#এমন_একদিন_সেদিন
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-৪৩
৯১.
মধ্যাহ্নের সমাপ্ত শেষে অপরাহ্নের সূচনা। চতুর্পাশের ঝিমঝিম পবনের সান্নিধ্যে রিনিঝিনি চুড়ির মৃদু ছন্দ। ইরা শুয়ে ছিলো দুর্বলচিত্তে। বন্ধ চোখে। হুটহাট খুব জোরে দরজা খোলার শব্দ এলো। ইরা আস্তে করে চোখ খুলে দেখলো। মৃদু কিন্তু খুব নিখুঁত, ভীষণ স্নেহের সুরে কাঁপতে কাঁপতে কেউ ডেকে উঠলো,
‘ইরাবতী!’
ইরা হাসলো। চোখ বন্ধ করে আবার ঝপাৎ করে খুলে অর্জনের দিকে তাকিয়ে আবার মিষ্টি হাসি দিলো। বলল,
‘জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। খেয়েছো? এসো নিচে, খাবার দিচ্ছি।’
অর্জন এক ছুটে এসে ইরার হাত ধরে। হাতের উল্টোপিঠে শুকনো দুটো চুমু দিয়ে চোখ নিবদ্ধ করে ইরার শুকনো মুখে। ইরা আবার হাসলো। বলল,
‘জেনেছো? আরে বোকা, তেমন কিছুই হয়নি।’
অর্জনের চোখ দুটো নীরেতে উজ্জ্বল হলো। ইরা উদ্বিগ্ন হয়ে তার গালে হাত রেখে বলল,
‘এই দেখো! আরে! সামান্য একটু মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম। তাকাও, আমি একদম সুস্থ আছি। প্রেগন্যান্সির সময় এসব একটু আধটু হয় তুমি তো জানো।’
অর্জন মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাড়াতে দাড়াতে তেঁজের ছাটে বলে,
‘এতো বলি কেয়ারফুল থাকতে কিন্তু না, সে আরো বেশি করে কেয়ারলেস হচ্ছে। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো না করলে তুমি মাথা ঘুরে পরে যাবে না তো কি আমি যাবো? সবার দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ আছে শুধু আমার দিকে আর নিজের দিকে রাখার সময় হয়না।’
ইরা শব্দ করে হাসলো। আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে অর্জনের শার্ট খুলে দিলো। মিনিট কয়েক অপলক দৃষ্টিতে একজন আরেকজনের দিকে চেয়ে রইল। চার চোখের ভাব মিল হলো। আকাশ সমপরিমাণ কষ্ট, একটা সন্তানের শূন্যতা, বুক ভরা হাহাকারের উদ্বিগ্ন গুলোও আস্তে আস্তে কেটে গেলো। কর্পূরের মতো কোথায় যেনো উবে গেলো! মনে হলো যেনো….যেনো নতুন অনুভূতি! নতুন ভালোবাসা! নতুন পথ চেনা! এই প্রথম কাছে আসা! একদম আলাদা! সব থেকে আলাদা!
৯২.
তিমির রাত! নিস্তব্ধ! বারান্দার কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঠোঁট উল্টে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদা আকাশ’কে নীরা সযত্নে, মমতা দিয়ে চাঁদ দেখাচ্ছিলো। তাঁরা দেখাচ্ছিলো। মুখ থেকে ফু করে ধোঁয়া ছেড়ে আকাশের সাথে খেলার চেষ্টা করছিলো। মায়ের দেখাদেখি বারকয়েক আকাশ চেষ্টা করলো তাতে মুখ থেকে থুতনি অবধি লালায় ভরে যেতেই নীরা শব্দ করে হেসে পরম যত্নে তা মুছে দিলো। ছোট্ট মিষ্টি আকাশ’কে তার মতোই একটা বিশাল আকাশ’কে দেখিয়ে নানান কথা বলে ভুলাচ্ছিলো। সাজিদ আসতেই তার কান্না থেমে গেলো। হাত বাড়িয়ে বাবার কোলে উঠে আবারো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। সাজিদ সারা বারান্দা পায়চারি করলো। ছেলের কান্না থামাতে না পেরে নিয়ে গেলো মায়ের কাছে।
মায়ের কাছে থেকে ফিরে এসে দেখা গেলো নীরা এখনো ওইভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। সাজিদ ওর পাশে দাড়ালো। নীরার মতো মুখ তুলে আকাশ দেখে গেলো। সময় গড়ালো। সেকেন্ড! মিনিট! কতক্ষণ…! একসময় নীরা বলল,
‘আমাকে বিয়ে করে ঠকে গেছো তাই না?’
সাজিদ অবুঝের ন্যায় তাকায়, ‘ঠকবো কেনো?’
নীরা হাসে। কেমন বিদ্রুপ সুরে হেসে বলে, ‘কি জানি কেনো?’
এরপর আবারো কিছুক্ষণ পিনপিন নিরবতার পর নীরা বলে উঠে,
‘তোমার কি কোনো প্রেমিকা আছে?’
সাজিদ তাকালো। চোখ ঘুরিয়ে নীরা সেই চোখেই চোখ ফেললো। সাজিদ মাথা নেড়ে বলে,
‘নাহ।’
‘তবে, ওইদিন ওই মেয়েটা কে ছিলো?’
সাজিদ জানে না এমনভাবে উত্তর দিলো, ‘কোন মেয়ে?’
‘টিয়ার বিয়ের দিন গেটের সামনে যার সাথে কথা বলছিলে। আমি চলে আসার সময় শুনেছিলাম মেয়ে’টা বলছে, বউ-বাচ্চা থাকতে অন্য মেয়ের দিকে নজর দেন। ছি! এরকম কিছুই বলেছিলো তাই না?’
সাজিদ মিনিট দুয়েক নির্বাকে নীরার ছলছল নয়নের দিক তাকিয়ে থাকলো। অতঃপর অনেকদিন বাদে খুব আশ্চর্যভাবে ভীষণ আদরে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো তাকে। মাথা নেড়ে বলল,
‘নাহ। এরকম কিচ্ছু কেউ আমাকে কখনো বলেনি। ওই মেয়েটা…. ওই মেয়েটা বোধ হয় অন্যকাউকে বলছিলো। বিয়ে বাড়িতে তো কত মানুষ আসে যায়!’
সাজিদের বুকের শার্টে মাথা ঘষে নীরা শব্দ করে কেদে উঠলো। বাচ্চাদের মতোন গলায় বলল,
‘সত্যি তো তাই না?’
‘হুম, তিন সত্যি।’
‘আচ্ছা।’
কান্না থামিয়ে সে নাক টানলো। সাজিদ অনেকক্ষণ তাকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। মস্ত বড় আকাশের দিকে তাকিয়ে বিশাল এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হালকা আওয়াজে বলল,
‘নীরা, আই এম সরি।’
‘কেনো?’
