#অন্তহীন_সন্ধ্যা
#পর্ব ২১
#মাকামে_মারিয়া
নিজের মূল্য বুঝাতে মাঝে মাঝে নিজেকে কিছু মানুষের কাছে থেকে সরিয়ে নিতে হয়। জুহাইরা সুন্দর করে একটা পরিকল্পনা আটলো। বদিউর আর ফুলমতিকে বেড়াতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো। কিন্তু কোথায় যাবে??
ঠিক করলো ঢাকায় যাবে মেঝো ভাই আতিকুর এর বাসায়। জামিয়াকে রেডি করাতে করাতে জুহাইরা বুঝালো ঢাকায় তাকে অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবে তার বাবা এবং ফুলি মা। এতেই জামিয়া খুশিতে আত্মহারা। খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বললো ” জুহাপু তুমিও আসো না আমাদের সাথে!
জুহা হাসে, আড়চোখে রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসান দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। কেনো দৃষ্টি সরিয়ে নিলো? লজ্জায়? কিসের লজ্জা! হয়তো বউকে এখনো কোথায় ঘুরতে বা বেড়াতে না নিয়ে যাওয়ার লজ্জায়।
ফুলিকে নিয়ে বদিউর রওনা হলো ঢাকায়। শ্যামলা বানু কোহিনূর রাফসান মিলে গেইট অব্দি এগিয়ে দিয়ে আসলো। জুহা দরজা অব্দি এসেই থেমে গেলো। যাত্রা শুভ হোক এটাই তার কামনা।
কিছুক্ষণ পরেই শ্যামলা বানুর রুমে জুহা চুপচাপ এসে খাবার টা দিয়ে চলে গেলো। মুরব্বি তখন বারান্দায় বসে একপলকে বাহিরে তাকিয়ে তবজি জপছে। জুহা প্রতিবার রুমে ঢুকেই মিষ্টি স্বরে ডাকতো ” দাদী আছেন?
কিন্তু আজকে ডাকলো না। যবে থেকে শ্যামলা বানু ফুলিকে সব দায়িত্ব দিলো নিজের কাজের তবে থেকে তো জুহাকে নিজের কাছেও ঘেঁষতে দিতো না। কিন্তু আজকে তো ফুলি নেই তাই জুহাকেই দেখবাল করতে হবে। কিন্তু মেয়েটা খাবার রেখে চলে গেলো একবার বললোও না! ব্যাপারটাতে শ্যামলা বানুর টনক নড়লো।
পেটে খিদে থাকলে মনে আর-ও যতই রাগ থাকুক খেতে হবে। শ্যামলা বানু খাওয়া শেষ করতেই জুহা এসে চুপটি করে থালাবাটি নিয়ে গেলো এবারও কিছু বললো না?
অন্য সময় কতো কি বলে! ঠিকঠাক খেতে পেরেছেন? খাবার ভালো লেগেছে? না লাগলে জিজ্ঞেস করতো কোনটা রান্না করলে খেতে পারবেন আমাকে জানাইয়েন রান্না করে দিবো। কিন্তু এখন এসবের কিছুই নেই! শ্যামলা বুঝতে পারলো না রাগ সে করছে নাকি জুহা নিজেই রাগ করছে!
ঔষধ আর পানি এগিয়ে দিয়েও চলে গেলো। অন্য সময় খাইয়ে দিয়ে যায়। পাশে বসে চুলে বিলি কাটে। মাঝে মাঝে হা পা মালিশ করে দেয়। আজকে কিছুই করলো না। শ্যামলার মনের ভেতর রাগ গুলো গলতে শুরু করলো। বুঝতে পারলো মেয়েটা সত্যিই উনার জন্য অনেক কিছু করতো তার সাথে এমন ব্যবহার খাটেনি।
জুহা দক্ষিণে খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে অর্ধশুয়ে আছে। মনটা একটু ভারী বটে। নিজের দাদীকে সে দেখেনি। দাদীর আদরও পায়নি। এ বাড়িতে আসার পর দাদীর আদর একটু হলেও পেয়েছে। দাদীদের আদর এমনই হয়, একটু খিটখিটে টাইপের। তারা বোধহয় আদরগুলো ঠিকঠাক আদরের মতো করে প্রকাশ করতে পারে না।
সেই দাদী জুহাকে দূরে ঠেলে দিলো। জুহা এতে কষ্ট পেয়েছে। মেয়েটা চেয়েছে মানুষটার একটু সেবাযত্ন করতে কিন্তু সুযোগ কই! তাই তো আজকে পরিকল্পনা করে ফুলিকে বেড়াতে পাঠালো এবং চুপচাপ থাকার চেষ্টা করলো শ্যামলার সাথে কথা বললো না। কিন্তু কথা না বলাতেই জুহার মন ভারী। ভাবছে খারাপ কিছু করে ফেললো নাকি!
ভাবনার মধ্যেই দরজায় টুকা পড়লো। জুহা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো দরজার সামনে হালকা নেতিয়ে গায়ে শুভ্রা রঙের শাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে শ্যামলা। নিজের দরজায় মানুষটাকে দেখে জুহা নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। লাফ মেরে শুয়া থেকে উঠে গিয়ে তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করলো ” দাদী আপনি? কিছু লাগবে?
শ্যামলা জুহার কথার প্রতিত্তোর করলো না। নিঃশব্দে রুমে ঢুকে বিছানায় বসলো। জুহা খেয়াল করলো দাদীকে অনেক নরম লাগছে। সেই তেজস্বী ভাবটা নেই। একটু মায়া লাগলো বটে। বসে থাকা শ্যামলার সামনে দাঁড়াতেই হাতের ইশারায় বুঝালো পাশে বসতে। জুহা চুপটি করে পাশে বসে পড়লো।
কিছু সময় নিরবতার পর ক্লান্ত কন্ঠে শ্যামলা বললো ” আমারে লগে মান করছোছ সতীন?
জুহার মনের সব অভিমান মূহুর্তেই মেঘেদের মতো উড়ে গেলো। পারলো না কেবল বৃষ্টি হয়ে চোখ দিয়ে ঝড়ে পড়তে। আপনি অভিমান করেছেন রাগ করছেন সেটা যখন আপনার মানুষ টা বুঝবে এর থেকে বড় আনন্দের আর কি হতে পারে!
” নাহ দাদী রাগ কেন করবো? রাগ করিনি তো।
” তয় দেমাক বাইড়া গ্যাছেগা? কথা কইলি না তো আমার লগে।
জুহা কি বলবে বুঝতে পারছে না। কথা তো সে ইচ্ছে করেই বলেনি যাতে করে দাদী বুঝতে পারে রাগ অভিমান কষ্ট অন্যদেরও হয়। শ্যামলা আরও কিছুক্ষণ জুহার সাথে কথা চালিয়ে গেলো। একটা সময় পর জুহা নিজেকে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে আলতো করে শ্যামলা বানুকে জরিয়ে ধরে বললো ” দাদী আমি বুঝি আপনার কেউ না? আপনি কি ভাবে পারলেন আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে?
” দূরে কই সরাইলাম রে ছেমরি! আমার এতো সুন্দর নাতি, আলাভোলা পোলাটারে তোরে দিলাম। আর কি দরকার?
জুহার প্রচন্ড হাসি পেলো। একে তো শ্যামলার সাথে সম্পর্ক ঠিক হলো আবার তার এমন কথা। সব মিলিয়ে মন দেহ দুটোই শান্ত হয়ে গেলো।
বদিউর ফুলি দুইদিন হলো ঢাকায়। বেশ ভালোই কাটছিলো। তাহসিন তিন্নি সবাই মিলে বেশ হৈচৈ আর মজা। এর মাঝে অন্যরা জুহাকে মনে না করলেও তিন্নি বার কয়েক কল দিয়ে দিয়ে নিজেদের আনন্দের কথা জানাচ্ছে। এদিকে জুহাইরা নিজেও আনন্দে। তার সমস্ত মন খারাপী এখন উড়ে গিয়েছে। শাশুড়ির সাথেও সম্পর্ক মাটির মতোই।
আর রাফসান, সে তো ভিষন আলাভোলা তার দাদীর চোখে। দোকানে থাকাকালীন সময়ে দু’বেলা কল করে খবর নিবে এটাই যেন রাজ্যের সুখ জুহাইরার।
আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসছে রাফসান। জুহাইরা প্রথমে দেখেই একটু অবাক হয়েছে। রুমে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলো ” আজকে তাড়াতাড়ি যে?
” বউকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
সহজ সরল স্বীকারোক্তি রাফসানের। জুহা ঠোঁট উল্টে বলে ” ওহ তার মানে এর আগে কখনও দেখতে ইচ্ছে করেনি!
” কেনো করবে না?
” এর আগে তো এমন দরদী হতে দেখলাম না।
” আজকাল দরদী হলেও মহিলাদের কৈফিয়ত দিতে হবে দেখছি।
জুহাইরা থেমে গেলো। দেখা যাবে কথা বলতে বলতে এক সময় না ঝগড়াঝাটি লেগে যায়। এমন সময় এসেছিলো যে ভালো কথা থেকে এক কথা দুই কথা হতে হতে দুটো মানব ঝগড়া লেগে যেতো। অতঃপর দুজন দুইদিকে তাকিয়ে রাত কাটাতো। যদিও সকালে জুহাইরার ঘুম ভাঙতেই দেখতো রাফসান তার শরীর ঘেঁষে শুয়ে আছে।
রাফসান ফ্রেশ হয়ে আসতেই জুহাইরা দুকাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসলো। হঠাৎই আকাশে ভারী বর্ষন হতে শুরু করলো। বাহিরের হঠাৎ বৃষ্টি দেখে রাফসান জুহাইরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। জুহা চোখ রাঙায়।
চায়ে চুমুক দিতে দিতেই বৃষ্টিবিলাস করছিলো এমন সময় বদিউরের কল আসলো। রাফসান স্বাভাবিক ভাবেই কল রিসিভ করলো। তবে হ্যালো বলেই প্রথম যে-ই কথাটা থাকবে সেটা হলো তোমাদের ওখানেও কি বৃষ্টি হচ্ছে?
কিন্তু রাফসান এই কথাটা বলার আগেই বদিউর থমথমে কন্ঠে বললো ” তাহসিন বিয়ে করছে।
রাফসান হঠাৎ এমন খবরে একটু অবাক হলেও নিজেকে স্বাভাবিক করলো কারণ ছেলেটার বিয়ের বয়স হয়েছে। বিয়ে করা অপরাধ নয় নিশ্চয়ই। হাসি মুখেই বললো ” আরেহ বাহ! ভালোই তো। কিন্তু হঠাৎ?
” হঠাৎ প্রকাশ পেয়েছে কিন্তু বিয়ে করেছে প্রায় চার মাস।
রাফসান এবার একটু থমকালেও সেটা বুঝতে দিলো না। জুহা তখনও রাফসানের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে। রাফসান ফের আর কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। ওমনি বদিউর ফোনের ওপর পাশ থেকে বললো ” কাকে বিয়ে করেছে জানিস?
কাকে বিয়ে করেছে এমন প্রশ্ন আসছে কেন? তার মানে এখানে একটা জটলা রয়ে যায়। রাফসান একটু বিব্রত হয়। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ” কাকে?
বদিউর কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে ” ফারিনকে বিয়ে করেছে তাহসিন।
রাফসান এবার পুরোপুরি থমকে যায়। শরীরে চিকন ঘাম দেয়। মাথা ঝিমঝিম করে। জুহাইরা তখনও বুঝতে পারে না কি হয়েছে! তবে এতোটুকুও বুঝতে পারছে কিছু তো একটা হয়েছে।
চলবে……………
#অন্তহীন_সন্ধ্যা
#পর্ব ২২
#মাকামে_মারিয়া
রাফসান হতাশাগ্রস্ত। জুহাইরার থেকে এমন একটা কথা লুকানোর মানে হয় না। ইতিমধ্যেই জুহাইরাও জানলো তাহসিন বিয়ে করেছে ফারিনকে। তাও চার মাস আগে। জুহাইরার বিয়ের প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস চলে তার মানে ফারিন আর তাহসিন কি এসব জেনে-বুঝে আগে থেকেই প্ল্যান করে করলো??
জুহাইরার মাথায় সব আউলিয়ে যাচ্ছে। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি বারান্দায় বসে আছে দুজনে, বৃষ্টির ছিটা গায়ে পড়ছে অথচ ঠান্ডা লাগছে না। শরীরে তাপমাত্রা কেমন বেড়েই চলছে। এই পরিস্থিতিতে ঠিক কেমন রিয়েক্ট করা দরকার সেটাই বুঝতে পারছে না।
রাত তখন এগারোটা পাঁচ, রাফসান ড্রয়িং রুমে এসেই বাবা মায়ের পাশে বসলো। কোহিনূর তখন রাফসানের বাবাকে রাতের ঔষধ দিচ্ছে আর টিভিতে নিউজ চলছে। রাফসানের সাথে আলাপ জুড়ে দেওয়ার আগেই রাফসান শান্ত কন্ঠে জানালো তাহসিন বিয়ে করেছে তাও ফারিনকে।
কথাটা শুনে আতিকুর রহমান চুপ করে রইলেন। তিনি বরাবরই শান্তিপ্রিয় মানুষ ঝামেলা এড়িয়ে চলাই উনার কাজ। কিন্তু সব সময় পরিস্থিতি কন্ট্রোলে থাকে না। তবে এবার একটু শান্ত কন্ঠে বললো ” তবে কি তাহসিনকে বিয়ে করবে বলেই এ বাড়িতে সংসার করলো না?
শ্যামলা নিজ রুম থেকে কিছুটা আচঁ করতে পেরে ধীরে ধীরে উপস্থিত হলো। কথাবার্তায় সব বুঝতে পেরে কপট রাগ দেখিয়ে বললো ” ওমন আজাত মাইয়ার ছায়া এ বাড়িতে না পরুক! এ বাড়িতে যেন পা না দেয়।
কোহিনূর বিদ্রুপের স্বরেই বললো ” এই আপনিই আবার না তাদেরকে বরণ করে ঘরে ঢুকিয়ে নিবেন।
শ্যামলা কোহিনূরের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। অবশ্য কোহিনূর ভুল কিছু বলেনি মেঝো ছেলে মুজিবুরের জন্য যে আলাদা এক রকম টান দেখান তিনি এটা কারো চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। তাহসিনও কম আদরের নয়। আদরের মানুষের দোষ সাত গুন মাফ কিনা!
বেশ কয়েক মূহুর্ত আলাপ আলোচনা চললো। রুমের একটা কোণায় জুহাইরা চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ কেমন সব কিছু অসহ্য লাগছে। একটু আগেই মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে আর-ও কয়েকটা দিন বেশি থাকতে পারলে মন্দ হয় না। অথচ সব সুখ বিষাদে পরিণত হতে কয়েক ঘন্টা সময়ও লাগলো না। ঠিক এই কারনে জুহা সুখকে ভয় পায়। কারণ সুখ যেকোনো সময় ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে পারে। দুঃখ তো ফাঁকি দেয় না দুঃখ আজন্মকালের সঙ্গী।
আলাপ আলোচনা শেষ করে রাফসান রুমে ঢুকতেই দেখলো জুহাইরা চুপটি করে গায়ে কাঁথা টেনে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে রাখা কিন্তু ঘুমায়নি সেটা বুঝা যাচ্ছে। বাহিরের বৃষ্টি তখন কমে এসেছে রাতও গভীর হয়েছে।
” জুহা মন খারাপ হয়েছে আবার?
” মন খারাপ আমার সঙ্গী। সঙ্গীরা সঙ্গ ত্যাগ করে না।
জুহাইরার গলা ধরে আসলো। সমস্ত কথাগুলো কেমন গলায় এসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। কেনো এমন হচ্ছে সে জানে না। কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতি সহ্য করতে পারছে না। কেবল মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে এমনটা করলো।
রাফসান জুহাইরাকে শান্তনা দিয়ে বললো ” তোমার আমার মন খারাপ করার মানে নেই জুহা। তারা তো আমাদের মধ্যে আসেনি।
” এই সংসারেও আসেনি বুঝি?
” তোমার সংসার তোমারই! তারা এখানে আসবে বলেও আমার মনে হচ্ছে না। যেই সংসারে আবার ফিরবেই তবে সেই সংসার ত্যাগ করে যাবে কেনো ফারিন?
” সংসার ত্যাগ করেনি বোধহয়! আপনাকে ত্যাগ করেছে। মানুষ পরিবর্তন করতে চেয়েছে।
রাফসান চুপ মেরে গেলো। সে জানে ফারিন তাকে পছন্দ করেনি কখনো। তার মানে কি তাহসিনকে পছন্দ করতো বলেই রাফসানকে পছন্দ করতো না?
না ওসব আর ভাবা যাচ্ছে না। এমনটা একটা খবর পেয়ে মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো। রাফসান শুয়ে পড়ে। জুহাইরাকে কাছে টেনে নেয়৷ জুহাইরা চুপটি করে ভাবতে থাকে সেদিনের কথা যেদিন তাহসিন স্কুলে যাবার রাস্তায় জুহাইরাকে আটকে দিলো তৃতীয় বারের মতো।
সেদিন জুহা সামান্য রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো ” কি সমস্যা আপনার? প্রতিদিন রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। জানতাম তো ভদ্রলোকের বাড়ির ছেলে। তাহলে এমন করছেন কেনো?
তাহসিনের হাতে একটা লাল টকটকে গোলাপ ছিল। জুহার কথায় তাহসিন দুপা পিছিয়ে গিয়েছিল। গোলাপ টা দিলো না। ছেলেটার অহমিকা ছিল সাত আসমানের মতো। দেখতে সুন্দর আর বড়লোক বাড়ির ছেলে হওয়াতে সে ভাবতো সে যখন যা চায় যাকে চায় তাকেই নিজের পিছনে ঘুরাবে আর ঢাকায় তার পিছনে কতো মেয়ে ঘুরে আর এখানে কি না জুহা তাকে ইগনোর করছে?? প্রচন্ড হার্ড হলো তারপর স্থান ত্যাগ করলো।
রাগের মাথায় তাহসিনকে কথাগুলো বললেও জুহা ভিষন ভয় পাচ্ছিলো। জুহার বাবা সব সময় বলতো ” মা সাবধানে থাকিস, মেয়ে জাতি বড় অসহায়! কিছু হলে সমাজ মেয়েকে একা দোষী করে কিন্তু পুরুষদের করে না। তাদের সাত গুন মাফ।
স্কুল শেষ করে এসব ভাবতে ভাবতেই জুহা বাড়ির দিকে হাঁটছিলো আর ভয় পাচ্ছিলো তাহসিন আবারও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কি না। সেদিন নীতুও স্কুলে আসেনি যে কারণে একা হওয়ায় ভয়টা আরও বেশিই ছিল।
কিন্তু যেই কৃঞ্চচূড়া গাছের নিকট তাহসিন দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে এবার সে নেই। জায়গাটা ফাঁকা দেখতেই জুহার মন হালকা হলো। একটা প্রশান্তির হাসি হেঁসে দ্রুত পায়ে বাড়িতে চলে গেলো।
হঠাৎ জ্বর হওয়াতে দুইদিন স্কুলে যেতে পারেনি সে। তিন দিনের দিনে নীতু এসে জুহাকে একপ্রকার জোর করেই নিয়ে গেলো স্কুলে। ততদিনে জুহার মাথা থেকে তাহসিনের কথা চলে গিয়েছিল।
এ ভাবে প্রায় পনেরো দিন কেটে যাওয়ার পর জুহা যখন তাহসিনকে পুরোপুরি ভুলে গেলো ঠিক সেই সময় তাহসিন আবারও জুহার সামনে এসে হাজির হলো। হঠাৎ আবারও তাহসিনকে দেখে কিছুটা আঁতকে উঠল মেয়েটা। তাহসিন সেদিন জুহাকে কিছু বললো না কেবল যতদূর পর্যন্ত দেখা গেলো তাকিয়ে রইলো।
নীতু জুহাকে একটু উস্কে দিয়ে বললো ” ছেলেটা এতো ম্মার্ট আর এতো বড় বাড়ির ছেলে তুই কি না তাকে ইগনোর করছিস? আমি হলে তো একদম পটে যেতাম।
জুহা ধমকে উঠে বললো ” তুই ভালো করেই জানিস এসবে আমার আগ্রহ নেই।
” তা তোর কিসে আগ্রহ শুনি?
” মায়া মহব্বত আদর যত্ন আর ভালোবাসায়।
” তো তাহসিন ভাই কি তোকে ভালোবাসছে না রে গাধী?
জুহা হাঁটা থামিয়ে দিলো। শান্ত কন্ঠে বললো ” আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম নীতু! কিন্তু তার চোখে না ভালোবাসা খুঁজে পাইনি। যদি পেতাম তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিতাম।
নীতু উত্তেজিত কন্ঠে বললো ” তার মানে তুইও তাহসিন ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে যেতে চাস?
” এটা কখন বললাম?
” তাহলে কি বললি?
” বললাম তার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা খুঁজে পায়নি অথচ মুখে ঠিকই ভালোবাসার কথা বলে!
” এটার মানে তো এটাই যে ভালোবাসা খুঁজে পেলে তুইও ঝাপিয়ে পড়তি।
” ছিহ! কি সব বলছিস!! বাদ দে তো এসব। আমরা এখনো অনেক ছোট। সবে নবম শ্রেণিতে পড়ি। এখন পড়াশোনা করার বয়স বুঝলি?
নীতু যেন জুহার কথা ঠিকঠাক বিশ্বাস করলো না। সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কেবল মনে হচ্ছিল জুহাও কি তাহসিনকে পছন্দ করে?
চলবে…….
#অন্তহীন_সন্ধ্যা
#পর্ব ২৩
#মাকামে_মারিয়া
বেশ কয়েক দিন যাবৎ জুহাইরার স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। ইদানীং তাহসিন রাস্তার পাশে বোকার মতো বসে থাকে। শুধু বসেই থাকে কিছু বলেও না যে তার নামে অভিযোগ করা যাবে। কিছু বললে না হয় অভিযোগ করা যেতো কিন্তু রাস্তায় বসে থাকার জন্য তো আর অভিযোগ করা যায়।
এমন ভাবে প্রায় একমাস কেটে গেলো। জুহাইরা চিন্তা করলো ছেলেটা তো ঢাকায় থাকে তাহলে নিজের ঘরদোর ছেড়ে এখানে বেড়াচ্ছে কেনো? মনের মধ্যে এই প্রশ্নটা আসাই যেন বিরাট সর্বনাশ হলো। এতোদিন যাবৎ ছেলেটা এমন ভাবে বসে থাকে তাকিয়ে শুধু দেখেই। চোখের পলকও পড়ে না যেন। মাঝে মাঝে সাথে দুই একজন থাকলেও প্রায় সময় একা থাকে।
দ্বিতীয় বারের মতো বৃষ্টির কবলে পড়লো জুহাইরা। সেদিনের বৃষ্টিকে হঠাৎ বৃষ্টি বলা যেতে পারে কারণ ওটা বৃষ্টির মৌসুম ছিল না। হুট করেই কোথা থেকে জুম বৃষ্টি নেমে গেলো। ক্লাস শেষ করে মেয়েগুলো মাঝ রাস্তায় আসতেই বৃষ্টির আনাগোনা টের পেলো। নীতুকে সাথে করে আশ্রয় নিলো গাছতলায়। প্রায় ভিজে গিয়েছে ততক্ষণে, শুনশান রাস্তায় তাহসিনের আগমন ঘটলো ভূমিকম্পের মতো। জুহাইরা তাকে দেখে কেঁপে উঠল। এমন একটা সময় সে? তাও এখানে? সে তো এখানে থাকে না। সে থাকে আরও সামনের রাস্তায়। চোখ মুখ লাল, ফর্সা মুখটা রক্তবর্ণ হয়ে আছে। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে নাক বেয়ে ভেজা ব্লু শার্ট-টা ভিজে লেপ্টে আছে পেটে পিঠে। জুহাইরার চোখাচোখি হতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল সে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো। যথাসম্ভব নীতুর শরীরের সাথে ঘেঁষে চুপসে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। বৃষ্টির ছিটা গায়ে পড়তেই কেমন ঠান্ডা লাগছে তারউপর ভেজা শরীর।
” নীতু একটু ওদিকে যাও তো।
হঠাৎ তাহসিনের কথায় ভড়কে গেলো দুটো মেয়ে। নীতু চোখ বড় বড় করে তাহসিনের দিকে তাকাতেই তাহসিন চোখ দিগুন গরম করে তাকালো।৷ নীতু ভয়ে ভয়ে একটু সরে আসতে চাইলেও জুহাইরা এক হাতে চেপে ধরে রাখলো। ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে মেয়েটা। নীতু ভরসা দিয়ে একটু সরে দাঁড়ালো। তাহসিন জুহাইরার দিকে এগিয়ে দাঁড়ালো। জুহাইরা ভয়ে মনে হচ্ছে কেঁদেই দিবে। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা জুহাইরাকে তাহসিন ধমকে উঠে বললো ” আমার দিকে তাকাও!
জুহাইরা তাহসিনের দিকে তাকাতেই তাহসিন তার শক্তপোক্ত হাতে ঠাটিয়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মেয়েটার গালে। জুহাইরার চোখ ফেটে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দুই সেকেন্ডও লাগলো না। শ্যামকালো গালটাতে কালচে দাগ পড়ে গেলো। নীতু পাশ থেকে কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারলো না। আশেপাশে কেউ নেই তারউপর ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। ভেজা শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে তাহসিন কন্ঠে তেজ এনে বললো ” বহুত ঘুরিয়েছিস শা-লি! আয়নায় চেহারা দেখছোছ কখনো? এই তাহসিন সরকার তোর পিছনে ঘুরবে? তোরে ভালোবাসবে? ভাবলি কি ভাবে? শুধুমাত্র বন্ধুদের চক্করে পরে তোর পিছু নিয়েছি। তাহসিনকে ফিরিয়ে দেয় এমন মেয়ে পৃথিবীতে আছে নাকি! আমি জানি এন্ড মানি যে সব মেয়ে আমি বলতে পাগল! সেকারণেই বন্ধুরা বলেছে গ্রামের একটা মুরগী পটিয়ে দেখাতে। আমার জন্য এটা বা হাতের খেলা অথচ আমি তোকে পটাতে পারেনি আর বন্ধুদের কাছেও হেরে গিয়েছি। আমার অনেক গুলো দিন নষ্ট হয়েছে তোর জন্য আর তাই এই থাপ্পড়টা তোর পাপ্য। অবশ্য সেদিন যখন ফুলটা নিয়ে এসেছিলাম তখন ফিরিয়ে দিলি আবার আমাকে কতো কথা শুনিয়ে দিলি সেদিনই থাপ্পড়টা তোর ওই কুৎসিত গালে পরার দরকার ছিল! যত্তসব থার্ডক্লাস মেয়ে!
তাহসিন চলে গিয়েছে জুহাইরা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো ও ভাবেই। গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। নীতু এসে অনেক কিছু বলে শান্তনা দিলো কিন্তু কি কি বলেছে সেসব কথা জুহার কানে গেলো না। মেয়েটার কানে তখনও তাহসিনের বলা কথাগুলোই বাজতেছিলো। এগুলো কি বললো সে? এতো নোংরা তার মন!
সেদিন গা কাঁপিয়ে জ্বর আসলো জুহাইরার। সবাই জানলো বৃষ্টিতে ভিজার কারণে জ্বর এসেছে। মায়ের বকা খেলো কেন বৃষ্টিতে ভিজতে গেলো সেটার জন্য। কিন্তু দুনিয়ার কেউ জানলো না জুহার মনের খবর। হৃদয় পুড়ে যাওয়ার তাপমাত্রা টাই যে শরীরে চামড়ায় জ্বর হয়ে পুড়াচ্ছে সেসব জানলো না কেউ।
জ্বরের ঘোরে টেবিল হাতড়ে পুরনো ডায়েরিটা খুলে কুটিকুটি করে ছিঁড়তে লাগলো জুহাইরা। যে ডায়েরিতে অজানা অচেনা কিছু অনুভূতির কথা লেখা ছিল। তাহসিনের মতো একটা রাজপুত্র জুহার মতো এক মালিনীর মেয়ের দিকে ভালোবাসার দৃষ্টি দেয়, সেসবই লেখা ছিল। আর-ও লেখা ছিল কিছু ভালো লাগার অনুভূতির কথা। তাহসিন জুহাইরার দিকে তাকিয়ে থাকতো এটা জুহাইরার ধীরে ধীরে ভাল লাগতে শুরু করেছিলো। মাঝে হঠাৎ একদিন তাহসিন রাস্তায় ছিল না। জুহার সেদিন হুট করে কেমন মন খারাপ লাগছিলো, একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। কিসের এই শূন্যতা? হঠাৎই মনে পড়লো একজোড়া চোখ আজ তাকে দেখতে আসেনি। এ যেন মহাবড় শূন্যতা। এ কেমন অনুভূতি? এই অনুভূতিকে জুহা ডায়েরির পাতায় স্থান দিয়েছিলো কিন্তু মস্তিষ্কে সেসব বেড়ে ওঠতে দেয়নি। সে জানতো এগুলো সম্ভব নয়, কোথায় তাহসিন আর কোথায় সে। তাই নিজস্ব ভালো লাগা গুলো ডায়েরিতে লিখে রাখাই তার প্রনয়ণের বর্হিপ্রকাশ ছিল। অথচ আজ সব কিছুতে কেমন ঘৃণা লাগছে। ভাগ্যিস মানুষটাকে ভালোবাসেনি, তাহলে বোধহয় আজকে জুহা নিজেই নিজেকে ধ্বংস করে দিতো। মানুষ কেন সিলিং এ ঝুলে যায় সেটাও খানিক উপলব্ধি করতে পারলো। এই বিশুদ্ধতম অনুভূতি গুলো এমন একটা নোংরা মানুষের জন্য ছিল ভাবতেই জুহার গায়ে জ্বলন ধরছে। প্রচুর ঘৃণায় বিরক্তিতে বাবার কষ্টের টাকায় কিনে দেওয়া ডায়েরিটা ছিঁড়ে কুটিকুটি করে সমস্ত ভুল এবং নিষিদ্ধ অনুভূতির ধ্বংস করে দিলো একজন অষ্টাদশী কন্যা।
সকাল আটটা বেজে উনিশ মিনিট। কপালে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই জেগে ওঠলো জুহা কিন্তু চোখ খুলতে কেমন কষ্ট হচ্ছে যেন। চোখ দুটো জ্বলছেও বটে। রাফসান ধীরে কন্ঠে জানান দিলো ” খারাপ লাগছে খুব? হঠাৎ জ্বর চলে আসলো কি ভাবে!
জুহাইরা শরীর নাড়াতে পারছে না। ভিষন ব্যাথা অনুভব করছে। একটু নড়েচড়ে ঘড়িতে সময় দেখেই কিছুটা আঁতকে উঠল। রাফসান স্ত্রীর মনোভাব বুঝতে পেরে আস্থা দিয়ে বললো ” সবাই জানে তুমি অসুস্থ, জ্বর এসেছে এতো ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। আম্মা এসেছিলো খাবার দিয়ে গেলো, বললো খাইয়ে ঔষধ খাওয়াতে। ওঠো ধীরে ধীরে ফ্রেশ হয়ে ঔষধ খেয়ে নেও।
এ বাড়িতে আসার পর এই প্রথম জ্বর বাঁধলো বোধহয়। গা কাঁপিয়ে জ্বর বহুদিন হলো আসে না। সেইবার তাহসিনের কথায় যে জ্বর আসছিলো সাতদিন বিছানা থেকে ওঠতে পারেনি।
কেউ কিছু বলেনি? সহানুভূতি দেখিয়ে বুঝি?
জুহার প্রশ্নে রাফসান শান্ত কন্ঠে বললো ” সবাই ভেবে নিয়েছে গতকালের তাহসিন আর ফারিনের বিয়ের খবরে তুমি ভেঙে পড়েছো আর তাই এতো জ্বর চলে আসলো।
ফ্যাকাসে মুখে জুহা মুচকি হেঁসে বললো ” কি লজিক এটা! তাদের খবরে জ্বর আসবে কেন? বহুদিন হলো জ্বরের কবলে পড়ছি না তাই এসেছে।
অসুস্থত মানুষের কথা ধরতে নেই আর বেশি কথা বলতে দিতেও নেই। রাফসান জুহাইরাকে ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো। খাইয়ে দিলো। চোখে মুখে পানি দিয়ে চুলে তেল দিয়ে আবারও শুয়ে দিতে চাইলে জুহা বারণ করলো।
” একটু বের হয়ে দেখি ওখানে কিছু লাগবে কি না!
” অতিরিক্ত! জুহা অতিরিক্ত! তোমাকে ওখানে কারো কাজে লাগছে না তুমি অসুস্থ তাই চুপচাপ শুয়ে থাকো।
জুহাইরা চুপসে গেলো। ফ্যাকাসে মুখ, লালচে চোখ তিরতির করে কাঁপছে ঠোঁট। রাফসান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো ” তুমি কি ভয় পেয়েছো?
” কিসের ভয়?
” তুমিই জানো।
“আমি জানি না তো।
” সংসার হারিয়ে ফেলার ভয়!
জুহার হৃদয় কেঁপে ওঠে রাফসানের কথায়। সংসার হারিয়ে ফেলবে এ ভাবনা তো কখনো মনেও আনে নাই মুখে আনবে দূর। রাফসান এটা কেন বললো? তার মানে কি উনি এগুলো ভাবে? প্রচন্ড অভিমানে জুহার চোখ ভিজে আসে। রাফসান বিগলিত হয়ে বলে ” আরে আরে কাঁদছো কেন? কি এমন বললাম? মজাই তো করছি। তোমরা মেয়েরা সব কিছুতে কেঁদে দেও কেন বলো তো?
” কারণ আমরা স্বামী সংসার নিয়ে ভিষন সিরিয়াস। এই সেনসিটিভ বিষয়টাকে নিয়ে মজা করবেন না। এতে মনে হয় আপনাদের মনে এসবই চলছে!
রাফসান মজা পেলো। স্ত্রীর অভিমানী চেহারা কান্নাভেজা চোখ দেখতে মাঝে মাঝে ভালোই লাগে। আরেকটু রাগিয়ে দিতে বললো ” তার মানে আমার কথা সিরিয়াস নিয়েছো?
” বলাও তো যায় না। প্রাক্তন সুন্দরীতমা স্ত্রীকে দেখে যদি মন ঘুরে যায়। পুরুষ লোক নিয়ে বিশ্বাস নেই। পুরুষ আর ছাগল সব গাছে মুখ দেয়।
” শেষ মেষ ছাগলের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে! বড়ই অপমানিত হলাম বিবি।
রাফসানের ইয়ার্কি বুঝতে পেরে জুহা আড়চোখে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি কেটে বললো ” ওটা জাস্ট উদাহরণ ছিল! তাও যদি আপনার নিজেকে ছাগলের মতো মনে হয় তাহলে আমার কি?
দুজনের কথায় মাঝেই জামিয়া হঠাৎ রুমে হামলা করলো। একি জামিয়া কখন চলে আসলো?!
জামিয়া হেঁসে কুটিকুটি হয়ে বললো ” খুব ভোরে ওঠে রওনা হয়েছি আর এখন বাড়িতে চলে এসেছি।
জামিয়াকে দেখে জুহার শরীর হালকা হয়ে গেলো। মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে আলাপ জুড়ে দিলো। ততক্ষণে রাফসান চলে গিয়েছে বদিউরদের সাথে দেখা করতে। ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো সাথে করে তিন্নি তাহসিন আর ফারিনও এসেছে। ফারিনকে দেখে রাফসানের পা থেমে গেলো। একটা মানুষ কতোটা নির্লজ্জ হলে আবারও এই বাড়িতে পা রাখতে পারে! রাফসানের নিজেরই লজ্জা লাগছে। রাফসানকে থেমে যেতে দেখে তাহসিন এমন ভাবে এসে তার সাথে কথা বলতে লাগলো যেন কোনো কিছুই হয়নি। শ্যামলা বানু আসতেই তাহসিন বিশাল হেঁসে বললো ” আরহে দাদী! ভাবলাম দেশে গিয়েই হানিমুনটা সেরে আসি। তাই তো নিয়ে চলে আসলাম আমার সুন্দরীতমা ওয়াইফকে।
শ্যামলা বানুর মুখ অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার হয়ে গেলো। কিছু না বলে রুমে চলে গেলো খটখট করে। রাফসানের যখন জুহাইরার কথা মনে হলো তখনই হৃদয়ে একটা ধাক্কা খেলো। জুহা দেখলে ঠিক কি ভাবে নিবে কে জানে! এমনি মেয়েটা অসুস্থ। জুহার এই ভয়টাই ছিল যে এরা চলে না আসে। সত্যিই চলে আসলো।মেয়ে মানুষের সন্দেহ এতো সত্যি হয় কি ভাবে? আচ্ছা জুহার কথা অনুযায়ী আমার মনও কি তাহলে ফারিনের প্রতি ঘুরে যাবো?
না না! অসম্ভব এগুলো ভাবাও পাপ! আমার মৃত্যু আসুক কিন্তু তাও আমার কারনে জুহার চোখে পানি না আসুক! আমি এই মেয়েকে ঠকাতে পারবো না কখনো।
চলবে………