মনবিবাগী দিওয়ানা পর্ব-৬+৭+৮

0
1

#মনবিবাগী_দিওয়ানা
#পর্ব_৬
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

ঘরটা রাতের গভীরতাকেও হার মানাচ্ছে। দমবন্ধ করা গন্ধ ভাসছে বাতাসে। জানালাগুলো বোঝাই যায় না। তবে একটা কোণায় পুরোনো পর্দা একটু ফাঁক হয়ে আছে। গুঁড়িগুঁড়ি ধুলো ও ম্লান চাঁদের আলোর প্রবেশ দেখে মনে হচ্ছে আলো অন্ধকারের ভারে দমচাপা হয়ে যাচ্ছে।

মেঝেটা ভেজা। দেয়ালের প্লাস্টার উঠে গেছে। স্যাঁতসেঁতে ভাব, আর কর্ণারগুলোয় অদ্ভুত ছোপ ছোপ দাগ। দরজার কব্জা হঠাৎ কিঞ্চিৎ নড়ে ওঠে বাতাসে, তার সঙ্গে দরজার ফাঁক দিয়ে একটু ফিসফিসানি ভেসে আসছে। দরজার ওপাশে কারা?

পুরোনো কাঠের চেয়ার পড়ে আছে এক কোণে, তার এক পায়া সামান্য ভাঙা। ওই চেয়ারটাতে একজন রুগ্ন পুরুষ মানুষ বসে আছে। গালে কাঁচাপাকা দাঁড়ি, চোখ দুটো নিবুনিবু। তার পাতলা, কঙ্কালসার হাত কাঁপছে, শরীরে অবসাদ আর দীর্ঘ রোগভোগ আছে তা বোঝা যাচ্ছে।

হঠাৎ দরজাটা কড়াৎ করে শব্দ করে খুলে যায়। বাতাসের ধাক্কায় জানালার পর্দা এক ঝটকায় উড়ে উঠে আবার ঝিমিয়ে পড়ে। এক লম্বামতো ছায়া বেপরোয়া ভঙ্গিতে হেঁটে ভেতরে ঢোকে। তার ভারী বুটের শব্দ মেঝের স্যাঁতসেঁতে নীরবতাকে খানখান করে দেয়।

ডান হাতে ধরা ওল্ড মঙ্ক বোতলের অর্ধেকের বেশি খালি। আরেকটু হেলে পড়লেই মেঝেতে ছলকে পড়বে বাদামি তরল। বাঁ হাতে সিগারেটের শেষ অংশটা জ্বলছে। ধোঁয়া সরু সরু রেখায় উঠে মিলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। লোকটা বোতলের মুখটা ঠোঁটে ঠেকিয়ে এক ঢোঁক নেয়। তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,

“এখনও মরিস নি বুড়ো?”

রুগ্ন মানুষটা কোনো জবাব দেয় না। তার নিস্তেজ চোখদুটো শুধু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা ছায়াটার দিকে চেয়ে থাকে। বোতল হাতে লোকটা আবার এক ঢোঁক নেয়, তারপর ঠোঁটের কোণে বিদ্রূপ ঢেলে ফেলে বলে, “ভেতরে আয়।”

ঠিক তখনই দরজার ফাঁক দিয়ে পেছন পেছন আরও কয়েকজন প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে একজনের চোখ দুটো সূক্ষ্ম শেয়ালের মতো সরু, দাঁতের ফাঁকে দাঁত-চেপা সিগারেট টিমটিম করে জ্বলছে। হাতে একটা লোহার রড। বাকি দু’জন তরুণ।

ঘরে প্রবেশ করেই শেয়াল-চোখওয়ালা লোকটা ধুলো জমা মেঝের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। “কৈ মাছের প্রাণ।”

বলতে বলতে ধপ করে সে কাঠের বাক্সের ওপর বসে পড়ে, হাতে ধরা রডটা ধীরে ধীরে মেঝেতে ঠুকতে থাকে,

টক… টক… টক…

তরুণ ছেলে দুটো দরজার একপাশে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠোঁটের কোণায় ক্রুর হাসি।

রড ফেলে ধূর্ত শেয়ালের মতো চোখওয়ালা লোকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে রুগ্ন লোকটার সামনে ঝুঁকে পড়ে, তার মুখের কাছাকাছি গিয়ে ফিসফিস করে,

“জেলে রেখে ভুল করেছি। আগে থেকেই তোর উপর এই থেরাপি চললে তুই অক্কা পেয়ে যেতি তাড়াতাড়ি। আফসোস হচ্ছে। বিরাট আফসোস হচ্ছে।”

রুগ্ন মানুষটা হঠাৎ হেসে উঠে। হাসতেই থাকে।
শয়তানগুলো থমকে যায়। চারজনই একে অপরের দিকে তাকায়। হলোটা কি?

দ্বিতীয় জনের মেজাজ বিগড়ে গেল। সে আর সহ্য করতে পারল না। খপ করে রুগ্ন লোকটার গলা চেপে ধরে বলল,

“তোর এত হিম্মত!”

ঠিক তখনই বড়জন তার হাতটা টেনে ছাড়িয়ে নেয়।

“মেজাজ সামলা।”

অন্য দুইজন ধৈর্য হারিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,

“জবাই করে দাও বড় ভাই। একে ছাড়লে আমাদের সমস্যা বাড়বে। দেখ এখনো কেমন তেজ! ও ছাড়া পেয়ে কি করবে। বুঝতে পারছ?”

আসলাম খান চুপচাপ বুড়োর দিকে তাকিয়ে থাকে। তার কুঁচকানো ভ্রুর নিচে চোখদুটো শীতল। কড়া হিসেব কষছে।

ধূর্ত শেয়াল আর্যাব খান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠল,

“তোদের ফালতু কথা রাখ। জবাই করলে ছাড়া পাবি ভাবছিস নাকি? কাবির দেওয়ান পাতাল থেকে সব খবর বের করে আনবে।”

ঘরটা আবার থমথমে হয়ে গেল। জানালার পর্দা আস্তে আস্তে দুলছে, বাইরে কোথাও একটা কুকুর ডেকে উঠল। রুগ্ন মানুষটা হাসতে হাসতে বলে উঠল,

“ভয় পাচ্ছিস? আরেহ খান ব্যাটারা ভয় পাস না। মেরে দে। আমি তোদের বলছি কেস খাবি না। মেরে দে!”

তার বিদ্রুপ আর ব্যঙ্গ খানদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল।

আর্যাব খান তার দিকে হঠাৎ ঝুঁকে পড়ল। কোমর থেকে স্টিয়ার এম৯ পিস্তলটা বের করে ঠেকিয়ে দিল রুগ্ন মানুষটার কপালে। ঠান্ডা ধাতব স্পর্শে লোকটার শরীর একটুও কাঁপল না বরং হাসিটা আরও বাড়ল।

আর্যাব খান নিচু গলায় ফিসফিস করে বলল,

“সত্যি? তোর ছেলেমেয়েরা কিন্তু তোর অপেক্ষায় আছে বুড়ো। তোর ভাই, ভাইপো, বোন আর তাদের ছেলেমেয়ে সবাই।”

তার কৌশলী হুমকি শুনে রুগ্ন মানুষটা এবার আর হাসেনা। হঠাৎ কেমন চুপসে যায়। সবার কথা মনে পড়ে। সবার চেহারা স্মৃতিপটে ভেসে উঠে। সব কেমন এলোমেলো লাগে। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। জীবনটাকে এভাবে ছারখার হতে হল কেন? সোনার সংসার ছিল তার। তার দু সন্তান কাদিন, কল্পনা! ওরা মা বাবার আদর মহব্বত বেশিদিন পেল না কেন?

এত প্রশ্নের একটারও উত্তর নেই। এই খানরা সব তছনছ করে দিয়েছে। সবটা। কাবিরের জীবনটাও ধ্বংস করে দিল। নিশ্চয়ই সেই মেয়ে আরেক পিশাচিনী। ওরকম একটা পিশাচিনী তার সোনার সংসারটা ধ্বংস করে দিয়েছিল। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তো ভালোই কাটছিল ছন্নছাড়া কামরান দেওয়ানের। বড় সন্তান হওয়া স্বত্বেও বিয়ে করেছিলেন ছোট ভাইয়ের পর। ছন্নছাড়া জীবনটাতে ভালোবাসা নিয়ে আসে তার স্ত্রী মোহনা বেগম। সংসার হয়। দু সন্তানের পিতা হন তিনি। তারপর হঠাৎ নেমে আসে ভয়ংকর এক ঝড়। ওই ঝড়ে সব ভেসে গেল। স্ত্রী, সংসার, স্বপ্নগুলো। এত আফসোস, আহাজারি, কষ্ট তিনি লুকোবেন কোথায়? চোখ থেকে উত্তপ্ত দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।

তা দেখে চার ভাই হাসতে থাকে। তিনি চোখ তুলে তাকান তাদের দিকে। মনে মনে বিড়বিড় করেন,

“তোরাও আমার গুলিতে মরবি ঠিক যেভাবে তোদের বাপের বোন মরেছিল আমার হাতে। আল্লাহর কসম তোরা জীবনেও শান্তিতে মরতে পারবি না।”

চলমান..

#মনবিবাগী_দিওয়ানা
#পর্ব_৭
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

ঘরটি আধো-অন্ধকারে ডুবে আছে। জানালার ফাঁক গলে আসা চাঁদের ম্লান আলো ছড়িয়ে আছে দেওয়ালের কোণে কোণে। ইথিকা বুকের নিচে বালিশ দিয়ে শুয়েছে, নিঃশব্দে শ্বাস ফেলছে।
কাবির তার পিঠের দিকে ঝুঁকে আছে। ইথিকার মেরুদণ্ড বরাবর গভীর মনোযোগে সে দেখছে ক্ষতস্থানের জায়গাটা। কাঁচির ধারাল ফলা টেনে দিয়েছে ত্বকের ওপর। ক্ষতটা সরু হলেও বেশ গভীরে গেঁথেছে। ইথিকা আয়নায় কাবিরের প্রতিফলন দেখছে। গম্ভীর, মনোযোগী, চোখেমুখে অদ্ভুত নির্লিপ্ততা নিয়ে তুলোর টুকরোতে জীবাণুনাশক ঢেলে আলতো করে ক্ষতস্থানে ছুঁইয়ে দিতেই ইথিকার শরীর কেঁপে উঠল। কিন্তু সে শব্দ করল না। ঠোঁট চেপে ধরে সহ্য করল।

কাবির শান্ত গলায় বলল,”একটু লাগবে।”

তারপর সাবধানে ক্ষতস্থানের ওপর ছোট ব্যান্ডেজ বসিয়ে দিল সে। ইথিকা আয়নার দিকে তাকিয়েই রইল।

ব্যান্ডেজ লাগানো শেষ হতেই কাবির উঠে গিয়ে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ল। চোখের ওপর হাত রেখে ক্লান্ত গলায় বলল,

“তোমার হয়ে গেলে আলো নিভিয়ে দাও।”

ইথিকা তৎক্ষণাৎ উঠে বসতে গেল, কিন্তু ক্ষতস্থানে টান পড়ায় কুঁকড়ে উঠল। দাঁত কামড়ে ব্যথাটা সামলাল, তারপর ঝাঁজাল স্বরে বলল,

“আমার পিঠে আঘাত লেগেছে, আর আপনার ঘুম পাচ্ছে?”

কাবির ধীরে ধীরে চোখের ওপর থেকে হাত নামিয়ে তার দিকে তাকাল। মুহূর্তখানেক চুপচাপ তাকিয়েই রইল। নিজেকে প্রশ্ন করল, এতক্ষণ কেন সেবা করল সে? কি দরকার ছিল তার? বিরক্তিতে চোখ সরু করে বিড়বিড় করে বলল,”অকৃতজ্ঞ মেয়েমানুষ!”

ইথিকা ভ্রু কুঁচকে তাকাল।

“কিছু বললেন?”

কাবির আবারও কব্জি দিয়ে চোখ ঢেকে বলল,

“না।”

ইথিকা হাতটা খপ করে ধরে চোখের উপর থেকে নামিয়ে নিল। কাবির চোখ পাকিয়ে তাকাল। চোখ দিয়েই প্রশ্ন ছুঁড়ল। কি সমস্যা?

ইথিকা দুপাশে মাথা নাড়িয়ে হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে বদমায়েশি হাসল। পাঁচ ভাইবোন মিলে এই হাসিটা এমনভাবে আয়ত্ত করেছে যে, যাকে উদ্দেশ্য করে হাসে সে বিরক্ত না হয়ে পারে না।

কাবির চোখের ওপর কব্জি তুলে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ইথিকা একটুও দেরি না করে তার হাতটা সরিয়ে দিল।

কাবির এবার সত্যিই বিরক্ত হয়ে ‘চ’ বর্গীয় শব্দ করে তাকাল।

ইথিকা একইভাবে হাসল। সে বিছানায় পিঠ রেখে ঘুমাতে পারছে না। আর এই লোকটা দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে পড়বে? না, সে তা হতে দেবে না।

পরনের গাঢ় নীল রঙের শাড়িটা তার ফরসা গায়ের সঙ্গে দারুণ মানিয়েছে। শাড়ির আঁচল অনেকটা বিছানায় ছড়িয়ে আছে, ফ্লোরাল ব্লাউজের কব্জিতে ছোট্ট এক লাভ-শেপের কাট। সে জানে, এই শাড়িতে তাকে দেখতে ভালো লাগছে। আর এমন সুন্দরী বউ রেখে সে চোখের উপর হাত রেখে ঘুমাচ্ছে কোন আক্কেলে?

কাবির হাতটা চোখের উপর রেখে ঠোঁটে কি যেন বিড়বিড় করল। ইথিকা হাতটা দুহাতে ধরে সরিয়ে দিয়ে আবারও হাঁটুতে থুঁতনি গুঁজে হাসল। কাবির মেজাজ হারিয়ে বলল,

“কি চাও তুমি?”

ইথিকা বলল,”বিছানায় পিঠ রেখে ঘুমাতে পারছিনা।”

“তো আমার মাথায় রেখে ঘুমাও।”

“আর ইউ সিরিয়াস!”

কাবির বিরক্ত হয়ে বলল,

“তুমি ডিভানে গিয়ে পা টেনে শুয়ে পড়ো তাহলে। আমাকে ঘুমাতে দাও খানি।”

ইথিকা বলল,”ডিভানেও তো পিঠ ঠেকাতে হবে।”

কাবির পাশ ফিরে শুয়ে বলল,

“যা ইচ্ছে তাই করো। আশ্চর্য!”

ইথিকা হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে রইল। কাবির চোখের ওপর হাত রেখে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। মাঝরাতে যখন তার ঘুম ভাঙল, তখন সে টের পেল ইথিকা তার বুকের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল সে। ইথিকার নিঃশ্বাসের ধীর ওঠানামা, শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে থাকা, ঘুমন্ত মুখের শান্ত ভঙ্গিটা দেখে কাবির বুঝতে পারল এই মুহূর্তে মেয়েটা সম্পূর্ণ নির্ভার।

সকালের নাশতার পর ছাদের বাগানে পানি দেয়ার সময় ইথিকা যদিও সেকথা অস্বীকার করেছে।

আর বলেছে, “শত্রুর বুকে শত্রু মাথা রেখে ঘুমাতে পারেনা কাবির সাহেব।”

কাবির ঠোঁটের কোণে একচিলতে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে জানতে চাইল,

“তাহলে রাতে যে শুয়েছিল সে কে?”

ইথিকা ভ্রু উঁচিয়ে বলল, “ভূত হবে হয়ত।”

কাবির হেসে মাথা নাড়ল।

“ভূত ঘুমের মধ্যে আমার শার্ট মুঠো করে ধরেছিল। বাহ!”

ইথিকা একটুও না দমে নির্লিপ্ত গলায় বলল,
“গলা টিপে ধরতে গিয়ে ভুল করে শার্ট ধরে ফেলেছিল হয়ত।”

কাবির পানির জার রেখে এবার তার দিকে ফিরল। আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

“তাহলে এবার ঠিকঠাক ধরো দেখি। তোমার দুঃসাহস দেখার ইচ্ছে আছে।”

ইথিকা পেছনে সরে গেল। কাবির বিজয়ের হাসি হাসল।

_________________

“কতবার আপনাকে বলতে হবে আমার পিছু ছাড়েন? আপনি কি কানে শুনতে পান না?”

কল্পনার কণ্ঠ ক্ষোভে কাঁপছে। লোকটার প্রতিক্রিয়া না দেখতে পেয়ে কল্পনা আবারও চেঁচিয়ে উঠল।

“আশ্চর্য! আপনি কি চান আমি আমার ভাইদের বলি আপনার বিষয়ে? আপনার হাড়গোড় আস্ত থাকবে তারপর? আমার পিছু নেবেন না প্লিজ! নিজের ভালোটা বুঝুন।”

লোকটা চুপ। সবসময় চুপ করে থাকে। একদম প্রতিক্রিয়া দেখায় না। যেন সে কোনো পাত্তা দেয় না কল্পনার কথাকে। অথচ প্রতিদিন সে এই পথেই আসে, কল্পনার পিছু নেয়, কিন্তু কখনো কিছু বলে না।

কল্পনা বিরক্তিতে হাত মুঠো করল।

“আপনি শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা? আমি আপনাকে অপছন্দ করি। ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ আমার পছন্দ না। সবসময় এক কথা বলতে ভালো লাগে না!”

লোকটা মাথা নামিয়ে রাস্তার উড়ে আসা পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকল।

কল্পনা এবার রাগে গজগজ করতে করতে হাঁটা দিল। কিছুদূর যেতেই খেয়াল করল, লোকটাও নীরবে পিছু পিছু আসছে। সঙ্গে সঙ্গেই থেমে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল কল্পনা।

লোকটা এবার সরাসরি তার চোখে চোখ রাখল।

“কি চান আপনি?”

লোকটা ধীর গলায় বলল, “কিছু না। আমি তো শুধু আপনার পিছু পিছু হাঁটছি। কিছু তো করছি না।”

কল্পনার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।

“কি নির্লজ্জ স্বীকারোক্তি! আপনার কোনো ধারণা আছে, আপনি আমার পিছু নিয়ে নিজেকে কত নিচে নামাচ্ছেন?”

লোকটা একদম নির্লিপ্তভাবে বলল, “আছে।”

কল্পনা ঠোঁট কামড়ে দ্রুত পা চালিয়ে দিল। অসহ্য! সে আর সহ্য করবে না এই বদ লোককে। লোকটা আর এগোল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে কল্পনার চলে যাওয়া দেখল। যতদূর কল্পনাকে দেখা গেল, ততদূর সে তাকিয়ে থাকল। এই মেয়েটাকে সে খুব ভালোবাসে। কিন্তু কোনোদিন হয়ত তা বলতে পারবে না। সে অনেক বড়লোকের মেয়ে। তার পরিবারের ক্ষমতা, প্রতিপত্তি সবকিছুই তার মতো সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

তবু, প্রতিদিন মেয়েটার পিছু নেয় সে। কোনো উদ্দেশ্য নেই, কোনো আশাও নেই। শুধু মেয়েটাকে দূর থেকে দেখা, আর তার চলার পথের ছায়া হয়ে থাকাতেই তার যত আনন্দ।

সেই মুহূর্তে পুলিশ সাইরেনের শব্দ শোনা গেল। লোকটা ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, একটা গাড়ি তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

কাঁচ নামিয়ে কালো চশমা পরা পুলিশ অফিসার তাকে ইশারায় ডাকল।

“এদিকে আয়।”

লোকটা নিঃশব্দে এগিয়ে গেল।

“ওই মেয়েটার পিছু নিস কেন রোজ? তোর ওকে চায় নাকি?”

লোকটা নির্লিপ্ত স্বরে বলল, “না স্যার। চাই না।”

“তাহলে পিছু নিস কেন আবাল?”

লোকটা চুপ। কিছু মুহূর্ত পেরিয়ে বলল, “আমার সাথে তার যায় না স্যার। ওর বাপ চাচারা অনেক বড় মাপের মানুষ।”

পুলিশ অফিসারটা বিরক্ত হয়ে বলল,

“আরে এসব ফিল্মি ডায়লগ রাখ। গাড়িতে উঠে বস।”

লোকটা গাড়িতে উঠতে বাধ্য হলো পুলিশ অফিসারের জোরাজোরিতে। যেতে যেতে অফিসারটি তাকে কুপ্রস্তাব দিল। একটা লোককে মেরে লাশটা দেওয়ান বাড়ির সামনে রাখতে পারলে ওই কল্পনা মেয়েটা তার। সাথে একটা মোটা এমাউন্টের টাকাও সে পাচ্ছে।

লোকটা এমন প্রস্তাব শুনে ক্ষণিকের জন্য লোভী হয়ে উঠল।

কল্পনা…

যে মেয়েটাকে সে কিছু না বলেই ভালোবেসে গেছে। যে তাকে তুচ্ছ করে, ঘৃণা করে, অবজ্ঞা করে, তবু যার এক ঝলক চোখের দিকে তাকানোর জন্যও সে প্রতিদিন অপেক্ষা করে।

এই একটা কাজ করলেই কল্পনা তার হবে? সাথে টাকাও?

লোকটার চোখেমুখে দ্বিধা, আর টানাপোড়েন খেলা করছে। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কল্পনা যদি পরে সব জানতে পারে তখন?

আর্যাব খান কালো চশমার ফাঁকে তার চেহারা দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। শিকার ধরা পড়েছে, এখন শুধু দড়িটা টেনে দেওয়া বাকি।

শয়তানি খেলায় সে ওস্তাদ। ক্ষমতা, ভয়, আর লোভ এই তিনটা জিনিসের সঠিক ব্যবহার জানলে, মানুষকে কাঁচের টুকরোর মতো গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। আজ পর্যন্ত কেউ তাকে টেক্কা দিতে পারেনি। পারবেও না।

আর্যাব খান ধীরেসুস্থে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে লোকটার দিকে তাকাল। তারপর প্যাকেট থেকে একটা ‘বেন্সন অ্যান্ড হেজেস গোল্ড’ বের করে তার দিকে বাড়িয়ে দিল। লোকটা একটু ইতস্তত করল, কিন্তু শেষমেশ নিল।

আর্যাব খান লাইটার এগিয়ে দিল, ফ্লিন্ট চাকার ঘর্ষণে আগুন জ্বলে উঠল। আগুনের কমলা আলোয় লোকটার মুখে সন্দেহ, ভয়, আর লোভের জটিল মিশ্রণ দেখা গেল। সে এক টান দিল, তারপর ধোঁয়ার কুণ্ডলির ভেতর থেকে ছেড়ে আর্যাব খানের দিকে তাকাল।

আর্যাব খান হেসে তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল,

“টাকা আগেই পেয়ে যাবি। চাপ নেই।”

______________

ইথিকা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে ফিরেছে। আজ কাবিরেরও আসার কথা ছিল, কিন্তু সে আসেনি। আসবেও না। ইথিকা তাই আর জোর করেনি। সে ভাবছে, এদিক থেকে সরাসরি ক্যাম্পে চলে যাবে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে। সামনে তার অনেক কাজ।

বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মা আর বাবার স্নেহ-মাখা আলিঙ্গনে নিজেকে মুড়ে নিল ইথিকা। তাদের উষ্ণ ভালোবাসা গ্রহণ করতে না করতেই ছোট ভাইপো ইনাম দৌড়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরল। ইনামের পিছু পিছু এল তাহমিনা। বিস্মিত কণ্ঠে শুধোল,

“একা এসেছ?”

ইথিকা জবাব দিতে যাবে, ঠিক তখনই তার দৃষ্টি আটকে গেল তাহমিনার মুখে। সে ভয়ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আসলাম খানের দিকে। কেন? প্রশ্নটা কি খুব সাধারণ ছিল না? কেন এভাবে তাকাতে হবে? প্রশ্নটাতে কাবির দেওয়ান জড়িত আছে বলে?

ইথিকা পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে শান্ত গলায় বলল,”হ্যাঁ, একা। কাবির ব্যস্ত।”

আসলাম খান বোনকে তাকাতে দেখে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল। তাহমিনা প্রশ্নটা এত ভেবে করেনি। তাকে সন্দেহ করতে করতে লোকটার বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জানোয়ার।

মা এগিয়ে এসে বললেন, “বৌমা ওকে আগে কিছু খেতে দাও। ইথু, তুমি বসো। বলো ওখানে কেমন কাটল?”

ইথিকা সোফায় বসল। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, “সব ভালো। কাবিরও চায় আমি একা থাকি। কিন্তু সে আমার সাথে থাকবে না।”

মায়ের কপালে ভাঁজ পড়ল। “এ কেমন কথা?”

“আমি রাজি হয়ে গেছি। সে না থাকলে বরং ভালোই।”

তার গলায় একটুও দোলাচল নেই। মা কেন যেন এই কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। সদ্য বিবাহিত বউ একা থাকবে? কীসের এত অহংকার কাবির দেওয়ানের? কেন সে বাড়ি ছেড়ে বউয়ের সাথে থাকতে পারবে না?

তাহমিনা নাশতা পানি নিয়ে এল। তখুনি আর্যাব খানও বাড়িতে এল। ইথিকা সোফা ছেড়ে উঠে পড়ল। ভাইয়ের সাথে স্নেহমাখা আলিঙ্গন শেষে বলল,”ফাইনালি ক্যাম্পে যাচ্ছি।”

“গুড।”

ইলিনা বেগম তাহমিনাকে আদেশ দিলেন,

“আর্যকেও চা দাও।”

আর্যাব খান ইথিকার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল,

“চা খাব না।”

“কি খাবে?”

ইনাম উত্তর দিল,”মত মত(মদ)।”

সবাই হা হা করে হেসে উঠল। তাহমিনা ছুটে এসে তার গালে কষে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,

“খবরদার এসব কথা মুখে আনবি না।”

আসলাম খান চোখের পলকে তেড়ে এসে চড়টা তাহমিনার গালে মারল। বলল,

“তোর বাপের বাড়ি থেকে এনেছিস এই ছেলে? আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার ছেলের গায়ে হাত তুলিস কোন সাহসে?”

তাহমিনা টলমলে চোখে তাকাল। শক্ত কন্ঠে বলল,”ও শুধু আমার ছেলে।”

আসলাম খান গর্জে উঠল,”কি বললি?”

ইথিকা সামনে এসে দাঁড়াল। বলল,

“ভাইয়া আমি আসামাত্র এসব কি?”

তাহমিনা ইথিকার দিকে তাকিয়ে বলল,”তোমার ভাইকে পারলে শেখাও তোমার শ্বশুরবাড়ির পুরুষ মানুষগুলো তাদের স্ত্রীকে কত সম্মানে রাখে।”

ইথিকা চুপ করে রইল। আসলাম খান বলল,

“তুই তোর বাপের বাড়ি চলে যা। আমার ছেলে আমার কাছে থাকবে।”

তাহমিনা বলল,”যেদিন ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারব সেদিন বাড়ি ছাড়ব। তার আগে না। আমি ওকে ন’মাস পেটে রেখেছি।”

আসলাম খান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

“তুই এত হেডম দেখাচ্ছিস কার সাথে? ছেলেকে নিয়ে বেরোলে তোর আর তোর ফকিন্নি বাপ ভাইদের সাধ্য আছে আমার ছেলের দুই বেলার খাবারের যোগান দেয়ার? তুই করিসটা কি? তোর মুরোদ আছে দুই টাকা কামানোর? যা বের হয়ে যা। কিন্তু খবরদার আমার ছেলের যদি এতটুকু কষ্ট হয় তোকে আমি দেখে নেব।”

ইলিনা বেগম কথা বলে উঠলেন,

“খবরদার আমার নাতিকে নিয়ে কোথাও যাবে না।”

তাহমিনা বলল,”আপনার ছেলে যেহেতু যেতে বলেছে আমাকে তো যেতেই হয়। আমি আমার ছেলের মুখের অন্ন ঠিকই যোগাড় করব।”

ইথিকা বলল,”ভাবি ও অসুস্থ হয়ে যাবে।”

তাহমিনা বলল,”অসুস্থ পরিবেশে বড় হচ্ছে। আর কত অসুস্থ হবে বলতে পার?”

ইথিকার কিছু বলার রইল না। তাহমিনা বিকেলে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। তার মা ভাই খুশি হলো তাকে দেখে। কতগুলো দিন পর সে বাপের বাড়িতে এসেছে নিজেরও হিসেব নেই।

ইথিকাও রওনা দিল ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। প্রথমে বান্দরবানের কেওক্রাডং চূড়ায়, তারপর সোজা সুন্দরবনে। রিসার্চ ফার্মের দল নিয়ে সে গভীর জঙ্গলে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল বহুদিন ধরে। দুরূহ অভিযান, অজানা প্রাণী, অনভ্যস্ত পথ, আর বুনো প্রকৃতিকে জানার অদম্য ইচ্ছা তার। কিন্তু এবার সে বন্ধু বান্ধবদের সাথে এসেছে। তার ভাইদের কেউ তার সাথে নেই।

বান্দরবানে থাকাকালীন কাবির ফোন করেছিল। ইথিকা রিসিভ করেনি। পরে সে নিজ থেকে ফোন দিতেই কাবির রিসিভ করেনি।

_______

সুন্দরবনের সুনসান গহীনে ইথিকা তার টিমের সাথে পা রেখেছে খুব সকাল সকাল। তখন অদ্ভুত শিহরণ বইছিল শরীরজুড়ে। চারপাশে বিশাল গাছপালা, শ্বাসমূলের জঙ্গল, আর পানকৌড়ির ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনে কি অদ্ভুত রকম ভালো লাগছিল তার। রিসার্চ ফার্মের দল তার ঠিক পেছনেই। সে তার কয়েকজন বন্ধু একসাথে হাঁটছে।

সামনে জঙ্গলের আরো গভীর অংশে ঢোকার প্রস্তুতি চলছে। গাইড সতর্ক করল,

“এখানে বাঘের আনাগোনা আছে, সাবধানে পা ফেলবে সবাই।”

ইথিকা ছবি তুলতেই ব্যস্ত। সে দেশ বিদেশে অনেক জায়গা ঘুরেছে। সুন্দরবনে এই প্রথম। আসলে তার কখনো সুন্দরবন দেখার ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু এবার মনে হল, না এসে ভুল করে ফেলেছে। এবার সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেখানে যাওয়া হয়নি সেখানে সে যাবে। কিন্তু স্মৃতি ক্যামেরা বন্দী করবে।

পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বন্ধু জিজ্ঞেস করল,

“বর কেমন রে?”

ইথিকা ঠোঁট উল্টে বলল,

“ভালোই।”

“শুধু ভালো?”

ইথিকা হাসল।

“অল্প চেনাজানা হয়েছে বর হিসেবে। কিন্তু দেওয়ানি হিসেবে তো আগে থেকে চিনি। বলেছি না ওরা প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ মারতে পারে।”

হঠাৎ দলের একজন চেঁচিয়ে উঠল। সবাই সাথে সাথে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল।

“সাপ সাপ!”

সবাই থেমে গেল। একটা কালো সাপ গাছের শাখায় লেপ্টে আছে। তার চকচকে শরীর গাছের ছাল আর পাতার মধ্যে মিলিয়ে গেছে। বোঝায় যাচ্ছে না। ভাগ্যিস তার চোখে পড়ল।

দলের একজন সদস্য হঠাৎ মজার ছলে সাপটার দিকে ঢিল ছুঁড়ে দিল। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ লোকটা তাকে গর্জে উঠল,

“What are you doing! Don’t be reckless. You have no idea how dangerous that could be!”

কিন্তু কেউ খেয়াল করেনি ঢিলটা ছুটে গিয়ে হঠাৎ করেই দূরের একটা মৌচাকে গিয়ে পড়বে। আর সাথে সাথে মৌমাছির ঝাঁক হঠাৎ করে তাদের দিকে উড়ে আসতে শুরু করে।

শোঁ শোঁ আওয়াজে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। যে যেদিকে পারে সেদিকে ছুটতে থাকে। রিসার্চ ফার্মের সিনিয়র সবাই ধমকাধমকি করেও থামাতে পারল না। সবাই ছুটছে। প্রাণ বাঁচাতে হবে। সিনিয়রও শেষমেশ ছুটল।

এদিকে ইথিকা ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ড করতে ব্যস্ত ছিল। চারপাশে মৌমাছির উড়ে আসার শব্দ, আর তাদের ঝাঁক বয়ে চলা দৃশ্যটা এত্ত সুন্দর! এত বিশাল মৌচাক সে কখনো দেখেনি। ক্যামেরার লেন্সে সে ছবি আর ভিডিও ধারণে ব্যস্ত কিন্তু ভিডিও শুটিংয়ের তালে সে নিজেই বিপদে পড়বে তা নিয়ে এতটা ভাবেনি।

মৌমাছির ঝাঁক তার দিকে ছুটে এল, কিন্তু সে পালানোর সুযোগ পেল না। এক ঝাঁক মৌমাছি তাকে ঘিরে ধরল। সে চিৎকার করতে করতে ছুটতে লাগল। কি যন্ত্রণা! বিষফোঁড়ার মতো ব্যাথা।

ছুটতে ছুটতে হঠাৎ শক্তপোক্ত একটা বুকের সঙ্গে তার মাথার ঠোকা লাগল। কিছু বুঝে উঠার আগেই কাপড় দিয়ে তার মুখ ও নাক বেঁধে দিল লোকটা। ইথিকার দমবন্ধ হয়ে এল। যন্ত্রণায় চোখ ফেটে জল পড়ল। ক্যামেরা, ফোন, সানগ্লাস এমনকি সে নিজেই কোথায় গেল সে জানতেই পারল না।

চলমান….

#মনবিবাগী_দিওয়ানা
#পর্ব_৮
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

ইথিকা নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করল। চার ভাই তার সামনে। মা বাবার উদ্বিগ্ন চেহারা। তার চোখ খুলতেও বেশ পোহাতে হলো। শরীরের প্রতিটি জায়গায় ব্যাথা। কি অসহ্য যন্ত্রণা। পুরো মুখটা গলা, ঘাড়, হাত পা সব ঢোলের মতো ফুলে আছে। আসলাম খান বলল,

“যাদের সাথে গিয়েছিলি তারা ওখানে মাছি তাড়াচ্ছিল? একা একা মৌচাকের সামনে গিয়েছিলি কেন?”

ইথিকা ঠোঁট নাড়াতে পারছেনা। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখল ঠোঁটদুটো বেশ ফুলে গেছে। চোখে জল টলমল করছে। মা এসে তার পাশে বসল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। আর্যাব খান বলল,

“মা ওকে কিছু খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দাও।”

ইথিকা ধীরে ধীরে বাহুর যন্ত্রণাটা অনুভব করল। সূক্ষ্ম, চিমটির মতো ব্যথা। সম্ভবত ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে।

মা সামনে এসে বসে স্যুপের বাটিটা তার মুখের সামনে ধরলেন। ধোঁয়া ওঠা স্যুপের গন্ধ নাকে আসতেই ইথিকা মুখ ঘুরিয়ে নিল। কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। মাথার মধ্যে কেবল একটা কথাই ঘুরছে। সে সোজা বাড়িতে কীভাবে এল? তার ক্যামেরা? ফোন? সব গেল কোথায়? সে মুখ ফিরিয়ে নিল, খেতে চাইলো না।

আশিষ খান পাশে দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
“খাচ্ছিস না কেন? একা একা আর কোথাও যাবি? তুই কি বিয়ের পর বলদ হয়ে গেছিস নাকি?”

রাগে ইথিকার কপালে শিরাগুলো দপদপ করে উঠল। পাশের বালিশটা তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারল আশিষের দিকে।

আশিষ হো হো করে হেসে বালিশটা খপ করে ধরে ফেলল। তারপর সেটা আবার ইথিকার মুখের দিকে ছুঁড়তে নিল।

ঠিক তখনই আর্যাব খান হাত বাড়িয়ে বালিশটা মাঝপথে ধরে ফেলল। কড়া স্বরে বলল,
“ওর মুখের অবস্থা দেখছিস না?”

তার গলায় চাপা ধমক শুনেই আশিষ থেমে গেল। ইথিকা ধীরে ঠোঁট নাড়ল। গলাটা খসখসে শোনালো নিজের কাছেই।

“মম ওয়াশরুমে যাব।”

মা তাকে ধরে ধরে ওয়াশরুম অব্দি নিয়ে গেলেন। আয়নার সামনে যেতেই তার মুখ দিয়ে বিকট এক চিৎকার বেরিয়ে এল। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল। কি অদ্ভুত লাগছে তাকে দেখতে।

চিৎকার শুনে সবাই ছুটে এলো। মা দ্রুত ইথিকাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“ট্রিটমেন্ট চলছে মা। ফোলা কমে যাবে। কেঁদো না সোনা।”

আসলাম খান বিরক্ত গলায় বলল,

“একেক জায়গায় যাবে, আর একেকটা বিপদ নিয়ে ফিরবে। তারপর সারাদিন কান্নাকাটি। ভাইরে ভাই, আরেকটা বোন থাকলে না জানি কী দশা হতো!”

বাকি তিনজন আড়ালে হেসে ফেলল। ইথিকা কাঁদতে কাঁদতে ফোঁপাচ্ছে। সে এই চেহারা নিয়ে কাবির দেওয়ানের সামনে সে যাবে না।

আসলাম খান বিরক্তিভরে কপালে হাত বুলিয়ে বলল,

“তোকে বিয়ে দিয়ে ফেলেছি না? এখন তোর সব প্যানপ্যানানি শোনার দায়িত্ব তোর বরের। দাঁড়া ওকে ফোন দিচ্ছি।”

এতক্ষণ চুপচাপ থাকা আর্যাব খান এবার বলল,

“যেতে দেব না। ও ওর বউকে একা ছাড়ল কেন? এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে ওকে।”

ইথিকা দমবন্ধ কান্নায় গুমরে উঠল। তার ফোলা চোখ দিয়ে আরও গড়িয়ে পড়ল জল। আর্যাব খান বিস্ময়ে বলল,

“কি আশ্চর্য! ভুল কি বললাম?”

ইথিকা বলল,

“যাব না ওই বাড়িতে।”

আর্যাব খান ইথিকার কাঁধে হাত রেখে শান্ত গলায় বলল,

“ওকে ঠিক আছে, যাস না। কিন্তু আগে শান্ত হ। ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে। কাঁদলে তো সমস্যা মিটবে না তাই না?”

ইথিকা কোনো জবাব দিল না। চোখের পানি মুছতে লাগল। আরিশ মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল,

“ইথু তোর মুখটা কুমড়োপটাশের মতো দেখতে লাগছে!”

ইথিকা ক্ষিপ্ত হয়ে জোরে এক চিৎকার দিল। আর্যাব খান সাথে সাথে রেগে তাকাতেই আরিশ ধুপধাপ করে দৌড় দিল ঘর থেকে বেরিয়ে। মা ঠোঁটে হাসি চেপে বললেন,

“আচ্ছা আচ্ছা, শান্ত হও। আর্য তুমি আরিশকে কয়টা চড় থাপ্পড় দাও তো!”

ইথিকা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,”আমি দেব!”

বাবা গম্ভীর মুখে বললেন,

“আরেহ! তার জন্য তো সুস্থ হতে হবে। নইলে ছোটাছুটি করে আরিশকে ধরবে কেমন করে? মারার জন্য তো এনার্জি লাগবে!”

ইথিকা তৎক্ষণাৎ চেঁচিয়ে বলল,”ঠিক আছি আমি!”

বাবা ভড়কে গিয়ে দ্রুত বললেন,”আচ্ছা আচ্ছা, বেশ!”

________________

চারপাশে গুমোট বাতাস। তার চোখেমুখে নির্লিপ্ত ভাব। গাড়ির ছাদে বসে আছে আর্যাব খান। সামনের লোকটা অস্থির হয়ে আর্যাব খানের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমি ওই লোকটাকে মারব স্যার। কিন্তু তারপর? তারপর কী হবে? মারার পর কল্পনাকে পাব তো? আমার টাকার আগে কল্পনাকে চাই!”

আর্যাব খান ভ্রু কুঁচকে লোকটার দিকে তাকাল।

“কল্পনা তোকে চায়?”

লোকটা চুপ করে থাকল। তারপর জড়ানো গলায় বলল,

“জানি না স্যার। কিন্তু ও ওর ভাইদের ভয় দেখায়। দূরে থাকতে বলে। আমি জানি একদিন সেও আমাকে ভালোবাসবে।”

আর্যাব খান ঠান্ডা চোখে লোকটাকে দেখল। অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু তার স্বভাব নয় অকারণে কথা বাড়ানো। দাঁত কটমট করে বলল,

“Your fucking love makes me sick!”

লোকটা হতভম্ব হয়ে গেল, কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে অসহায় গলায় বলল,

“কথা তো এটাই ছিল স্যার।”

আর্যাব খান নিজের ধৈর্যকে সামলাচ্ছে। ঠান্ডা গলায় বলল,

“এখন আমাকে কল্পনাকেও তুলে আনতে হবে তোর জন্য?”

লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

“সেটা আপনিই ভালো জানেন স্যার।”

আর্যাব খান একদৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকল। ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা সিগারেটটা আঙুলে চেপে ধরে ধীর গতিতে ধোঁয়া ছেড়ে বলল,

“আর যেদিন কল্পনা জানতে পারবে তুই একটা খুন করেছিস সেদিন কি হবে?”

লোকটা এবার চুপসে গেল পুরোপুরি। আর্যাব খানের ঠোঁটে বদমায়েশি হাসি। সে ডান ভুরু উঁচিয়ে বলল,

“কি ভাবছিস? টাকা কিন্তু মোটা অঙ্কের। ওই টাকা দিয়ে তুই হাজারটা কল্পনা পেয়ে যাবি। ভাব।”

লোকটা ভয়ংকর রেগে গিয়ে বলল,

“আমার কল্পনাকেই চাই স্যার। আমি ওকে নিয়ে অনেকদূর চলে যাব। আগে ওকে এনে দিন। ওই লোকটাকে মারতে দু মিনিট লাগবে।”

আর্যাব খান গাড়ির উপর বসে ছিল। লোকটার কথা শুনে চ বর্গীয় শব্দ করে মাথার নিচে দু’হাত ভাঁজ করে শুয়ে পড়ল। বিরক্তির সঙ্গে পা দোলাতে লাগল। বিড়বিড়িয়ে বলল,

“বড়ো ভাবনার বিষয়! বাপকে এনেছি, এখন মেয়েকেও? আমার হাত দিয়ে ওদের বংশপতন হতে চলেছে নাকি?”

তার ঠোঁটের কোণে ধূর্ত হাসি খেলা করছে। চোখেমুখে শয়তানি বুদ্ধির ঝলক। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে চট করে মাথায় একটা বুদ্ধি এল। মুহূর্তেই লাফ দিয়ে গাড়ির উপর থেকে নামল, চশমাটা চোখে চাপিয়ে দিয়ে বলল,

“তুই কেটে পড়। সন্ধ্যায় বিলিরোডের বাগানবাড়িতে চলে আসবি। ওখানে তোর কল্পনা তোর জন্য বসে আছে। সাথে কিছু ফুলটুল নিয়ে যাস। না পটলে সমস্যা।”

লোকটা হতবাক হয়ে গেল। উত্তেজনায় চাপা হাসি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করল। কিন্তু আর্যাব খানের ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে সেই হাসি মিলিয়ে গেল। আর্যাব খান সরু চোখে তাকিয়ে বলল,

“সেলুনে যা। চুলটুল কেটে, থোবড়াটা সাফটাফ করে আয়। নইলে তোকে দেখে দেওয়ানি বমি করে দেবে শালা।”

লোকটা মুখে অজান্তেই হাত দিল।

আর্যাব খান হেলেদুলে গাড়িতে উঠে বসল। স্টিয়ারিংয়ে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে সিগারেটের শেষ অংশটা ছুঁড়ে ফেলল জানালা দিয়ে। গাড়িটা কিছুদূর যাওয়ার পরই তার চোখ আটকাল সামনে। কল্পনা আর কিরণ পাশাপাশি হাঁটছে। কলেজ থেকে ফিরছে, না হয় মার্কেটে গিয়েছিল।

এক মুহূর্ত চিন্তা না করেই সে ব্রেক কষে দাঁড়াল কল্পনাদের সামনে। কল্পনা বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠল,

“রাস্তাঘাটে এত অজাত কুজাতের কুকুর হয়েছে যে হাঁটাও যাচ্ছে না!”

বকতে বকতে সে চলে যেতে লাগল। আর্যাব খান তার সাহস, স্পর্ধা আর মুখের ভাষা দেখে স্তব্ধ! কি বেয়াদ্দব এই মেয়েটা। একটুও ভয় পায় না।

কিরণ তবু চুপচাপ হাঁটছে। বরাবরের মতো শান্ত, ভীতু সে। বড় আপুর রাগকে ভয় পায়। কিন্তু আপুর মতো সাহস তার নেই। তাই মুখে কিছু বলার প্রশ্নই ওঠে না। যদিও তার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখতে এই মুহূর্তে আর্যাব খানের চেহারা কতটা ভয়ানক দেখাচ্ছে। কিন্তু সাহস করল না। তাছাড়া ওই খানদের মুখ দেখলে দিনটা ভালো যায় না।

আর্যাব খান কল্পনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষলো। মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলল,

“অজাত কুজাত বলা বের করছি। দাঁড়া। খুব বাড় বেড়েছে তোদের।”

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিল। ঠিক তখনই আশিষের ফোন এল। ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় বলল,

“বাড়িতে কাবির ভাই আসছে। দ্রুত ফিরে আসো।”

আর্যাব খান এক শব্দে বলল, “আসছি।” তারপর ফোন রেখে এক ঝটকায় গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল।

খান বাড়ির গেটের সামনে এসে পৌঁছাতেই কাবিরের গাড়িও এসে দাঁড়াল ঠিক পাশেই। কাবির গাড়ি থেকে নামল, কিন্তু একবারও তার দিকে তাকাল না। বরং নিঃশব্দ দৃঢ় পায়ে সোজা ভেতরে ঢুকে গেল।

ড্রয়িংরুমে ইথিকা নিশ্চিন্তে বসে চিপস খাচ্ছিল, টিভির পর্দায় কিছু একটা চলছিল, কিন্তু সেদিকে তার মনোযোগ নেই। কাবিরকে দেখতে পেয়ে সে মুহূর্তেই জমে গেল। মুখ ঢাকার উপায় খুঁজল, কিন্তু কিছু পেল না। কাবির তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের ভঙ্গিমা দেখে বোঝা যাচ্ছে না মনে মনে হাসছে কিনা। ইথিকা মুখে হাত দিল। আবারও কাবিরের দিকে তাকাল। লোকটার চোখমুখ স্বাভাবিক। ইথিকা কোনো রকমে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াতেই পেছন থেকে কাবিরের গম্ভীর হিমশীতল কণ্ঠ ভেসে এল,

“পালাচ্ছ কোথায়? তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। কোনো চেঁচামেচি ছাড়াই চুপচাপ চলো।”

ইথিকা থমকে গেল। একটুখানি ফিরল। কাবিরের চোখের দিকে তাকাল। কাবির সোজা বলল,”চলো।”

পেছন থেকে আর্যাব খান বলল,”ও যাবে না।”

কাবির সাথে সাথে তার দিকে ফিরে চেঁচিয়ে বলল,

“তুই আদেশ দেয়ার কে রে?”

আসলাম খান এতক্ষণ সোফায় বসা ছিল। এবার দাঁড়িয়ে পড়ল। কাঠকাঠ গলায় বলল,

“ওকে একা ছাড়লি কেন? তোর কাছে দেখছি আমার বোন নিরাপদ নয়।”

কাবির রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বলল,

“তুই গিয়েছিস তোর বোনকে বাঁচাতে? শুধু বড় বড় কথা বলতে শিখেছিস।”

আসলাম খানের কপাল কুঁচকে গেল। ইথিকা হতভম্ব! কাবির গিয়েছে সুন্দরবনে? সেই লোকটা কাবির ছিল? কি আশ্চর্য! কত কি ঘটে গেল। তার কিছু ভালো লাগছে না। তার কি চলে যাওয়া উচিত? সে ঝামেলা চায় না এমুহূর্তে।

আর্যাব খান ঠোঁট গোল করে বলল,

“ওহ হো হো উদ্ধার করে ফেলেছ ভাই কাবির। বউয়ের বিপদে ঢাল হয়ে থাকা বরের দায়িত্ব। আর তুমি সেটাই করেছ ভাই। বাড়তি কিছু করোনি।”

কাবির বলল,”তোরা সেসবও জানিস নাকি?

আর্যাব খান চোখ সরিয়ে নিল। কাবির ইথিকার দিকে ফিরে গর্জে উঠল,

“তুমি আসবে কি আসবে না?”

ইথিকা অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল ভাইদের দিকে। ওরা কিছু বলছেনা। সে বলল,

“যাব না আমি। সুস্থ হলে যাব।”

কাবির তাকে শেষবারের মতো বলল। ইথিকা এল না। উপরে উঠে যাবে অমন সময় কাবির এসে তার হাত খপ করে ধরে টেনে নিয়ে এল। আর্যাব খান ঢাল হয়ে দাঁড়াতেই কাবির তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ইথিকাকে গাড়িতে এনে বসাল। ইথিকা বলল, আমি যাব না। কাবির রক্তগরম চোখে তাকাতেই ইথিকা চুপসে গেল।
_______

দেওয়ান বাড়ির সবাই বিকেলের চা খেতে ড্রয়িং রুমে একসাথে বসেছে। কাদিন এসে চাচার পাশে বসে বলল,”কল্পকিরণ কোথায় আজকে?”

বুয়া ঝিনুক তাদের সামনে চায়ের ট্রে রেখে চলে গেল। লুবনা বেগম বলল,

“কিছু কেনাকাটা করতে গিয়েছিল। কাসেদও সাথে গিয়েছে।”

কাদিন ওই প্রসঙ্গে আর কথা না বলে বাবার প্রসঙ্গে চলে গেল। কাবির গুপ্তচর হায়ার করেছে। তারা আর্যাব খান আর তার ভাইদের গোপনে গোপনে লক্ষ রাখছে। গুপ্তচর কাবিরের কাছ থেকে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। এক সপ্তাহের ভেতর কামরান দেওয়ানের খোঁজ এনে দেবে সে।

কাসেদ বাড়ি ফিরল তখুনি। কাদিন দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,”একা কেন?”

কাসেদ তার কথায় চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,

“কল্পকিরণ ফেরেনি?”

কাদিনের কপাল কুঁচকে গেল।

“না। তুই ওদের একা ছেড়েছিস?”

কাসেদ বোকাবনে গিয়ে বলল,

“ওদের তো আগেই রিকশায় তুলে দিয়েছি। অনেক আগে। এখনো ফেরেনি কেন?”

কাদিন ছোটমাকে বলল,”ফোন দাও তো।”

লুবনা বেগম কল্পনাকে ফোন দিল। কল্পনা ফোন রিসিভ করে বলল,

“এই তো ফিরছি।”

*

দেওয়ান বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই কাবির ইথিকাকে গাড়ি থেকে নামাল। ইথিকা সংকোচে ভুগছে চেহারা নিয়ে। কাবির তার ওড়না মাথায় তুলে দিয়ে কপাল অব্দি ঘোমটা নামিয়ে দিয়ে বলল,

“এখন দেখা যাচ্ছে না। চলো।”

ইথিকা তারপর দাঁড়িয়ে থাকল। সবাই তাকে দেখে হাসবে। বলবে উচিত হয়েছে। এত অপমান সে নিতে পারবে না। কখনো সে এতটা অপমানিত হয়নি। কাবির তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। লুবনা বেগম এগিয়ে এল। কাবির ইশারা করতেই তিনি আর এগিয়ে এলেন না। সবাই তাদের দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। বৃদ্ধ কলিমউদ্দিন দেওয়ান পুত্র কাওসার দেওয়ানকে বলল,

“এ কেমন বউ আনলাম আমরা? একবার নাচনেওয়ালী, আরেকবার ঘোমটাওয়ালী।”

কাওসার দেওয়ান সহ কাদিন কাসেদ সবাই হেসে উঠল। এদিকে কল্পনা আর কিরণ ফেরেনি আর। তারা আর্যাব খানের হাতে জিম্মি হয়ে গিয়েছে।

চলমান…..