#মায়ামঞ্জরী
পর্ব- ৪২
ডেভিডের এপার্টমেন্টে দুটো দিন প্রচন্ড গুমোটভাবে কেটে গেল। ডেভিড অজস্রবার চেষ্টা করে গেল ইভার সাথে ভুল বোঝাবুঝিটা মিটিয়ে ফেলতে, কিন্তু ইভা তার কোনো কথা শোনার চেষ্টাও করল না৷ তৃতীয় দিন রাতে ডেভিড ফিরে দেখল ইভা সোফায় বসে আছে চুপচাপ। ডেভিডকে দেখে ইভা ঘোষণা করল, সে একটা এপার্টমেন্ট পছন্দ করে এসেছে৷ পরের মাসে সেখানে উঠে যাবে৷ এই মাসের বাকি বারোদিন সে এখানে থাকবে।
ডেভিড প্রচন্ড আঘাত পেল ঘটনাটায়। সে আস্তে আস্তে ইভার কাছে গিয়ে বসল। ওর হাত ধরে বলল, “ইভা, প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড…”
ইভা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াল৷ ডেভিডকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে “গুড নাইট” বলে চলে গেল ওপরে।
পরদিন সকালে সে ডেভিডের ঘরে ঢুকে তার ডেস্কের ওপর একটা খাম রেখে চলে গেল। ডেভিড তখন সদ্য গোসল সেরে বেরিয়েছে। ইভার খাম দেখে দৌড়ে গিয়ে সেটা তুলে নিল সে। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো কিছু ডলার আর একটা চিরকুট। তাতে লেখা, “আমি যে ক’দিন তোমার বাড়িতে ছিলাম তার ভাড়া।”
ডেভিড হতবার হয়ে দাঁড়িয়ে রইল বহুক্ষণ৷ সে যখন জামাকাপড় পরে নিচে নামল ততক্ষণে ইভা বেরিয়ে গেছে। কথা আর হলো না তাদের৷ সেদিন রাতেও ডেভিডের ফিরতে দেরি হয়ে গেল। ততক্ষণে ইভা শুয়ে পড়েছে।
ডেভিড চিন্তায় পড়ে গেল। ইভার ভুলটা যে করেই হোক ভাঙাতে হবে। আর মাত্র এগারোদিন হাতে আছে। এর মধ্যে ইভাকে রাখতে না পারলে চিরতরে হারাতে হবে।
বহু ভেবেও কোনো কূলকিনারা বের করতে পারল না সে। ক্যাম্পাসে গিয়েও কাজকর্মে মন বসল না। ক্যাফেটেরিয়ায় মনমরা হয়ে বসে রইল প্রায় সারাদিন। বিকেলের দিলে অ্যাঞ্জেলা নামের একটা মেয়ে ওর পাশে এসে বসল। মেয়েটার চেহারায় প্রচন্ড মায়া মায়া ভাব আছে। সে সবার সমস্যা সমাধান করে দিতে চায়।পেছনে ওর একটা প্রচলিত নাম আছে, ন্যানি।
অ্যাঞ্জেলা ডেভিডের হাতের ওপর হাত রেখে বলল, “আমি জানি পল, সোফির সাথে ব্রেকআপের জন্য তুমি ভীষণ আপসেট। কিন্তু এখন তো কিছু করার নেই তাই না?”
ডেভিড ইতস্তত করে বলল, “আসলে আমি একটা সমস্যা নিয়ে কনফিউজড। কিভাবে সমাধান করব বুঝতে পারছি না।”
অ্যাঞ্জেলা হেসে বলল, “তুমি আমাকে বলতে পারো সমস্যাটা।”
“স্যরি অ্যাঞ্জেলা। ইট’স সিক্রেট!”
অ্যাঞ্জেলা একটু ভেবে বলল, “ওকে! আই ডোন্ট মাইন্ড। তুমি চাইলে তোমার সমস্যা এআইকে জিজ্ঞেস করতে পারো। চ্যাটজিপিটির সাথে তোমার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধান পেতেও পারো। যদি সেটা কমন সমস্যা হয় তাহলে। আর যদি শারিরীক বা মানসিক কোনো সমস্যা হয় তাহলে প্লিজ কোনো কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করো। তোমাকে খুব বেশিই আপসেট দেখাচ্ছে।”
অ্যাঞ্জেলা চলে গেলে ডেভিড সত্যিই চ্যাটজিপিটি নিয়ে বসল। জিজ্ঞেস করল, কিভাবে প্রেমিকার ভুল বোঝাবুঝি দূর করা যায়? চ্যাটজিপিটি ওকে অনেক সলিউশন দিলেও ডেভিডের পছন্দ হলো দুটো-
1. Put yourself on her shoe
2. Surprise her
ডেভিড ইভার জায়গা থেকে পুরো ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করল। তারপর ভাবতে লাগল কোন সারপ্রাইজ দিলে ওর মন ভালো হতে পারে। অনেক ভেবে শেষে ওর মনে পড়ল পরশু রবিবার। কোথাও ঘুরতে যাবার প্ল্যান করা যায়৷ ঘুরতে গেলে অনেক সাফাই গাওয়া যাবে। তার আগে ভুলটা ভুল হিসেবে রেখে ওকে রাজি করাতে হবে যাবার জন্য।
তক্ষুনি সে জায়গা খুঁজে বের করে ফেলল। রিলাক্সে ঘুরতে যাবার জন্য দ্বীপের থেকে ভালো আর কিছু হয় না। সে সবচেয়ে কাছের দ্বীপ ক্যাটালিনা আইল্যান্ডে যাবার জন্য ফেরি আর রাতে থাকার জন্য একটা হোটেলের রুম বুক করে ফেলল। অনেকগুলো টাকা এডভান্স দিয়ে দিতে হলো। এখন সে ইভাকে সেখানে না নিয়ে ছাড়বে না।
কাজ শেষে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ডেভিড। আজ সারাদিন কোনো কাজ করা হয়নি। লক্ষ্যের এত কাছে পৌঁছে এভাবে হেলাফেলা করাটা উচিত হচ্ছে না। কাজে ফোকাস থাকতে হবে সবার আগে। সে চলে গেল নে/শাখোরদের আড্ডার কাছাকাছি জায়গায়। কাছে গেলে আজও তাকে জোরাজুরি করবে ওরা, জানে সে। ডাক্তারের নিষেধ আছে কিছুদিন এর থেকে দূরে থাকার জন্য। এজন্য দূর থেকেই লক্ষ্য রাখছে সে।
কাজ শেষে আজ দ্রুতই বাড়ি ফিরল ডেভিড। ইভা তখন ডিনার তৈরি করছে। ডেভিড ওর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে লাগল৷ এটা ওটা এগিয়ে দিল, খাবার টেবিলে নিতে সাহায্য করল। সাধারণত সকালের খাবার ডেভিড তৈরি করে, আর রাতেরটা ইভা। এভাবেই চলছিল। নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি এখনো। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আলাপ জমানোর চেষ্টা করল ডেভিড, কাজ হলো না। ইভা ওকে পাত্তাও দিল না৷ এমনভাবে কাজ করতে লাগল যেন এখানে সে একা।
খেতে বসে ডেভিড খুব ঠান্ডা গলায় অনুরোধের সুরে বলল, “ইভা, তুমি তো চলেই যাবে। তার আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবে? শুধুমাত্র একটা রিকোয়েস্ট। এরপর তোমার কাছে কোনোদিন কোনোকিছু চাইব না কথা দিলাম।”
ডেভিডের গলার সুরে এমন একটা আকুতি ছিল যে ইভা ওর দিকে না তাকিয়ে পারল না। কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “কী চাও?”
“এই উইকেন্ডে আমার সাথে ঘুরতে যাবে? আগামীকাল বিকেলে বের হব, পরশু বিকেলে ফিরে আসব।”
ইভা সরাসরি না করে দিল। খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
ডেভিড আবারো অনুরোধ করল কয়েকবার। ইভা কানে নিল না।
রাতে ইভা শুতে গেলে ডেভিড একটা চিঠি লিখে ওর দরজার নিচের ফাঁক দিয়ে সেটা ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা নক করে জানিয়ে দিল বিষয়টা৷ ইভা উঠে এসে চিঠিটা হাতে নিল। তাতে লেখা, “ট্রিপের প্ল্যানটা করেছে রকম্যান। আমার কাজের অগ্রগতির জন্য আর তোমাকে ওর পছন্দ হয়েছে দেখে আমাদের একটা ছোট্ট গিফট দিতে চেয়েছে সে। না গেলে খুব খারাপ দেখায় না বলো? ও ভেবেছে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। তখন কিছু বলিনি, এখন যদি সত্যিটা বলতে যাই তাহলে ও আমাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করবে। আমার চাকরিটা নিয়ে ঝামেলায় পড়ে যাব৷ প্লিজ ইভা, এবারের মতো আমার জন্য রাজি হও? বন্ধু ভেবে অন্তত রাজি হও?”
ইভা চিঠিটা টেবিলের ওপর রেখে দিল। সিদ্ধান্ত নিল সে যাবে। ডেভিডের কাছে তার অনেকগুলো ভালো সময়ের ঋণ রয়েছে। সেজন্য হলেও যাবে সে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, সে ডেভিডকে ভালোবেসে ফেলেছে। তাকে এতটা অগ্রাহ্যও সে করতে পারবে না।
ডেভিডের সারারাত ঘুম হলো না ইভা কী জবাব দেবে সেই চিন্তায়। সকালে নাস্তার টেবিলে ইভার সাথে দেখা হলো। ইভা খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, “আমি তৈরি থাকব। ক’টায় বের হচ্ছি?”
ডেভিড সামান্য কাঁপা গলায় উত্তর দিল। মনে মনে বলল, “স্যরি ইভা, তোমাকে মিথ্যে বলে নেবার জন্য আমি সত্যিই স্যরি। আমার যে আর কোনো উপায় ছিল না।”
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু
#মায়ামঞ্জরী
পর্ব-৪৩
পরদিন বিকেলে ইভা তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরল। ডেভিডের ওপর প্রচন্ড রাগ আর বিতৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও তৈরি হলো সে। সে চায় না তার জন্য ডেভিডের কোনোরকম ক্ষতি হোক। এতকিছুর পরেও তার অবচেতন মন যে ডেভিডের জন্য ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে সেজন্য নিজের কাছেই অবাক লাগছে ইভার।
সে চমৎকার একটা নীল রঙের জামা পরল৷ সাথে মুক্তার হালকা জুয়েলারি পরে নিল। সাজল সুন্দর করে। ওর রেশমী বাদামী চুলগুলো খুলে দিল। আয়নাতে নিজের দিকেই কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল৷ ইভা। সোফির সাথে মনে মনে নিজের তুলনা করল। সোফি অত্যন্ত আবেদনময়ী সন্দেহ নেই। কিন্তু ওর মধ্যে কমনীয়তা নেই, ওর চোখে ভালোবাসা নেই, ব্যক্তিত্বে দৃঢ়তা নেই৷ তাই সৌন্দর্যের দেবী হলেও তাকে ভালোবাসা যায় না।
ভাবতে ভাবতে ইভা নিজেই চমকে উঠল। এসব ভাবছে কেন সে? সোফির সাথে তুলনা করে নিজেকে বড় ভাবছে কেন? সোফি তাকে চেনেও না৷ আর সে মনে মনে হিংসেয় মরে যাচ্ছে! অথচ যার সত্যিকারের দোষ, যে তাকে ঠকিয়েছে তার সাথে ঠিকই ঘুরতে যাবার জন্য তৈরি হয়ে আছে! ইভা লজ্জা পেল মনে মনে।
আয়নার সামনে থেকে উঠে সে পায়চারি করতে লাগল করিডোরে। এতক্ষণে ডেভিডের চলে আসার কথা। আসছে না কেন?
******
অধরা ব্যস্ত ছিল বাগানের কাজে। তার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে কয়েকটা গাছ মরে যাবার দশা হয়েছিল৷ এদের আসার পর থেকে সেবা শুশ্রূষা করে সে সুস্থ করবার চেষ্টা করছে। অনেকটা সময় তার এদের পেছনেই চলে যায়৷ একটা গাছের পাতা ছেটে দিতে দিতে শিশিরের ডাক শুনল সে। শিশির দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রেলিংয়ে ঝুঁকে আছে।
“কী হয়েছে?”
“তোমার বান্ধবী কণা ফোন করছে অনেকক্ষণ ধরে।”
অধরার ঠিক তখনই মাথায় এলো ব্যাপারটা। আজ তার রেজাল্ট দেবার কথা! সে এত বড় ব্যাপার ভুলে বসে আছে! কথাটা মাথায় আসতেই সে ছুটে চলে গেল ওপরে। শিশির রেজাল্টের কথা জানে না। সে ওর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে আবার ছুটে নিচে বাগানে চলে এলো। কণাকে কলব্যাক করল৷ কণা কল ধরেই বলল, “কিরে, তোর কি দুনিয়াদারির কোনো খবর নাই নাকি? হিরোকে বিয়ে করে একেবারে পাক্কা গিন্নি হয়ে গেলি যে? রেজাল্টের কথা মনে আছে?”
“উফ! বকবক না করে রেজাল্ট জানলে বল।”
“পুরো দুনিয়া রেজাল্ট জানে৷ এক তুই-ই জানিস না! হোয়াটসঅ্যাপ চেক কর। রেজাল্টের ছবি গ্রুপে দেয়া হয়েছে৷”
অধরা আর কোনো কথা না বলে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকল। রেজাল্ট দেখে সে কিছুক্ষণ স্থাণুবৎ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ওর চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। ডিপার্টমেন্টে থার্ড হয়েছে সে। যা আশা করেছিল তাই পেয়েছে। বিয়ে করে সত্যিই মাথা খানিকটা এলোমেলো হয়েছে তার। যতক্ষণ মায়ামঞ্জরীতে থাকে, পৃথিবীর আর কিছু মনে থাকে না। নিজেকেও মনে থাকে না৷ সারাজীবন যেখানে রেজাল্টের আগের দিন থেকে গলা দিয়ে খাবার নামত না তার, সেখানে আজ সব ভুলে বসেছিল। কেমন করে সম্ভব? এই রেজাল্টের জন্য সে কম কষ্ট করেনি।
এসব ভাবতে ভাবতেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল সে। নিজেদের ঘরে ঢুকল। তাকে আনমনা দেখে শিশির জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে? এনিথিং সিরিয়াস?”
অধরা কয়েক পলক শিশিরের দিকে চেয়ে রইল৷ তারপর ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। শিশিরের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করল। দিনে দুপুরে এহেন আচরণে শিশির বেশ অবাক হলো। কোনো দুর্ঘটনা ঘটল না তো? সে অধরাকে ধরে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ।
আবেগের ধাক্কাটা কাটলে অধরা নিজেই মুখ তুলে বলল, “আমার রেজাল্ট হয়েছে।”
শিশির এবার খানিকটা ভয় পেয়ে গেল। রেজাল্ট হয়েছে বলে কাঁদছে মানে কি ফেল করল অধরা? তার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হলো না।
অধরা ওর গায়ে চিমটি কেটে বলল, “কী হলো? রেজাল্ট জানতে চাও না?”
“উ! হু! কী হয়েছে রেজাল্ট?”
“আমি ডিপার্টমেন্টে থার্ড হয়েছি। সিজিপিএও ভালো।”
শিশির একটু অবাক হয়ে হেসে ফেলল। “অভিনন্দন! কিন্তু তুমি কাঁদছিলে কেন?”
অধরা একটু লজ্জা পেয়ে সরে গিয়ে বলল, “জানি না।”
“ফার্স্ট হতে চেয়েছিলে?”
“উহু, যা হয়েছি তাই অনেক।”
“তবে?”
“বললাম তো জানি না।”
শিশির ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “তার মানে আমার বউ এখন গ্র্যাজুয়েট?”
অধরা খানিকটা লাল হয়ে বলল, “হুম।”
“খবরটা সবাইকে দেবে না?”
“হুম।”
“দিয়ে এসো।”
অধরা নিচে নেমে যেতেই শিশির বেরিয়ে গেল মিষ্টি কিনতে।
সেদিন সকালটা ভারি সুন্দর গেল। সবাই খুশি হলো অধরার রেজাল্টে। মিষ্টিমুখ করা হলো। মা নিজেই রান্না করতে এলেন। অধরার পছন্দের খিচুড়ি রান্না হলো।
বিকেলে শিশির যখন কাজ করছে তখন অধরা ওদের বন্ধুদের গ্রুপে ঢুকল। সবাই এখন রেজাল্টের পর চাকরিবাকরি নিয়ে কথা বলছে৷ একটা কোম্পানিতে জব সার্কুলার দিয়েছে কিছুদিন হলো। সেটাতেই অ্যাপ্লাই করা নিয়ে কথা হচ্ছে। সে এসবের ভেতর এতদিন ছিলই না দেখে খবরও নেই কোনো। এখন হুশ ফেরাতেই বোধহয় বেশ কয়েকদিনের কনভার্সেশন ভালো করে পড়ে সবকিছু জেনে নিল সে। তারপর উঠে শিশিরের কাছে চলে গেল।
শিশির কাজ থেকে মুখ তুলে বলল, “একটু চা হবে জনাবা?”
“হবে। তবে আমার একটা কাজও করে দিতে হবে।”
“কী শুনি?”
অধরা চাকরির কথাটা বলে ওর জন্য অনলাইনে আবেদন করে দেয়ার কথা বলল। শিশির কয়েক পলক চেয়ে রইল অধরার দিকে। ওর বোধহয় এটা এতদিন মাথায়ই আসেনি যে অধরাও চাকরিবাকরি করতে পারে, তার চাকরি হয়ে যেতে পারে। কথাটা মাথায় আসেনি বলে সে খানিকটা অবাকও হলো। বলল, “আচ্ছা করে দেব।”
“ওকে। আমি চা বানিয়ে আনছি।”
শিশির আবার ল্যাপটপে ডুবে গেল। অধরা চা বানাতে নিচে নামল। তার কেন যেন মনে হলো সে চাকরি করতে চায় শুনে শিশির অতটা খুশি হলো না৷ এর কারন কী? সে চাকরিবাকরি করলে তো বরং ওর সাহায্য হবে। ওর আরো খুশি হওয়া উচিত।
সে নিচে নামতেই বাইরে গেট খোলার শব্দ হলো। একটা বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ঢুকল শাওলী৷ তার চোখমুখ অন্যরকম লাগছে।
এসেই সে জড়িয়ে ধরল অধরাকে। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছো অধরা? কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হলো!”
