#মনবিবাগী_দিওয়ানা
#পর্ব_৩২
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
শুরুতেই কেউ কোনো কথা বাড়ালো না। সবাই চুপচাপ এগিয়ে গেল ইনামকে দেখতে। ইথিকার কোলে ছোট্ট ইনামটা ঘুমোচ্ছিল। আসলাম খান কাছে যেতেই ইথিকা ক্ষীণ গলায় বলে উঠল,
“তোমরা! কে খবর দিল?”
আর্যাব খান খোঁচাধরা স্বরে বলল,
“পথেঘাটে, হাটেবাজারে দৌড়াচ্ছি তোর বাপের ভোটের জন্য। পাতালের খবর পর্যন্ত টেনে আনছি। বস্তিতে কি হচ্ছে সেটা জানব না?”
আসলাম খান ইথিকার কোলে থেকে সাবধানে ইনামকে নিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল। কয়েক মুহূর্ত জড়িয়ে ধরে রাখল শিশুটাকে। কাবির দূরে দাঁড়িয়ে তা দেখলো। একটা হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো এই ভেবে যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার জটিলতার জন্য বাচ্চাটাকেই ভুগতে হয় শেষমেশ।
আসলাম খান ছেলেকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে নার্সের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“হুঁশ ফিরবে কবে?”
নার্স শান্ত গলায় বলল,
“ঘুমোচ্ছে স্যার। সেন্স আছে। চিন্তার কিছু নেই।”
আসলাম খান ইনামের গালে আদর করে আবার ইথিকার কোলে রেখে দিল। এরপর সে এগিয়ে গেল তাহমিনার সামনে। কালো বোরখা আর কালো হিজাবে ঢাকা তাহমিনা তাকে দেখতে না চেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
আশিষ খান কটাক্ষ করে বলল,
“কপালে এমন চোট লাগল কিভাবে?”
তাহমিনা শুকনো গলায় বলল,
“কলপাড়ে ভাঙা ইটের ওপর পড়ে কপাল ঠুকেছে।”
আরিশ খান ঠাট্টার সুরে বলে উঠল,
“সাবাশ! আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিলে? খানদের ব্যাটা মরুক তোমার কী আসে যায়?”
তাহমিনা সোজাসাপ্টা গলায় জবাব দিল,
“হ্যাঁ তাই।”
আসলাম খান তখনই গর্জে উঠল,
“একদম চুপ!”
তাহমিনা চোখ রাঙিয়ে কঠিন গলায় বলল,
“একদম চিল্লাপাল্লা করবেন না এখানে। আমার ছেলেকে আমি এভাবেই মানুষ করবো। আঘাত পাওয়াটাও একটা শিক্ষা যেটা আপনারা পাননি। ওর ওসব বাজে স্বভাবের জন্য আপনি আর আপনার তিন ভাই দায়ী। এইটুকুনি একটা ছেলে সবাইকে যা তা গালি দেয়। কোন অমানুষের বাচ্চা সেটা আমাকে বলতে হয় না আর।”
আসলাম খান রাগে কাঁপতে কাঁপতে হাত তুলতে গেল। মুহূর্তেই আর্যাব খান তার হাত চেপে ধরে ফেলে। শক্ত করে চেপে ধরতে ধরতেই ধীর গলায় বলল,
“কুল কুল!”
আসলাম খান তেড়ে বলল,
“হাত ধরলি কেন? ও কি বললো শুনেছিস? কি সাহস বেড়েছে। আমাকে অমানুষ ডাকছে!”
আর্যাব খান ঠাণ্ডা চোখে তাহমিনার দিকে তাকাল। বলল,
“আমি লম্বা কথায় বিশ্বাসী। আরাম পাওয়া যায় কথা বলে। কিন্তু আজকে শর্টকাটে বলছি। সময় কম। তুমি আমাদের বাপকে আমাদের হাতে তুলে দেবে নাকি দেবেনা?”
তাহমিনা সোজা উত্তর দিল,
“দেব না। আমার ছেলেকে আমি কারো হাতে দেব না।”
আর্যাব খান আর্যাব খান চ বর্গীয় শব্দ করে বলল,
“আহা! কথা আবার লম্বা হয়ে যাচ্ছে ভাবি। শর্টকাট উত্তর দাও। ইয়েস অর নো?”
তাহমিনা দৃঢ় গলায় বলল,”দেব না।”
আর্যাব খান ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি টেনে আশিষের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইনামকে নিয়ে গাড়িতে ওঠ। দেখি কার বাপ এসে আটকায়!”
তাহমিনার চোখ ভরে উঠল জল দিয়ে। কাঁপা গলায় সে বলল,
“আমি ওর মা। আমার ছেলেকে আমার কাছ থেকে সরানোর চেষ্টা করবে না। ওকে নিয়ে যেতে চাইলে… আমি এখানে নিজের খুন নিজেই করব।”
“আবার সেই পুরনো ডায়লগ!”
আসলাম খান বিরক্ত মুখে কপালে হাত চাপা দিল।
হতাশ গলায় বলল,
“তাহু আমার কথা মন দিয়ে শোনো। ইনাম আমাদের বাড়ির পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত। ওই বস্তিতে ও টিকতে পারছে না। ওর গায়ের রঙ দেখেছ? কেমন মলিন হয়ে গেছে! আমার চাঁদের মতো ছেলে এখন হয়ে গেছে জেলের কয়েদি! মুদি দোকানির নাতি নাতি ভাব।”
তাহমিনা কঠোর গলায় বলল,
“আমার আব্বাকে অসম্মান করবেন না!”
ঠান্ডা, নির্মম স্বরে আসলাম খান বলল,
“একশবার করব!”
আর্যাব খান একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
“এত কথা বাড়িয়ে কি হবে বুঝতে পারছি না। এই আশিষের বাচ্চা কথা কানে গেল নাকি চেপে চেপে ভরে দেব?”
আশিষ মাথা নেড়ে বলল,
“হু।”
ঠিক তখনই ইথিকা এগিয়ে এল। তার কোলে ঘুমন্ত ইনাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে আশিষ এগিয়ে গিয়ে তার কোল থেকে ইনামকে তুলে নিল। বলল,
“ওই টুকুন ওঠ!”
ইথিকা ভীত গলায় বলল,”কি হচ্ছে এখানে?”
আসলাম খান ঠাণ্ডা স্বরে বলল,
“ও আমাদের সাথে বাড়ি যাবে। আরেকবার যদি ওই কলপাড়ের ইটে মাথা ঠুকে তাহলে ছেলেটাকে বাঁচানো যাবে না।”
তাহমিনা কেঁপে উঠল। তারপর শক্ত গলায় বলল,
“ওকে নিয়ে বেরোলেই আমি থানায় যাব।”
সবাই একে অপরের দিকে তাকাল। নীরবতা ভেঙে আর্যাব খান হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে ঘুরে গিয়ে আশিষের হাত থেকে ইনামকে কোলের মধ্যে তুলে নিল। বলল,
“যাও থানায় যাও। সাথে মোটা একটা বান্ডিল নিয়ে যেও। বান্ডিল আছে তো?”
বলেই হো হো করে হেসে ইনামকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিল।
পিছন থেকে তাহমিনা চিৎকার করে বলল,
“মেঝ ভাই দাঁড়াও! ওকে নিয়ে যেতে পারবে না। আমি থামতে বলছি!”
আশিষ ঠাণ্ডা গলায় বলল,
“বাড়ি চলো ভাবি।”
তাহমিনা খোঁচা মেরে বলল,
“কেন? রেঁধে খেতে কষ্ট হচ্ছে নাকি?”
আসলাম খান বলল,
“লোক রেখেছি।”
তাহমিনা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলল,
“আমি গেলেই তোমরা সবাইকে তাড়িয়ে দেবে। কারণ কাজের বুয়া বিয়ে করেছ।”
আসলাম খান বলল,
“গতবারের ওরা নিজেরাই কাজ ছেড়ে দিয়েছে। সেখানে আমাদের কি করার আছে? আগে যা হয়েছে সব ভুলে যাও।”
তাহমিনা কঠিন গলায় বলল,
“খানদের সাত খুন এত সহজে মাফ? আমি মাফ দেব না কাউকে ”
ইথিকা এগিয়ে এসে নরম গলায় বলল,
“ভাবি এখন নিজেদের নিয়ে ভাবার সময় নেই। ইনামের জন্য হলেও তোমাকে যেতে হবে।”
তাহমিনা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি আমার কষ্টটা বুঝবে না। তোমাকে কেউ জোর করে, ভয় দেখিয়ে, তোমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বিয়ে করেনি। তোমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়নি। তোমাকে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি। তোমাকে তিনবেলা রেঁধে খাওয়ানোর পরও খোঁচা শুনতে হয়নি। তোমার মা বাপ তুলে কেউ গালি দেয় না শ্বশুরবাড়িতে। তোমাকে রাণীর হালে রেখেছে ওরা। তোমার মুখ দিয়ে ওই কথা বেরোনো খুব সহজ। পেটে বাচ্চা নিয়েও অকথ্য গালিগালাজ নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে আমাকে। তোমাদের কেউ আঘাত করলে তোমরা তাকে খুন করতে পর্যন্ত দুবার ভাবো না। আর অন্যদের বেলায়? তুমি কপাল করে ওরকম শ্বশুরবাড়ি পেয়েছ তাই এত বড় বড় কথা বলতে পারছো। আমার জায়গায় থাকলে তুমি একদিনও সংসার করতে পারতে না।”
দূরে কাবির দাঁড়িয়ে থাকায় আসলাম খান দাঁত চেপে বলল,
“তুমি কথা লম্বা করছো এবার।”
তাহমিনা বলল,”উচিত কথা বললেই কথা লম্বা হয়ে যায় তাই না? আপনার গায়ে ফোস্কা পড়ে তখন। আপনি আমার সাথে যা করেছেন তার জন্য আমি আপনাকে পরপারেও মাফ দেব না। আপনার সাথে আমি না পারতে সংসার করেছি। এখনো তাই করছি। আর ভবিষ্যতেও যদি করতে হয় তাহলে অনিচ্ছায় করবো। ইনাম কোনোদিন বড় হলে সে জানবে তার মা তার বাবাকে কোনোদিন সম্মানের চোখে দেখেনি। তার বিস্তর পয়সা আছে, পয়সার উপর ঘুমায়, লোকসমাজে সে বড়মাপের মানুষ, মানুষ তাদের ধন্য ধন্য করে। কিন্তু তার মা তার বাবাকে নূন্যতম সম্মানটুকুও করেনা।”
আসলাম খান বলল,
“তুমি কথাগুলো কি কাউকে শোনাচ্ছ?”
“পুরো দুনিয়াকে শোনাবো আমি।”
আসলাম খান তার দিকে তেড়ে এসে হাত ধরে নিয়ে যেতে চাওয়ার আগেই ইথিকা বলল,
“বড় ভাইয়া এভাবে রাগারাগি করবে না। ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে নিয়ে যাও। তোমাদের মধ্যকার ঝামেলার জন্য ইনামটা কষ্ট পাচ্ছে। ভাবি আমি তোমাকে রিকুয়েষ্ট করছি। তুমি প্লিজ ইনামের জন্য ফিরে যাও।”
তাহমিনা আসলাম খানের দিকে তাকালো। বলল,
“ইনামের জন্যই যাচ্ছি।”
আসলাম খান তার হাত ধরতে এলে তাহমিনা হাত সরিয়ে বলল,
“আপনার বোন কি বললো শুনতে পাননি? আমি ইনামের জন্য যাব, যাচ্ছি আর ইনামের জন্যই ওই বাড়িতে থাকবো। আপনি আমার আশেপাশেও ঘেঁষবেন না।”
আসলাম খান বলল,”তোমার বেশি অহংকার।”
তাহমিনা চোখে জল নিয়ে বলল,
“আমার জীবনটা শেষ করে দিয়ে বলছে আমার বেশি অহংকার। জালেম কোথাকার।”
চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেল সে।
ইথিকা তার ব্যাগটা নিয়ে এসে কাবিরের সামনে দাঁড়ালো। কাবির বলল,
“বাড়ি গেলে ওদের সাথে চলে যাও।”
“না।”
“তাহলে চলো।”
ইথিকা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
” আপনি কিছু বললেন না কেন আজকে?”
“কার হয়ে?”
“আপনার পূর্বপ্রেমিকা ইয়েমানে প্রাক্তনের হয়ে।”
কাবির তার দিকে তাকালো। ইথিকা থমকে গেল। যাব্বাবা সে তো মজা করলো। কাবির হেঁটে বেরিয়ে যেতে লাগলো। ইথিকা পিছু নিয়ে বলল,
“সেটা কি অস্বীকার করার মতো কিছু? আপনি গোমড়ামুখো, অন্তর্মুখী নায়ক ছিলেন, ভাবি লজ্জাবতী নায়িকা ছিল। অপ্রকাশ্য প্রেম ছিল। আর কিছুদিন লাগতো বিয়ে বিয়ে রব উঠতে। কিন্তু মাঝখানে ভিলেন হয়ে দাঁড়ালো বড় ভাইয়া। কথাগুলো কি মিথ্যে?”
“নিজের বড়ভাইয়ের গুণগান গাইছো?”
ইথিকা বলল,” আপনার কারণেই ভাবি আমাদের সংসারে মনোযোগী হয়নি কথাটাও মিথ্যে নয়। বড় ভাইয়ার রাগটা স্বাভাবিক নয় কি?”
“তাহমিনার আচরণ অস্বাভাবিক?”
ইথিকা বলল,”আপনি সত্যিই ভাবিকে পছন্দ করতেন? তাহলে কোনোদিন বলেননি কেন? দেখুন এভাবে মনের কথা না বললে কিন্তু মানুষ হারাতে হয়। আমাকে সব মনের কথা বলে দেবেন যদি হারাতে না চান।”
কাবির থেমে গিয়ে তার দিকে তাকালো।
“তুমি কষ্ট পেতে চাইলো বলো। আমি অন্যভাবে দেব।”
ইথিকা হেসে ফেললো। ফিসফিসিয়ে বলল,”ওকে ওকে সরি। এসব আর বলছিনা।”
কাবিরের পাশাপাশি হেঁটে বাইরে বেরিয়ে এল সে।
নিশ্চয়ই।
গাড়িটার গায়ে ধুয়ে পড়ছে অসময়ের বৃষ্টি। শহরজুড়ে ছড়িয়ে গেছে ঝাপসা জলরঙের মতো একটুকরো নিস্তব্ধতা।
অক্টোবর অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে, নভেম্বরও অর্ধেক কেটে গেছে।
এই সময়টায় ঠান্ডা হাওয়ার ছোঁয়ায় গা জড়িয়ে আসার কথা ছিল। কুয়াশার চাদরে শহর ঢেকে যাওয়ার কথা ছিল।
তার বদলে নেমে এসেছে এই অচেনা, উদাসীন বৃষ্টি। শীত লাগছে অবশ্য।
কাবির বেরিয়ে গেল। গাড়ির কাছে চলে গেল। গাড়িটা নিয়ে রাস্তার ধারে এসে ইথিকাকে ডাকলো। ইথিকা এসে তার পাশে বসলো। উইল্ডশিডে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে টপটপ করে। হাওয়া এসে ইথিকার খোলা চুল নাড়িয়ে দিল। কাবির চুপচাপ ড্রাইভিং করছেন। ইথিকা বৃষ্টিভেজা পিচঢালা রাস্তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ আনমনা হয়ে বলল,
“বৃষ্টি দেখলে আমার মাঝেমধ্যে খুব মন খারাপ হয়।”
কাবির তার দিকে তাকালো। বলল,”পদ্মদিঘি যাবে?”
ইথিকা অবাক হয়ে কাবিরের দিকে তাকাল।
পদ্মদিঘিতে মাজহাবের সাথে একবার গিয়েছিল সে।
কাবির কি সেটা জানে?
ও কি সন্দেহ করছে সেই দিনের স্মৃতিতেই আজ মন খারাপ হয়ে আছে ওর?
কাবির ধীরে ধীরে তার দিকে ফিরল।
ইথিকার বিস্মিত চোখদুটো দেখে নরম গলায় বলল,
“বৃষ্টি দেখে মন খারাপ হলে, বৃষ্টিতেই সেই মনখারাপ ধুয়ে ফেলতে হয়।”
ইথিকা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মলিন হাসলো।
ওদের গাড়িটা থামলো পদ্মদিঘির পাশে।
সামনে সেই প্রাচীন ঘাট। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া পাথরের সিঁড়ি। ঘাটের কিছুটা অংশ ডুবে আছে জলে। পুরু সবুজ শ্যাওলা জমে আছে ঘাটের কোণায় কোণায়।
দিঘির বিস্তীর্ণ বুকে ফুটে আছে অসংখ্য গোলাপি পদ্মফুল। পাপড়ির উপর টপটপ করে পড়ছে বৃষ্টির কোমল ফোঁটা।
ইথিকা জুতো খুলে পা খালি করে নীচের দিকে নামতে শুরু করলো। তার নরম চপল পায়ের ছাপ ভিজে পাথরের উপর পড়লো বোধহয়।
কাবির একটু সাবধানে নামতে নামতে বলল,
“পা পিছলে পড়লে কিন্তু শেষ।”
ইথিকা পেছন ফিরে তাকালো না। বলল,
“ভয় নেই।”
একটা ছোট্ট নৌকা ডেকে ইথিকা উঠে বসলো। কাবির বলল,”তুমি ঘুরে এসো।”
ইথিকা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”আপনিও আসুন। আসুন না।”
কাবির বলল,”আমার কি কাজ ওখানে?”
