সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী পর্ব-১৯+২০

0
2

সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী
পর্ব ১৯

“দাদাভাই কেমন আছ?”

অসময়ে দাদার ফোন পেয়ে মাহতাব একটু অবাকই হয়।

“এইতো দাদাজান, ভালো। তুমি কেমন?”

“মায়ের সাথে কথা হয় না দাদাভাই?”

“হয় তো। কেন?”

“মা যে তোমাকে খুব মনে করছেন। একবার দেখতে এসো। মাস পেরিয়ে গেলো।”

“আম্মু তো সারাজীবন চেয়েছেন আমি যেন বিদেশে সেটেল্ড হই আপুর মতো৷ তাছাড়া আম্মুর তো বিশ্বাসই ছিল না যে আমি চাকরি করতে পারবো।”

“ব্যস হইলো তো দাদাভাই। তোমার চাকরি হইলো, তুমি প্রমাণ কইরা দেখাইলে। বাপ মায়ের উপর রাগ রাখতে হয় না।”

“তুমি বাবাকে হারানোর পরও আম্মুর উপর রাগ রাখনি দাদা? সত্যি অনেকদিন ভেবেছি জিজ্ঞেস করবো। সবাই আকারে ইঙ্গিতে আম্মুর দোষ দেয়। একমাত্র তোমাকেই দেখলাম আড়ালেও বল না। অথচ আম্মু যে তোমার সব বিষয়ে খুশি তাও না।”

“কারণ আমি সব বিষয়ে তোমার মাকে সন্তুষ্ট করতে পারছি তাও তো না। শ্বশুর হিসেবে আমিও নিশ্চয়ই তোমার মায়ের চোখে কোথাও না কোথাও হেরে গেছি দাদাভাই।”

“ছেলের বৌ হিসেবে মা কি জয়ী হয়েছে?”

“এসব কথা যত তুলবা দাদাভাই, আমার জন্য উত্তর দেওয়া তত কঠিন। তবে তুমি মন দিয়ে চাকুরি করতেছ দেখা বিষয়টা আমার জন্যও খুশির। তোমার মন বসবে ভাবি নাই। তবে কারণটা জানতে পেরে আরও খুশি। ভালো সিদ্ধান্ত। জীবনে পিছুটান না রাখাই ভালো দাদাভাই।”

“মানে?”

“রহমত ফোন দিয়েছিল। আমরা যদি আগ্রহী থাকি, তাহলে তার নাতনির সাথে তোমার বিষয়ে আগাতে চায়। তোমার মায়ের সাথে কথা বলতে চাইলো। আমি বললাম তোমার সাথে আগে কথা বলি। কারণ আমি জানি এ বিষয়ে তোমার সিদ্ধান্তই ফাইনাল।”

“আমার সাথে কার বিয়ের কথা বললে?”

“রহমতের নাতনি। মানে ছোটোজন। বড়োজন তো তোমার চেয়ে বড়ো। জানি না ওর বিয়ে দিতে দেরি হচ্ছে কেন? তুমি জানো কিছু? ছোটো জনের ছবি পাঠালো আমার ফোনে। দেখতে শুনতে তো মিষ্টি। মৃদুলা নাম না? দেখ দাদাভাই তোমার বিষয়। একবার এক বিয়ের সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছিলাম। তা যে খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এতটাই খারাপ সিদ্ধান্ত ছিল যে তোমার বোন আজীবনের জন্য বিয়ে বিমুখ হয়ে গেল। তোমার বিষয়টা আমি তোমার উপর ছেড়ে দিলাম।”

***

“তোমার সাথে নাকি মৃদুলার বিয়ের কথা হচ্ছে?”

আজ সারাদিন একটার পর একটা ঘটনা ঘটে চলছে। সালমাদের বাড়ি থেকে এসে একটু সুস্থির হয়ে বসতে পারছে না মাহতাব। তার অফিস সহকারী এমনিতেই একটা সুযোগ খুঁজছিল মাহতাবকে চেপে ধরার। বিষয়টা মাহতাবের অজানা নয়। পজিশনে মাহতাব বড়ো বলে সে সরাসরি কোনো সুবিধা করতে পারবে না জানা কথা ছিল। কিন্তু আজ মাহতাব নিজের বোকামিতে অন্য ভাবে সে সুযোগ করে দিলো। চন্দ্রের কথায় সালমার বাড়িতে হুট করে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি। চাকরি চলে গেলে মাহতাব না খেয়ে মরবে না। কিন্তু চাকরি তো শুধু মানুষ খেয়ে পড়ে বাঁচতে করে না। এতবার চেয়েছে নিজের আচরণ, কাজে, সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে। নিজের কাছেই বদ্ধপরিকর ছিল। অথচ আবারও হঠকারী সিদ্ধান্তের বলি হতে যাচ্ছে। অফিসিয়ালি বিষয়টা তদন্ত হলে মাহতাব নিশ্চয়ই ভুল প্রমাণিত হবে। এমন কাজ করার এখতিয়ার আসলেই মাহতাবের নেই। একা গেলে এক কথা ছিল, পিওন আর সহকারীকে নেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। এর মাঝে চন্দ্রার আগমন মনে ভালো কোনো অনুভূতি আনতে পারছে না।

“মেয়েটার কি কোনো প্রেমিক ছিল?”

“কী?”

“সালমা মেয়েটার কি প্রেমিক ছিল? কোথায় হাওয়া হয়ে গেল? আমি আপনি পালিয়ে আসতে পারলেও ঘটনা এখানেই শেষ না। ওরা মেয়ের খোঁজে আমার অফিস, আপনার স্কুল হয়ে এ বাড়িতেও পৌঁছে যাবে।”

“আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে চাইনি।”

“বিপদে আমরা পড়ে গিয়েছি। আচ্ছা ওর চিঠি আপনার হাতে পৌঁছালো কী করে?”

“বয়েজ সেকশনের একটা ছেলে দিয়ে গিয়েছিল।”

“ওহ গড। আপনার সন্দেহ হয়নি?”

“আমি আসলে বিষয়টা এদিকে গড়াবে বুঝতেই পারিনি।”

“আপনি বোকা নন। যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। আমিই কত বড়ো বেকুব। হুট করে আপনার কথায় নাচতে শুরু করলাম।”

“তুমি এত রাগ দেখাচ্ছ কেন?”

“রাগ দেখাব না? আপনি কী বুঝতে পারছেন না আমরা কী বিপদে পড়তে চলেছি? মৃদুলা আমাকে সাবধান করেছিল। উফ্ আমি তখনও পাত্তা দেইনি।”

“মৃদুলা কী করেছে?”

“আপনার কাছ থেকে সাবধানে থাকতে বলেছিল।”

হঠাৎ নিচে হইচইয়ের শব্দ ভেসে আসে। চন্দ্রা বাড়িতে এসে অনেকটা নির্ভার হয়ে গিয়েছিল।।কিন্তু মাহতাব ঠিকই বুঝেছে। বিষয়টা যত সহজে শেষ হয়ে গিয়েছে ভেবেছিল চন্দ্রা, তত সহজ আসলেই না।

***

তন্বি নামের যেই মেয়েটা চন্দ্রাকে সাবধান করেছিল। তাকে সাথে নিয়ে কয়েকজন লোক এসেছে। চন্দ্রার স্কুলের হেডমাস্টার সাহেবও এসেছেন৷ সালমার পালানোর কথা গোপন থাকে না। রুবেল নামের ছেলেটা সালমাকে নিয়ে পালিয়েছে। সে সালমার বাড়ির আশেপাশেই ঘুরঘুর করছিল। সময় সুযোগ খুঁজছিল পালানোর। চন্দ্রা আর মাহতাবকে সালমার বাড়িতে ঢুকতে দেখে। একসময় হইচই বাঁধলে একটা সুযোগ পায়। সালমার সাথে এক ফাঁকে দেখা করে খুব দ্রুত ওকে পালাতে রাজি করে ফেলে। হাতের কাছে টাকা শাড়ি, গয়না পোটলায় নিয়ে চন্দ্রাদের সাথে করে আনা সিএনজিতে উঠেই চিটাগং বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে যায়। রুবেলের বড়ো ভাই ভাবি চিটাগং পোর্টে চাকুরি করে। ঠিক করে আপাততঃ সালমাকে নিয়ে সেখানেই যাবে। বিয়ে করে ফেলবে। বাকিটা পরে দেখা যাবে।

“এই মাইয়া, ক তুই সব। তুই মাস্টারনিরে কইছস না ঐ পোলা সালমারে বিরক্ত করে।”

“কইতে চাইছি। আমি কইতে চাইছে যে সালমার সাথে রুবেলের লাইন আছে… মানে রুবেল সালমারে লাইক করে। আপনে ওর চিঠিরে বিশ্বাস কইরেন না। ম্যাডাম আমার কথা শুনে নাই।”

হেড মাস্টার স্যার নিজেও খিব বিরক্ত। ওনার দীর্ঘদিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন। ভালো উদ্দেশ্যে ছাত্র ছাত্রীদের উপকার করতে গেলে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে পড়তে হয়। আজ চন্দ্রার পাকনামোর জন্য আবার ঝামেলায় পড়তে চলেছেন বুঝতে পারছেন।

ফিরোজ সরকার, আর রহমত সরকার তো বুঝতেই পারছিলেন না ঘটনা কী। ঠান্ডা মাথায় যে বিষয়টা বুঝবেন, তার আগেই অপরপক্ষ উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছে। বহু কষ্টে বুঝলেন চন্দ্রা আর মাহতাব যে মেয়ের বিয়ে না দিতে বা পরীক্ষা দিতে দেওয়ার অনুরোধ করতে গিয়েছে। সে মেয়ে নিজেই তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়েছে।

“আচ্ছা এখানে ওদের দোষ কী? ওরা তো ভালো মনে একটা কাজ করতে গিয়েছিল।”

“আপনের মাইয়া সমাজ নষ্ট কইরা বেড়াইতাছে। আমগো কাছে পম্মান আছে। ঐ ব্যাডার লগে নৌকাত ফষ্টিনষ্টি করছে। মাঝি আমগো এলাকার। আইজ ভীড়ের ভিতরে চিইন্না ফেলছে। আমগো কাছে পম্মান আছে। ঐ ছবি দেখা।”

মাহতাবের কাঁধের উপর মাথা রেখে খুব কাছে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে থাকা মেয়েটা যে চন্দ্রা, তা চিনতে ফিরোজ সাহেবের কষ্ট হয় না। ঘটনা যে এইদিকে মোড় নিবে, হতবিহ্বল মাহতাবও বুঝতে পারেনি। চারদিকে চলছে মব জাস্টিস নামক নৈরাজ্য। কোন বিপদে তারা পড়তে চলছে, ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসে।

(চলবে)

সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী
পর্ব ২০

“ছবি যে সত্য তার প্রমাণ কী? কম্পিউটারে বানানো হতে পারে না?”

ফিরোজ সরকার মেয়েকে আড়াল করে বলেন।

“আমার ফোনে তোলা। দেখোন না।আমি নিজে তুলছি।”

উপস্থিত জনতাকে শেষ পর্যন্ত শান্ত করতে রহমত সরকারকে নিজের উপর দায়িত্ব নিতে হয়। তিনি ওনাদের আশ্বাস দেন, যদি সালমা মেয়েটার পালিয়ে যাওয়ায় নিজের নাতনির বিন্দুমাত্র সহযোগিতা পাওয়া যায় তিনি বিচার করবেন। আর মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে সবধরনের সহযোগিতা করবেন। থানা, পুলিশের সমস্ত খরচ বহন করবেন। তিনি বয়স্ক সম্মানিত মানুষ। এলাকায় ওনারা নাম আছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর এলাকার মানুষদের হস্তক্ষেপে তখনকার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

“বাবা, বিশ্বাস কর ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে। তেমন কিছু না। বিশ্বাস কর না?”

ফিরোজ সরকার কিছু বলার দেওয়ার আগেই চন্দ্রার দাদি উত্তর দেন।

“এই মাইয়ার যে চরিত্রের দোষ আছে এইবার প্রমাণ পাইলা সবাই। আহারে আমার নাতিডা। এই বাড়িত আসাই বন্ধ হইয়া গেছে। নানার বাড়ি আসতে পারে না। ঐ ফিরোজ, এখন বিচার কর। তুর্য যে কইছে সমস্যা তার না, তোর মেয়ের। তখন তো বিশ্বাস করছ নাই। আমার তিন মেয়ে বাপের বাড়ি আসা বন্ধ করছে, মেয়ের ঘরের নাতি নাতনিরা নানা বাড়ি আসে না। পুরা পরিবারের সুখ খাইছে তো আগেই, এখন সম্মানও খাইলো। নিজের ছোটোবোনরে এত হিংসা করে, তুর্যের সাথে বিয়াটাও হইতে দিলো না। এখন এই বাচ্চা ছেলেরও মাথা ঘুরাইছে।”

ফিরোজ সরকার চুপ করে থাকলেও, রহমত সরকার স্ত্রীকে ধমক দিন।

“আহ্ চুপ কর।”

“কেন চুপ করব? আমার মেয়েদের বাড়ির হক না দিয়া, ছেলের নামে করছেন। সেই অধিকার খাটাইয়া ছেলে বোনদের বাড়ি ছাড়া করছে।”

“এটা সত্যি না আম্মা। আপনিও জানেন। আমি আমার বোনদের মানা করেছি আসতে? তারা সবাই আমাকে ত্যাগ কেন করেছে আপনিও জানেন। এই বাড়ি আব্বা ভাগ করতে চান নাই তাই একজনের নামে রেখেছেন। অথচ এর বিনিময়ে আর কোনো সম্পদ আমি নেই নাই। জমিজমা বোনদের নামেই হয়েছে। জমি বুঝে নিয়েই তারা আমাকে ত্যাগ করেছে। যাই হোক, আমি অন্যায়ের সাথে কোনোদিন ছিলাম না। চন্দ্রা দোষী হলে তারসাথেও থাকব না।”

জুয়েনাও মৃদুলাকে নিয়ে ঘরে চলে যায়। যাওয়ার আগে শুধু চন্দ্রকে বলে যায়,

“একসময় আমি বিশ্বাস করতাম না যে তুই সত্যি সত্যি মৃদুলাকে হিংসা করিস। কিন্তু এখন…”

“মা, আমি জানতাম না মৃদুলার সাথে মাহতাবের বিয়ের আলোচনা হচ্ছে। আর হলেও কী। মাহতাবের সাথে আমার কোনো রকম খারাপ সম্পর্ক নাই। আমি শুধু বিলে শাপলা দেখতে গিয়েছিলাম।”

“আর শিখাস না আমাকে চন্দ্রা। শাপলা দেখতে কারও কাঁধে মাথা রেখে… ছিঃ।”

“এই জন্য বলতাম মাইয়ার বিয়া দাও। তোমার তো দেমাগ কমে না। ভালো ঘর না পাইলে, ভালো চাকরি না হইলে দিবা না বিয়া। বেশি বয়সের লোকের কাছে দিবা না। এখন দেখ যে সম্মানটা হইছে তোমার মেয়ের, দোজবরেও জুটব না। কী মনে হয় এই ছেলে তোমার মেয়েরে বিয়ে করব? না এখন দুই মাইয়ার একটারেও করব না। নিজের কপাল তো খাইছিলই, ছোটোটারও খাইছে। আমি বললাম এই মাইয়ারে বিয়াশাদী যার সাথে পারো দাও গা। দিয়া বিদায় কর। শরীরের খাই সবের আছে। মাইয়ার বয়স ত্রিশ হইয়া যাইতাছে, শরীরের চাহিদা নাই? আজ ছবি বাহির হইছে, কাইল ভিডিও আসব। এই বাড়ির ইজ্জত রাস্তায় নামন বাকী আছে।”

ফিরোজ সরকার আজ মাকে আটকান না। বরং ধীর পায়ে যান। মাহতাব কী করবে বুঝে না। পুরো বিষয়টাতে যে না চাইলেও জড়িয়ে পড়েছে তা বুঝতে বাকি নেই। চন্দ্রাকে তার মেয়ে হিসেবে খুবই ভালো লেগেছে। তাই বলে প্রেমে পড়ার মতো অবস্থায় তারা কেউই যায়নি। বিষয়টা দুই তরফা কিনা তাও জানে না। শুধুই একটা সফট কর্ণার তৈরি হয়েছিল চন্দ্রার প্রতি। হ্যাঁ সে চন্দ্রার অতি পাকনামির জন্য একটু হলেও বিরক্ত ছিল। তবু তা অপছন্দের সীমা অতিক্রম করেনি। এখন এভাবে চন্দ্রাকে হেনস্তা হতে দেখে মাহতাবের খারাপ লাগছে। তাকে কেউ কিছু বলছে না। হয়তো পুরুষ বলে বা পরিবারের বাইরের ছেলে বলে। এ মুহূর্তে ক্রন্দনরত চন্দ্রাকে মাহতাব সান্ত্বনা দিতে ইচ্ছে করলেও পারে না। হয়তো কারও কাছেই বিষয়টা ভালো লাগবে না। তাই চন্দ্রাকে সেভাবে রেখেই বের হয়ে যায়।

***

সালমার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। সালমা ফোনে জানিয়েছে সে তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছে। তারা চিটাগং পোর্টে আছে। পরীক্ষার সময় হলে আসবে। পরীক্ষা দিবে। তবে বাড়িতে যাবে না। বাড়িতে গেলেই ভাইয়েরা ঐ বয়স্ক লোকের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দিবে। পেট মোটা, মাথায় চুল কম ঐ লোককে বর হিসেবে সালমার একদম পছন্দ না। চন্দ্রা ম্যাডাম যে কিছু জানে না, সে বিষয়টা সে নিশ্চিত করেছে। তবু রহমত সরকারের ভালোই টাকা পয়সা খরচ হয়। চন্দ্রার জন্য চারদিকে পাত্র খোঁজা হচ্ছে। জুয়েনা ধনুকে দিয়ে মাহতাবের খাবার পাঠিয়ে দেয়। মাহতাবকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সে যেন বাহিরে বাসা দেখে। চন্দ্রার বিয়ের আগেই মাহতাব বাসা নিয়ে চলে যাক, এই ইচ্ছে জুয়েনার। ফিরোজ সরকার মেয়েকে এভাবে ধরে বেঁধে যা পান তার সাথেই বিয়ে দিতে আগ্রহী ছিলেন না। তিনি সংস্কৃতি মনা মানুষ। চন্দ্রা বই পড়ে, ছবি আঁকে, তেমনই রুচিশীল কারও সাথে বিয়ে হোক চেয়েছেন। তা আয় কম হলে কম। তাই প্রভাষক, বা চাকুরিজীবী কাউকে পাত্র হিসেবে চান। কিন্তু যা বিয়ের প্রস্তাব আসছে কোনোটাই চন্দ্রার পড়ালেখা বা ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না৷ অথচ নাহার বেগমের সাথে জুয়েনাও এবার বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছেন। অথচ ফিরোজ সরকারের এখনো মনে হচ্ছে ওনার মেয়ে, পরিবারের সম্মান নষ্ট হওয়ার মতো কাজ করতে পারে না। অনেক সময় চোখের দেখা জিনিসও মিথ্যা হয়। ছবি তো একটা মুহুর্ত মাত্র। একেকবার মনে হয় মাহতাব বলুক যে সে সত্যি চন্দ্রাকে পছন্দ করে। তাহলে তিনি একটা ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু মাহতাবের দিক থেকেও সাড়া নেই। আর হঠাৎ করে চন্দ্রাও কাঠের পুতুলে পরিণত হয়েছে। কোনো কিছুর প্রতিবাদ করছে না

আজ চন্দ্রাকে দেখতে পাত্র পক্ষ আসবে। চন্দ্রা অনেকটাই মিইয়ে গিয়েছে। পাত্র কে, কেমন দেখতে, কী করে। কোনো কিছু নিয়ে যেন কোনো বিকার নেই। হাতে চায়ের ট্রে ধরিয়ে দিয়ে যখন পাত্র পক্ষের সামনে যেতে বলা হয়, চন্দ্রা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে তাদের সামনে যায়।

(চলবে)