#মায়ামঞ্জরী
পর্ব- ২৬
শিশির আর অধরা কোনোরকমে জামাকাপড় গায়ে চড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। শাওন আর শাওলীও বেরিয়ে এসেছে। তার পাশের ঘর থেকে মামাতো বোনেরা ততক্ষণে চলে গেছে নিচের দিকে। নিচে মা বাবা, মামা মামী আর রুনু খালা আছেন। কার কী হয়ে গেল কে জানে! ভয়ে বুক কাঁপছে শিশিরের।
ওরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেল নিচতলার সবাই সিঁড়ির সামনেই জড়ো হয়েছে। রুনু খালা রীতিমতো ঠকঠক করে কাঁপছেন, মামা মামী জড়োসড়ো, মা বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ওদের নামতে দেখে মা চিৎকার করে উঠলেন, “সাপ এসেছে ঘরে।”
“সাপ?” একসাথে চেঁচিয়ে উঠল ওরা।
মা বললেন, “হ্যাঁ। আমি ফজরের নামাজের জন্য ওযু করে দরজা খুলেছি আর দেখি দরজার সামনে সাপ। আমার পাশের কাছ দিয়ে সরসর করে ভেতরে ঢুকে গেল। তোদের বাবাকে কোনোমতে ওই ঘর থেকে বের করে এনেছি। সাপটা এখনো আমাদের ঘরেই আছে বোধহয়। খাটের নিচে গেছে।”
শিশির, শাওন দুজনেই এগিয়ে গেল। দু’জনেই হাতে লম্বা দুটো লাঠি নিয়ে মা বাবার ঘরের দিকে গেল। সাপটাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল খাটের একটা পায়ার সাথে পেঁচিয়ে থাকা অবস্থায়। বাদামি রঙের ছোটোখাটো একটা সাপ। ফনা তোলে না৷ সাপটাকে মারতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না৷ মেরে একটা বেলচাতে তুলে ফেলে দিয়ে এলো শাওন।
এসবের মধ্যে ভোর হয়ে এলো। চারদিক আলো করে ভোরের সূর্যটা উঠল। অধরা এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। সবাই ভীষণ আতঙ্কিত হয়েছিল। শাওলী অস্থির হয়ে একটু পরপর ওর হাত ধরছিল, আবার হাত ছেড়ে নিজের জামাকাপড় ঝেড়ে নিচ্ছিল। সেই সাথে খানিকক্ষণ পরপর তাকে জিজ্ঞেস করছিল, “তোমার ভয় লাগছে না অধরা? এত শান্ত হয়ে আছ কিভাবে?”
অধরা কোনো উত্তর দেয়নি৷ তার ঠিক ভয় লাগছে না, কেমন যেন অস্বস্তিকর লাগছে। ভেতরে ভেতরে ঠিক ভালো বোধ হচ্ছে না৷ তবে সেজন্য সে অস্থির বা চঞ্চল হয়ে উঠল না৷ অস্থিরপনা বা পাগলাটে স্বভাব তার ধাঁতেই নেই।
ভোর হয়ে গেলে সবার ভয়ও কমে গেল। সবাই বসার ঘরে গিয়ে বসল। সেখানে ওদের আগের বাড়ির মাখনরঙা নরম গদির সোফা খানিকটা বেমানান, তবে আরামদায়ক তো বটেই।
অধরা রান্নাঘরে চলে গেল। শিশিরের কাছে শুনে শুনে বাড়িটা তার চেনা হয়ে গেছে৷ এখন শুধু নিজের চোখে দেখা হচ্ছে। রান্নাঘরের জানালাটা বিশাল। ওপাশে একটা গাছের কান্ড বেয়ে লতানো গাছ উঠে গেছে কোন ওপরে! গাছ বেয়ে উঠে গেল একটা কাঠবিড়ালি। মনটা ভালো হয়ে গেল অধরার৷ বাইরে যে কত রকমের গাছপালা! এর মধ্যে কতগুলো তো সহজে পাওয়াই যায় না। নার্সারি থেকে এত দাম দিয়ে কিনতে হয়! অথচ এখানে অজস্র জন্মে আছে।
