রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব-০১

0
1

#সূচনা_পর্ব
#রাঙিয়ে_দিয়ে_যাও
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম

প্রেগন্যান্সির কিট হাতে নিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে আছে টিয়া। হাত দু’টো থরথর করে কাঁপছে। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না টিয়া। দুই চোখে পানি টলমল করছে। যেকোনো সময় তা নিচে গড়িয়ে পড়তে পারে। প্রেগমন্যান্সির খবর পেলে প্রতিটা মেয়ের মুখে হাসি ফুটে ওঠে কিন্তু টিয়া’র বেলায় ভিন্ন। কেন জানেন? কারণ সবে মাত্র দুইদিন হয়েছে টিয়া’র ডিভোর্সের? ডিভোর্সের দু’দিন পর যদি কোনো মেয়ে তার কন্সিভ করার বিষয়টা জানতে পারে তাহলে তার মনের অবস্থা টা কি হতে পারে বলুন? সেটা অবশ্য কেউ বুঝতে পারে না। টিয়া ফ্লোরে ধপ করে বসে পরে। টিয়া’র হাত থেকে কিট টা ছিটকে গিয়ে দরজার কাছে পরে। সহসা টিয়া পেটে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

“- আমাদের ভুলের মাশুল কেন তোকে দিতে হবে? তুই তো কোনো দোষ করিস নি? তাহলে কেন? কেন তোকে শাস্তি পেতে হবে?
বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে টিয়া। চার দেয়ালে তার কান্নার আওয়াজ বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।

হঠাৎ কান্না’র শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন সালেহা টিয়া’র মা। দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়ে কে ফ্লোরে বসে কাঁদতে দেখে দৌড়ে মেয়ে’র কাছে আসেন। সালেহা বেগম দুই হাত দিয়ে টিয়ার মুখ উঁচু করে বলেন,

“- টিয়া এভাবে কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে মা? মা কে বল কোথায় কষ্ট হচ্ছে।

মা’য়ের কথা য় কান্নার বেগ আরো বৃদ্ধি পেলো টিয়া’র। মা কে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করে দেয়। আচমকা মেয়ে’র কান্নার কারণ বুঝতে পারেন না তিনি। বার বার জিজ্ঞেস করার ফলেও কিছু জানতে পারেন না। কারণ টিয়া’র কান্না এখনো থামেনি।

সালেহা বেগম কিছু সময় চুপ থাকেন। কান্না করলে শরীর মন দুই টায় হালকা হবে ভেবে কাঁদতে দেন টিয়াকে। এভাবে মিনিট পাঁচেক কেটে যায়। টিয়া র কান্না কিছুটা দমে যায়। তবে বারবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে উঠছে। মেয়ে কে শান্ত হতে দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“- টিয়া মা এবার খুলে বলতো কি হয়েছে? এভাবে কাঁদার কারণ টা কি মা?

মা’য়ের কথায় আবারো চোখে পানিতে ভরে ওঠে। সালেহা বেগম টিয়া’র চোখের পানি মুছিয়ে ইশারায় কাঁদতে মানা করেন । তারপর বলেন,

“- বল মা। চুপ করে থাকলে কোনো কিছুরই সমাধান হবে না।

“- আমি প্রেগন্যান্ট মা বলে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে টিয়া।

টিয়া’র কথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সালেহা বেগমের মাথায়। তিনি বিস্মিত হয়ে বলেন,

“- কি বলছিস টিয়া? এটা কি ভাবে সম্ভব?

“- আমি কিছু জানি না মা। হঠাৎ কোথা থেকে কি হয়ে গেলো?

ভয়ে আতঙ্কে সালেহা বেগম বলেন,

“- এবার কি করবি টিয়া? সমাজের মানুষ কি বলবে? সমাজে আমরা মুখ দেখাবো কি করে? তোর সন্তান কে কিভাবে মানুষ করবি? ডিভোর্সের পর তুই প্রেগন্যান্ট লোকে কি বলবে মা? লোকে আমাদের ছিহ ছিহ করবে? বাইরে বের হলেই মানুষ নানান কথা বলবে।

মা’য়ের কথা য় আরো বেশি ভেঙে পড়ে টিয়া। সালেহা বেগম আতঙ্কিত হয়ে উঠে দাড়ান। বাসায় এখন কেউ নেই। টিয়া’র বাবা অফিসে আছে। পুরো বাড়িটায় শুধু টিয়া আর সালেহা বেগম।

সালেহা বেগম মনে মনে কিছু একটা ভেবে মেয়ে কে বলেন,

“- তুই ফিরে যা মা।

সালেহা বেগমের কথায় চমকে ওঠে টিয়া। তারপর বলে,

“- কি বলছো মা? তোমার মাথা ঠিক আছে। আমি কোথায় যাব? আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে মা । আমি কিভাবে সেখানে ফিরে যায় বলো?লোকে কি বলবে? সবাই ভাব্বে আমি ছ্যাচড়া মেয়ে।

টিয়া’র কথার বদলে তিনি উত্তর দেন,

“- এটা ছাড়া আর কোনো পথ নেই টিয়া। তুই যদি তোর সন্তান কে স্বাভাবিক ভাবে বড়ো করতে চাস তাহলে তোকে তোর শশুর ঘরে ফিরে যেতে হবে। তুই সেখানে গেলেই তোর সন্তান কে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন দিতে পারবি।

টিয়া করুন স্বরে বলে,

“- আর কোনো উপায় নেয় মা?

তিনি শক্ত কন্ঠে জবাব দেয়,

“- না। তুই চাইলেও তোর বাচ্চা কে একা মানুষ করতে পারবি না। কারণ কি জানিস? তোকে এই সমাজের মানুষ করতে দেবে না। তোকে এতগুলো কথা বলছি কারণ তোকে সুখী দেখতে চাই টিয়া। বাবা ছাড়া কিভাবে মানুষ করবি তোর সন্তান কে? এই সমাজের মানুষ গুলো বড্ড খারাপ টিয়া। এরা তোকে এখন ভালো কথা শুনিয়ে, একটু পর অন্যের কাছে গিয়ে তোর নামেই খারাপ কথা বলে আসবে৷

মা’য়ের কথা গুলো নিশ্চুপ হয়ে শোনে টিয়া। একটা কথাও বলে না। শুধু মা কে বলে রুম থেকে চলে যেতে। সালেহা বেগম মেয়ের কথা মতো চলে যান। তবে যাওয়ার আগে পইপই করে বলে গেছেন যা সিদ্ধান্ত নিবি ভেবে চিন্তে নিবি। যাতে সবারই মঙ্গল হয়।

______________________

টিয়া আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনের মধ্যে নানান চিন্তা ভাবনা আসছে। তার মা যে তাকে এতগুলো কথা বললো তার একটা কথাও ফেলে দেওয়ার মতো না। তিনি সত্যি কথা’য় বলছেন। কেন না সে যদি বাবা মা’র কাছে থেকে নিজের সন্তান কে বড়ো করতে চাই তাহলে এটা কখনোই পসিবল নয়৷ কারণ তার ভাইয়ের বউ বাচ্চা আছে৷ আর একটা মেয়ের বিয়ের পর বাপের বাড়ির সবাই পর হয়ে যায়। আর এখন তো সে ডিভোর্সি। তারপরও আবার অন্তঃসত্ত্বা। তার ভাবি তাকে ভালো চোখে দেখেন না এটা টিয়া বোঝে। কিন্তু কোনো উপায় না থাকার কারণে তাকে এখানেই থাকতে হচ্ছে। নিজের তকদিরের উপর উপহাস করে টিয়া। জীবনের এমন একটা জায়গায় দাড়িয়ে আছে যেখান থেকে না পারছে সহ্য করতে আর না পারছে যেতে।

ভাবতে ভাবতে টিয়া ভাবনাতে চলে যায়। টিয়া আর নাঈম দুইজন দু’জনকে দেখে পছন্দ করে বিয়ে করে। বিয়ের দুইমাস খুব ভালো ভাবেই চলছিল। কিন্তু তার কয়েক মাসের মধ্যে টিয়া বুঝতে পারে তার স্বামী নাঈম খুব বদমেজাজি। কথায় কথা’য় রেগে যায়। এক কথা দুই কথা এভাবেই তর্কতর্কি বেধে যায় দুজনের মধ্যে। আর রেগে গিয়েই তাকে মারপিট করে নাঈম। এভাবে অহেতুক কারণে মারার পরেও কিছু বলে না টিয়া। কিন্তু কতদিন! এভাবে তো আর জীবন চলে না! একপর্যায়ে একদিন নাঈম আবারো টিয়া’র গা’য়ে হাত তোলে কিন্তু সেদিন আর টিয়া চুপ থাকে না। সেদিন টিয়া খুব অন্যায় করে ফেলে সে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বসে স্বামীর গালে। সহসা টিয়া র হাতের চড় খেয়ে তব্দা খেয়ে যায় নাঈম। নাঈম ভাবেনি টিয়া ওকে মারবে? সেদিন নাঈম কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়৷ নাঈম যেতেই টিয়া দরজা বন্ধ করে দেয়। এদিকে টিয়া’র শাশুড়ী রিনা বেগম ছেলের হাত থেকে টিয়া কে বার বার বাচান। তিনি ছেলের অতিরিক্ত রাগ কে খুব ভয় পান। নাঈম রেগে গেলে মা কেউ ছাড় দেয় না। মা কে মেরে বেহুশ করে রাখে। তবুও তিনি টিয়া কে বাঁচাতে যায়। সেদিন রাতে নাঈম বাসায় ফিরলে টিয়া ক্ষমা চেয়ে নেয়। কিন্তু নাঈম কিছু বলে না। সেই রাত টা না খেয়েই পার করে টিয়া। নাঈম খেয়েছে কি না জানে না। দুজনের মধ্যে আর কথা হয় না।পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে চলে যায় নাঈম আর রাতে ফেরে। দুদিন পর দু’জনের মধ্যে সব ঠিক ঠাক হয়ে যায়। এভাবে পাঁচ দিন যেতে না যেতেই দু’জনের মধ্যে ঝামেলা বেধে যায়। কথা কাটাকাটি থেকে মারামারি। টিয়া দুই দিন বিছানা থেকে উঠতে পারে না।

রোজ রোজ অশান্তি সহ্য করতে পারে না টিয়া। কোনো মেয়েই পারে না এভাবে মার খেতে। পাগলামির একটা লিমিট থাকে কিন্তু নাঈম তার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাই দু’জনে সিদ্ধান্ত নেয় তারা একসাথে থাকবে না। নাঈমও উগ্র বদমেজাজি, সেও রাজি হয়ে যায়। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ডিভোর্স দেয় টিয়াকে। টিয়া অনেক চেষ্টা করছিল কিন্তু পারেনি। সব কিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়। ডিভোর্স পেপার সাইন করে সব মায়া ত্যাগ করে শশুর বাড়ি থেকে চলে আসে টিয়া । কিন্তু বাবা’র বাড়ি ফেরার পরেরদিনই টিয়া’র মাথা ঘোরে গা গুলিয়ে আসে,, বমি বমি পায়। তাই সন্দেহর বশবর্তী হয়ে প্রেগ্ন্যাসির কিট কিনে এনে আজ পরীক্ষা করে পজিটিভ দেখে থমকে যায়। পুরোনো কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখের পানি গড়িয়ে এসে হাতে পরে তখন ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে টিয়া।
টিয়া মনে মনে অনেক বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নেয়।

অতঃপর……….

#চলবে