মনবিবাগী দিওয়ানা পর্ব-২৯+৩০+৩১

0
4

#মনবিবাগী_দিওয়ানা
#পর্ব_২৯ ও #পর্ব_৩০
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

[যারা আগে পড়েছেন তাদেরও পড়তে হবে]

অনেকদিন পর বাইরের আলো দেখছে ইথিকা। আজকে সে ভীষণ খুশি। যদিও লুবনা বেগম তাকে বের হতেই দিচ্ছিল না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন ঘরে বসে থাকবে সে? পায়ের ক্ষত ভালো করে না শুকালেও সে চলে এসেছে অফিসে।

অফিসে এসে দেখলো তার স্বাক্ষর নকল করে কাবিরের কাছে রিপোর্ট সাবমিট করেছে QA টিম। এমনকি নতুন ব্যাচের লেবেলিং নিয়ে উলটপালট কাজ করছে তারা।

ইথিকা অফিসের বাইরে এসে তার এসিস্ট্যান্টকে ডাকল। বলল টিমকে যেন খবর দেয়। কয়েকমিনিটের মধ্যে সবাই উপস্থিত। ইথিকা সবাইকে তাদের ভুলগুলে ধরিয়ে দিতেই সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। কেউ কেউ নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি দিল। কিন্তু ইথিকার চাপের মুখে আর কেউ মুখ খুলতে পারলো না।

ইথিকা যখন QA টিমের সদস্যদের ওপর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিল। কাবির ঠিক তখনই রুমে ঢুকল। তার উপস্থিতি ইথিকাকে থামিয়ে দিল। মুখটা কঠোর থাকলেও চোখে একঝলক অপ্রস্তুত চাউনি ফুটে উঠল কাবিরকে দেখে। কাবির তাকে এভাবে অফিসে দেখে অবাক হয়ে গেছে। খানিকটা বিস্ময়, খানিকটা কৌতূহল তার চোখে।

ইথিকা আজ কর্পোরেট সাজে আসেনি। পরেছে হালকা বেবি পিংক রঙের একটা শাড়ি, সঙ্গে কনট্রাস্ট করে থাকা ব্লু রঙের ব্লাউজ। চুলগুলো কার্ল করে খোলা। গলায় সাদা পাথরের সাদামাটা, কিন্তু নজরকাড়া হালকা চেইন। সে এভাবে অফিসে এসে উপস্থিত হবে তা কাবির কল্পনাও করেনি। যদিও ভালো লাগছে দেখে যে সে আগের রূপে ফিরছে ধীরেধীরে।

কাবিরের দিকে তাকিয়ে দেখামাত্রই ইথিকা বলল,

“আমি আসামাত্রই কেন এভাবে সবার কথা বলছি তার কারণ জানতে এসেছেন স্যার? এক্সপ্লেইন করব?”

কাবির নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সোজাসাপটা জবাব দিল,
“নো নিড টু এক্সপ্লেইন।”

সে সবটা শুনেছে। তাই থমথমে কণ্ঠে সবার উদ্দেশ্যে বলল,

“আমি ভাবতেই পারছি না। যাদের কাঁধে এত বড় দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে তারা এতটা অসাবধান হতে পারে! এভাবে চলতে থাকলে রেপুটেশন রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।”

ইথিকা বলল,
“ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের অ্যাডমিন কোথায়?”

কিছুক্ষণ পর মাথা নিচু করে নাজিফা সেখানে এসে হাজির হলো। সবাইকে একজায়গায় দেখে সে ভীত হলো। ইথিকা তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,”How dare you put my signature without my permission?”

নাজিফা অবাক হলো। তার সিনিয়রের দিকে তাকাল। সে তো সিনিয়রের নির্দেশে স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসিয়েছে। এখানে তার দোষ কোথায়?

নাজিফাকে চুপ করে থাকতে দেখে ইথিকা ধমকে উঠে বলল,””Speak up, Nazifa! Or should I assume you’re guilty?””

ইথিকার চোখেমুখে রাগ।

নাজিফা গলার স্বর নিচু করে বলল, “সিনিয়রদের নির্দেশে করেছি ম্যাম। আমাকে যা বলা হয়েছে তাই করেছি আমি।”

ইথিকা ঠান্ডা গলায় বলল,
“তোমার সিনিয়র যদি তোমাকে কোম্পানিতে আগুনে লাগিয়ে দিতে বলে, তুমি তাও করবে?”

তার কণ্ঠে স্পষ্ট কটাক্ষ আর বিদ্রুপ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাবির আর জাহিদ দু’জনেই নিঃশব্দ। নাজিফা এবার চুপ। অপমানে মুখ চুপসে গেছে।

ইথিকা আবার বলল,
“তোমার নিজের বিবেচনাবোধ বলতে কিছু নেই? What kind of irresponsible nonsense is this?”

নাজিফা চোখ নামিয়ে নিল। কাঁধ ঝুঁকে গেল। কাবির ডাকল,”আনঝিল!”

ইথিকা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“লেট মি ডু মাই জব মিস্টার দেওয়ান।”

কাবির বলল,” I didn’t accuse you when I saw the report. I think you should stop now.”

ইথিকা বলল,”Sorry to say, but you should have. I don’t want any special treatment just because I’m your wife.”

কাবির সবাইকে চলে যেতে বললো। সবাই তার কথামতো চলে গেল। কাবির ইথিকার দিকে তাকাল। ইথিকা বলল,

“এভাবে দেখছেন কি? আপনার অভাবে কতটা শুকিয়ে গেছি?”

“তোমার দিকে তাকালেও দোষ। না তাকালেও দোষ।”

ইথিকা মেকি হেসে বলল,

“অবশ্যই তাকাবেন। আমি যথেষ্ট সুন্দর। কেউ না দেখে থাকতে পারেনা। বাই দ্য ওয়ে, এই ওয়েস্ট কোট আর শার্টে আপনাকে দারুণ মানিয়েছে। ফিমেল স্টাফরা নিশ্চয়ই মুগ্ধ। আপনার চয়েস কাজে দিয়েছে। পরিকল্পনা মতো সব এগোচ্ছে। Congratulations, truly.”

খোঁচা মেরে সুনিপুণ ভঙ্গিতে হেঁটে চলে গেল ইথিকা।

ইথিকা চলে যেতেই কাবির তার অফিসে ঢুকে পড়লো। মেয়েটা কি চায় সে জানেনা। এখন আবার নাজিফার পেছনে না পড়লেই হয়। মাজহাবের বিষয়ে জোসেফ এখনো কিছু জানালো না। যে করেই হোক মাজহাবের খোঁজ নিতেই হবে। ওকে কি গুম করে রেখেছে দেওয়ানরা? কিন্তু ইথিকা তো বললো মাজহাব মৃত। সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে তার।

কিছুক্ষণ পর নাজিফা দরজা ঠেলে নরম গলায় প্রশ্ন করল।

“May I come in?”

কাবির মাথা তুলেই বলল, “Huh, come in.”

নাজিফা আসতে আসতে বলল, “রেজাউল স্যার বললেন ম্যামকে দেখানোর আগে যেন আপনাকে একবার অডিট রিপোর্টটা দেখাই।”

কাবির সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।

“আমাকে কেন?”

নাজিফা তার হাতে থাকা ডাটা ফাইলটা কাবিরের দিকে এগিয়ে দিল।

“যদি কিছু ভুল থেকে থাকে।”

কাবির ফাইলটা নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর চোখ তুলে নাজিফার দিকে তাকিয়ে বলল,

“সব ঠিকঠাক। একটু কারেকশন করতে হবে। দেখিয়ে দিচ্ছি।”

কাবির তাকে কাজটা দেখিয়ে দিয়ে বলল,

“তোমাকে একটা কথা বলি নাজিফা। আনঝিল তোমাকে পছন্দ করেনা। তুমি আমার আন্ডারে জয়ন করেছ। সো আমি চাইব তুমি ওর কোনো কথায় মনে কষ্ট নেবে না।”

নাজিফা মাথা দুলিয়ে জি বলার আগেই দরজা ঠেলে ইথিকা প্রবেশ করলো। সাথে সাথে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

“Oops! Sorry to interrupt.”

কাবির তার চলে যাওয়া দেখে দুচোখের উপর আঙুলের চাপ দিল চেয়ারে হেলান দিয়ে। কিছুক্ষণ ওভাবে বসে রইলো। তারপর সোজা হয়ে বসে নাজিফাকে বলল,

“তুমি তোমার কাজে যাও।”

_____

ইথিকা একগাদা কাজ দিয়েছে নাজিফাকে। রিপোর্টগুলো তার মেইলে সাবমিট না করে সে যেন বাড়ি না যায় এটাও বলে গেল। কিন্তু নাজিফা তাও বাড়ি চলে গেছে। জাহিদ জানালো স্যারই তাকে চলে যেতে বলেছেন। বলেছেন তিনি আপনাকে পরে বুঝিয়ে বলবেন যে মেয়েমানুষের এতক্ষণ অফিসে থাকা উচিত নয়।

ইথিকা নিজের অফিসকক্ষে গিয়ে থম মেরে বসে রইলো। এজন্যই তো বাড়ি যাচ্ছে না। অফিসে একটা নাজিফা পেয়ে গেছেন তিনি। বন্ধু মরেছে। তাই তার বউকে আহ্লাদ করতে হবে উনার। ইথিকার ইচ্ছে হলো সব জিনিস ভেঙেচুরে দিতে। বহুকষ্টে সে নিজেকে সামলাল। দরজা বন্ধ করে কোনো আওয়াজ ছাড়া বসে রইলো।

ইচ্ছে করে দরজা খুললো না। এদিকে পায়ের ব্যাথাটা বাড়ছে। অনেক হেঁটেছে তাই। হয়তো পানিও সরছে ক্ষতস্থান থেকে। পায়ের নীচে ভেজা ভেজা টের পাচ্ছে। অসহ্য লাগছে যন্ত্রণাটা।

হঠাৎ কাবিরের কণ্ঠস্বর শোনা গেল।

“আনঝিল!”

ইথিকা নড়েচড়ে বসলো। নিজেকে স্বাভাবিক করলো। কাবির ডাকাডাকি করতে লাগলো।

ইথিকা জুতো খুলে দেখল পায়ের তলার ক্ষতটা থেকে সত্যি সত্যি পানি সরছে। জুতো পড়ে আর হাঁটা যাবেনা। জুতো হাতে নিয়েও হাঁটা যাবেনা। লিফট ধরতে পারলেই তবে বাঁচা যাবে। কিন্তু এভাবে লিফট অব্দি হাঁটা অসম্ভব।

ইথিকা দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো। জুতো নিয়েই। হাঁটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তবুও সে কাবিরকে দেখালো না। কাবির জাহিদের সাথে কথা বলে বলে আসছে।

হঠাৎ একটা শব্দ হলো। কাবির জাহিদ এমনকি অফিসের বাকি স্টাফরা চমকে উঠলো।

কাবির গম্ভীর স্বরে বলল,”কি হলো রাকিব?”

“স্যার ম্যাম হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছেন।”

ইথিকা যেভাবে পড়েছে সেভাবে বসে আছে। কাবির ছুটে গেল। ইথিকার তার সামনে গিয়ে বসলো। হঠাৎ পায়ের দিকে চোখ যেতেই চক্ষু ছানাবড়া। ইথিকা দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। কাবির বলল,

“স্টপ!”

ইথিকা তার দিকে তাকালো। ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে আসছে। কাবির দ্রুত অফিস কক্ষে চলে গেল। একটা শপিং ব্যাগ এনে ইথিকার জুতো ভরে নিল। তারপর ইথিকাকে কোলে তুলে নিল। ইথিকা এত যন্ত্রণার মধ্যেও তার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“নাজিফাকে বাড়ি ছেড়ে এসেছেন?”

কাবির অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি ওকে হিংসে করছো? কোথায় নেমে গেছ তুমি?”

“কে বললো হিংসে করছি? জানতে চাইলাম। কারণ আমি জানি আমার হাসবেন্ড ভীষণ মহান। ভালো লাগে উনার পরোপকারের কথা শুনলে।”

“হিংসে করছো না? তোমার সারামুখে হিংসা কেমন চকচক করছে।”

“ওটা আমার স্কিনের গ্লো মিস্টার গাধা দেওয়ান।”

“এমন গ্লো দরকার নেই।”

ইথিকা চোখের কোণায় ব্যাথার জল রেখেও হেসে ফেললো। আর কাবির তাকে হাসতে দেখে ভাবলো মানুষ হয়তো এভাবেই তো মায়া বাড়ায়।

______

গাড়িটা চলছে শহরের বুক ছিঁড়ে রাস্তার আলো-আঁধারি ভেদ করে। ইথিকার চুলগুলো ছুটে চলা বাতাসে উড়ছে।

হঠাৎ একটা ফার্মেসির সামনে থামলো গাড়ি।

ইথিকা আঙুল তুলে দেখাল,“এইখানে থামুন।”

কাবির মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। ফিরে এলো একটা ছোট্ট প্লাস্টিক ব্যান্ডেজ হাতে। গম্ভীর মুখে সে নিজের হাতে ইথিকার পায়ের তলায় ক্ষতস্থানে তা লাগিয়ে নিল। তারপর ইথিকার দিকে তাকালো। ইথিকা তার দিকে তাকালো। বলল,

“আপনাকে একটা অনুরোধ করবো?”

কাবির গাড়ির সিটে বসতে বসতে বলল,

“কি?”

ইথিকা বলল,”এখন বাড়ি যাব না।”

কাবির তার মুখের দিকে তাকাল,”কোথায় যাবে?”

ইথিকা জানালার বাইরে গলা বের করে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “বৃষ্টি নামার আগের মুহূর্তটুকু উপভোগ করবো। আমি বহুদিন পর বাড়ি থেকে বেরোতে পেরেছি।”

কাবির তাকে বাঁধা দিল না। ইথিকা জুতোজোড়া গাড়ির ভেতর রেখেই খালি পায়ে হাঁটা শুরু করল।

কাবির অবাক হয়ে বলল,”এভাবে যাচ্ছ কোথায়? দাঁড়াও।”

ইথিকা ফেলল,“টং দোকানে। চা খাবো, বিড়ি ধরাবো, তারপর বৃষ্টি দেখব। চলুন।”

বলেই কাবিরের দিকে ছেলেমানুষি হাসলো। কাবির বুঝল ইচ্ছে করেই তাকে খেপাচ্ছে।

সে ঠান্ডা গলায় বলল,

“এসব দিনের বেলায় করো, এখন রাত।”

কিন্তু সে কি কারও কথা শোনার মতো মেয়ে? সে হেঁটে চলে যেতে লাগল দোকানপাটের চেনা আলো ফেলে অচেনা অন্ধকারের দিকে।

কাবির এবার একটু রুক্ষ গলায় ডাকল,
“আনঝিল! বাড়াবাড়ি হচ্ছে।”

ইথিকা পেছন না ফিরে বলে উঠল,

“যতদিন আছি একটু সহ্য করে নিন।”

কাবির কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেলেও আরেকবার ডেকে উঠল,

“আনঝিল!”

ইথিকা অন্ধকারে মিশে গেছে। শাড়ির আঁচল আর দেখা যাচ্ছে না। সেখান থেকে তার মৃদু হাসির ঝংকার ভেসে আসছে। কাবিরের মনে হলো দূরত্বই ভালো। ইথিকা তাড়াতাড়ি সেরে উঠেছে। সে পাশে থাকলে ওদের সারাক্ষণ ঝগড়া হয়। ওদের বনিবনা হয় না। কখনো হবার না। কক্ষনো না।

_______

৩০

কাবির ইথিকার পিছু নিল। ইথিকার আজ পানিপুরি খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। যেই কথা, সেই কাজ।

রাস্তার ধারে ঝলমলে রঙিন লাইটে মোড়া এক টং দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গেল সে। ছোট্ট চটের ছাউনি, পাশে বাঁশের খুঁটি, আর তাজা ধনেপাতার ঘ্রাণে ভরপুর সেখানকার চারপাশ। বিক্রেতা পাঁপড়ের মতো পাতলা, ফুটন্ত পুরগুলোতে তেঁতুল-আলুর পানি ঢেলে দিচ্ছে ।

ইথিকা এক হাতে ভাড় ধরা, আরেক হাতে মুখে পুর তুলে নিচ্ছে পরম আনন্দে। কাবিরকে হাত ইশারায় ডাকল।

কাবির একটু বিরক্ত মুখে মাথা নাড়িয়ে দূরে দাঁড়িয়ে রইল। ইথিকা খোঁড়া পায়ে ছুটে এসে তার হাত চেপে ধরল। টানতে টানতে নিয়ে গেল দোকানের কাছে। তারপর নিজে খেতে খেতে একটা পানিপুরি তুলে কাবিরের মুখে গুঁজে দিল।
কাবির মুখে দেওয়া মাত্রই কেশে উঠল। ইথিকা হেসে উঠল তা দেখে।

কাবির কাশি ফাঁকে বলল,
“আর কত অত্যাচার করবে? খাওয়া শেষ? এবার যাব? গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ওখানে।”

ইথিকা গম্ভীর গলায় বলল,
“চা খাব।”

কাবির চুপ করে রইল। সে বুঝে গেছে এই মেয়ে আজ সেটাই করবে যেটা তার ইচ্ছে হবে। অগত্যা চুপচাপ তার পিছু পিছু হাঁটা ধরল সে।

একটা টং দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল ইথিকা।
সেখানে মাটির ভাড়ে করে গরম ধোঁয়া ওঠা চা বানাচ্ছিল চাচা। ইথিকা এক কাপ চা নিয়ে ফুঁ দিয়ে চুমুক দিল। তারপর চোখ একটু সরু করে কাবিরকে বলল,

“আপনার কি মনে হয় আমি আগে কোনোদিন এইসব জায়গায় চা খেয়েছি?”

কাবির বলল,”আমিন খানের মেয়ে এখানে চা খাবে কেন? তাও আবার মাটির ভাড়ে?”

ইথিকা বলল,”আজ কেন খাচ্ছে?”

কাবির হালকা মাথা নাড়িয়ে বলল,

“মাটির মানুষ সাথে আছে তাই।”

ইথিকা বলল,
“অনেকটা তাই। মামা ওনাকেও একটা চা দেন তো।”

কাবির কিছু বলল না, বারণও করল না। কিছুক্ষণ পর চাচা মাটির ভাড়ে ধোঁয়া ওঠা চা এগিয়ে দিল তার দিকে।

কাবির ধীরে ধীরে ঠোঁটে চুমুক দিল। একটু বিরতিতে স্বাদ নিল। তখনই ইথিকা চোখ কুঁচকে বলল,

“এতক্ষণ লাগে খেতে?”

কাবির চা খাওয়া শেষ করতেই এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো ইথিকা।

কাবির যেতে যেতে বলল,”আমার আজকে অন্য কাজ ছিল। ”

ইথিকা বলল,”কাজটাজ বাদ দিন আজ।”

কাবির আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আকাশের অবস্থা দেখেছ? যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে।”

ইথিকা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
“বৃষ্টি নামতে দেরি আছে। ততক্ষণে আমরা ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছে যাব।”

ইথিকা খালি পায়ে রাস্তা ধরে হাঁটছে। তার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে কাবিরের হাত। হঠাৎ সামনে থেকে একটা গাড়ি গর্জন তুলে ছুটে এলে কাবির এক ঝটকায় ইথিকাকে নিজের দিকে টেনে নিল। তারপর তার হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল,

“তুমি নিতান্তই বাচ্চা মানুষ বুঝলে?”

ইথিকা এক ভ্রু তোলার ভঙ্গিতে বলল,”একটা কোম্পানি চালাই। মাথায় আছে?”

“হ্যাঁ, বাপ আর ভাই পেছনে দাঁড়িয়ে থাকলে এরকম একশোটা কোম্পানি সামলানো যায়।”

ইথিকার মুখ থমথমে হয়ে গেল। গলা চড়িয়ে বলল,

“আমার ড্যাড আর ব্রো’দের নিয়ে কোনো কথা নয়।”

কাবির নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
“একশো বার বলব।”

“আমিও দুশোবার প্রতিবাদ করবো।”

কাবির আর কিছু বলল না। খানিকক্ষণ চুপচাপ হাঁটার পর জিজ্ঞেস করল,

“গাড়ি তো ওদিকে। আমরা আবার উল্টো দিকে যাচ্ছি কেন?”

ইথিকা বলল,

“গাড়িটা কোথাও হারিয়ে যাবে না।
আপাতত আমরা বাড়ি যাচ্ছি।”

“গাড়িতে করেই তো যাওয়া যেত।”

“মিস্টার কাবির দেওয়ান জামাই আদর খেতে যাচ্ছেন শ্বশুরবাড়ি। একটু স্পেশালভাবে এন্ট্রি না হলে হয়?”

কাবির কপাল কুঁচকে তাকাল, “মানে?”

ইথিকা বলল,”আপনি শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন। আমার সাথে যেতে আপত্তি থাকলে চলে যান। আমি একা যাব।”

কাবির দাঁড়িয়েছিল। ইথিকা তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছিল। কাবির আরও শক্ত করে তার হাত ধরে রেখে হাঁটতে লাগলো। ইথিকা নিঃশব্দে হাসলো।

________________

রিকশা এসে থামল খান বাড়ির প্রবেশদ্বারে। বিশাল প্রাসাদের মতো বাড়িটি আলোয় ঝলমল করছে। চোখ ধাঁধানো আলো ছড়িয়ে পড়েছে সুইমিং পুলের স্বচ্ছ জলে। গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ান এক ঝটকায় ফটক খুলে দিল। ইথিকা কাবিরকে নিয়ে নির্ভার পায়ে ভেতরে পা রাখল।

সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক। কারণ কারণ বাড়িতে উপস্থিত হওয়ামাত্রই কাবির দেখলো আয়োজনের শেষ নেই।

আসলাম খান এসে কাবিরের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বলল,

“তোকে আনতে নিশ্চয়ই বেগ পেতে হয়েছে আমার বোনকে। নিজের শ্বশুরবাড়িতে আসতে লজ্জা নেই।”

কাবির মৃদুস্বরে বলল,

“আমার নেই। তোর আছে।”

আসলাম খান হকচকিয়ে গেল। তাহমিনাদের বাড়িতে আজ পর্যন্ত একবারও সে যায়নি। বাইরে দাঁড়িয়ে তাহমিনার উপর চেঁচিয়েছে কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করেনি।

কাবিরের কথায় খুকখুক করে কেশে উঠে বলল,

“আমার শ্বশুরবাড়ি আর তোর শ্বশুরবাড়ি এক না। ওদের বাড়ির চৌকাঠ পেরোতে গেলে মাথা নীচু করতে হয়। তুই তো বুক ফুলিয়ে ঢুকেছিস এই বাড়িতে।”

কাবির হালকা হাসলো। সেটাই যথেষ্ট ছিল আসলাম খানের গায়ের জ্বালা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।

ঠিক তখুনি ঠোঁট গোল করে মুখবাশি বাজাতে বাজাতে আর্যাব খান হাজির। সিঁড়ির প্রথম ধাপে দাঁড়িয়ে হেসে বলল,

“জামাই সাব সালাম।”

কাবির তার দিকে চোখ তুলে তাকালো। বিড়বিড় করে বলল,

“আরেকটা এসেছে। এখন মেজাজ খারাপ করে দেবে।”

আর্যাব খান তাকে জবাব দিতে না দেখে বলল,

“এত অভিমান কীসের জামাইবাবু?”

কাবির তাকে পাত্তা না দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে মাকে ফোন করলো। লুবনা বেগম জানতে চাইলেন,

“কোথায় তোমরা? জাহিদ বললো বৌমা নাকি হাঁটতে পারছিল না?”

“ওদের বাড়িতে আছি। বেরিয়ে পড়বো কিছুক্ষণের মধ্যে।”

লুবনা বেগম আর বেশিকিছু জানতে চাইলেন না। কাবির ফোন রেখে আর্যাব খানের দিকে তাকালো।

আর্যাব খান তার সামনের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে শরবত খাচ্ছে। কাবিরকে বলল,

“নাও নাও খাও। বড় ভাই জামাইয়ের হাতে শরবতের গ্লাস তুলে দাও।”

তখুনি ইথিকা এসে পড়লো। সে আসামাত্রই রান্নাঘরে ঢুকে আহমেদ চাচা আর মকবুল চাচাকে সাহায্য করছিল। ট্রে নিয়ে আসতে আসতে আর্যাব খানকে দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লো,

“মেঝ ভাইয়া!”

আর্যাব খান তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,

“ডার্লিং দেখছি বেশ কাজের হয়েছে আজকাল।”

বলেই দু-হাত বাড়িয়ে দিল। ইথিকা ট্রে রেখে জড়িয়ে ধরলো ভাইকে। তারপর আসলাম খানকে বলল,

“তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে না।”

আসলাম খান বলল,”আয় আয়।”

ইথিকা তার পাশে গিয়ে বসলো। আসলাম খান একহাতে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল,

“শুকিয়ে গেছিস।”

“কড়া মেডিসিন নিচ্ছি তাই।”

আর্যাব খান বলল,”ডার্লিং তোর বর কিছুই খাচ্ছে না।”

ইথিকা কাবিরের দিকে তাকাল। বলল,”তোমরা নিয়ে দাও। খাবে। পরে সব খেয়ে নিলে বলবে ইথু তোর বর রাক্ষস।”

কাবির কটমট করে তাকাল। এতকথা বলতে কে বলেছে? আসলাম খান হাসতেই কাবির বলল,

“খিদে নেই।”

ইথিকা বলল,”আহমেদ চাচা আর মকবুল চাচা কষ্ট করে এতগুলো নাশতা বানিয়েছে। না খেলে উনারা কষ্ট পাবেন।”

কাবির চোখ তুলতেই গামছা কাঁধে দাঁড়ানো দু’জন মধ্যবয়স্ক মানুষকে দেখলো। তার দৃষ্টি নরম হয়ে এল। সে নাশতা খেল। আর্যাব খান নলেনগুড়ের পায়েস খেতে খেতে আহমেদ চাচাকে বলল,

“ওই টাকলা এটা কি দিয়ে বানিয়েছ?”

আহমেদ চাচা অপমানিত হলেন নতুন জামাইয়ের সামনে। কাবির হতবাক। বয়স্ক মানুষটাকে কি বলে সম্বোধন করছে বেয়াদবটা?

আহমেদ চাচা সাহস করে বলল,”তোমাকে বলবো কেন? তুমি ওসবের কি বুঝবে?”

আর্যাব খান মকবুল চাচার দিকে তাকিয়ে বলল,

“ওই পটকা!”

“কও।”

“তুমি বলো এটা কীসের পায়েস।”

“নলেনগুড়ের পায়েস।”

“অসাম। জামাই সাব এটা খেয়ে দেখুন। ফিদা হয়ে যাবেন।”

কাবির মোটামুটি সব খেল একটু একটু করে। আহমেদ চাচা আর মকবুল চাচা তার প্রতিক্রিয়া দেখছিল দূরে দাঁড়িয়ে। সে চোখের ইশারায় জানিয়ে দিল সবকটা নাশতা খেতে দারুণ হয়েছে। কৃতজ্ঞতায় চোখ ছলছল করছে তাদের।

কিছুক্ষণ পর আশিষ খান আর আরিশ খান এল। বাইরে বাইকের শব্দ শুনে অবশ্য ইথিকা বুঝে গেছে ওরা এসেছে। আশিষের কাঁধে গিটার, আরিশের হাতে ভায়োলিন আর কাঁধে হেডফোন ফেলে রেখেছে। ওরা দুজনেই জমজ।
ইথিকাকে দেখে ডাকল,

“এই ভীতুর মা।”

ইথিকা তাদের দেখে হেসে ছুটে যাচ্ছিল। আশিষ হাত বাড়িয়ে বলল,

“ঘাম ঘাম। ফ্রেশ হয়ে আসি।”

“আজকে ফাংশন ছিল ভাইয়া?”

“ইয়াহ।”

তারপর কাবিরকে দেখে বলল,”ধন্য হলাম।”

কাবির কিছু বললো না। আরিশ খান বলল,

“ইথু আজ থাকবি?”

ইথিকা বলল,”হু।”

কাবির চোখ গরম করে তাকাতেই ইথিকা বলল,

“জানিনা।”

আরিশ এসে প্লেট থেকে সন্দেশ তুলে গালে পুরল। তারপর ইথিকার গাল টেনে দিয়ে চলে গেল। ইথিকা গাল মুছে পায়েস খেতে লাগলো। কাবির ইশারায় চাচাদের দেখিয়ে দিল। ইথিকা উনাদেরও পায়েস খেতে দিল। উনারা বললেন,

“না না মা আগে তোমরা খাও।”

ইথিকা বলল,”জামাই বলছে খেতে। খান।”

উনারা কাবিরের দিকে তাকিয়ে হাসলো। বলল,

“বড়ো ভালো জামাই পেয়েছ মা।”

“সত্যি ভালো?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ।”

“কেমনে বুঝলেন?”

“মানুষ দেখলেই বোঝা যায়।”

আর্যাব খান বলল,”তারমানে আমরা খারাপ?”

তারা চুপসে গেল। কাবির বলল,

“টাকলা পটকা এসব ডাকলে খারাপ বলবে না?”

আর্যাব খান হাসলো। সোফায় এলিয়ে বসে বলল,

“এসব আদরের ডাক। দেওয়ানরা আদর বোঝেনা।”

কাবিরের কাশি উঠে গেল। উফ অসহ্য রকমের কথাবার্তা! ইথিকা হাসছে তা দেখে। কাবিরের মাথা আজ ঠিক থাকলেই হয়। ইলিনা বেগম এসে বললেন,

“কাবির নাশতা খেয়েছে ?”

কাবির সালাম দিল। ইলিনা বেগম সালামের জবাব দিয়ে বলল,

“আজ কিন্তু থেকে যেতে হবে। বিয়ের পর তুমি ইথুকে নিয়ে এই বাড়িতে থাকোনি একটা দিনও।”

কাবির বলল,”অন্য একদিন। আজ হবে না। কাল আমার কাজ আছে।”

ইলিনা বেগমের মুখ মলিন হয়ে এল। ইথিকা বলল,

“মম কিছুদিন পর আবার আসবো আমরা।”

ইলিনা বেগম বলল,”ওকে ঘরে নিয়ে যাও। একটু আরাম করুক। রান্নাবান্না হয়ে গেলে খেয়েদেয়ে চলে যেতে পারবে।”

ইথিকা কাবিরকে ইশারা করলো। কাবির উঠে গেল। ইথিকার পেছন পেছন তার ঘরে যেতে যেতে বলল,

“এইসব পরিকল্পনা কখন থেকে চলছে?”

“কালই। কেন ভালো লাগছেনা?”

“তোমার ভালো লাগছে এতেই যথেষ্ট।”

ইথিকা বলল,”ওই নাজিফাকে বের করে দেবেন বাড়ি থেকে। আমার ওকে সহ্য হয় না। মাজহাবের চেহারাটা মনে পড়ে ওকে দেখলে। ওকে বের করে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের আর কোনো ঝগড়া হবেনা।”

কাবির অবাক হয়ে বলল,”এভাবে বের করে দেয়া যায়? ও কেন আমাদের ঝগড়ার কারণ হবে? ও নিঃস্ব। ওকে আমি চাকরি দিয়েছি জাস্ট। আর কিচ্ছু না।”

ইথিকা বলল,”অফিসে ও সারাক্ষণ আপনার সামনে ঘুরঘুর করেনা?”

কাবির অবাক হয়ে গেল। এই তো আসল রূপ বের হচ্ছে। সবকিছুর মূল এখন নাজিফা হয়ে গেল? সে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,

“বেশ বেশ। আমি চেষ্টা করবো। ওকে একটা বাসা ঠিক করে দেব। ও এমনিতেই থাকতে চাইছেনা। কল্প বিয়ে অব্দি থাকবে হয়তো।”

“বাসাটাসা ঠিক করে দেবেন না। এত দরদ দেখাতে হবে না।”

কাবির একের পর এক অবাক হচ্ছে। বাপের বাড়ি এসে এই মেয়ে দেখছি সব গলগল করে বলে দিচ্ছে। নাজিফাকে হিংসে করে ও? কেন?

কাবির বলল,”ঠিক আছে। ওকে চলে যেতে বলবো। অন্তত ইলেকশন অব্দি যতদিনই থাকবে আমাদের মধ্যে ঝগড়া তো আর হবেনা যেহেতু নাজিফাই সব ঝগড়ার কারণ।”

ইথিকা তার কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। কাবিরের ইঙ্গিত বুঝে সে চোখ সরিয়ে ফেললো। অথচ কাবির শুনতে চাচ্ছিল সে ইলেকশনের পর চলে যাবেনা। কিন্তু ইথিকা বললো না। পালিয়ে গেল সামনে থেকে।

কাবির তার ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লো। বিছানা জুড়ে টেডিবিয়ার। ঘরজুড়ে ইথিকার বড় বড় ছবি টাঙানো। দেয়ালের একপাশে অসংখ্য ছোট ছোট ছবি। হঠাৎ একটা ছবিতে কাবিরের দৃষ্টি থমকে গেল। ইথিকা ছবিটা সরাতে ভুলে গিয়েছিল হয়তো। এত ছবির মাঝখানে ছবিটা কি করে কাবিরের চোখে পড়লো কে জানে?

সেই ছবিতে মাজহাবের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে সে। কপালে কপাল মিলিয়ে দুজনেই হাসছে।

কাবির দেয়াল থেকে টেনে ছবিটা ছিঁড়ে নিল। হাতের মুঠোয় পিষে ফেললো। তখনি মনে হলো মাজহাব মরেছে ঠিক হয়েছে। পরক্ষনেই নিজের এমন স্বার্থপর চিন্তাভাবনা দেখে নিজেই অবাক হলো। কবে থেকে এত হিংসা তার মনে দানা বাঁধছে? সেও তে আনঝিলের চাইতে কম নয়।

________

কাবির আরাম করার জন্য একটু শুয়েছিল বিছানায়। সারাদিনের কাজের চাপের উপর ছিল।
ইথিকা কিছুক্ষণ আগে এসে কফি দিয়ে গেল। আর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করলো। নতুন জামাইকে যা যা করা দরকার সে সব করছে।

কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। আশিষ খান আর আরিশ খান এসে টেনেটুনে কাবিরকে নীচে নিয়ে এল। সেখানে বেশকিছু পানীয়ের আয়োজন করা হয়েছে। কাবির সেসব দেখে থমকে গেল। ইথিকা এসে ফিসফিস করে আর্যাব খানকে বলল,

“এসব দিয়েছ কেন ভাইয়া? সরাও। উনি পছন্দ করেন না।”

“আমরা খাব। তোর বরকে চিনি দিয়ে স্যালাইন গুলে দে।”

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

ইথিকা কাবিরের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে বলল,”সরি।”

শেষে অবশ্য ওসব সরিয়ে নিয়েছে আসলাম খান। চা কফির ব্যবস্থা হয়েছে। কাবির একপাশে বসে রইলো পায়ের উপর পা তুলে। আমিন খানও হাজির হয়েছেন কিছুক্ষণের মধ্যে।

গিটার, ভায়োলিন বাজলো বসার ঘরে। আশিষ খানের মিউজিক ব্র্যান্ড আছে। সে বেশ জনপ্রিয় কয়েকটা সিনেমায় আইটেম সং গেয়েছে। আরিশ খান তার মতো অত জনপ্রিয় নয়। গানটা তার থার্ড চয়েস। সে খুব ভালো বাইক রাইডার আর ট্রাভেলার। পাশাপাশি আরজে হিসেবে কয়েকটা এফএম চ্যানেলে কাজ করে।

সে, আশিষ আর ইথিকা আগে বেশ ট্রাভেল করতো, ক্যাম্পিংয়ে যেত। ইথিকার বিয়ের পর তারা দুবার গিয়েছে। ট্রাভেলার হিসেবে একটা খ্যাতি আছে ওদের। তাদের কয়েকটা চ্যানেলও আছে নিজস্ব। ধরাবাঁধা নেই। খেয়ালখুশি মতো চলে। জীবনকে অত গুরুতরভাবে নেয়নি এখনো।

আমিন খান বলল,”ইথু তুমি একটা গান ধরো প্রিন্সেস!”

ইথিকা কাবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমি কেন?”

“তোমার ভাইয়াদের সাথে গাও।”

আর্যাব খান সিঁড়ি বেয়ে লাফিয়ে নামতে নামতে বলল,”ধর ধর গান ধর।”

De Kitchen Se Aawaaz Chicken Kuk-doo-koo
Teri Bhook Ka Ilaaj Chicken Kuk-doo-koo
Yehi Kehta Hai Aaj Chicken Kuk-doo-koo

ইথিকা আর ইলিনা বেগম হাসতে লাগলো। শেষমেশ ইথিকা গান ধরলো। তার সাথে সাথে বাকিরা তাল মিলিয়ে গাইলো।

ইয়ে রাতে ইয়ে মওসাম
নদি-কা কিনারা, ইয়ে চঞ্চল হাওয়া

কাহা দো দিলো-ন্যা
ক্যা মিলকার কাভি হাম, না হোঙে যুদা
ইয়ে রাতে ইয়ে মওসাম
নদি-কা কিনারা, ইয়ে চঞ্চল হাওয়া

ইয়ে ক্যায়া বাত হ্যা আজ, কি চাদনি ম্যা।
ক্যা হাম খো গায়ে, পেয়ার-কি রাগনি ম্যা
ইয়ে বাহো-মে বাহে, ইয়ে বেহকি নিগাহে
লো আনে লাগা জিন্দেগি-কা মাজা

কাবির জানতো না ইথিকার গানের গলা এত সুন্দর।

____

খাওয়াদাওয়া শেষে কাবির তাড়া দিল ইথিকাকে। আহমেদ চাচা আর মকবুল চাচাকে বখশিশ দিয়ে খুশি করলো কাবির। ইথিকাকে বলল,

“তুমি যাবে নাকি আমি একা একা চলে যাব।”

ইলিনা বেগম বললেন,”বাইরে বৃষ্টি। থেকে যাও কাবির।”

আর্যাব খান বলল,”আমরা দেওয়ানদের শত্রু। জামাইয়ের না।”

কাবির ইলিনা বেগমকে বলল,”থাকা সম্ভব হলে থাকতাম। সম্ভব হচ্ছে না।”

আমিন খান বলল,”থাক আর জোর করে লাভ নেই। জামাই ভোটটা নৌকায় পড়লে ভালো।”

কাবির বলল,” স্বৈরাচারী সরকারের জনতার ভোটের প্রয়োজন হয় না।”

আমিন খানের চেহারা হিংস্র হয়ে উঠলো। কাবির ওদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে। সামনেই ইলেকশন তাই ওদের এত নাটক।

যদিও ইথিকার উদ্দেশ্য এটা ছিল না। তাই সে ইথিকাকে বলল,”চলো।”

ইথিকা সবাইকে টা টা দিল চলে যাচ্ছিল তার সাথে ঠিক তখুনি আমিন খান বলল,

“দাঁড়াও।”

ওরা দুজনেই দাঁড়িয়ে গেল। আমিন খান বলল,

“ইথু যাবে না তোমার সাথে।”

ইথিকা অবাক হলো। ড্যাড কি রেগে গেছে? সর্বনাশ!

আমিন খান বলল,

“ইথু চলে এসো। ও একা ফিরে যাবে। কাগজপত্র সব উকিলের হাতে দিয়ে দেবে দেওয়ান।”

কাবির ইথিকার দিকে তাকাল। বলল,

“চলো। উনার কথা শোনার দরকার নেই।”

ইথিকাকে নিয়ে সে বেরিয়ে আসছিল। আমিন খান গলা ফাটিয়ে গর্জালো।

“বলেছিনা না থামতে? ইথু ওর হাত ছেড়ে চলে আসো।”

ইথিকা মায়ের দিকে তাকালো। ইলিনা বেগম কিছু বললেন না। আমিন খান আরিশকে ইশারা করলো। আরিশ ইথিকাকে টেনে নিয়ে গেল। ইথিকা বলল,

“ড্যাড আমরা পরে এই বিষয়ে কথা বলবো।”

আমিন খান নিজ সিদ্ধান্ত অটল থেকে বললেন,

“পরে টরে কোনো কথা হবে না। অত সময় হবেনা আমার।”

ইথিকা চেঁচিয়ে বলল,”মম কিছু বলো। এভাবে ডেকে এনে অপমান করার মানে কি?”

ইলিনা বেগম বললেন,”মেয়েটা সবে সুস্থ হলো। আপনি এভাবে ডেকে এনে কি শুরু করেছেন?”

“স্বৈরাচারীর অনুসারীদের সুশীলদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারেনা।”

কাবির বলল,”আপনাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক বিশ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। আমার এখন যার সাথে সম্পর্ক আছে সেটা আপনাদের মেয়ে। আমি ওকে নিয়ে তবেই যাব।”

আমিন খান বলল,”ওকে নিয়ে এক পা বাড়িয়ে দেখাও। লাশ ফেলে দেব এখানে।”

ইথিকা আর্যাব খানকে ঝাঁকিয়ে বলল,

“কিছু বলবে না তুমি?”

আর্যাব খান বাঁকা হেসে বলল,”ছক পাল্টে গেছে।”

“মানে?”

“মানে ড্যাড খেপে গেছে। এখন তোর বরকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করবে।”

ইথিকা কাবিরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। কাবির তাকে বলল,

“আমি বেরোলাম।”

ইথিকা তার পিছু নিতেই আশিষ খান তার হাত চেপে ধরলো। বলল,

“ড্যাড না যেতে বলছে মানে কোনো কারণ নিশ্চয়ই আছে। ওরা মনে করছে সামনে ইলেকশন তাই আমরা ভয়ে আছি। তুই ড্যাডের কথা শোন।”

ইথিকা বলল,”তোমাদের যা ইচ্ছা করো কিন্তু এখন আমাকে ছাড়ো। আমি অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে উনাকে এনেছি। তোমরা আমার মানটা রাখলে না? এভাবে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছ। আমি এই বাড়িতেই কখনো আসবো না। ছাড়ো।”

শেষে ধস্তাধস্তি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল সে। আশিষ তাকে আবার ধরতে যাবে তখুনি আর্যাব খান তাকে আটকে ফেলে বলল,

“জুলিয়েটকে রোমিওর কাছে যেতে দে। ভিলেন সাজিস না। এখনো একটা মেয়ে পটাতে পারলি না হিরো সেজে। আগে হিরো হয়ে দেখা। তারপর ভিলেন সাজিস।”

ইথিকা কিছুদূর চলে গিয়েছিল। আবার ফিরে এল। আশিষের হাতে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল।

আশিষ চেঁচালো।

“রাক্ষসী পেত্নী শাঁকচুন্নি !”

আর্যাব খান হাসতে লাগলো। শেষে আমিন খানের চেহারা দেখে তার হাসি থেমে গেল। সে ঘরে চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো। চলে যাওয়ার সময় ইলিনা বেগমের কানের কাছে বলল,

“মম তোমার ডার্লিং খেপেছে। যাও ঠান্ডা শরবত দাও।”

ইলিনা বেগম খেপে গিয়ে বললেন,

“এক চড় দেব বেয়াদব ছেলে।”

আর্যান খান গা কাঁপিয়ে হাসলো। ভণিতা করে বলল,

“একটু আস্তে কোরে বললো হয় না?”

ইথিকা ঝড়ের মধ্যে বেরিয়ে গেল। পায়ের যন্ত্রণা এতক্ষণ ভুলে ছিল। দুশ্চিন্তার সাথে ওটাও বেড়ে চলেছে। সে কাবিরকে ডাকলো। হঠাৎ করে কোথায় চলে গেল মানুষটা?

সে কাবিরকে ডাকতে ডাকতে একদম গেইট পার হয়ে এল। আরো সামনে এগিয়ে গেল। বেশিদূর যায়নি বোধহয়।

“কাবির!”

অন্ধকারে প্রতিধ্বনিত হলো তার ডাকটা। সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর পথ নেই। ইথিকা আরও জোরে ডাকলো,

“কাবির।”

কপাল চেপে ধরলো সে হাত দিয়ে। মাথায় ব্যাথা করছে বেশি জোরে চেঁচানোর কারণে। গলা ধরে আসছে। আর পারছেনা সে। মনে হচ্ছে আর বেশিক্ষণ এভাবে ছুটলে সে জ্ঞান হারাবে। পায়েও জোর পাচ্ছে না।

শেষমেশ কাবির অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে এল। ইথিকা তার ছায়াটা দেখামাত্রই ছুটে এসে তার মুখের দিকে তাকালো। কত কথা বলতে এল। অথচ ঠেলে বেরিয়ে আসা কান্নাদের জন্য কিচ্ছু বলতে পারলো না। তাকিয়ে রইলো চুপচাপ। শারীরিক মানসিক যন্ত্রণা মুখ বুঁজে সহ্য করে বলল,

“সরি আমি একদম জানতাম না ড্যাড এমন করবে। বিশ্বাস করুন আমি এসব কিছু জানতাম না। আমি এসবের মধ্যে নেই। আমি চাইনি আপনাকে এভাবে অপমান করতে।
আমি ভাবতেও পারিনি ড্যাড….

কাবির শান্ত গলায় বলল,”আই আন্ডারস্ট্যান্ড।”

ইথিকা খুশি হয়ে তাকে তৎক্ষনাৎ ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে ভেজার কারণে কাবিরের শরীরটা ঠান্ডা বরফ ছিল। ইথিকা ঝাপটে ধরায় একফোঁটা উষ্ণতা ঢেলে দিল বুকের ভেতর। সে হাত তুলে ইথিকার পিঠ জড়িয়ে ধরার আগেই শাঁ করে একটা গাড়ি ছুটে এল। গাড়ির ভেতর ব্ল্যাক জ্যাকেট পরা একজন।

জানালা দিয়ে মুখ বের করে দিয়ে ঠোঁট গোল করে শিঁষ বাজাতে বাজাতে আর্যাব খান বলল,

“রোমিও… আপনার জুলিয়েটকে নিয়ে চলে আসুন। বাকি প্রেমটুকু বাড়ি গিয়ে করবেন।”

ইথিকা কাবিরের বুক থেকে মুখ তুলে আর্যাব খানের কথা শুনে হেসে ফেললো।

চলমান…..

#মনবিবাগী_দিওয়ানা
#পর্ব_৩১
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

কাবিরকে নিয়ে ইথিকা আর্যাব খানের গাড়িতে উঠে বসল। আর্যাব খান ইগনিশনে চাবি ঘোরাতেই ইঞ্জিনের গর্জন করে উঠলো। আর সঙ্গে সঙ্গে তার গলায় বেজে উঠল উচ্চস্বরে গান। গলা ফাটিয়ে ইচ্ছেমতো সুরে গান গাইছে সে।

কাবির কপাল কুঁচকে তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। মুখে সেই চিরচেনা ধৈর্য।

আর্যাব খান চোরা দৃষ্টিতে কাবিরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করছিল। উদ্দেশ্য ছিল এই সুনির্বিকার মানুষটাকে রাগিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া। কিন্তু দেওয়ান সাব পাথর হয়ে বসে আছে। রাগ করলেও সে রাগের আগুন দেখালো না। কারণ আপাতত বাড়ি ফিরতে হবে।

দেওয়ান বাড়ির সামনে গাড়িটা থামতেই ইথিকা দরজা খুলে নিচে নামল। কাবিরও ধীরে ধীরে নামল তার পেছন পেছন।

আর্যাব খান জানালার কাঁচ নামিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলল,”যা একটা জোরসে ঘুম দে।”

ইথিকা বলল,”তুমি বাড়ি যাও।”

আর্যাব খান ঘাড় চুলকে বলল,
“পকেট গরম হয়নি আজকে। আগে পকেট করে আসি। তারপর ভাববো কোথায় যাব।”

ইথিকা তাকে বিদায় জানাল। সে শাঁ করে গাড়িটা নিয়ে ছুটে চললো অন্ধকারের।

দেওয়ানবাড়ির উঠানে লায়লা খালার চোখ পড়েছে। বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

“ওমাগো! বউ-জামাই দুইজনে একসাথে গোসল কইরা ফিরছে দেখছোনি কান্ড!”

ইথিকা কাবিরের পেছন পেছন বাড়িতে ঢুকে পড়লো। তারপর ঘরে চলে গেল।

কাবির ভেজা শার্ট কোর্ট খুলে নতুন শার্ট গায়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। গলা ভার করে বলল,

“জীবনে আর তোমাদের বাড়ি পা রাখব না।”

ইথিকা কিছু বলল না। চুপচাপ কাবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ড্যাড হুট করে রেগে যাবে সেটা সে ভুলেও ভাবেনি। তার এখন রীতিমতো লজ্জা হচ্ছে।

সে শাড়িটা পাল্টে একটা সাদামাটা টপস পরে কাবিরের পাশে এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর
মাথার পেছনটা কাবিরের বুকের উপর তুলে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুক স্ক্রল করতে থাকল।

কাবিরের চোখে ঘুম চলে এসেছে হয়তো। ইথিকা বুক থেকে মাথা তুললো। গালে দুহাত রেখে কাবিরের মুখের দিকে চেয়ে রইলো।

_________

কল্পনার বিয়ের দিন তারিখ পাকা হয়ে গেছে আজ। ইলেকশনের পর। চারপাশের পরিস্থিতি, রাস্তাঘাট এখন উত্তপ্ত। তাই ইলেকশনের পরই তারিখ ফেলেছে দুই পরিবার।

লায়লা খালা কল্পনাকে বলল,”আমারেও একটা হলুদ শাড়ি দিবা কিন্তু। তোমার হলুদে পড়মু।”

ঝিনুক বলল,”আপা খালা কাল কি বলল জানো? বলল ও নাকি তোমার বিয়েতে শাড়ি পড়ে নাচবে।”

কল্পনা হাসল। বলল,”অনেক শখ না?”

“সাহেবের বিয়াতে তো মজা করতে পারিনাই। তোমার বাপের চিন্তায় কেমন গুমোট গুমোট ছিল সবি। ভাল্লাগেনাই আমার।”

কিরণ বলল,”আচ্ছা বেশ। এবার তুমি একটা শাড়ি পাবে। ঝিনুকও পাবে। সবাই পাবে। আমরা সবাই শাড়ি পরব।

কল্পনা হঠাৎ করে বলল,”এই কিরণ তাহমিনা আপাকে একটা ফোন দেব বুঝলি। আপা তো খান বাড়িতে নেই।”

কিরণ বলল,”সেঝ ভাইকে বলবে একটা কার্ড পাঠিয়ে দিতে।”

“সে তো দেবেই। কিন্তু আপাকে একটু আলাদা করে বলবো। ওদের ভয়ে না এলে তো সমস্যা।”

কিরণ বলল,”তা ঠিক।”

কিছুক্ষণ পর নাজিফা এল সেখানে। বলল,

“আন্টি ডাকছে তোমাদের।”

কল্পনা বলল,”যাচ্ছি। এই কিরণ বড় ভাই ডাকছে মনে হয়।”

কিরণ কানখাড়া করে শুনল বলল,”ভাবিকে ডাকছে বোধহয়।”

লায়লা খালা হঠাৎ করে বলল,”বউ জামাই কাল গোসল কইরা বাড়িত ঢুকছে। ঝড়েত ভিজছে।”

ঝিনুক ঝাড়ি দিয়ে বলল,”আস্তে বলো। ভাইজান ঘরে আছে।”

কল্পনা হেসে বলল,”তুমি কোনোদিন খালুর সাথে ভিজোনি?”

লায়লা খালা মুখ বাঁকিয়ে বলল,”বাপরে বাপ বেডা নাপা খাওনোর ভয়ে কইতো ভিজিছ না লেলা, ভিজিছ না। জ্বর আছবো।”

সবাই হেসে উঠলো একসাথে। কল্পনা বলল,

“নাপা খাওয়াতে ভয় কীসের?”

“নাপা খাওয়াইতেও টেকা লাগে। একটাকাও ক্যান পকেট থেইকা গচ্চা যাইব আমার জন্য।”

“কিপ্টা ছিল নাকি?”

“কিপ্টা মানে? তার পোলারা হয়ছে অমন। পেটে সব কুত্তা ধরছি, কুত্তা।”

কল্পনা জিভে কামড় দিয়ে বলল,”এভাবে বলো না। থাক গে। তুমি এখানে ভালো তো আছ।”

“তা আছি। অনেক ব্যাটা বেটি পাইছি এইহানে। ওরা আমারে অভাবে রাখেনা। যা চাই তাই দেয়। অনেক সম্মান টম্মান করে।”

কল্পনা বলল,”মনে করো তোমার কোনো সন্তান সন্ততি নেই। তাহলে ওই দুঃখ আর থাকবে না।”

___________

কাবির ইথিকাকে অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে। আজ তার আগেই ঘুম থেকে উঠে গেছে সে। ঘরদোর পরিপাটি করে গুছিয়ে সেই মায়ের সাথে রান্নাঘরে ঢুকেছে। আর বের হওয়ার নাম নেই। বড়ফুপু আর মায়ের সাথে কথা বলছিল সেটা শুনতে পেয়েছে সে। একটা স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে এটা দেখে যে সে সবাই তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছে। বড়ফুপু তার আড়ালে অনেককিছু বলেছে সেটা কাবিরের কানে এসেছে। কিন্তু উনি সামনাসামনি ভালো ব্যবহার করছেন। ইথিকাকে বুঝ দিচ্ছেন। কাবিরের বিশ্বাস বড়ফুপুর ধারণা ধীরেধীরে পাল্টে যাবে।

লায়লা খালা রান্নাঘরে এসে ইথিকাকে বলল,

“বউ তোমারে সাহেব মিয়া ডাকতেছে।”

ইথিকা লুবনা বেগমের পাশে দাঁড়ানো। ফোনে একটা ভিডিও চলছে। সেখানে ইংরেজিতে একটা মেয়ে কথা বলছে। আর রান্না করছে।

সে ইউটিউব দেখে কিছু রেসিপি রান্না করছে। রান্নাঘরের এদিক-ওদিক ছুটে লুবনা বেগমের সাথে হাতাহাতি করে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। এটাও মাথা আছে যে তার দাদাশ্বশুরও যেন খেতে পারে নাশতাটা।

কাবির ডেকেছে শুনে সে বলল,”বলুন বিজি আছি।”

লায়লা খালা,”বিজি টিজি শেষ হলে যাবা।”

“ওকে।”

লুবনা বেগম বলল,”কি বানাচ্ছ এগুলো? এতসব খাবার।”

ইথিকার হাতে একটা বড় চামচ। সে আঙুল দিয়ে সব রেসিপি দেখিয়ে দেখিয়ে বলল, এটা এগস বেনেডিক্ট। পোচড ডিমটা ইংলিশ মাফিন ও হোল্যান্ডাইস সস দিয়ে খাবেন।

এটা ক্রয়েসোঁ উইথ ফ্রেশ জ্যাম অ্যান্ড বাটার। নরম পেস্ট্রি সাথে প্রিমিয়াম জ্যাম। খুব মজা। খেয়ে দেখবেন।

আর এটা রুটি ভেজে মধু, বেরি ও হুইপড ক্রিম দিয়ে মিষ্টি দুধ-ডিমে ভেজানো ব্রিয়োশ ফ্রেঞ্চ টোস্ট।

আর এটা গ্রিক ইয়োগার্ট উইথ হানি। ঘন দইয়ে মধু, বাদাম আর তাজা ফল দিয়ে খায়।

বড়ফুপু বললেন,”এগুলোর নামও তো কোনোদিন শুনিনি মেয়ে।”

ইথিকা বলল,” আজকে তো শুনলেন।”

লুবনা বেগম বললেন,”দেখে তো মনে হচ্ছে খেতে ভালোই হবে। নামগুলো শুধু কঠিন কিন্তু জিনিস তো চেনা আমাদের। তোমার দাদাশ্বশুর খাবেন কিন্তু।”

ইথিকা ভুরু কুঁচকে বলল,”কেন এসব খাওয়া যাবে না?”

“না না তা বলিনি। দেখতে কত ভালো লাগছে। নিশ্চয়ই মজা হবে।”

ইথিকা মিষ্টি করে হাসলো।

কল্পনা আর কিরণ এল তখুনি। কল্পনা বলল,

“খিদে পেয়ে গেছে। আর কতক্ষণ?”

ইথিকা বলল,”হয়ে গেছে। একটু ছেঁকে দেখবে?”

কল্পনা তার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ছেঁকে দেখলো একটা একটা করে। ইথিকা তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কল্পনা খেতে খেতে ভুরু উঁচিয়ে বলল,

“হুমমম মজা।”

ইথিকা হেসে বলল,”অনেস্ট অপিনিয়ন তো?”

“হু।”

কল্পনা কিরণ আর ঝিনুক খাবার টেবিল সাজিয়ে ফেলল। দাদাভাইকেও নিয়ে এসেছে কাদিন আর কাসেদ।

সবাই এসে পড়লো কিছুক্ষণের মধ্যে। ইথিকা লুকিয়ে আছে। তার কেমন কেমন লাগছে। সে আড়ালে দাঁড়িয়ে কাবিরের মুখের দিকে তাকালো। কাবির খেতে বসে এদিকওদিক চোখ ঘুরিয়ে তাকালো একবার। ইথিকা চট করে দরজার পাশ থেকে সরে পড়লো।

কামরান দেওয়ান বলল,”সকালে ভিন্ন ভিন্ন নাশতা কেন?”

কল্পনা বলল,”খেয়ে দেখো আগে।”

সবাই বেড়ে দেয়া শেষ। এবার খাবার পালা। দাদামশাই বললেন,

“খানের বেটি রাঁধছে নাকি?”

সবাই অবাক হয়ে গেল। কল্পনা বলল,

“বুঝলেন কিভাবে?”

দাদামশাই হেসে বলল,

“আমার অভিজ্ঞ চোখ বুঝলি।”

কাবির তখন ব্রিয়োশ ফ্রেঞ্চ টোস্টটা চামচ দিয়ে কেটে মুখে পুরছিল। দাদাভাইয়ের কথা শুনে কপাল কুঁচকে গেল। দাদাভাই তাকে বললেন,

“এই প্রথম বউয়ের রান্না খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কিছু তো বলুন দেওয়ান সাহেব।”

কাবির বলল,”ভালো হয়েছে।”

“বউ খুশি হয় মতো কিছু বলুন।”

কাবির বলল,”আপনি দাদীমাকে কি বলে খুশি করতেন?”

“সে অনেক কথা। খানের বেটি কি সেসব শুনে আর খুশি হবে?”

“কেন হবে না?”

“আপনার বউ তো ডিজিটাল।”

সবাই হালকা হেসে উঠলো। কাবির বলল,

“ডিজিটাল বউটাকে আপনারাই তো এনেছেন। খুশি করানোর দায়িত্ব আমার একার কেন হবে?”

দাদামশাই বললেন,”খানের বেটিকে ডাকো।”

লুবনা বেগম ইথিকাকে ডাকলেন। ইথিকা আসছেনা। লুবনা বেগম বললেন,

“আসো না একটু। সবাই বাড়িরই মানুষ। আসো।”

ইথিকা দুপাশে মাথা নাড়লো। লুবনা বেগম বললেন,

“আরেহ দাদাশ্বশুর বখশিশ দেবেন বড় নাতিবউকে। আসো।”

ইথিকা বলল,”উহু।”

“দেখো কান্ড।”

দাদামশাই জোরে জোরে বললেন,”খানের বেটি আমাকে শুনতে পাচ্ছে?”

লুবনা বেগম বললেন,”পাচ্ছে বাবা।”

“ওকে বলো সব নাশতা ভালো হয়েছে। আমি ওর হাতে পোলাও মাংস খাব।”

লুবনা বেগম হেসে ইথিকার দিকে তাকালো। ইথিকা হাসছে। বড়ফুপু বললেন,

“শুধু মুখে প্রশংসা করলে হবে আব্বা? নাতিবউ বখশিশ পাবে।”

“সে আমার সামনে আসুক। তবেই তো দেব।”

“আপনার নাতিবউ লজ্জা পাচ্ছে।”

“দেওয়ানিদের ব্যামো ধরেছে তাহলে? লজ্জা পাওয়া ভালো ভালো। খুব ভালো।”

সবাই হেসে উঠলো একসাথে।

_______

মার্কেটের পাশেই চলছে ভোটের প্রচারণা। বিশাল একটা ট্রাকে চড়ে একদল ছেলেপুলে দল বেঁধে নাচছে,
“জয় বাংলা! জিতবে এবার নৌকা!”

সাউন্ড বক্সের শব্দে মাটিও কাঁপছে।

কল্পনা আর কিরণ অস্বস্তিতে কান চাপা দিয়ে কোনোমতে রাস্তা পার হলো।
শব্দের ভিড়ে কথা বলাও মুশকিল।
রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষায় রইল দু’জন। কাসেদের আসার কথা, কিন্তু এখনো সে আসেনি।

দু’জনের হাতেই শপিংয়ের ব্যাগ। গজ কাপড়, ব্লাউজ পিস আর পেটিকোটের কাপড়, কিছু কসমেটিকস। কিরণের হাতে রান্নাঘরের কিছু টুকটাক জিনিস। রোদে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ওরা। কাসেদ যদি না আসে, তাহলে বাধ্য হয়ে সিএনজি ধরতে হবে।

তারা দু’জন পাশাপাশি দাঁড়াতেই দুটো জিপ এসে ধুলো উড়িয়ে থামল তাদের সামনে। প্রথম জিপ থেকে নামল আশিষ খান আর আরিশ খান।

কিরণ কল্পনার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে। কল্পনা বলল, “চল আমরা ওখানে গিয়ে দাঁড়াই।”

আশিষ খান হঠাৎ করেই গলা ছেড়ে গাইল,
“চুমকি চলেছে একা পথে…”

আর বাকিরা একসাথে তাল মিলিয়ে গেয়ে উঠল,
“সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?”

গানের হুল্লোড়ে জমে উঠলো চারপাশ ঠিক তখনই, সামনে এসে তীক্ষ্ণ শব্দে ব্রেক কষে থামল পুলিশের জিপ। জানালা নামিয়ে গলা বের করল আর্যাব খান চোখে সানগ্লাস, ঠোঁটের কোণায় তার চিরাচরিত বদমায়েশি হাসিটা।

ঠাণ্ডা গলায় বলল,
“দোষ তো আছেই বস। তোরা আমার বেয়াইনদের পিছু নিবি কেন?”

তার গা জ্বালানো হাসিটা দেখে কল্পনার পা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত জ্বলে উঠল। ঠিক তখনই আর্যাব খান ধীরে ধীরে গাড়িটা ঘুরিয়ে এনে তাদের সামনে দাঁড় করাল। জানালার কাচ নামিয়ে হেলান দিয়ে ডাকল,

“বেয়াইন!”

কল্পনা একবারও তাকাল না। চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল।

আর্যাব খান হালকা হেসে বলল,
“বেয়াইয়ের সালাম নিন। নৌকা মার্কায় ভোট দিন।”

কল্পনা ব্যঙ্গ করে বলল,
“ভোট চোরদের আবার ভোট চাইতে হয় নাকি?”

আর্যাব খান বুকের ওপর হাত চেপে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,

“এভাবে বললে কিন্তু একদম দিলে এসে লাগে!”

কাসেদের গাড়ি এসে থামালো তখুনি। কল্পনা আর কিরণ দ্রুত গাড়িতে উঠে গেল। আর্যাব খানের পাশ কেটে গাড়িটা চলে গেল দ্রুত।

_____________

“লাততি দিবো এদদম।”

ইনামের কথা শুনে তাহমিনা অবাক।
ছেলেটা এখানে একটা বাচ্চা ছেলের সাথেও মিশতে পারেনা। সবাইকে মারধর, গালি, এমনকি বালু ছুঁড়ে দৌড় মারে। কাল একজনকে কামড় দিয়ে দাগ বসিয়ে দিয়েছে।

তাহমিনা ইনামের পেছন পেছন ছুটতে লাগলো।

” ইনু দাঁড়াও বলছি। কূয়োয় ফেলে দেব একদম। দাঁড়াও। কাকে লাথি দেবে তুমি? দাঁড়াও বলছি।”

পাশ থেকে তাহমিনার একটা চাচী বলে উঠলো,

“ছেলে কার মতো হ’য়েছে রে তাহু?”

তাহমিনা হতাশ চোখে তাকিয়ে বলল,

“ওর বাপ চাচাদের মতো। কি করবো জানিনা। এখানে কারো সাথে পড়েনা ওর। মহা যন্ত্রণায় রেখেছে আমাকে।”

ইনাম একমুঠ বালু এনে তাহমিনার দিকে ছুটে এল। চোখের পলকেই তাহমিনার শাড়িতে বালু ছুঁড়ে মারলো। তাহমিনা ধমকে বলল,

“ইনু!”

ইনাম রেগেমেগে বলল,

“মাইনেমিজ আব্বাহাম খান ইনান।”

তাহমিনা গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে কোলো তুলে নিয়ে বলল,

“যেমন নাম তেমন কাম। বেয়াদব ছেলে। বাপ চাচাদের স্বভাব পেয়েছিস? দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে রাখবো আজকে।”

ইনাম কান্না করতে করতে ভয়ানক রেগো গিয়ে বলল,

“আম্মুউউ লাততি দিবো।”

তাহমিনা আরও দুটো চড় দিল। ইনামের নানী দৌড়ে এল।

“আহা আহা বাচ্চাটাকে মারছিস কেন। এই বয়সে দুষ্টুমি তো করবেই।”

“এসব দুষ্টুমি। এগুলোকে জাউরামি বলে। বাপ চাচার কপি করে এসেছে।”

ইনাম চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগলো। তার নানী তাকে দোল দিতে দিতে বলে,

“নানুভাই কেঁদো না আর।”

ইনাম তার নানীর চুল টেনে ধরলো। তার নানী তাহেরা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন,

“ও তাহু দেখ তোর ছেলে আমার চুল ছিঁড়ে খেলতেছে।”

তাহমিনা ছুটে এসে ইনামকে এবার কষে চড় বসালেন। এবারের চড়টা বেশি জোরে পড়লো। ইনাম প্রচন্ড রাগে হাত পা ছুঁড়ে তার নানীর কোল থেকে পড়ে গেল। কলপাড়ের দিকে ছুটে গিয়ে কপাল ঠুকতে লাগলো ইটের সাথে। তাহমিনার পা জমে গেছে। কথা বলতে ভুলে গেছে সে। ইনামের ছোট কপাল ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে। তাহমিনা কেঁদে ফেললো।

___________

ইথিকা ছুটতে ছুটতে হাসপাতালে এসেছে। তাহমিনা করিডোরে বসে আছে। চোখমুখ শক্ত। ইথিকা এসে তাকে ঝাঁকিয়ে বলল,

“কি হয়েছে ওর? মাথা কিভাবে ফাটলো?”

তাহমিনা তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল,

“আমি চড় দিয়েছি। রাগে….

ইথিকা বলল,”বড় ভাইয়া জানে?”

তাহমিনা দু’পাশে মাথা নাড়লো। ইথিকা কেবিনের দিকে ছুটে গেল। কাবির এসেছে ইথিকাকে নিয়ে। তাহমিনাকে দেখে সে এগিয়ে এল। বলল,

“তুমি কোথায় ছিলে? ওকে সাবধানে রাখা উচিত ছিল। এখন খানদের কি জবাব দেবে? ওরা এমনিতে ইনামকে তোমার কাছে রাখতে চাচ্ছে না।”

তাহমিনা কেঁদে বলল,”আমার সামনেই হয়েছে ভাইয়া। এত রাগ ওর। আমি ওকে সামলাতে পারছিনা।”

বেডের উপর ইনাম ঘুমিয়ে আছে। ছোট্ট কপালটা জুড়ে ব্যান্ডেজ। ইথিকা ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে তাকে কোলে তুলে নিল। আদর করে ডাকলো,

“টুকুনসোনা ওঠো। দেখো পিপি এসেছে। তোমার জন্য চকলেটস এনেছে। দেখো।”

সে গালে আলতোভাবে আদর করে নার্সকে বলল,

“আঘাত বেশি পেয়েছে?”

“জি ম্যাম, এভাবে বারবার আঘাত পেতে থাকলে পরিস্থিতি জটিলের দিকে যাবে।”

ইথিকা ইনামের গালের সাথে আলতো করে তার গাল ঠেকালো। ডাকলো,

“ওঠো। বাবা।”

তাহমিনা কাবিরের সাথে কথা বলছিল সেই ফাঁকে তাহমিনার বাবা এসে বলল,

“মারে ওরা তো দেখছি গুষ্ঠিসুদ্ধ চলে এসেছে। আমাদের নাতিটাকে কি নিয়ে যাবে নাকি?”

তাহমিনার বুক ধ্বক করে উঠলো।

বলতে না বলতেই আসলাম খানকে দেখা গেল। পিছু পিছু তার তিন সহোদর। তাহমিনা চুপসে গেল।

চলমান……

রিচেক পরে করবো।