মায়ামঞ্জরী পর্ব-৫৭ এবং শেষ পর্ব

0
2

#মায়ামঞ্জরী
পর্ব-৫৭ (শেষ পর্ব)

বোটটা চলছে মসৃণ গতিতে। সমূদ্র প্রশান্ত। আকাশের নীল দূরে মিশে গেছে সাগরের সাথে। একসময় দ্বীপটা খালি চোখে দেখা যেতে থাকল। চমৎকার ছোট্ট একটা দ্বীপ। ওটাই গন্তব্য। ডেভিডের চোখে সানগ্লাস। সে ইভার দিকে চেয়ে বলল, “কেমন লাগছে ইভা?”

ইভা মিষ্টি করে হাসল। অনেকদিন পর তাকে সুন্দর করে হাসতে দেখল ডেভিড। ওর গায়ে সাদা রঙের একটা হাতা কাটা জামা। সাদার মধ্যে হালকা গোলাপি রঙের ছোটো ছোটো ফ্লোরাল প্রিন্ট। খোলা সমূদ্রে বাতাসের মধ্যেও তার এই জামা পরে শীত লাগছে না বলেই মনে হচ্ছে। অথচ এখন শীতকাল চলছে৷ ওর ফর্সা গায়ের রঙ, সাদা জামা আর ঝকঝকে রোদ, সব মিলিয়ে একটা পবিত্র ভাব ফুটে উঠছে। ডেভিডের মনে হলো ইভার দিকে বেশিক্ষণ চেয়ে থাকলে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে।

দ্বীপটা ছোটো। ওক, আয়রনউড গাছ আর ছোটো ছোটো ঝোপঝাড়ে ভর্তি৷ লোকসংখ্যা কম৷ চারদিকে বেশ শান্তি বিরাজ করছে।

দ্বীপে পৌঁছে ওরা ওদের জন্য নির্ধারিত কটেজে পৌঁছে গেল। এখানে অল্প কিছু বিলাসবহুল হোটেল থাকলেও ডেভিডের মনে হয়েছে এখানে থাকতেই বেশি মজা হবে। বাইরে থেকে এই নির্দিষ্ট থিমের কটেজটা দেখতে বুনো কোনো পরিবেশ বলে মনে হলেও ভেতরে আধুনিক সব জিনিসপত্রে ঠাসা। মনে হবে শহরে নিজেদের বাড়িতেই আরামে আছি।

ওরা শাওয়ার নিয়ে খাওয়াদাওয়া সেরে একটু ঘুমিয়ে নিল। খুব ভোরে উঠেছে, আবার জার্নি করে এসেছে বলে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছিল দু’জনেরই৷ বিকেলের দিকে ওরা দ্বীপ দেখতে বের হলো। চমৎকার বালুকাময় সৈকত। মসৃন ঘাসের ওপর বসে ওরা পুরো বিকেলটা কাটিয়ে দিল। সন্ধ্যায় একটা দুটো করে তারা ফুটতে শুরু করলে দু’জন হাত ধরাধরি করে সৈকতে ঘুরে বেড়ালো।

“তোমার পানিতে নামতে ইচ্ছে করছে ইভা?” জিজ্ঞেস করল ডেভিড।

“উহু। তোমার?”

“তোমার হাত ধরে হাঁটার থেকে আর কিছুই আকর্ষণীয় নয় ইভা।”

ইভা শব্দ করে হাসল। সমূদ্রের দিক থেকে জোরে হাওয়া আসতে শুরু করেছে। ইভা দুই হাত খুলে দাঁড়িয়ে চোখ বুজল। ডেভিডকে বলল, “এভাবে দাঁড়াও।”

ডেভিডও দাঁড়াল। ইভা বলল, “দুই হাত খুলে দিলে বাতাস এসে বুকে ধাক্কা খায়। মনে হয় প্রিয় কোনো মানুষ জড়িয়ে ধরছে।”

“তোমার প্রিয় মানুষ পাশেই আছে। তাকে সরাসরি জড়িয়ে ধরলেই পারো।”

ইভা হেসে ডেভিডকে জড়িয়ে ধরল।

দু’জন কটেজে ফিরল বেশ রাত করে। প্রচন্ড ক্ষুধায় তারা তখন কাতর। কোনোরকম খাওয়া শেষে শুয়ে পড়ল ওরা।

ওদের ঘুম ভাঙল ভোরে। তবে সূর্যোদয় দেখা হলো না, আগেই সূর্য উঠে গেছে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে তৈরি হয়ে ওরা কটেজ থেকে বের হয়ে প্রথমবার খেয়াল করল কটেজটার নামটা। ইংরেজি নয়, অন্য কোনো ভাষার নাম। একজন স্টাফকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলে দিলেন, এই কটেজগুলোর মালিক একজন এশিয়ান ভদ্রলোক। তিনি তার মাতৃভাষায় কটেজগুলোর নামকরণ করেছেন। সবারই পড়তে কষ্ট হয়। তবে তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।

মালিক ভদ্রলোকের সাথে ওদের আলাপ হলো বিকেলে। জানা গেল তিনি বাংলাদেশী। যে কটেজটাতে ওরা উঠেছে সেটা তার স্ত্রীর বাপের বাড়ির নামে নাম। বেশ আগ্রহ করেই তার কাছ থেকে শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে নামটা শিখে নিল ইভা আর ডেভিড- মায়ামঞ্জরী।

সেদিন বীচে বসে ইভা বলল, “জানো, মায়ামঞ্জরী নামটা আমার খুব আপন আপন মনে হচ্ছে।”

ডেভিড বলল, “এখানেই থেকে যেতে চাও নাকি?”

ইভা স্বপ্নালু চোখে চেয়ে বলল, “জানি না।”

*******

সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। পুরো এলাকায় যেন আজ ঠিকমতো দিন হয়নি। অদ্ভুত বেগুনী আলো ছড়িয়ে আছে চারদিকে। শিশিরের জীবনেও তাই। তার বুকে গভীর ক্ষত রক্ত ঝরিয়ে যাচ্ছে বারংবার। বাচ্চারা আর অধরা সবাই মৃত্যুর সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। আর সে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। বসে বসে আর কোনোভাবেই মনকে স্থির করতে পারছে না। শুধু মনে হচ্ছে সে সবকিছুর জন্য দায়ী।

তখন গাড়িটা শাওনকে চালাতে দিলে এক্সিডেন্ট হতো না। তার গোঁয়ার্তুমির কারনে এক্সিডেন্ট হয়েছে। সে বরাবরই অধরার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে। অধরার মা বাবা বারবার বলেছিলেন তাদের বাড়িতে থাকলে সেখান থেকে হাসপাতাল অনেক কাছে হবে। যে কোনো সময়ে চট করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবে। সে শোনেনি। জোর করে অধরাকে এখানে রেখেছে। ভেবেছে সে সব ম্যানেজ করতে পারবে। তার মতো করে তার বউকে কেউ দেখে রাখতে পারবে না। অথচ সেই সবচেয়ে বেশি ব্লান্ডার করেছে।

অধরা কিছুদিন খুব মন খারাপ করেছিল বাপের বাড়ি যেতে না দেয়াতে। শিশির সেটাও পাত্তা দেয়নি৷ অধরার অনেক রাতে ঘুম হতো না। সে প্রায়ই বলত, ওর নিজের পুরানো ঘরে শুলে হয়তো ঘুম আসবে। শিশির শুনে হাসত। বলত, এসব মনের ভুল।

যদি অধরার কিছু হয়ে যায়, তাহলে কি শিশির এই অপরাধবোধ থেকে কোনোদিন মুক্তি পাবে?

অধরার চাকরি করাটা তার কখনো তেমন পছন্দ ছিল না। অধরা স্বাবলম্বী হয়ে যাবে সেটাতে তার সমস্যা ছিল না। কিন্তু সে থাকতে তার বউ কষ্ট করে চাকরি করছে এটা দেখতে তার ভালো লাগত না৷ অধরা চাকরি ছাড়ার পর তাই সে যেন ইন্সিকিউরড ফিল না করে, আর যেন পরে চাকরির চিন্তাই না করে সেজন্য সে ওকে না চাইতেই টাকা দিত সময়ে অসময়ে। কিন্তু সবকিছু কি টাকা দিয়ে হয়? শেষের দিকে অধরা খুব একা একা হয়ে গিয়েছিল।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, অধরা কেন তাকে টুইন বেবির কথা বলল না? অভিমান থেকে নাকি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল? ঠিক এই পরিস্থিতিতে তার মনে হলো অধরা অভিমান করেই বলেনি। সব মিলিয়ে হয়তো বিশাল অভিমানের পাহাড় জমে গিয়েছিল!

শাওন এসে ওর কাঁধে হাত রাখলে চিন্তার সুতো কেটে গেল শিশিরের। শাওন জিজ্ঞেস করল, “বাচ্চাদের দেখবি?”

“দেখতে দেবে?”

“বাইরে থেকে কাচের ভেতর দিয়ে দেখতে দেবে।”

শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “চলো দেখি।”

কাচের ভেতর দিয়ে ছোট্ট বাচ্চাদুটোকে প্রথম দেখতে পেল শিশির। ছোট্ট ছোট্ট চোখ-নাক-মুখ। কী সুন্দর দেখতে! কোনটা ছেলে কোনটা মেয়ে বোঝা যাচ্ছে না। তবে ওদের দেখে বুকটা মুচড়ে উঠলো তার৷ এতটুকু শরীরে কতরকম নল ঢুকিয়ে রেখেছে! কত কষ্ট হচ্ছে ওদের! কিভাবে সহ্য করছে? সে নিজেই সহ্য করতে পারল না বেশিক্ষণ। চলে এলো সেখান থেকে। অধরাকে দেখতে গেল না সে। কোন মুখে যাবে?

আস্তেধীরে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো সে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে যোগ হয়েছে ঝড়ো বাতাস। আরো কালিগোলা মেঘ জড়ো হচ্ছে আকাশে। কোন বিপদ আসতে চলেছে আবার নতুন করে? বিপদের কী বাকি আছে? আর নতুন করে কিছু না হোক। শুধু ভালোয় ভালোয় এই বিপদটুকু পার হয়ে যাক!

********

সমূদ্র আজ বেশ উত্তাল। ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। এখানে আসার আগে কয়েকদিনের ওয়েদার ফোরকাস্ট চেক করে আসা জরুরি ছিল। তাড়াহুড়ায় কিছুই করা হয়নি। আকাশ কালো হয়ে আছে। আজ বোট বা ফেরি চলাচল বন্ধ বলে নতুন কেউ আর দ্বীপে ঢুকতে পারেনি। শেষ ফেরিটা এসেছে গত সন্ধ্যায়।

সমূদ্রের বেশি কাছে গেল না ডেভিড। ঝড়ো হাওয়ার তেজ মনে হচ্ছে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। ডেভিড ভাবছে, এখানে আটকা পড়ে যাবে না তো? ক’দিন এরকম আবহাওয়া থাকবে কে জানে! তার ছুটি মাত্র এক সপ্তাহের। তার মধ্যে তিনদিন ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে।

নাহ, ঝড় তো বেশি সময় থাকার কথা নয়। যাওয়া যাবে।

ইভা ঝড় শুরু হবার পর আর বের হয়নি কটেজ থেকে। তার আবার মন খারাপ রোগে পেয়ে বসেছে বোধহয়। একা বসে থাকছে, কীসব যেন লিখছে। অনেক চেষ্টাচরিত্র করেও তাকে বের করতে পারেনি ডেভিড। শেষে একাই বেরিয়ে পড়েছে উত্তাল সমূদ্রের চেহারা দেখতে। সমূদ্রের এই রূপ ভয়ঙ্কর সুন্দর হলেও ইভাকে ছাড়া দেখতে ভালো লাগছে না। কিছুক্ষণ থেকে ডেভিড কটেজের দিকে যেতে থাকল। কটেজ থেকে বীচ দশ মিনিটের হাঁটাপথ।

এর মধ্যেই বৃষ্টি নেমে পড়েছে। বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করলে সে একটা গাছের নিচে দাঁড়াল। কিন্তু গাছের পাতার গড়ানো পানিতে সেই ভিজেই গেল। তাই কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির মাঝেই হাঁটতে শুরু করল কটেজের দিকে।

কটেজের বাইরে চমৎকার আলো জ্বলছে৷ মনে হচ্ছে এখন সন্ধ্যা।

ভেতরে ঢুকতে গিয়ে সে খেয়াল করল মেঝেতে জুতোর দাগ। কাদা মাখা ভেজা জুতো পরে কেউ ঢুকেছে। এত বড় পা কোনো পুরুষ মানুষের মনে হচ্ছে। তাদের কটেজে কে ঢুকল এই অসময়ে? মনের মধ্যে কেমন যেন করতে লাগল ডেভিডের। তার সিক্সথ সেন্স বলছে, ভয়ানক কোনো গড়বড় হয়েছে। সে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল ভেতরে।

ওদের শোবার ঘরের দরজা ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। সেটা আস্তে করে খুলে ফেলল ডেভিড।

সাথে সাথে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল একটা নিস্তেজ শরীর। দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছিল ওকে। ইভা! ওর গলায় একটা গভীর কাটা দাগ। সেখান থেকে রক্ত পড়ছে। ঘরে মেঝেতে রক্তের পুকুর তৈরি হয়েছে। ইভা সেই সাদা জামাটা আজ আবার পরেছিল। সাদা জামা লাল হয়ে গেছে। এক পলক দেখেই বোঝা যায় ও আর বেঁচে নেই।

সোজা তাকালো এবার ডেভিড। বিছানায় আরাম করে বসে আছে রকম্যান। ওর শরীরে রক্তের ছিটে। হাসছে লোকটা দাঁত বের করে।

ডেভিডের কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এসব দুঃস্বপ্ন। দুঃস্বপ্নও কি এত ভয়ানক হয়? এটা কিভাবে সম্ভব? সত্যিই এই পৃথিবীতে সে এখনো নিঃশ্বাস নিচ্ছে, অথচ ইভা নিঃশ্বাস নিচ্ছে না?

পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল সে। বিছানায় বসে থাকা খুনীর ওপর যে ঝাঁপিয়ে পড়বে সেই শক্তিটুকু তার নেই। মনে হচ্ছে তারই শরীরটা কেউ ছুরি চালিয়ে কেটে অবশ করে দিয়েছে সব। আর কোনোদিন এই জড়তা কাটানো সম্ভব না। এর থেকে মরে যাওয়া ভালো। সে কি রকম্যানকে বলবে তাকেও মেরে ফেলতে?

*******

বিকেলের দিকে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি শুরু হলো। একের পর এক বজ্রপাতের সাথে ভারী বর্ষণ। লোডশেডিং হয়েছে সেই দুপুরে। জেনারেটর চলছে৷ কিন্তু এই লোডশেডিং চলতে থাকলে একটু পরেই আইসিইউতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কী হবে?

ভয়ে শিশিরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ আসার নামগন্ধ নেই। এদিকে ঝড়বৃষ্টি বেড়েই চলেছ। এত জোরে বজ্রপাত হচ্ছে যে তার শব্দে ভয় আরো বেড়ে চলেছে।

সে আর থাকতে না পেরে চলে গেল নামাজ পড়তে। অনেকটা সময় নিয়ে নামাজ পড়ে সে কাঁদতে কাঁদতে অনেক দোয়া করল। মুনাজাত শেষে খেয়াল করল লাইটের আলো কমে আসছে। আইসিইউতে তাহলে কী অবস্থা? ভাবতে গিয়েও ভাবতে পারল না সে। প্রচন্ড শীত লাগছে। শরীর অবশ হয়ে আসছে।

********

ডেভিড ইভার পাশে বসে পাগলের মতো ওকে ঝাঁকিয়ে জাগানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ইভা চোখ মেলল না। পৃথিবীতে শেষ ঘুমটা ঘুমিয়ে পড়েছে সে। আর জাগার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ইভার নিথর দেহটা কোলে নিয়ে ডেভিড হতবুদ্ধির মতো বসে রইল।

রকম্যান একসময় ওর সামনে এসে মেঝেতে বসল। হাতের রক্তমাখা ছুরিটা ডেভিডের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “নাও। চাইলে এক্ষুনি মেরে ফেলতে পারো আমাকে। আমার কাজ শেষ।”

ডেভিড চাইল ওর দিকে। রকম্যান শান্ত গলায় বলল, “জেনকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসতাম। তুমি তোমার স্ত্রীকে যতটা ভালোবাসো তারচেয়েও বেশি৷ ওর মৃত্যুর খবর পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি। কেমন করে জেল থেকে পালিয়ে এসেছি তা আমিই জানি। যে আমার ভালোবাসাকে খুন করেছে তাকে আমি কিছুতেই বাঁচতে দিতাম না ডেভিড। আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হয়েছে। গতরাতে এসে পৌঁছেছি আমি। তুমি সবসমই ওর সাথে আঠার মতো লেগে থাকো বলে কিছু করতে পারিনি পুরো রাত। আজ দেখো, ভাগ্য আমার সাথে ছিল। ঝড়ের কারনে পুলিশও আর আমার খোঁজে এখানে আসতে পারেনি, আর তুমিও এমন সময়েই ওকে একা রেখে চলে গেলে। ধন্যবাদ ডেভিড। তুমি আমাকে বরাবরই খুব সাহায্য করে আসছো।”

ডেভিড নির্বাক হয়ে চেয়ে রইল। রকম্যান অপ্রকৃতিস্থের মতো হাত পা ছড়িয়ে রক্তের পুকুরের মাঝখানে বসে রইল। ছুরিটা ওর গলায় বসিয়ে দিলে কেমন হয়?

সে উঠে দাঁড়াতে গেল, কিন্তু পারল না। ইভার হাতের ঘড়ির সাথে ওর সোয়েটারের উল আটকে গেছে। ইভা যেন ওকে আটকে দিচ্ছে খুনী লোকটার কাছে না যাবার জন্য। ইভার দিকে চেয়ে প্রচন্ড কষ্টে বুকটা ভেঙে এলো ডেভিডের। চিৎকার করে উঠল সে।

ঝড়বৃষ্টি কমে গেছে বলে ডেভিডের চিৎকারের শব্দ বাইরে অনেকদূর পর্যন্ত শোনা যেতে থাকল। সবাই তড়িঘড়ি করে ছুটে এলো ওদের কটেজের দিকে।

দ্বীপের পুলিশের ছোট্ট একটা ঘাটি আছে। সেটাতেই নিয়ে যাওয়া হলো রকম্যানকে। লোকটা কোনোরকম বাঁধা দিল না।

ডেভিডকে সামলানোর চেষ্টা করা হলেও সে যেন এবার পাথর হয়ে গেছে। ইভার লাশটা কোলে নিয়েই বসে আছে। তার মাথা কাজ করছে না।

এদিকে আবহাওয়া খারাপ। সমূদ্রের এই উত্তাল অবস্থায় কিছুতেই দ্বীপ থেকে মূল ভূখন্ডে যাওয়া সম্ভব নয়। আরো দু’দিনেও আবহাওয়া ঠিক হবে না। ইভার লাশ নিয়ে কী করা হবে সেটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হলো। যেহেতু খুনের ঘটনা, তাই পোস্টমর্টেম করতেই হবে। আর সেজন্য লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

শেষ পর্যন্ত একটা খাবারের কোল্ড স্টোরেজ খালি করে সেখানে নিয়ে রাখা হলো ইভাকে।

ডেভিড পুরো একদিন একরাত একভাবেই বসে রইল৷ একেকবার পুরো শরীর ভেঙেচুরে কান্না আসতে চায়, কিন্তু সে কাঁদতে পারে না। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু সব শক্তি গায়েব হয়ে গেছে যেন।

ওদের কটেজটা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। তাকেও বের করে আনা হয়েছিল ইভার সাথেই। আর ওখানে ঢোকেনি সে। হঠাৎ তার মনে হলো ইভা মৃত্যুর আগে কিছু লিখছিল। কী লিখছিল সেটা তাকে জানতে হবে।

সে নিজেও গোয়েন্দা বলে অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারল।

ইভার ডায়েরিটা তখনো টেবিলের ওপর পড়ে আছে। যে পৃষ্ঠায় লিখছিল সেখানে বুকমার্ক দেয়া৷

অল্প কিছুই শুধু লেখা ডায়েরিতে। আর লেখাটা তাকে উদ্দেশ্য করেই চিঠির মতো করে লিখেছে ইভা।

প্রিয় ডেভিড,

তুমি এই লেখাটা কেবল তখনই পড়তে পারবে যখন আমি পৃথিবীতে থাকব না। যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি, ততক্ষণ তোমাকে এটা পড়তে দেব না। আমি না থাকলে আর কোনো বাঁধা থাকবে না, তখন পড়ে নিও। এসব লিখছি কেন ভেবে অবাক হচ্ছো? আমার কেন যেন মনে হয় আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই।

তোমার মনে হতো আমি ডিপ্রেশন কাটাতে পারছি না। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক ডিপ্রেশন না। এটা অন্যকিছু। পৃথিবীতে সবার জন্য সবকিছু না। আমার হাত কারো রক্তে রাঙা হবে এটা আমি কখনো কল্পনাই করিনি। বাস্তবে যখন সেটা হলো, আমি বিশ্বাস করতে পারিনি৷ একটা মানুষ মেরে ফেলা মানে শুধু তাকে নয়, তার পরিবার, ভালোবাসা, স্বপ্ন, সবকিছু মেরে ফেলা। জানি সে আমাকে মারতে চাইছিল, আমার জীবন বাঁচানো কর্তব্য ছিল৷ তবুও আমি এটা কখনোই মেনে নিতে পারব না হয়তো।

আমি যদি সত্যিই মরে যাই আর এই খবরটা তুমি ডায়েরি থেকে পেয়ে থাকো, তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক একটা ব্যাপার হবে। তবুও আমি জানি তুমি সহ্য করতে পারবে। খবরটা হলো, আমি প্রেগন্যান্ট! আমরা মা বাবা হতে যাচ্ছি!

খবরটা তোমাকে দিতে পারিনি কেন জানো? ওই মেয়েটা আসার আগ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। আমি তোমাকে সেদিনই সারপ্রাইজ দিতাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। সেদিনের পর থেকে আমার শুধু ভয়ই করে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি আনমনে তোমাকে মেরে ফেলব৷ সবচেয়ে বেশি ভয় লাগে বাচ্চার কথা ভেবে। আমার মনে হয় আমি খুনী, আর আমাদের বাচ্চা নিশ্চয়ই কোনো খুনী মা ডিজার্ভ করে না!

এসব কেন লিখছি জানি না। হতে পারে দ্বীপে থাকতে থাকতেই আমার সব কষ্ট কেটে যাবে, আমি তোমাকে নিজের মুখে সুখবর দেব। তবুও এই মনের অস্থিরতা সবটা লিখিয়ে ছাড়ল৷

আমি আর…..”

লেখাটা এখানেই শেষ। হয়তো রকম্যান এসে পড়েছিল তখন।

ডেভিডের পাথর হয়ে যাওয়া শরীরটা এবার ভয়ঙ্কর কষ্টে ফেটে যেতে চাইল। এতক্ষণ সে জানত তার প্রিয়তমা তাকে ছেড়ে চলে গেছে, এখন জানতে পারল আসলে তাকে ছেড়ে গেছে ভালোবাসার দুটো মানুষ, যার মধ্যে একজনের জীবিত অস্তিত্ব সে অনুভবও করতে পারেনি। বিড়বিড় করতে লাগল সে, “তুমি খুব খারাপ একটা কাজ করেছ ইভা। খুব খারাপ কাজ করেছ। আই হেইট ইউ! আই হেইট ইউ!”

সে ডায়েরিটা জড়িয়ে ধরে আনমনে হাঁটতে হাঁটতে সৈকতে পৌঁছে গেল। বৈরি আবহাওয়া আর আজকের দুর্ঘটনার জন্য বোধহয় কেউই নেই সৈকতে। চারদিক খাঁ খাঁ করছে। কেবল প্রবল বাতাসের শো শো শব্দ আর অশান্ত সমূদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে।

ডেভিড একা একা দাঁড়িয়ে রইল বহুক্ষণ। তারপর হঠাৎ চিৎকার করতে করতে কেঁদে ফেলল। আকাশের দিকে চেয়ে বলল, “হে ঈশ্বর! তুমি আমার সাথে যা করেছ তা আর কারো সাথে করো না৷ আমার মতো দুঃখ আর কাউকে দিও না। এই মায়ামঞ্জরীতে মৃত্যু বীরদর্পে প্রবেশ করেছে, অন্য কোনো মায়ামঞ্জরীতে যেন মৃত্যু ঢুকতে না পারে! এই কষ্ট যেন শুধু আমার একার হয়। হে ঈশ্বর, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো? বলো শুনতে পাচ্ছো?”

********

দীর্ঘ মুনাজাত শেষে যখন চোখ খুলল শিশির, তখন দেখতে পেল চারদিক আলোয় ঝলমল করছে। বিদ্যুৎ চলে এসেছে!

সে ছুটে গেল বাইরে। আইসিইউর কাছাকাছি গিয়ে শাওনকে পেল। “সব ঠিক আছে তো?”

“হুম, সব ঠিক আছে। ভাগ্যিস সময়মতো কারেন্ট চলে এসেছে! অধরার বিপদ কেটে গেছে। বাচ্চাদের অবস্থাও এখন ভালোর দিকে।”

শিশির দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলল। মন থেকে প্রচন্ড ভারী একটা কিছু সরে গেছে। সে শুধু বলল, “আলহামদুলিল্লাহ!”

********

“সুখ ব্যাপারটা আমার কাছে সবসময় মরিচীকার মতো মনে হয়। কখনো মনে হয় এটা পেলে সুখী হয়ে যাবো, কখনো মনে হয় ওটা পেলে। জিনিসটা যদি পেয়েও যাই, সুখ তখন সেই জিনিস থেকে পালিয়ে চলে যায় অন্য কিছুর ভেতর। আবার সেই অন্যকিছুর পেছনে অন্ধ হয়ে ছুটতে থাকা। এটাই বুঝি জীবন!

বিয়ের আগে মনে হয়, এই মানুষটাকে পেলে জীবনে আর কিছুরই প্রয়োজন নেই। সব পাওয়া হয়ে যাবে। তারপর যখন মানুষটাকে পাওয়া হয়ে যায়, তখন আরও হাজারটা চাহিদা তৈরি হয় তাকে ঘিরে। শুধু ওই মানুষটাকে দিয়েই জীবন চলে না৷

শিশিরের হাত আমি ধরেছিলাম ওর কোনো এক দুঃসময়ে। আমার খুব করে মনে হয়েছিল ওর পাশে থাকতে হবে। আজ সেই দুঃসময় কেটে গেছে। আমরা পাশাপাশি চলছি। সেদিন আমাকে শিশিরের কতটা প্রয়োজন ছিলা বা আজ কতটা আছে জানি না, তবে সে নিজে আমার তীব্র প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন জানি না বাচ্চাদের বাবা হবার পর সে অনেক সেন্সিটিভ হয়ে গেছে। ওদের এমনভাবে ভালোবাসে যেমনটা আমি কখনো ভাবিনি।

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর একদিন ও আমাকে ‘স্যরি’ বলল। খুব আবেগ নিয়ে বলল। কেন বলল সেটা কিন্তু বলল না। মেল ইগো এমনই জিনিস, পুরোপুরি ত্যাগ করা তো যায় না! তবে আমার ধারণা সে আমায় আগের থেকে বেশি স্বাধীনতা দেয়। কোনোকিছু চাপিয়ে দেয় না। আমার মতামত খুব গুরুত্বের সাথে নেয়। ব্যাস এটুকুই তো চেয়েছিলাম জীবনে।

শিশির আর বাচ্চারা একসাথে থাকলে ওদের দেখে দেখে মনে হয় একটা পুরো জীবন কাটিয়ে ফেলতে পারব। সে বলেছিল ছেলেকে বাস্কেটবল শেখাবে৷ এখন বলছে মেয়েকে শেখাবে৷ মেয়েটাও বাবার বুক ছাড়া ঘুমাতে পারে না। এক রাতে হঠাৎ সে আমাকে ডেকে বলল, “অধরা, পুতুল বড় হলে ওকে কি বিয়ে দিয়ে দিতে হবে? তারপর বাঁচব কেমন করে?”

আমি কোনো উত্তর দেইনি। কেমন করে বাঁচবে সেটা সে বুঝবে! মেয়েদের ওসব অভ্যাস আছে।

‘মায়ামঞ্জরী’ও ওদের আগমনে ফুলে ফলে ভরে উঠেছে৷ ছোটো ছোটো যেসব ফলের গাছ আসার পরপর লাগিয়েছিলাম, সেগুলোতে এবার ফল হয়েছে। বাগানবিলাসে পুরো দোতলা ছেয়ে গেছে। চারদিকে শুধু সবুজের ছড়াছড়ি।

ওদের দাদা আবার নাতি বলতে অজ্ঞান। মানুষটা বড্ড ভেঙে পড়েছিল মাঝে। নাতি নাতনি পেয়ে যেভাবে রাতারাতি সুস্থ হয়ে উঠেছে তা ছিল দেখবার মতো। ওদের দাদীও দারুণ হাসিখুশি হয়ে উঠেছে। বাড়িটা এখন ভীষণ জীবন্ত মনে হয়।

তবে ওদের আগমনে আরেকটা মানুষ ভীষণ খুশি হয়েছে যেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। সেই মানুষটা হলো শাওলী ভাবি। তার নিজের মিসক্যারেজের পর এত মুষড়ে পড়েছিল বেচারি! বাচ্চাদের পেয়ে তার মন একেবারে ফুরফুরে হয়ে গেছে৷

যে হাসপাতালে ওরা হয়েছে, সেখানেই চাকরি নিয়েছে সে। সুযোগ পেলেই ওদের খাওয়াবে, ওদের নিজের কাছে নিয়ে রাখবে, খেলা করবে। যেন ওরা ওর নিজের বাচ্চা। আর শাওন ভাইয়া রোজ একটা করে খেলনা নিয়ে আসবে। পুরো ঘর খেলনা দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। দরকারি জিনিস খুঁজে পাওয়া দায়।

এতকিছুর পরেও মায়ের হাজারটা কাজ থাকেই। ওদের ডেলিভারির সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীর একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে। তার ওপর পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন তো আছেই। ওদের সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সবাই সাহায্য না করলে যে কী হতো কে জানে! যেসব মায়েরা এই সময়ে কারো সাহায্য পায় না, উল্টো অবহেলা পায় তাদের অবস্থা ভেবে খুব কান্না পায়। কখনো কখনো শুধু শুধুই কান্না পায়।

মাঝে মাঝে হ্যালুসিনেশন হয়। মনে হয় অচেনা কোনো সমূদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আছি। পেছনে মায়ামঞ্জরী। আমি বাচ্চাদের খুঁজছি, হঠাৎ মনে হলো বাচ্চারা তো আমার গর্ভে। দূর থেকে কে যেন ডাকছে আমায়। আমি যেতে পারছি না সেখানে। পথটা কুয়াশায় ঢাকা৷

বাচ্চাদের কান্নার শব্দে আবার ফিরে আসি বাস্তবে। ওদের দিকে চেয়ে হাসলে ওরাও হাসে। ফোকলা দাঁতে কী সুন্দর হাসি! মনে হয় ঘরে চাঁদ নেমে এসেছে। পৃথিবীর একটা চাঁদ, আমার দুটো।

মায়ামঞ্জরীতে সত্যিকারের মায়া ফিরে এসেছে। এই জগতটাই মায়ার খেলা।”

অধরা ডায়েরি বন্ধ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল৷ প্রচুর পাখি ডাকছে একসাথে। সন্ধ্যা হব হব করছে। বহুদিন পর ডায়েরি লিখল সে। আজ শাওলীর ছুটি বলে সে একজনকে বগলদাবা করে সারাদিনের জন্য নিয়ে গেছে। অন্যজনকে নিয়ে গেছে দাদা দাদী। ঝাড়া হাত পা মনে হচ্ছে নিজেকে। অবশ্য বেশিক্ষণ চাইলেও সে হাত পা ছেড়ে বসে থাকতে পারবে না, দেখা যাবে দুটোর একসাথে ক্ষুধা লেগেছে। তখন দুটোকে একসাথে খাওয়াতে হবে।

তারপর শিশির ফিরবে। সিঁড়িতে ওর পায়ের শব্দ শুনলেই বাচ্চাদের কান খাঁড়া হয়ে যাবে। সে ঘরে ঢুকলেই শুরু হবে হাসি। সত্যিকারের চাঁদের হাট বসে যাবে ছোট্ট ঘরটাতে।

********

বাড়িতে ঢুকলেই ছবিটা চোখে পড়ে সবার আগে। ডেভিড আর ইভার বিয়ের ছবি। ইভা প্রাণ খুলে হাসছে। ইভাকে এত হাসিখুশি আর কোনোদিন দেখেনি ডেভিড। ওর হাসিমুখটাই তাই টানিয়ে রেখেছে সামনে।

আজকাল নিজেকে বড্ড ব্যস্ত করে ফেলেছে ডেভিড। কাজেকর্মে ছোটাছুটি করতে করতে, অপরাধী ধাওয়া করে বেড়াতে বেড়াতে দুঃখগুলো ভুলে থাকা যায়। আর বাড়ি ফিরলে ইভার হাসমুখটা ওর ক্লান্তি যেন শুষে নেয়।

কারো কারো জীবনে সুখ স্থায়ী হয় না। একা ডেভিডদের সারাজীবন একাই থাকতে হয়। কখনো সুখেরা এসে দরজায় কড়া নাড়লেও তারা ক্ষণস্থায়ী সময়ের অতিথি হয়ে আসে। চাইলেও মুঠোয় ভর্তি করে রাখা যায় না। আঙুলের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। শুধু রয়ে যায় স্মৃতি। এত সুন্দর স্মৃতি যে একটা ছোট্ট জীবন কাটিয়ে দেবার জন্য সেটা যথেষ্ট।

(সমাপ্ত)

সুমাইয়া আমান নিতু