সাজিদ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
‘এমনি। বললাম! যদি জানায় অজানায় কষ্ট দিয়ে থাকি তবে তার সবকিছুর জন্য সরি। সবকিছুর জন্য..! সব। হাহ…!’
‘ইট’স ওকে।’
‘আচ্ছা নীরা, আমরা কি পারি না ভালোবেসে সংসার করতে?’
সাজিদের কণ্ঠে ব্যকুলতা। নীরা মুখ তুলে তাকালো। টলটলে চোখে চেয়ে বলল,
‘কিন্তু তুমি তো আমায় ভালোবাসো না, সাজিদ।’
কি নিদারুণ সত্য কত সহজে বলে ফেলল! সাজিদ বলে,
‘তুমি বাসো?’
‘বাসবো।’
‘আমিও বাসবো।’
তখনি আকাশের কান্নার আওয়াজ শোনা গেলো। ওরা দুজন দূরে সরে দাঁড়ালো। সবুজা হক এসে আকাশ’কে নীরার কোলে তুলে দিয়ে বললেন,
‘কি যে হয়েছে আজ! কিছুতেই কান্না থামছে না। তুমি দেখো, ও কি চায়! কোনো মতে যদি কান্না থামাতে পারো।’
নীরা মাথা নেড়ে মিষ্টি হাসলো। সবুজা হক সেকেন্ড কয়েক তাকিয়ে থাকলেন। এই প্রথম মেয়েটা শাশুড়ীর সাথে মিষ্টি হেসে সৌজন্য বজায় রাখলো। এই প্রথমবার নীরাকে একদম অন্যরকম লাগলো। সবুজা হক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আকাশ’কে নীরা অনেকক্ষণ থামানোর চেষ্টা করলো। সাজিদও চেষ্টা করলো। তারপর দুজনে মিলে একসাথে লাগলো ছেলের কান্না থামানোতে। নীরা আকাশের চাঁদ, তারা দেখায় আর সাজিদ বারান্দার কোণা থেকে গোলাপ ফুল এনে ছিড়ে আকাশের মাথার উপর ছিটিয়ে দুষ্টুমি করে। মিনিট কতক গেলো না আকাশের কান্না থেমে গেলো! তিন সদস্যের পরিপূর্ণ পরিবার একটা পরিপূর্ণ সংসারের সাক্ষাৎ পেলো। সেই নির্জন রাত, ফাঁকা রাস্তা, হাওয়ায় নৃত্যরত বৃক্ষ এবং সুন্দর মূহুর্ত’টার সাক্ষী হয়ে রইলো চন্দ্র, নক্ষত্র, পবন আর ছোট্ট পুতুলের ন্যায় তাদের ছেলে আকাশ ‘টা!
৯৩.
কাল ওরা সবাই প্রচ্ছদের দাদাবাড়ী যাবে। দুষ্টু আগের দিন রাতে ব্যাগ গুছানোর সময় বলল,
‘কতদিন থাকবো?’
প্রচ্ছদ ফোন চাপতে চাপতে উত্তর দেয়, ‘যতদিন তোমার ইচ্ছা।’
ঠাস করে ব্যাগ’টা বন্ধ করে দুষ্টু কোমরে হাত রেখে প্রচ্ছদের সামনে দাঁড়ায়। ফোনের উপর হাত রেখে বলে,
‘ফাইযলামি করেন?’
প্রচ্ছদ বিরক্তি নিয়ে বলে,
‘আরে ধুত্তুরি, সরো তো। কাজ করছি না?’
বলতে বলতেই সে ল্যাপটপ খুলে বসলো। দুষ্টু আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘কতদিন থাকবো?’
প্রচ্ছদ ল্যাপটপে চোখ রেখে আগের মতোই বলে,
‘কতদিন থাকতে চাও?’
দুষ্টু দাঁতে দাঁত চাপে,
‘ওয়েল! আমি সেখানে সারাজীবন থাকতে চাই।’
‘তাহলে ডিভোর্স পাবে না। ক্ষতি টা তোমারি।’
দুষ্টুর রাগ আকাশ ছুলো। পেয়েছে টা কি লোকটা? হ্যাঁ? কথায় কথায় শুধু ডিভোর্স ডিভোর্স। এতো খোটা দেওয়া লাগবে কেনো? প্রচ্ছদ সেদিকে ফিরেও তাকালো না। প্রযুক্তর ফোন আসতেই ভার্সিটির কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। দুষ্টু হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে থাকলো। কতক্ষণ পর ভীষণ আক্রোশে ধুমধাম শব্দ করে লাগেজ গুছানোর আওয়াজ হলো।
কথা বলার এক পর্যায়ে প্রচ্ছদ স্বভাবসুলত বলল,
‘আচ্ছা, রাখ তাহলে। পরে কথা হবে।’
প্রযুক্ত হন্তদন্ত হয়ে বলে,
‘হ্যাঁ? এই শোন! প্রচ্ছদ! শোন, শোন।’
প্রচ্ছদ কানে আবার ফোন রাখে। চোখ কুচকে বিরক্তের গলায় বলে,
‘কি হইছে?’
প্রযুক্ত আস্তে করে বলল, ‘কালকে কখন রৌনা দিচ্ছি?’
‘নয়’টায়।’
‘আচ্ছা।’
‘আচ্ছা, রাখি এখন।
‘না না রাখিস না।’
প্রচ্ছদ দাঁত দিয়ে দাঁত ঘষে,
‘আমার অনেক কাজ পরে আছে, প্রযুক্ত। তাড়াতাড়ি বলবি নাকি?’
‘বলছি তো। শোন না!’
‘প্লিজ কুইক। মেয়ে মানুষের মতো মিনমিন করতাছিস কেনো?’
প্রযুক্ত চোরা গলায় বলল, ‘তোর ভাবীরে নিয়ে যাই?’
প্রচ্ছদ ভ্রু কুচকায়, ‘ভাবী? কোন ভাবী? কীসের ভাবী?’
প্রযুক্ত আরো নিচুস্বরে বলে, ‘দোস্ত, এরম করস কেন? শ্রেয়সী’রে নিয়ে যাই না?’
‘প্রযু…’
প্রচ্ছদকে কথা বলতে না দিয়ে প্রযুক্ত আবার বলল,
‘না মানে তোর সাথে পরিচয় হতে হবে না? তাই নিয়ে যেতে চাইছিলাম।’
‘অন্যসময়ও পরিচিত হতে পারি।’
‘না মানে তোর পরিচিত হওয়াও হবে সাথে আমার হানিমুন ট্যুরটাও হয়ে যাবে।’
‘প্রযুক্ত, তুই কি নিজে মরবি সাথে আমারেও মারবি? তোর সমস্যা কি? দুইদিন হয় নাই বিয়ে করছস এখনি এতো বউ পাগলা হয়ে গেছিস? কই দেখ তো, আমার তো প্রায় দুই’মাস হয়ে গেলো। আমি কি তোর মতো বউ পাগলা?’
দুষ্টু চোখ মুখ কুচকে কথাগুলো শুনলো। ওপাশ থেকে প্রযুক্ত বলল,
‘না, তুমি বউ পাগলা না বউ সোহাগি। তুমি কি একা একা যায়তেছো? যাচ্ছো তো বউকে বগলদাবা করে নিয়ে। নীড়ও বউ নিয়ে যাবে। ওওও… সবাই বউ নিয়ে যেতে পারবে শুধু আমি পারবো না? মিঙ্গেল হয়েও আমি সিঙ্গেল হয়ে গিয়ে তোমাদের কাপলদের রং তামাশা হজম করবো?’
‘ওকে, আমি বড় ভাবীকে বলে তোর পারমিশন নিয়ে দিচ্ছি। ওয়েট, দোস্ত।’
প্রচ্ছদ উঠে দাড়ালো। প্রযুক্ত ফোনের মধ্যে চিৎকার করে উঠলো,
‘এই না না। বন্ধু, এরকম করিস না। আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড?’
‘ছাই ফ্রেন্ড।’
‘ প্লিজ নিয়ে যাই? ওরে না নিয়ে গেলে আমিও যাবো না। আমার ভালো লাগে না।’
‘আগে কেমনে ভালো লাগতো?’
প্রযুক্ত হালকা গলায় বলে, ‘কি জানি? কিন্তু এখন কিচ্ছু ভালো লাগে না।’
প্রচ্ছদ বড় করে শ্বাস ফেললো,
‘আচ্ছা নিয়ে আসিস। বাট বি কেয়ারফুল। কেউ যাতে না বুঝে।’
প্রযুক্ত খুশিতে লাফিয়ে উঠলো,
‘আচ্ছা। আর শোন, ওখানে গিয়ে আবার কিছু হবে না তো?’
‘নাহ। তুই তো আমাদের গ্রামের বাড়ি যাস নাই। তোকে কেউ চেনেও না। সুতরাং, তুই আমার বন্ধুর পরিচয়ে যাবি নট বড় ভাবীর ভাই। তাহলে, জট লেগে যাবে।’
‘ওকে দোস্ত। টাটা। টেক কেয়ার। হেভ ফান।’
‘হইছে, ফোন রাখ।’
ফোন রাখতেই দুষ্টু সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কোন শার্ট নিবেন?’
প্রচ্ছদ চোখ উঠালো না। ল্যাপটপে ব্যস্ত হাতে টাইপ করে চলল। দুষ্টু মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো,
‘কোন গেঞ্জি নিবেন?’
এবারো উত্তর এলো না। দুষ্টু আকস্মিক ল্যাপটপ’টা ঠাস করে বন্ধ করে দিলো। প্রায় সাথে সাথেই প্রচ্ছদ কড়া লাল চোখে তাকালো। সেই চোখ দেখেই দুষ্টু দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে এলো। বুকে থু থু দিয়ে গেলো টিয়ার রুমের দিকে। আজ রাতে তার ঠিকানা টিয়ার রুমেই হবে। নিজের রুমে আজ আর পা রাখা মানে রাক্ষসের সম্মুখে নিজেকে নিজে সমর্পন করা। উফফ…..! মহা যন্ত্রণা!
চলবে❤️
#এমন_একদিন_সেদিন
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-৪৪
৯৪.
প্রভাতের প্রথম প্রহরের শেষ লগ্নে সব গোছগাছ শেষ করে তৈরি হয়ে দুষ্টু আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। প্রচ্ছদ চোখ উঠিয়ে একবার তাকালো। তাকাতেই যেনো চোখ জ্বলসে যাওয়ার উপক্রম হলো। নয়নতাঁরায় কেমন এক দৈব ধাধা খেলে গেলো। দুষ্টু হিজাবের কোণায় পিন লাগাতে লাগাতে ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো,
‘দেখলে সুন্দর ভাবে দেখুন, ওমন অসুন্দর ভাবে তাকানো কেনো?’
প্রচ্ছদ চোখ উল্টালো। পাত্তাহীন গলায় বলল,
‘দেখলাম। মেকাপ করে দুই মিনিটে কীভাবে এতো আকর্ষণীয় হলে তাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম।’
দুষ্টু ঠোঁট বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের ন্যায় হেসে বলে,
‘কমন! স্টকে কথা শেষ হলে আর ধরা পরলে সব ছেলেরা এই কথাগুলোই বলে।’
প্রচ্ছদ ভ্রু উঁচিয়ে বলে, ‘মনে হয় অপমান করলে?’
দুষ্টু বিরবির করলো কিছুক্ষণ। এরপর ধমকিয়ে বলল,
‘যাবেন না? উঠুন জলদি।’
‘যাচ্ছি তো। এতো চিল্লিয়ে বলার কি হলো?’
দুষ্টু চোখ পাঁকিয়ে উত্তর দিলো, ‘আমি কিন্তু যাবো না।’
‘না গেলে আমার কি?’
সে চোখ মুখ শক্ত করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। অতঃপর ধুমধাম শব্দ করে লাগেজ হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। প্রচ্ছদ হালকা আওয়াজে বিরবির করতে করতে ছুট লাগালো।
‘এতো রাগ কোনো মনুষ্য কন্যার হতে পারে না।’
_____________________
সাদা রঙের গাড়ি’টার কাছাকাছি আসতেই দূর থেকে চোখে পড়লো, তেজী এক রমণী ভীষণ আক্রোশে গাড়িতে লাগেজ উঠানোর চেষ্টা করছে। প্রচ্ছদ একপলক তাকিয়ে ফোন করে প্রযুক্ত আর নীড় কে তৈরি থাকতে বলল। এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে লাগেজ’টা হাত দিয়ে ধরতেই দুষ্টু মুখ ফুলিয়ে চোখ লাল করে তাকায়। প্রচ্ছদ ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে লাগেজ’টা উঠিয়ে দিয়ে বলল,
‘ম্যাডাম, দয়া করে সামনে এসে বসুন।’
দুষ্টু অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
‘বসবো না। যাবো না আপনার সাথে। লাগেজ’টা শুধু তুলে দিতে এসেছিলাম।’
‘না গেলে তো হবে না, দুষ্টু মহারানী।’
‘কেনো হবে না? ঠিক হবে! কিছুক্ষণ আগেই তো বললেন আমি না গেলে আপনার কিছু না।’
হিমশীতল সূক্ষ্ম পবনে গা মাখিয়ে, চুল উড়িয়ে, মন এলিয়ে প্রচ্ছদ এসে দুষ্টুর পেছনে দাঁড়ালো। মৃদু হেসে কানের কাছ’টায় ফু দিতেই হাওয়া ছড়িয়ে পড়লো দুষ্টুর চোখে, মুখে, নাকে। সে হাওয়ার নাম প্রচ্ছদ, যে হাওয়ার অধিকারীনি কেবলমাত্র দুষ্টু!