কুশল বিনিময় শেষে সে চলে গেল মা বাবার সাথে দেখা করতে। ব্যাগপত্র নিয়ে শাওনও ভেতরে ঢুকল। অধরা রান্নাঘরে গিয়ে বেশি করে চায়ের পানি চড়িয়ে দিল।
মায়ের ঘরে গিয়ে সে প্রথম শুনতে পেল, শাওলী প্রেগন্যান্ট।
মা হাসিমুখে বললেন, “মিষ্টি কোথায় শাওন? খালি মুখে সুখবর চলবে?”
সেদিন আবার বাড়িতে মিষ্টি এলো। দ্বিতীয়বার সুখবরের মিষ্টি খেল সবাই।
******
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। চারদিক ভরে গেল পাখির কিচিরমিচির শব্দে। দিনের আলো মরে গিয়ে আকাশ ছেয়ে গেল রাতের গুড়ো গুড়ো অন্ধকারে। পরিষ্কার আকাশে তারা ফুটল। দেখা গেল ভাঙা চাঁদ। সেদিকে চেয়ে থেকে থেকে চোখে পানি চলে এলো ইভার।
ডেভিড আসেনি। আবারও তাকে ধোঁকা দিল ডেভিড! কেন ঘুরতে যাবার মিথ্যেটা বলল তাকে? ইভার ইচ্ছে হলো সব সাজগোজ খুলে ছুঁড়ে ফেলতে। চিৎকার করে কাঁদতে। তার জীবনটা কি তবে পুরোটাই ধোঁকা খাবার জন্য?
রাত বাড়তে বাড়তে আটটা বেজে গেল। ইভা এতক্ষণ রাগে দুঃখে মাথা গরম করে বসেছিল। হঠাৎ তার মনে হলো ডেভিড ঠিক আছে তো? তার তো এরকম করার কথা না। অন্তত ওর সাথে ডেভিড কখনোই এরকম মজা করবে না। ওর কিছু হয়ে গেল না তো সেদিনকার মতো?
ইভা তক্ষুনি ফোন করল ডেভিডকে। ফোন বন্ধ। আরও কয়েকবার ট্রাই করল৷ প্রতিবারই ফোন বন্ধ এলো।
ইভার চিন্তা বাড়তে লাগল। বুক ধুকপুক করতে লাগল। কোনো উপায়ান্তর না দেখে সে রকম্যানকে ফোন করল। রকম্যান জানালেন তিনি কিছুই জানেন না। এমনকি তিনি ওদের জন্য কোনো ট্রিপের আয়োজনও করেননি।
ইভা পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গেল। কী হচ্ছে, কী হয়েছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। এদিকে ডেভিডের কোনো পাত্তা নেই। রকম্যান খোঁজ নিয়ে জানাবে বলেছে। তাকেও এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। একা বাড়িতে বসে ইভা ভীষণ ভয়ে কাঁপতে লাগল।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু
#মায়ামঞ্জরী
পর্ব- ৪৪
ইভা সারারাত কেমন করে কাটাল সে নিজেও বলতে পারবে না। পুরোটা রাত সে নিচতলায় কাউচে বসে পার করে দিল। একেকবার উঠে দেখে এলো বাইরে থেকে কেউ এসে দরজার সামনে পড়ে রইল কি না। কিন্তু বাইরে রাতের অখন্ড নিরবতা বাদে আর কিছুই পেল না। তার ভয় রাত বাড়ার সাথে সাথে বেড়েই চলল। নিজেকে সে অনেক বোঝাবার চেষ্টা করল, কেন ডেভিডকে সে এত মিস করছে? তার তো তাকে ঘৃণা করা উচিত! কিন্তু কোনোভাবেই ডেভিডের চিন্তা সে মাথা থেকে দূর করতে পারল না এক মুহূর্তের জন্যও।
বোধহয় লক্ষ বছরের সমান লম্বা একটা রাত কাটল ইভার। ভোর হলে তার ভয় কিছুটা কমে এলো। এর মাঝে সে অসংখ্যবার ডেভিড আর রকম্যানকে ফোন করেছে৷ দুজনেরই ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। ইভা কোনো উপায় না পেয়ে সকাল সকাল ক্যাম্পাসে চলে গেল।
কিন্তু রবিবারে সাপ্তাহিক ছুটি। ক্যাম্পাস বন্ধ। কেউই আসেনি। ইতস্তত এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করে কিছু না পেয়ে সে চলে গেল তার বান্ধবী নেলীর বাসায়। নেলীর সাথেই ক্যাম্পাসে এসে ডেভিডকে দেখেছিল সে। ও ডেভিডকে চেনে। হয়তো কিছু বলতে পারবে। কিন্তু নেলীকে আসল কথাটা বলা যাবে না৷ ডেভিডকে সম্বোধন করতে হবে পল হিসেবে৷ এসব ভেবে নিয়ে নিজেকে তৈরি করেই গেল ইভা।
নেলীর সামনে যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে গেল ইভা৷ নেলী প্রচুর কথা বলতে পছন্দ করে। ও থাকে ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে। ওর বয়ফ্রেন্ড নিক বেশ ভদ্র। ইভা ওকে এমনিতে পছন্দই করে৷ কিন্তু আজ ওর উপস্থিতি ইভার আসল কথায় বাঁধা দিতে থাকল। ছেলেটা ক্রমাগত এটা সেটা বলে যাচ্ছে। নেলীকে বেশিক্ষণ ক্যাম্পাসের কথায় থাকতে দিচ্ছে না। অথচ ইভার এখন সবচেয়ে বেশি দরকার ওর ক্যাম্পাসের আপডেট।
প্রায় আধঘন্টা পর, যদিও ইভার মনে হলো এক যুগ পর নিক উঠল ব্রেকফাস্ট বানানোর জন্য। একটু বেশিই সকালে চলে আসায় ইভা নিজেও ব্রেকফাস্ট করে আসেনি, ওরাও তখনো করেনি।
নিক জানাল সে নিজেই তিনজনের ব্রেকফাস্ট তৈরি করবে। ইভাকে অনুরোধ করল দিনটা ওদের সাথে কাটাতে। ইভা তখন রাজি হলো। তবে সে জানে, কাজ হয়ে গেলেই কোনো একটা অযুহাত তৈরি করে ফেলতে হবে বের হবার।
নিক উঠলে ক্যাম্পাসের বিষয়ে কথা তুলল ইভা। সোজা সোফি আর পলের সেদিনকার ওয়াশরুমের ঘটনাটা তুলল। নেলী বেশ ইন্টারেস্টিং টপিক পেয়ে আনর্গল সব কথা বলে যেতে থাকল। সোফি আর পলের রিলেশন, ওদের ঘোরাঘুরি, সোফির দেয়া চ্যালেঞ্জ, ওর সাথে পলের ডেটে যাওয়া, আর শেষ পর্যন্ত পল ভেগে যাওয়ায় আর্থারের সাথে ডেট হয়ে যাওয়ার ঘটনা।
নেলী তো ভীষণ মজা পেল এসব গল্প করে, কিন্তু ইভার মাথা ততক্ষণে হ্যাং হবার জোগাড়৷ তার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল ডেভিড সেদিন সোফির সাথে সময় কাটায়নি! ডেভিড তাকে চিট করেনি! বরং সেই ওকে ভুল বুঝেছে। ওকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি, এমনকি ওর সাথে নিষ্ঠুর ব্যবহারও করেছে। একই সাথে দুশ্চিন্তা আর অপরাধবোধ জেঁকে ধরল ইভাকে।
ইভার চোখমুখ হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে দেখে নেলী অবাক হয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে ইভা? তুই ঠিক আছিস?”
ইভা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তখনই তার ফোনটা বেজে উঠল। রকম্যানের কল! কল ধরলে লোকটা বলল, “দেখা করতে পারবে ইভা? ইমারজেন্সি।”
ইভা তৎক্ষনাৎ জবাব দিল, “আমি আসছি।”
নেলীর কাছ থেকে খুব জরুরি কাজ বলে বিদায় নিয়ে ইভা চলল রকম্যান যেখানে দেখা করতে বলেছে সেই ঠিকানায়। যাবার সময় উবারে বসে ইভা কোনোভাবেই কান্না থামাতে পারল না৷ তার চোখ দিয়ে বন্যার মতো বইতে লাগল নোনাজল।
*********
সেদিন চাকরির জন্য অ্যাপ্লাই করার পর ইন্টারভিউয়ের ডাক পড়ল অধরার। কিছুদিনের মধ্যে চাকরিটা হয়েও গেল। অধরা কল্পনাই করেনি এত দ্রুত চাকরি হয়ে যেতে পারে। অবশ্য ওর রেজাল্ট ভালো, যে সাবজেক্টে পড়েছে তারও আলাদা ডিমান্ড আছে। কয়েকদিনের মধ্যে ওদের ক্লাসের মোটামুটি বেশিরভাগেরই চাকরি হয়ে গেল। চাকরিতে জয়েনিং সামনের মাস থেকে। অধরার মনে হলো তার দিনগুলো খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
শিশিরের ব্যাপারে অধরার একেকবার মনে হয় সে ওর চাকরি করার ব্যাপারটা তেমন পছন্দ করছে না, আবার একেকবার মনে হয় শিশির আসলে খুবই খুশি৷ অধরা বুঝতে পারে না সমস্যাটা তার চিন্তাভাবনার নাকি শিশিরের।
শিশির অবশ্য অত ভাবার সময়ও পায় না। তাকে তার কাজের জন্য ব্যস্ত থাকে হয় প্রচন্ড। অনলাইনে কাজ হলে কী হবে, একটা নির্দিষ্ট পরিমান সময় তাকে দিতেই হয় সেখানে। তার ওপর রাত জেগে সে নতুন কিছু বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে। অনেক রাত পর্যন্ত বসে থাকে সে ল্যাপটপ সামনে নিয়ে। আগের মতো ভোরে উঠে চায়ের কাপে গল্প জমে না তাদের। শিশির ঘুমাতেই যায় ভোরের খানিক আগে। অধরা একাই চা বানিয়ে শীতের শেষদিকের কুশায়া দেখতে দেখতে কাপে ছোটো ছোটো চুমুক দেয়।
আগের মতো প্রেমও হয় না তাদের। দুজনেই সারাদিন বাড়িতে, তবুও গল্প করার ফুরসত তেমন মেলে না। অধরা প্রায়ই ভাবে, এভাবেই বুঝি বিয়ের পর প্রেমের মৃত্যু ঘটে? কিন্তু তাদের বেলায় খুব জলদিই হয়ে গেল না? এমন কি হবার কথা ছিল?
এদিকে শিশিরের সাথে সম্পর্ক যেমনই হোক, মায়ামঞ্জরী তাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলছে একটু একটু করে। ওর গাছেরা নতুন পাতা দিচ্ছে, ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর। অনেকগুলো গাছ ও ঝোলানো টবে করে ঝুলিয়ে দিয়েছে দোতলার বারান্দায়। ওগুলোতে ফুল ফুটে পুরো বারান্দা রঙিন দেখায়। শেষ বিকেলে মুগ্ধ হয়ে বসে সেসব দেখে অধরা। বাগানে খেলা করা কাঠবিড়ালিরা পর্যন্ত ওর আপন হয়ে গেছে।
কিন্তু বাড়ির ভেতরটা এখনো বড্ড অগোছালো। মা একেকদিন ঘরের হাল ধরতে এগিয়ে আসেন, একেকদিন গা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকেন৷ শাওলী বেশ কিছুদিন এখানেই আছে। কনসিভ করার পর থেকে নাকি তার এখানের আবহাওয়াটা বেশ লাগছে! ওর বাপের বাড়িটা শহরের কেন্দ্রে হওয়ায় ভীষণ কোলাহল আর বায়ু দূষণে তার দমবন্ধ লাগে।
শাওলীর অতিরিক্ত যত্নটুকু নেবার কেউ নেই বলে ওর সাথে একটা সহকারী মেয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে ওর বাপের বাড়ি থেকে। মেয়েটা কাজকর্ম তেমন কিছুই করে না৷ শুধু সেজেগুজে ঘোরাফেরা করে আর উদ্ভট সব কথাবার্তা বলে। ওদের আগের বাড়িও এই মেয়ে দেখেছে। সেটার সাথে মায়ামঞ্জরীর তুলনা করতে থাকে প্রতিটা ক্ষেত্রে। মায়ের সামনে যখন এসব বলে তখন মা আরো বেশি মন খারাপ করেন। অধরা মেয়েটাকে কয়েকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে ব্যাপারটা, কিন্তু বোঝাতে পারেনি।
রান্নাটা অধরাই করে বেশিরভাগ দিন। ও অফিসে যেতে শুরু করলে হয়তো রুনু খালা রাঁধবেন আবার। তখন আবার দেখা যাবে কেউ খেতে পারছে না৷ রান্নার লোক রাখা দরকার৷ সেরকম কাউকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ও অফিসে গেলে সারাদিন শিশির একা হয়ে যাবে এটা ভেবেও খারাপ লাগে। কথা না বললেও সারাক্ষণ চোখের সামনে থাকারও একটা আলাদা ব্যাপার আছে৷
এদিকে সে অফিসে যাবে আর শিশির বাসায় কাজ করবে এটা সে নিজেই মানতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে সে ওভারথিঙ্কিং করছে, স্টেরিওটাইপ চিন্তা করছে, কিন্তু নিজেকে আটকাতেও পারছে না এসব ভাবনা থেকে।
এমনই এক ভোরে সে চা খেতে খেতে আবোল তাবোল ভাবছে, এমন সময় শাওলী এসে হাজির হলো বারান্দায়। অধরার কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে বলল, “ঘুম হয় না জানো?”
অধরা জিজ্ঞেস করল, “চা খাবেন ভাবি?”
শাওলী কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল, “উহু, আমার বরং অন্যকিছু খেতে ইচ্ছে করছে।”
“কী?”
“নদীর পাড়ের হাওয়া।”
“এখন?”
“হুম। ভোরবেলা দারুণ হাওয়া হবে তাই না? চলো না যাই। যাবে?”
“আমরা দু’জন?”
“হুম? কী সমস্যা? দশ মিনিটের পথ, গিয়েই চলে আসব।”
অধরা বলল, “ঠিক আছে। চলুন। কিন্তু কাউকে বলে যাব না? কেউ তো ওঠেনি এখনো।”
“শাওনের আজ অফ ডে। ও দেরিতে উঠবে। শিশিরও তো কত রাতে ঘুমায়৷ আমি জেগে জেগে শুনি ও বারান্দা দিয়ে হাঁটছে। আর মা বাবা জেগে থাকলে বলে যাব। চলো নিচে গিয়ে দেখি।”
ওরা নিচে নেমে দেখতে পেল মা উঠে পড়েছেন। মা এত সকালে সাধারণত ওঠেন না। তার নাকি আজ অস্থির লাগছিল বলে উঠে পড়েছন৷ ওদের বের হবার কথা শুনে বললেন, “চলো আমিও যাই তোমাদের সাথে।”
অধরা ভারি অবাক হলো। মাকে সহজে বাড়ি থেকে বের করা যায় না। আজ নিজেই বের হতে চাইছে! মনে মনে খুশিই হলো সে।
তিনজন মিলে বেরিয়ে পড়ল সেই ভোরে। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। দোকানপাট খোলেনি। তবে নদীর দিকে যেতে যেতে খানিক ভিড়ভাট্টা চোখে পড়ল। নদী থেকে ধরে আনা তাজা মাছ বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কিছু দোকানও খুলেছে।
ঘাটের কাছের ভিড়ে সরে গিয়ে ওরা মোটামুটি নির্জন নদীর পাড় ধরে হেঁটে বেড়াল বেশ কিছুক্ষণ। সবারই ভালো লাগল ঘুরতে। সতেজ হয়ে উঠল মন। যেন অনেকদিনের জমা মনের ভেতরকার বিষাক্ত বাতাসগুলো বের করে খানিকটা সতেজ বাতাস টেনে নিল সবাই।
ফেরার সময় তিনজন মিলে দরদাম করে বেশ বড় সাইজের একটা কাতল মাছ কিনে হাসিমুখে ফিরলেন তিন নারী।
ফিরেই নাস্তা বানানোর তোড়জোড় শুরু হলো। মা নিজেই উদ্যেগ নিলেন আজ নাস্তায় শাওলীর পছন্দের স্যান্ডউইচ বানানোর। অধরা এলো সাহায্য করতে। মজার ব্যাপার হলো, শাওলীও যোগ দিল নাস্তা বানানোতে সাহায্য করতে। এই প্রথম ওরা তিনজন গল্প করতে করতে নাস্তা তৈরি করে ফেলল।
এরপর মা নিজেই কিনে আনা মাছটা কেটে ঘোষণা দিলেন তিনিই রাঁধবেন আজ।
সকালের খাবারটাও জমল সবার গল্পে গল্পে। মা অনেকদিন পর কথা বলার বিষয়বস্তু পেয়ে খুব গল্প জুড়ে দিলেন৷ যা যা দেখলেন, মাছ কেনার সময় যা যা হলো সব বলে গেলেন খেতে খেতে। অধরা খেয়াল করে দেখল, শুধু মা খুশি থাকলে বাবা আর ছেলেরা সবাই কতটা খুশি থাকে। মা যদি সবসময় এমন থাকতেন!
**********
ডেভিড চোখ মেলে চাইল। চারদিকে অন্ধকার। মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। সে কোথায় কিছুতেই বুঝতে পারল না। এখন দিন নাকি রাত তাও বুঝল না। চিৎকার করে কাউকে ডাকল সে। কেউ সাড়া দিল না। হয়তো এখানে সে একা। একটা ইঁদুরের দৌড়ানোর মতো আওয়াজ বাদে আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। কোথায় সে? কেমন করে এখানে এলো? দুই হাতে মাথা চেপে ধরল সে। কিছুই মনে পড়ছে না। সে শুয়ে আছে মেঝেতে। ধীরে ধীরে উঠে বসল ডেভিড। উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই মাথায় চক্কর দিয়ে উঠল। ফের বসে পড়ল সে। ভীষণ দুর্বল হয়ে আছে শরীর। তবে ওঠার চেষ্টা করায় তার অন্তত মনে পড়ল তার সাথে কী হয়েছিল৷ আর এখন সে সম্ভাব্য কোথায় থাকতে পারে।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু