ওঁগো বঁধু পর্ব-০১

0
1

ধারাবাহিক গল্প:
#ওঁগো_বঁধু (সূচনা পর্ব)
রচনায়
#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

বাসর রাতেই স্ত্রীকে দেখিয়ে দেখিয়ে ভিডিও কলে বান্ধবীর সাথে কথা বলতে থাকে রাফসান। রাফসান ব্যালকনিতে বসেছে, আর ওর স্ত্রী ফুলশয্যায়! রাফসান এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, ঘোমটায় ঢাকা একজোড়া চোখ তার পানেই চেয়ে আছে।

তার পুরো নাম মেজর রাফসান বিন রায়হান তালুকদার। সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার। দশ বছর আগে আই এস এস বি পরীক্ষায় সফলভাবে উর্ত্তির্ণ হয়ে ঢাকা সেনানিবাসে কর্মরত একজন অফিসার।
আর তার ভিডিও কলের অন্যদিকে তার ছোটোবেলার বান্ধবী মেজর ডক্টর ইলোরা এন্তাজ।
রাফসান তাকে ইলু বলেই ডাকে। ইলোরা কুমিল্লা সি এম এইচ এ কর্মরত।

রাফসানের ব্যালকনি টা অনেক বড়, ঊনপঞ্চাশ বর্গফিট হবে, অর্থাৎ একটা ছোটোখাটো রুমের সমান হবে। ওখানে রকিং সোফাবেড দেওয়া আছে। জায়গাটা রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায়, এখানে রাফসানের বাবা রায়হান তালুকদারের ফার্মহাউজ। বিয়ে এখানেই হয়েছে। রায়হান তালুকদার বিশাল আয়োজন করে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। রাত দুইটা, নিস্তব্দ চারপাশ। আকাশে বড় চাঁদ, ঝিঁঝিঁ পোকারা ডাকছে। পাশেই লেক। স্রোতের তালে দক্ষিনা বাতাস বইছে। নিচের ফুলবাগান হতে হাস্নাহেনা ও গন্ধরাজের মাতাল গন্ধে ছেয়ে আছে চারপাশ। একটা রোমান্টিক আবহাওয়া।

তবে রাফসানের গলা ধরে আসছে। শুধু “হ্যালো” টা বলেছে, আর কিছুই বলছে না, মাথা নিচু করে আছে। ওপাশ থেকে ইলোরাও চুপ! দুজনেই বিষন্ন। দুজনের মনেই কিছু একটা চলছে। রাফসান জানে নববধূর শয্যা থেকে রাফসানের ল্যাপটপের স্ক্রিন টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর রাফসান ইলোরার মুখশ্রী ল্যাপটপের স্ক্রিনে বড় করে দিয়েছে।

সে মূলত নব বধূঁকে দেখিয়ে দেখিয়েই কথা বলতে চাইছিলো। কিন্তু আদতে কিছুই বলতে পারছে না। ইলোরা হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলো,

-” রাফু দোস্ত স্যরি রে, অনেক চেষ্ঠা করেছিলাম, আজ আসার, কিন্তু হয়ে উঠলো না, সি এম এইচ এ আজ বেশ কিছু ক্রিটিক্যাল ইনজুরড পেইসেন্ট ছিলো। তাদের লুক আপ করতেই সারাটা দিন গেলো, এখনো হসপিটালেই আছি, এত রাত হয়ে গেলো…”

ইলোরা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো দেখে রাফসান ওকে থামিয়ে দিলো। শাসানি কন্ঠে বললো ”

-” শাট আপ ইলোরা! এত কাজ কাজ করিস দেখেই তো তোরে আমার ভালো লাগে না! ডাক্তারি করতে গিয়ে নিজেই রোগী হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন! আই মিন মেন্টাল রোগী! ”

বলেই রাফসান মাথা নিচু করলো। ইলোরা চুপ করে গেলো। অন্যসময় হলে ইলোরাও ওকে উলটা খোঁচাখুঁচি করে এটা সেটা বলতো।

সাথে আরো হাস্যরসাত্মক ভাবে আরো অনেক কথাই বলতো, তবে আজ বললো না। জানে আজ রাফসানের মোটেই মন ভালো নেই।

এটা নতুন নয়, রাফসান যখনই কথা বলবে তখনি কোনো একটা প্রসঙ্গ টেনে ইলোরা কে এটা বলবেই বলবে যে,
” তোকে আমার একদম ভালো লাগে না”।

