রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0
2

#রাঙিয়ে_দিয়ে_যাও
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম
#পর্ব_২(শেষ)

টিয়া অনেক বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নেয়। তার বাচ্চার জন্য সে সব কিছু করতে পারবে।

অতঃপর………….

ফোন করে তার স্বামী ‘র কাছে। কয়েকবার দেওয়ার পরে ফোন রিসিভ করে নাঈম। ফোন রিসিভ করেই বলে,

“- এই ফোন করছিস ক্যান? তুই যা চেয়েছিস তাই দিয়েছি। তোকে আমার থেকে মুক্তি দিয়েছি তাহলে আবার ক্যান ফোন করছোস হ্যাঁ। নাঈমের তিক্ত কথা শুনে চোখ বুজে নেয় টিয়া। তারপর আবার ফোন কানে নিয়ে নাঈম কে কিছু বলতে না দিয়ে টিয়া বলে,

“- নাঈম প্লিজ আমার কথাটা তো শোনো। আমি এমনি এমন তোমাকে ফোন দেয়নি।

নাঈম শান্ত কন্ঠে বলল,

“- বল।

টিয়া অনেক সাহস জুগিয়ে বলল,

“- নাঈম আমি প্রেগন্যান্ট!

নাঈম চমকে ওঠে টিয়া’র কথায়। নিজের শোনার ভুল হয়েছে বলে আবার বলে,

,”- কি বলছিস আবার বল?

“- আমি প্রেগন্যান্ট নাঈম। আমি মা হতে চলছি আর তুমি বাবা।

টিয়া’র কথায় থমকে যায় নাঈম। মনের ভিতর আওড়াতে থাকে ‘ বাবা’ নামক শব্দ টা। সে বাবা হতে চলেছে। অন্য সবার মতো তারও একটা বাচ্চা হবে। বাবা হওয়ার অনুভূতি নাঈম কে অতিতের সব কথা ভুলিয়ে দেয়। নাঈম খুশি হয়ে মা কে ডাক দেয়। ছেলের ডাক শুনে ছুটে আসেন রিনা বেগম। নাঈমের কাছে কি হয়েছে শুনতে চাইলে নাঈম ফোন টা এগিয়ে দেয় রিনা বেগমের দিকে। রিনা বেগম ফোন টা কানে নিয়ে বলে,

“- হ্যালো।

ফোনের ওপাশ থেকে টিয়া অনেক আশা নিয়ে শাশুড়ী মা ডাক দেয়,

“- আম্মা,,

“- বউ মা (খুশি হয়ে)

“- জ্বি, আম্মা। আম্মা আপনি দাদি হতে চলেছেন।

খবরটা শুনে রিনা বেগম অনেক বেশি খুশি হয়। তবে সেটা বেশিক্ষণ নয়। তিনি ছেলের মুখের দিকে তাকান। তার ছেলে কি মেনে নেবে। তবে অবাক করার বিষয় হলো নাঈম খুশি হয়ে রিনা বেগম কে বলে,

“- মা আমি কালই টিয়া কে বাড়ি নিয়ে চলে আসব। আগে যা হয়েছে সব ভুলে যাব কিচ্ছু মনে রাখব না। নাঈমের কথা শুনে রিনা এবং টিয়া দুজনে খুশি হয়ে কেঁদে দেয়।৷

*********

টিয়া বাপের বাড়ি থেকে একা একাই জার্নি করে মাগুরায় আসছে। টিয়া’র বাবা-র বাড়ি ঢাকা। টিয়ার ভাই টিয়াকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়ে যায়। আর বাকিটা পথ নিজে নিজে ই আসে। তারপর মাগুরা শহর থেকে নাঈম গিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসে। নাঈমদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। টিয়া ফিরে আসায় সবাই খুব খুশি হয়। তারপর ইশার আযানের পর কাজী সাহেব আসেন নাঈমদের বাড়িতে। আবার নাঈম টিয়া দুজনের বিয়ে পড়ানো হয়। নতুন করে দু’জনে শুরু করে তাদের পথচলা।

*******

নাঈম আর আগের মতো নেই। নাঈমের মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করে টিয়া। মনে মনে এই ভেবে খুশি হয় যে, যে নাঈম আগে কথা’য় কথা’য় তাকে যা নয় তাই বলে গালিগালাজ করতো, মারপিট করতো এখন সেই নাঈম তাকে খুব যত্নে রেখেছে। টিয়ার জীবন টা রঙিন ভাবে চলছে। তার শাশুড়ী তাকে অনেক কেয়ার করে। টিয়া যে কাজটা করতে পারে না সেটা তিনি নিজে করে দেন৷ টিয়ার ননদ শশুর বাড়ি থেকে মাসে দু একবার এসে ভাবি কে দেখে যায়। ভাবির জন্য ফলমূল কিনে আনে।

টিয়া মাঝে মাঝে অনেক অবাক হয় একটা বাচ্চার জন্য নাঈমের মধ্যে এতো পরিবর্তন। টিয়া যদি আগে টের পেতো তাহলে তার গা’য়ে ডিভোর্সি তকমা লাগাতো না। অনেক আগেই বাচ্চা নিয়ে ফেলতো। আর তারা সুখে শান্তি তে সংসার করতো।

একটা মেয়ের জীবনে বিয়ের পর স্বামীর মূল্য টা যে কি সেটা টিয়া ডিভোর্সের পর বুঝতে পেরেছে। ডিভোর্সের পর সমাজের মানুষের নানান কটূ কথা৷ সব মুখ বুজে সহ্য করা। সারাদিন লোকের খারাপ কথা শোনা খুব কষ্টেের। তবে টিয়া খুশি হয় ডিভোর্সের দুদিন পর সে অন্তঃসত্ত্বা এটা জানতে পেরে। টিয়া দেখেছে তাদের বাড়ির পাশের একটা ডিভোর্সি মেয়ের জীবন যেভাবে যাচ্ছে। সেটা দেখে সে ঢের বুঝতে পেরেছে কিভাবে সমাজের মানুষের কথা মুখ বুজে মেনে নেওয়া। কথায় কথায় ডিভোর্সি বলে খোটা দেওয়া।

পুরনো সব পিছনে ফেলে সামনে আগাতে পেরেছে এটাই অনেক টিয়ার কাছে।

_____________________

দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে যায়। টিয়া’র এখন সাত মাস। টিয়া’র শাশুড়ী টিয়াকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে। গাইনী বিশেজ্ঞ ডক্টর লাবনী র কাছে এনেছে। টিয়া কে আলট্রাস্নোগ্রাফি করানো হয়।

ঘন্টা দেড় পর টিয়া’র রিপোর্ট আসে। ডক্টর লাবনী চুপচাপ রিপোর্ট দেখে টিয়া’র দিকে তাকিয়ে বলে,

“- মিসেস টিয়া কংগ্রাচুলেশনস আপনার ছেলে বাবু হবে। বাচ্চা ঠিক ঠাক আছে। এই কয়েকমাস যা আছে সাবধানে চলাফেরা করবেন। পুষ্টিকর খাবার খাবেন।

ডক্টরের কথা শুনে টিয়া আর তার শাশুড়ী খুশি হয়ে ডক্টরের চেম্বার থেকে বের হয়ে নাঈম কে কল করে বলে তাদের ছেলেবাবু হবে। নাঈম কি যে খুশি। সেদিন দুপুরে বাসায় আসে তারা। নাঈম বাজার থেকে মিষ্টি কিনে সবাই খাওয়ায়।

রাত নয়টা। বিছানায় পা মেলে নাঈমের কাঁধে মাথা দিয়ে আছে টিয়া। নাঈম টিয়ার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। টিয়া শক্ত করে নাঈমকে ধরে আছে। একসময় নিরবতা ভেঙে নাঈম বলে,

“- সবকিছু খুব অদ্ভুত তাইনা। আমরা দু’জন একসাথে থাকতে চাইনা অথচ দেখো আল্লাহ আমাদের জুটিটা এমন ভাবে করে রেখেছেন আমরা চাইলেও আলাদা হতে পারব না। আমাদের দুজন কো এক করে দিল আমাদের অনাগত সন্তান। আগে যা হয়েছে তারজন্য আমাকে মাফ করে দিও। আর কখনো এমনটা করব না। রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করব।

টিয়া মৃদু হেসে জবাব দেয়,

“- হ্যাঁ মনে থাকে যেন।

নাঈম চওড়া হেসে উত্তর দেয়,

“- খুব থাকবে। আমাদের জীবনে আর কোনো দুঃখ না আসুক। সবসময় আমরা খুব হ্যাপি থাকব। তুমি আমার জীবনে এসে আমার জীবনটা রঙিন করে দিয়েছো টিয়া। তাই আমি তোমাকে বলব আমার জীবন এভাবেই “রাঙিয়ে দিয়ে যাও” তেমনি আমিও তোমাকে রাঙিয়ে দেব আমার ভালোবাসায়। আমার ভালোবাসার মায়াজাল থেকে কখনো বের হতে পারবে না ৷

টিয়া লজ্জায় লাল নীল হয়ে বলে,

“- বাবুর আব্বু কে আমিও আমার মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখব। খুব যত্নে। অতঃপর দু’জন দু’জন কে জড়িয়ে ধরে খুব শক্ত করে।

[ সমাপ্ত ]

বিঃদ্রঃ —- ডিভোর্স সবকিছুর সমাধান না। তাই যারা ডিভোর্স দেন তারা একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আর হ্যাঁ সবাই নাঈম ভাইয়া আর টিয়া ভাবির জন্য দোয়া করবেন। শুধু তাদের জন্য নয় তাদের অনাগত বাচ্চার জন্যও করবেন। সে যেন সহিহ সালামত পৃথিবীর আলো দেখতে পারে। এটা কিন্তু কোনো কাল্পনিক গল্প নয় আমার দেখা সত্য ঘটনা৷

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]