#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৭
রোজিনা বেগমের শাড়ির আচলে হলুদ ধান দুবলা তেল দিয়ে রুপশার মাথায় রেখে কাষার কলস থেকে পানি ঢালা হয়।।
হাড়ভাঙ্গা শীতে পুকুরের পানি শরীরে পড়তেই দাতে দাত লেগে যায় রুপশার। পাড়ার কিছু ভাবীদের সাথে রুপশাকে গোসলের জন্য পাঠিয়ে সবাই হলুদ খেলা শুরু করে। যে যাকে পাচ্ছে হলুদ লাগাচ্ছে।
নিশা সবার আড়ালে এক মুঠো হলুদ নিয়ে দৌড়ে প্যান্ডেলের ভিতরে আড্ডায় ব্যস্ত থাকা চন্দ্রের দিকে যায়।
রিশান চন্দ্রকে ইশারা করে। চন্দ্র পিছনে তাকিয়ে নিশাকে দেখে বিরক্ত হলেও প্রকাশ করে না গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করে — কিছু বলবি???
নিশা লাজুক হেসে হাত সামনে এগিয়ে এনে চন্দ্রের গালে ছোয়ায়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিশান শিহাব ভয়ে আছে। চন্দ্রের যে ভয়াবহ রাগ এখন না আবার কি করে বসে চন্দ্রের শরীরে হাত দেয়া সে পছন্দ করে না।
ইউনিভার্সিটিতেও বন্ধুরা দুষ্টুমির মধ্যেও তার হাত ধরে না তাদের সাথে চন্দ্রের যত হাসি ঠাট্টা সব মুখে চলে মুখে পারে না একজন আরেকজনকে ধুয়ে দেয়।
রাগে চোখ বন্ধ করে আছে চন্দ্র এখন নিশাকে যে তার কি করতে মানে চাচ্ছে সে নিজেও জানে না। এর মধ্যে কামরুল সাহেব আসেন
— চন্দ্র বাবা একটু বাইকটা নিয়ে পুকুর ঘাটে যা তো পুনম পা পিছলে ব্যাথা পেয়েছে,,,;
পুনমের কথা শুনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে চন্দ্র চলে যায় সেদিকে শিহাব রিশান ও কামরুল সাহেব হাফ ছেড়ে বাচেন। শিহাব নিশার দিকে তাকিয়ে বলল — ছোট্ট আপু আমাকে হলুদ লাগাবে না,,, আর এই শাড়ি কে পরিয়ে দিয়েছে বেশ সুন্দর লাগছে,,,
নিজের প্রশংসা শুনে লাজুক হাসে নিশা কামরুল সাহেব সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে চলে যায়। শিহাব রিশান আরো আড্ডা জুড়ে দেয় নিশার সাথে।
।_,,,,,,,,,
বেশীর ভাগ বিয়েই জুম্মার নামাজ শেষে হয় যেহুতু বর যাত্রী ঢাকা থেকে এসেছে তাই তারা সকাল সকালি এসে পৌঁছে যায়। এখানে তাদের আত্মীয়র বাড়িতে ওঠে।
তারপর সকলে মিলে একসাথে জুম্মার নামাজ শেষে রওনা দেয় রুপশাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
গেটে তুমুল বেগে দর কষাকষি হচ্ছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যাক কে জিতে মেয়ে পক্ষ না ছেলে পক্ষ।
নিশা সহ প্রত্যক পিচ্চিদের হাতে বোর্ডে লেখা আমাদের দাবী পূরণ করো। দীর্ঘ একঘণ্টা তর্কাতর্কির পর জিত হয় মেয়ে পক্ষের ছেলেকে তারা দশ হাজার টাকার একটা প্রবেশ পত্র দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
এর পর শুরু হয় বিয়াই বিয়ানদের হাসি ঠাট্টা। মুরুব্বিদের দেখাদেখি। রুপশাকে দেখে তাদের আয়োজন দেখে সবারই মনপ্পুত হয়েছে তবে ঐ যে আমরা বাঙ্গালী জাতি আমাদের অন্যের বদনাম না করতে পারলে কি আর পেটের ভাত হজম হয়।
