#টিউলিপ (#পর্ব_২)
#আরশিয়া_জান্নাত
সিরিয়াল নাম্বার নিয়ে করিডরে বসে আছি। আজকে পেশেন্ট বোধহয় অন্যদিনের তুলনায় বেশি। কে জানে শেষ পর্যন্ত তিনি থাকবেন নাকি আবার ব্রেকে যাবেন অন্য ডাক্তার রেখে। যা গরম পড়ছে আজকাল মাথাটা কেমন ক্ষণে ক্ষণে চক্কর দিয়ে উঠে। হিট ওয়েবের কারণে এমন হচ্ছে নাকি অন্য কোনো সমস্যা কে জানে। আজকে এমন ভীড় হবে জানলে আমি কখনোই আসতাম না। মাথার উপর যে ফ্যান চলছে তা চলার চেয়ে না চলাই ভালো ছিল, একেতো অনেক উপরে তার উপর হাওয়া নেই বললেই চলে। অগত্যা আমি খোলামেলা বাতাস আছে এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। সত্যি বলতে মেডিক্যাল আমার একদম ভালো লাগেনা। এখানে সবাই খুব অসুস্থ হয়। রুগ্ন মানুষ দেখতে কার ভালো লাগে বলেন? এখানে সবার কপালে চিন্তার রেখা, চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা। এর মধ্যেও গল্পের আসর বসে, একে অন্যের সমস্যা বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পরম আপনজন হয়ে উঠে। চেনা নাই জানা নেই এমন মানুষকেও কত সহজে সুখদুঃখের গল্প বলে ফেলে। এটাই এশিয়ান মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। আমিও তাদের গল্প শুনি। ইচ্ছে করে শুনি তা না। আশেপাশে থেকে না শুনে উপায় কী?
আমার সিরিয়াল আসলো ঘন্টাখানেক পর। কেবিনে ঢুকে সালাম দিতেই উনি চশমার ফাঁকে এক পলক দেখলেন। ভাবখানা এমন যেন আমাকে তিনি চেনেন ই না। আমি সালাম দিয়ে বসার পর বললেন, “গরমের সময় বাসায় থাকার চেষ্টা করবেন। এ কয়েকদিন হিট ওয়েব চলছে জানেন না?”
“ওমা আপনিই তো বললেন আসতে! এখন আবার আপনিই বকা দিচ্ছেন। আশ্চর্য!”
“আসতে বলেছি, তাই বলে দিনক্ষণ তো বলে দিই নি। আপনার আবহাওয়া বুঝে প্ল্যান করা উচিত নয়? এখন এসেছেন আগামী ২দিন মাথা ব্যথায় ভুগবেন, ইদানিং আবার দেখছি অনেকেই গরমে সেন্সলেস হচ্ছে।”
আমি মুখ গোমড়া করে ব্যাগ এগিয়ে বললাম, “আম্মু আপনার জন্য লাঞ্চ পাঠিয়েছে।”
“হঠাৎ লাঞ্চ?”
“উনার ধারণা আমার মতো দস্যি মেয়ের ট্রিটমেন্ট করাতে অনেক এনার্জির প্রয়োজন। তাই আর কি!”
উনি অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে বললেন, “এমন নয়তো আপনি নিজে রান্না করে এনে আন্টির নাম দিচ্ছেন?”
আমি ঘাড় নেড়ে বললাম, মোটেই না। এই গরমে চুলার ধারে দাঁড়িয়ে আমি রান্না করবো মনে হয় আপনার?
“আন্টিকে ধন্যবাদ জানাবেন।”
“আচ্ছা।”
চেকাপ শেষে বের হয়ে মনে মনে বলছি, “ভবিষ্যতে যদি সুযোগ হয় তখন চেখে দেখবেন আমার মায়ের রান্না কত মজা। আজকে আমার রান্না খেয়ে তাকে গালি দিয়েন না প্লিজ! আল্লাহ মাফ করে দিও মিথ্যা বলে আম্মুর নাম বদনাম করছি…”
শাওয়ার নিয়ে বসতেই আম্মুর চেঁচামেচিতে ঘরে টেকা গেল না। কিচেন রুমে উঁকি দিতেই দেখি উনি চিৎকার চেঁচামেচি করে পুরো দুনিয়া এক করছেন। আমি উল্টো পথে নিজের ঘরের দিকে এগোতে নিচ্ছিলাম ওমনি আমার ছোট ভাই নিশান চেঁচিয়ে বলল, “ঐ তো আম্মু তোমার কালপ্রিট এসেছে। দেখো কেমন চোরের মতো পালিয়ে যাচ্ছিল।”
আমি ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আম্মু এসে বেলুনী দিয়ে পিঠে একটা বাড়ি দিয়ে বলল, “তোকে আমি কতবার বলেছি রান্নাঘর যুদ্ধের ময়দান না? এতো বড় ধামড়ি মেয়ে এখনো গুছিয়ে কিছু করতে পারিস না। হলুদ মরিচ লবণ সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করেছিস। সবকিছু নোংরা করে না গুছিয়ে আবার হাওয়া? পেয়েছিস কী তুই আমাকে? আমি তোর বাপের বিয়ে করা বান্ধী? সারাদিন তোদের বাপ মেয়ের নোংরা পরিষ্কার করতে আমি জন্মেছি…..”
আমি পিঠের ব্যথায় কঁকিয়ে বললাম, “আম্মু এতো জোরে কেউ মারে? আমি বড় হয়েছি না? তুমি এখনো আমাকে মারধর করো মানুষ জানলে কী বলবে?”
আম্মু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, “বড় হয়েছিস তুই না? বড় হবার নমুনা তো দেখিনা। কাজকর্ম যতদিন বড়দের মতো না হবে ততদিন এভাবেই মার খাবি আমার হাতে।”
“আমার কোনো দোষ নাই তুমি মশলার ঢাকনা ঠিকমতো লাগাও নাই তাই আমি নিতে গেছি আর হাত থেকে পড়ে গেছে। এটা আমার কী দোষ? তুমি টাইট করে বয়াম লাগাবা না?”
“আমার রান্নাঘর আমি যেমনে খুশি রাখবো, তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে? ”
“শোনো মিসেস জাকিয়া, আজ তোমার শাশুড়ি বেঁচে থাকলে বুঝতে ছেলের বৌ হওয়া এতো সহজ না। নেহাতই আমি তার রিপ্লেসে আছি বলে কত দোষগুণ ছাড় দিলাম, নয়তো….”
“ওরে আমার ভারপ্রাপ্ত শাশুড়ি আম্মা আসেন আপনার সেবাযত্ন করি….”
আম্মু আবার মারতে আসছিল আমি দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে চেঁচিয়ে বললাম, “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন আম্মাজান। অতিরিক্ত রাগ মানুষ কে ধ্বংস করে।”
আম্মু রাগে গজগজ করতে লাগলো। আমি মনের সুখে কানে ইয়ারফোন গুজে শুয়ে পড়লাম। “আচ্ছা ডক্টর সাহেব কী খাবার টা খেয়েছেন? একবার কল করে জিজ্ঞেস করবো? না না না সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলে আম্মুর মতোই রিয়েকশন আসতে পারে, তারচেয়ে ক’দিন যাক এরপর জিজ্ঞেস করবো।”
।
টিউশন থেকে ফিরে দরজার সামনে অপরিচিত জুতো জোড়া দেখে কলিং বেল দিতেই নিশান দরজা খুলে দিলো। আমি ফিসফিস করে বললাম, “কিরে কে এসেছে বাসায়?”
“আমি চিনি না উনাকে। এই প্রথম এসেছে।”
আমি পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে আম্মু দরজা নক করে বলল, “মণি দরজা খোল, কে আসছে দেখে যা।”
“কে আসছে?”
আম্মু রুমে ঢুকে গলা নামিয়ে বলল, “বেয়াদব মেয়ে আমাকে বলোস নাই কেন তুই সেদিন ডাক্তারের জন্য খাবার নিয়ে গেছিলি? আল্লাহ জানে কী অখাদ্য খাওয়াইছোস তুই।”
“তুমি হঠাৎ সেই কথা বলতেছ কেন? কে আসছে?”
“কে আর ডক্টর রায়ান আসছে। পাগল ছেলে সাথে করে কত কী নিয়ে আসছে!”
আমি চোখ বড়বড় করে বললাম, “মানে কী উনি এখানে কিভাবে সম্ভব? বাসার ঠিকানা পাইছে কোত্থেকে? তুমি না চিনে বাসায় ঢুকাইলাই বা কেন? যদি ডাকাত হয়?”
আম্মু আমার মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বলল, “আমার চুল এমনে এমনে পাকছে তো? আমি চিনি না কে ভদ্রলোক আর কে ডাকাত? গতবছর বাণিজ্য মেলা থেকে ১৪০০ টাকা দিয়ে কেনা বক্সগুলো উড়ে উড়ে ডাকাতের কাছে চলে গেছে তাই না?”
“উফফ আম্মু সারাক্ষণ দাম শুনাইও না তো। আমি দেখি আগে।”
ড্রইং রুমে ঢুকে আমি সত্যি সত্যিই ভীষণ চমকে গেলাম। ডক্টর রায়ান সত্যিই আমাদের বাসায় এসেছেন!
“আপনি এখানে? হোয়াট এ শকিং সারপ্রাইজ!”
আম্মু কনুই দিয়ে গুঁতা দিতেই আমি সোজা হয়ে বললাম, “আস্সালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। স্যরি এরকম হুট করে না বলে চলে এসেছি। আসলে আপনার বক্সগুলো ফিরিয়ে দিতে এলাম। সত্যি বলতে সেদিনের রান্নাগুলো অনেক মজা হয়েছে। আন্টি আপনার রান্নার হাত মাশাআল্লাহ অনেক ভালো। আমার কলিগরা খেয়ে অনেক প্রশংসা করছিল। তাই ধন্যবাদ দিতে আমি নিজে এসেছি। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।”
আম্মু গদগদ হয়ে বললো, “যাক বাবা মানসম্মান বেঁচেছে আমার। কিন্তু রান্না আমি করিনি, নওরিন করেছিল। ওর রান্না খেতে পেরেছো এটাই স্বস্তির। আমি আরো ভাবছিলাম যাকে দিয়েছে তার আবার মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া লাগলো কি না।”
“আম্মুউউউ…”
“কী আম্মু সত্যিই তো বলেছি।”
উনি বিব্রত গলায় বললেন, “আচ্ছা আমি উঠি তাহলে।”
আম্মু, “না না এখনি ছাড়ছি না। আজকে খাওয়া দাওয়া করেই যাবে। আমার মেয়ে কী খাইয়েছে বলা যাচ্ছে না।”
“আন্টি আপনি ভুল ভাবছেন, আমি না জেনেই কিন্তু কমপ্লিমেন্ট দিয়েছিলাম। উনার রান্না অতোটাও খারাপ ছিল না। সত্যি বলছি।”
“আচ্ছা মানলাম সত্যি বলছো। তাই বলে কী আমার রান্না খাবেনা? লজিং এ খাওয়ার চেয়ে মন্দ হবেনা নিশ্চয়ই?”
“আপনি কষ্ট করবেন না প্লিজ। আমাদের মিল করা আছে, পরে নয়তো সেটা ওয়েস্ট যাবে। আমি অন্য কোনো একদিন এসে খাবো। আজ না।”
আমি বললাম, “আম্মু উনাকে অস্বস্তিতে ফেলো না তো। চাইছে না যখন বাদ দাও না। তুমি এরকম ধরে বেঁধে খাওয়ালে ভয়ে আর কখনো আসবেন না।”
“আমি আদর করে বলেছি, জোরাজুরি করার উদ্দেশ্যে নয়। আমার বড় ছেলে ঢাকায় থাকে তো, প্রায়ই বলে ওখানে খাওয়ায় অনেক সমস্যা। তাই যারা এরকম থাকে তাদের প্রতি আমার সফট কর্ণার কাজ করে। তুমি মাইন্ড করোনা বাবা। আমি স্নেহের বশবর্তী হয়ে জোর করেছি। তোমার অসুবিধে হলে থাক।”
উনি হয়তো আশা করেননি পরিস্থিতি এমন হয়ে যাবে তাই বোকার মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি উনার মনের অবস্থা বুঝে বললাম, “আসুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”
আম্মুকে সালাম জানিয়ে উনি বাসা থেকে বের হলেন। মোড় পর্যন্ত কোনো রিকশা বা গাড়ি এখানে পাওয়া যাবেনা, আমি উনার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললাম, “আম্মু একটু বেশিই আবেগপ্রবণ। ভাইয়া বাইরে থাকে তো তাই ওর বয়সী কাউকে পেলেই একটু বেশি খাতিরযত্ন করতে চায়। নিশানের স্যারকেও প্রায়ই জোর করে খাওয়াবে। উনার ধারণা ছেলেরা বাইরে থাকে মানেই খাওয়ার খুব কষ্টে ভুগে।”
“উনার ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল না।”
“আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনি আমার ঠিকানা পেলেন কিভাবে? আমি তো কখনো বলিনি আমার বাসা কোথায়?”
উনি হঠাৎ কাশতে শুরু করলেন। আমি উনার দিকে চোখ সরু করে চেয়ে রইলাম। উনি টপিক পাল্টে বললেন, “আপনি সেদিন মিথ্যে বলেছিলেন কেন?”
“আমি সম্পূর্ণ মিথ্যে কিন্তু বলিনি, সেদিনের কনভারসেশন শুনলে আম্মু নিজেই এই কাজটা করতো। আমি জাস্ট উনার রিপ্লেসমেন্টে নিজে রান্না করে দিয়েছি। মায়ের কাজ মেয়ে করে দিলে এটা আর মিথ্যা হয়না।”
“যতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেন না কেন সত্য তো বদলাবে না।”
“ফ্র্যাঙ্কলি বলুন তো খাবার কী সত্যিই ভালো হয়েছিল নাকি আম্মুর মন রাখতে ঐসব বলেছিলেন?”
“আমি মিথ্যা বলিনা মিস নওরিন!”
“আচ্ছা বিশ্বাস করলাম…”
“ধন্যবাদ সবকিছুর জন্য। ভালো থাকবেন কেমন?”
আমি হাত নেড়ে বললাম, “সাবধানে যাবেন। আল্লাহ হাফেজ..”
উনি সামনে এগিয়ে পেছন ফিরে তাকালো। মুচকি হাসি দিয়ে হাত নেড়ে চলে গেল। আমি তখন খুশিতে আকাশে উড়ছি, রঙ বেরঙের বেলুন আমার সাথেই চারপাশে উড়ছে যেন। তবে কী ডক্টর রায়ানের মনেও কুছ কুছ হোতা হ্যায়? ওয়েএএএ….”
।
“দোস্ত আর কয়বার তুই একই কাহিনী রিপিট করবি? এবার তো থাম।”
“তুই পাত্তা দিচ্ছোস না কেন? তোর কী মনে হয় না উনি আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড? নয়তো বল উনি কেন আমাকে নিজে কল করবে, আমার বাসায় আসবে? এরকম কেউ করে যদি না আগ্রহী হয়?”
“ব্যাপারটা আসলেই সন্দেহজনক। উনি কী তবে তোকে স্টক করছে? এমন নয়তো উনি কোনো স্পাই ঠিক করে রেখেছে যে তোর ইনফরমেশন কালেক্ট করে দেয়? নয়তো তুইই বল তোর এড্রেস পেল কীভাবে? তুই যতোটা এক্সাইটেড হচ্ছিস আমি ততোই শঙ্কিত হচ্ছি….”
“তুই সাইকো থ্রিলার দেখে দেখে মাথা নষ্ট করে ফেলেছিস। পজেটিভ থট তোর আর আসেনা। আরেহ ভাই উনি কেন আমাকে স্টক করতে যাবে? না আমি কোটিপতি বাবার মেয়ে, না আমি কোনো সেলিব্রিটি।”
“তোকে কে বলছে ভাই সাইকোরা কোটিপতি বা সেলিব্রিটি খুঁজে? ওদের একেকজনের একেক মোটিভ থাকে। যাই হোক তোর হাওয়ায় উড়তে ইচ্ছে করছে উড়, আমি দেখি উনার সম্পর্কে ইনফরমেশন কালেক্ট করা যায় কি না। আমি চাই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কোনো ভুল আবেগে জড়িয়ে পড়ুক।”
মুন্নি বরাবরই এমন। ও কোনোকিছু সোজাসুজি মানতে চায়না। আমার ধারণা ও ডিটেকটিভ হলে খুব শাইন করবে। ও এমন সব সিরিজ দেখে যা দেখা তো দূর সারসংক্ষেপ শোনার সাহস ও আমার নেই। এদিকে আমি রোমকম দেখা পাবলিক, তাই আমাদের দুজনের চিন্তাভাবনায় আকাশ পাতাল তফাৎ। তবুও কিভাবে যে এতো গুলো বছর আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে আছি এটা আশ্চর্যজনক বটে!
ওর কথা আমার উপর বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনা তা নয়। আমি ওর সতর্কতাকে এপ্রিশিয়েট করি। এখনের যুগে আসলেই কিছু সহজ সরল ইকু্য়েশনে চলেনা।
ক্লাস শেষে আমরা দুই বান্ধবী ঠিক করলাম আজকে গাড়িতে করে বাসায় যাবোনা, যতক্ষণ পারি হাঁটবো। আমাদের কলেজের লোকেশন হাঁটার জন্য সেরা। যেই ভাবা সেই কাজ আমরা প্রথমে চকবাজার গেলাম সেখানে ভেলপুরি আর মোমো খেয়ে জামাল খান গিয়ে মালাই চা খেলাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে ইস্পাহানী মোড় দিয়ে বের হয়ে দুজনের পায়ের অবস্থা শেষ। অতঃপর রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরলাম। ওর বাসা আর আমার বাসা একই এলাকায় হওয়ায় দুজনে একসাথে ই আসা যাওয়া করি। দিনটা অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশিই সুন্দর কেটেছে।
আকাশে আজ দশমির চাঁদ। চাঁদের আলো স্পষ্ট নয়, কেমন একটা ঝাপসা আবরণে ঢাকা আলোর মতো দেখাচ্ছে। আমি চাতকের ন্যায় বসে আছি এক পশলা বৃষ্টির জন্য। গরমের তেজ আর নিতে পারছিনা। তার উপর লোডশেডিং আর মশার উপদ্রব তো আছেই। এখনো যে মনের সুখে বসে চাঁদ দেখছি তা নয়। কারেন্ট নেই প্রায় দেড় ঘন্টা হতে চলেছে। তাই ছাদে কয়েল জ্বালিয়ে বসে আছি। কয়েলের ধোঁয়া মশা তাড়াতে সক্ষম না হলেও আমার চোখ জ্বালাপোড়া করাতে সক্ষম ঠিকই হয়েছে। তাই দূরে সরে বসতেই প্রেমিকার ন্যায় কানের কাছে নাকিকন্ঠে গান শোনাতে মশারাণীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ যেন প্রতিযোগিতা চলছে কার গলা কত সুমধুর তা প্রমাণ করার। এ সভায় নিজেকে কেন জানি সম্রাট আকবর মনে হচ্ছে। মশার সাইজ বড় হলে হয়তো বোঝা যেত এখানে নৃত্যশিল্পী ও আছে। যারা সম্রাটের সামনে নাচগান পরিবেশন করে মনোরঞ্জন করার প্রচেষ্টা করছে, সম্রাট খুশি হলে ছুড়ে দিবে কয়েক ফোঁটা রক্ত, ওরাও মনের সুখে পান করবে অমৃত সুধা। আহা….
আফসোস এটাই ওরা আমার পুরস্কারের অপেক্ষা করছেনা। বরং যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে খাচ্ছে। আমিও তাদের মারার নাম করে এলোপাথাড়ি নিজেকেই চড় থাপ্পড় মেরে যাচ্ছি। ব্যথায় আবার ভেতর থেকে রাজীব আঙ্কেলের সত্ত্বা বলে উঠছে, “শান্তি নাই রে শান্তি নাই, কবরে গেলেও শান্তি নাই!”
হাহ!!
চলবে,