ইথিকা বলল,”আপনার কাজ আমার ছবি তোলা।”
কাবিরকে টেনে তুলে নিল সে। কাবির চুপচাপ বসে রইলো নৌকায়। ওই দূরে তার চোখ। একটু ভাবুক।
ইথিকা তার বসে থাকার ধরণ দেখে না হেসে পারলো না।
পাশাপাশি বসে একটা পদ্মফুল ছিঁড়ে নিয়ে ধীরেধীরে কাবিরের সামনে রাখলো। কাবির সামনে ফুল দেখে ফুলের মালিকের দিকে তাকালো। ইথিকা ফুলটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“মশাই আপনি প্রেমের অভাবে বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। এই নিন। আজ থেকে আমাদের প্রেমের মৌসুম শুরু। সাক্ষী থাকুক এই পদ্মদিঘি। এই বৃষ্টিভেজা দুপুর।
আর,
সাক্ষী থাকুক শাল, অশ্বত্থ বটের পেয়াদারা। সাক্ষী থাকুক ছাতিম-পলাশ-বুনো ফুলের ঘ্রাণ। সাক্ষী থাকুক কাদায় আঁকা আহত এক থাবা।সাক্ষী থাকুক হাজার বছর হাওয়ার গোরস্থান।সাক্ষী থাকুক মৃগ-নাভীর কস্তুরি ভোরবেলা।
সাক্ষী থাকুক সাঁওতালি ক্ষোভ, যক্ষ পিশাচ দল। সাক্ষী থাকুক বাদুর-ময়ূর উলুধ্বনির খেলা, সাক্ষী থাকুক পাতার পুরুত হোমের দাবানল।”
কাবির ফুলটা নিয়ে বলল,
“থাকুক না মন্দ কি? বৃষ্টি সাক্ষী রাখলে। কিন্তু ঝড় এলে তখন? তুমি না থাকলে সাক্ষী দিয়ে কি হবে?”
ইথিকা তার কাঁধে আলতোভাবে মাথা রাখলো। দূরের শালবন থেকে ফিসফিস করে বাতাস আসছে সুরের মতো। সেই সুর ইথিকার গলার সুরকে রুদ্ধ করতে পারেনি…
“ঝড় এলে তুই, সাথে থাকলে কি ভয়?”
_________
ইনামের ঘুম ভেঙে গেছে গাড়ি থেকে নামামাত্রই। চোখের সামনে বাবা, চাচা দাদাদের দেখে সে লাফিয়ে উঠলো একপ্রকার। বাবার বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে বলল,
“পাপা!”
আসলাম খান বলল,”ইয়েস।”
ইনাম আঙুল দিয়ে তার চাচাদের দেখিয়ে দিল।
“মেঝ পাপা, সেঝ পাপা, ছুটু পাপা।”
আর্যাব খান বলল,
“ওই বাপদের ফেলে গেছিলি কোথায়?”
ইনাম আঙুল তুলে বলল,”টুই গিছিলি কুথায়?”
আর্যাব খান হো হো করে হাসলো। আশিষ বলল,
“বাবা জয় বাংলা বলো।”
ইনাম বলল,”জয় বাংলা, জিতবি এবাল ধানের ছিচ।”
সবাই হকচকিয়ে গেল। আশিষ বলল,
“কে শিখিয়েছে এসব?”
ইনাম বলল,”নানাভেই, মামা।”
আসলাম খান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”জিয়ার চামচা।”
ইনাম বলল,”জয় বাংলা, জিতবি এবাল ধানেল ছিচ।”
আহমেদ চাচা আর মকবুল চাচা খিকখিক করে হাসছে। আর্যাব খান তাদের দিয়ে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল,
“ওই টাকলা হাসছিস কেন?”
আহমেদ চাচা থেমে গেল। মকবুল চাচা সুড়সুড় করে চলে যাচ্ছিল।
আর্যাব খান ডাক দিল,
“ওই পটকা বাড়ির বউ এসেছে। মিষ্টি নিয়ে আয়। আমিন খানের ডার্লিংকে খবর দে।”
তাহমিনা মাত্রই গাড়ি থেকে নামলো। ইলিনা বেগম এলেন। ইনামকে কোলে তুলে নিয়ে গালে আদর করতে করতে বলল,
“আমার টুকুনসোনা এসেছে? আহারে কপালে কত আঘাত পেল আমার দাদান। দাদুমণিকে মিস করেছ তুমি?”
তিনি নাতিকে কোলে তুলে নিয়ে গালে গাল ঠেকিয়ে চলে যেতে লাগলেন। হঠাৎ থেমে তাহমিমার দিকে তাকালেন। একটু সময় নিয়ে বলল,
“ঘরে আসা হোক।”
তাহমিনা উনার পাশ কেটে নিজের ঘরে চলে যেতে লাগলো। আসলাম খান বলল,
“তোমার সমস্যা কি? মায়ের সাথে কথা বললে না কেন?”
তাহমিনা চলে যেতে লাগলো। ফিরে তাকালো না।
আর্যাব খান বলল,”বউ শ্বাশুড়ির যুদ্ধ আবার শুরু হবে।”
ইলিনা বেগম খেপে গেলেন,
“কি বললে আর্য?”
আর্যাব খান হাসলো।
“গৃহযুদ্ধের কথা বলেছি।”
“ঠাসঠাস করে চড় দেব। তোমাদের বউরা আমার সাথে থাকতে না পারলে ওদের আলাদা রাখো।”
আর্যাব খান বলল,
“আমার বউ আসার আগে আশিষের বউ আসবে।”
আশিষ বলল,”আমাকে টানছো কেন? বিয়ের বয়স তোমার হয়েছে।”
আর্যাব খান খোঁচা মেরে বলল,
“তুমি ফিডার খাচ্ছ বাবু?”
আশিষ খান মায়ের দিকে তাকালো। আরিশ খান বিরক্ত হয়ে বলল,
“কীসব ফাউ কথাবার্তা চলছে এখানে? মম খিদে পেয়েছে।”
“আহমেদ আর মকবুলকে বলো। মম খাবার নিয়ে বসে নেই। ইথুর সাথে দেখা হয়েছে তোমাদের?”
আর্যাব খান বলল,”ইয়েস, বরের সাথে পিরিতিতে মজে আছে।”
“করে নিক কিছুদিন।”
ইনামকে নিয়ে চলে গেলেন তিনি।
তাহমিনা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আসলাম খান বাইরে পায়চারি করছে। তাহমিনা দরজা খুললো। বোরকা খুলেছে। পরনে একটা সাদামাটা শাড়ি। আসলাম খানকে বলল,
“আছেন?”
আসলাম খান দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো।
“বলো।”
“আপনার জিনিসপত্র এখান থেকে নিয়ে যান। মেঝ ভাইয়ের ঘরের পাশের ঘরটা খালি। খাট পাতাও আছে।”
আসলাম খান বলল,”আমি এই ঘরেই থাকবো।”
তাহমিনা কিছু বললো না আর। বেডশীট, বালিশ, আর ইনামের জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। আসলাম খান আটকাতেই তাহমিনা এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“এখনো আমার সাথে জবরদস্তি করবেন নাকি? বিয়ের পর চার বছর হয়ে যাচ্ছে। অথচ আপনার প্রতি এতটুকু সহানুভূতি আমার আসেনা। এতটুকু মায়া আসেনা। কারণ আপনি আমার উপর সবসময় জোর খাটিয়েছেন। সরে যান।”
“আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিওনা।”
তাহমিনা চেঁচিয়ে উঠল,
“দূর হোন তো সামনে থেকে। দেখলেই আমার রক্ত গরম হয়ে আসে। ধৈর্য মারায় আবার। বিয়ে করবেন বলেছিলেন না? কোথায় গেল সেইসব বুলি? বিয়ে করে নেন একটা। আমি তো অন্তত শান্তিতে থাকবো।”
তাহমিনার চেঁচামেচিতে সবাই ছুটে এল। আর্যাব খান উঁকি দিয়ে বলল,
“ভেবেছিলাম বউ শ্বাশুড়ির যুদ্ধ দেখবো। কিন্তু এখন তো বউ জামাইয়ের যুদ্ধ দেখতে হচ্ছে। হাউ রোম্যান্টিক!”
আসলাম খান বলল,
“জুতার বাড়ি খাবি মাদারচো****?”
আর্যাব খান ঘুরে দাঁড়ালো। যেতে যেতে বলল,
“তওবা তওবা নাউজুবিল্লাহ আসতাগফিরুল্লাহ।”
আশিষ আর আরিশ চরম বিরক্ত হয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেল।
তারা যেতেই আসলাম খান বলল,
“তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। আমি তোমার আশেপাশে ঘেঁষব না। থাকো এখানে। এসব ব্যাপার জানাজানি হলে ইজ্জত সম্মান থাকবে না আমার।”
“আপনাদের আবার ইজ্জত সম্মান!”