তিন ভাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। প্রথম মেয়ে বিয়ে দিয়ে তাদের শিক্ষা হয়েছে আর এই কাজ করব না। তাদের মাথায় হাত কারণ ছেলের চাচা এখন পোলাও আর ঝাল মাংস খাবে না।
সে কাচ্চি খাবে খাশির কাচ্চি খাবে,,,,,, চন্দ্র পাঞ্জাবীর হাতা ভাজ করতে করতে বলল — টেনশ্যন নেই বাবা শিহাবকে পাঠিয়েছি,, বাজারে আজ শুক্রবার আশাকরি খোলা পাব হোটেল। কাচ্চি নিয়েই আসবে আর ঐ যে কাচ্চি খেতে চেয়েছে তাকে আমি নিজের সামনে কাচ্চি খাওয়াব দেখি সেও কতো খেতে পারে,,,,,,
তিন ভাই সুবোধ বালকের মতো মাথা নাড়ে মেয়ে বড় হলে যেমন মায়ের কষ্ট কমে তেমনি ছেলেরা বড় হলে বাবাদের কষ্ট কমে। এই যে তাদের চিন্তা নিমিষেই দূর করে দিলো। কামরুল সাহেব মুখে প্লাষ্টিকের হাসি ঝুলিয়ে বরের বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলছে,,,
চন্দ্র রিশান আরো কয়েকজন মিলে তদারকি করছে।।
শিহাব কাচ্চি নিয়ে আসতে খবর আসে ছেলেদের বাড়ির আরেজন পোলাও খাবে না সে ভাত খাবে। চন্দ্র হনহন করে ঘরের ভিতর যায়।
— এক পট চাল রাইস কুকারে রান্না করে দে তো,,,
পুনম ড্রয়িং রুমের চেয়ারে বসে ছিলো চন্দ্রের কথা শুনে বলল — এখন ভাত কে খাবে??
— এতো বেশী কথা বলিস ক্যান যা বলছি তা কর,,
চন্দ্রের ঝাড়ি শুনে নাক মুখ কুচকে পুনম উঠে দাড়ায় সকালে পুকুর পাড়ে পরার দারুন পা বেশ ফুলে আছে,,,
— তুই বস মা আমি করে দিচ্ছি,,,
পিছন থেকে চন্দ্রের মা চাদনী বেগম বলতেই পুনম আর বসে পড়ে চন্দ্র আর কিছু না বলে দাড়িয়ে থাকে।
কয়েক মিনিট পরে গরম গরম ধোয়া উঠানো ভাত চন্দ্রের হাতে দিতে সে চাদনী বেগম ও পুনমের দিকে এক পল তাকিয়ে আবার হনহন করে চলে যায়।
চাদনী বেগম চন্দ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পুনমের জন্য ভাত আনা প্লেট হাতে নিয়ে তাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে — কিছু মনে করিস না মা ছেলের পক্ষের কাজে একটু ক্ষেপে আছে কিছু বলতে না পেরে আরো চেতে আছে,,,,,,
পুনম খেতে খেতে মাথা নাড়ায়। এমনিতেও তার চন্দ্র ভাইয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই সে কি করল না করল এতে পুনমের কিচ্ছু যায় আসে না। সেতো বড় চাচা চাচির ও মুক্তা আপুর জন্য পাগল আর কাউকে চাই চন্দ্রের কি প্রয়োজন চন্দ্র তার সাথে কথা না বললেও পুনমের কি যাবে আসবে মনে মনে ভেবে মুখ বাকায়।
পুনমের এই মনোভাব চন্দ্র জানতে পারলে পুনমের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো ভাগ্যিস মনের কথা কেউ পড়তে পারে না বা শুনতে পারে না।
_________________
চন্দ্র ছেলের খালা ও চাচার সামনে বসে আছে যে ভাত খাবে তাকে গোপাল ভাড়ের মতো করে উচু এক থালা ভাত দিয়েছে আর যে কাচ্চি খাবে তাকেও থালা ভর্তি কাচ্চি দিয়েছে।
বরের চাচা খালা একে অপরের মুখ চাওয়াচায়ি করছে।
বিয়েতে সব স্মুদ চলছিল তাই তারা একটু গ্যাঞ্জাম সৃষ্টির জন্য এগুলো খেতে চেয়েছে তবে একটু আগেই বরের খালা তার মেয়ের কাছে শুনে এসেছে পোলাওটা বেশ হয়েছে একদম ঝড়ঝড়ে খেতে ভালো লাগছে,,,,,, অন্যদিকে ছেলের চাচার সমস্যা হয়েছে হজমে। তার আবার হজমে সমস্যা সে এই রীচফুড সহ্য করতে পারে না খেলের বাড়ির সবচাইতে ছোট রুমটা তার জন্য বুকিং করা লাগে। এখন এগুলো খেলে আজ আর ঢাকায় সহি সালামতে যাওয়া লাগবে না।
— কি হয়েছে আঙ্কেল আন্টি খাচ্ছেন না কেনো,??? নিন খান এগুলো স্পেশাল আপনাদের জন্য তৈরী হয়েছে তাই শুধুমাত্র আপনারাই এগুলো শেষ করবেন।।
চন্দ্রের গম্ভীর স্বর শুনে তারা মেকি হেসে খেতে শুরু করে বরের খালা তিন ভাগের একভাগ খেয়ে আর খেতে পারছে না,,, তার হাবভাব দেখে চন্দ্র বলল — আন্টি এই বিয়ে বাড়ির ভেজালে আমার আম্মু অনেক কষ্টে রান্না করেছে তারউপর আমার বউটাও অসুস্থ আপনাদের জন্য তার কাছেও যেতে পারছি না আমার এতো এতো স্যাক্রিফাইজের দাম নষ্ট করবেন না,,,,,
চন্দ্রের কাদো কাদো স্বরে মহিলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আবার খেতে শুরু করে,,, ঐদিকে বরের চাচারও একই অবস্থা,,,, ইতিমধ্যে খাওয়ার পর্ব শেষ বিয়ের পর্ব শুরু হবে,,,,
তারা এখনো এখান থেকে ছাড় পাচ্ছে না কাবিনের টাকা নিয়েও একটু ঝগড়া করা বাকি আছে সেটাও হচ্ছে না,,,,,,,
বিয়েতে কাবিনের টাকা নিয়ে ঝগড়া না করলে দাম থাকে না মেয়ে পক্ষকে বুঝাতে হবে তো তারা ছেলে পক্ষ দুইজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রের দিকে তাকায় কিছু বলতে নিবে তখনই শিহাব জোরে চিল্লিয়ে বলে বিয়ে শেষ এখন সবাই মুনাজাত ধরেছে চন্দ্রও যেনো ধরে,,,,,,,
বিয়ের কথা শুনে তাদের চেহারা চুপসে যায়। সেই চুপসানো মুখের দিকে তাকিয়ে চন্দ্র মুচকি হেসে বলল — আঙ্কেল আন্টি এটো হাতেই নব দম্পতির জন্য দোয়া করেন।
_____________________
বিয়ে শেষ হয়ে এখন পরিচয় পর্ব চলছে,,, সব শেষে রুপশার চাচাতো মামাতো বোনের সাথে পরিচয় হয় রুপশার বর লিমনের,,,, পুনম ও নিশা এক সাথে দাড়িয়ে পুনম অবশ্য বেশীক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে পারে না বসে পড়ে চেয়ারে,,,,
— আমার ছোট্ট শালিকা দেখী বেশ সুন্দরী,,,,
দুলাভাইয়ের কথায় নিশা গর্বের হাসি হেসে রুপশার দিকে তাকায়। রুপশা নাক কুচকে লিমনের দিকে তাকাতেই লিমন তার কানে সকলের অগোচরে কিছু বলতে মুচকি হাসে,,,
— লিমন ভাই পরিচয় পর্ব শেষ এখন ওরা ভিতরে যাক
লিমন মাথা নাড়াতেই মুক্তি পুনমকে ধরে ভিতরে নিয়ে যায়। নিশা রুপশার ওড়না টানে রুপশা ওর দিকে তাকাতেই নিশা মাথা নিচু করতে বলে। রুপশা মাথা নিচু করলে নিশা তার কানে ফিসফিসিয়ে বলল — দেখেছো আপু চন্দ্র ভাই কতো পজেসিভ আমার জন্য,,,,,
#চলবে