মনবিবাগী দিওয়ানা পর্ব-০২

0
1

#মনবিবাগী_দিওয়ানা #পর্ব_২
লেখনীতে #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

“কিন্তু কেন কাবির? কেন এই বিয়ে হবে না?”

কাবির দেওয়ান আবারও একবার কনের দিকে তাকায়। দৃষ্টি কঠিন, চোখে রাগ আর হতাশা। অথচ কনে? সে নিজের জগতে মগ্ন। নানা অঙ্গভঙ্গিতে ফটোগ্রাফারের সামনে পোজ দিচ্ছে, হাসছে, চুলের ঝটকা দিচ্ছে। বরপক্ষ, এমনকি বর কারও দিকেই তার নজর নেই। তার ভাবভঙ্গি বলে দিচ্ছে এই বিয়ে তার কাছে নিছক একটা ইভেন্ট, কোনো পবিত্র বন্ধন নয়।

কাবিরের ঠোঁট কাঁপে। বুকের ভেতর ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে, কিন্তু ভেতরের কথা খোলস ছেড়ে বের হতে পারে না।

এমন বেপরোয়া, উচ্ছৃঙ্খল একটা মেয়ের সঙ্গে ঘর বাঁধা অসম্ভব। জীবনসঙ্গী হিসেবে এমন কাউকে পাওয়ার শাস্তি কি তার প্রাপ্য?

সে ছোট থেকেই আল্লাহর পথেই হেঁটেছে। কোনো বেগানা নারীর দিকে চোখ তোলেনি, কোনো অপরিচিত মেয়ের সঙ্গে অযথা হাসি-মশকরা তো দূরের কথা, চোখে চোখ রেখেও কথা বলেনি। নিজেকে সে সযত্নে সংযত রেখেছে, যেন তার হৃদয়ের অনুভূতিগুলো একমাত্র তার স্ত্রীই পায়। কিন্তু আজ? এই মেয়েই কেন সেই প্রতীক্ষিত জীবনসঙ্গী? এমন জীবনসঙ্গীর আশায় তো সে ছিল না।

এই বিয়ে হতে পারে না। এমন একটা মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়া তার জন্য নিয়ামত নয়, অভিশাপ। সে কিছুতেই এই বিয়ে করবে না।

কলিমউদ্দীন দেওয়ান খেঁকিয়ে উঠেন।

“বিয়েটা হতেই হবে। এছাড়া উপায় নেই। মুরব্বিদের ফয়সালা তোমাকে মানতেই হবে। দেওয়ান পরিবার আর খান পরিবার বহুবছর পর একত্রিত হতে চলেছে। শেষমুহুর্তে এসে তুমি সব ভেস্তে দিতে পার না কাবির। কি সমস্যা তোমার? খুলে বলো সবাইকে।”

কাবির দাদাভাইয়ের দিকে তাকায়। বলে,

“শেষ বয়সে এসে এমন কাজের সঙ্গী হচ্ছেন যেটা আপনার আখিরাতকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
এদের সঙ্গে আমাদের আতিথ্য যায় না। আমাদের পথ আলাদা, বিশ্বাস আলাদা, চিন্তাভাবনাও ভিন্ন। আমি এমন বন্ধনে জড়াতে পারব না, যা আমার ঈমান ও মনের শান্তি দুটোই নষ্ট করে দেবে। আমি দুঃখীত দাদাভাই।”

তার কথা শুনে মুরব্বিরা একে অপরের দিকে তাকান। কেউ কিছু বলতে পারছে না এই মুহূর্তে।

এদিকে কনের ভাইরা তাদের আদরের বোনকে ঘিরে হৈহল্লায় মেতে আছে। ভাইরা বোনকে ঘিরে নাচছে তাদের বন্ধু আর বান্ধবীদের সাথে। কনে সবার মাঝখানে কালো চশমা চোখে লাগিয়ে নেচে চলেছে সুপারস্টার গানের তালে তালে।

হাসির ঝড়, গানের তালে তালে নাচ, কারো হাতে মাইক। নাচের ফাঁকে ফাঁকে একে ওকে ডাকাডাকি হচ্ছে নাচের জন্য। এসব দেখে মোটেই মনে হচ্ছে না এটা কোনো পবিত্র বন্ধনের আয়োজন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই উল্লাসে মেতে উঠেছে। অথচ এমন বেহায়াপনা কাবির স্বচক্ষে এই প্রথম দেখছে তাও তার বিয়ের দিন।

আরও আশ্চর্যের বিষয়, কনের মা-বাবাও এই উদ্দাম আনন্দে শামিল! তারাও নাচছে তাদের ভাইবোন বন্ধুবান্ধব ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে। বিয়ের মতো একটা গুরুগম্ভীর ব্যাপারেও তারা এতটুকু ভাবিত নয়। কন্যাদানের গাম্ভীর্য কোথাও নেই। এমন মা বাবাও কখনো দেখেননি বরের মা আর পরিবার।

কাবির অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে সে ভুল জায়গায় চলে এসেছে। এটা কি সত্যিই বিয়ের আসর? তার ভেতরটা জ্বলে ওঠে। আজ এই বিয়েটা হয়ে গেলে নিজের কাছে নিজেই হেরে যাবে সে। খানদের বশবর্তী হয়ে যেতে হবে চিরকালের জন্য। বড় চাচার জানের বাজি রেখেছে তারা। এই শোধ কাবির দেওয়ান তো একদিন ঠিকই নেবে। কিন্তু বিয়ে? এই বেহায়া মেয়েকে সে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে কিছুতেই কবুল করবে না।

কাওসার দেওয়ান কাবিরের সামনে এসে দাঁড়ায় ঠিক তখুনি। বলে,

“তুমি তোমার বড় চাচার লাশ দেখতে চাও কাবির?”

কাবির সোজাসাপটা বলে,”উত্তরটা তুমি নিজেই জানো বাবা।”

“তাহলে বিয়েটা হতে দাও। তারপর অন্য কোথাও গিয়ে বসতে পারবে। আর তাছাড়া ওরা এমনই। বারণ করেও কোনো কাজ হবে না। কিন্তু একটা কথা মাথায় রেখ। ওদের মেয়ে আমাদের বাড়িতে আসছে।”

কিছু একটার ইঙ্গিত বুঝে কাবির কপাল কুঁচকে ফেলল। কাওসার দেওয়ান চাপা স্বরে বলল,

“ওরা নিজেরাই সবচেয়ে শক্ত হাতিয়ারটা তোমার হাতে তুলে দিচ্ছে। শক্ত করে ধরো সেটা। আজ ওদের সময়। কাল আমাদের। ধৈর্য হারিওনা।”

কাবির স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

সে কখনোই এই শত্রুতা এই বিদ্বেষের মাঝে নিজের জীবনসঙ্গীকে জড়াতে চায়নি। চেয়েছিল একটা শান্ত, সংযত জীবন যেখানে ভালোবাসা থাকবে, সম্মান থাকবে, বিশ্বাস থাকবে, ভরসা থাকবে। কিন্তু তার চাওয়ার ঠিক উল্টোটা ঘটছে। সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল।

সে গভীর শ্বাস নেয়, মুঠো শক্ত করে। চোখ বুঁজে আবারও চোখ মেলে তাকায় দূরে নৃত্যরত কনের আর তার দস্যি ভাইদের দিকে।

বড়চাচা উদ্ধার হোক, তারপর খানদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে সে।

এরা এখনো জানে না, দেওয়ানিরা অন্যায় সহ্য করে না। দেওয়ানিরা রক্তের বদলে রক্ত, খুনের বদলে খুন, অপমানের বদলে অপমান ফিরিয়ে দিতে জানে।

শেষে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে কনেপক্ষের লোকজন। মুখে বাঁশি বাজায় সবাই মিলে। কনে দুহাত মেলে পড়ে যাওয়ার ভান ধরে। তার ভাইয়েরা দ্রুত ধরে ফেলে হাত তুলে হৈহৈ করে উঠে।

কনে সাথে সাথেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে, তারপর একঝটকায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কালো চশমাটা চোখ থেকে খুলতেই তার দৃষ্টি গিয়ে পড়ে কাবিরের ওপর। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তার ভং দেখে মনে হল সে কাবিরকে চিনতে চেষ্টা করছে। যেন আগে কখনো এই টুপিওয়ালাকে সে দেখেনি।

কাবিরের থুঁতনি শক্ত হয়ে আসে, চোখের দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ। আর ঠিক তখনই ঘটে গেল অবিশ্বাস্য ঘটনাটা যেটা তার সমস্ত প্রতিরোধ, সমস্ত ধৈর্য চুরমার করে দিল। তার দিকে তাকিয়ে বাম চোখটা টিপে দিয়েছে খান বংশের দুলালের ঘরের দুলালী! নির্লজ্জ মেয়েমানুষ।

কাবির স্থির হয়ে গেল। ভারী নিঃশ্বাস পড়ছে। এসব সে সইতে পারছেনা। কনের ঠোঁটের কোণে খেলা করা চতুর হাসি আরও ধাঁধায় ফেলে দিল তাকে। সে আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে যেতে থাকে। এখানে আরেকটা মুহূর্ত থাকলে সে কি করে ফেলবে নিজেও জানে না। রাগ সামলানো দায়। নিজের রাগকে সে বড়ো ভয় পায়।

কাবির একবারও ফিরে তাকায় না। তার পেছন পেছন তার ছোট ভাই বোনেরা ছুটে যেতে যেতে বলে,

“ভাইয়া এখনি বিয়ে পরানো হবে। কোথায় যাচ্ছেন?”

কাবির কারো কথায় থামে না। শেষমেশ দাদাভাই গর্জে ডেকে উঠে,

“কাবির! আর একপা বাড়ালে….

কাবির দেওয়ান সেই ডাক শুনে হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। চোখেমুখে তীব্র রাগ। ধীরে ঘাড় ফেরায়, দাদাভাইয়ের দিকেই তার চোখা দৃষ্টি। দাদাভাইয়ের দৃষ্টিতেও আদেশ।

সে নিজের রাগ সামলে কনের ভাইদের দিকে তাকায়। তাদের ঠোঁটের কোণায় উপহাস দেখে
বুকের ভেতর আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে কাবিরের। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। অপমানের এই তীব্র দহন ভুলবে না সে। এই অসম্মানের প্রতিটি হিসেব সে সুদে-আসলে চুকিয়ে দেবে আল্লাহর কসম!

সবাই মিলে তাকে শান্ত করায়। বাবা, চাচা, ফুপা, খালু, মামারা দশজনে দশটা মতামত দেয়। মা ছেলের পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,

“নিজের রাগের সাথে যুদ্ধ করাও ইবাদত কাবির। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। একটু সবুর করো বাবা।”

কাবির শান্ত হয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে। ঘাসের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে। কারো কথার জবাব দেয় না।

____________

কাওসার দেওয়ানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, কাবির দেওয়ান, আপনাকে পনের লক্ষ টাকার দেনমোহরে বিবাহের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। তিনি আপনাকে তাঁর জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আপনি যদি এই প্রস্তাবে সম্মত হন, তবে ইসলামি বিধান অনুযায়ী ‘কবুল’ বলে আপনার সম্মতি প্রকাশ করুন…

কাজী একথা বলার সাথে সাথে কনের ভাই, বন্ধু এমনকি কনেপক্ষের সব লোকজন সব একসাথে বলে উঠে,

“কবুললল…

বরপক্ষের লোকজন আশ্চর্য হলো! কাজী রেগে গেলেন। ধমকে বলে উঠলেন,

“কি শুরু করেছেন আপনারা? এটা কি রঙ্গমঞ্চ নাকি?”

সবাই কিছুক্ষণের জন্য চুপসে যায়।
কাজীর ধমক শুনে কনে মা বাবা আর ভাইদের কথামতো স্পষ্ট ভাবে বলে,

“কবুল, কবুল, কবুল।”

বলা শেষে ভাইদের দিকে তাকিয়ে হাসে। ভাইরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বলে, পার্ফেক্ট!

কাজী এবার বরের উদ্দেশ্যে বলে,

আমিন খানের কনিষ্ঠ কন্যা আনঝিল খানম ইথিকাকে পনের লক্ষ টাকার দেনমোহরে আপনার সাথে বিবাহ দেয়া হলো। বলুন, কবুল…

কাবির চুপ। চোখ নীচে রেখে বসে আছে। চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। কপালটা দরদর করে ঘামছে। চোখেমুখে তীব্র জ্বালা, দৃষ্টিতে ক্ষোভ। কাজীর জোরাজোরিতে বাবা আর দাদার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে চাপা স্বরে বিড়বিড় করল,

“আমার সমস্ত ইচ্ছে-অনিচ্ছে, স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা আজ কোরবানি দিলাম। এই শত্রুপক্ষের দুলালীকে কবুল করলাম শুধুমাত্র বড় চাচার প্রাণ রক্ষা করার জন্য, নয়তো… আমার আল্লাহ জানে আমি অন্তর থেকে এই মেয়েকে কবুল করিনি।”

___

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার খেজুর বিলানো শুরু হয়। কনের ভাইয়েরা একে অপরকে খেজুর খাইয়ে দেয়। হাসাহাসি করতে করতে কাবিরের দিকে এগিয়ে আসে। কাবির তখন দু-হাত পেছনে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। কনের ভাইদের এগিয়ে আসতে দেখে সে আর একমুহূর্তও সময় ব্যয় না করে গটগট পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যায়। তার গন্তব্য দেওয়ান বাড়ি।

কনের ভাই বন্ধুরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠে,

“সিস্টার তোর বর পালিয়েছে হা হা হা।”

কনের সেদিকে পাত্তা নেই। সে ছবি তুলতে ব্যস্ত।

কনের ভাই আঙুল নেড়ে ইশারা করতেই বয়রা দ্রুত একগাদা মদের বোতল নিয়ে ফিরে আসে। মুহূর্তের মধ্যে গ্লাসে গ্লাস ঠুকে চিয়ার্স করে সবাই একসাথে পান করা শুরু করে। হাসাহাসি, তামাশা মুহূর্তেই জমে ওঠে আড্ডা। কাসেদ আর কাদিনকে জোর করেই টেনে আনা হয় ওদের মাঝে। এমনকি বোনদের দিকেও হাত বাড়ায় তারা। মশকরার সম্পর্ক বলে মজা ওড়াতে থাকে।

কাসেদ দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বোনদের হাত ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে বলে,

“ওদের সাথে মশকরা কোরো না! এসব হারাম!

তার কথা শুবে সবাই থমকে যায়, কিন্তু পরক্ষণেই আবারও অবজ্ঞার হাসি হেসে উঠে কনের ভাই বলে উঠে,”মদ আর মধুতে মিলতে তো হবেই ব্রো।”

কাদিন রাগ চেপে বলল,

“ভাইয়া তোমাদের নাক ফাটাবে। বড্ড বাড়াবাড়ি করছ। আত্মীয়র মান রাখতে জান না তোমরা।”

কনের মেঝ ভাই এক হাতে গ্লাস ধরে চোকচোক করে গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল,

“খানদের এত দেরিতে চিনলে চলে? সে যাই হোক, এখন আমরা দেওয়ান বাড়ি যাচ্ছি। বরের পিছু পিছু… কই সবাই? চল, চল!”

তারপর সে বধূসাজে দাঁড়িয়ে থাকা বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“ডার্লিং, আমরাও যাচ্ছি কিন্তু! তোকে একা ছাড়ছি না।”

কনে অবাক হয়ে বলল, “সত্যি?”

ভাই নাটকীয়ভাবে মাথা নত করে বলল, “ইয়েস, প্রিন্সেস!”

বোনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল খুশিতে। আনন্দে মায়ের গালে দ্রুত একটা চুমু খেয়ে বলল,

“আম্মি পাপা আমি যাচ্ছি! টা টা! গিয়ে ফোন করব। ব্রো চলো চলো!”

মা বাবা মেয়েকেও বিদায় দিল হাসিমুখে।

বরপক্ষের লোকজন অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাল। এ কেমন বিদায়? কোথায় কনেবিদায়, কোথায় চোখের জল, কোথায় আবেগঘন মুহূর্ত! তার বদলে কনে হাসিমুখে বাবা-মাকে “টা টা, বাই বাই!” বলে ভাই আর বন্ধুদের সঙ্গে নেচে-কুঁদে ফুল দিয়ে সাজানো ওপেন জিপ গাড়িতে চড়ে বসল।

গাড়িতে চট করে গান ছেড়ে দিল তার ভাইয়েরা। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয়ে গেল নাচানাচি, হাসাহাসি।

পিছনে বরপক্ষের লোকজন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একে একে নিজেদের গাড়িতে উঠল। কাবিরের মা অবিশ্বাসভরা চোখে দৃশ্যটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“হায় আল্লাহ! জানি না কাবির ওদের সঙ্গে কি কি করবে বাড়িতে। তাড়াতাড়ি গাড়ি ছাড়ো।”

কাবির দোতলার বারান্দায় একা বসে ছিল, মনোযোগহীনভাবে চারপাশের দৃশ্য দেখছিল। অস্থির লাগছে তার। নিজের সাজানো ঘরটা দেখে এসে আরও অস্থির লাগছে। কিভাবে ওই মেয়ের সাথে একঘরে থাকবে সে? গোটা একটা জীবন।

হঠাৎই বাইরে উত্তেজনার প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ল। দূর থেকে গানের শব্দ, উল্লাসের চিৎকার, আর গাড়ির ইঞ্জিনের গর্জন ভেসে এল। কাবির দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।

দূরে তাকাতেই দেখতে পেল একটা সাজানো জিপ গাড়ি ধুলোর ঝড় তুলে ধেয়ে আসছে, পেছনে আরও দুটো ওপেন জিপ, সবক’টায় লোক ঠাসা।

সামনে থাকা জিপের হুডের ওপর উঠে দাঁড়িয়েছে সাদা লেহেঙ্গা পরিহিত কনে। চোখে সানগ্লাস, হাতে চুড়ির রিনিঝিনি বাজিয়ে সে উচ্ছ্বাসে নাচছে ভাই আর বন্ধুদের সাথে।

নতুন বউয়ের শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশের এমন দৃশ্য কাবিরের মুখে বজ্রপাতে পোড়া ধূসরতা টেনে আনলো। ছিহ!

ক্ষিপ্ত চোখে চারপাশে তাকিয়ে সে গর্জে উঠল,

“কে আছ! গেইটে তালা দাও। একটা লোকও যেন ভেতরে ঢুকতে না পারে!”

চলমান……..