কাঞ্চনবেলা পর্ব-১৬

0
12

#কাঞ্চনবেলা
#তোনিমা_খান
#পর্বঃ১৬

মেয়ের চোখে ভরপুর দৃঢ়তায় নুহাশ মাহমুদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। যেই মেয়ে আগে কখনো উঁচু গলায় কথা বলতো না, ইচ্ছা অনিচ্ছার জাহির করতো না—আজ তার কণ্ঠে কতো দৃঢ়তা। সে নিরবে ভাত মেখে পরের লোকমা মেয়ের মুখে তুলে দিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
–“স্বরূপ ইব্রাহীম আপনার জন্য উপযুক্ত সুপাত্র নয়, আম্মা।”
–“স্বরূপ ইব্রাহীম কোন দিক থেকে অনুপযুক্ত?”, বিলম্বহীন মেয়ের শক্ত কণ্ঠে করা প্রশ্নে, নুহাশ মাহমুদ অবিচলিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। বেশ গাম্ভীর্য আর নম্রতার সাথে বলতে লাগলো,
–“আম্মা জানেন, আমি সবসময় আল্লাহর কাছে একটা মেয়ে চাইতাম। ঠিক আপনার মায়ের মতো। আল্লাহ তায়ালা আমার সেই ইচ্ছা পূরণ করে। আপনার দুই ভাইয়ের পর যখন আপনি বাবার কোলজুড়ে আসেন, তখন আমার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের তৃষ্ণা নিবারণ হয়, আপনার মায়ের অবিকল আপনাকে দেখে। সেইদিন থেকে আপনাকে এই দুই হাতের তালুর মাঝে আগলে বড়ো করেছি। কখনো কোন ঝড়ঝাপটা আপনার গায়ে লাগতে দেইনি। প্রত্যেক বাবার ইচ্ছে থাকে সে তার সন্তানটিকে সর্বাবস্থায় নিশ্চিন্ত, সুখী দেখবে। আমারো ব্যতিক্রম কোন ইচ্ছে নেই আম্মা। আমিও সর্বাবস্থায় চাই আপনি আপনার বাবার কাছে যেমন আছেন, আপনার জীবনসঙ্গীর কাছেও ঠিক তেমন যত্ন আর স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবেন। কোন বাবা চাইবে না তার যত্নে গড়া সন্তানটিকে এমন একজনের কাছে দিতে যেখানে তাকে তিনবেলা খাবার পেতেই কষ্ট হয়ে যাবে।”

এতোটুকু বলে নুহাশ মাহমুদ মৃদু নিঃশ্বাস ফেললেন। পরবর্তী লোকমা মেয়ের মুখে তুলে দিয়ে শান্ত স্বরে বলতে লাগলো,
–“আপনি এই যে, যেই চালের ভাত খাচ্ছেন তার এক কিলোগ্রামের দাম কতো জানেন, আম্মা? আমি বলছি, এই এক কিলোগ্রাম চালের দাম হলো নব্বই টাকা। আমি আপনাকে এই কথা কেনো বলছি বলুন তো? ধরুন বাবা নেই আপনার জীবনে। আপনি এই নব্বই টাকা কি করে ইনকাম করবেন? কোন কি উপায় আছে আপনার কাছে? এক কিলোগ্রাম চাল কিভাবে জোগাড় করবেন তার উপায় ই আপনার কাছে নেই। এই পর্যায়ে এসে একজন বাবার চিন্তা ঠিক কি হবে বলুন তো? তার মেয়েটাকে এমন একজনের হাতে তুলে দেয়া, যার কাছে তার মেয়েকে কখনো এক কিলো চালের দাম কতো! তা নিয়ে যেনো না চিন্তা করতে হয়। আপনি জানেন না বাইরের দুনিয়াটা কতোটা কঠিন। আমি আপনাকে কখনো জানতে দেইনি, আর না দেবো। সেখানে , স্বরূপ ইব্রাহীম এই কঠিন দুনিয়ায় দায়িত্বের সাথে লড়া এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাথার উপর থাকা বিশাল লোনের বোঝা সামলে বিধবা বোন, ভাগ্নে, বৃদ্ধ মায়ের মুখে তিনবেলা খাবার তুলতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। এখন আমি আপনাকে এমন একজনের কাছে কি করে তুলে দেবো বলুন তো? বাবা যেখানে তিনবেলা ভরপুর শাহী ভোজের সাথে জীবনযাপন করি, সেখানে আপনাকে তিনবেলা খাবার পেতেই শঙ্কায় থাকতে হবে।
সঠিক ভালোর বুঝ আপনার এখনো হয়নি, আম্মা। আপনি আবেগ দিয়ে দুনিয়া দেখেন আর বাবা পরিস্থিতি আর বাস্তবতা বিবেচনা করে। বাবা আজ পর্যন্ত আপনার জন্য যেটা করেছি তা আপনার ভালোর জন্য। তাই বাবা যখন বলছি সে আপনার জন্য উপযুক্ত নয় তবে এটা মেনে নিন না। তার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন, বাবার পছন্দে নিজের সুখ খুঁজে নিন। দিনশেষে আপনি ভালো থাকবেন।”

নৈরা পিটপিট করে তাকিয়ে রইল বাবার দিকে। এই মুহূর্তে নিজেকে আরেকবার বোকা মনে হলো। এই যে সে বলার আগেই বাবা তার জীবনের সাথে জড়িত সবকিছু কতোটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জেনে গিয়েছে। সে অশ্রুভরা নয়নে তাকিয়ে শুধায়,
–“বাবা, সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য মানে কি শুধু টাকা আর তিনবেলা ভালো ভালো খাবার খাওয়া? টাকা আর ভালো খাওয়াপরা কি করে একজনের সুখের করণ হতে পারে? মানুষ সুখী তো তখন হয় যখন সে তার জীবনসঙ্গী দ্বারা পরিপূর্ণ হয়। এমন একজন জীবনসঙ্গী যে আমায় সম্মান করবে, সর্বাবস্থায় যার কাছে আমি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবো, যার কাছে আমার সব অযাচিত আবদার গুলো সর্বদা গ্রহণযোগ্যতা পাবে—কখনো অবহেলিত হবে না। যার সঙ্গ পেলে প্রশান্তি পাওয়া যায়, নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ, ভাগ্যবতী মনে হয়। এমন একজন জীবনসঙ্গী যার সঙ্গ পেলে দারিদ্র্যতা কেনো পুরো দুনিয়ার বিরুদ্ধে হাসি হাসি লড়া যায়। তবে এই ঠুনকো এক বিষয় নিয়ে আমার জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিটাকে তুমি অযোগ্য কি করে বলে দিলে?”

–“আপনি আবারো আবেগ দিয়ে জীবনকে দেখছেন আম্মা। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না কতোবার বোঝাবো আপনাকে।”, নুহাশ মাহমুদের কণ্ঠে বেশ বিতৃষ্ণা প্রকাশ পেলো। নৈরা’র চোখ থেকে দৃঢ়তা সরে যায়, ভর করে অনুনয়। বাবার হাতটা আঁকড়ে ধরে অনুনয় করে নৈরা বলে,
–“আমার পাশে শুধু সে হলেই হবে বাবা। সে আমার পাশে থাকলে আমি সবকিছুর মোকাবিলা করে নিতে পারবো। আমি এই জীবন থেকে কিছু চাই না তার সঙ্গ ব্যতীত। একটা ছোট্ট ঘর, যেখানে সে থাকবে আর তার ভরসার হাত আমার মাথার উপর থাকবে, ব্যস এতোটুকুই। তাতে দিনশেষে আমার ভাগ্যে যতোটুকু জুটবে আমি তাতেই খুলি। এতোটুকুই আমার জন্য স্বস্তি, প্রশান্তি। টাকা পয়সা, ভালো খাবার আমার কিচ্ছু চাই না, শুধু সে হলেই হবে‌। প্লিজ বাবা!”

নুহাশ মাহমুদের একটুও করুণা আসলো না মেয়ের অনুনয়ে। বরং হাস্যকর এক বোকা আবেগী মেয়ের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠলো তার অক্ষিপটে। মুখে বলা যায় টাকা পয়সা , খিদের যন্ত্রণা কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবতা যে তার বোকা মেয়ের ধারণাতীত। সে কিয়ৎকাল বাদ হাসি থামিয়ে নেন। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–“আপনি যেই স্বস্তি, প্রশান্তির কথা বলছেন তাও একদিন আপনার উপর ভারী পড়বে, আম্মা। কারণ আপনি যে এই উদাসীনতা আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধের সাথে জীবনযাপন করতে পারছেন, এটাও আপনার বাবার অর্থবিত্তের কারণেই। পেটে ক্ষুধা নেই বলেই আপনি নিজের চাহিদার প্রতি উদাসীনতা দেখাতে পারছেন। আপনার কাছে অঢেল টাকা রয়েছে দেখে আপনি টাকার মূল্য বুঝতে পারছেন না। কিন্তু আপনার স্বামীর যখন টাকা না থাকবে, তখন আপনার এই সিদেসাধা জীবনযাপন ও কষ্টকর হয়ে উঠবে। এটাও আপনি মর্জিমতো উপভোগ করতে পারবে না কারণ আপনাকে ক্ষুধার জ্বালা তাড়া করে বেড়াবে। তাই এইসব আবেগকে সামলান আম্মা। বাবা যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক করেছি, তার সাথে থাকলে অন্তত আপনি নিশ্চিন্তে উদাসীন জীবনযাপন টুকু করতে পারবেন।”

নৈরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো বাবার কঠোর কণ্ঠে। কান্নাভরা কণ্ঠে বলল,
–“আমি চাই না নিশ্চিন্তের এই উদাসীন জীবন, একদমই চাই না। আমি শুধু তাকে চাই। আমি তার সাথে তার কঠিন মুহুর্তগুলোতে তার পাশে থাকতে চাই। তার প্রতিটা কঠিন মুহুর্তে তার শক্তি হতে চাই। প্লিজ বাবা, স্বরূপ ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সামনে আমি দাঁড়াতে পারবো না।”

নুহাশ মাহমুদ ততক্ষণে খালি প্লেটে হাত ধুয়ে নিয়েছেন। প্লেট রেখে মেয়ের অশ্রুভরা চোখের দিকে দৃষ্টি তাক করে শানিত কণ্ঠে শুধায়,
–“স্বরূপ কি আপনাকে তার সামনে দাঁড়ানোর অধিকার দিয়েছে?”

আচমকা বাবার এহেন প্রশ্নে নৈরার, এতোক্ষণের সকল দৃঢ়তা ফিকে পড়লো। তার মনে হলো যেই খুঁটি আঁকড়ে ধরার জন্য সে এতক্ষন দৃঢ়তার সাথে বাকবিতন্ডা করে যাচ্ছে সেই খুঁটির ঘাঁটি ই নড়বড়ে। হ্যাঁ, বাবা তো ভুল কিছু বলেনি। মানুষটা তো তাকে আজ পর্যন্ত ভালোবাসার অধিকার ই দেইনি। সে তো নিজের মতো নিজের সবটা দিয়ে মনে প্রাণে অনুমতি ব্যতীত কাউকে ভালোবেসে যাচ্ছে। তবে সে কিসের ভিত্তিতে লড়ছে? নৈরা কথার জোর হারিয়ে ফেললো। নুহাশ মাহমুদ হাসলেন মেয়ের নিভে যাওয়া আদল দেখে। সে জানে সে সঠিক পথে আগাচ্ছে। সে মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে নম্র স্বরে বলল,
–“আপনি বড্ড সরল সোজা আম্মা। অনিশ্চিত, ভিত্তিহীন এক জীবনের জন্য বাবার সাথে লড়ে যাচ্ছেন। তবে আপনার এই সরল ব্যক্তিত্বকে ধরে রাখার জন্য বাবা সর্বদা আপনার উপর ঢাল হয়ে আছি, আম্মা। আপনি যতোবার ভুল পথে পা বাড়াবেন বাবা পথপ্রদর্শক হবো। শুধু বাবার উপর একটু ভরসা রাখবেন আম্মা। বাবা কখনো আপনার ক্ষতি চাই না। আগামীকালকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিন। বাবার অসম্মান করবেন না দয়াকরে। এটা ঠান্ডার ওষুধ, খেয়ে নিন। এখানে কোন ঘুমের ওষুধ নেই। ঠান্ডার ওষুধে একটু ঘুম আসবে হয়তো। বাবা একটু আসছি আম্মা। একটু পর আবার আসবো।”

মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নুহাশ মাহমুদ বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। আর নড়বড়ে খুঁটি আঁকড়ে ধরার ভিত্তিহীন লড়াইয়ে হেরে যাওয়া মেয়েটি, নিরূপায়কে সঙ্গী করে স্থবির হয়ে বসে রইল। সত্যিই লোকটা দিনশেষে তাকে এই অধিকার দেয়নি।

হাঁটু আঁকড়ে ধরে বসে থাকা নৈরা আরেকবার তাকালো ফোনটির দিকে। কম্পিত হাতে ছুঁয়ে দেখলো ফোনটি, কল দিলো কাঙ্খিত নাম্বারটিতে। আগের মতোই নিরবতা, অবহেলা ছাড়া আর কিছু পেলো না। চেপে রাখা কান্নারা গতি হারাতে চায়। সে ফোন দিতে লাগলো অনবরত। যতোবার দিলে ধৈর্য্য হারা হয়। ফোন দিতে দিতে লাগাতার ব্যর্থতাকেই পুঁজি করা নৈরা একটা সময় চেপে রাখা কান্না অবমুক্ত করে দিলো। হাতের মুঠোর থাকা ফোনটিকে সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁড়ে মেরে, চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। কান্নাভরা কণ্ঠে অনুনয় করে বলল,
–“একটু ফোনটা ধরুন না স্বরূপ। আপনার বোকা কাঞ্চনবালা, কি করে অন্য পুরুষের সামনে দাঁড়াবে? তার যে সেই সাহস নেই। সে যে সেই কবে থেকে নিজেকে আপনার জন্য তৈরি করে রেখেছে।”

কাঁদতে কাঁদতে নৈরা নিজের করা সদ্য ভুলটি বুঝতে পেরে উন্মাদের মতো ছুটে গেলো ভাঙা ফোনটির দিকে। অস্থির ভাবে ভাঙা ফোনটি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। উন্মাদের মতো অদক্ষ হাতে ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া ফোনটিকে জুড়তে লাগলো। প্রকম্পিত কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
–“ফোনটা তো ভেঙে গেলো। আমি কি করে ফেললাম? স্বরূপ….স্বরূপ’কে ফোন দেবো কি করে আমি?”

নৈরা উন্মাদের মতো ভাঙা ফোনটি জুড়তে লাগলো।
*****
রাতের দ্বিপ্রহর তখন। যেই ঘরটি এই সময়টাতে কিবোর্ড টাইপিং এর মৃদু শব্দদূষণে মেতে থাকতো, আজ সেই ঘরটি একদম নিরব শুনশান। ঠিক ঘরটির মালিকের আড়ম্বরহীন, নির্মোহ, আত্মনির্মিত নিঃস্বার্থ, প্রত্যাশাহীন মনটির ন্যায়। এতো বছরের অভিজ্ঞতায় দিনশেষে স্বরূপ একটা শিক্ষাই গ্রহণ করে তার জন্য স্বপ্ন দেখা বারণ। তাই সে নির্জীবতাকে আঁকড়ে ধরেছে। যেখানে থাকবে না কোন চাওয়া, স্বপ্ন আর না প্রত্যাশা।

এমন ভাবনা ভাবতে ভাবতেই কখন ক্লান্ত দেহটি নিদ্রার সংস্পর্শে এসে মূর্ছে গেলো টেরই পেলোনা স্বরূপ। তার নিদ্রা ভঙ্গ হলো রাতের দ্বিপ্রহরের সেই চরম নিরবতা আর নিস্তব্ধতা এ ভঙ্গ করে। লাগাতার বেজে চলা ফোনের রিংটোনে ঘুমন্ত স্বরূপ নড়েচড়ে উঠলো। বুকের উপর তখন আরামে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে বুব্বো।
সে বুব্বোকে এক হাতে আগলে নিয়ে ফোনটি হাতরে বের করলো। আননোন নাম্বারটির দিকে এক ঝলক ঘুম জড়ানো দৃষ্টি ফেলে কানে ঠেকায়। ভারী কণ্ঠে হ্যালো বললেও অপরপ্রান্ত থেকে কোনরূপ আওয়াজ শোনাগেলো না। স্বরূপ বদ্ধ নেত্রে কপাল কুঁচকে নেয়। বিরক্ত মিশ্রিত কণ্ঠে আবার বলে ওঠে,
–“হ্যালো! কে বলছেন?”

ঠিক তার দুই পল বাদ মৃদু নাক টানার শব্দ ভেসে আসতেই স্বরূপের বদ্ধ নেত্র খুলে যায়। সচকিত হয় কর্নদ্বয়। কেউ চাপা স্বরে কেঁদে যাচ্ছে। সে অস্ফুট স্বরে ডেকে ওঠে,
–“নৈরা?”

মেয়েটির কান্নার বেগ বৃদ্ধি পায় বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই ভারী আওয়াজটুকু শুনতে পেয়ে। লোকটাকে কখনো বলা হলো না তার একটু আওয়াজ ও কতোটা শান্তি দেয় তাকে। সেখানে আস্ত লোকটার উপপস্থিতি নৈরাকে জান্নাতের সুখ দেয়। তা কি জানে লোকটা? জানে না। কেউ জানে না বোকা মেয়েটি ঠিক কতোটা ভালোবাসতে পারে কাউকে। সে কাঁদতে কাঁদতে শুধায়,
–“স্বরূপ! নাম্বার ব্লক করে রেখেছেন কেনো? আমি কি করেছি? অনেক বার ফোন করেছি তো!”

মেয়েটির কণ্ঠে , আড়ম্বরহীন দেহ মন সদ্য পরিস্ফুটিত ফুলের নেয় উজ্জীবিত হতে লাগলো। চারিদিকে প্রেমের সুবাস ভেসে বেড়ায়। ভেসে বেড়ায় একটু প্রশ্রয় পেতে চাওয়া অনুভূতিরাও। কিন্তু বরাবরের মতো দায়িত্বের কাঠগড়ায় থাকা মানুষটার কাছে তুচ্ছ হয়ে পড়ে তার নিজস্ব ক্ষুদ্র কিছু চাহিদা সহ অনুভূতিরা। বুব্বোর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে স্বরূপ মিহি ভারী স্বরে বলল,
–“ব্লক করে লাভ হলো কি! কথা তো বলছেন ই, তাই না?”

–“ব্লক’টা ছাড়ুন না।”

স্বরূপ এবার এড়িয়ে যায় অযাচিত আবদারটি। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে শুধায়,
–“কিছু বলবেন? এতো রাতে জেগে আছেন কেনো? শরীরের কি অবস্থা?”

টেলিফোন কানে ঠেকিয়ে বসে থাকা নৈরা’র অশ্রুমাখা মুখশ্রীতে ম্লান হাসি ফুটে উঠলো মানুষটার প্রশ্নে। আক্ষেপ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
–“জানেন, আমার আরামের ঘুমের কারণ কখন যে কেউ হয়ে গিয়েছে তা টেরই পেলাম না। আজ তার থেকে দূরত্ব আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।”

স্বরূপ ম্লান হাসলো সেই আক্ষেপভরা কণ্ঠে। ভুল মানুষকে নিজের সুখের কারণ বানালে আক্ষেপ ব্যতীত কিছুই পাওয়া যায় না, তা কি মেয়েটিকে সে বলেনি? পাষণ্ড সেই নিরাবতায় নৈরার আঁখিদ্বয় আবারো সিক্ত হয়। অনুযোগ ভরা কণ্ঠে ডেকে ওঠে,
–“স্বরূপ?”

–“বলুন।”

–“বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”

–“তো করে নিন।”, মনে জুগিয়ে রাখা খানিকটা সাহস, আশা ভরসারাও যখন মুখ থুবড়ে পড়লো, মেয়েটি তা নিতে পারলো না। মুখ চেপে নৈরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সেই অনুভূতি হীন নির্লিপ্ত কণ্ঠে।
আধো আলোয় আলোকিত রুমটির সিলিং এর দিকে স্থির হয়ে এঁটে আছে দুটি অনুভূতি শূণ্য দৃষ্টি। স্বরূপ নিরবে শোনে সেই কান্নার ছন্দপতন। নৈরা ভেঙে পড়ে না। এই একটা মানুষের বেলায় সে বড্ডো সাহসী। সে অজশ্রবারের মতো অশ্রু মুছে দু’হাত ভরা অনুভূতি নিয়ে আবার লোকটির কাছে হাজির হয়। এতোদিনের সুস্পষ্ট ভালোবাসাকে যে মেয়েটি হারিয়ে ফেলার ভয়ে লুকিয়ে আসছে, আজ সে বড্ডো সাহস করে নিজের অনুভূতি তুলে ধরে। বড্ডো আদুরে গলায় ডেকে উঠে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী অনাকাঙ্ক্ষিত একটি শব্দ বলল,
–“স্বরূপ, ভালোবাসি।”

সিলিং এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা নিটল প্রত্যাশা হীন চোখদুটো থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ওষ্ঠকোনে স্মিত হাসি ফুটে উঠলো। বিষাদের হাসি। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী, সুন্দর অনুভূতি টুকু আগলে নেয়ার অধিকার না থাকার অসহায়ত্ব চোখে মুখে। স্বরূপের বড্ডো ইচ্ছে করলো বিলম্বহীন জোর গলায় বলতে, –“জানি তো! যার চোখে, হাসিতে, এক একটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজে তার জন্য অপার ভালোবাসা ফুটে উঠে তা আবার মুখে বলার কি প্রয়োজন?”

কিন্তু বলা হয়ে উঠলো না। সে ম্লান হেসে বলল,
–“আগেই বলেছিলাম অসুখের কাছে সুখ খুঁজতে আসলে ঔষধের অভাবে নিঃশেষ হয়ে যাবেন। আপনি বড্ডো জেদি নৈরা। সেই তো দিনশেষে কান্নাকে ই সঙ্গী বানালেন।”

–“অসুখের কাছেই যদি ঔষধ থাকে— তবে অভাবে কেনো ভুগবো?”

বা হাতে বড্ডো অবহেলায় স্বরূপ লুকিয়ে ফেলল বিরল অশ্রুগুলোকে। মেয়েটির কথায় ম্লান হাসলো সে। বলল,
–“মাঝেমধ্যে আপনাকে খুব চতুর মনে হয়। আবার মাঝেমধ্যে খুবই বোকা। নয়তো এতো এতো আভিজাত্য ছাপিয়ে এক সাদামাটা জীবনের কামনা করতেন না। আমার কথা শুনুন নৈরা, বাবা মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না। আপনার বাবা যেটা করছে তা আপনার ভালোর জন্য করছে। তার কথা হাসিমুখে মেনে নিন দেখবেন দিনশেষে হাসির কারণ খুঁজে পাবেন।”

অবাধে ঝড়তে থাকা অশ্রু নিয়ে নৈরা হাসলো। মিহি স্বরে বলল,
–“স্বরূপ ইব্রাহীমের সঙ্গ যদি দিনশেষে কাঁদায় ও—তবে আমি সেই কান্না নিয়ে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো।”

এতো টুকু বলে গলায় দলা পাকানো কান্নাদের আটকায় নৈরা। লম্বা শ্বাস নিয়ে অযাচিত আবদার আর অনুনয়ের সাথে বলল,
–“স্বরূপ! আমার একটু কথা শুনুন, লোন তো সারাজীবন থাকবে না। আমার কোন সমস্যা নেই আপনার সাথে একটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে। আপনি আমায় যেভাবে রাখবেন আমি সেভাবে থাকবো। শুধু আপনার পাশে একটু জায়গা দিন না। আপনার ঘরটিতে, আপনার প্লেটের পাশে থেকে একটু খাবার দিলেই হবে। আমি তাতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু তবুও আমায় অন্য কোন পুরুষের সামনে দাঁড়ানোর কথা বলবেন না, প্লিজ। যেদিন থেকে নিজের অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছি সেদিন থেকে এতোটুকু মেনে এসেছি, বাবা ভাই ব্যতীত যদি কারোর সামনে দাঁড়াই তবে সেটা আপনি হবেন। আগামীকাল আমায় দেখতে আসবে। দয়াকরে আমায় ঐ কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিবেন না। আপনি ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমার মাঝে নেই। আপনি কাল আপনার মা আর বোনকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসুন না। সাথে করে শুধু একটা লাল টুকটুকে বেনারসী নিয়ে আসলেই হবে। আমি তবে কালকেই আপনার সাথে চলে যাবো। এখানে আর থাকবো না। এখানে সবাই শুধু আপনার থেকে দূরে করতে চায় আমায়। আমার দম বন্ধ লাগে এখানে। প্লিজ স্বরূপ, নিয়ে যান না এখান থেকে।”

সে কি নিদারুন অধিকারবোধের সাথে মেয়েটি সবসময় অযাচিত আবদার করে। তবে এবারের আবদারটুকু যেনো বড্ডো ভারী। যেই ভার সহ্য করার ক্ষমতা স্বরূপের নেই। টলমলে অনুভূতি শূণ্য আঁখি তার। কর্নকুহরে বাজতে লাগলো এক বাবার অনুনয় ভরা কণ্ঠ। প্রশ্রয় দেয়ার কোন অধিকার আর সুযোগ পেল না স্বরূপ। তাই কঠোরতার আশ্রয় নিলো। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে শক্ত কণ্ঠে শুধায়,
–” আমি কি আজ পর্যন্ত আপনাকে কখনো বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি? বিয়ে করতে চাই? বলি নি তো! তবে কিসের ভিত্তিতে আপনি এতো বড়ো আবদার করছেন? সামান্য সবজি কেনার সঙ্গী বলে?”

–“সামান্য সবজি কেনার সঙ্গী?”, অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করে নৈরা। লোকটির কণ্ঠ কেনো এতো কঠোর লাগছে তার কাছে। তার যে ভয় হয় এই কঠোর কণ্ঠে। ভয় হয় হারিয়ে ফেলার! ভয় হয় ঐ সাদামাটা ব্যক্তিত্বধারী মানুষটিকে দ্বিতীয় বার দেখতে না পাওয়ার। সে থমকানো কণ্ঠে শুধায়,
–“আপনার মাঝে কি কখনো একটুও অনুভূতি ছিল না আমার জন্য?”

–“নাহ।”, বিলম্বহীন ভেসে আসা সেই ভারী কণ্ঠে কেঁপে উঠলো মেয়েটির দূর্বল কায়া। টপটপিয়ে পড়তে থাকা অশ্রুদের ব্যস্ত হাতে মুছতে মুছতে শুধায়,
–“আপনি মিথ্যা কথা বলছেন তাই না? লোনের কারণে, আমি তো আপনাকে বলছি আমার কোন সমস্যা নেই। আপনি যেভাবে রাখবেন আমি সেভাবে থাকবো শুধু আপনার জীবনে একটু জায়গা দিলেই হবে। তবুও কিসের জন্য আপনি এমন করছেন। আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। নয়তো এতো এতো প্রশ্রয় শুধু সবজি কেনার সঙ্গী বলে পাইনি আমি।”

স্বরূপের কঠোরতা মলিন হয়ে পড়ে। প্রশ্রয় শব্দটি শুনতেই। এই একটা শব্দ যে দিনশেষে তাকে অপরাধী বলে ঘোষণা করছে। সে মিহি স্বরে বলল,
–“প্রশ্রয় কি আমি দিয়েছি না-কি আপনি জোরপূর্বক নিয়েছেন, নৈরা? আজ আমার আফসোস হচ্ছে, কেনো আমাদের দেখা হলো, কেনো আমরা সবজি কেনার সঙ্গী হলাম, কেনো একে অপরের ছোট ছোট অনুভূতি গুলোকে সম্মান জানাতাম? আমি কি ফাল্গুনের সেই দিন বলেছিলাম না, “অযথা নিজের অনুভূতি গুলোকে গভীর হতে দেবেন না।” আজ তবে কেনো আমায় দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন, নৈরা? এমনিতেই ভারী ভারী বোঝা বয়ে চলতে চলতে ইজ আমার দেহ নুব্জ্য প্রায়। আর ক্ষমতা নেই আমার মাঝে। আমার একটু স্বস্তির প্রয়োজন। আমার কথাটা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন, ভুলে যান সব ঠুনকো অনুভূতি গুলোকে। ভুলে যান সবকিছু। বাবার কথা শুনুন। যেই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে সে নিশ্চয়ই আপনাকে সবদিক থেকে ভালো রাখবে। অন্তত আপনাকে তিনবেলা খাবার পেতে শঙ্কা তৈরি হবে না। আমায় ক্ষমা করবেন আমার জন্য যদি আজ আপনাকে কাঁদতে হয়! আর কখনো আমার কোন অস্তিত্ব পাবেন না আপনার জীবনে। আর কখনো ফোন দেবেন না নৈরা। যদি দেন তবে আমি সিম পরিবর্তন করতে বাধ্য হবো। রাখছি, ভালো থাকবেন। নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।”

বলেই স্বরূপ খট করে কেটে দিলো ফোনটা। বুকের উপর চেপে ধরা ফোনটি তখন বক্ষস্থলের দ্রুত স্পন্দের সাথে স্থানান্তরিত হচ্ছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু গুলো এবার আর লুকালো না স্বরূপ। বরং তাদের বইতে দিলো। ক্লেশে জর্জরিত অন্তঃস্থল নিয়ে ম্লান হাসলো সে। আক্ষেপ জড়িত কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,
–“কাঞ্চনবালা! জানেন, যখন আপনাকে একটা সাদামাটা সুতির সেলোয়ার কামিজে দেখি—তখন মনে হয় আপনি আমার জন্য সহজলভ্য। কিন্তু যখন আমি আপনার যত্ন মাখা মুখটির দিকে তাকাই, তখন মনে হয় আপনি আমার জন্য দূর্লভ্য। ভালোবাসায় এমন বৈচিত্র্যময় দ্বৈততা কেনো বলতে পারেন? কেনো ভালোবাসার মাঝে এই সহজলভ্য আর দূর্লভ্য শব্দ দুটি যুক্ত হলো?”

লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়া টেলিফোনটি হাতে অনাহুত নৈরার ঝাঁপসা দৃষ্টি অদূরে বারান্দা পেরিয়ে ঘুটঘুটে তমসায় অপম্রিয়মান। আধখোলা দরজায় বুকে হাত গুঁজে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নোমান ম্লান হাসলো বোনের সর্বহারা রূপ দেখে। হঠাৎ অনুভব হলো তার বোকা বোনটা কাউকে অসম্ভব ভালোবাসতে জানে। আর তার কাজ হলো বোনের এই ভালোবাসা যেকোন মূল্যে ধরে রাখা। রাতে খাবার সময় শুনেছে বোনের বিয়ের কথা চলছে। সে মিহি স্বরে ডেকে উঠলো বোনকে।

–“নুরু?”

নৈরা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। ভাইয়ের হাসিমাখা মুখটি দেখে তার চোখের পানি রা বাঁধভাঙা হয়। নৈরা হাতের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া টেলিফোনটি দেখিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। অভিযোগ করে বলতে লাগলো,
–“দেখো না ভাইজান, সে কি কঠোর! তাকে কতো করে বললাম আমার শুধু সে হলেই চলবে। তবুও সে শুনতে নারাজ। বলে নাকি আমি শুধু তার সবজি কেনার সঙ্গী, ঠুনকো অনুভূতি গুলোকে প্রশ্রয় না দেই। সে বুঝতেই চায় না, সে যেটাকে ঠুনকো অনুভূতি বলছে সেটা আমার সকল সুখের কারণ। তাকে একটু বলো না ভাইজান। আগামীকাল আমায় অন্য পুরুষ মানুষের সামনে যেনো দাঁড়াতে না দেয়।”

নোমান দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় বোনের দিকে। কান্নারত বোনের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দিতেই নৈরা ঝাঁপিয়ে পড়লো ভাইয়ের বুকে। নোমান বুকে জড়িয়ে নেয়া কান্নারত দেহটিকে মৃদু হাসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–“নুরু কি হয়েছে? ভাইজানকে বল।”

বোনের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবটা জানা নোমান নিরবে নিজের জানা গুলোকে অগ্রাহ্য করলো। সে বোনের মুখে সবটা শুনতে চায়। নৈরা কাঁদতে কাঁদতে সবটা খুলে বলল। নোমান জানা জিনিস আবার শুনে মৃদু হাসলো। বোনকে আশ্বস্ত করে বলল,
–“নুরু, ভাইজান আছি তো। কার এতো সাহস আছে আমার নুরুকে অন্য পুরুষের সামনে দাঁড় করাবে? সে দাঁড়ালে একমাত্র তার স্বরূপ ইব্রাহীমের সামনে দাঁড়াবে। ভাইজান কথা দিচ্ছি নুরু। এখন এতো কান্নাকাটি থামা। এভাবে তো শরীর খারাপ করবে। তখন স্বরূপ তোকে দেখে অজ্ঞান হয়ে যাবে।”

নোমান বোনের চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে বলল। নৈরা চকিতে ভাইয়ের বুক থেকে মুখ তুলে তাকায়। একটু আশার আলোর খোঁজে। সে উৎকণ্ঠা নিয়ে শুধায়,
–“তুমি কি সত্যি বলছো ভাইজান? আমি শুধুমাত্র স্বরূপের সামনেই দাঁড়াবো? আর কারোর সামনে দাঁড়াতে হবে না?”

নোমান হেসে মাথা নাড়লো। বলল,
–“উঁহু, আর কারোর সামনে দাঁড়াবে না আমার নুরু। কাল বিকালের মাঝে স্বরূপ ইব্রাহীমকে যেভাবে হোক তোর সামনে দাঁড় করাবো। একটা লাল বেনারসী হাতে। এখন খুশি?”

নৈরা চকচকে দৃষ্টি ফেলে ঘন ঘন মাথা নাড়লো। বলল,
–“খুব খুশি। কিন্তু তুমি কিভাবে তাকে রাজি করাবে? সে যে খুব কঠোর!”

নোমান বোনের চুলের গোছায় হাত গলিয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলল,
–“ভাইজান’রা সব পারে। তুই শুধু ভাইজানের উপর ভরসা রেখে এই চোখের পানি গুলোকে সামলা । এগুলো দেখতে আর ভালোলাগে না। চোখেমুখের কি অবস্থা করেছিস!”

নোমান বিছানায় বসে, বোনকে নিজের কোলে শুইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
–“এখন নিশ্চিন্তে একটা ঘুম দে! আগামীকাল তো অনেক সাজতে হবে তোর স্বরূপের সামনে দাঁড়ানোর জন্য।”

–“হুঁ, ভাইজান।”, নৈরার চঞ্চল কণ্ঠ।

নৈরা রাজ্যের উৎসুকতা, অপেক্ষা, অস্থিরতা নিয়ে চোখ বুজলো। নোমান নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে বাচ্চা আদলের মেয়েটির দিকে। এই ছোট্ট মেয়েটিকে যখন আধমরা অবস্থায় মৃত মায়ের সামনে দেখেছিল তখন তার রুহ কেঁপে উঠেছিল। এরপর থেকে ছোট্ট নুরুকে কখনো সে কষ্ট পেতে দেয়নি, আর না দেবে। সে ফোন ঘেঁটে সদ্য কল দেয়া নাম্বারটির দিকে তাকালো। যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা “সিনিয়র ম্যাডাম”

~চলবে~