#টিউলিপ
#আরশিয়া_জান্নাত
পর্ব-০১
আমি আমার জীবনে শখ করে যা-ই করেছি তাই পরবর্তীতে আমাকে চরম ভুগিয়েছে। তাই আমি আমার শখকে রেড ফ্ল্যাগ হিসেবে চিহ্নিত করে রেড এলার্ট জারি করে রেখেছি।
মানুষ শখের বশে কত কী করে! গান শেখে, ড্রইং করে, পোষ্য পুষে, বাগান করে আরো কত কী। আমি বেচারি সেইদিকে আনলাকি বলা চলে। সে যাই হোক আজ আমি আপনাদের বলবো আমার এই রেড ফ্ল্যাগের রাজ্যে পাওয়া গ্রিন ফরেস্টের গল্প।
ঝুমবৃষ্টি নিয়ে বেশিরভাগ মেয়ের আগ্রহের অন্ত নেই। অনেকে তো বেশ আয়োজন করে বৃষ্টিতে ভেজার প্রস্তুতি ও নেয়। আমি ভাই সাদামাটা মানুষ। বৃষ্টি আমার কাছে নেহাতই একটা ঝঞ্ঝাট বলা চলে। বিশেষত এই সময়ে বের হওয়া মানেই দূর্গতির শেষ নেই। চট্টগ্রামের বাসিন্দা বলেই এই অনীহা কিনা তা ঠিক বলা যাচ্ছে না, কেননা এতো সুন্দর শহরকে শুধুমাত্র জলাবদ্ধতার দায়ে দোষী করলে পাছে দেশদ্রোহী অপবাদ না জুড়িয়ে দেয়!
বৃষ্টি নিয়ে বকতে শুরু করে ভুলেই গেছি কেন এই কথা তুলেছিলাম। জ্বি মশাই এই বৃষ্টির সাথেই তার সম্পর্ক রয়েছে। তাই তো তার কথা বলতে গেলেই ঘুরেফিরে বৃষ্টি চলে আসে।
আমার ধূ ধূ মরু প্রান্তরে ঝুমবৃষ্টির স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়া মানুষটির নাম…না না এখন নামটা বলা যাবে না। আমি বরং তার সম্পর্কে একটু বলি। সে পেশায় একজন ডাক্তার। দেখতে আহামরি না, আর পাঁচটা ডাক্তারের মতোই মাঝারি গড়নের সাধারণ পুরুষ। যখন সে এপ্রোন গায়ে স্টেথোস্কোপ ঘাড়ে ঝুলিয়ে রাউন্ডে যায় তখন তাকে চোখে পড়ার মতো সুন্দর না দেখালেও আরামদায়ক অনুভূতি হয়; চোখের শান্তি মিলে। এই মানুষটির সাথে আমার প্রথম আলাপ হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যালে। বৃষ্টির দিনে ক্লাস করে বাসায় ফেরার পথে রিকশা থেকে পড়ে নোংরা পানিতে আমার মাখামাখি অবস্থা। রাস্তার মেরামতহীন ম্যানহোলের রডে হাত পা ছিঁড়ে জখম হয়েছে বলা বাহুল্য। তাও সৌভাগ্য ড্রেনে ভেসে যাই নি। এখানে আবার প্রতি বছর কেউ না কেউ প্রাণ হারায় জনসাধারণের মনে নির্মম স্মৃতির বোঝা চাপিয়ে।
আমার গা থেকে নোংরা পানির গন্ধ বের হচ্ছিল সেটা আমি নিজেও তীব্রভাবে অনুভব করছিলাম। কিন্তু গোসল দিবো সেই ব্যবস্থা আপাতত নেই। আব্বু কল পেয়ে দৌড়ে এসেছিলেন বাড়তি জামাকাপড় আর আনেননি। অগত্যা নার্সের দেয়া টাওয়েল গায়ে জড়িয়ে সেই হালেই চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া বিকল্প রইলো না। ডাক্তার সাহেব এলেন ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে বললেন, “কোনো ইনফেকশন যেন না হয় তাই ইনজেকশন দিচ্ছি। আর মেডিসিন গুলো নিয়মিত খাবেন। আশা করছি বিশেষ অসুবিধা হবেনা, খুব শীঘ্রই সেরে উঠবেন।”
সত্যি বলতে আমি তখন উনার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম উনার রিয়েকশন কেমন, ঘৃণায় নাকমুখ কুঁচকে আসছে কি না। কিন্তু সেরকম কিছুই দেখা গেল না। বোধহয় ডাক্তাররা কঠিন অভিনয় পারে। তাদের অভিব্যক্তি বহিঃপ্রকাশ যেন না হয় তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা তারা করে। নয়তো এমন বিদঘুটে গন্ধ পেয়েও কেউ কীভাবে নাক না কুঁচকে পারে! তাও এমন স্যাঁতস্যাঁতে বৃষ্টির দিনে।
পরবর্তী দিনগুলো নানান কাজে কেটে যাওয়ায় ডাক্তার সাহেব কে একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু ভোলা আর হলোনা। বরং সে আমার জীবনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেল। তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা হবার ছুঁতো তৈরি করতেই বিধাতার এক নতুন খেলা শুরু হলো নাকি নেহাতই কাকতালীয় ব্যাপার কে জানে! আমি খুব ঘনঘন অসুস্থ হতে শুরু করলাম। দেখা গেল মাসে না হলেও দুইবার আমায় কোনো না কোনো কারণে চমেকের গেইট পার হওয়া লাগতোই। সবসময় যে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো তেমন নয়, তবে বেশীরভাগ তিনিই থাকতেন। আমিও কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করতাম। সেই বিচক্ষণতায় খেয়াল করলাম মানুষটাকে যতটা সাধারণ ভেবেছিলাম অতোটাও সাধারণ নয়। তার হাসি সুন্দর, নরম গলায় বলা কথা সুন্দর, আর সবচেয়ে সুন্দর তার নম্রতা। আমার দিকে তিনি কখনোই সরাসরি তাকাননি। সবসময় কেমন চোখ নামিয়ে কথা বলতেন, আমার দিকে তাকানোর চেয়ে তার সাদা কাগজে তাকিয়ে থাকা অধিক প্রিয় বোধ হলো। একদিন এমনি প্রেসক্রিপশন লিখছিলেন আমি মাথা নামিয়ে মুখ তুলে করে তার দিকে উঁকি দিলাম। চোখাচোখি হতে সে ভীষণ হকচকিয়ে উঠলো। আমি হেসে বললাম, “আপনার চশমার পাওয়ার কত? গ্লাসটা উত্তল নাকি অবতল?”
উনি চেহারা গম্ভীর করে বলল, “মিস নওরিন আপনার কী শান্ত হয়ে বসে থাকতে বেশি অসুবিধা হয়? সবসময় দেখি খুব ছটফট করেন।”
কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি বললাম, “আমার পক্ষে মুখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাছাড়া আপনি এতো মনোযোগ দিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখেন দেখতেও বোর লাগে। সত্যি বলুন তো কোম্পানির নাম মনে করতে বুঝি এতো কসরত?”
আমার কাজিন চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা দিলো চুপ করতে। আমি কিছু টা দমে গিয়ে অন্যদিকে মুখ ফেরালাম। ডাক্তার সাহেব লেখা শেষ করে বললেন, “আমি এখনো পারফেক্ট ডাক্তার হইনি মিস নওরিন। এখনো শিখছি তো তাই অন্যদের তুলনায় সময় একটু বেশি লাগে। আপনার অসুবিধা হলে আমি আর আপনাকে দেখবোনা। এখানে আরো অনেক অপশন আছে তাদের মধ্যে কাউকে এটেন্ড করতে বলে দিবো।”
আপু বিব্রত গলায় বললেন, “স্যার কিছু মনে করবেন না, ও একটু বেশি দুষ্ট। কখন কাকে কী বলতে হবে এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। এই বেয়াদব স্যরি বল উনাকে।”(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি চেহারা হাড়ির মতো করে স্যরি বললাম। উনি এই প্রথম আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তাকানোর সময় কতটুকু হবে? ২/৩মিনিট কিংবা তার চেয়ে কম। কিন্তু আমার মনে হলো সে এইটুকু সময়ে আমার চেহারা সম্পূর্ণ পড়েছে; একবার ও চোখের পলক ফেলেনি। পরক্ষনেই দৃষ্টি নামিয়ে বললেন, “ঘনঘন অসুস্থ হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। তার উপর চেহারা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। অ্যানিমিয়া আছে কিনা টেস্ট করতে হবে। আমি কিছু ব্লাড টেস্ট দিচ্ছি দ্রুত করিয়ে দেখাবেন। এতো অল্প বয়সে ইমিউনিটি উইক হলে তো চলবে না।”
আপু,”হবেই তো, খাওয়া নিয়ে যা নাটক করে ও! ফুপ্পীকে জ্বালিয়ে মারে বলতে পারেন এটা খাবেনা ওটা খাবেনা। তার উপর কেউ জোর করে কিছু খাওয়ালে বমি করে ভাসাবে….”
মেডিক্যাল থেকে বেরিয়ে আমি গজগজ করে বললাম, “তুমি উনাকে এসব বলতে গেলে কেন!”
“ডাক্তারকে বলবো না তো কাকে বলবো! তোর ফুড হিস্ট্রি না জানলে ট্রিটমেন্ট করবে কীভাবে?”
“তোমাদের সবার এই এক বদঅভ্যাস, বিয়ে বাড়ি হোক কী মরা বাড়ি আমার খাওয়ার এই টপিক তোমাদের তুলতেই হয়।”
“কী করবো এরকম এক পিছ ই আছে আমাদের বংশে।”
আমি গাল ফুলিয়ে রিকশায় বসলাম।
।
“যা ভেবেছিলাম তাই, আপনার অ্যানিমিয়া আছে। খাওয়া দাওয়ায় মনোযোগী হন। আমি যেসব মেডিসিন দিচ্ছি ফুল কোর্স শেষ করবেন। আর সুষম খাবার খাবেন।”
“আচ্ছা ডাক্তার সাহেব আপনার বেডরুমে কী কঙ্কাল আছে?”
“স্যরি?”
“না মানে ছোটবেলায় একটা নাটকে দেখেছিলাম যারা ডাক্তারি পড়ে তাদের রুমে কঙ্কাল ঝোলানো থাকে। আপনার কাছেও তেমন আছে কি না জানার কৌতুহল হলো এই আর কি!”
“এখন সেটার আর প্রয়োজনীয়তা নেই তাই রাখা হয়না।”
“সব মুখস্থ বলে নাকি ওটা দেখলে ভুতের মতো লাগে তাই?”
“জীবন্ত মানুষের চেয়ে বড় ভুত আর আছে? তাছাড়া ওটাতো সামান্য মডেল ভয় পাওয়ার কী আছে! কেন আপনি ভয় পান নাকি?”
“আরেহ না আমি কী আর বাচ্চা নাকি যে ভয় পাবো।”
ডাক্তার সাহেব আড়চোখে আমার দিকে চেয়ে লেখা শেষ করে বললেন, “আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না সত্যি বলছেন। শুনুন এই মেডিক্যালেও কিন্তু ভুত নিয়ে কম গল্প নেই। একদিন সময় করে আসবেন আয়ার কাছে গল্প শুনতে। আমাকে তো একবার বলেছিল এই রুমেও নাকি….”
“ইয়া আল্লাহ দেখেছেন কাণ্ড, আম্মু বলেছিল দ্রুত বাসায় ফিরতে। আমি উঠি বরং। ভালো থাকবেন আস্সালামু আলাইকুম।”
আমি দৌড়ে কোনোরকম বেরিয়ে গেলাম। পেছন ফিরে দেখি উনার ঠোঁটের কোণে হাসির রেশ।
সত্যি বলতে আমি ভুত ভীষণ ভয় পাই। আর ঐ কঙ্কাল আমার সবচেয়ে বড় শত্রু। আমি ডাক্তার বিয়ে করতে ভয় পাই শুধুমাত্র এই কঙ্কাল থাকবে বলে। যাক উনার রুমে কঙ্কাল নেই জেনেই আরাম লাগছে। কিন্তু লোকটা দেখতে ভদ্র হলেও ভীষণ চতুর। কিভাবে ভুতের গল্প বলতে আরম্ভ করে দিলো!
“নওরিন সিরিয়াসলি বেইব! তুই ডাক্তারের প্রেমে পড়েছিস? তাইতো বলি এতো ঘনঘন মেডিকেল যাওয়া হয় কেন!”
আমি মুন্নির মুখ চেপে বললাম, “তুই পাগল? এরকম চিৎকার করছিস কেন আম্মু শুনে ফেলবে তো।”
মুন্নি হাত সরিয়ে ফিসফিস করে বললো, “দোস্ত আমার বিশ্বাস হচ্ছে না রে। তুই কোনো ছেলের প্রেমে পড়তে পারিস এটা আমি কল্পনা ও করতে পারছিনা…”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, “কি জঘন্য থট তোর! আমাকে তোর মেয়ে মনে হয় না?”
“তা বলিনি তুই মেয়ে এতে সন্দেহ নাই, তবে তোকে আমি এই পর্যন্ত কোনো ছেলের দিকে মনোযোগী হতে দেখিনি তাই অবাক হয়েছি আর কী।”
“আমার শখের কোনো কিছু ভালো পড়েনা, তাই এটা নিয়ে ও কনফিউজড আমি।”
“তা যা বলেছিস, তুই কোনো কিছু তে আগ্রহী হলেই বুঝে নিতে হবে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।”
“তুই আমার বেস্টি হয়ে এভাবে বলতে পারলি! কোথায় মোটিভেট করবি এবার ভুল নাও হতে পারে তা না…”
মুন্নি কুড়মুড় করে চিপস চিবুতে চিবুতে বলল, “তোর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ সেই পেন্ডাকাল থেকে। তোর নাড়ি নক্ষত্র চিনি বলেই এই কথা বললাম। যাই হোক আবার কোনো বাঁশ খাওয়ার আগে সরে পড়। এতো দিন তাও বেঁচে গেছিলি মনের লেনদেন ছিল না। প্রেমের যন্ত্রণা অন্যসব যন্ত্রণা কে ছাপিয়ে যায়। দেখিস না এর বিরহে মানুষ মরতেও দ্বিধা করে না।”
“তুই আমার প্রেম শুরু হবার আগেই শেষ করে দিচ্ছিস। এমনিতেই লো কনফিডেন্ট হয়ে আছি, এরকম বললে তো আর এগোতে পারবোনা।”
“দেখ যা হবার তা হবেই, কেউ সেটা বদলাতে পারবেনা। তোর মন ভাঙ্গার থাকলে ভাঙবেই। আর জোড়ার থাকলেও জুড়বে। আমি শুধু সাবধান করছি এমনভাবে ডুবিস না যেন উঠার পথ না থাকে..”
“প্যারাডক্সিক কথাবার্তা। এটা তোর সম্মতি নাকি বাতিল বুঝতে পারতেছি না।”
মুন্নি ডাইনির মতো হাসতে লাগলো।
এরপর আমি কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম, যত যাই হোক চমেক এর গেইট আর মারাচ্ছি না। হতে পারে সেখানে প্রায়ই যাচ্ছি বলেই
উনার প্রতি সাময়িক ভালোলাগা কাজ করছে যাকে আমি ভালোবাসা বলে ভুল ভাবছি। যদি এটা সাময়িক মোহ হয় তবে খুব দ্রুত মন বদলে যাবে। তাই দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ হওয়া অতীব জরুরি। এভাবে প্রায় ৩মাস কেটে গেছে। এর মধ্যে আমার ফোর্থ সেমিস্টার শেষ হলো। বাসা থেকে বলা হলো বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস হতে। অর্থাৎ বাসার কাজকর্মে পারদর্শী হবার প্রচেষ্টা চালাতে। এমনিতে আমি একদম অকর্মা না, রান্নাবান্না মোটামুটি পারি। কিন্তু কেন জানি কেউ সেটা খেয়ে হজম করতে পারেনা। মায়ের মতোই তেল মশলা দেই তবুও নাকি মজা হয়না। আচ্ছা আপনারাই বলুন রান্না কঠিন কী? সবতো ঘুরেফিরে একই, তেলে পেঁয়াজ দাও, মশলাপাতি দিয়ে কিছুক্ষণ কষাও এরপর বাকি উপাদান দিয়ে ঢাকা দাও। হলো তো রান্না তাই না? কিন্তু না রান্না নাকি আর্ট এটা সবার কম্ম নয়। যাক আমার রান্না নিয়ে আমার ঘরের মানুষের ই কমপ্লেইনের শেষ নেই শ্বশুরবাড়িতে কী হাল হবে গেস করাই যায়। তাই আব্বুর কড়া নির্দেশে আমার রান্না শেখার যুদ্ধ শুরু হলো। জীবন বড়ই কষ্টের….
রুমে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা পড়ছিলাম মনে মনে ভাবছিলাম এই লাবণ্যর মতো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নারী হতে হবে আমাকে। ঠিক তখনই ফোনে ঘর কাঁপানো রিংটোন বেজে উঠলো। প্রতিবার নিজের রিংটোন শুনে মিনি হার্টএট্যাক করা আমি ধাতস্থ হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ভীষণ চমকে গেলাম। এ আর কেউ নয় স্বয়ং ডাক্তার সাহেব কল করেছেন, কী অবাক কান্ড!!
“হ্যালো মিস নওরিন?”
“জ্বি আমিই।”
“বেঁচে আছেন তাহলে?”
“অতো সিরিয়াস অসুখও ছিল না যে মরে গেছি ভাববেন।”
“একদম নিখোঁজ হয়ে গেলে এটা ভাবা অস্বাভাবিক না। যদিও ডাক্তারদের চিকিৎসা নেয়ার পর পেশেন্টরা বেশিরভাগ ই নিখোঁজ হয়ে যায়…. তবে এটাও স্বস্তির মেডিকেলে আসার প্রয়োজন পড়ছেনা।”
“ভালো আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো ই। আপনি ভালো তো?”
“হ্যাঁ”
“আপনাকে বলেছিলাম কোর্স শেষ করে দেখা করতে। আপনি তো আর এলেন না।”
“যাবো যাবো ভাবছি কিন্তু সময় হয়ে উঠছে না আসলে।”(ডাহা মিথ্যা কথা আমি পুরাই বেকার আপাতত)
“চেকাপ করে পরিস্থিতি দেখা ভালো। অ্যানিমিয়া এতোটাও ফেলনা নয়। অনেক ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন না বাড়লে সমস্যা হয়ে যায়।”
“আপনার এই অ্যানিমিয়ার চক্করে আমাকে কী পরিমাণ ঝাক্কি পোহাতে হচ্ছে ইউ কান্ট ইমাজিন।আম্মু সারাক্ষণ ইউটিউব ঘেঁটে ঘেঁটে এমন সব আইটেম বানাচ্ছে যা খেলে নাকি রক্ত বাড়বে। তার উপর ঐ ভয়ঙ্কর শিং মাছ রোজ খেতে হচ্ছে!”
“আপনার রোজ নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করা উচিত এমন কেয়ারিং পেরেন্ট পেয়েছেন। আমার মতো ব্যাচেলর থাকলে বুঝতেন বাসার রান্না কী অমৃত! আচ্ছা মিস নওরিন রাখছি, একজন পেশেন্ট এসেছেন।”
“আচ্ছা আস্সালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
আমি ফোন রেখে ভাবছি একবার কী পরীক্ষা করে দেখবো আমার রান্না সত্যিই অখাদ্য কি না?
চলবে নাকি?