তৃষিত তরঙ্গ পর্ব-১৪

0
2

#তৃষিত_তরঙ্গ —১৪
#প্রানেশা_আহসান_শীতল
কপি — নিষিদ্ধ

সময় বহমান। মুসাওয়াদ চলে যাবার প্রায় তিন মাস পার হয়েছে। সাবরিহা বা আমেনা বপগমের সাথে যোগাযোগ বলতে সে ক্যাম্পে পৌঁছেছে এতোটুকুই কথা হয়েছে। তারপর আর তার সাথে কথা হয় নি। সাবরিহা কল দেয় তবে প্রতিবারই নম্বর ওফ বলেছে। আমেনা বেগমের মাঝে মাঝে অনুতাপ হয় এই ভেবে নিজের হাতে মেয়েটাকে ছেলেটার জীবনে জড়িয়েছে। অথচ ছেলে বিয়ের পরের দিনই চলে গেছে! তারই বা কি করার। সাময়িক বাহিনীর বড় কর্মকর্তা সে, হুটহাট ছুটি ক্যান্সেল হয়ে ডাক পড়বে এ আর এমন কি? দীর্ঘশ্বাস ফেলল আমেনা বেগম। কিছুদিন যাবত সাবরিহার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ভার্সিটিও যাচ্ছে না ঠিক মতো। চুপচাপই থাকে একা একা। আগের মতো তেমন উচ্ছ্বসিত তাকে খুব কম দেখা যায়। ড্রাইনিং টেবিল ঘুছিয়ে সাবরিহার রুমের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। আমেনা বেগম থমকে দাঁড়িয়ে ড্রাইংরুমের ঘরি দেখলেন। রাত সাড়ে এগারোটার বেশি সময়। এখন কে আসবে? তবুও কি একটা মনে করে এগিয়ে দরজা খুলে মুসাওয়াদকে দেখে ভরকে যায়। আমেনা বেগম ভরকানো মুখে নিয়েই জিজ্ঞেস করে,

“তু-তুই? তুই তো মি-মিশনে গেছিলি?”

মায়ের হতবাক মুখ দেখে আলতো হেসে এগিয়ে এসে এক পাশে থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“হু! ভালো আছেন আম্মা?”

হতভম্ব ভাব যেন এখনো আমেনা বেগমের মুখ থেকে কাটে নি। সে এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মুসাওয়াদ হাসি মুখে মায়ের মাথায় চুমু খেয়ে বলে,

“চলে এসেছি আম্মা, এতো অবাক হবর কিছু নেই!”

“কিন্তু তুই তো মিশনে—!”

“যেটায় যাবার কথা ছিল সেটায় যাই নি আমি।”

অবাক গলায় শুধায়—-

“তাহলে যোগাযোগ করিস নি?”

“একটা জলদস্যুর মিশনে ছিলাম। বাজে ভাবে ফেসে গেছিলাম আম্মা তাই উপরীমহল থেকে আমাদের টিম সিকিউর করতে বলা হয় তাই আমরা নেটওয়ার্কের বাহিরে ছিলাম।”

“তাই বলে আমাদের জানাবিও না?”

মুসাওয়াদ হেসে ফেলে তারপর মায়ের বোকা মুখটা দেখে বলে,

“বলে দিলে কি আর এমন সারপ্রাইজ হতে?”

“তা ঠিক। আচ্ছা, ফ্রেশ হয়ে আয়! আমি খাবার বাড়ছি।”

মুসাওয়াদ হাসলো। তারপর মাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

“প্রয়োজন পড়বে না আম্মা। আমি খেয়ে এসেছি।”

শীতল চোখে তাকালো আমেনা বেগম। তাতেই ঘাবড়ে গেলো মুসাওয়াদ। হেসে ঘাড় চুলকে বলে,

“এভাবে তাকাবেন না আম্মা, আসার পথে খেয়ে এসেছি। রতে নাহয় আবারও খেয়ে নেবো। আমি যাই?”