এসব দেখতে দেখতেই সে সবার জন্য চা বানিয়ে ফেলল৷ সুন্দর করে বড় একটা ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে গেল। চা পেয়ে বাবা আর মামা খুবই খুশি হলেন। সবাই চা খেল, শুধু মামী আর শাওলী বাদে৷ শাওলী চা খায় না, কফি খায়। আর মামীর নাকি খালি পেটে চা খেলে গ্যাসের সমস্যা হয়।
চায়ের পর্ব চুকে গেলে অধরা নিজেদের ঘরে চলে গিয়ে গোসলে ঢুকল। ঠান্ডা মোজাইকের মেঝেতে পা দিয়ে গা শিরশির করে উঠল অধরার৷ ট্যাপের পানিও ভীষণ ঠান্ডা। সে যখন গায়ে পানি ঢালল মনে হলো প্রবল ঠান্ডায় চিৎকার করে ফেলবে। তবে আস্তে আস্তে ঠান্ডাটা সয়ে এলো গায়ে। রীতিমতো আরাম লাগতে শুরু করল। অনেকটা সময় নিয়ে গোসল করল সে।
বেরিয়ে দেখল শিশির ঘরে বসে আছে। ওর বাথরুমের দরজা খোলার শব্দে সে চোখ তুলে তাকাল৷
অধরা চুল মুছল, গায়ে প্রসাধনী মাখল, একটুখানি সাজগোজ করল, পুরো সময় শিশির শুধু চেয়েই রইল অপলক। অধরার এত লজ্জা লাগতে লাগল যে সে ঠিকমতো কিছুই করতে পারল না। একসময় কপট রাগ দেখিয়ে বলল, “এটা কী হচ্ছে?”
শিশির অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হবে?”
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
“তো? নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে বুঝি পাপ হবে?”
“তাই বলে এভাবে?”
“না না, কিভাবে দেখাচ্ছি দাঁড়াও।” বলেই অধরার একেবারে সামনাসামনি গিয়ে বসে বলল, “এবার ঠিক আছে?”
অধরা খিলখিল করে হেসে ফেলল। শিশির ওর হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, “তুমি ভয় পেয়েছিলে?”
“সাপ দেখে?”
“হুম?”
“নাহ।”
“কেন?”
“ওই সাপটা ছিল নির্বিষ সাপ।”
“তুমি কী করে জানলে?”
“আমি সাপ চিনি।”
“কী সাপ ওটা?”
“ঘরগিন্নি।”
শিশির কৌতুক করে বলল, “তোমাকে ওয়েলকাম করতে এসেছিল নাকি তবে?”
“আসতেও পারে!”
শিশির অধরার গালে হাত রেখে বলল, “ভেবে বসো না এই বাড়িভর্তি সাপ। আজই প্রথম এদের দেখা পাওয়া গেল। চারদিকে ঔষধ ছিটিয়ে দিলেই আর আসবে না।”
“ধুর! আমি ওভারথিঙ্কার না। কেন ভাবব ঘরভর্তি সাপ? বাদ দাও ওসব।”
“দিলাম।”
“অন্যকিছু বলো।”
“তোমাকে সুন্দর লাগছে অধরা।”
‘হিহি। এটা বলতে বলেছি?”
“লাগলে বলব না? আজ তোমাকে অন্যরকমও লাগছে।”
“কেমন?”
“বউদের মতো সুন্দর।”
অধরা আবারো জোরে হেসে ফেলতে গিয়েও হাসতে পারল না। শিশির খুব মন থেকে কথাটা বলেছে।
শিশিরের থেকে ছাড়া পেয়ে নিচে নামতে নামতে একটু দেরি হয়ে গেল অধরার৷ নেমে বসার ঘরে উঁকি দিল সে। কেউ নেই। এবার রান্নাঘরের দিকে গেল। কথার শব্দ শোনা যাচ্ছে। মা আর মামীর গলা পেল সে। ঢুকতে দ্বিধা করত না, কিন্তু কয়েকটা শব্দ শুনে থমকে গেল।
মামী বলছে, “দেখলেন আপা, এতদিন কোনো ঝুটঝামেলা নাই, হঠাৎ বাড়িতে সাপ উপস্থিত! বউও ঢুকল, সাপও ঢুকল! আমার তো ভাই সুবিধা লাগছে না।”
মা মৃদু গলায় বললেন, “কী যে বলো তুমি!”
“আপা এইসব বিশ্বাস করা ঠিক না জানি, কিন্তু আমার ভালো লাগছে না। সুলক্ষণ কুলক্ষণ বলে একটা বিষয় আছে। আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন।”
মা কী যেন বলতে লাগলেন। অধরা আর শুনল না। নিঃশব্দে চলে এলো সেখান থেকে। তার চোখে পানি চলে এসেছে৷ বারান্দা দিয়ে হেঁটে একদম কোণার দিকে চলে গেল সে। মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। নিজেকে ভীষণ একা একা লাগছে। যেন চারপাশটা বড্ড ফাঁকা। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করল সে৷ কিন্তু ব্যর্থ হলো। একসময় ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।
অবশ্য নিজেকে সে সামলেও নিল দ্রুত। চোখ মুছে ভেতরের দিকে যেতে গিয়েও থমকে গেল। শাওন গেট দিয়ে ঢুকছে। এত সকালে কোথায় গিয়েছিল? ওর সাথে কিছু দিনমজুর ধরনের লোক। এদের কেন নিয়ে এসেছে সে?
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু
#মায়ামঞ্জরী
পর্ব-২৭
শাওন লোকগুলোকে নিয়ে এসে বাগানের দিকে দেখিয়ে কিসব যেন বোঝাতে লাগল। অধরার ভীষণ ইচ্ছে করল গিয়ে জিজ্ঞেস করে, শাওন আসলে কী করতে চাইছে। কিন্তু এই বাড়িতে এটা তার প্রথমদিন। তার ওপর বাইরের কতগুলো লোকের সামনে ভাসুরের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করাটা তার ঠিক মনে হলো না। কিন্তু সে কৌতুহল দমিয়েও রাখতে পারছিল না৷ এমন সময় দোতলা থেকে ডাক শোনা গেল শাওলীর। “এইযে…কী হবে এখানে?”
শাওন ওপরে তাকিয়ে বলল, “এই জঙ্গলেই সাপের আড্ডা মনে হচ্ছে। এগুলো পরিষ্কার করতে হবে।”
শাওলী হেসে বলল, “থ্যাংস! আমি এজন্য ভয়ে নিচতলায় বেশিক্ষণ থাকতেই পারতাম না।”
শাওন মুচকি হেসে কাজে ফিরে গেল। লোকগুলো গাছ কাটা শুরু করে দিল। প্রথমেই কাটতে লাগল বিশাল এক অলকানন্দার ঝাড়। হলুদ ফুলসহ ডালগুলো নেতিয়ে পড়তে লাগল। তারপর একটা বুনো জবার গাছ কাটা হলো। কাটা পড়ল গোল গোল পাতার আগাছা, সেই সাথে তাতে জড়িয়ে বড় হওয়া অপরাজিতা৷ ইন্ডোর প্ল্যান্টসের ডিপো ছিল এখানে। মানিপ্ল্যান্ট, ফিলাডেলফিয়ার বড় বড় ঝাড় হয়েছিল৷ অধরা থাকতে না পেরে শেষে ছুটে গেল শাওনের কাছে। যথেষ্ট নম্র সুরে বলল, “ভাইয়া এত সুন্দর গাছগুলো না কাটলে হয় না? আমি নাহয় পরিষ্কার করে রাখব।”
শাওন অধরার দিকে চাইল। এর আগে মেয়েটার সাথে সেভাবে তার কথা হয়নি। গাছপালা বুঝি বড্ড ভালোবাসে। ওর চোখে প্রিয় জিনিস হারানোর ব্যথা দেখা যাচ্ছে। মোলায়েম দৃষ্টিতে চেয়ে সে বলল, “তুমি পুঁচকে একটা মেয়ে এত ঝোপঝাড় কিভাবে পরিষ্কার করবে?”
“কিন্তু এখানে অনেক ভালো ভালো গাছ ছিল.. সব কেটে ফেলছে তো..”
শাওন ওকে বোঝানোর চেষ্টা করল, “দেখো অধরা, বাবার শরীর ভালো না। তার ওপর সাপের আতঙ্ক ঢুকে গেছে মনে। এখন যদি এসব ঝোপ জঙ্গল সারাক্ষণ দেখে তাহলে তার ভেতর থেকে আতঙ্ক দূর করা যাবে না৷ তাছাড়া সাপ তো সত্যিই এসেছে। এই জঙ্গলের কারনেই যদি এসে থাকে তবে সেটা সবার জন্যই রিস্কি, তাই না?”
“ওটা নির্বিষ সাপ ছিল।”
“জানি আমি। কিন্তু তুমিই বলো, নির্বিষ সাপ এসেছে তার মানে তো বিষধর সাপও থাকতে পারে তাই না? মানুষ যেখানে বসবাস করবে সেই জায়গাটা মানুষের বসবাসের উপযোগী হওয়া উচিত নয় কি?”
