মায়ামঞ্জরী পর্ব-০৬

0
1

#মায়ামঞ্জরী
পর্ব-৬

সন্ধ্যার দিকে কফি হাতে বসে প্রথম মেসেজটা শিশিরই পাঠাল, “হ্যালো! আমি কি আপনাকে চিনি?”

অধরা অনলাইনেই ছিল। মেসেজটা দেখে যেন তার পেটের মধ্যে সুড়সুড়ি দিয়ে উঠল। সে মেসেজ সীন করে উত্তর দিল, “আপনার কী মনে হয়?”

“আমার মনে হয় চিনি। নিশ্চিত হবার জন্য চেহারা দেখা প্রয়োজন। প্রোফাইলে তো কোনো ছবি দেখলাম না। আপনার একটা ছবি পেতে পারি?”

অধরার চোখ কপালে উঠল। এত এডভান্স! দুই নম্বর মেসেজেই ছবি চেয়ে বসছে! এই ছেলের চার-পাঁচটা প্রেমিকা না হয়েই যায় না!

সে ঠোঁট চেপে লিখল, “উহু, আমি অপরিচিত কাউকে নিজের ছবি দেই না।”

সঙ্গে সঙ্গে জবাব এলো, “অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ঠিকই দিতে পারেন!”

অধরা খানিকটা অপমান বোধ করল। এই ছেলে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছে নাকি ঝগড়া করার সেটাই মাথায় ঢুকছে না। সে ভেবেচিন্তে লিখল, “রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি পরিচিত হবার জন্য। অপরিচিত কাউকে রিকোয়েস্ট দেয়া মানা?”

“অবশ্যই না। তবে পরিচিত হবার জন্য আমাকেই বেছে নেবার কারন?”

অধরা হতাশ হয়ে পড়ল। এই ছেলের সাথে কথায় পেরে ওঠা বড় মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে যাচ্ছে। সে সামনে দাঁড়াতেই পারছে না। অবশেষে সে লিখল, “থাক, অপরিচিতদের সাথে নতুন করে পরিচিত হবার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি বরং পরিচিতদের সাথেই কথা বলুন।”

মেসেজটা দেখে শিশিরের মনে হলো সে বেশি বেশি বলে বলে তরী ডুবিয়ে দেবার উপক্রম করেছে। এখন এটাকে বাঁচাতে হবে।

সে তাড়াতাড়ি লিখল, “আরে রাগ করছেন কেন? আমি তো মজা করছিলাম। বাই দ্য ওয়ে, আপনার নামটা কিন্তু সুন্দর।”

অধরার মনে পড়ল প্রথমদিন তার নাম জানার পরও এই ছেলে একই কথা বলেছিল। একই কমপ্লিমেন্ট সবাইকে দিয়ে বেড়ায় নাকি?

“থ্যাংস। সবাই তাই বলে।”

“আপনি কী করেন? পড়াশুনা?”

অধরার মাথায় এবার দারুণ একটা দুষ্টবুদ্ধি খেলে গেল। সে লিখল, “না না, আমার পড়াশুনা তো কুড়িতেই শেষ। এখন সংসার আর বাচ্চা সামলাই। হাসবেন্ড একটুও সময় দেয় না। সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। আমার এত একা লাগে! এজন্যই আপনার সাথে কথা বলে একটু সময় কাটাতে চাইছি।”

মেসেজ পড়ে শিশির হো হো করে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল বিছানায়। ওর হাসির শব্দে মা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে তোর? কী হলো?”

শিশির কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল, “মা, অনেক মজা হচ্ছে।”

“কোথায়?”

মাকে আসল কথা বলা যাবে না। সে বলল, “আরে মা, একটা ফানি ভিডিও দেখে হাসছি।”

মা বিরক্ত হয়ে বললেন, “ধুর! তুই একটা আস্ত ছাগল৷ আমি ভয় পেয়ে গেছি কী হয়েছে ভেবে। ভিডিও দেখে কে এত হাসে?”

“তুমিও দেখবে? এসো দেখাই।”

“কোনো প্রয়োজন নেই।” বলে মা চলে গেলেন।

শিশির জানত মা দেখবে না। মা চলে যেতেই সে মেসেজবক্স বের করল আবার। এই মিনিট দুয়েকের মধ্যে মেয়ে আরেকটা মেসেজ দিয়ে বসেছে, “কী হলো? আমি বাচ্চার মা বলে কথা বলবেন না নাকি?”

শিশির আবার গলা ফাটিয়ে হাসতে গিয়েও কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে মুখ চেপে হাসতে লাগল।

হাসি থামার পর সে লিখল, “না না, আমি অত কনজার্ভেটিভ নই। কথা বলতেই পারি। আফটার অল, মনের মিল থাকলে বয়স বা বাচ্চাকাচ্চা কোনো ফ্যাক্ট না।”

অধরা মেসেজটা দেখে মজা পেল। আহা! বাছাধন ডুবে ডুবে জল খেতে চাচ্ছে! দেখা যাক কত জল খেতে পারে!

সে আরেকটু গুছিয়ে বসে লিখল, “ওহ সো সুইট! আপনার চেহারাটাই অনেক সুইট। দেখেই মনে হয়েছিল আপনি আমার নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারবেন।”

লিখে অধরা নিজেই এত লজ্জা পেয়ে গেল যে বালিশ দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল। না জানি কী উত্তর আসবে!

শিশির এবারের মেসেজটা পড়ে নিজেকে আর সংবরণ করতে পারল না৷ আবারও জোরে জোরে হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল।

ফের মা চলে এলেন। “অ্যাই তুই কি পাগল হয়ে গেলি?”

“না মা। ভিডিও…”

“কোথায় ভিডিও দেখা তো। আমিও দেখি কিসের এত আনন্দ।”

শিশির এবার পড়ল বিপদে। এখন ভিডিও পাবে কোথায়? বলল, “বসো। বের করছি।”

সে ফানি ভিডিওর একটা পেজ বের করে সেখান থেকে একটা মজার কার্টুন বের করে মাকে দেখাল। শিশির জানত মা কার্টুন দুই মিনিটের বেশি দেখবে না। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে মা খুবই আনন্দ নিয়ে কার্টুন দেখতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পরপর শিশিরের মতো উচ্চস্বরে হেসেও উঠতে লাগলেন। শিশির ভোঁতা মুখে বসে আছে দেখে মা বললেন, “কিরে তুইও দ্যাখ।”

শিশিরও যোগ দিল। মায়ের সাথে বসে মজার কার্টুন দেখা হলো বোধহয় কত বছর পর। দু’জন একসাথে হাসছে, মাঝে মাঝে মা এটা সেটা মন্তব্য করছেন। শিশিরের খুব ভালো লাগল। এক পর্যায়ে সে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে দেখতে লাগল। মায়ের এক হাতে মোবাইল ধরা, অন্য হাতে তার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলেন। শিশির ভাবল, মায়েদের কত দিকে মনোযোগ থাকে!

অবশেষে কার্টুন শেষ হলো। মা শিশিরের মোবাইল ফেরত দিয়ে বললেন, “আমার মোবাইলে এটা এনে দিস তো।”

শিশির দুই পাশে মাথা নেড়ে বলল, “উহু, দেখতে হলে আমার কাছে এসে দেখে যাবে।”

মা মুখ টিপে হেসে বললেন, “ঠিক আছে।”

বাবা চলে এলেন এর মধ্যে। তার ডাকে মাকে যেতে হলো। শিশির আবার ঢুকে গেল অধরার সাথে চ্যাটবক্সে।

মেয়েটা আরেকটা মেসেজ পাঠিয়েছে, “কী করছেন? উত্তর দিচ্ছেন না যে?”

শিশির উত্তরে লিখল, “আমার গার্লফ্রেন্ড ফোন করেছিল। এত টকেটিভ মেয়ে! এতক্ষণ ধরে বকবক করে তবে রাখল।”

মেসেজটা দেখে অধরার কি খানিকটা মন খারাপ হলো? কিন্তু কেন মন খারাপ হবে? এর গার্লফ্রেন্ড থাকবেই, স্বাভাবিক ব্যাপার।

সে লিখল, “ও আচ্ছা! তো কী কথা হলো প্রেমিকার সাথে?”

“সব তার নিজের কথা। আমাকে এখন আর একটুও কেয়ার করে না। জানেন ভেতরে ভেতরে আমি নিজেও কতটা নিঃসঙ্গ?”

অধরা হা হয়ে গেল। এ তো দেখি গভীর পানির মাছ! বিবাহিত মহিলার সাথে প্রেম করতে চাচ্ছে? অবশ্য টোপ সে নিজেই দিয়েছে। মাছ গিলে নিয়েছে। কিন্তু এই কনভারসেশন বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে থাকলে সে কী করবে? একটা ঢোক গিলল অধরা।

ভয়ে ভয়ে লিখল, “হুম৷ আপনাকে দেখেই আমার সেরকম মনে হয়েছিল।”

“আচ্ছা আমি কি দেখতে হ্যান্ডসাম?”

“হুম।”

“আপনার হাসবেন্ডের থেকেও বেশি?”

অধরা আরেকটা ঢোক গিলে লিখল, “অনেক বেশি।”

শিশির আবারও একদফা হাসির দমক আটকাতে বারান্দায় চলে গেল।

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু