সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী
পর্ব ২১
পাত্রের নাম শরিফ। চন্দ্রাকে দেখতে পাত্রের সাথে পাত্রের মা আর ছোটো দুই বোনও এসেছে। ছোটো বোন হলেও দু’জনই বিবাহিত। পাত্র বহুদিন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছিল। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে গিয়েছে। সেখানে ব্যবসা করে। আয় রোজগার ভালো। লম্বা সময় দেশের বাইরে থেকে বাড়িতে বিল্ডিং তুলেছে, বোনদের ভালো বিয়ে দিয়েছে। তবে বয়স থেমে থাকেনি। বেলা গড়াতে গড়াতে বয়স এসে থেমেছে সাঁইত্রিশ এর ঘরে।
“মেয়ের বয়স তো বেশি মনে হয়।”
পাত্রের ছোটোবোন মাকে কানে কানে বলে। তবে কণ্ঠের স্বর ততটাই রেখেছিল, যতটায় কথাটা সবার কানে যায়। চন্দ্রা স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকে।
“বিয়েশাদি একশো কথা না হইলে হয় না। তবে কিছু কথা আগেই বলে রাখি। আমরা জানতাম না মেয়ের বয়স বেশি। মেয়ের বাপের লাইন লাগছে বাড়িতে। আমার ছোটো মেয়ের মামাতো ননদ অনার্সে পড়ে। তার প্রস্তাবও হাতে আছে। মেয়ের রঙ ফর্সা, বয়স কম, একমাত্র মেয়ে। মেয়েরে সাজিয়ে গুছিয়ে দিবে। তাও আমরা এখানে এসেছি ছেলের ইচ্ছায়। কলেজে যাওয়া মেয়ে আমার ছেলের পছন্দ না। সে থাকবে বিদেশে। বৌ কলেজ যাওয়ার নামে রঙঢঙ করবে। তাই একটু বয়স্কা মেয়ে চাইছে। ঘর সংসারে মনোযোগী হবে। বাধ্য হবে। আমাদের মান্য কইরা চলবে। আমরা সংসারী মেয়ে চাই। চাকরিবাকরি করা মেয়ে আমাদের পছন্দ না।”
আনোয়ারা, চন্দ্রার ছোটো ফুপু। পাত্রের মা আর চন্দ্রার ছোটো ফুপু বান্ধবী। নাহার বেগমের অনুরোধে আনোয়ারা ভাইয়ের মেয়ের জন্য পাত্র দেখার দায়িত্ব নেয়।
***
চন্দ্রা ওনাদের সামনে থেকে চলে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। হঠাৎ জুয়েনা ডাক দেয়।
“চন্দ্রা সামনের বারান্দায় চেয়ার দেওয়া হয়েছে। ছেলে তোর সাথে আলাদা বসে কথা বলতে চায়।”
মৃদুলা জোরে হেসে দেয়,
“ছেলে বলছ কেন আম্মু? আঙ্কেল বল। ওনার বয়স সাঁইত্রিশ মোটেও মনে হয় না। চল্লিশ পার হয়েছে নিশ্চিত।”
চন্দ্রা উঠে দাঁড়ায়। স্বাভাবিক ভাবেই হেঁটে বারান্দায় গিয়ে সালাম দিয়ে চেয়ারে বসে। দু তিন মিনিট ইতস্তত ভাবে চায়ের কাপ নাড়াচাড়া করতে করতে শরিফ কথা শুরু করে।
“আম্মা, বয়সের কথা বলায় কিছু মনে করবেন না। আপনাকে মোটেও তেমন লাগে না। এ কথা আমাকে বললে মানায়। কিন্তু ঐ যে ছেলের মায়ের কাছে নিজের ছেলে হিরার টুকরা তো।”
চন্দ্রা অবাক হয়ে মুখ তুলে। ধরেই নিয়েছিল লোকটা আলাদা করে কিছু জ্ঞান বিতরণ করবে। যা সাধারণ করে, যেমন আমার এই পছন্দ, ঐ পছন্দ না। এভাবে চলতে হবে, ওভাবে চলা যাবে না। বিদেশি টাকার গরম থাকবে। কিন্তু লোকটার কথা শুদ্ধ ভাষায়ই শুধু না, আচরণও মার্জিত।
“মা বাবার কাছে সন্তান সবসময় সুন্দর।”
“তুমি, মানে আপনি আসলেই সুন্দর। আপনি বলব না তুমি?”
“বলেন যা ইচ্ছে। সমস্যা নেই।”
“তুমিই বলি। আমার অনেক ছোটো হবা। আমি অনার্স শেষ করে ওমানে গিয়েছিলাম। দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করা মানুষের ভালো চাকুরি কই? ব্যবসা করতে পুঁজি লাগে। লম্বা সময় ওমান ছিলাম। প্রায় সাত বছর। ধার শোধ করেছি, বোনদের বিয়ে দিয়েছি। বয়স ত্রিশ পার হলো। দেশে এসে বিয়ে করতে চাইলাম। সবাই বললো ত্রিশ আর এমন কী বয়স। এখনো দালান বাড়ি ওঠেনি। জায়গা জমি হয়নি। আব্বা জমি বিক্রি করে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। ওনার জন্য সেই জমি কিনে দেওয়া আমার দায়িত্ব। এবার গেলাম দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দুই বছর কিছু করতে পারি নাই। নিগ্রোরা এসে টাকা পয়সা লুট করে নিয়া যায়। পুলিশ সাহায্য করে না। দেশে চলে এলাম। কিন্তু দেশে বসে তো জীবন কাটবে না। এবার আফ্রিকার আরেক অঞ্চলে গেলাম। সেখান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। ব্যবসা জমলো। পাঁচ বছর পর আসলাম। কিন্তু বয়সটা গেল বেড়ে।”
“ছেলেদের চল্লিশও কিছু না। মেয়েদের পঁচিশও অনেক। যদিও আমার দাদি আমার বয়স পঁচিশ বললেও, আমার বয়স সাতাশ চলে।”
এতক্ষণে মুখ খোলে চন্দ্রা।
“তাও আমার থেকে অনেক ছোটো। আমার আসলে এরচেয়ে কমবয়সী মেয়ে বিয়ের ইচ্ছে নাই। যা প্রস্তাব আসে সব বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে। বিশ, বাইশ বয়স।”
“প্রতারণা করতে চাইলে বয়স কোনো বিষয় না। আমি তো জানি সবাই কমবয়সী মেয়ে চায় বাধ্য হবে ভেবে। গড়ে পিঠে নিবে।”
“না না এমন কিছু ভাবি নাই। আসলে আমার মনে হয়েছে আমার সাথে এডজাস্ট হবে না মনমানসিকতা। আপনার ছবি দেখেই আমার খুব ভালো লাগছে। আমি মনে মনে এমন একজন খুঁজতেছিলাম। তুমি বেশ শান্ত, ঠান্ডা, বুঝদার। চঞ্চল মেয়ে আমার সাথে মানায় না মনে হয়।”
“ছবি দেখেই বুঝলেন আমি শান্ত, নরম, বুঝদার?”
“ইয়ে মানে তা না। ছবি দেখে মিষ্টি লাগলো। তোমার চেহারাটা খুব মিষ্টি। আর স্বভাব বুঝলাম এখন কথা বলে।”
“রঙ কালো না?”
“হ্যাঁ?”
“রঙ কালো আমার।”
“না, শ্যামলা।”
চন্দ্রা হেসে দিলে শরিফ বিব্রত হয়।
“আমি লোকটা একটু বোকাসোকা৷ কিছু মনে করো না। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তুমি ভালো পরিবারের শিক্ষিত মেয়ে। আমার ভয় ছিল অহংকারী, ভাব নেওয়া হও কিনা। আমিই বরং আশাবাদী ছিলাম না। আম্মাও এ জন্য আসতে চায় নাই। কারণ তোমাদের সামাজিক অবস্থানও ভালো। তোমাকে বৌ করলে মা বোন মান্য করবা না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তেমন না। তুমি মেয়ে ভালো।”
লোকটার সরলতায় চন্দ্রার ভালোই লাগে। লোকটা ভালো মানুষ বোঝা যাচ্ছে। যদিও পরিবার এত সহজ না। আর সেটাই স্বাভাবিক। পরিবার এনন সহজ সরল সন্তানের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়। অল্প বয়স থেকে এরা সংসারের জোয়াল কাঁধে নেয়। এই যে মা ভাবছে ছেলের এমন কী বয়স হয়েছে। এটা মোটেও আদর না সবসময়। অনেকে সত্যি এ বলে বিয়ে দেরি করাতে থাকে মধ্যবিত্ত সংসারে। কেননা আয় করা ছেলেটা বিয়ে করে ফেললে যদি সংসারে আর আগের মতো টাকা না দেয়? তাই আগে বাকি ছেলেমেয়েগুলো দাঁড়াক, ঘর হোক, জমি হোক। সব হতে হতে হয়ে যায় মধ্যবয়সী। তখন নিতান্ত অনিচ্ছায় বিয়ের জন্য আগায়। তখনও কোনো মেয়ে মন মতো হয় না। কারণ সামনের মেয়েটা যে ছেলেটার জীবনে অধিকার নিয়ে আসছে। তাই শুরু থেকেই সে শত্রু হিসেবে গণ্য হয়।
***
“তাহলে আমরা চিন্তা ভাবনা করে জানাব।”
বলে শরিফের মা আলেয়া আক্তার বিদায় চাইতে যান। এই ভাষা নাহার বেগমের চেনা। মানুষ পেছলাতে চাইলে এসব বলে। আনেয়ারা বলেছিল এখানে বিয়ে সহজেই হবে। কেননা সামাজিক অবস্থান, যোগ্যতায় মেয়েপক্ষই এগিয়ে। চন্দ্রার নানা কেলেঙ্কারি না হলে এমন জায়গায় হতো হুট করে বিয়ের সমন্ধ করতেনও না। নাহার বেগম তাই বললেন,
“কথাবার্তা যা বলার পরিষ্কার বলে যাও। চিন্তা ভাবনা কী?”
“ভাবতে হবে না? মেয়ের বয়স, রঙ বাদেও তো কিছু ভাবার থাকে। মেয়ের নামে উড়াউড়া কথা শুনছি।”
“আরে কী শুরু করছ তুমি? এসব উড়া কথা মাইয়াদের নিয়া সবসময় থাকে। তোমার ছেলেও তো মেলাদিন বিদেশে ছিল। কী করছে না করছে কে জানে। শোনো আমার আনোয়ারার বান্ধবী তুমি, তাই তোমারে কটু কিছু বলতেছিনা। তুমি নিজের ছেলের বয়সটা দেখ। কমছে কমছে কম আমার নাতনি থেকা দশ বারো বছরের বড়ো। ভুঁড়ি আর চুল তো বাদই দিলাম।”
“এইটা কী বলেন খালাম্মা?”
“ঠিকই বলি৷ আসার পর একই প্যাঁচাল শুরু করছ।”
শরিফ উঠে দাঁড়ায়।
“আম্মা, পাত্রী আমার পছন্দ হয়েছে। ভাবাভাবির কিছু নাই। আপনে চেইন আনছেন না সাথে? দিয়া দেন।”
***
নাহার বেগম খুশি। পাত্রপক্ষ চেইন পরিয়ে দিয়ে পানচিনির আলাপ সেরে গিয়েছে। আলাপ যা করার নাহার বেগম আর রহমত সরকার করেছেন। ফিরোজ সরকার চুপচাপ বসে ছিলেন। জুয়েবাও সামনে থাকেনি। রান্নাঘরে কাজ করেছে। চন্দ্রা কোনো বিরোধিতা, অনিচ্ছা কিছুই জানায়নি।
“আপু, তুই সত্যি এই জায়গায় বিয়ে করবি?”
“হ্যাঁ করব। সেটাই ভালো না?”
“তুই কী বোঝাতে চাস? সাক্রিফাইস করছিস? আমার জন্য?”
“নাহ্। লোকটা ভালো বলেই বিয়ে করছি। কেন বড়ো চাকরি করা, স্মার্ট দেখতে ছাড়া কি একজন মানুষ যোগ্য হতে পারে না? লোকটা ভদ্রলোক। আমার কলঙ্ক নিয়েও ওনার মাথাব্যথা নেই।”
মৃদুলা খুশি হতে পারে না। উল্টো বোনের উপর রাগ হয়।
(চলবে)
সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী
পর্ব ২২
মাহতাব দীঘির পাড়ে কড়াই গাছের নিচে অপেক্ষা করছিল। ফিরোজ সরকারকে আসতে দেখে এগিয়ে আসে।
“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।”
“ওয়ালাইকুম সালাম। এখানে যে? তোমার বাসা খুঁজে পেয়েছ?”
“জি। হাসপাতাল রোডে। ঈদের ছুটি তো মাসের শেষে পড়লো, ঢাকা থেকে ঘুরে এসে উঠে যাব।”
“গুড।”
“আঙ্কেল।”
“বল।”
“ঐদিন আপনারা ছবিতে যা দেখেছন, তা সত্যি তেমন কিছু ছিল না। আমাদের ভালো একটা বন্ডিং হয়েছিল সত্যি। কিন্তু সেটার ভেতর কোনো নোংরামি ছিল না। বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক ছিল। সেদিন আমরা শাপলা বিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম। নিজের কিছু মনের কষ্ট আমি শেয়ার করিছি, কিছু চন্দ্রা। মানুষ দুর্বল মুহুর্তে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তখন পাশের মানুষ মানবিকতা থেকে কাঁধ পেতে দেয়। এতে অন্য কিছু ছিল না।”
“সেদিন ঐ লোকগুলোর সামনে এই কথাটা তুমি কি জোর গলায় বলেছিলে?”
“আমি চেষ্টা করেছিলাম। বারবার বলছিলাম ছবি দেখিয়ে যা বোঝানো হচ্ছে তা ঠিক না। কিন্তু আমার আওয়াজ তো তখন পৌঁছাত বাইরের মানুষদের কানে, যদি ঘরের মানুষেরা বিচারক না হতো। সত্যি বলতে আপনার আম্মা, মানে দাদি যেভাবে নিজেই গালমন্দ শুরু করলেন, আপনারা সবাই যেভাবে চুপ হয়ে গেলেন, তাতে অন্যায় কথাগুলোই সমর্থন পেল। ছেলে খু*ন করে আসলেও কিছু বাবা মা ছেলেকে অবুঝ, সহজ সরল ভাবে। সেটা যেমন অন্যায়। তেমনি ছেলে অপরাধী কিনা না জেনে সবার কথায় বিচার করাও তো অন্যায়। যাই হোক এই কথাগুলো বলার জন্য আমি আপনাদের কাউকে পাচ্ছিলাম না। জানি আমাকে কেন্দ্র করে আপনাদের পারিবারিক মহল খারাপ হয়েছে। তাই নিজ থেকে ঘরে ঢুকে এসব বলতেও পারছি না। আপনি অনেক বিচক্ষণ মানুষ। সবসময় চন্দ্রাকে আগলে রেখেছেন। ওনার বিয়ে দিবেন স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু বিয়েটা শাস্তি হিসেবে দিয়েন না। একজন ভালো মানুষ তিনি ডিজার্ভ করেন।”
“চন্দ্রা তোমার বড়ো। আপু করে বলা উচিত। তোমাকে স্পষ্ট একটা কথা জিজ্ঞেস করি। চন্দ্রার জন্য তোমার চিন্তার কারণ কি শুধু মানবিকতা? না…”
“আমাদের মাঝে অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল না। আর মৃদুলাকে আমি অন্য কোনো চোখে দেখেই নাই। দাদাজান আমাকে জানালে আমি তখনই না করে দিয়েছিলাম। তাই চন্দ্রা মৃদুলার ক্ষতি করতে চায় বা হিংসা থেকে মৃদুলার বিয়ের সমন্ধ নষ্ট করতে আমার সাথে জড়িয়েছে বিষয়টা একদম ঠিক নয়।”
“হুম। ঠিক আছে। তুমি ছেলে ভালো। বাড়ি থেকে গেলেও বিপদে আপদে প্রয়োজনে যোগাযোগ করো। আসলে তোমাদের কারও দোষ নেই। প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে এক বাড়িতে থাকা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা, বাইরে মেলামেশা করা। এসব সমাজের চোখে ভালো না৷ কেউ সহজ ভাবে নেয় না।”
***
মাহতাব জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলেছে। এমনিতে তেমন কিছু ছিল না। তবু ধনুকে সাথে নিয়ে গুছিয়ে রাখলো। ঢাকা থেকে ফিরে শুধু মালামাল টেনে নতুন বাসায় নিয়ে যাবে। ঈদের এবার লম্বা ছুটি। আজ বিকেলেই রওনা দেবে।
“আপনিই তাহলে মাহতাব?”
দরজায় একজন অপরিচিত পুরুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় মাহতাব।
“জি। আপনি?”
“আমি তুর্য। চন্দ্রা আর মৃদুলার ফুপাতো ভাই।”
তুর্য, নামটা পরিচিত মাহতাবের। মাহতাবকে চুপ থাকতে দেখে তুর্যই বলে,
“আমাকে চেনার কথা না। কিন্তু এক জায়গায় আমি, আপনি, মৃদুলা সবাই ধরা। চন্দ্র। শুনলাম চন্দ্রের পাল্লায় পড়ে শোকজ খেয়েছেন। তাও ভালো, অল্পের উপর দিয়ে গিয়েছে। জান বেঁচে আছে, চাকরি টিকে আছে। আমাকে দেখেন পঙ্গু করে দিলো্।খুঁড়িয়ে হাঁটি। নিজের ছোটোবোনটাকেও ছাড়ে না। যার সাথেই বিয়ে ঠিক হয়, তার সাথেই নিজে গিয়ে ঢলে পড়ে। দুই বোনের এক ব্যাটা নিয়ে টানাটানি শেষ হয় না।”
তুর্যের কথা শুনে মাহতাবের চরম রাগ ওঠে। একজন অপরিচিত লোককে নিজের ঘরের মেয়েদের নিয়ে কেউ কিভাবে এসব বলতে পারে!
“এক্সকিউজ মি। আমি আপনাকে চিনি না ঠিক। তবে আপনার বিষয়ে জানি না তা নয়। তবে আমি এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে আগ্রহী নই। আমার ট্রেনের সময় হয়ে যাচ্ছে আমি বের হব।”
“দাঁড়ান, আগে বলেন কী জানেন আমার ব্যাপারে?”
“এটাই যে আপনি আসলে দুই বোনের কাউকেই বিয়ে করতেন না। আপনার প্রতি দুর্বল টের পেয়ে, আপনি দু’জনকেই ধোঁয়ায় রাখতে মজা পেয়েছেন। একজন পুরুষ হিসেবে, পুরুষদের এসব মেইল ইগো স্যাটিসফেকশনের বিষয়টা আমি বুঝি। যখন নিজের যোগ্যতা না থাকার পরও মেয়েদের এটেনশন পাওয়া যায়, তখন মানুষ এভাবেই স্যাটিসফেশন খোঁজে।”
“মানে? এই মিয়া কী বলতে চাও?”.
“টিনএজ বয়সটা আবেগের থাকে। সে বয়সে চোখের সামনে বিপরীত লিঙ্গের যে থাকে, তাকেই ভালোবাসা মনে হয়। আমারও মনে হতো আমি আমার মামাতো বোনকে ভালোবাসি। এটা দোষের কিছু না। রক্ষণশীল পরিবারের দুটো মেয়ে বড়ো হওয়ার সময় বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বলতে কাজিনকেই সামনে পেয়েছে উদাহরণ হিসেবে। হরমোনের খেলাই হোক, কম বয়সের আবেগই হোক। ভালোবাসা মানেই এড্রেনালিন রাশ, অক্সিটোসিন হরমোনের খেলা। সেই রাশ আর খেলার জন্য সামনের মানুষটা সবসময় রাজকুমার বা রাজকন্যা হওয়া লাগে না। আপনি বয়সে বড়ো ছিলেন, দু’জনেরই বয়সের আবেগটা টের পেয়েছিলেন। দু’জনকেই বা যেকোনো একজনকে নিরস্ত না করে দু’জনের ইমোশন নিয়ে খেলে গেলেন। দুই বোনকে মুখোমুখি দাঁড় করালেন। অথচ আপনার কাউকেই বিয়ের পরিকল্পনা ছিল না।”
তুর্য ভাবতেই পারেনি মাহতাবের দিক থেকে কথার আক্রমণ আসতে পারে। এইভাবে তো ভাবেইনি। এ বাড়িতে ফেরার দরজা তার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মামা ফিরোজ সরকার কখনোই চাইতেন না, তুর্য আর এ বাড়ি আসুক। তুর্য অবশ্য মা খালা, নানি সবাইকে নিজের পক্ষে পেয়েছে। এমনকি মৃদুলা পর্যন্ত চন্দ্রাকে ভুল বোঝে। সেদিন রাতে সে চন্দ্রার সাথে এসবই বলছিল। চন্দ্রা তাকে কলেজে বান্ধবী নিয়ে ঘুরতে দেখে ফেলেছিল। মৃদুলার সাথে বিয়ের কথা ঠিক হওয়ার পরও কেন বাইকে করে অন্য মেয়েদের নিয়ে ঘুরছে সে প্রশ্ন করেছিল। বাড়ির বড়োদের মৃদুলাকে সব জানাবেও বলেছিল। কিন্তু তুর্য ঠাট্টা করে বলেছিল, দুই বোনের কাউকেই তার বিয়ের শখ নাই। দু’জনই টাইমপাস। চন্দ্রা রেগে সরে এসেছিল। তুর্য নিজেই এগুতে গিয়ে পা হড়কে পড়ে যায়। কিন্তু দোষটা চন্দ্রার ঘাড়েই চাপায় যে চন্দ্রা হিংসা থেকে এমন করেছে। এত বড়ো ঘটনার পর চন্দ্রা যাই বলুক, কারও বিশ্বাস হবে না। তুর্যের পা ভাঙার ঘটনায় পারিবারিক মহল খারাপ হয়ে যায়। ফিরোজ সরকার মেয়ের পক্ষ নেওয়ায় বোনেরা বিরুদ্ধে চলে যায়। এতোকিছুর পর তুর্যের আনন্দ ছিল এই মেইল ইগোই। আর মাহতাবের কাছে সে তা হারাবে না
(চলবে)