#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব৩
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকাল আটটায় ক্লাসে পৌঁছে গেছে সবাই। ক্লাস করার মুড থাকে নাকি এরকম সময়?
এতো রসকষহীন স্যার জীবনে দেখিনি বাবা,বিরক্তিতে চোখ মুখ বার বার কুঁচকে নিচ্ছে তৃধা।স্যার দেখেনি বললে ভুল হবে,তৃধাই কোনো দিন ওসব শিক্ষকের কাছে পড়তো না যারা সকাল বেলা কোচিং, প্রাইভেট পড়াতো।
পড়াশোনায় ফাঁকিবাজির কোনো রেকর্ড নেই তৃধার, তবে তার যে ক্লাস না করার বে’মো আছে তা তাকে যারা চিনে তারা ভালো করেই জানে।
তৃধা চোখ মুখ কচলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো, রাতে পড়তে পড়তে বেশ সময় পেরিয়ে গেছিলো,যদি তখন ঘুমাতো সকালে উঠা কোনো ভাবেই সম্ভব হয়ে উঠতো না,তাই নির্ঘুম থেকেছে সে।
আটটার মধ্যেই ল্যাবে ঢুকলো আদাভান,সেই ফর্মাল পোশাক,শিক্ষক হিসেবে সে যথেষ্ট ডেডিকেটেড তা সবারই বোধগম্য হলো,গম্ভীর কন্ঠ টা শুনেই সবাই মনোযোগী হলো।
আদাভান সবার দিকে একবার নজর দিলো,ফার্সেমি ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট সবাই,এ’প্রোন পরিহিত সবার মধ্যে একজন কেই নজরে পড়লো শুধু,তৃধা!মেয়েটা ক্লাসে ঠিক সময় আসলেও এর তো কোনো না কোনো ভুল থাকবেই বলে বিশ্বাসী আদাভান,মেয়েটা এ”প্রোন ছাড়া এসেছে।
পড়াশোনায় ওতোটাও ভালো না কথাটা অবশ্য বলতে পারলো না আদাভান,কারন সাবজেক্ট টা পেতে হলে অবশ্যই ভালো জিপিএ ও সাবজেক্ট ভিত্তিক মার্ক স্ট্যান্ডার্ড থাকতে হয়,না হয় প্রাইভেট হোক কিংবা পাবলিক এই সাবজেক্ট পাওয়া অসম্ভব!
আদাভান পড়ানো তে মন দিলো,টেস্ট”টিউব আর বি”কার গুলো নামিয়ে রাখলো একে একে।বিক্রিয়ায় মনোযোগ দিতে বুদ হলো স্টুডেন্ট রা।তৃধা,নাদিম,আভা,নোভাও ব্যতিক্রম নয়।
নোভা, আভা মিলে তৃধা কে বুঝিয়েছে,এখানে শিক্ষক যেই হোক না কেনো তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না আমরা শিখতে এসেছি, এখানে আমাদের সবচেয়ে বেশি যে জিনিস টায় ফোকাস করার দরকার তা হলো পড়াশোনা, এরিশ শুধুই এখন তাদের শিক্ষক অন্য সম্পর্কের সমীকরণ কোন দিকে যাবে ওইটা সময় বলে দিবে,তৃধা স্যার হিসেবে শুধু সম্মান দিলেই হবে অন্য কোনো বিষয় যাতে না ভাবে । তৃধা ও ভেবে দেখলো অযথা জের ধরে নিজের জীবন টা খারা”প করার মানেই হয় না,সে যে স্বপ্ন নিয়ে এসেছে এতোটা দূর, এতোটা সংগ্রা’ম করে সেটা কিছুতেই নষ্ট হতে দিবে না।তাকে অনেক বড় হতে হবে,আজাদ তালুকদার কে বুঝাতে হবে মেয়েরা শুধু বোঝা হয় না তারাও অনেক কিছু করতে পারে,তাদেরও ইচ্ছে অনিচ্ছের মূল্য আছে তারাও মানুষ তাদের ও স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে!
ক্লাস চললো বেশ কিছুক্ষণ, শেষ মুহুর্তে আদাভান নাদিম কে ডেকে বললো–,,এই যে আপনি,এদিকে আসুন বিষয়টা সবাই কে বুঝিয়ে বলুন একবার!
