি সফল।
আমি তন্নি ফিরেছি সেদিনের বলা কথার মান রাখতে।
মরি নি আমি।মাথা উচু করে,সকল অন্যায়ের মুখে জবাব দিয়ে আমি ফিরেছি।
আমার আজ সব আছে।
নেই কিছু আপনার।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
“ঠিক বলেছো তন্নি।
আমি তোমায় ঠকিয়েছিলাম।আমার স্বামী আমায় ঠকালো।নিয়তি আমার করা পাপই আমায় ফিরিয়ে দিল।তোমার সন্তানদের প্রতি আমি অন্যায় করেছি,আজ আমার সন্তানও অত্যাচারিত হচ্ছে।মেয়েটা ভালো নেই।শশুর বাড়ির চরম অত্যাচার ভোগ করছে।সবচেয়ে নিষ্ঠুর বিচার কী জানো?
আমার মেয়েরও একটা বড়োজা আছে।ঠিক আমারই মতন।মেয়েটাকে শেষ করে দিচ্ছে তিলে তিলে।
কিচ্ছু করার নেই আমার।
এতিম পেয়ে তোমায় যেমন ঠুকরেছিলাম আমরা,তেমনি ওকেও করছে।মায়ের পাপের ফল মেয়ে ভোগ করছে।আমিও করছি।
কোনো সম্মান নেই আমার জানো।
রাস্তাঘাটে কুকুরের মতো ব্যবহার পাই।
অবস্থা দেখে বাচ্চারা আমায় পাগল ভাবেন।ঢিল,কাঁদা ছুড়ে মারে।
চিৎকার করে বলি,আমি পাগল নই আমি সুস্থ।লোকে হাসে কথা শুনে।
বাবার কাছে গেছিলাম আশ্রয় নিতে।বাবা কাজের লোক দিয়ে ঘার ধরে বের করে দিয়েছেন।আমার মুখ ও দেখতে চায়না সে।কারণ আমি সবাইকে খারাপ বানিয়েছি।
শুনেছি রিঙ্কি এখন খারাপ পথে চলে গেছে।কেউ কেউ বাজে জায়গায় দেখেছেও ওকে।এ কথা বাবা শুনে আমাদের ত্যাগ দিয়েছেন।
বর্তমানে তিনি এক মহিলাকে বিয়ে করে সুখেই আছেন।
ছেলে-মেয়ে গুলোকেও তো মানুষ করতে পারিনি।
স্বামীও ছেড়ে দিয়েছে।
কমাস আগে মেসেজ করেছিল আকাশের ফোনে।
ছবি পাঠিয়েছিল।
ওর দুটো সন্তান হয়েছে।সুন্দরী,ধার্মিক বউ নিয়ে তার এখন সুখের সংসার।
সে আর কখনো বাড়ি ফিরবেনা বলে জানিয়েছে।ওখানে ও ভীষণ সুখে আছে।
আমি নামক নারী তাকে চরম মানসিক চাপে রেখেছি এতোকাল।স্ত্রীর কাছে অত্যাচারিত হয়েছে পুরুষ হয়েও।
সন্তানরাও কখনো সন্মান দেয়নি।বাবাকে তুই-তুকারি করেছে।এটায় অবশ্য আমি সায় দিয়েছি।আমি চেয়েছি ও আমাদের পদতলে থাক সবসময়।
মানুষটা সহ্য করতে করতে পাথর হয়ে গেছে।
আমাদের ওপর ঘৃণা চলে এসেছে।
আকাশ তবুও বলেছিল ফিরে আসতে।আমার জন্য না হোক ছেলে-মেয়েদের জন্য।
সে সোজা উত্তর দিয়েছে,
‘না স্ত্রী,না সন্তান।ওর কাউকে চাইনা।ও ভালো আছে ঐ জীবনে।এখানে ওর সম্মান আছে,ভালোবাসা আছে।’
এরপর আর যোগাযোগ হয়নি কোনো।যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি।কিন্তু পারিনি।
বড়ো ছেলে হারিয়ে মা এখন নিশ্চুপ।টাকার লোভে আমার পাশে থেকেছেন সবসময়।নিজের ছেলেকেও হেলাখেলা করেছেন।আজ তার প্রতিদান দিচ্ছে।
যেই বাড়ির সম্পর্কে একটা সময় লোকে কটু কথা বলতেও ভয় পেত,সেই বাড়িটায় আজ ঢিল ছুড়ে মারে অকারণেই ।
বাড়ির মতো বাড়ির মানুষ গুলোও যেন সরকারি হয়ে গেছে একপ্রকার।ঠিক মতো বের হতে পারিনা আমরা।লোকে হাসাহাসি,ঠাট্টা করে আমাদের নিয়ে।
পাগল,মাথা খারাপ,অমানুষ বলে খোটা দেয়।
বর্তমানে অন্যের দারে দারে চেয়ে খাই।ধার দেনা করে পেট চালাই।
ব্যবসা,ব্যাংক ব্যালেন্স সবই শেষ।বাড়ি,জমিও নেই হাতে।গহনা,দামি জিনিস নিয়ে রিঙ্কি পালিয়েছে।
এক সময় আমরা তোমার প্রতি অন্যায় অত্যাচার করেছি।লোকে এখন সুযোগে আমাদের প্রতি অত্যাচার করে।কাজ করলে যথাযথ পারিশ্রমিক দেয়না।কথা শোনায়।বিনা কারণে গাল-মন্দ করে।প্রতিবাদ করলে মারতে তেড়ে আসে।
আমাদের পাশে নেই কেউই।আইনের সাহায্য নিয়েছিলাম।দোষ উলটে আমাদেরই হয়েছে।এলাকার প্রতিটি মানুষ ক্ষিপ্ত আমাদের ওপর।
শরীর নিয়ে ইদানিং চলতে ভীষণ কষ্ট হয় আমার।
মায়ের ও বয়সের ভারে অবস্থা ভালোনা।
আকাশের কাজ নেই।
এরমাঝে ছেলেটাও নেশায় পড়ে বাড়িতে ভাংচুর করে।আমায় মার*ধর করে।সব নিয়ে বিক্রি করে।চুরি অব্দি করে টাকা না পেলে।লোকে দু-বার ধরে বেধে রেখেছিল।হাতে-পায়ে ধরে ছাড়িয়ে এনেছি।
দুটো ভাত ফুটিয়ে খাওয়া দায়ের হয়ে গেছে আমাদের জন্য।
আগুনের সামনে গরমে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনা আমি।
যেই বোনের জন্য দেবরের সংসার ভেঙে ওকে আনলাম,সেই বোন সব জেনেও আসেনা খোঁজ নিতে।ও আরো আমাদের অসুস্থতায় পালিয়ে গেছে এক ছেলের সঙ্গে।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
একটা ছেলে হয়েছে আশিকের।
তটিনীও আসবেনা বলেছে এ বাড়ি।বাড়ির পরিবেশ ভালো না।এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছেলে নিয়ে আসতে চায়না ওরা।
আশিক ভালো হয়ে গেছে।মা বা আমি আর ওদের পিছে লাগিনা।
আশিক এখন সংসারি।ওদের স্বামী-স্ত্রীর কথা,আমি এবং আমার ছেলে-মেয়েরা বাড়ি থেকে বের হলে ওরা বাড়ি ফিরবে।তা ছাড়া কোনো যোগাযোগ রাখবেনা ওরাও।আমাদের সঙ্গে থাকলে ওদের ও কোনো মূল্য থাকবেনা।যেচে অশান্তি নিতে চায়না ওরা।ফোন দিয়ে টাকা চাইলে মুখের ওপর কল কেঁটে দেয় আশিক।
দিনের পর দিন যায় মা ছটফট করে কিন্তু আশিক কথা অব্দি বলেনা।ওর ভাষ্যমতে বাড়ির এই পরিস্থিতির জন্য মা এবং আমি ও আকাশ দায়ি।ওদের সবার ভবিষ্যত নষ্ট করেছি আমরা।অবশ্য সত্য কথাই বলেছে।
একই সঙ্গে বড়ো ও ছোট ছেলে হারিয়ে মা অসহায়।
আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল।দু-রাত বাইরে ছিলাম।
ক্ষিদের জ্বালায় এলাকার সবার ঘর থেকে ভিক্ষা অব্দি করে খেয়েছি।শেষ পর্যন্ত এলাকার সবার অনুরোধে আমায় আবার ঘরে তুলেছে।
সব দোষ তো আমার একার নয়।কিছুটা ভাগ ওদের ও থাকে।আমি যেমন লোভ দেখিয়েছি ওরাও লোভে পড়েছে।
সুতরাং সব দায় আমায় দিয়ে লাভ নেই।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে একটু বাঁচার জন্য আকাশকে আবার বিয়ে দেব ভেবেছিলাম।যদিও আকাশ রাজি হয়নি।জান বাঁচাতে আমরাই জোর করেছি।
ওর তো আর জব নেই।দিন হাজিরার কাজ করে মাঝেমধ্যে।তাও মানুষ দিতে চায়না।রাস্তায় বেড়োলে লোকে চরিত্রহীন বলে জুতো ছুড়ে মারে।
এক নিখাদ গরিব ঘরের মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলাম।
আমাদের দেখেই সেই মেয়ের মা-বাপ মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।
এর চেয়ে অপমানের কিছু হয়?
লজ্জায় ফিরে এসেছি।
বর্তমানে এভাবেই চলছে আমাদের দিন।অন্যায়গুলো যেন সাপ হয়ে ছোবল দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বাড়ি থেকে বের করে দিলে মা বলেছে সে এক বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে উঠবে।আকাশ কোনো এতিমখানায় ঠায় নেবে।আমি যেন ছেলে নিয়ে যেখানে ইচ্ছা চলে যাই।তাদের যেন মুক্তি দেই।
ছেলের কী হবে জানিনা।
ভেবেছি গলায় দড়ি দিয়ে ম*রবো।তাতে যদি একটু মুক্তি পাই।
বিধাতার কী বিচার বলো!
বট গাছের মগ ডালে ছিলাম আমরা।পাপের দায়ে এক টানে মাটিতে এনে ফেলেছে।এটাই প্রাপ্য আমাদের।কর্মের ফল প্রতিটি মানুষকে ভোগ করতে হয়।
অন্যায় যারা করেছি প্রত্যেকের চূড়ান্ত পতন হয়েছে।
কোটিপতি,বাদশা থেকে পথের ভিখারি হলাম।
যেই আমার পরণে দামি শাড়ি ছাড়া ওঠেনি।সেই আমি আজ অন্যের ফেলে দেওয়া কাপড় চেয়ে এনে পড়ি।
যেই আমি দামি খাবার ছাড়া খেতাম না,সেই আমি আজ পঁচা ভাত চেয়ে খাই।
দামি কসমেটিকস,গহনা ছাড়া চলতাম না।আজ মরণ রোগে কাতরাই ঔষধ পাইনা।
নিজেকে সবচেয়ে বড়ো ভেবেছিলাম।সৃষ্টিকর্তা আমার ধ্বংস দিয়ে আমার জায়গা দেখিয়ে দিল।
একদিনের ঝড় যেমন দুনিয়া তছনছ করে দিতে পারে,পাপ তেমন আমার তছনছ করেছে।”
বড়োজা কান্নায় ভেঙে পড়ে।বেচারাকে দেখে মায়া হলেও অতীতের তৃক্ত স্মৃতি মনে পড়ে সরে আসি আমি।
ছেলেটা চিৎকার করে বলেন,”শুনছেন সবাই?আমরা ফিরেছি।আমার মা ফিরেছে।
যোগ্যতা নিয়েই ফিরেছি আমরা।অফুরন্ত সম্মান নিয়ে ফিরেছি আমরা।
একসময় এক মুঠো ভাতের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি,সেই আমরা আজ অন্যের মুখে অন্ন তুলে দেই।
যা মিথ্যা রটেছিল আমার মায়ের নামে,সবটার সত্য প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন এতোদিনে।
পাপিদের ধ্বংস যেমন নিজ চোখে দেখেছেন,তেমনি সত্যবাদী আমার মায়ের সফলতাও দেখুন আজ।
কাউকে ঠকিয়ে কেউ বড়ো হয়না।
আমার দাদিমা,চাচি তার প্রমাণ।”
বড়োজা আচলে মুখ লুকায়।
আকাশের মা দৌড়ে বাড়িতে চলে যায়।
লোকে ছি-ছিৎকার করে ওদের।
আমার গভীর দু-চোখ একজনকে খুঁজতে ব্যস্ত।
শেষবারের জন্য হলেও একটা মানুষকে দেখতে চাই আমি।
তার সামনে দাড়াতে চাই।জোর গলায় দুটো কথা বলতে চাই।
কাঙ্খিত সেই মানুষটাকে পেলাম না দেখতে।
লতা আপা বড়োজাকে বলে,”দেখলে অন্যায়কারির শেষ পরিণতি কতো ভয়ংকর হয়?
আর সততার পুরষ্কার কতো সুমধুর হয়!”
ওরা আমার কাছে আসতে চায়।
লতা আপা টেনে নিয়ে আসে আমাদের ওখান থেকে।
আশেপাশের মানুষজন আমায় দেখে শুধু এক দৃষ্টিতে।
ছেলে পকেট থেকে বেশ কিছু টাকা বাহির করে দাদিমা ও চাচির হাতে দেয়।
বড়োজা ওকে ছুতে চায়।আকাশের মা আমার মেয়েকে ধরতে চায়।
আলিফ বোনকে নিয়ে পিছিয়ে যায়।
উপহাস সূচক হেসে বলে,”কিছু পাপ কখনো ভোলা যায়না।
আপনাদের পাপের মাত্রাটা এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক তা গেঁথে গিয়েছিল আজীবনের জন্য।আজও মনে আছে সেইসব অন্যায়ের কথা।যা আমি নিজ চোখে দেখেছি।পায়ের পোড়া দাগটা আমার আজো রয়ে গেছে।সেই গরম নুডলস ফেলার কথা আমার আজও মনে আছে।সেদিন আপনি আমায় ইচ্ছা করে কষ্ট দিয়েছিলেন।
আমার নরম চামড়া পুড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ব্যাথাটা মনে পড়লে শরীরে শিহরণ জাগে।
ছোট্ট এই মস্তিষ্কের চাপ আমি আর নিতে চাইনা।চরম ঘৃণা চলে এসেছে আপনাদের প্রতি।
আমি চাইনা আপনারা আমাদের কাছে আসুন।
মায়ের সঙ্গে আমরা ভালোই আছি।
অন্যায়কারি,স্বার্থপরের কোনো জায়গা নেই আমাদের জীবনে।
চলে আসি আমরা।পিছে রয় আমাদের অতীতের বোঝা।
গাড়িতে উঠে কোনো অজানা কারণে প্রচন্ড কেঁদেছি আমি।
মেয়েকে পরিচয় দেইনি।ছেলে দিতে দেয়নি।যথা সময়ে বোনকে ও নিজেই জানাবে সবটা।
লতা আপাকে সাহায্য করবো আমি।
একটা খুব ছোট্ট ব্যবসার আয়োজন করে দিতে চেয়েছি।
কম তো করেনি মানুষটা আমার জন্য।
এবার না’হয় আমি একটু করি উনার জন্য।
চলবে।