ওর চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে এলো। হাওয়ার মিষ্টি গন্ধে শরীর অবশ করে এলো। চোখ খুলে তাকাতে তাকাতেই তখনের সেই উথাল সমীরের মালিক দুষ্টু কথা বলে ঈষৎ হেসে পলকে গিয়ে বসে পরেছে ড্রাইভিং সিটে,
‘আমার মন থাকে সেথা, তুমি থাকো যেথা! তবে তুমি না গেলে কি করে হয় বলো তো?’
মিনিট দুয়েক বাদে দুষ্টু চট করে নয়নের দ্বার খুলল। প্রচ্ছদ তখন অন্যমনস্ক হয়ে ফোনে কথা বলছে, গাড়ি চেক করছে, পকেট হাতাচ্ছে, সানগ্লাস পরছে তো খুলছে, চুল ঠিক করছে। মূহুর্তগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার তার কত ব্যর্থ প্রচেষ্টা! দুষ্টু জোরালো শব্দে শ্বাস ছেড়ে নিঃশব্দে হেসে উঠলো।
ড্রাইভিং সিটের পাশের সিট’টাতেই বসলো। ঠোঁটের ফাঁকে ক্ষুদ্র হাসির সঞ্চার ঘটিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল!
৯৫.
শীতের জগদ্বলে সূর্যদেবের মিষ্টি কিরণে চিত্ত তুষ্ট।আঁকাবাঁকা রাস্তা মাড়িয়ে, ধুলো উড়িয়ে, শত সবুজাভ গাছ ফেলে গাড়ি ছুটে এসে দাঁড়িয়েছে একটা ফাঁকা রাস্তায়। রাস্তার মোড়ে এককোণায় টিলার মতো জায়গায় ঘাসের আয়োজন। শত প্রজাপতির আলোড়ন। লাল, নীল, সবুজ ফড়িং এর লুকোচুরি খেলা। দুষ্টু গাড়িতে বসেই দেখলো! হাসলো! মুগ্ধ হলো! অতঃপর ঢালু পিচ ঢালা রাস্তার দিকে তাকাতেই বুক’টা কেঁপে উঠলো। রাস্তার ধারের জঙ্গল থেকে বুনোফুলের গন্ধ এসে নাকে ঠেকলো।
নীড় এগিয়ে এসে প্রচ্ছদের সাথে কথা বলে গাড়িতে লাগেজ তুলতে গেলো। দুষ্টুর দিকে মিনিট খানিক তাকিয়ে থেকে পলক ফেলে নিজেকে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে আবার আপন কাজে ব্যস্ত হলো। দুষ্টু গাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে টিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। তার শুকনো মুখ, রুগ্ন চেহারা, চোখের নিচে কালো আবরণের ন্যায় কালি পড়া দেখে ব্যস্ত কণ্ঠে হালকা আওয়াজে জিজ্ঞেস করলো,
‘সব ঠিক আছে, টিয়া?’
টিয়ার ঠোঁটে মলিন হাসি, ‘ঠিক করতে চাইলেই কি সব ঠিক হয়, নতুন ভাবি?’
দুষ্টু উত্তর দেয় না। টিয়া বলে,
‘পেছনে বসবে? আমার সাথে? নীড় ভাইয়া তাহলে সামনে বসুক।’
প্রায় সাথে সাথে যেনো হাওয়ার ভর করে চিৎকার ভেসে এলো, ‘না….।’
দুষ্টু ভ্রু কুচকে তাকায়। প্রচ্ছদ জড়তা নিয়ে বলে,
‘না মানে, তুই নীড়ের সাথে বসবি। নতুন বিয়ে করছিস না? এখন শুধু স্বামী স্বামী করবি। নো ভাবি ভাবি ইজ এলাও।’
তার মিথ্যে ধমকানোতে টিয়া ঠোঁট টেনে পুনরায় মলিন হাসলো। দুষ্টু দাঁত খিচে বলে,
‘যান, আমি সামনেই বসবো। জলদি স্টার্ট দিবেন!’
‘দাড়াও, প্রযুক্ত আসুক। তোমরা বসো।’
নীড় টিয়া পেছনে বসলো। দুষ্টু সামনে বসতেই ব্যাক মিররে নীড়ের মুখ’টা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। দুষ্টু চোখ সরিয়ে নেয়। আয়না’টা হালকা বাঁকিয়ে দিতেই গোপন যন্ত্রণা নিয়ে পেছনে বসে থাকা নীড় এবার স্পষ্ট আয়নায় দেখতে পায় নীল রং পরিহিতা অন্যমনস্ক সেই রমণীর কোমল, সুন্দর, পেলব আনন। তার হৃদয় থমকালো! নিজেকে নিজে ধমকালো! তবুও সুরাহা হলো না। অতঃপর যখন বেখেয়ালে সেই আয়নার ফাঁকে ফাঁকে ভেঙে পরা, অসহায়, কষ্টে জর্জরিত এমন ন্যায় সহধর্মিণীর মুখ’টা বারংবার উঁকি দিলো, সে তখন পিলে চমকে উঠলো! টিয়ার দিক মনোযোগ নিয়ে তাকালো। ভেতর থেকে কে যেনো একটা বলে উঠলো,
‘মেয়েটা সারাদিন এতো কি ভাবে? বিয়ের পর পরই এতো চুপচাপ হয়ে পরলো? কার জন্য এতো কষ্ট পায়?’
মিনিট পাঁচেক গড়ালো না অথচ আগমন ঘটলো আরেক দম্পতির। প্রচ্ছদ, প্রযুক্তর সাথে কোলাকুলি করে শ্রেয়সীর দিকে তাকালো। অভ্যর্থনা জানানো শেষ হলে প্রযুক্তর কানে ফিসফিস করে বলল,
‘তাই তো বলি এতো বউ পাগলা হয়ে গেলা কেনো! কালেভদ্রে একটা সুন্দরী মেয়ে পটাতে পেরেছো তা নয়তো এজনমে আর তোমার বিয়ের পানি পাওয়া হতো না।’
প্রযুক্ত সজোরে প্রচ্ছদের পেটে কনুই মারে। প্রচ্ছদ পেট ধরে বায়ুভর্তি মুখ ফুলালো। দুষ্টু তখন সেদিকেই ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে ছিলো। তা দেখে প্রচ্ছদ এগিয়ে এলো। দুষ্টু ঠান্ডা মেজাজে প্রশ্ন করলো,
‘ও আমাদের সাথে যাবে?’
পেট থেকে হাত সরিয়ে অনেক কষ্টে প্রচ্ছদ উত্তর দিলো, ‘কেনো? কোনো সমস্যা?’
দুষ্টুর মেজাজ খারাপ হলো। আকাশ সমপরিমাণ তেজ নিয়ে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলল,
‘প্রশ্ন আমি আগে করেছি। প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করতে বলিনি।’
‘হুম যাবে। ও-ই হলো প্রযুক্তর বউ। চেনো তো, না? একইসাথে পড়ে…
প্রচ্ছদের কথার মাঝেই দুষ্টু গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
‘আমি যাবো না। আপনার গ্রামের বাড়ি আপনি যান।’
দুষ্টুকে দেখে শ্রেয়সীর চক্ষু চড়কগাছ। প্রযুক্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কি ব্যাপার? আপনি বললেন এক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন তবে এসব কি? ও কেনো যাচ্ছে?’
প্রযুক্ত মাথা চুলকালো। ও তো শ্রেয়সীকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো সবার সাথে দেখা করিয়ে। নীড় নিজেও গাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলো। শ্রেয়সী, নীড় দুজন দুজনের দিকে চোখ পাকিয়ে মিনিট দুয়েক তাকিয়ে থেকে একসাথে বলে উঠলো,
‘আমি যাবো না………..।’
ভাগ্যিস ফাঁকা রাস্তা!
প্রচ্ছদ, প্রযুক্ত, টিয়া থতমত খেয়ে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। নীড় এগিয়ে গেলো। দুষ্টু পেছনে দাঁড়িয়ে থেকেই দেখলো।
‘তুই কেনো আসছিস?’
শ্রেয়সী চোখ উল্টিয়ে জবাব দেয়, ‘তো? এখন কি তোর পারমিশন নেওয়ার লাগবে?’
নীড় দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘একদম আমার সাথে ত্যাড়া কথা বলবি না। মাইর একটাও এই রাস্তায় পরবে না।’
‘তোর কি মনে হয়? তুই মারবি আর আমি তাকায় তাকায় দেখবো? মার একটা শুধু! আমার হাত কি বাড়িতে রেখে আসছি?’
নীড় সজোরে শ্রেয়সীর বাহুতে কিল মারলো। কথার মাঝেই শ্রেয়সীর দু’ঠোঁটের মাঝে দু’ইঞ্চি ফাঁক হয়ে গেলো। বাহুর দিকে তব্দা হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে নীড়ের দিকে দাঁত কিড়িমিড়ি করে এগিয়ে গেলো। দু’হাত মুঠ করে শক্ত করে চুল টেনে ধরলো। দুষ্টু অতিষ্ঠ নয়নে তাকিয়ে থাকলো। বড় বড় পা ফেলে দুটোকে আলাদা করে বলে উঠলো,
‘কি সমস্যা তোদের? মারামারি করছিস কেনো? তোদের সমস্যা আমাকে নিয়ে আমি তো প্রথমেই চলে যেতে চেয়েছি।’
শ্রেয়সী নালিশ দেওয়ার মতো করে বলল, ‘তুই জানোস এই হারামজাদা কি করছে?’
নীড় তেড়ে এলো, ‘একদম গালি দিবি না।’
‘একশবার দিবো। তুই আমাকে না বলে বিয়ে করছস।’
‘এ্যাহ….. নিজে কি করছস? নিজে মনে হয় আমার চৌদ্দ গুষ্টিসহ দাওয়াত দিছিলি?’
শ্রেয়সী কাঁদো কাঁদো চোখে দুষ্টুর দিকে তাকালো,
‘দেখছস, ও কীভাবে কথা বলে? ওর ব্যবহার কুত্তার চেয়েও খারাপ।’
‘আর তোরটা নাগিনীর চেয়েও খারাপ।’
এ কথা শুনে শ্রেয়সী আর্তনাদ করে উঠে। দুষ্টু পড়লো মহা ফ্যাসাদে। একবার নীড় তো আরেকবার শ্রেয়সীর দিকে তাকালো। এরপর নীড়, শ্রেয়সীর মাঝে পুনরায় তুমুল যুদ্ধ লাগলো। দুষ্টু বিরবির করে কিছুক্ষণ গালিগালাজ করলো দুটোকে।
খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওরা তিনজন এগিয়ে এসে সমস্বরে হঠাৎ বলে উঠল,
‘এই তোমরা একজন আরেকজনকে চেনো?’
শ্রেয়সী বলল, ‘চিনি মানে? খুব ভালো করে চিনি। আমরা সবসময় একসাথেই থাকতাম।’
প্রচ্ছদ কপাল কুচকে ভাবুক গলায় বলল,
‘কিন্তু আমি তো একদিন দুষ্টুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও বলেছিলো, তোমাকে… ‘
দুষ্টু মাঝপথে ধমকিয়ে থামিয়ে দিলো,
‘চুপ করুন। কিছু বলেনি আমি আপনাকে। আমি এদের একদম চিনি না।’
প্রচ্ছদ বুঝতে পারলো এসব দুষ্টু অভিমানের কথা। বন্ধুত্বের অভিমান। এতোক্ষণ কী ভীষণ সুন্দর লাগছিলো তিনজনকে৷ প্রচ্ছদ বলল,
‘আচ্ছা, ঠিকাছে। গাড়িতে উঠো সবাই। রাস্তার মাঝে কি শুরু করেছো!’
গাড়িতে উঠতে গিয়েও বেধে গেলো আরেক দ্বন্ধ। শ্রেয়সী যেই সিটে বসেছে সেই সিটে এতোক্ষণ নীড় বসেছিলো। এখন দুজনেরই সেই সিট চাই। তা নিয়ে চলল আরেক দফা। দুষ্টু বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে বলল,
‘আরে, কি ব্যাপার নীড়? তুমি কি মেয়ে মানুষ নাকি বাচ্চা? সামান্য সিট নিয়ে কি শুরু করেছো?’
সাথে সাথে যেন সব থেমে গেলো। কথাটা বলে দুষ্টু কেমন একটা হয়ে পড়লো! কত্তদিন বাদে এভাবে কথা বলা! শাসন করা! এখন কি এভাবে কথা বলা মানালো? কেমন খাপছাড়া শোনা গেলো না? দুষ্টুর বোধ হলো, যেনো সে চরম আশ্চর্যের এক কথা বলে ফেলেছে। প্রচ্ছদের দিকে এক ঝলক তাকালো। নীড় চুপচাপ সিটে বসে পরেছে। গাড়ি চলতে শুরু করতেই প্রচ্ছদ, প্রযুক্ত নানান কথা বলল। বাকি সবাই হু হা পর্যন্তই থেমে রইল। এক পর্যায়ে প্রযুক্ত মজার ছলে বলল,
কি রে নীড়? বউকে খাওয়াস না? এই অবস্থা কেনো?’
টিয়া চমকালো! থমকালো! দু’চোখ ভর্তি নীর নিয়ে চাইলো। অতঃপর অনেকদিন বাদে নিজেকে কেমন নিজের বলে মনে হলো। বুকের মাঝে ভারী পাথর’টা আরো কয়েক টন বুঝি ভারী হলো। অন্যদিকে তাকাতে গেলেই পাশে বসা শ্রেয়সীর দিকে নজর পড়লো। সাথে সাথে বুকের ভেতর জমানো কষ্টগুলো হুহু করে এক লাফে শতগুণ বেড়ে গেলো। এই কষ্ট কি টনে মাপা যায়? যায় না? যায় বুঝি! টিয়া সেকেন্ড কতক চেয়ে রইল ওই স্ফটিক রাঙা মুখ’টার দিকে। মনে মনে বলে উঠলো,
‘মাশাল্লাহ্! সুখী হও! সুখী হোক সবাই!’
ছুটে চলা গাড়ির দৌড় ঘন্টা খানেক পার হতে না হতেই প্রচ্ছদের বুকে ঢলে পরলো নিয়ন্ত্রণ হারানো একটা আদুরে, নীল কাপড়ে মোড়ানো মাথা। সে হাত বাড়িয়ে মাথা’টা বুকে আগলে ধরলো। এক হাতে জড়িয়ে রাখলো বাহু। খুব গোপনে তপ্ত, শুকনো, হালকা চুমু হিজাবের উপরে মেখে দিলো।
কারোর চোখে পরলো না। অথচ পরলো নীড়ের! বুকের মাঝে দাউদাউ করে জ্বলা আগুনের তেজ কত গুন যে বাড়লো, তার খবর কেউ রাখলো না!
চলবে❤️
#এমন_একদিন_সেদিন
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-৪৫
৯৬.
সেদিন ভোর ভাঙা কৃষ্ণচূড়ার ন্যায় পেলব অরুণ বর্ণের রোদ উঠেছিলো। সমীরের উদাসীন হাওয়ায় আকাশ সম্বন্ধীয় রঙের ফাঁকে ফাঁকে উকিঁ দিয়ে জেগে উঠছিলো সূর্যদেব। দিবাকরের প্রথম কিরণমালা ঝেঁকে বসতেই দুষ্টুর মুখ দেখালো স্বর্ণ বর্ণের চেয়েও মসৃণ, অপ্রতুল। স্নিগ্ধের চেয়েও পবিত্র। ফজরের আযান দিয়েছে তখন ঘন্টা খানেক পার হয়েছে। নামাজ পড়ে পৌষের ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে জমে যাওয়ার উপক্রম দুষ্টু আধঘন্টা থেকে নির্বিকার দাঁড়িয়ে। দৃশ্যপটের একপাশে দৈবাৎ দেখা গেলো নীড়ের আগমন। সে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। খোলা জায়গার প্রান্তরে ছোট্ট পুকুরের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা স্থির দুষ্টু নড়েচড়ে উঠলো। ভীষণ শক্ত এবং পাষণ্ড স্বরে বলে উঠলো,
‘কি চাই?’
নীড় থমকে গেলো। নিস্তব্ধ ভাঙা কর্কশ স্বরে মেজাজ খারাপ হলো। খসখসে গলার বলল,
‘কি চাইবো? কিচ্ছু চাই না।’
‘তবে এখানে কি?’
নীড় পুকুরের পাড় ঘেঁষে দাঁড়ায়। ছোট নুড়ি নিয়ে ফেলতে ফেলতে বলে,
‘আসা বারণ নাকি এখানে আসার অধিকার একমাত্র তোমার আছে?’
‘তা বলিনি। তবে, এখন থেকে আমি যেখানে থাকবো সেখানে তোমার আসা অবশ্যই বারণ।’
‘আগে তো ছিলো না, দুষ্টু।’
নীড় পেছন ফিরে তাঁকিয়ে বলল। স্থির নয়নে, অস্থির চিত্তে, শীতল কণ্ঠে। কেমনতর যেনো সব! অগোছালো! অবিন্যস্ত! বিশৃঙ্খল! দুষ্টু চোখ সরিয়ে নেয়। নীড় বলে। ঠান্ডায় শব্দ অনেক দূর অবধি যায়। হালকা প্রতিধ্বনি হয়ে আবার ফিরে আসে। বুকে ধাক্কা লাগে। শরীর কেঁপে উঠে।
‘এই ধরণীতে বিদ্যমান যা, তা সবই কি নশ্বর?’
দুষ্টু হালকা আওয়াজে প্রশ্ন করলো, ‘হঠাৎ এ প্রশ্ন?’
‘আর কি কোনোভাবেই মিল হবার নয়? পথের দ্বার সবগুলোর বন্ধ?’
দুষ্টু চাইলো। চোখে চোখ পড়লো। চার চোখ ক্ষণিকের জন্য বনাবনি হলো। মিনিট দুয়েক গড়ালো। দুষ্টু স্মিত তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
‘যা চলে যায়, তা পিছু ডেকে জোর করে ফিরিয়ে নিয়ে আনার কি দরকার? তোমার আমার ইচ্ছেতে কিছু হয় না তো, নীড়।’
‘তবুও…..?’
‘তবুও কি?’
‘তুমি চাওয়া না?’
দুষ্টু ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। মুক্তোর ন্যায় ঝকঝকে শুভ্র দাঁতে সোনালি কিরণ ঝিলিক দিয়ে উঠলো। সে বলল,
“অতিরিক্ত প্রত্যাশা জীবনে হতাশা ডেকে আনে, জানো তো?’
নীড় ভ্রু কুচকায়, ‘তার মানে?’
‘মানে বোঝার মতো এতোটাও অবুঝ বোধ হয় তুমি নও।’
‘তোমার দিক থেকে ব্যাখ্যা শুনতে চাইছি।’
‘আমি চাই না আর নীড়। আমার জীবন থেকে যা কিছুই চলে যাক না কেনো তা আর আমি কখনোই ফিরে পেতে চাই না।’
‘দুষ্টু……।’
নীড়ের কণ্ঠ থেকে ছিটকে বেরুলো শব্দটা। দুষ্টু চোখ বন্ধ করে। হা করে দু-একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে। বাতাসের সাথে নিঃশ্বাসের ধোঁয়ার সংমিশ্রণ ঘটে। সে বলে,
‘নীড়, কিছু কথা বলি। একটু মনোযোগ দিয়ে শুনো প্লিজ।’
নীড় উত্তর দেয় না। দুষ্টু হতাশ শ্বাস ফেলে বলল,
‘নীড়, তুমি টিয়াকে ভালোবাসো!’
নীড় বড় বড় চোখে করে অবাক হয়ে তাকায়,
‘অসম্ভব। কক্ষনো না।’
‘বাসো।’
‘না।’
‘আমি সেই ভালোবাসার কথা বলিনি। বোন হিসেবে, বন্ধু হিসেবে তো যত্ন করেছো, আদর করেছো, ভালোবেসেছো নাকি?’
‘হ্যাঁ, তো?’
‘তবে, কেনো তাকে স্ত্রী হিসেবে ভালোবাসতে পারছো না?’
নীড় তাকায়। কেমন গরম লাল চোখ তার। দুষ্টু বলে,
‘আমি প্রেমিকা হিসেবে ভালোবাসতে বলছি না। স্ত্রী হিসেবে ভালোবাসতে বলছি।’
‘কিন্তু আমি আমার প্রেমিকাকেই স্ত্রী হিসেবে ভালোবাসতে চেয়েছি।’
দুষ্টু উদাস চোখে তাকায়। আচ্ছন্নের ন্যায় কণ্ঠে বলে,
‘সব চাওয়া পাওয়া হয় না। নীড়, টিয়ার অনেক কষ্ট।’
নীড় চোখ কুচকায়, ‘কি কষ্ট?’
‘যেমন কষ্ট তোমার-আমার। ঠিক তেমন।’
নীড় থমকায়! চমকায়! মস্তিষ্ক তাকে কিছুক্ষণ ভাবায়। অতঃপর অনেকক্ষণ পর ধীর গলায় তাকে বলতে শোনা যায়,
‘কে সে?’
‘কেউ না।’
‘বলো।’
‘না।’
‘বলো প্লিজ।’
‘জেনে লাভ?’
‘আমি চেষ্টা করবো।’
‘কি?’
‘ফিরিয়ে দেওয়ার। তাদের মিল করিয়ে দেওয়ার।’
‘লাভ নেই।’
‘কারণ?’
‘সে বিবাহিত।’
‘আমি ডিভোর্স দেবো।’
দুষ্টু হাসে। বলে,
‘তোমার কি মনে হয়? আচ্ছা, টিয়া কি তোমায় বিয়ে করতে চেয়েছিলো? হঠাৎ রাজি হলো কেনো? ওর যদি পথ খোলা থাকতো তবে কি তোমার ডিভোর্সের অপেক্ষা করতো?’
‘তবে?’
‘সেও বিবাহিত।’
নীড় বিস্ময় নিয়ে তাকায়, ‘কি নাম তার?’
‘নাম নেই।’
‘দুষ্টু, প্লিজ নাম বলো।’
‘তুমি কি কখনোই কিছু বুঝোনি?’
‘না।’
‘আশ্চর্য! তোমরা ছেলেরা এতোটা অবুঝ বুঝি?’
দুষ্টুর কণ্ঠে রাগ ঝড়ে পরে। নীড় ঠান্ডা গলায় শুধায়,
‘নাম কি?’
‘বলছি তো নাম নেই। নাম দিয়ে কি করবে তুমি?’
‘তুমি বলো।’
দুষ্টু একবার চোখের পাতা ঝাপটে বলে দেয়, ‘প্রযুক্ত ভাইয়া।’
প্রায় সাথে সাথে যেন শীতল বাতাস থেমে গেলো অথচ ঠান্ডা বহুগুণ বেড়ে গেলো। হাত পা জমে এলো। নড়ানো চড়ানো দায়৷ নীড়ের গলার স্বর থেমে এলো। দুষ্টু হাসলো। বলল,
‘ভেবে দেখেছো, সামান্য কথায় তুমি কি পরিমাণ শকড? আর কখনো ভুলক্রমেও যদি আমাদের অতীত সম্পর্কের কথা ওরা জেনে ফেলে, সবাই ঠিক কত ভোল্টেজের ঝটকা খাবে? তুমি বিবাহিত, নীড়। তোমাকে বুঝতে হবে। ইউ হেভ টু আন্ডারস্ট্যান্ড। তুমি কীভাবে বলতে পারলে আমাদের আবার মিল হওয়া সম্ভব?’
নীড় তখনও কথা বলতে পারলো না। দুষ্টু চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেললো। নিজেকে শান্ত করলো। অতঃপর নিবিড় গলায় বলল,
‘নীড়, টিয়ার কাছে যাও। ওর তোমাকে দরকার। ও বাচ্চা মানুষ। ওর ভালোবাসা’টা ওত গভীর নয়। কিন্তু চোখের সামনে ভালোবাসার অবুঝ মানুষ’টাকে অন্যকারো সাথে দেখা’টা ওর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই….ওই ক্ষতটা খুব গভীর।’
নীড় চোখ তুলে তাকায়। শুভ্র চোখের চারিপাশ’টায় লাল বর্ণের ন্যায় রগগুলো ভেসে উঠেছে। তার কষ্ট হচ্ছে! কিন্তু বুঝতে পারছে না। ভীষণ আক্রোশে যন্ত্রণা হচ্ছে! কিন্তু অনুধাবন করতে পারছে না! দেখাতে পারছে না! কাউকে বোঝাতে পারছে না! সে বলল গমগমে আওয়াজে,
‘আমি এখন কি করবো?’
দুষ্টু স্থির পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো,
‘আমি জানি বিয়ে’টা জেদে করেছো কিন্তু মেয়েটার জীবন তোমার হাতে। তুমি চাইলে ওর বেরং গুলো রঙিন করে দিতে পারো।’
‘পারি?’
‘অবশ্যই।’
‘তবে কেনো পারছি না?’
‘কারন চেষ্টাই করছো না।’
‘তাই?’
‘হুম।’
‘তবে কেনো আমার রংগুলো রঙিন করতে পারছি না? আমি বহুভাবে চেষ্টা করছি তো, দুষ্টু। কেনো পারছি না? সমাধান আছে তোমার কাছে?’
দুষ্টু নিষ্প্রাণ চোখে চাইলো,
‘নেই। কেউ নিজের জীবন নিজ হাতে রাঙাতে পারে না অথচ অন্যের জীবন রাঙিয়ে দিয়ে যায়। তুমি চেষ্টা করো, নীড়। এর মাঝেই তোমার জীবনের লাল রং’টা হয়তো খুঁজে পাবে।’
নীড় অস্থির কণ্ঠে বলে উঠে,
‘কীভাবে চেষ্টা করবো? কীভাবে? ওর কাছে গেলে তো আমি তোমায় দেখতে পাবো। আমি ওকে অনুভব করি না। করছি তোমাকে। তুমি বুঝতে পারছো আমার ব্যথাটা? পারছো না! আমার যন্ত্রণার একাংশ যদি তোমায় ছুঁতো তবে তুমি বুঝতে।’
দুষ্টু তাচ্ছিল্য হাসলো। হায়! মায়ের কাছে মামাবাড়ির গল্প। চোখের কিনার ঘেঁষে জমা পানিগুলো আড়ালে মুছে ফেলে সে বলল,
‘আমায় ভুলার চেষ্টা করো। ওকে আপন করো। কষ্ট দিও না। ওর ছোট্ট হৃদয়’টা এতো কষ্ট বইতে পারছে না।’
নীড় চোখ বন্ধ করে। মেয়েদের মতো ঠোঁট কামড়ে ধরে। মিনিট পাঁচেক চুপচাপ হয়ে থাকার পর ক্রমাগত মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘আমি পারবো না। পারবো না। কীভাবে পারবো আমি? সম্ভব না।’
‘সম্ভব।’
‘না।’
দুষ্টু তেজী গলায় বলে,
‘তবে জেদ নিয়ে বিয়ে করলে কেনো? জীবন ছেলে-খেলা? বিয়েটা হেলাফেলা?’
নীড় তাকালো। স্মিত কণ্ঠে বলল,
‘তুমিও তো তাই করছো। ডিভোর্স নিচ্ছো। বিয়েটা তো ছেলেখেলা নয়। আমার ভাইটাকে কেনো কষ্ট দিবে?’
দুষ্টু চট করে দৃষ্টি সরালো। অপরাধের ন্যায় বলল,
‘তোমার ভাই কষ্ট পাবে না। তার একজন গোপনী রয়েছে। তুমি তোমার দিক থেকে চেষ্টা করো। দেখবে টিয়া কিছুদিনের মাঝেই সব ভুলে যাবে।’
নীড় হাসলো। হাত দিয়ে নাক ঘষে দু’কদম পা বাড়ালো। দুষ্টু চেয়েই রইল। মিনিট কতক পেরুলো না, নীড় আবার ফিরে এলো। দুষ্টুর কাছে! একদম কাছে! হালকা আওয়াজে ধীর কণ্ঠে ভীষণ ক্লেশের সহিত বলে উঠল,
“তোমাকে ভুলতে আমার কষ্ট হবে, দুষ্টু। এমন কষ্ট যা কোনোদিন কোনো পুরুষ পায়নি। কোনো নারীকে তা স্পর্শ করেনি।”
দুষ্টুর পলক পড়তে না পড়তেই মানুষ’টা কুয়াশার ধূম্রজালের আড়ালে হারিয়ে গেলো, মিশে গেলো। ঝাপসা দেখালো সব।
৯৭.
সকাল তখন প্রায় সাড়ে সাত’টা বাজে। পুকুর পাড়ে দুষ্টু ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো। পেছন থেকে কে যেন হঠাৎ তাকে স্পর্শ করলো। সে চমকে ঘাড় ফিরালো। অপ্রস্তুত হেসে বুকে হাত রেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল,
‘ওহ! আপনি!’
প্রচ্ছদ অবাক হয়ে কাধ নাচাঁয়,
‘হ্যাঁ, আমি। আর কারো আসার কথা ছিলো নাকি?পুকুর পাড়ে কি করছো এতো সকালে?’
‘কিছু না। কখন উঠলেন? ফ্রেশ হয়েছেন?’
‘হুম।’
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর প্রচ্ছদ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ঘুম হয়নি রাতে?’
দুষ্টু ভীত চোখে তাকায়। বলে,
‘কেনো? হঠাৎ এমন মনে হলো?’
‘কাল আমার সাথে থাকতে হলো যে।’
দুষ্টু পুনরায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,
‘নাহ। ঘুমিয়েছি। সমস্যা হয়নি। মাঝে কোলবালিশ ছিলো তো।’
‘হুম। এ কয়েকদিন কষ্ট করতে হবে। গ্রামের বাড়ি বুঝতেই পারছো তারউপর শীত। মেঝেতে থাকতে পারবো না, সরি।’
দুষ্টু বাম ভ্রু উঁচিয়ে বলে, ‘জি, আমি বুঝতে পেরেছি।’
কথা’টা বলে দুষ্টু চুপ হয়ে গেলো। প্রচ্ছদ মিনিট পাঁচেক অযথা স্তব্ধ নয়নে ওই পেলব, কোমল, মসৃণ মুখে চেয়ে রইল। এরপর সহসা বলে উঠলো,
‘আপনি আমার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বার্থপর মানুষ।’
দুষ্টু পুনরায় চমকে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে বিস্ময় নিয়ে তাকালো। কি করলো ও! লোকটা এভাবে বলল কেনো? হঠাৎ আপনিতেই বা নামা হলো কেনো? এই লোকের মতিগতি বোঝা এতোটা দায় কেনো? রাগে তার চোখ জ্বলে জ্বলে উঠলো। তেজী স্বরে বলল,
‘স্বার্থপরের সাথে আবার কথা বলতে এসেছেন কেনো?’
প্রচ্ছদ কাধ ঝাঁকায়, ‘ভালো লাগে তাই।’
‘কেনো ভালো লাগে?’
‘বলবো কেনো?’
‘অবশ্যই বলতে হবে। আপনার কথার আগামাথা আমি কিচ্ছু বুঝতে পারি না।’
‘তুমি মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করো না।’
‘করি।’
‘না, করো না।’
‘অবশ্যই করি।’
‘নিশ্চয়ই করো না।’
‘আচ্ছা করি না। আপনি বলুন ভালো লাগে কেনো?’
প্রচ্ছদ দু’কদম এগিয়ে যায়, ‘ভালো লাগে কারণ….!’
দুষ্টু ভ্রু কুচকায়, ‘কারণ?’
প্রচ্ছদ আরো দু’কদম এগিয়ে যায়। দুষ্টুর সন্নিকটে! একদম তার নিঃশ্বাস ঘেঁষে! হাতের ডান সাইডের পুকুর থেকে ধোঁয়ার মতো পানি বাষ্প হচ্ছে! কুয়াশা পড়ছে! প্রচ্ছদ মুচকি হেসে শরীর শিরশিরে কণ্ঠে বলে,
“কারন, তুমি মানে আদর, একরাশ মুগ্ধতা।
তুমি মানে, তুমি আমার, এক নিদারুণ যন্ত্রণা।
আহ! প্রেমলতা…..!”
চলবে❤️