#তৃষিত_তরঙ্গ—১৩
#প্রানেশা_আহসান_শীতল
সতর্কতা—কপি নিষিদ্ধ
“আপনাকে দেখে আমি আসলেই শেষ, এখন যদি বলি আর…!”
কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারেনি মুসাওয়াদ। সাবরিহা হাত দিয়ে কান চেপে ধরে উচ্চ গলায় বলে,
“আল্লাহর ওয়াস্তে একটু চুপ করুন নির্লজ্জ লোক। আপনি এমন করলে মিশনে যেয়ে থাকবেন কি করে?”
“তার জন্যই যেতে ইচ্ছে করছে না লিটল ওয়েভ!”
কথাটা বলেই এগিয়ে এসে সাবরিহাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো মুসাওয়াদ। সাবরিহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তা দেখে মুসাওয়াদ মৃদুভাবে হেসে কপালে গভীর চুমু খায়। তারপর ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“মজা করেছি ম্যাডাম! আমার দিক না ভেবে আপনার দিকও এখন ভাবতে হবে! আপনি পারবেন কিনা?”
সাবরিহার শ্যামলা মুখটা লালচে আভা এসে ধরা দিলো। চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলল তা দেখে মুসাওয়াদ শব্দ করে হেসে ফেলে। সাবরিহা কাঁপা গলায় বলে,
“আপনার মুখে কিছু আটকায় না তাই না? মুখে যা আসে তা বলে দেন!”
“আজকেই তো বলছি! আবার কবে না কবে বলি! এখন চলুন; আমার দেড়ি হচ্ছে।”
কথাটা বলেই সাবরিহা ছেড়ে দেয়। সাবরিহা কি একটা মনে করে মুসাওয়াদের হাত টেনে ধরে। মুসাওয়াদ অবাক চোখে তাকায়, সাবরিহ একটু কুণ্ঠাবোধ করে আশেপাশে তাকায় তারপর এগিয়ে এসে পা উঁচিয়ে মুসাওয়াদ সমান-সামন হতে চায় তবে খুব একটা হতে পারলো না। সবরিহা লম্বা করে শ্বাস ফেলে মুসাওয়াদের গালে হাত রেখে টেনে তার কপালে গভীর চুমু খায়। মুসাওয়াদ মেয়েটার ছটফট দেখলো। আসলেই এবার তার যেতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা কোনো ভাবে না গেলে হয় না? ভেতরের স্বত্বা চেঁচিয়ে বলে উঠে, “তুমি একজন সামরিক বাহিনীর অফিসার মুসাওয়াদ, এটলিস্ট তোমার সাথে এমন বাচ্চামি যায় না, সাবরিহা পাগলামি করছে তই তুমিও পাগলামি করবে?” দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুসাওয়াদ। সাবরিহার চোখ টলমল করছে তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে আবদার স্বরুপ বলে,
“একটা চুমু?”
মুসাওয়াদের দম আটকে এলো। ঢোক গিলল তারপর সাবরিহাকে জড়িয়ে নিয়ে এক গভীর আশ্লেষে ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ডুবায়। সময় গড়ায়। সাবরিহা প্রতিবারের মতো আর ছটফট করছে না মুসাওয়াদ খানিক বিচলিত হয় তবে বুঝে, সাবরিহা নিজেকে দমাতে চাইছে তাই ধীরে মুক্ত করে দেয় সাবরিহাকে। তারপর বলে,
“সাবধানে থাকবেন ম্যাডাম। আপনার কাছে আমার গোটা আপনাকেই আমানত রেখে গেলাম। ফিরে এসে ঠিক এমন একটা তরঙ্গকেই আমি ফেরত চাইবো।”
মুখে হাসি ফোটে সাবরিহার তারপর হাত বাড়িয়ে মুসাওয়াদের শার্ট ঠিক করে দিতে দিতে বলে,
“আগে মিশন থেকে কিভাবে ফিরতেন জানি না। তবে এবার আমার জন্য নিজেকে সাবধানে রাখবেন! ঠিক মতো আমার হয়ে ফিরে আসবেন। আমি অপেক্ষা করবো।”
মুসাওয়াদ প্রশ্রয় হাসলো তারপর বলে,
“আপনার অপেক্ষা সুমিষ্ট স্বাদে অনন্য হোক ম্যাডাম…!”
“পরের বার কিন্তু আমরা দু’থেকে তিন হবো বলে রাখলাম!”
মুসাওয়াদ চোখ রিপে টিপ্পনী কাটে তারপর বলে,
“চার হতে সমস্যা কোথায় ম্যাডাম?”
মুসাওয়াদকে ধাকা দিয়ে সরিয়ে ফেলে সাবরিহা তারপর দরজার দিকে যেতে যেতে বলে,
“যত্তসব অসভ্য কথা!”
মুসাওয়াদ শব্দ করে হেসে ফেলে তারপর বলে,
“আপনি বলেছেন তাতে কিছু না। আমি বললেই অসভ্য! এতো রীতিমতো পুরুষের অধিকার হরন হচ্ছে।”
সাবরিহা খিলখিল করে হেসে ফেলে তারপর বলে,
“উহু, স্বামীর অধিকার হরন!”
“তবে রে…!”
কথাটা বলে মুসাওয়াদ সাবরিহাকে ধরতে চাইলো কিন্তু সাবরিহাকে ধরার আগেই ও দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। মুসাওয়াদও নিজপর চুলে হাত ঢুবিয়ে প্রশ্রয়ে ও সাবরিহার বাচ্চামি দেখে হেসে ফেলে। মেয়েটা একদম বাচ্চা।
—
আমেনা বেগম এবার যেনো সাবরিহা আর মুসাওয়াদকে স্পেস দিয়েছে। একবারো এখন পর্যন্ত রুম থেকে বের হয় নি তাই মুসাওয়াদ ভাবল মা হয়তো রাগ করেছে তাই মায়ের রুমে নক করতেই আমেনা বেগম ভেতর জবাব করে,
“ভেতরে আয়।”
ধীরে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে মুসাওয়াদ। তার পিছনে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে সাবরিহা। মুসাওয়াদ এগিয়ে এসে মেঝেতে মায়ের পায়ের কাছে বসে পড়ে। আমেনা বেগম দেখলেন তবে কিছু বলে নি। মুসাওয়াদ চলে যাবার সময় এমন বসে আর আমপনা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয়। এবারও তা পরিবর্তন হয় নি। আমেনা বেগম দোয়া পড়ে দিলেন। মুসাওয়াদ মায়ের হাত ধরে বলে,
“আম্মা, আপনি কি আমার উপর রাগ করছেন?”
থমকায় আমেনা বেগম। সাবরিহার দিকে তাকায়। মেয়েটা কেমন ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে তাই মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলে,
“তেমন কিছু না বাবা। মিশনে সফল হ, মন দিয়ে কাজ শেষ করে দ্রুত ফিরে আয়।”
মুসাওয়াদ হাসলো তারপর মায়ের হাতে চুমু খেয়ে কর্মদান করে উঠে আসে। কল আসে তৎক্ষনাৎ। ক্যান্টনমেন্ট থেকে গাড়ি এসেছে। তাই মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে মুসাওয়াদ বেড়িয়ে যায়। সাবরিহা দাঁড়িয়ে আছে, সে ঠিক বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিত আমেনা বেগম মেয়েটার জড়তা দেখলেন তারপর বললেন,
“কায়ানের সাথে যা। এগিয়ে দিয়ে আয়। আবার কবে আসে।”
কথাটা বলতেই সাবরিহাও অপেক্ষা না করে মুসাওয়াদের পিছনে ছুটলো। মুসাওয়াদ কেবল লিফটের সামনে দাড়িয়েছে। এমন সময় সাবরিহা এসে দাড়াতেই মুসাওয়াদ ওকে দেখে হাসে। সাবরিহাও হাসে। লিফট এসেছে৷ মুসাওয়াদ লিফটে উঠতেই সাবরিহাও পিলপিল করে ভেতরে ঢুকতেই লিফটের দরজার বন্ধ হয়। লিফট বন্ধ হতেই মুসাওয়াদ হুট করেই আবারো সাবরিহাকে টেনে ঝাপ্টে ধরে নিজের সাথে তারপর খুবই উগ্র ভাবে চুম্বন করে। সাবরিহা ভরকে মুসাওয়াদের শার্ট খামচে ধরে। লিফ্ট ততক্ষণে নিচে নেমে আসার শব্দ হয়। মুসাওয়াদ আবারো লিফটে বোতাম চেপে বন্ধ করে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ এনে তারপর সাবরিহাকে ছেড়ে শার্ট ঠিক করে লিফট থেকে বেড়িয়ে যায়। সাবরিহার সব কিছু যেন মাথার উপর থেকে যাচ্ছে। এই লোক একদিনে যে অত্যচার শুরু করেছে; এতো বছর বিয়ে না করে ছিলো কি করে? ছিহ্, কি সব ভাবছে সাবরিহা। এই লোক বিয়ে করে নিলে জীবনেও এই লোক সাবরিহার হতো না। ভালোই হয়েছে বিয়ে করে নি।
গড়িতে লাগেজ উঠানো হয়েছে। মুসাওয়াদও গাড়িতে উঠবে বলে গাড়ির দরজা খুলে এক বাড়িয়ে থেমে পিছন ফিরে তাকায়। সাবরিহা হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় দেয়৷ তবে মুসাওয়াদ গাড়ির দরজা বন্ধ করে বড় কদম ফেলে এগিয়ে এসে আবারো ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে,
“ সাবধানে থাকবেন। আমি দ্রুত ফিরে আসবো।”
এই কথাটায় যেনো সব এলোমেলো করে তুলল সাবরিহাকে। তবুও নিজেকে দমিয়ে গেসে সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলে,
“ আপনার মিসেস অপেক্ষায় থাকবে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মুসাওয়াদ কায়ান!”
চলে যায় মুসাওয়াদ। সাবরিহা অনেকটা সময় তাকিয়ে থাকে ঠিক যতটা সময় ওই সরকারি সামরিক বাহিনীর গাড়িটা দেখা যায়। গাড়িটা আড়াল হতেই কেঁদে উঠে সাবরিহা। হাটু ভেঙ্গে বসে পড়ে মেয়েটা। এতোটা অসহায় কখনো লাগে নি। এর থেকে লোকটা দূরেই থাকতো। এতোটা কষ্ট লাগতো না তবে এইবার এতো কাছে থেকে চলে যাওয়া দেখে যেনো কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। চোখ মুছল মেয়েটা। মুসাওয়াদ বলেছে, “অযথা চোখের পানি ফেলতে নেই, আবেগ দেখাতে নেই। মানুষ উল্টো দূর্বল ভেবে আঘাত করে। সে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মুসাওয়াদ কায়ান এর বউ। তাকে শক্ত থাকতে হবে। এসব আবেগ শুধু মুসাওয়াদকেই দেখাবে আর কাউকে নয়। কাউকে না!”
ধীরে উঠে বসে শাড়ি ঠিক করে এপার্টমেন্টের লিফটে উঠে। ধীরে লিফট থাকে অষ্টম তলায়। সাবরিহা বাাসায় ঢুকতেই আমেনা বেগম বলে,
“সাবরিহা একটু ঘুমা নাহয় রেস্ট নে। কালকে আমরা তোদের বাসায় যাবো।”
সাবরিহা দ্বিরুক্তি করে নি। মাথা নাড়িয়ে বলে,
“আচ্ছা আম্মু।”
“শোন মেয়ে, এসব নিয়ে মন খারাপ করিস না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে কায়ান দ্রুত ফিরে আসবে।”
সাবরিহা জবাব দিলো না৷ মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে গেলো। ভালো লাগছে না কিছু। একটা লম্বা ঘুম দেবে। তারপর ঘুম থেকে উঠে সব। এই ভেবে রুমে যেয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। তবে ঘুম কি আর এতো সহজে ধরা দেয়। চোখের সামনে শুধু মুসাওয়াদ ধরা দিচ্ছে। তার সাথে কাটানো সময় ধরা দিচ্ছে, তার পাগলামি, তার কেয়ারিং ও লাভিং দিক গুলো চোখে ভাসছে। চোখ বন্ধ করে সাবরিহা৷ চোখের কোণ বেয়ে যায় এক শুক্ষ্ম তরল রেখা .
—
চলবে .