“কি বললে?”
তাহমিনা মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল। আসলাম খান দাঁতে দাঁত চাপলো।
“ইলেকশনটা যাক। তোকে দেখে নেব আমি ফকিন্নির বাচ্চা।
[কবিতা, গান সব সংগৃহীত ]
চলমান.
#মনবিবাগী_দিওয়ানা
#পর্ব_৩৩
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮।
সময়টা তখন সন্ধ্যা।
ইথিকা তখনো ভোটকেন্দ্রে ছিল। সেই সকালে বের হওয়ার পর এখনো ফিরতে পারেনি। কাবির দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন। ওখানে আজ ঝামেলা হবে তা নিশ্চিত।
গত দেড়মাস ধরে ইথিকা ঘরছাড়া, দিন-রাত এক করে ভোটের প্রচারণায় ব্যস্ত। কাবির কোনোদিন সরাসরি আপত্তি করেনি। তবে ভিতরে ভিতরে তার মন অস্থির ছিল। তার মোটেও ইচ্ছে ছিল না ইথিকাকে একা ছাড়ার। দেওয়ান বাড়ির বউ এইসব রাজনীতিতে যুক্ত হোক সরাসরি সে চায় না। এসব রাজনীতি নয় অপরাজনীতি। মানুষের রুটি রোজগার লুটেপুটে খাওয়ার কূটনীতি।
কাবির অবশ্য সরাসরি আপত্তি জানায়নি কারণ খানরা নানান বাহানা বের করবে। বলবে, কাবির ইচ্ছে করে এমন করছে। শত্রুতামি করছে।
আপত্তি করলে তেমন কিছুই হতো না। ইথিকাও তার কথা অমান্য করতো এমন না। তবুও কাবির আপত্তি করেনি। কারণ নতুন করে ঝামেলা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর সবকিছুর ঊর্ধ্বে ইথিকার সঙ্গে তার সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি গভীর হয়েছে। দূরত্ব বেড়েছে, কিন্তু তারপর তারা আবার একে অপরের কাছে ফিরে এসে কাটিয়েছে অসংখ্য একান্ত মুহূর্ত।
একবাড়িতে, একঘরে, একই বিছানায় কোনো মনোমালিন্য ছাড়া স্বামী স্ত্রী থাকলে যা হয় তাই হয়েছে।
এমতাবস্থায় আর কোনো জটিলতায় পড়তে ইচ্ছুক নয় কাবির। অনেক হয়েছে। এসব পারিবারিক ঝুট-ঝামেলায় তার বিরক্তি ধরে গেছে।
রমজানের আগেই সে দেশ ছাড়বে। ইথিকা যেতে চাইলে সঙ্গে নেবে নইলে একা কিছুদিন সময় কাটিয়ে আসবে। ব্যবসায়ের কাজে ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে হবে।
সেও এতদিন নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। যেহেতু ইথিকা অফিসে সময় দিতে পারছেনা। ইথিকাও প্রচারণার কাজে ব্যস্ত ছিল। সে গত এক সপ্তাহ যাবত খান বাড়িতে ছিল। কাল রাতেই দেওয়ান বাড়িতে এসেছে। আজ সকালে বেরিয়েছে ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে। কাবির ছিল দুপুর অব্দি। এখন ফিরে এসেছে।
কাবির বাড়ি ফিরতেই কল্পনা জানতে চাইল,”ভাইয়া ভোট দিয়েছ?”
কাবির ক্লান্ত ভঙ্গিতে সোফায় বসে বলল,
“ওখানে ভোট চলছে নাকি সার্কাস সেটা নিয়েই এখন সন্দেহ হচ্ছে।”
কল্পনা অবাক হয়ে বলল,”কেন?”
কাবির ঠান্ডা গলায় জবাব দিল,
“লীগের ছেলেপেলেরা হাসিমুখে জোর করে ভোট নিচ্ছে। আর আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই তামাশা দেখছে।”
কাদিন পাশে বসে বলল,
“ভোট তো গতরাতে শেষ। আমরা যখন ফিরছিলাম, রাস্তায় অনেকে বলছিল কেউ কেউ একাই নাকি শতাধিক ভোট দিয়েছে ইচ্ছেমতো।”
কাওসার দেওয়ান গম্ভীর স্বরে বলল,
“যেখানে সুষ্ঠু ভোট নেই সেখানে ভোট দিয়ে লাভ কী?”
কল্পনা আফসোস করে বলল,”আমি ভোটার হওয়ার পর একবারও ভোট দিতে পারিনি।”
কাসেদ হেসে বলল,”তোর ভোট দেওয়া আর হবেও না।”
কল্পনা গাল ফুলিয়ে রাখলো। কাদিন আর কাসেদ হাসলো।
কামরান দেওয়ান হঠাৎ বললেন,
“কাবির, আমিন খান গদিতে বসতে পারবে বলে মনে হয় তোমার?”
কাবির নিঃসন্দেহে বলল,
“হ্যাঁ। ভোটকেন্দ্রে সব তার লোক। আসলাম আর আর্য জায়গায় জায়গায় তাদের লোক বসিয়ে রেখেছে। তার নামই শোনা যাচ্ছে বেশি। মানুষ যেটা ধারণা করে সেটাই হয়।”
কাবিরের কথাই সত্যি হলো।
রাত বাড়তেই টিভির পর্দায় শোনা গেল খবর,
“আমিন খান সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং বর্তমানে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।”
বাইরের রাস্তায় তখন শাঁ শাঁ করে ধেয়ে যাচ্ছে গাড়ির বহর। বাজি ফাটানোর বিকট শব্দে আকাশ কাঁপছে।
এই উৎসবমুখর গর্জনে কারো বুঝতে বাকি রইল না কী হয়েছে। খান বাড়ি থেকে দেওয়ান বাড়িতে মিষ্টির বাক্সও পৌঁছে গেল অল্প সময়ের মধ্যে।
কিন্তু ইথিকা এখনো ফেরেনি।
হঠাৎ খবর এলো ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি, থানা ভাঙচুর, আরও নানা রকম নাশকতা চলছে চারদিকে।
কাবির অস্থির হাতে একের পর এক ফোন দিতে লাগল ইথিকাকে। শেষমেশ ইথিকা ফোন রিসিভ করল।
তার কণ্ঠে উচ্ছ্বাস,”মিষ্টি পাঠিয়েছিলাম। খেয়েছেন?”
কাবির গম্ভীর গলায় বলল,
“খাব। তুমি কোথায় এখন?”
ইথিকা বলল,
“ভাইয়াদের সাথে আছি। খেয়েদেয়ে আপনার কাছে ফিরব। আজ আপনার জন্য একটা স্পেশাল সারপ্রাইজ আছে।”
কাবির বলল,
“ঠিক আছে। সাবধানে থেকো।”
“ওকে” বলেই ফোন কেটে দিল ইথিকা।
____________
খান বাড়িতে তখন একপ্রকার হৈ-হুল্লোড় চলছে। চারপাশে হাসি, গান আর উদ্দাম উল্লাস। উচ্চ আওয়াজে গান বাজনা।
আর্যাব খান এক কোণে বসে ইতিমধ্যেই এক বোতল চিভাস রিগ্যাল ১৮ ইয়ার্স স্কচ হুইস্কি সাবাড় করে ফেলেছে। চোখের পাতাগুলো ভারী হয়ে এসেছে, তবুও থামার নাম নেই।
আরও এক বোতল জ্যাক ড্যানিয়েলস টেনেসি হানি খুলে ছিপি টেনে নিল। চুমুক দিতেই গলা জ্বলে উঠল। বোতলের মুখে শেষ চুমুকটা দিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে সুইমিংপুলের ধারে বসলো সে চেয়ার টেনে। মাথা ঝাঁকালো। নেশা হলে সমস্যা। তার সহজে নেশা হয় না। জরুরি ফোন আসার কথা ছিল। এখনো আসছেনা কেন? মরে গেছে নাকি ওরা?
ফোন কাঁপিয়ে সত্যি সত্যি কল এল কিছুক্ষণ পর। বাম হাতে কলটা রিসিভ করতেই শোনা গেল,
“স্যার আনঝিল ম্যামের যৌন হয়রানির কেসে গ্রেফতার হওয়া সেই তিন আসামি পালিয়েছে।”
আর্যাব খান কপাল কুঁচকে ছিল। কথাটা শুনে ধীরেধীরে কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল তার।
নেশাধরা কণ্ঠে বলল,”যেতে দে। ওস্তাদ এমনিতেও শেষ রাতেই মারে।”
____
রাত ঘনিয়ে এসেছে। শহর এখনো পুরোপুরি থমকে যায়নি, কিন্তু ভেতরের অনেক অলিগলি নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ রাস্তা ফাঁকা, দোকানপাটের ঝাঁপ পড়ে গেছে। নানান জায়গায় ছড়িয়ে পড়া নাশকতার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষের মনে। ফলে শহরের ভেতর দিয়ে গাড়ি চলাচলও আজ একটু তাড়াতাড়িই থেমে গেছে।
রাস্তাধরে তিনজন লোক দৌড়াচ্ছে। তারা সদ্য জেল থেকে পালিয়ে আসা আসামি। কিভাবে পালাতে পেরেছে তা সম্পর্কে তারা নিজেরাও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের সাহায্য করেছে পালাতে। তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
কিন্তু তাদের পিছু নিয়েছে একটা গাড়ি। বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে আসছে তাদের পিছু পিছু।
তারা প্রাণপণে ছুটতে লাগলো। না পুলিশের হাতে তারা আর ধরা দেবেনা। কিছুতেই না। পা চলছেনা আর। তবুও তারা দৌড়াচ্ছে। আজ থামলে চলবে না। বাঁচতে হবে। গা ঢাকা দিতে হবে।
হঠাৎ তাদের সামনে থেকে একটা গাড়ি ধেয়ে এল। চোখ ধাঁধিয়ে গেল আলোয়। গাড়িতে বসা কালো হুডি পরা একজন।
একজন চালাকি করে রাস্তার পাশ দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। সামনের গাড়িটা থেকে হুডি পরিহিত মানুষটির হাতটা জানালা ফুঁড়ে বেরিয়ে গুলি ছুঁড়ল একে একে। লোকটা পড়ে গেল রাস্তার ধারে।
আর বাকি দুজন কিছু বুঝে উঠার আগেই রাস্তার সাথে পিষে গেল। ইয়ারপিসে আর্যাব খানের গলায় ফিসফিসিয়ে ভেসে এল,
“ওয়ান্স এগেইন।”
গাড়িতে বসা হুডি পরিহিত মানুষটি গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে আবারও সেই গতিতে পেছনে এসে পিষে দেয় দ্বিতীয় বারের মতো। রাস্তার উপর পড়ে থাকা দুটো দেহ তখন শুধু মাংসের দলা, প্রাণ নেই, রক্তের উপর ভাসছে।
সংকেত পেতেই গাড়িটা থেকে লাফ দিয়ে নামলো হুডি পরিহিত মানুষটি। অদূরে হেডলাইট অফ করে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটির কাছাকাছি চলে গেল। গাড়ির সিটে বসতে বসতে মেয়েলী কণ্ঠস্বরটা বলল,
“দ্রুত রাস্তা ক্লিন করতে বলো।”
আর্যাব খান আশিষ আর আরিশকে মেসেজ পাঠিয়ে ছোট্ট করে বলল,
“ডান।”
ইথিকা হুডির ফিতা ঢিলেঢালা করে নামিয়ে দিল। জানালার কাছে গিয়ে মুখটা বাইরে বাড়িয়ে দিল। চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিল গভীরভাবে। কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। ভেতরের সব আগুন একেবারে গলে গলে বেরিয়ে আসছে যেন। তার চোখমুখ পাথরের মতো কঠিন। এতদিনের দাউদাউ করে জ্বলা প্রতিশোধের আগুন আজ প্রথমবারের মতো শান্ত হলো। বুকের গভীরে জমে থাকা ঝড়টা থেমে গেছে। তার দিকে হাত বাড়ানো?
হঠাৎ ভাইব্রেট হলো ফোন। আর্যাব খান ফোন বাড়িয়ে দিল। ইথিকা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কে?”
“তোর বর।”
ইথিকা চ বর্গীয় শব্দ করে ফোনটা হাতে নিল। তারপর ফোনটা কেটে দিয়ে আর্যাব খানকে বলল,
“সবার আগে এই মালটাকে সরানো উচিত ছিল আগে। আমি আর কতদিন ওসব নাটক করে যাব? জাস্ট গায়ে জ্বালা ধরে যায় আমার। সেকেন্ডে সেকেন্ড ধরা পড়ি। এদের জন্যই তো আমি কুত্তাগুলোর হাতে মরতে যাচ্ছিলাম।”
আর্যাব খান হাসলো।
“কাঁচা অভিনয় নিয়ে মাঠে নেমেছিস ধরা পড়ার ভয় তো থাকবেই। দেনমোহর আদায় করেছিস। এবার কাগজটা হাত কর আগে। তারপর উড়াল দে।”
ইথিকার বমি পাচ্ছে। মনে হচ্ছে রক্তের গন্ধ নাকে লেগে আছে। সে বলল,
“গাড়ি থামাও।”
আর্যাব খান গাড়ি থামালো।
ইথিকা গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে বমি করতে লাগলো রাস্তার পাশে। আর্যাব খান পানির বোতল বাড়িয়ে দিল। ইথিকা বোতল নিয়ে পানি খেতে খেতে গাড়িতে এসে বসলো। অসম্ভব দুর্বল লাগছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
সে বলল,”আমাকে চেঞ্জ করতে হবে। আগে বাড়ি চলো।”
আর্যাব খান গাড়িটা খান বাড়ির সামনে থামালো। ইথিকা দ্রুত ঘরে গিয়ে আগের শাড়িটা পরে নিল। তারপর নেমে এল। আর্যাব খানকে বলল,
“চলো।”
তাহমিনা দেখেছে তাকে হুডি পরে বাড়িতে ঢুকতে। আর শাড়ি পরে বেরোতে।
আর্যাব খান গাড়ি স্টার্ট দিল। বলল,
“তোকে সন্দেহ করে না ওরা? যা ন্যাকামি করিস তুই। অভিনয়টা শিখে যেতে পারতিস।”
বলেই হা হা করে হাসলো আর্যাব খান।
ইথিকা রেগে বলল,”আর কত সন্দেহ করবে? অনেক সন্দেহ করেছে, অনেক ধরা পড়েছি। এমনকি মৃত্যুর সাথেও পাঞ্জা লড়েছি ওদের ফালতু সন্দেহের কারণে। ওদের তো আমি ছাড়ব না।
আর এখন সন্দেহ করলেও আমার কি? আমার উদ্দেশ্য হাসিল হলেই আমি ওই জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসবো। জাস্ট ইমাজিন ব্রো ওটা বাড়ি নয় একটা কয়েদখানা। হাজারটা রুলস মেইনটেইন করতে হয় ওদের বাড়িতে। একবার যখন ঢুকেছি তখন আমার উদ্দেশ্য হাসিল না করে আমি বেরোবো না। নইলে ওদের এতদিন সহ্য করেছি কিভাবে ভাবতে গেলেই আমি টায়ার্ড হয়ে পড়ি।”
আর্যাব খানের গাড়িটা দেওয়ান বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। ইথিকা গাড়ি থেকে নেমে বলল,
“গেলাম।”
“কোনো সমস্যা হলে ফোন দিস।”
“ওকে।”
কাবির দোতলার বারান্দায় পায়চারি করছিল এতক্ষণ। গাড়ি দেখে থেমে গেছে। ইথিকা চোখ তুলে তাকালো বারান্দার দিকে। কাবিরও এদিকেই তাকিয়ে আছে। তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল।
ইথিকা শাড়ির আঁচলটা টেনে এনে গায়ে জড়িয়ে বাড়ির ভেতরে পা রাখলো। লায়লা খালা দরজা খুলে দিয়ে বলল,
“বাপরে বাপ বাড়ির বউ এতক্ষণে বাড়ি ফেরে তাও একা একা। কি আজব কান্ড!”
ইথিকা চোখ গরম করে তাকালো। লায়লা খালা বলল,”বাপরে কেমনে তাকায়।”
হুড়মুড় করে চলে গেল লায়লা খালা।
ইথিকা ঘরে গিয়ে বিছানার উপর বসলো। আধশোয়া হয়ে শুয়ে পড়লো। চোখ বুঁজলো।
কিছুক্ষণ ঘরে ভারী পায়ের শব্দ হতেই সে চোখ মেললো। কাবির কাবার্ড থেকে নতুন সেলোয়ার-কামিজ বের করে দিতে দিতে বলল,
“বৈঠক বসেছিল নাকি?”
ইথিকা কপাল কুঁচকে জানতে চাইল,”কীসের?”
কাবির তার পাশে সেলোয়ার-কামিজ রাখলো। বলল,
“ইলেকশনের পর পর কি হবে বলেছিলে মনে হয় একবার? ভুলে গেলে?”
ইথিকা বলল,”ওসব কিছু না।”
কাবির বলল,”তাহলে ভালোই। চেঞ্জ করে নাও। ওহ হ্যাঁ কি একটা সারপ্রাইজ দেবে বলেছিলেনা?”
ইথিকা তার ব্যাগটা হাতে নিল। একটা দামী ব্র্যান্ডের ঘড়ি বের করলো। কাবিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আপনারা তো জন্মদিন পালন করেন না। তবুও আমি জন্মদিন উপলক্ষে আপনার জন্য গিফট এনেছি।”
কাবির খুশি হয়ে ঘড়িটা নিল। কব্জিতে পরতে পরতে বলল,
“মনে হচ্ছে এইদিন স্কুল কলেজ পাস করেছি। সময়কে আটকে রাখা যায় না….
ইথিকা বিড়বিড় করে বলল,”আমাকেও।”
চলমান…
#মনবিবাগী_দিওয়ানা
#পর্ব_৩৪
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
কল্পনার বিয়ের বাজার সদাই করতে গিয়েছে আজ। জোসেফ বলেছে ইথিকাও যেন যায় কল্পনার সাথে। অবশ্য এটা বলা উচিত।
ইথিকা প্রথমে যেতে চাইলো না। কল্পর বিয়ের বাজার কল্প করবে সেখানে সে কি করবে? কল্পনাও শুরু থেকেই ভেবেছিল তাকে নিয়ে যাবে। তাই জোসেফকে দিয়ে বলিয়েছে। কিন্তু যাবেনা শুনে তার একটু মন খারাপ হলো।
কাবির সেটা লক্ষ করেছে। ইথিকাকে ইশারায় দেখিয়ে দিল কল্পনাকে। কল্পনার মন খারাপ হয়েছে দেখে বলল,
“ওকে মন খারাপ করো না। আমি না হয় যাব। আমি তোমাদের অসুবিধার কথা ভেবে যেতে চাচ্ছি না।”
কল্পনা বলল,”না থাক যেওনা। তোমার শরীর খারাপ।”
ইথিকা বলল,”থাক থাক তোমাকে আর রাগ করতে হবে না। যাচ্ছি আমি।”
লুবনা বেগম বললেন,”হয়েছে যাবে বলছে তো। আর রাগ করে থাকিস না।”
ইথিকা রেডি হয়ে নিল চটজলদি। ওদিক থেকে জোসেফ, জেসি আসছে। আর এদিক থেকে ইথিকা আর কল্পনা। কিরণকে যেতে বলেছে। কিন্তু ওর বলছে ওর শপিং করতে ভালো লাগেনা।
ওর ড্রেস কেনার সময় যাবে আর না। কল্পনা আর জোরাজোরি করেনা। বেশি হাঁটলে ওর আবার পা ব্যাথা করে।
শপিংমলের সামনেই দাঁড়িয়েছিল জোসেফ আর জেসি। ইথিকা সুস্থ হওয়ার পর এই প্রথম জেসির সাথে ইথিকার দেখা। ইথিকা জোসেফের সাথে কথা বলে জেসির দিকে তাকালো। জেসি কেমন আছ, ভালো আছি বলে আর কোনো কথা বললো না। তার ব্রেনওয়াশ ভালোভাবে করেছে তার ভাই আর ভাইয়ের বউ মিলে। এখন নাকি আর্যাব খানের আশেপাশেও নেই সে।
ইথিকা অবশ্য জেসির উপর তার ক্ষুদ্ধ মনোভাবটা প্রকাশ করলো না। তার সাথে বেশি কথাও বললো না। কল্পনা শাড়ি জুয়েলারি সব নিজে পছন্দ করেছে। বাকিসব ইথিকা কিনেছে। কল্পনা অত স্ট্রেস নেয়নি। কল্পনাও তার উপর চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিত আছে কারণ ভাবির ফ্যাশন সেন্স খুব ভালো। জোসেফের শেরওয়ানি জুতো সব অবশ্য কল্পনা চুজ করেছে।
শপিংয়ের ফাঁকে তারা কফিশপে বসেছিল। শেষ করে রেস্টুরেন্টে উঠলো। ডিনার সেড়ে জোসেফ তাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজে বিদায় নিল।
কল্পনাকে বলল, পৌঁছে তাকে মিসকল দিতে।
তাদের গাড়িটা রীতিমতো দেওয়ান বাড়ির উদ্দেশ্যেই রওনা দিয়েছিল। মাঝপথে গাড়িটাকে থামতে হলো আর্যাব খানের জন্য। কল্পনা বরাবরের মতো চুপ করে বসে রইলো গাড়ির ভেতর। ইথিকা তার পাশে। আর্যাব খানকে দেখার সাথে সাথে সে গাড়ি থেকে নেমে এল।
ভাইবোনের মধ্যে কি কথাবার্তা চলছে সেদিকে কল্পনা কর্ণপাত করলো না।
চলে যাওয়ার সময় আর্যাব খান ঘুরে এল কল্পনার জানালার কাছে। মাথা নামিয়ে কল্পনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বেয়াইন ভেবেছিলাম আপনি একটু আলাদাভাবে দাওয়াত করবেন আমাকে।”
কল্পনা বলল,”তোমাকে দাওয়াত না করলেও তুমি বেহায়ার মতো হাজির হবে সেটা আমি জানি।”
আর্যাব খান হাসলো।
“এত্ত কনফিডেন্স বেয়াইয়ের উপর? বাহ! দেখেই মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল। আজ আসি তবে। ডার্লিং বাই।”
ইথিকা হাত নাড়লো। আর্যাব খান চলে গেল।
ইথিকা কল্পনাকে বলল,
“ভাইয়া ইয়ার্কি করে এটার জন্য মমও ওকে বকে। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না ওর কথায়।”
কল্পনা বলল,”না কিছু মনে করিনি।”
বাড়ি ফিরে ইথিকা সোজা নিজের ঘরে চলে গেল। কল্পনার ঘরে বিয়ের বাজার গুলো সবাই দেখছে। ইথিকা ঘরে এসে ওয়াশরুমে ঢুকলো সরাসরি। দরজা বন্ধ করে জোরে পানির কল ছেড়ে দিল। তারপর বমি করতে লাগলো। বমি শেষে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিল।
মুখহাত ধুয়ে বেরিয়ে এল ওয়াশরুম থেকে। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলো বিছানায়। তারপর ধীরেধীরে উঠে পড়লো। একটা হালকা নরম কাপড়ের কূর্তি পরে নিল। চুলগুলোকে বেণী পাকিয়ে সামনে ফিরিয়ে দিয়ে মুখে ময়েশ্চারাইজার মাখতে মাখতে কাবিরকে ফোন করলো। কাবির ফোন রিসিভ করামাত্রই বলল,
“শপিং শেষ?”
“জি। বাড়ি ফিরছেন কখন?”
“আর কিছুক্ষণ লাগবে।”
ইথিকা নাকের কাছে হাত দিয়ে একটু শ্বাস নিল। বলল,
“দেখলাম নাজিফা এখনো ফেরেনি।”
কাবির ওপাশে হাসলো। ইথিকা শীতল কণ্ঠে বলল,”ওকে ফোন রাখছি।”
কাবির বলল,”ও ওদের বাড়িতে গিয়েছে।”
ইথিকা বলল,”এমনিই জানতে চাইলাম।”
কাবির একটু কেশে বলল,”আমিও এমনিই হাসলাম। যাইহোক তোমার জন্য কিছু কিনেছ?”
“না।”
“কেন?”
“আমার যথেষ্ট ড্রেস এন্ড জুয়েলরি আছে। আপনি আসছেন কবে?”
“বেরোলাম মাত্র। জাহিদ আর সাবিতকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।”
ইথিকা ফোন রেখে দিল। ঘরময় কিছুক্ষণ পায়চারি করতে লাগলো। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে কল্পনার ঘরে গিয়ে বসলো। লুবনা বেগম বলল,
“তোমাদের কেনাকাটা ভালো হয়েছে। কিন্তু তুমি কিছু নাওনি কেন?”
ইথিকা বলল,”পরে কেনা যাবে। অনেকের শপিং এখনো বাকি আছে।”
“হ্যাঁ তা ঠিক।” তিনি উঠে পড়লেন। বললেন,
“ও ঝিনুক যা ভাত বেড়ে নে। কিরণ ওঠ। অনেক দেখা হয়েছে। কাবির চলে আসবে।”
কিরণ আর ঝিনুক বেরিয়ে গেল। কল্পনা সব গোছগাছ করতে করতে বলল,
“বড় ভাইকে একটা কল দাও।”
লুবনা বেগম ফোন হাতে নিলেন। কয়েকবার রিং হওয়ার পর কেটে গেল। ইথিকাও ট্রাই করলো। সে জানে রিসিভ হবে না।
কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার অনেকক্ষণ পর শেষমেশ ফোন রিসিভ করলো। কাবিরের কণ্ঠস্বরের বদলে অপরিচিত একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল।
“আপনারা হাসপাতালে আসুন।”
লুবনা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন,”কেন? কার কি হলো? আপনি কে বলছেন? কাবির কোথায়?”
কল্পনা তৎক্ষনাৎ ফোন কেড়ে নিয়েছে। ঘরের ভেতর সবার চক্ষু ছানাবড়া। কিরণ ঝিনুক ছুটে এসেছে। ওপাশের জন বলল,
“আন্টি আমি সাবিতের বন্ধু। একটা ট্রাক ওদের গাড়িটাকে…
ইথিকা বাকিটুকু শুনলো না। দ্রুত ঘরে এসে ব্যাগ আর ফোন নিয়ে বেরিয়ে এল। লুবনা বেগম কেঁদে কেঁদে বললেন,
“বৌমা কোথায় যাচ্ছ?”
“হাসপাতালে।”
এটুকু বলে সে বেরিয়ে এল। একা একা গাড়ি নিয়ে ছুটে চললো হাসপাতালের দিকে। বমি পাচ্ছে বেশ। শরীর দুর্বল লাগছে। মাথা ঘুরছে। ফোনে আর্যাব খানের মেসেজ এল তখুনি।
“৪০২ নাম্বার কক্ষে যা।”
গাড়িটা হাসপাতালের সামনে দাঁড়াতেই সে দ্রুত বেরিয়ে এল। ৪০২ নাম্বার কক্ষের দিকে পৌঁছুতেই থমকে দাঁড়ালো। করিডোরে কাবির বসে আছে একা। কানের পাশ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। সাদা শার্টটাতেও রক্ত লেগে আছে। পায়ের আওয়াজ শোনামাত্রই কাবির ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। ইথিকা থমকে দাঁড়িয়েছে। কাবির বেঞ্চ ছেড়ে দাঁড়ালো।কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা। তারপর সমস্ত বাধা ভেঙে বিদ্যুৎগতিতে ছুটে এসে কাবিরকে জড়িয়ে ধরলো সে। কাবির দু তিন পা পিছিয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। ইথিকা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কাবির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আমি বেঁচে গেলাম। কিন্তু জাহিদ আর সাবিত..
কন্ঠরুদ্ধ হয়ে গেল তার। ইথিকা তাকে ছেড়ে মুখের দিকে তাকালো। গালের দুপাশে হাত রাখলো। হাতে রক্ত লাগতেই কম্পিত গলায় বলল,
“আপনিও তো আঘাত পেয়েছেন। এখানে বসে আছেন কেন?”
কাবির ধরা গলায় বলল,
“ওরা আমার চাইতে দশগুণ… কি হয়ে গেল এটা বুঝতে পারলাম না। ওই মাতালগুলো কি খেয়ে যে গাড়ি চালায়। হাতের কাছে পেলে কি করতাম জানিনা।”
ইথিকা তার গলায় ঝুলানো স্কার্ফের কোণা দিয়ে গলা আর কপালের রক্তগুলো মুছে দিল। রক্ত দেখে বমি পেতেই তাকে আবারও জড়িয়ে ধরলো। একদম শক্ত করে।
তার শরীরটা কাঁপছে দেখে কাবির তাকে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল,
“আমি ঠিক আছি আনঝিল। কিছু হয়নি। তোমার শরীর কাঁপছে। তুমি বসো রিল্যাক্সে। দোয়া করো জাহিদ আর সাবিতের যেন কিছু না হয়।”
ইথিকা তাকে ছাড়লো না। কারণ একটু নড়লেই যেন ভকভক করে বেরিয়ে আসবে। বমির উদ্রেকে তার চোখ দিয়ে আরও পানি পড়ছে।
কাদিন আর কাসেদও ইথিকার পিছু পিছু গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তারা দৃশ্যটি দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলো। কাবির তাদের দেখেছে আড়াল হয়ে যেতে। ইথিকাকে বলল,
“কাদিন আর কাসেদ এসেছে বোধহয়।”
ইথিকা একটু দম নিয়ে ধীরেধীরে সরলো। কাবির ডাকল,”কাদিন!”
কাদিন আর কাসেদ এগিয়ে এল। বলল,
“আপনিও আঘাত পেয়েছেন। এসব কি করে হলো?”
ইথিকা কাবিরের কাছ থেকে সরে গেল।
কাবির কাসেদের কাঁধে হাত রেখে বলল,” তেমন কিছু হয়নি আমার। মাকে বলোনি তো?”
কাসেদ বলল,
“মা সবার আগে শুনেছে।”
কাবির চ বর্গীয় শব্দ করলো। কাদিন বলল,
“আপনি কি মাথায় আঘাত পেয়েছেন? কপালেও তো আঘাত পেয়েছেন। বসে আছেন কেন? ভাবি দেখো।”
কাবির মাথার পেছনে হাত দিল। হাতে রক্ত লাগলো। ওখানে কোনো কিছু অনুভব হচ্ছে না তার। ইথিকা বলল,
“আপনাকে তো বললাম আমি। আপনি জেদ করেন সবসময় এটাই ভালো লাগেনা। চলুন।”
কাবিরকে জোরাজোরি করে নিয়ে গেল সে। কিছুক্ষণের মধ্যে হাসপাতালে সবাই হাজির। কাবির যথেষ্ট আঘাত পেয়েছে। কাঁধ, কপাল, মাথা, কান সব জায়গায় সেলাই হয়েছে অথচ সে বলছিল কিছুই হয়নি।
খান বাড়ির সবাই এসেছে। আর্যাব খানের সাথে ইথিকার চোখাচোখি হলো। ইথিকা ধীরপায়ে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“কি হলো এটা?”
আর্যাব খান বলল,
“হাত পা সব তো দেখছি ঠিক আছে ব্যাটার। মিশন ফেইল। কিছু করার নেই।”
ইথিকা দাঁত কটমট করে ধীরেধীরে সরে পড়লো।
কাবির আর বাড়ি ফেরেনি। জাহিদ আর সাবিতের পরিবারের সাথে একবসায় রাত কাটিয়ে দিয়েছে। ইথিকাও থাকতে চেয়েছিল। কাবির জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে।
_______
সাবিত আর জাহিদ হাতে পায়ে বেশ আঘাত পেয়েছে। তাদের উন্নত চিকিৎসা চলছে। কাবির শুকরিয়া আদায় করলো এই ভেবে গুরুতর ক্ষতি হয়ে যায়নি তাদের। নইলে নিজেকে কি জবাব দিত সে?
ওই ট্রাকটিকে ধরা হয়েছে। জোসেফ ধরেছে।
কিন্তু ড্রাইভার নিখোঁজ। জোসেফের ভাষ্যমতে এসব কোনো ষড়যন্ত্র। ইচ্ছা করেই ড্রাইভারটাকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কাবির ওসব নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাইলো না। জাহিদ আর সাবিত সুস্থ হলেই যথেষ্ট। ওর মনের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে শুধু সে জানে।
পরদিন সকালেই বাড়ি ফিরলো কাবির। বাড়ি ফিরে সেই শুয়েছে। ঘুম থেকে উঠেছে একদম বিকেলে। খেয়েদেয়ে বিকেলে আবারও হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দিল। সাবিত আর জাহিদের সাথে কথা বলে মন শান্তি করে বাড়ি ফিরে এল।
ইথিকা ভেবেছিল কল্পনার বিয়েটিয়ে এসব পিছিয়ে যাবে, কাবির দেওয়ান হাত পা কিছু একটাতে গুরুতর আহত হবে যাতে তার সামনের কাজগুলো করতে সুবিধা হয় কিন্তু কিছু হয়নি। সে মনে মনে বেশ বিরক্ত মেঝ ভাইয়ার উপর। এদিকে ড্রাইভারটাকে গুম করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাদের।
___
রাতে শারীরিক আঘাতের যন্ত্রণায় কাবির ছটফট করছিল। কিছুতেই ঘুম আসছেনা। ইথিকা তখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। কাবির ধীরেধীরে উঠে বসলো। পিঠের নীচে বালিশ দিয়ে একটু আরাম করে বসলো।
আর তিনদিন পরেই কল্পর বিয়ে। তারমধ্যেই তাকে অসুস্থ হয়ে পড়তে হলো। ভেবে রাখে একটা হয় অন্যটা। সে ঘুমন্ত ইথিকার দিকে তাকালো। মুখের উপর লাল চুলগুলো এসে মুখ ঢেকে রেখেছে। কাবির ধীরেধীরে তার চুলগুলো সরিয়ে দিল। ঘুমন্ত মুখটার দিকে চেয়ে কিছু একটা ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বুঁজলো। ঘুম আর আসবে না মনে হয়।
কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে বসে রইলো। তারপর বিছানা থেকে নামলো। জানালটা খুলে দিল। দমকা হাওয়া ঢুকে এল ঘরের ভেতর। আকাশের কোলে চাঁদ হাসছে। কাবিরের এবার ভালো লাগছে। সে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর ইথিকা নেমে এল ঘুমঘুম চোখে। এসে কাবিরের বুকে মাথা ফেলে রাখলো। কাবির বলল,
“তুমি উঠে আসতে গেলে কেন?”
ইথিকা পাল্টা প্রশ্ন করলো,
“আপনি ঘুমোচ্ছেন না কেন?”
“এমনিই। কেন যেন ঘুমটা আসছেনা।”
ইথিকা ঘুমের আলসেমি কাটিয়ে ধীরেধীরে কাবিরের দিকে মুখটা তুললো। কাবির মাথা হালকা ঝাঁকিয়ে বলল,
“ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে। আজ আর ঘুম হবে না। তুমি যাও। ঘুম না হলে তোমার আবার চোখের নীচে কালি পড়বে।”
ইথিকা বলল,”যাচ্ছি।”
যেতে গিয়ে সে আবার থামলো। কাবিরের দিকে তাকালো। কাবির মাথা নামিয়ে তার কপালে চুমু খেল। ইথিকা বুঁজে ফেলা চোখ খুলে বলল,
“এভাবে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবেন?”
“ঘুম আসছেনা, কি করবো?”
“গল্প বলুন।”
কাবির বলল,”আমি পারিনা।”
“আমি বলি?”
“বলো।”
“গল্পটা এক ঘরকুনো রাজকুমারীর আর এক সাহসী রাজপুত্রের….
গল্প তখন মাঝপথে। কাবির তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
” রাজকুমারীটা অন্তরা খানম, আর রাজপুত্রটা কামরান দেওয়ান তাই না?”
ইথিকা হেসে বলল,”আরেহ কি চালাক বর আমার।”
কাবির একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,”ওসব বাদ। আমরা ভালো আছি। ভালো থাকবো।”
ইথিকার চেহারা মলিন হয়ে এল। কাবির প্রশ্ন করলো,,
“থাকবো না?”
ইথিকা প্রশ্ন করলো,”কি করে?”
কাবির অবাক হয়ে বলল,”কি করে মানে?”
“১৮ সালের কামরান দেওয়ান কি অন্তরা খানমকে ভালোবাসে?”
কাবির প্রশ্নটা শুনে কপাল কুঁচকে ফেললো। তারপর প্রশ্নটা বুঝে আসতেই হাসলো। ইথিকাকে আরও নিকটে টেনে এনে মুখের উপর উড়ে আসা চুল সরিয়ে দিতে দিতে বলল,
“এখনো যদি এসব তোমাকে ধরে ধরে বোঝাতে হয় তাহলে কিছু করার নেই আমার।”
ইথিকা তার বাঁধন থেকে ছুটে চলে গেল আচমকা। বিছানার উপর উঠে গেল। কাবির তার দিকে ফিরে তাকালো। ইথিকা বিছানার উপর বসে তার দিকে দু-হাত বাড়িয়ে দিল।
“আসুন।”
কাবির জানালাটা খোলা রেখেই এগিয়ে গেল। একদম বুকের পাঁজরের সাথে পাঁজর আটকে ছিল সারারাত।
_________________
মেহেদী পরানোর কথাবার্তা উঠতেই ইথিকা বলল,
“মেহেদী আর্টিস্ট ঠিক করেছি আমি। ওরাই মেহেদী পরাতে আসবে।”
কিরণ বলল,”আমাকে কে পরাবে?”
ইথিকা বলল,”ওরাই।”
কিরণ মহাখুশি। ঝিনুককে বলল,”ওই তুই পরবি?”
ঝিনুক লাজুক হাসলো। কিরণ বলল,”ওকে তুই পরবি।”
কল্পনার মেহেদী সন্ধ্যায় বেশ জাঁকজমক আয়োজন হয়েছে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সদস্যেরা সবাই ইথিকার পরিচিত। কাবির ওর উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। এত আয়োজনের কোনো ইচ্ছেই ছিল না। কিন্তু পরে কিভাবে কিভাবে যেন অনেক বড়সড় আয়োজনের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। যদিও গানবাজনা মোটেও চলবে না দেওয়ান বাড়িতে। কলিমউদ্দিন দেওয়ান এসবের ঘোর বিরোধী। কাবিরের বিয়েতে এসব কিচ্ছু হয়নি।
বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব রব। খাওয়াদাওয়া চলছে ভীষণ। ইথিকা সকালে, দুপুরে শুধু জুস খেয়েছে। আর কিচ্ছু না। লুবনা বেগম এতকিছুর মধ্যে খেয়ালও করেনি সে কি খেয়েছে, খায়নি। কারণ্ ইথিকা নিজের খাবার নিজেই খেয়ে নেয়। কিছু না খাওয়ায় ইথিকার দুর্বলও লাগছে।
বাড়িতে মেহমান আসছে একের পর এক। ইথিকা তাই একটা শাড়ি পরেছে। বেশিরভাগ আত্মীয় একদম নতুন। তারা তাকে দেখছে। ইথিকা সেসব টের পেয়েছে।
সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ইথিকা তার মাকে ফোন করলো।
ইলিনা বেগম বলল,”আমি যেতে পারব না। তোমার বাবা তো একদমই না। তুমি রাগ করো না।”
“ভাইয়ারা কোথায়?”
“ওদের কথাও জানিনা। ওরা যাবে কিনা কিছু বলেনি।”
ইথিকা রেগে গেল।
“আশ্চর্য! কাবির কি বলবে কেউ না এলে? ভাবিকেও আসতে দিচ্ছ না?”
“তাও জানিনা।”
ইথিকা রেগেমেগে ফোন রেখে দিল। হাঁপাতে লাগলো। শরীরটা ভীষণ দুর্বল লাগছে। তন্মধ্যে কাবির ঘরে এসে বলল,
“আনঝিল আমাকে ওই পাঞ্জাবিটা বের করে দাও।”
“এখনি পরে ফেলবেন? রাতে অনুষ্ঠানে পরবেন বলে কিনেছিলাম।”
“আমি ক্লাব থেকে ফিরবই রাতে। দাও, সময় কম।”
ইথিকা পাঞ্জাবিটা বের করে আনলো। কাবির পাঞ্জাবিটা পরে নিল।
ইথিকা পাঞ্জাবির বোতাম লাগিয়ে দিয়ে, চিরুনি এনে দিল, পারফিউম নিয়ে এল। কাবির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে হালকা পারফিউম মেখে কব্জিতে ঘড়িটা পরতে পরতে বলল,
“কল্পর বিয়েটা মিটে যাক। তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। তোমাকে কেমন অসুস্থ দেখাচ্ছে।”
ইথিকা সাথে সাথে বলল,”আ’এম ফাইন।”
কাবির বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,”তা দেখতেই পাচ্ছি। গেলাম আমি।”
ইথিকা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে বিদায় জানালো। তারপর আমিন খানকে ফোন দিল। ফোন রিসিভ হতেই ইথিকা চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“ড্যাড আজ তোমরা না এলে আমি কিন্তু…
“সরি মাই ডিয়ার, আমার দ্বারা সম্ভব না।”
ইথিকা ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো। না আসুক কেউ। কাউকে লাগবেনা তার। কিন্তু তার ধারণা ভুল।
রাত দশটা বাজতে না বাজতেই আচমকা কেঁপে উঠলো গোটা দেওয়ান বাড়ি। চারপাশ থরথর করে কাঁপছে সাউন্ডবক্সের দানবীয় শব্দে। ইথিকা হঠাৎ চমকে উঠে সাজগোছ রেখে দৌড়ে এল বারান্দায়। চোখ মেলে দেখল একটার পর একটা জিপ, সারি বেঁধে থামছে বাড়ির সামনের রাস্তায়।
ক্যামেরাম্যান, সাউন্ড সিস্টেম, মাইক, ড্রাম, ঢোল, গিটার, ভায়োলিন, মিউজিক সরঞ্জাম পাতি নিয়ে নাচ, গান, আর আলোয় ঝলমল উৎসবের বহর নিয়ে খান বাড়ির সদস্যরা হাজির। গানের তালে তাল মিলিয়ে নাচছে বড়রাও, ছোটরাও।
নাচতে থাকা সদস্যদের মধ্যে বাড়ির ছোট্ট সদস্যটাও আছে। আব্রাহাম খান ইনাম। বাপ চাচাদের মতো করে কালো পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পরেছে সে। গলায় কালো মাফলার, চোখে কালো চশমা ঝুলিয়ে সবার আগে আগে লাফাচ্ছে সে। চোখেমুখে ভীষণ উচ্ছ্বাস।
ইথিকার ফোনে সাথে সাথে মেসেজ এল ইলিনা বেগমের।
“সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম সোনা?”
ইথিকা না হেসে পারলো না। সে দোতলায় দাঁড়িয়ে ভিডিও করতে লাগলো।
চলমান…..