নাদিম বাকিদের দিকে তাকালো,তৃধা আঙুল উঁচিয়ে জানালো ভালো হবে যা।
নাদিমের অবশ্য একটু ভুল হয়েছে,তাতে রিয়েক্ট করেনি আদাভান উল্টো তাকে এক পাশে দাঁড় করিয়ে তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,এই যে আপনি।
তৃধা নিজের দিক আঙুল দিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,, আমি?
তৃধা আসতেই যাচ্ছিলো,রূপা বলে উঠলো–,, স্যার ও তো কাল ক্লাসই করেনি, পারবে কি করে?আমি এক্সপ্লেইন করি?
তৃধা মুচকি হেসে বললো–,,স্যার ও বুঝাক আমি অতো ভালো পারি না!
রূপা তো সেই খুশি তৃধা কে চাপা কন্ঠে একবার বললো-,,সবাই সব কিছু পারে না!
নোভা এসে চেপে ধরলো তৃধা কে কানের মধ্যে ফিসফিস করে বললো–,,এই ওই মেয়েটা কে যেতে দিলি কেনো?তুই যে রাতের বেলা বসে বসে গ’রুর মতো পড়লি ওইগুলা কোন দিন কাজে আসবে?
তৃধা চুপ রইলো, যতই উ’গ্র হোক শিক্ষকের সাথে বেয়া”দবি করার মতো মানুষ ও না,রূপা কে জবাব দিতে পারতো তবে এখন তা করাটা সমীচীন নয়।
তৃধার মুচকি হাসিটা নজর কাড়ার মতো অল্পস্বল্প গালে ভাজ পড়ে মেয়েটির হাসলে চোখ জোড়াও প্রাণবন্ত হয়,আঁখি যুগল ও হেসে উঠে খিলখিলয়ে!
নিজের কাজে নিজেই অবাক হলো আদাভান, এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো ওর এই বোকামি কারো চোখে পড়েছে কিনা?এতো গুলো মেয়ে থাকতে এই মেয়েটার হাসিই কেনো নজরে পড়তে যাবে আজব!
রূপার বলা শেষ হতেই আদাভান বলে উঠলো–,,রূপা আপনার টা ও যথেষ্ট ভালো হয়েছে তবে একটা জায়গায় আপনিও ভুল করেছেন নাদিমের মতো!
আদাভান বাকিদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,আপনাদের মধ্যে আর কি কেউ আছেন? যে ভুল টা ধরিয়ে সঠিক টা বর্ণনা করতে পারবেন।
কেউ সাহস করছে না দেখে আদাভান আশ্বাস দিয়ে বললো–,,আমি আবার বুঝিয়ে দিবো ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমরা সবাই এখানে শিখতে এসেছি।
আদাভান আভার দিকে আঙুল তাক করে বললো–,,মিস নোভা আপনি?
আভা বলে উঠলো–,,স্যার আমারও সমস্যা ছিলো,তবে তৃধা বিষয়টা বুঝিয়েছে আমাকে আই থিং ও এটা ভালো ভাবে বলতে পারবে!
আদাভান সরু চোখে তাকালো একবার, পারলে বললো না কেনো?বরাবরই ভাব বেশি মেয়েটার!
আদাভান তৃধা কে ডাকতে গিয়ে মুখ ফসকে বলে উঠলো–,,মিসেস তৃধা আপনি এসে সবাই কে বিষয় টা বুঝিয়ে বলুন!
তৃধার নামের আগে মিসেস বলাতে সবার প্রকিক্রিয়া দেখার মতো হয়েছে,এমনকি তৃধা নিজেও ভরকালো, নিজের কাজে অবাকের চরম সীমানায় আদাভান।
সোহা তো ব্যা”ঙ্গ করে বললো–,,বাহ্ আমাদের ক্লাসে একজন মহিলাও আছে দেখছি!বিবাহিত খালাআম্মা,দেখেই বুঝা যায়।
তৃধা যতই চাচ্ছে মানুষ টা তে নূন্যতম সম্মান দিবে তা আর হয়ে উঠছে না, লোকটার কর্মকান্ড গুলোই কেমন যেনো!
তৃধা শক্ত চোখে তাকালো আদাভানের দিকে,আদাভান ইতিমধ্যেই বলে উঠলো–,,আজকের মতো ক্লাস এখানেই শেষ!
সে হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।গতকালের পরিচিত মেয়েটা এগিয়ে আসলো।এসেই নিশি বলে উঠলো–,, তৃধা স্যার ওভাবে চলে গেলো কেনো?তোমরা কি পূর্ব পরিচিত?