দুজন দুজনকে ভীষণই পছন্দ করে বলেই হয়তো, এতো জোর দিয়ে বলে যে, পছন্দ করে না। সেটা অবশ্য ওদের মনে মনেই আছে। দুজনে সেই ছোটোকালের বন্ধু। একসাথেই স্কুল কলেজে পড়েছে। এত সময়ে বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু জন্মালেও জন্মাতে পারে দুজনের মনে, এটা অস্বাভাবাবিক কিছু নয়।
ইলোরা চোখের চশমাটা খুলে একটা বড় দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-” কথাই যখন বলবি না, তাহলে কল দিয়েছিস কেনো?
এ প্রশ্নেও রাফসান চুপ। আরো মিনিট খানেক চুপ করে থাকার পর ঝাঁঝালো কন্ঠে নববধুকে শুনিয়ে বললো,
-” আসিস নি ভালোই করেছিস, এ বিয়ে আমি মানি না, মানবো না, টাকার জন্য মানুষ মানুষের গলায় যে এভাবে ঝুলে পড়তে পারে তার বার্নিং এক্সমপল হলো এই বিয়ে, তুইই বল, তুই আমার স্থানে হলে কি মেনে নিতে পারতি?”

ইলোরা কিছু বলতেই যাচ্ছিলো ঠিক তখনি রাফসান ওকে থামিয়ে বললো,

– ” থাক! কিছু বলতে হবে না, জানি বুঝাতে বুঝাতে তোদের সবাই অনেক ক্লান্ত, আর কত? এবার তোরা বিশ্রাম নে, যা করার আমিই করবো!”

বলেই রাফসান ঝপ করে ল্যাপটপের ঢাকনাটা বন্ধ করে দিলো। মুহূর্তকাল ভেবে ব্যাগ থেকে একটা এলকোহলের বোতল বের করলো। বোতলের গায়ে লেখা “ইন্ড্রি, সিঙ্গেল মল্ট”। আজ মন ভরে নেশা করবে সে। মনোরঞ্জনের জন্য নয়, বরং ফুলসজ্জায় বসে থাকা সেই মেয়েটাকে সহ্য করার জন্য, যে পর্যন্ত মেয়েটা ওর জীবন থেকে চলে না যায় সে পর্যন্ত ওর উদ্দ্যেশ্য নববধূকে জ্বালানো। জ্বলতে জ্বলতে যেনো ও পুড়ে অঙ্গার হয়ে রাফসানের জীবন থেকে চলে যায়।

দ্বীর্ঘ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ময় শ্বাস ফেলে রাফসান।
কিন্তু বাস্তবে কি হচ্ছে? জ্বলছে তো রাফসান, ওর চোখে হেরে যাওয়ার অশ্রু, হতাশার বিষাদ! বিয়ে বাড়ির শানাই বন্ধ হয়েছে ঘন্টাখানেক হলো। আত্মীয় স্বজন সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছিলো। দামি বিয়ের কার্ড, গিফট সব পাঠিয়ে দাওয়াত করা হয়েছিলো। তবুও আমন্ত্রিত অতিথিদের অর্ধেকই আসেনি। বাঙ্গালী স্ত্রীরা নাকি স্বামিদের অন্যনারীদের সাথে কথা বলা সহ্য করতে পারে না! এ ধারণা থেকেই সে বাসর রাতে বান্ধবীকে কল করেছে। নববধূর বেশে বসে থাকা এ মেয়েটিকে রাফসান কোনোদিন দেখেনি, দেখতেও চায়নি কখনো। ক্যডেট কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে সেনাবাহিনীতে ঢোকে সে, তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের স্বীকার সে। এ রাজপুত্রের ঘরের বউ হয়ে এসেছে পথের ভিখেরির মেয়ে। বিধাতা চাইলে কি না হয়! তাই, নতুন বিয়ে নিয়ে রাফসানের কোনো উদ্দিপনা নেই। নেই কোনো আবেগ বা সুখানুভূতি। শুধু আছে একরাশ বিরক্তি, অভক্তি আর ঘৃণার পাহাড়। এ বিয়েটা রাফসান করেছে মূলত এক্সিডেন্টালি। তাছাড়া সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা কোনো ছেলে কোনোদিন ভিখারির মেয়েকে বিয়ে করে?
অজগাঁয়ের এক মেয়ে, নাম রানু। রানু গরীব পরিবারের, অশিক্ষিত এক মেয়ে। এই বিয়ের পেছনে এক বড় ইতিহাস আছে। গত বছর হঠাৎ রাফসানের কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্যও হয়। তবে এবার ধরা পড়ে দুইটা কিডনিই পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়েছে। সে একদম লাস্ট স্টেইজ অব রেনাল ফেইলিয়রে ছিলো। তাই ওর একজন কিডনি ডোনারের প্রয়োজন পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় ডোনারের বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। বিরল “ও নেগেটিভ” ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ হলেও কারো সাথে কিডনি টিস্যু ম্যাচ হচ্ছিলো না। এদিকে রুনার বাবা শাহের আলী, গ্রাম থেকে শহরে কাজ করতে এসে এক অঙ্গবিক্রিকারী চক্রের খপ্পড়ে পড়ে। তাছাড়া তার টাকারো প্রয়োজন ছিলো অনেক বেশি। কারন, অভাবের তাড়নায় গ্রামের হেন কোনো লোকের কাছ থেকে সে টাকা ধার করেনি। দিনের মধ্যে একশ বার করে এসে পাওনাদাররা তাকে চাপ দিতো। তার মধ্যে বিবাহযোগ্যা চারটা মেয়ে ঘরে পড়ে আছে। তার মধ্যে বড় দুই মেয়ে রানু ও ঝুমার নামে গ্রামের মানুষরা কুৎসা রটিয়েছে যে, তারা গোপনে গর্ভপাত ঘটিয়েছে। গ্রামের মানুষের সামনে সে মুখ দেখাতে পারছিলো না। গ্রামের মানুষও ওদেরকে একঘরে করে দিয়েছিলো আর বিভিন্ন অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছিলো। রুনার বাবা শাহের আলী ঢাকা এসে কোনো কাজ না পেয়েই প্রথম দিকে প্রতি মাসেই র’ক্ত বিক্রি করে যে টাকা পেতো তা দিয়ে সব কিনে বাড়িতে দিয়ে আসতো। একদিন অঙ্গ বিক্রিকারী চক্র তাকে কিডনি বিক্রির কথা বলে। কিডনি বিক্রি করলে বিরাট অংকের টাকা একসঙ্গে পাওয়া যাবে ভেবে সে রাজি হয়ে যায়। কিডনি বিক্রির টাকায় সে নিজের পরিবারকে গ্রাম থেকে শহরে আনে। বস্তির একটা টিনশেড ভাড়া করে থাকা শুরু করে। তবে একমাসের মধ্যেই প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে যায়। কারন প্রতিমাসেই র’ক্ত বিক্রি অত:পর কিডনি বিক্রি করার পর নিজের শরীরেই প্লাটিলেট কমে গেছে এবং একটা কিডনি গোটা শরীরকে ব্যাকয়াপ দিতে পারছে না। এবার উপায় না পেয়ে চার মেয়েকেই বাসাবাড়িতে কাজে লাগিয়ে দেয় আর বউকে নিয়ে নিজে নামে ভিক্ষার থালা হাতে। বছর কেটে যায়, শাহের আলী আর তার পরিবারের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। কারন তার ঔষধ খরচ ক্রমশ বাড়তেই ছিলো। সাথে নোংরা পরিবেশে থাকার কারনে পরিবারের কারো না কারো জন্ডিস, টাইফয়েড, ডেঙ্গু লেগেই ছিলো। এতো দু:খ, দূর্দশার মধ্যে অঙ্গ বিক্রেতা চক্র আবার ওর কাছে আসে। এবার তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের কিডনি চায়। বড় মেয়ে রানুর ব্লাড গ্রুপও “ও নেগেটিভ” ছিলো। রানুকে যেদিন কিডনি বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে ক্লিনিকে পাঠানো হবে সেদিন সকালেই ফার্মগেইট ওভারব্রিজের উপর ভিক্ষা করতে বসে শাহের আলী আর তার স্ত্রী। রাফসানের বাবা রায়হান মাহমুদ তখন নিজের ছেলের জন্য যেখানে সেখানে পাগলের মতো কিডনি ডোনার খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ওভার ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়েই সে একটা কল করছিলেন। আর কলের সেই কথোপকথন শুনে ফেলে রানুর বাবা শাহের আলী। কথা শুনেই শাহের আলী আঁচ করতে পারে যে লোকটা কিডনি খুঁজছে। শাহের আলী রায়হান মাহমুদকে ডেকে কিডনি ডোনারের কথা বলেন। দ্রুত রানুকে নিয়ে আনা হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায় রাফসানের সাথে রানুর কিডনির টিস্যুও ম্যাচ করেছে। তখনি শাহের আলী ছক্কাটা হাঁকেন। রায়হান মাহমুদকে শর্ত দেন, যদি রানুকে তার পুত্রবঁধু বানিয়ে ঘরে নেন তবেই তার মেয়ে কিডনি দিবে, তাছাড়া নয়। সাথে ঢাকা শহরে তার পরিবারকে থাকার মতো একটা ফ্ল্যাটও আসবাবপত্র সমেত দিতে হবে। আর নগদ পঞ্চাশ লক্ষ টাকাও দিতে হবে। ছেলেকে বাঁচাতে তিনি কোনো কিছু না ভেবেই এ শর্তে রাজি হয়ে যান। দ্রুত একটা চেক সাইন করে, একটা ফ্ল্যাট শাহের আলীর নামে লিখে দিয়ে রানুর সাথে রাফসানের বিয়ের শর্তের কাগজপত্রেও সাইন করে দিন। রাফসান তখন আইসিইউতে। কোন কথা বলা বা কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার মতো অবস্থায় সে ছিলো না। পরের দিনই সফলভাবে রানুর কিডনি রাফসানের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। অপারেশন সাক্সেসফুল হয়। দুজনেই সুস্থ হয়ে ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফেরার পর শর্তানুযায়ী কোর্টে বিয়ের কাজ সাঙ্গ হয়। এভাবেই এক পথের ভিখেরীর মেয়ের সাথে বড়লোকের ছেলের বিয়ে হয়। কোর্টে বিয়ে হওয়ার এক মাস পর আজকের দিনে এত ধূমধাম করে রাফসান আর রানুর বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয় আশুলিয়ার এক ফার্মহাউজে।

ইলোরা ঘন্টাখানেক পর আবার কল দিলো। রাফসান এবারো চুপ। নেশায় বুঁদ হয়ে সে কল টা রিসিভ করলো। ইলোরা রাফসানের চোখের দিকে না তাকিয়েই বুঝাতে শুরু করলো, ” –

-দোস্ত একটু বুঝতে চেষ্ঠা কর, পাগলামি করিস না, তোর কাছে তোর জীবনের দাম না থাকতে পারে, অন্য সবার কাছেই তুই অনেক দামী! আর সেজন্যই তোকে না জানিয়ে আঙ্কেল আন্টি ওর সাথে তোর বিয়ের ডিসিশন নিয়েছিলেন। আর তুই তো তখন কথা বলার ও অবস্থায় ছিলি না। সবাই ভেবেছিলো তোকে আর বাঁচানো যাবে না। আর এই রানুই তোর জীবনকাঠি। এখন রানুকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সব উপরওয়ালার ঈশারা, তাছাড়া রানু বাদে আর কারো সাথেই কেনো তোর কিডনি ম্যাচ হলো না, তুই ই বল, ইটস মিরাকল!

রাফসান নেশাতুর কন্ঠে চিৎকার করে বললো,
– আচ্ছা, আচ্ছা, মেনে নিলাম এই মেয়েকে। হ্যাপি? হ্যাপি ইউ গাইজ?? তোমাদের মতো ফেরেস্তাদের সাথে আমার মতো পাপীর আর কোনো কথা নেই, কথা থাকতে পারে না। তোমরা আছো তোমাদের দেওয়া কথা নিয়ে, আমার সুখ, আমার ভালো তোমাদের দেখতে হবে না। অনেক দেখেছো। গুড বাই…
বলেই রাফসান ল্যাপটপ টাকে একটা আছাড় দিলো। তার মাথায় খু*ন চেপে গেছে। আগে এই মেয়েটাকে দেখে নেওয়া যাক! তারপর নিজেও সু*ইসাইড করবে! রাফসান আর কিছু না ভেবেই রানুর ইয়া মস্ত ঘোমটা টা হ্যাঁচকা টানে খুলে দিয়ে মুখটা বের করে নিলো।
ছোটো মুখের কমবয়স্কা শ্যামবর্ণা এক মেয়ে অশ্রুসজল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

( চলবে?)