ছেলের লাজুক চোরা ভাব দেখে হেসে ফেলে আমেনা বেগম তারপর বলে,

“আচ্ছা যা। সাবরিহাকে সময় দে। ঘুমিয়ে গেছে হয়তো।”

“হুম!”

মাথ নাড়িয়ে রুমের দিকে পা বাড়াল মুসাওয়াদ। আমেনা বেগমের মুখে আনন্দের ঝলক উঠল। যাক অবশেষে ছেলেটা ঘরে ফিরল। কত দিনের জন্য থাকে কে জানে? এর মধ্যেই একটা ট্যুর প্ল্যান করে দিতে হবে। একটু একান্ত সময় কাটাক ওরা। এসব ভেবেই বাসার মেইন দরজা বন্ধ করে নিজের রুমের দিকে চলে যায় আমেনা বেগম।

রুমের দরজা খুলে ধীরে ভঙ্গিতে পা ফেলে এগিয়ে আসে৷ সারারুমে ভেতরটা শীতল হয়ে আছে তবে কোনো আলো জ্বালানো নেই। নিজের শরীরে জড়নো কালো জ্যাকেটটা খুলে আন্দাজ করে ডিভেনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে ধীরে বিছানায় এসে বসে। সে আন্দাজ করতে পারছে সবরিহা কোন দিকে আছে তাই আলতো হাত বাড়াতেই ওড়নার একাংশ হাতে লাগে। মুসাওয়াদ হাসল। তারপর ধীরে পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন অন করে আবছা আলোতে সাবরিহকে দেখে এগিয়ে এসে কপালে চুমু খেয়ে নিজেও শুয়ে সাবরিহার ছোট্টো তনুতে নিজের ভর ছেড়ে দেয়। সবরিহা প্রথমে কিছু টের না পেলেও নিজের ওপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব টের পেতেই চোখ মুখ কুঁচকায় সাথে নড়েচড়ে চোখ মেলে তাকায়। তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই মুস্তিষ্ক সজাগ হতেই তড়ক করে তাকায় সবরিহা। তবে চেচিয়ে উঠার আগেই মুসাওয়াদ সবরিহার মুখ চেপে ধরে তারপর বলে,

“ রিলাক্স সাবরিহা। আমি কায়ান। কিছু হয় নি। ব্রেথ, প্লিজ চেঁচাবেন না।”

সাবরিহা ঢোক গিলে বোঝার চেষ্টা চালালো। মুসাওয়াদের অস্তিত্ব টের পেতেই বুক ভারী হলো। মুখ থেকে উম উম শব্দ করে টেনে কায়ানের হাত সরিয়ে ভরকনো গলায় বলে,

“ আ-প আপনি? আপনি কখন আসলেন? ডাকেন নি কেনো? আর চোরের মতো এাবে মুখ চেপে ধরেছেন কেনো আপনি?”

“ আপনি চেঁচালে আম্মা অন্য কিছু মনে করতো!”

বোকা সাবরিহা কপাল কুঁচকায় তারপর বলে,

“ কি ভাবতো?”

“ কিছু না।”

সাবরিহা বেড টেবিলের ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে আবারো মুসাওয়াদের দিকে তাকায়। কেমন মুখটা শুকিয়ে আছে লোকটার। তবুও সন্দিহান গলায় ফের প্রশ্ন করে,

“ কি হলো বলছেন না কেনো?”

মুসাওয়াদ এগিয়ে এল, কোনো কথ ছাড়াই আগে সবরিহার ওষ্ঠ দখলে নিলো। ক্ষনিকের মধ্যে সবরিহা যেনো তৃষিত মাটিতে পানির দেখা পেলো। মুসাওয়াদ ধীরে ওর ওষ্ঠ ছেড়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কানের কছে ফিসফিস করে বলে,

“ আম্মু ভাববে তার ভদ্র ছেলে এসেই তার বাচ্চা বউকে অত্যাচার শুরু করেছে।”

“ মানে—”
কথা সম্পূর্ণ করার আগেই সাবরিহা বিস্ফরণের মতো চোখ করে তাকায়। তারপর উচ্চগলায় বলে,

“ ছিহ্, এই আপনি আমায় ছাড়ুন। বাহির থেকে এসেছেন আগে ফ্রেশ হবেন তারপর সব কথা।”

“আপতত মুড নেই৷ আপনাকে চাই এখন তারপর ফ্রেশ।”

“না! যান এখান থেকে!”

এক ভ্রু উচায় মুসাওয়াদ তরপর বলে,

“ আর ইউ শিউর? আমাকে চাই না?”

“ না!”

“ভেবে বলছেন তো?”

“ হ্যাঁ।”

“ ও–কে–ই…!”

কথাটা একপ্রকার টানা সুরে বলে বিছানা থেকে উঠে যায় মুসাওয়াদ। তারপর রুমের বড় আলো জ্বালিয়ে সারা রুম আলোকিত করে দিয়ে নিজের জিনিসপত্র কাবার্ডে তুলে রেখে দিয়ে। প্রয়োজনীয় সামগ্রি বপড কাবার্ডে রেখে আবরো ওয়ার কাবার্ড থেকে নিজের টাওয়াল তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। যাবার সময় তীক্ষ্ণ নজরে একবার সাবরিহাকে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ওয়শরুমে চলে যায়। সাবরিহা এতোটা সময় মুসাওয়াদের নির্লিপ্ততা দেখছিলো। সাবরিহা নিজেও জানে না একটু বাদে তার সাথে ঠিক কি হতে পারে। সাবরিহা ওয়শরুমের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে এসে কাবার্ড থেকে নিজের একটা নেভী ব্লু ও খয়েরী রঙের মিশেলে শাড়ি নামিয়ে নিয়ে শরীরে জড়িয়ে নেয়। অথচ মুসাওয়াদ বের হবার নামও নিচ্ছে না। সবরিহা ভেবেছিলো মুসাওয়াদ আগের মতো নিজের থেকেই বার কয়েক চাইবে অথচ সবরিহা না করতে কিভবে পাষণ্ড পুরুষের মতো চলে গেলো। মনটা খারাপ হয়ে এলো তই অভিমান নিয়েই আবরো বিছানায় শুয়ে পড়ে। ঠিক তখনই ওয়চরুমের দরজাটা খট করে খোলার শব্দ হয়। সবরিহা ঘাড় ঘুরিয়ে চোরা চোখে তাকাতেই যেন দম আটকে এল গলায়। ঢোক গিলল তবে খুব একটা উপকার হলো না। মুসাওয়াদ ত্যাড়চা চোখে দেখে চোখ সরিয়ে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলের পানি মুছতে থাকে। সাবরিহা শাড়ি পড়েছে দেখে বিরবির করে বলে, “ইডিয়েট, প্রভোক করার নতুন কায়দা; ইমপ্রেসিভ!”

তবে একটু বুঝতে দিলো না মুসাওয়াদ। নিজের মুতো সে চুল মুছতে ব্যস্ত। সাবরিহা মুসাওয়াদকে চেকআউট করতে ব্যস্ত। ওই সময় মুসাওয়াদকে ক্লান্ত লাগলেও এখন যেনো আকর্ষণীয় লাগছে ভীষণ। বিশেষ করে হাতটা এমন ভবে টানছে সাবরিহাকে। মুসাওয়াদ চুলের ব্রাশ রেখে চুলে হাত ঢুবিয়ে ঠিকঠাক করতে করতে আবারো কাবর্ড থেকে একটা সাদা শার্ট বের করে আর টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। সাবরিহা নিজেও জানে না মুসাওয়াদ কি চাইছে তবে মুসাওয়াদের এমন নির্লিপ্ততা যেনো সাবরিহাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। মুসাওয়াদ বের হয়ে বারান্দায় চলে গেলো। সাবরিহার এবার মনে হলো এর থেকে ঘুমানো সহজ তাই আবারো বিছনায় নিজেকে এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। তবে চোখের সামনে মুসাওয়াদ ঘুরছে। মন টিকছে না। চোখ মেলে তাকিয়ে সারারুমে চোখ বুলায় তারপর উঠে রুমের বড় লাইট-টা বন্ধ করে ধীর পায়ে হেঁটে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সাবরিহা এসে দাঁড়াতেই মুসাওয়াদ টের পেয়েছে তবে প্রতিক্রিয়া বিহীন এমনিই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। সাবরিহা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

“সমস্যা কি আপনার? আমায় ইগনোর করছেন কেনো?”

মুসাওয়াদ কথ বলল না। একই ভঙ্গিতে ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে রইলো। তাই সাবরিহাও বিরক্ত হয়ে মুসাওয়াদকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আবরো জানতে চায়,

“ কি হয়েছে কথা বলছেন না কেনো?”

মুসাওয়াদ সাবরিহাকে একমুহূর্তের জন্য দেখলো তারপর আবারো চোখ সরিয়ে নিল। মেয়েটা এতে একটু দুঃখ পেলো তাই নিজেই এগিয়ে এসে মুসাওয়াদকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে তারপর আহত গলায় বলে,

“প্লিজ চুপ থাকবেন না। বলুন কি হয়েছে!”

“কিছু না! ছাড়ুন!”

সাবরিহা হতাশ হলো। তবে ছাড়ল না উল্টো আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

“সরি। আর করবো না।”

মুসাওয়াদ এবারো প্রতিক্রিয়াহীন। তাই নিজেই মুসাওয়াদের হাতটা টেনে নিজের উপর রেখে আবারো বলে,

“আমি বললাম তো সরি। আপনি যা চাইবেন তাই হবে! প্লিজ!”

মুসাওয়াদ হাতের বাঁধন টানলো। সাবরিহা যেনো স্বস্তি পেলো। মুসাওয়াদ সাবরিহাকে দেখলো তরপর আলতো হাতে সাবরিহার থুতনি টেনে নিজের দিকে তাক করে এগিয়ে আসে। সাবরিহা ভেবে নিলো মুসাওয়াদ মেনে নিয়েছে তাঃ চোখ বন্ধ করে ফেলে, মুসাওয়াদ থেমে যায় সাবরিহার মুখটা দেখতে থাকে। সবরিহও কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ধীরে চোখ তুলে তাকায়। যেন সে অধৈর্য। সাবরিহা নিজেই এগোতে চাইলো তবে মুসাওয়াদ নিজেই সরে সাবরিহার গালে স্লাইড করতে করতে বলে,

“ইউ ওয়ান্ট?”

“হু-হুম!”

মাথা নাড়িয়ে ঠোঁট কোনে বাকা হেসে বলে,

“ দ্যান টেল মি হাউ মাচ ইউ ওয়ান্ট ইট!”

বোকা হয়ে যায় সাবরিহা সাথে অধৈর্য তাই শার্টের গলার কাছটা খামছে ধরে বলে,

“ মুসাওয়াদ!”

“নেল এন্ড আস্ক!”

“প্লিজ মুসাওয়াদ!”

মুখে বিশ্বাসজয়ী হাসি ফুটলো। সাবরিহাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো মুসাওয়াদ তরপর আরে নেশালো গলায় আবারো বলে — ” সে ইট – এগেইন লাউডার দিজ টাইম।”

ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো সাবরিহা। তারপর বারবার বলতে শুরু বলে, “ প্লি-প্লিজ!”

মুহুর্তে অপেক্ষা করলো না মুসাওয়াদ। সবরিহাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অধরোষ্ঠের দখলে নিয়ে রুমের দিকে যেতে শুরু করে। সাবরিহা যেনো নিজের মাঝে নেই! সাবরিহাকে বিছানায় রেখে এলোমেলো হাতে নিজের শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলে কাবার্ডে হাত দিতেই সাবরিহা মুসাওয়াদের হাত ধরে। মুসাওয়াদ অবাক চোখে তাকালে সাবরিহা ফিসফিস করে কিছু একটা বলে তার অধর দখলে নেয়। মুসাওয়াদপর বুঝতে সময় লাগে নি। মিশিয়ে নেয় সাবরিহাকে নিজের সাথে।


চলবে…!
রিচেক দেই নি!