তৃধা কে চুপ থাকতে দেখে আভা,নোভা, নাদিম ভয় পেলো, যে হারে ভাঙচুর করে এই বে”ডি না জানি ল্যাবের সব কাঁচ আজ ইহকাল ত্যাগ করে!
রূপা এবার সোহার সাথে যোগ দিয়ে বললো–,,তা তোর জামাই কি করে রে?গ্রাম থেকে তো উঠে আসছিস সব গুলাতে, গ্রামের কোনো চাষী হবে হয়তো!
তৃধার মাথায় রাগ চ”ড়ে বসলো।সে মুখে কপট হাসি বজায় রেখে দু হাত বুকে গুঁজে বললো–,,শুনছিলাম তোদের নাকি আদাভান স্যার কে পছন্দ? তোরা যে বুই”ড়া ব্যাটার দিক নজর দিস সে দিক থেকে হিসাব করলে তো তোদের মন ও বুড়িদের মতো,খালা”আম্মা টাইপ! রুচির দুর্ভি’ক্ষ হয়েছে তোদের।যাদের নিজেদের আগাগোড়ায় এতো সমস্যা তাদের মুখে অন্য দের নিয়ে কূট ক্তি মানায় না!
তৃধা কিছু ঝুঁকে রূপার কানে কানে বললো–,,আমার জামাই চাষী নাকি বাসী কুমড়া তা জেনে তোর কোনো লাভ হবে না,তবে তোর লাভ হতে পারে এমন একটা ইনফরমেশন আমার কাছে আছে।
রূপা ভ্রু কুঁচকে তাকালো,তৃধা আলতো হেসে বললো–,,তোদের ক্রাশ স্যারের গালে দিনে দু বেলা ই’য়ে খাওয়ার সাহস এবং অধিকার আমার আছে,মানে বুঝছিস তো?আরো একটা পয়েন্ট ভাব স্যার কি করে জানলো আমি মিস না মিসেস!
রূপার মনে প্রশ্নের ঝ”ড় তুলে দিয়ে তৃধা বিদেয় হলো, নাদিম,নোভা, আভা চেপে ধরে বললো–,,কি বললি ওই মেয়েকে?
তৃধা বিরক্ত হয়ে বললো–,, বলেছি ওই শা”লা আদাভানের সাথে বাস’র টা এখনো করা হয়নি আমার!
নাদিম জোড়ে জোড়ে কেঁশে উঠলো কথা শুনে।
ওদের পেছন থেকে নিশি এসে বললো–,,এই তোমরা কি আমার বন্ধু হবে?আসলে কেউই বন্ধুত্ব করতে চায় না আমার সাথে!
আভা জিজ্ঞেস করলো–,, কেনো?
নিশি মন খারাপ করে বললো–,,আসলে পাবলিকে চান্স হয়নি দেখে প্রাইভেটে ভর্তি করেছেন আব্বু,তিনি একটা মোটামুটি রেঞ্জের জব করেন।মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের,তার উপর সেমিস্টার ফি টা অন্যেদের কাছে শুনতে সামান্য হলেও আমার কাছে অনেক।বিলাসিতা করাটা আমাকে মানায় না,দুটো টিউশনি করছি তা দিয়ে চলে যাবে থাকা খাওয়ার খরচ,তবে এখান কার বেশির ভাগ স্টুডেন্ট উচ্চবিত্ত পরিবারের তাদের সাথে আমাকে কেমন বেমানান লাগে,তারা ও এমন একটা ভাব করে যেনো আমি ডাস্টবিন থেকে উঠে আসা কোনো একটা ময়লার স্তুপ!তোমাদের দেখে মনে হলো তোমরা অনেক ভালো,বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিলে মানা করবে না তাই।
তৃধা কিছুটা কঠোর কন্ঠে বললো–,,তোমাকে কে বললো আমরা তোমার সাথে বন্ধুত্ব করবো?যাকে তাকে বন্ধু বানাই না আমরা যাও তো বাপু অন্য রাস্তা মাপো!
নিশি অপমানিত বোধ করলো হরিণীর ন্যায় আঁখি দ্বয় ছল ছল করে উঠলো,আভা নোভা দুজনই তৃধার ব্যবহারে অবাক মেয়েটা এরকম হলো কবে থেকে?
নিশি পিছু ফিরে চলে যেতে নিলো তৃধা গম্ভীর কন্ঠে ডেকে বললো–,,এই নিশি শোন!
নিশি থেমে পিছু ফিরলো।তৃধা এখনো সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকিয়ে, তৃধা নোভার দিকে তাকিয়ে বললো–,,এতোদিন একটা ছিঁচকাঁদুনে ইমোশনাল বান্দা সামলেছিস এখন থেকে আরেকটা যোগ হচ্ছে,দেখ এবার তোরা কি করবি।আর নতুন টা কে বলে দে এটাই আমার আসল রূপ এতো মধুর সুরে কথা বলতে পারি না আমি যা বলি সব মুখের উপর, খারা”প লাগলেও পরে হজম করে নিতে হবে।
নিশি দৌড়ে এসে তৃধা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,, আমি রাজি!
নাদিম,নোভা, আভা হেসে উঠলো।তৃধা নিশি কে শাসানোর ভঙ্গিতে বললো–,,এই মহিলা আমি কি তোর প্রেমিক লাগি এমনে জড়াইয়া ধরছোছ কেন?
আভা বলে উঠলো–,,তওবা তওবা মেয়ের তো মতল’ব খারা’প!
নাদিম বলে উঠলো–,,তৃধার বাচ্চা বড় আব্বু আমাকে কলের উপরে কল করছে, এই প্রথম আমি কল না ধরার সাহস করেছি ভাই আমাকে তুলে ধরে আছাড় না মা’রে তুই তোর বাপ সামলা গিয়ে!
তৃধা মুখ বাকিয়ে বললো–,,শা”লা ক্ষেপেছিল? তোর ওই বড় বাপ কি আমাকে ছেড়ে কথা বলবে?শ্লা এলিয়েনটার সাথে বিয়া করাইয়া দি,,
তৃধা থেমে গেলো,নাদিমের হাত থেকে ফোনটা কে’ড়ে নিয়ে বললো–,,এবার হবে আসল খেলা!
তৃধা ফোন রিসিভ করে বললো–,,আসসালামু আলাইকুম আব্বু,কেমন আছো?
আজাদ তালুকদার দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,রাখো তোমার ভালো থাকা বাড়ি থেকে পালিয়েছো কোন সাহসে?
তৃধা অবাক হয়ে বললো–,,পালিয়েছি মানে?বাবা তোমাকে আদাভান কিছু বলেনি?
আজাদ তালুকদার অবাক হয়ে বললো–,,আদাভান আবার কে?
আজাদ তালুকদার এখন মজুমদার বাড়িতেই আছেন,সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্তে আসতে চেয়েছিলো তাই এই ব্যবস্থা।
আশরাফ মজুমদার বলে উঠলো–,,এরিশেরই নাম আদাভান, আজাদ, ওর বাকি কথাটা আগে শোন!
তৃধা আবার বলা শুরু করলো–,,আব্বু উনি তো বলেছিলেন উনি নাকি সবাই কে আগেই বলে রেখেছেন, আমরা একসাথে সকালে আসবো। মানে আমার ভার্সিটিরই শিক্ষক উনি। রাতে যখন জানতে পারে আমারও ক্লাস আছে উনিও ভার্সিটি ফিরবেন তাই আমাকে সাথে আসতে বললেন!আমার তো আসার পরে ফোন ন’ষ্ট হয়ে গেছে, ব্যাংক এর কা’র্ড ও আনতে ভুলে গেছি,নাদিম তো অন্য হোস্টেলে থাকে তাই তোমাদের কে ও বলতে পারিনি।আদাভান যে বলেনি আমি বুঝতে পারিনি বাবা স্যরি,আমি তোমাদের চিন্তায় রাখতে চাইনি বিশ্বাস করো!
আশরাফ মজুমদার বিরক্ত হয়ে বললো–,,জানতাম ওই হাঁদা টারই দোষ, শুধু শুধু মেয়েটার উপর রাগ দেখালি তোরা।
আশরাফ আজাদের হাত থেকে মোবাইল টা নিয়ে বললো–,,মা,তুমি কেমন আছো?
তৃধা প্রথমে আংকেল বলবে ভেবেও বললো না বাবা বলেই সম্বোধন করলো–,,ভালো আছি বাবা, আপনি কেমন আছেন?মা,দাদু, দাদী কেমন আছেন?
আশরাফ খুশি হলেন জানালেন–,,সবাই খুব ভালো আছি মা।তুমি ওখানে হোস্টেলে কেনো থাকছো?গা’ধাটার এতো বড় ফ্লাট কি করতে রেখেছে?আমি আজই ওর খবর করে ছাড়ছি,মন দিয়ে পড়বে কেমন?সাবধানে থাকবে!
তৃধা ঠিক আছে বলে কল কাটলো,বাকি চার জন ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে,আভা বলে উঠলো–,,তুই জিজু কে ফাঁ’সিয়ে দিতে পারলি?
তৃধা চুল গুলো বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললো–,,পারলাম!
নিশি চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,এই আদাভান স্যার তোর জামাই?
তৃধার তো নিশির কথা মনেই ছিলো না, এবার এটাকেও করুন কাহিটা জানাতেই হবে!
নাদিম বলে উঠলো–,,আমার জোড় খিদে পেয়েছে ভাই আয় গিয়ে কিছু খাই,আর নিশি তোমার প্রশ্নের জবাব খেতে খেতে দিচ্ছি চলো।
নিশি আর বাক্য ব্যয় করলো না,পাঁচ জন গিয়ে বসলো ঝালমুড়ির দোকানের সামনে।
নিশি সব শুনছে মনোযোগ দিয়ে।অবশেষে বলা শেষ করে লম্বা শ্বাস টানলো নাদিম।
নিশি বলে উঠলো–,,সত্যি তোর বাবা তো একদম ক’ড়া তার উপর আদাভান স্যার যে এতো সে’য়ানা দেখে তো বুঝাই যায় না!
নোভা বলে উঠলো–,,এই নাদিম বড়লোক্স বিল দে, সাথে আমার জন্য একটা মজু নিস।
নাদিম বলে উঠলো–,,বেকার পোলার কাছে টাকা চেয়ে লজ্জা দিবেন না রমনী!
আভা বললো–,,তুই কোনো কালে কাজ করতে পারবি কিনা সন্দেহ,তোর বাপের পকেট থেকে যা মেরে’সিছ তার থেকে দে।
–,,তোর বাপ যে ডিম চচ্চড়ির ব্যবসা করে, সেই টাকা আসে তুই দে!
নোভা বলে উঠলো–,,জামাই থাকলে বলা লাগতো নাকি নাচতে নাচতে দিতাম,বাপের টা খরচ করতে দি’লে লাগে!
নিশি বলে উঠলো–,,তোরা সব গুলান তো দেখছি আমার মতোই মিসকিন!
তৃধা বলে উঠলো –,,ঠ্যাং খা, আমরা মিসকিন দেখেই তুই আমাদের বন্ধু বড়লোক হলে তোকে কে চিনতো ভাই!
নাদিম বলে উঠলো –,,তাইলে তুই দে,তোর তো জামাই আর বাপ দুইটাই কোটি”পতি!
তৃধা বিরক্ত হয়ে বললো–,,আমার বা’পের টাকায় আমি হুই”স্কি ছাড়া কিছু খাই না!আর রইলো জামাই ওই বে”ডার টাকা নেওয়ার আগে আমি না খেয়ে ম’রে যাই তাও ভালো।
নিশি বলে উঠলো –,,তুই সিরিয়াসলি ওসব খাস?
আভা বলে উঠলো–,, আমি ছাড়া বাকি তিনটায় খায়,তবে দুজন বছরে একবার, কিন্তু তৃধা আপা পারলে দিনে ছয়বার খায়!
আঁতকে উঠলো নিশি,তৃধা বলে উঠলো–,,আরে ভয় পাস না,আমরা জাতে মা’তাল তালে ঠিক।নিজে খাইলেও বন্ধুদের খেতে দেই না,আমি ম’রলে কারো কিছু আসবে যাবে না,তবে তোদের সুন্দর একটা ভবিষ্যত আছে তা আমি বন্ধু হয়ে কখনো ন’ষ্ট হতে দিবো না!
নাদিম হাত উঁচিয়ে বললো–,,মেলোড্রামা বন্ধ কর,বিল দিয়ে দিয়েছি এবার চল হোস্টেলে, যা একখান কাহিনি করেছিস, এবার না তোকে আদাভানের সাথে থাকতে হয় তার বাসায়!
তৃধা চকিত নয়য়ে তাকালো,এসব তো ভেবে দেখেনি কি মসিবত!
————-
আদাভান কে কল করে ইচ্ছে মতো কথা শুনাচ্ছে সবাই,সে তো বোকার মতো শুনেই যাচ্ছে,আরে কি আশ্চর্য কারন না বলেই শুরু করে দিয়েছে সবাই!
অবশেষে কারন জানতে পারলো আদাভান, ওর মা কড়া করে বললো–,,এরিশ তুই যে তৃধা কে নিয়ে যাবি বলবি না আমাদের?বলে গেলে কি তোদের যেতে দিতাম না আমরা?এটা তো ভালো কথা দুজন একসাথে থাকতে পারবি সম্পর্ক টা সুন্দর হবে,সংসারের সাথে বাকি কাজ গুলো ও সহজ হবে।কিন্তু তুই জানালি না পর্যন্ত আজ তৃধা না বললে তো জানতেই পারতাম না!
আদাভানের রাগে কপাল ফুলে উঠেছে, আবার ওই মেয়ে কি করে ওকে ফাঁসি’য়ে নিজে ভালো মানুষ সেজে বসে আছে, একবার পাই সামনে চ”ড়িয়ে সোজা করে দিবো।
আদাভান তপ্ত শ্বাস ছেড়ে কল কা”টলো,তৃধা কে সামনে পাওয়ার অপেক্ষা, কাল ক্লাসেই দেখে নেবে বেয়া”দব টাকে!
———–
গ্রীষ্মের উত্তপ্ত বাতাসে অতিষ্ঠ হয়ে হোস্টেলে ফিরছিলো তৃধা ভার্সিটিতে এসেছে আজ এক সপ্তাহ হতে চললো,তবে প্রথম দুইদিন ছাড়া আর ভার্সিটি যাওয়া হয়নি ওর,কারনটা অবশ্য গুরুতরই,আগে থেকেই হাতের অবস্থা খারা”প ছিলো তৃধার এখানে আসার পর আবারও ওই হাতেই গরম পানি পড়ে যা তা অবস্থা হয়েছিলো!তৃধা যেতে চাইলেও ওর দুজন অবিভাবক এখানে উপস্থিত আভা আর নোভা।বন্ধুত্বের উপরেও হয়তো কিছু কিছু সম্পর্ক গড়ে উঠে আমাদের মাঝে,পরিবারের পর কিংবা তার ও আগে ওই মানুষ গুলো আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়!তাদের সাথে যেমন রসিকতায় মেতে উঠা যায় ঠিক তেমনই কখনো কখনো এতোটা শাসন করার অধিকার বোধ জন্মায় তাকে উপেক্ষা করা যায় না।
প্রথম মাসে নিশি ওদের সাথে থাকতে পারবে না,কারন এই রুমে তিনটি বেড,বড় রুমটার কথা হোস্টেলের আন্টিকে জানিয়েছে তৃধা তিনি জানিয়েছেন পরের মাসে খালি হলে তাদের কে দিবেন।নিশি ছয় তলায় থাকে তৃধারা পাঁচ অসুবিধে হয় না তেমন সারাদিন রাত এখানেই থাকা শুধু ঘুমটা আলাদা বলা চলে।
বাকিরা আগেই হোস্টেলে ফিরেছে তৃধা ডক্টরের কাছ থেকে আসতে একটু দেরি হলো ভার্সিটির সংলগ্ন একটা পাঁচ তলা ভবন,তৃধার জানা মতে এখানে শিক্ষক রা তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন। রিকশা পায়নি তৃধা,তাই হেঁটেই যাচ্ছে।
চশমা টা রোদের আলোতে কালচে বর্ন ধারন করেছে,ওড়নার এক পাশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো সে,তখনই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটলো!
পেছন থেকে তৃধার হাত কেউ চেপে ধরলো,ঘটনার আকষ্মিকতায় তৃধার পিলে চম”কে উঠলো,রাস্তাটা জনশূন্য,তেমন লোকসমাগম নেই,ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো,সাহসী ভাবটা এখন যেনো খাটলো না,নিজের সম্মানটাই যেনো এখন সবচেয়ে বড় বিষয়!
তৃধার হাতে টান পড়তেই সে ঘুরে দাঁড়ালো, আদাভান কে দেখে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো!কেনো সে জানে না তবে এতটুকু বিশ্বাস আদাভান ওর ক্ষ’তি করবে না,এই মানুষ টা পরিচিত!
তৃধা কিছু বলতে পারছে না কণ্ঠনালি যেনো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
আদাভান তৃধার হাত টেনে ভিতরে প্রবেশ করলো দ্বিতীয় তলায় প্রথম ফ্ল্যাটটি তার,দারোয়ান জিজ্ঞেস করে বললো–,,স্যার এই মেয়ে কে?
আদাভান ভনিতা ছাড়াই বললো–,, আমার ওয়াইফ!
দারোয়ান আর কিছু বললো না,অবিবাহিতই তো জানতো আদাভান কে হুট করে বিয়ে কবে করলো!
তৃধা কে রুমের কাছে এনে থামলো আদাভান,তৃধার শান্ত চাহনি যেনো কিছুই হয়নি!
আদাভান রুমের দরজা খুলতেই তৃধা ঢুকে পড়লো, গিয়ে সোজা দাড়ালো ডাইনিং টেবিলের সামনে,দেখলো পানি আছে তবে তা খুবই গরম।তৃধার ঠান্ডা পানি চাই।
আশেপাশে তাকিয়ে একবার জিজ্ঞেস করলো–,, রান্না ঘর কোথায়?
আদাভান চুপ রইলো,তৃধা নিজে থেকেই খুঁজে পানির বোতল এনে সোফায় বসে পড়লো।
তৃধা মুখে পানি তোলার জন্য যেই না হাত উঁচু করলো আদাভান ওর হাত থেকে পানির বোতল টা ছিনিয়ে নিয়ে বললো–,, কোনো বেয়া’দবের অধিকার নেই আমার বাসায় এসে আমার জিনিসে অনুমতি বিহীন হাত দিবে!পানি পান করবে,তোমার ছোঁয়া জিনিস দিয়ে খাওয়া তো দূর ওই জিনিস কোনো দিন আমি ছুঁয়ে ও দেখবো না।
আদাভান পানির বোতলটা ছুঁড়ে মার’লো কিছু দূরে,তৃধা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো,যতই শত্রুতা থাকুক পানি খেতে দিলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো না,তৃধার সত্যি পানি পিপাসা পেয়েছিলো।
আদাভান এসে তৃধার বাহু চেপে ধরে বললো–,, তোমার সাহস কি করে হয় আমার নামে মিথ্যা বলার?তোমার জন্য এতো গুলো কথা কেনো শুনবো আমি?কে তুমি?তোমার মতো মেয়েকে গোনায় ও ধরে না আদাভান এরিশ!বড়লোক বাবার বখে যাওয়া সন্তান,বড়দের সম্মান দেওয়া তো দূর তুমি একজন ভালো মানুষ ও নও!
মানুষ কে হা’র্ট করে কথা বলা সহজ,তবে যখন তোমাকে কেউ বলবে তখন বুঝবে কেমন লাগে, অবশ্য আমি কাকে কি বলছি।রাস্তা ঘা’টে মাস্তা’নি করা একটা রাস্তার মেয়ে তুমি!
তৃধার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গলো,না জেনে বুঝে মানুষ টা তাকে রাস্তার মেয়ে বানিয়ে দিলো!
তৃধার নিজের ফোন বের করে কল করলো নাদিম কে, নাদিম রিসিভ করেই বললো–,,আবার কি চাই?
তৃধার ভীষণ রাগ লাগলো,কষ্টে কান্না আঁটকে গেলো গলায়,ঠোঁটে দাঁত চেপে ধরে বসে রইলো,উঠার শক্তি পর্যন্ত নেই,এতোটা ক্লান্ত আর অসুস্থ হয়তো কখনো লাগেনি, মনে হচ্ছে কিছু ক দম হাঁটলেই জ্ঞান হারাবে।
তৃধা নাদিমের মুখের উপর বললো–,,কিছু চাই না।
ফোন কে’টে দিয়ে আদাভান কে কিছু না বলেই উঠে দাঁড়ালো,আদাভান অবাক হলো বটে কিছু বলছে না কেনো?
তৃধা এবার বলে উঠলো –,,আর কিছু বলবেন স্যার?
আদাভান আরেক দফা অবাক হয়,মেয়েটা এতো অদ্ভুত কেনো?
তৃধা হেঁটে সামনে চলে গেলো তবে বেশি দূর নয়,দরজার কাছে আসতেই ঢলে পড়ে গেলো মেঝেতে, নিস্তেজ হয়ে পড়লো চঞ্চল আঁখি জোড়া!
আদাভান কিছুটা চেঁচিয়েই ডাকলো –,,তৃধা!
চলবে….