অধরা হতাশ চোখে চারদিকে তাকাল। যখন গতরাতে সুঘ্রাণ পাওয়া হাস্নাহেনা গাছটা কাটতে শুরু করল লোকগুলো, সে চোখ বুজে ফেলল। শাওনের ইচ্ছে হলো গাছটা কাটতে নিষেধ করে। কিন্তু মায়ের কড়া নির্দেষ এই হাস্নাহেনা কাটতেই হবে। এর ঘ্রাণেই সাপ এসেছে। এই ফুলের ঘ্রাণ তার নিজেরও পছন্দ, কিন্তু কিছুই করার নেই।
অধরা একসময় হাল ছেড়ে চলে যেতে চাইলে শাওন তাকে ডাকল, “অধরা, তুমি চাইলে একটা কাজ করা যায়।”
অধরা আগ্রহভরা চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী কাজ?”
*********
শিশির অনেকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে যখন উঠল তখন বেলা প্রায় এগারোটা৷ চোখ থেকে ঘুম মোটামুটি সরে গেলে সে উঠে বসল। ঘরটা একটু আলাদা লাগছে। কী পরিবর্তন হয়েছে? ভালোমতো চাইতেই খেয়াল করল ড্রেসিং টেবিলে কিছু মেয়েদের প্রসাধনী আর গয়নাগাটি জমা হয়েছে। ঘরে মেয়েদের জামাকাপড়ের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কয়েকবার চোখ পিটপিট করল সে। সত্যিই কি তার বিয়ে হয়ে গেল? অধরার সাথেই হলো তো? নাকি স্বপ্ন দেখে এইমাত্র ঘুম থেকে উঠল? এরকম মনে করার তার অবশ্য কারন আছে৷ সে এই পর্যন্ত বিয়ের স্বপ্ন অন্তত ডজনখানেক বার দেখে ফেলেছে৷ তাই কোনটা সত্যিই ঘটেছে এই ব্যাপারে সে খানিকটা সন্দিগ্ধ।
নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখতে গিয়ে সে আবিষ্কার করল তার হাতে নখের দাগ। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল সেটার দিকে। ব্যথাটা কোথায় পেয়েছে সে?
তারপরেই মনে পড়ে গেল পুরোটা৷ নাহ, আর চিমটি কাটতে হবে না। গতরাতটা বড় জীবন্ত ছিল। তার কথা সে কেমন করে হঠাৎ ভুলে গিয়েছিল? ঘুমালে বুঝি মাথাটা পুরো ফাঁকা হয়ে যায়?
মেয়েদের কিছু সেনসিটিভ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকে এটা সে জানত, কিন্তু এভাবে কাছ থেকে দেখার বা বোঝার সুযোগ এই প্রথমবার হলো তার। তার স্পর্শেই অসহনীয় হয়ে অধরা তার হাত খামচে ধরেছিল৷ দাগটা রয়ে গেছে৷ খুঁজলে আরো অনেক মার্কস পাওয়া যাবে অনায়েসে। সেসব খুঁজতে গেল না সে। বরং চোখ বুজে একবার মনে করার চেষ্টা করল গতরাতের কথা৷
আবারো চোখে ঘুম জড়িয়ে এলো। তরল ঘুম। ঘুমের বিষয়বস্তুও তরল। সেখানে একটা জল থৈ থৈ প্রান্তরের মাঝে সাদা চৌবাচ্চা। তাতে জাফরানি রঙের তরল৷ তরলটা অধরা। সে চৌবাচ্চার সেই তরলে ডুবে যাচ্ছে একটু একটু করে। কী আরামদায়ক সুখ সুখ অনুভূতি! কিন্তু কে যেন তার সুখ সহ্য করতে পারল না। তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করল। চোখ মেলে সে দেখল সামনে অধরা দাঁড়িয়ে। চোখ বড় বড় করে বলছে, “এমন ঘুম জীবনেও কাউকে ঘুমাতে দেখিনি৷ কুম্ভকর্ণের বংশধর নাকি তুমি!”
এবার বোধহয় ঘুমটা সত্যিকার অর্থেই ভাঙল শিশিরের। সে পূর্ণ দৃষ্টিতে অধরার দিকে চাইল৷ অধরা হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে, “প্রথমদিন সকালের খাবার তোমাকে ছাড়া খেতে হলো। মা আমাকে না খাইয়ে ছাড়লেনই না। আর তোমাকেও ডাকতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন৷ এটা কি ঠিক হলো বলো?”
শিশির অধরার হাত ধরে টেনে কাছে এনে বলল, “খুব ভুল হয়েছে। এবার এর প্রতিকার কী হবে?”
“কী হবে?”
“আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।”
“আচ্ছা! তাহলে খাবার নিয়ে আসি?”
“উহু, নিচে গিয়ে খাইয়ে দেবে। সবার সামনে।”
“ইশ! তাহলে পারব না।”
“এখানে খাওয়াতে চাইলে অন্যকিছু…” শিশির কথা শেষ করতে পারল না৷ ঘরের বাইরে কারো আওয়াজ পেয়ে ছেড়ে দিল অধরাকে। অধরা দ্রুত সরে গেল। তখনই গলা শোনা গেল মামাতো বোন মিলি, নীলির। তারা অধরাকে ডাকছে। অধরা চলে গেল তাদের সাথে।
শিশির আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছাড়ল। বারান্দার দিকের দরজা খুলতেই চোখে প্রচুর আলো ঢুকে পড়ায় অবাক হলে গেল। জঙ্গল হয়ে থাকা বাগানটা আর নেই। বড় বড় গাছগুলো বাদে বাকিসব সাফ৷ কিচ্ছু নেই! হাস্নাহেনা গাছটা পর্যন্ত নেই! অধরা গতরাতেও বলছিল হাস্নাহেনার ঘ্রাণ তার পাগলের মতো ভালো লাগে। রোজ রাতে এই ঘ্রাণ পাবে ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে।
নিশ্চয়ই সাপের কারনে বাগান সাফ হয়েছে। কিন্তু অধরার গাছপ্রীতির কথা ভাবলেই খারাপ লাগছে। অনেক রকম গাছ ছিল এখানে৷ অধরার হাতে পড়লে বাগানটা দেখবার মতো হতো। কিন্তু…. অসময়ে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য নিজেকে চড় মারতে ইচ্ছে হলো তার। সে জেগে থাকলে খানিকটা অন্তত রক্ষা করা যেত! লম্বা এলটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।
এই বারান্দার দিকে দোতলার সবগুলো ঘরের দরজা আছে৷ একেবারে শেষের ঘরে মামার তিন মেয়ে থাকছে৷ বড় মেয়ে লিলিকে দেখা গেল বের হয়ে আসতে। ওর হাতে দুটো বেলীফুল। লিলিকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল শিশির৷ এই মেয়ে ডেঞ্জারাস। মুখে কিছুই আটকায় না৷ যা খুশি করেও ফেলতে পারে। কিশোরী বয়সে লিলি তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। সে রাজি হয়নি বলে তার পাঁচটা শার্ট কাচি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল। কেন করেছে জিজ্ঞেস করায় বলেছিল, “আমাকে যাতে ভুলে না যাও তাই করেছি।” পরিবারের বাকিরা যদিও এসব ঘটনা জানে না।
লিলি অবশ্য বিয়েতে বেশ আনন্দ করেছে। অধরার সাথেও চমৎকার ছিল ওর ব্যবহার। শিশির তাই খুব একটা চিন্তা করল না।
লিলি এগিয়ে এসে শিশিরকে একটা বেলীফুল ধরিয়ে দিয়ে বলল, “কেমন কাটল রাত?”
শিশির খানিকটা ভড়কে গেলেও প্রকাশ করল না৷ বিরক্ত চোখে চেয়ে রইল লিলির দিকে।
লিলি চোখ মটকে বলল, “বোঝাই যাচ্ছে কেমন গেছে। তোমার গলার দাগটা ঢেকে ফেলো শার্ট দিয়ে। সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে চাও নাকি?”
শিশির এবার চূড়ান্ত বিরক্ত গলায় বলল, “তোর সমস্যাটা কী?”
“আমার কোনো সমস্যা নেই।”
“তাহলে এখান থেকে যা।”
“কেন? অতিথিকে এভাবে বলতে আছে?”
“তোর মতো অতিথিকে বলাই যায়।”
“শোনো, বেশি বকবক করলে না ওরকম আরেকটা দাগ বানিয়ে দেব, তখন বউকে কী বলব সেটা আগেই ভেবে রেখো।”
শিশিরের ইচ্ছে করল মেয়েটাকে রেলিংয়ের ওপাশে ছুঁড়ে মারতে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিল সে। ওপাশে খিলখিল হাসির শব্দ শোনা গেল।
অন্য দরজা দিয়ে বের হতে গিয়ে মায়ের সামনে পড়ে গেল সে। মা জিজ্ঞেস করলেন, “খিদে লাগেনি?”
“লেগেছে মানে? পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে।”
“যাও নিচে। তোমার বউও তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছে সকাল থেকে।”
শিশির অবাক হলো, একই সাথে বিগড়ে যাওয়া মেজাজটাও ঠিক হয়ে গেল। অধরা তাহলে নিজে খাওয়ার কথাটা মিথ্যে বলছিল।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু
#মায়ামঞ্জরী
পর্ব-২৮
খাবার ঘরের জানালা দিয়ে সোনালী রোদ্দুর এসে আলো করে রেখেছে পুরো ঘরটা৷ এই ঘরে ওদের বিশাল ডাইনিং টেবিলটা কোনোরকমে এঁটে গেলেও অন্য কোনো ফার্নিচার জায়গা হয়নি৷ বড় জানলাটার পাশেই বিশাল একটা ঝাড় ছিল। সেটা পরিষ্কার করেছে বলে আজ সুন্দর দিনের আলোয় চকচক করছে ঘরের প্রতিটি কোণ। তবে ঘরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। অধরার মনে হলো দেয়ালে দু’চারটে গাছ আর বড় একটা পেইন্টিং ঝোলাতে পারলে কী দারুণ হতো!
সে এতক্ষণ না খেয়ে রয়েছে শিশিরের জন্য। ওকে রেখে খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না৷ এই বাড়ির কারো জন্য তার এখনো মায়া জন্মায়নি। শুধু ওই একটা মানুষই তো সবকিছুর যোগসূত্র। সে নেই তো কিছুই নেই। এদের সবাইকে সে যেভাবে আপন করে নিতে চেয়েছিল সেভাবে পারছে না দেখে তার নিজেরই বড় কষ্ট হচ্ছে। তবুও সে হাসিমুখে সবার সাথে বসে গল্প করেছে। দুপুরের রান্নার জন্য কিছু তরকারিও কেটেকুটে ধুয়ে দিয়েছে।
শিশির নিচে নামলে সে চট করে তার খাবার গরম করে প্লেটে বেড়ে ফেলল। সকালের নাস্তায় হয়েছিল ডিম-পরোটা আর সবজি ভাজি। শিশির টেবিলে বসে এক প্লেটে খাবার দেখে চোখ মটকে তাকাল।
“ম্যাডাম, আপনি খাবেন না?”
“খেয়েছি তো!”
“মিথ্যে বলছ কেন শুনি?”
অধরা ঠোঁট টিপে হেসে বলল, “তোমার কেন বিশ্বাস হয়েছিল আমি তোমায় রেখে খেয়ে নিয়েছি?”
শিশির অধরার হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলল, “খিদে লাগলে খেয়ে নেবে। নো ফরমালিটিজ। এখন হা করো।”
শিশির পরোটা ছিঁড়ে অধরার মুখে পুরে দিল জোর করে।
অধরা পরোটা মুখে নিয়েই বলল, “ফরমালিটিজ না..”
“তো কী?”
অধরা কাঁধ ঝাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকাল।
শিশির জিজ্ঞেস করল, “প্রেম?”
“কচু।”
“এবার তুমি আমাকে খাইয়ে দাও?”
“এভাবে খাইয়ে দেয়াদেয়ি সবাই দেখলে হাসাহাসি করবে।”
“করুন।”
“ইশ! একটা মানসম্মান আছে না?”
“তুমি বলতে চাইছ আমাকে খাইয়ে দিলে তোমার মানসম্মান চলে যাবে?”
“না তো!”
“তাহলে?”
“তুমি বড্ড কথা প্যাঁচাও।”
অধরা প্লেটটা নিজের দিকে টেনে খাইয়ে দিল শিশিরকে। শিশিরও মুখভর্তি খাবার নিয়েই জিজ্ঞেস করল, “তুমি রাঁধতে পারো অধরা?”
“পারি।”
“পরোটা বানাতে পারো?”
“হুম।”
“গোল হয়?”
“পরোটা গোল হয় না, চারকোনা হয়।”
“গোল হতে পারবে না এমন নিয়ম কে বানিয়েছে? পীথাগোরাস?”
“উহু, পীথাগোরাস বানালে ত্রিভুজ হতো।”
“ত্রিভূজ পরোটাও হয় বুঝলে?”
“খেয়েছি আমি।”
“তাহলে চাইলে বানাতে পারো।”
“সোজাসুজি বলো না, তুমি আমার হাতের পরোটা খেতে চাইছো।”
শিশির গলা নামিয়ে মৃদু স্বরে বলল, “হুম! মা এখন আর রান্না করতে চায় না। আর রুনু খালার রান্না ভেতরে যেতে চায় না।”
অধরা তার থেকেও নিচু স্বরে বলল, “এটা রুনু খালার না, মামীর রান্না।”
শিশির এবার প্রায় ফিসফিস করে বলল, “কী বলো? এই রান্না খেয়ে মামা এত হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে কিভাবে?”
অধরা ফিক করে হেসে ফেলল।
হঠাৎ একটা গলা বলে উঠল, “এখানে কী ষড়যন্ত্র হচ্ছে শুনি? বিয়ে হতে না হতেই এই অবস্থা?”
ওরা অবাক হয়ে চেয়ে দেখল অদিতি দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। ওর সামনে টেবিলের ওপরে রাখা একটা চারকোনা প্যাকেট। নিশ্চয়ই তাতে কেক!
গতকাল অধরার সাথে অদিতিরও আসার কথা ছিল৷ কিন্তু একজন নিয়মিত কাস্টোমার তাকে খুব করে অনুরোধ করেছিল তার এনিভার্সারির কেকটা করে দেবার জন্য। কিছুতেই সেই অনুরোধ ফেলতে না পারায় অদিতি আর গতকাল বোনের সাথে আসতে পারেনি। সেজন্য তার ভীষণ মন খারাপ লাগছিল গতকাল থেকেই। তাই অর্ডারের কেকের সাথে আরেকটা কেক বানিয়ে ফেলেছে। সেটাই নিয়ে এসেছে আসার সময়।
অদিতিকে দেখে অধরার মনে হলো না জানি কত যুগ পরে সে বোনকে দেখছে! তাদের শেষ দেখা হবার চব্বিশ ঘণ্টাও পার হয়নি, অথচ অধরার মনে হচ্ছিল সে মা বাবা বোনকে দেখে না বহুকাল ধরে। অদিতিকে দেখে তার চোখ পানিতে ভর্তি হয়ে গেল। ছুটে গিয়ে সে জড়িয়ে ধরল বোনকে।
অদিতিও কোনোদিন বোনকে ছাড়া থাকেনি। এক রাতেই সে বড্ড মিস করেছে বোনটাকে। এখন ওকে নববধূবেশে শ্বশুরবাড়িতে দেখে তারও এত কান্না পেয়ে গেল যে কিছুতেই আটকে রাখতে পারল না।
দুই বোন যখন কান্নাকাটিতে মশগুল, তখন শিশির চুপচাপ তাদের অনেকগুলো ছবি তুলে নিল। প্রথমটায় তার অবাক লাগছিল, এরপর হাসি পেয়েছে, তবে শেষে ওদের কান্নাকাটি দেখে তারও হৃদয় আর্দ্র হয়ে এসেছে। নিজের বোন নেই বলে সে হয়তো অতটা উপলব্ধি করতে পারে না, তবে একটা মেয়ে আর কোনেদিন তার পুরো শৈশব কৈশর আর যৌবনের একটা অংশ কাটানো বাড়িতে মা বাবা ভাই বোনের সাথে বাস করতে পারবে না ব্যাপারটা ভাবলেই খারাপ লাগে।
সে পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বলল, “কেকটা কি আমাদের জন্য শালী সাহেবা?”
“জি দুলাভাই।” অদিতি ঠিক করেছে সে শিশিরকে দুলাভাই বলেই ডাকবে। এটা ডাকলে শিশির খানিকটা অপ্রস্তুত হয়, তখন তার মুখ দেখে খুব মজা লাগে।
গতদিনই শিশিরের মামাতো বোনেদের সাথে অদিতির আলাপ হয়েছিল। আজ ওদের পেয়ে সবাই একসাথে গল্প জুড়ে দিল ডাইনিংয়ে বসেই। মামী এক ফাঁকে চা নাস্তা নিয়ে এলেন, যদিও চুলায় দুপুরের রান্না হচ্ছে। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অদিতিকে এটা ওটা খাওয়াচ্ছেন দেখে অধরার মন থেকে সকালের ব্যাপারটা মুছে গেল। ভাবল, পুরানো দিনের মানুষ, এরকম কথা বলেই থাকেন, সেই বা কেন মনে রাখবে? ভুলে গেলেই মিটে গেল।
অদিতিদের গল্প করার ফাঁকে অধরা একবার বাগানে গিয়ে অসমাপ্ত কাজটুকু শেষ করে নিল। শিশির ঘুমানোর ফাঁকে সে বহু কাজ করে ফেলেছে। শাওনের বুদ্ধিতে বাগানে যত রকমের গাছ ছিল প্রায় সবগুলোর চারা বা কাটিং জোগাড় করে রেখে দিয়েছে। শাওন নিজে থেকেই তার জন্য বাজার থেকে ছোটো বড় অনেকগুলো টব এনে দিয়েছে। সেগুলোতে মাটি ভরে দিতে সাহায্য করেছে গাছ কাটতে আসা লোকগুলো। এরপর অধরা গাছ লাগিয়ে ফেলেছে। সে খানিকটা ভয়ে ছিল বাইরের লোকেদের সাথে এখানে এসব কাজ করাটা হয়তো বাড়ির লোক পছন্দ করবে না। হাজার হোক, এখানে তার প্রথমদিন। কিন্তু দেখা গেল কেউই তেমন কিছু বলল না। বরং সে যখন ভয়ে কাজ শেষ না করে চলে এলো রান্নাঘরে মা মামীদের সাথে বসতে, তখন মা নিজেই বললেন, শিশির বলেছে তোমার গাছ খুব পছন্দ। নিজের মতো বাগান করে নিও, কত জায়গা পড়ে আছে! শুধু ওরকম জঙ্গল না হলেই হলো।”
মামী কোনো মন্তব্য করেননি। অবশ্য তাতে কিছু যায়ও আসে না। তিনি দু’দিন পর চলে যাবেন। সে থাকবে মায়ের সাথে। আর মা যথেষ্ট আধুনিক। তাদের যেরকম স্ট্যাটাস ছিল, তাতে আধুনিক না হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক।
এসব কাজের ফাঁকে শাওনের সাথে সম্পর্কটা বেশ সহজ হয়ে গেছে অধরার। সে বুঝতে পেরেছে শাওন মানুষটা বেশ সাদাসিধে ভালোমানুষ। শাওনও অধরার সাথে নানারকম গল্প করেছে। হোস্টেলে থাকার সময় মানিপ্ল্যান্ট লাগিয়ে সেটার বাম্পার ফলন ঘটিয়ে এর কাটিং মেয়েমহলে বিতরণের ঘটনাও বলে ফেলল। সাথে বলল এসব যেন শাওলীর কানে না যায়, তাহলে অনর্থ হয়ে যাবে।
কাজ শেষ করে এসে গোসল করে নিল অধরা। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর বড়রা বিশ্রাম নিতে চলে গেলে আবার শিশির অধরার ঘরে আড্ডা বসল। গল্পে গল্পে ওদের হানিমুনের কথা উঠলে শিশির মন খারাপ করে বলল, “নতুন চাকরি। বিয়ের জন্য ছুটি দিয়েছে তাই অনেক। হানিমুনের জন্য ছুটি দেবার প্রশ্নই আসে না।”
অধরা বলল, “আমারও সামনে পরীক্ষা। যেতে পারব না।”
লিলি তখন হুট করে বলে বসল, “আমার জামাই আমাকে হানিমুনে কোথাও না নিলে বলব তাহলে বাড়িতেই হানিমুন করতে হবে, তাও সবার সামনে।”
ওর কথা শুনে প্রথমটায় সবাই খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও এরপর একযোগে হাসিতে ফেটে পড়ল। শুধু শিশির ভুরু কুঁচকে তাকাল জানালার বাইরে। অধরা খেয়াল করল সেটা। তাকিয়ে রইল শিশিরের দিকে। ওকে এত সুন্দর লাগছে এই লুকে! উফ! এই দলবল না থাকলে সে নিশ্চিত এখন একটা চুমু খেয়ে ফেলত!
আরো কিছুক্ষণ গল্পগুজবের পর ঠিক হলো বিকেলে সবাই মিলে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাওয়া হবে।
ঘুরতে গেলে সাজগোজও করতে হবে৷ তাই মামাতো বোনেরা সব চলল নিজেদের ঘরে। যাবার সময় শাওলীকেও বলে গেল গেলে তৈরি হয়ে নিতে। অদিতি শিশির অধরাকে তৈরি হতে বলে বেরিয়ে গেল বাইরের বাগানটা ঘুরে দেখবে বলে।
সবাই বেরিয়ে গেলে অধরা দরজা দুটো আটকে দিয়ে এসে এতক্ষণের মনের ইচ্ছেটা পূরণ করেই ফেলল।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু