অন্তহীন সন্ধ্যা পর্ব-০৬

0
1
অন্তহীন_সন্ধ্যা #সূচনা_পর্ব #মাকামে_মারিয়া

#অন্তহীন_সন্ধ্যা
#পর্ব ০৬
#মাকামে_মারিয়া

সরকার বাড়ির পুরুষলোকেরা সবাই তাদের নিজস্ব ব্যবসা সামলায়। বাজারে মুদি দোকান সহ দুটো চাউলের গোডাউন রয়েছে তাদের। রাফসানের ছোট কাকা বদিউর রহমান, বয়স বত্রিশ চলে। ছোট্ট একটা মেয়ে তার। মেয়েটাকে ঘিরেই তার জীবন। ছোট্ট মেয়ে জামিয়ার জন্মের সময়েই বদিউর রহমানের স্ত্রী পরলোকগমন করেন। এরপর সে আর বিয়ের কথা মুখেও নিলো না অথচ তারই ভাতিজা কি না এক বউ ঘরে রেখে আরেক বউ নিয়ে আসলো!

এ নিয়ে কম কানাঘুঁষা হয় না আশেপাশে। সবই কানে আসে রাফসানের। কিন্তু সে বরাবরের মতোই চুপ। চুপ থাকাটা যেন তার কোনো কাজ,আর সে এই কাজটা বিনাবাক্য ব্যয়ে করে যায়। জুহাইরা একবার উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো ” আপনি এতো চুপ থাকেন কি করে? মনে হয় আপনার সামনে তুফান হয়ে গেলেও আপনি নড়বেন না যদি না তুফানটা আপনার চোখে নড়বড়ে লাগে।

রাফসান মুচকি হেঁসে জবাব দিয়েছিল ” অপ্রয়োজনে আমি ব্যাক্য ব্যয় করতে রাজি না। আমার খুচরো শব্দগুলোর দাম আছে। যেখানে সেখানে ব্যবহার করা চলবে না। মনে রাখবে কিছু কিছু সময় খুচরোর ভিষন অভাব দেখা দেয়। তাই খুচরো কথা গুলো খুচরো টাকার মতো পকেটে গুঁজে রাখি।

ভিষন গুছানো একটা মানুষ, অথচ ফারিন দু’আনার দাম তাকে দেয়নি। আসলে যার চাহিদা যেমন সে যদি তেমন না পায় তাহলে তো সে দাম দিবে না এটাই স্বাভাবিক। ফারিনের চাহিদা উচ্চতর। এদিকে জুহাইরার কাছে রাফসান মানেই রাজপুত্র। জুহাইরার চাহিদার কাছে রাফসান একটু বেশিই উচ্চতর কি না!

___________

জামিয়া বড় বড় আওয়াজে চিল্লিয়ে কান্না করছে। কোহিনূর বেগম গিয়েছে ছাঁদে কাপড় মেলে দিতে। সময় তখন সকাল এগারোটা। শ্যামলা বানু রুমের মধ্যে বসে তসবি জপছে আর চোখ বন্ধ করে ধুলছে। মনে হচ্ছে বিরাট ধ্যানে বসেছে। জামিয়ার চিৎকারে জুহাইরা নাড়তে থাকা তরকারিটায় আরো একবার নেড়ে দিয়ে চুলার আচঁ কমিয়ে দিলো। তড়িঘড়ি করে ড্রয়িং এ এসে দেখলো মেয়েটার অবস্থা নিদারুণ খারাপ। চোখে মুখে লাল নীল হলুদ কমলা সব রকমের রং মাখার মতো। জুহাইরা কাছে গিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো আসলেই এগুলো রং কি না!

কিন্তু না এগুলো তো রং নয়। ঠোঁটেও লিপস্টিক লেপ্টে রেখেছে। এদিকে সমানে কান্না করতেই আছে। জুহাইরা কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ” কি হয়েছে মনি? আপুকে বলো?

জামিয়া সাড়ে চার বছরের বাচ্চা হলেও স্পষ্ট সব কিছু বলতে পারে। রাফসানের বউ জুহাইরা তো জামিয়ার চাচাতো ভাবি লাগে, সে জুহাইরাকে জুহাপু বলেই ডাকে। কিন্তু এখন কান্নার জন্য মুখ থেকে অন্য শব্দ বের করতেই পারছে না। শুধু হাত দিয়ে ফারিনের রুমের বন্ধ দরজার দিকে দেখাচ্ছে। জুহাইরা একবার দরজায় আরেকবার জামিয়ার দিকে তাকিয়ে অবশেষে বুঝতে পারলো যে মেয়েটা নিশ্চয়ই ফারিনের সব মেকআপ নষ্ট করে ফেলছে। চোখে মুখে যে ভাবে মেখেছে তাতে বুঝাই যাচ্ছে যে মেকআপ একটাও হয়তো ঠিক নেই। আর ফারিন এই অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই নাজেহাল। জুহাইরার মন খারাপ হয়ে গেলো মূহুর্তেই। মন হচ্ছে জামিয়াকে চোখে চোখে রাখলেই ফারিনের মেকআপও নষ্ট হতো না আর বাচ্চাটাকেও হয়তো বকা খেতে হতো না। কি বা করার! বেচারি ফারিনেরও তো শখের জিনিসপত্র ওগুলো।

জামিয়ার কান্না থামালো অনেক কিছুর লোভ দেখিয়ে। “তোমার ভাইয়া বাসায় আসলে আমরা শপিং এ যাবো, এরপর তোমাকে অনেক গুলো লিপস্টিক কিনে দিবো”

এমন আরো অনেক অনেক শান্তনা দিয়ে মেয়েটাকে শান্ত করলো জুহাইরা। চোখ মুখ ধুয়ে দিয়ে টিভি অন করে দিলো। বাটিতে কিছু চানাচুর দিয়ে বসিয়ে চলে গেলো রান্না ঘরে।

আপাতত মেয়েটাকে জুহাইরাই দেখে। তাছাড়া কোহিনূর, শ্যামলা উনারা তো আছেই। ভাতের পাতিল নামিয়ে দিয়ে রান্নার সমাপ্তি টানবে টানবে অবস্থা এমন সময়ই ড্রয়িং রুম থেকে কিছুটা চেচামেচির শব্দ শুনে জুহাইরা উঁকি দিয়ে দেখলো রাফসান, বদিউর রহমান কোহিনূর আর শ্যামলা বানু গোল হয়ে জাইমাকে ঘিরে রেখেছে। জুহাইরার হৃদয় নড়ে উঠলো। মাত্রই তো মেয়েটাকে ঠিকঠাক রেখে এসেছিলো। আবার কিছু হলো না তো??

বদিউর মেয়েটার গালে বার বার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর হতাশ হয়ে একটু পর পর সবার দিকে তাকাচ্ছে। তার নিজের চোখও চিকচিক করছে। উপস্থিত সবাই খুব খেপে আছে মনে হচ্ছে। জুহাইরা একটু দূর থেকেই উঁকি ছুঁকি মেরে ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছে। কাছে যাবে কি না ভাবতেই জামিয়া হাত বাড়িয়ে জুহাইরার দিকে তাকালো। ওমনি সবাই চোরের মতো দাঁড়িয়ে থাকা জুহাইরার দিকে তাকালো। সে তো ভয়ও পেলো কিছুটা। তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে এসে জামিয়াকে কোলে নিলো।

ছোট মেয়েটার ফর্সা গালটা লাল হয়ে আছে।খুব বেশি ফর্সা হওয়াতে গালের লাল অংশটুকু একেবারে স্পষ্ট। জুহাইরা দেখেই আতংকে উঠলো। একি! এটা তো খেয়াল করিনি। মুখ ধুঁয়ে দেওয়ার সময় রং গুলো উঠয়েছি কেবল। তখন তো মনে হয়েছে রংয়ের দাগই,আর তাড়াহুড়ো করতে গিয়েও এতো খেয়াল করা হয়নি। জামিয়ার গাল থেকে নজর সরিয়ে সবার দিকে তাকাতেই শ্যামলা বানু গোল গোল চোখ করে জুহাইরাকে বললো ” তুই কই ছিলি রে বেটি? আমার নাতনিকে আরেক ডাইনী মেরে ফেলছিলো যে!

” দাদী আমি..

জুহাইরাকে থামিয়ে দিলো বদিউর রহমান। মায়ের উদ্দেশ্যে হাতের আঙুল কচলাতে কচলাতে বললো ” এই মেয়েটার ঘাড়ে দোষ টা চাপানোর চেষ্টা করছেন নাকি আম্মা? দেখলেনই তো জুহাইরা রান্না ঘর থেকে এসেছে। রান্নাও করবে আবার আমার মেয়েকেও সামলাবে?

বদিউর রহমান বরাবর শান্ত স্বভাবের লোক। নিজে নিজে পুড়ে গেলেও সেটা খুব বেশি প্রকাশ করতে পারে না। এই যে তার মেয়েটাকে ফারিন কষিয়ে থাপ্পড় মেরেছে গালে, সেই থাপ্পড়ের দগদগে দাগটা চোখে ভাসছে অথচ সে ভিতরে ভিতরে পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না। ভেতর ফেটে যাচ্ছে অথচ চিৎকার করতে পারছে না।

এমন স্বভাবের মানুষদের জীবনটা একটু কঠিনই বটে। যারা হুটহাট চিৎকার করতে পারে। নিজের ভেতরের রাগ অভিমান, দুখ কষ্ট ঝেড়ে ফেলতে পারে তারাই প্রকৃতি পক্ষে বুদ্ধিমান। ভিতরে রাগ পুষে রাখলে সেটা নিজেকেই বিনাশ করে। ঝেড়ে ফেলে দিতে পারলেই হালকা হওয়া যায়। যেটা বদিউরের মতো আরো অনেকেই হয়তো পারে না।

জামিয়াকে ইতিমধ্যেই সব কিছু জিজ্ঞেস করা হয়েছে। জামিয়া সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়েছে ” রুমের দরজা খুলা পেয়েছে, গতরাতে ফারিন কোনো এক প্রোগ্রামে গিয়েছিল সাজুগুজু করে কোনো কসমেটিকস ঠিক করে রাখেনি। আর ওমনি হাতের সামনে সব পেয়ে জামিয়া ইচ্ছে মতো গালে লাগিয়ে নষ্ট করছে। ফারিন রাগে মেয়েটার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে।

এতোটুকু সবাই বুঝতে পেরেছে। রাফসান বরাবরই ফারিনকে এড়িয়ে চলে। কি বা করবে?? এখন তাকে গিয়ে কিছু বললেই একগাদা কথা শুনিয়ে দিবে। তাকে একটা বলে তার বদলে একশো একটা পাল্টা জবাব আজ পর্যন্ত রাফসান কম পায়নি। প্রথম প্রথম সহ্য করলেও এখন আগাগোড়া সম্পূর্ণটাই এড়িয়ে চলে। মানুষের মনে রাখা দরকার যে একটা লোক কখনোই তোমাকে বার বার সুযোগ দিবে না। আর না তোমাকে বার বার সহ্য করবে কিংবা ছাড় দিবে। তুমি যাকে যত বেশি ইগনোর করবে সে ধীরে ধীরে তোমার থেকে তত বেশি দূরত্ব বাড়িয়ে দিবে, সাথে আগ্রহ কমে আসবে। একটা বার আগ্রহ কমে আসলেই পূনরায় একই স্থানে ফিরে যায় না কেউই।

রাফসান কিছু না বললেও শ্যামলা বানু চুপ নেই। তিনি সেই তখন থেকেই ফারিনের রুমের বন্ধ দরজায় দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে যাচ্ছেন। এতে বোধহয় ফারিনের একচুলও কিছু যায় আসছে না। সে দরজা বন্ধ করে দিব্যি ঘুমাচ্ছে। শ্যামলা বানুর চিল্লানোতে উল্টো ঘরের মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। জুহাইরা চেয়ে চেয়ে কেবল দেখছে একটা মানুষ কতোটা দায়সারা ভাবে জীবন যাপন করলে ঘরের প্রতিটা মানুষকে এ ভাবে ইগনোর করে থাকতে পারে।

বদিউর রহমান ফোনটা বের করে ফারিনের বাবার নাম্বারে ডায়াল করলো। প্রথম বারেই কল রিসিভ হলো। সে শান্ত স্বরেই জানালো ” বেয়াই সাহেব! ভালো আছেন?

ওপাশ থেকে বেশ প্রফুল্ল ভাবে উত্তর আসলো সে ভালো আছে। এ বাড়ি থেকে ভালো মন্দ খবর পেলে বা কেউ খুঁজ খবর নিলে লোকটার ভালো লাগে কিন্তু মেয়ের বিহেভিয়ার এর কারণে প্রথমে ভালো মন্দ খবর নিলেও এরপর থেকে কেবল মেয়ের নামে বিচারই গিয়েছে। তিনি সমভাবে আন্তরিকতার সাথে দুঃখ প্রকাশ করে মেয়ের হয়ে ক্ষমা চেয়েছে। তাছাড়া আর উপায় বা কি? মনে হয় মেয়ের চেয়েও বেশি উনি চায় যে তাদের সংসার টা হোক!

” আসলে ভাইসাব! আপনি ভালো থাকলেও আমরা ভালো নেই। আপনার মেয়ে আমাদের আর ভালো থাকতে দিলো না ভাই।

বদিউরের কন্ঠে হতাশা। উল্টো পাশ থেকে ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কি বা করার আছে তার? মেয়ে যে একটা ভুল করেছে সেটা উনি জানেন, তাই আর ছোট মুখে জানতে চাইলো না যে মেয়ে কি করছে। শুধু নিরবে ভাবলো মেয়েটাকে বোধহয় ঠিকঠাক মানুষ করতে পারলাম না”। আচ্ছা বাবারা কি ছেলেমেয়ে মানুষ করতে পারে না?? একি তবে আমার নিজের ব্যর্থতা??

মেয়ে ভুল করলেই ভদ্রলোক মনে করে মা মরা মেয়েটাকে তিনি ভালো শিক্ষা দিতে পারেনি। ছোট কাল থেকেই ফারিনি ফ্যামিলি পায়নি। এই জন্যই বড় হওয়ার সাথে সাথে ফারিনের বাবা চেয়েছিলো একটা সুন্দর পরিবারে যেনো মেয়েকে বিয়ে দিতে পারে। যেনো মেয়ে একটা পরিবার পায়, রাফসানের মতো একটা ছেলেও মেয়ের জামাই হয়। তাই তো বন্ধু আতিকুর রহমানকে এসে প্রস্তাব দিয়েছিলো মেয়েটাকে যেনো নিজের করে নেয়। আতিকুর রহমানও বন্ধুকে নাকচ করে দিতে পারেনি। কিন্তু কে জানতো যে বাবা মেয়েকে পরিবার দিতে চাইলো সেই বাবা-র মেয়েই পরিবার নিজের করে নিতে পারবে না।

পরিবেশ পরিস্থিতি এখন শান্ত। দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই যার যার রুমে রেস্ট করার উদ্দেশ্যে শুয়ে আছে। জুহাইরা আনমনে দক্ষিণে জানালাটার দিকে মুখ করে কপালে একটা হাত ঠেকিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখলে মনে হবে বাহিরের কোনো দৃশ্য মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কিন্তু না জুহাইরার চোখের পাতাও নড়ছে না। সে অতিশয় মনোযোগী হয়ে কোনো ভাবনায় ডুব দিয়েছে।

কপাল থেকে হাতটা সরিয়ে রাফসান জুহাইরাকে কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ” চোখে মুখে এতো চিন্তা যে? কি এতো চিন্তা করো?

রাফসানের হঠাৎ উপস্থিতিতে জুহাইরা লজ্জা পেলো না, নিজেকে থামিয়েও রাখলো না। ছেলেটার চোখে চোখ রেখেই জিজ্ঞেস করলো ” আচ্ছা ফারিন আপু ওমন কেনো?

” কেমন?

রাফসানের প্রশ্নে শুয়া থেকে ওঠে বসলো সে। নিজেকে গুছিয়ে বসতে বসতে বললো ” এই যে কোনো কিছু গায়েই মাখে না। তাকে বললো নাকি অন্য কাউকে বললো এতে তার কোনো রকম এটেনশন নেই।

” একপ্রকার সাইকো সে!

রাফসানের কঠিন কথায় জুহাইরা ফিরে তাকালো তার দিকে। মুখ বিরবির করতে রাখলো। রাফসান বেশ যত্নে মেয়েটার হাতটা কাছে টেনে নিলো। শান্ত কন্ঠে বললো ” আমাদের বাবা মা সব সময় আমাদের ভালো চায় জুহা। বলো চায় না??

জুহাইরা ছোট্ট করে জবাব দিলো ” হুম চায়।

” ফারিনের বাবাও তার মেয়ের ভালো চেয়েছে। তবে ভুলটা কোথায় জানো?

জুহাইরা আর জিজ্ঞেস করলো না ভুলটা কোথায়! কারণ জানে রাফসান নিজেই বলবে বাকিটা। তাই চুপচাপ চেয়ে আছে মুখের দিকে। রাফসান ফের বললো ” ভুলটা হলো কিছু কিছু সময় বাবা মা সন্তানের ভালো চাইতে গিয়ে তাদের ঘাড়ে ভালোটা চাপিয়ে দিতে পারলে বাঁচে।

এই যে আঙ্কেল ভেবেছে ভালো একটা পরিবারে মেয়েকে দিলেই মেয়ে সুখী হয়ে যাবে। অথচ তার মেয়ে সেটা আজ অব্দি ভালো বলেই মেনে নিতে পারেনি। তার কথা হলো বাবা তাকে তার যোগ্যতা এবং চাহিদার চেয়ে নিম্ন জায়গায় দিয়েছে। এই যে জোর করে বিয়ে টা দিলো এতে আধো কেউ সুখী হলো?? না আমি আর না সে, আর না আমার ফ্যামিলি। অথচ এখানে কেউ বলতে পারবে যে ফারিনের বাবা নিজ মেয়ের সুখটা চায়নি। সব বাবা মায় সন্তানের সুখ চায় কিন্তু তার মানে এই নয় যে সন্তানের ঘাড়ে সেটা চাপিয়ে দিবে। সব সন্তান কিন্তু মেনে নিয়ে মানিয়ে নেয় না। যেমনটা ফারিন করলো। সে মানিয়ে নিবে দূরে থাক এখন পর্যন্ত মেনেই নিলো না।

কি জানি কেনো জুহাইরার কিছু বলতে ইচ্ছে করলো না। কেবল মনে হয় তার বাবাও তার সুখের জন্য চেষ্টা করে এসেছে সর্বক্ষন। সে সুখী হোক আর না হোক সুখী থাকার অভিনয়টুকু হলেও করতে হবে তাকে। বাবাকে দেখাতে হবে সে সুখী। সন্তানের সুখেই তো বাবা মায়ের সুখ। দীর্ঘশ্বাস টানলো দুজনেই। দুজনের দীর্ঘশ্বাস দুই মেরুর দুটো বালুকণার ন্যায়। তাও ধুলো উড়া বালুর ন্যায় দুটো বালু কনার মিলিন উড়ে উড়ে একই স্থানে ঘটলো। জুহাইরা রাফসানের বাহুতে চুপটি করে শুয়ে রইলো শান্ত দুপুরের দিকে তাকিয়ে। বাহিরেই জামরুল গাছের নিচে দুটো শালিক ঠক ঠক করে মাটি থেকে কিছু কুড়িয়ে খাচ্ছে। এ যেন একজোড়া শালিকের সুখীভাব ফুটে উঠলো। যা চোখের শান্তি।

চলবে…………….