পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-০৮

0
2

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৮
{ রোমান্টিক এলার্ট }

বিয়ে নিয়ে প্রত‍্যেকটা মেয়ের ফ‍্যান্টাসি থাকে রুপশার ও আছে। বাসর ঘর বসে আছে রুপশা ফুল ও সুগন্ধি ক‍্যান্ডেলের আলোর ঝলমল করছে পুরো রুম জুরে লিমন এখনো ঘরে আসেনি শোনা যাচ্ছে বাইরে থেকে তাকে তার ভাই বোনেরা আটকেছে,,,,

সাথে ভাবীরাও অনেক কিছু বলছে ভাবীদের কথা শুনে লাজে আদল রক্তিম ধারন করে রুপশার।
ঘড়ির কাটা কয়টার ঘরে জানা নেই টিকটিক শব্দে সেদিকে তাকায়। ঘড়ির কাটা একটা দশের ঘরে। শহরে এতো রাত না হলেও গ্রামে অনেক রাত কট করে দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায় রুপশা। দেখে লিমন নিজের সেরোয়ানির বোতাম খুলতে খুলতে এগিয়ে আসছে,,,,,

-” আজকেও কি এভাবে লজ্জা পাবা,,,,,

খাটের একপাশে বসে বলল লিমন। রুপশার লিমনের দাদীর শিখানো কথা মনে পড়ে যায়। সে লিমনের কদম বুসি করতে লিমন তাকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে মুখ গুজে। রুপশা কাপা স্বরে বলল — চেঞ্জ করি,,,,,,,

— উহু আমি করে দিচ্ছি,,,,,,

রুপশা তাকায় লিমনের দিকে তার চোখ মোহগ্রস্থ হয়ে পরেছে বুঝে রুপশা আজ নিস্তার নেই তবে সে ক্লান্ত সারাদিন বিয়ে তারপর আবার জার্নি সব মিলিয়ে ক্লান্ত মুখে ফুটে কিছু বলার আগেই অধর জোড়া দখল হলো লিমনের শুষ্ক অধরে,,,, তার বেপরোয়া ছোয়া এলোমেলো করে রুপশার পরিধেয় পোশাক,,,
চোখে বন্ধ করে সহ‍্য করে সবকিছু দাদীর কথা মনে পড়ে এটাই বুঝি স্বামীর সোহাগ যেখানে একফোটা ভালোবাসা নেই আছে শুধু হিংস্রতার ছোয়া।

_____________________

পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ মেয়ে বিদায়ের সময় রোজিনা বেগমের শরীর খারাপ হয়ে যায় তাই তাকে আগেই ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
অঘোরে ঘুমাচ্ছে নিশা বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
নিশার হাতের দিকে তাকিয়ে রাগ লাগে চন্দ্রের তার শরীরে শুধু তার পূর্ণিমার ছোয়া ছাড়া আর কারো স্পর্শ সে মানতে নারাজ,,,, রোজিনা বেগমের হাতে ব‍্যবহৃত বেচে যাওয়া ক‍েমিক‍্যাল টুকু বের করে নিশার হাতে ফোটায় ফোটায় ভরিয়ে তোলে নিমিষেই ফর্সা হাতখানা লাল টকটকে হয়ে যায় সেদিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে চলে যায়।

কি ভাবে এই পিচ্চি তার সাথে একটু কথা বলে তাই সে তাকে পছন্দ করে উহু ভুল ধারনা পিচ্চি তোর থেকে যাষ্ট আমার পুনমের ইনর্ফোমেশন নেয়ার দরকার তাই কথা বলি নাহলে এই চন্দ্রের জীবনে পুনম বিহীন কোনো পরনারীর অস্তিত্ব নেই।

_______________ চন্দ্র নিশার ঘরের বারান্দা দিয়ে চুপিসারে বেড়িয়ে চলে যায় সেই দখিনা জানালার ধারে আজো সবাই একসাথে ঘুমিয়ে তবে আজ পুনমের পাশে বালিশ আছে যাতে তার গায়ে কোনো বোন হাত পা তুলে না দিতে পারে। চন্দ্রের মনে পড়ে সেদিনের কথা।

চন্দ্র তার পরের দিন সকালে রিমিকে পাক্কা একঘণ্টা একপায়ে দাড় করিয়ে রেখেছিল।

” অমাবস‍্যা কাটিয়ে কবে তুই আমাতে বিলীন হবি পুনম,,,,
-” এই চন্দ্র যে তার পূর্ণিমায় বিলীন হওয়ার জন‍্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে
মনে মনে ভেবে আবার বিড়বিড় করে বলল
— দ্রুত বড় হয়ে যা আমার পূর্ণিমা,,, আর তো যাতনা সহে না,,,,,,

_______________________

সকাল সকাল নিশার চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে সবার কাল অনেক রাতে ঘুমানোর ফলে সবাই একটু দেরী করেই ঘুম থেকে উঠে।

রোজিনা পারভেজ সহ সবাই নিশার ঘরে যায় । নিশা তার ডান হাতে ফু দিয়ে সমানে কাদছে,,,,
পারভেজ রোজিনা দৌড়ে তার কাছে যায়
-” কি হয়ে নিশা মা,,,,, হাত এভাবে পুড়লো কেমন??

— জানিনা আব্বু আমি ঘুমের তালে হাত নাড়াচাড়া করতে যেয়ে ব‍্যথা অনুভব করি পরে ব‍্যাথা বাড়লে তাকিয়ে দেখি এই অবস্থা।

— পারভেজ নিশাকে দ্রুত হাসপালে নিতে হবে ওরে কোলে নে,,,

কামরুল সাহেবের কথা শুনে পারভেজ সাহেব দ্রুত নিশাকে কোলে নেয় মিরাজ সাহেব গাড়ি ডাকে রোজিনাও কাদতে কাদতে তাদের সাথে যায়।
তবে কামরুল সাহেব যাওয়ার আগে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তাকে চোখ দিয়ে শাষিয়ে যায়। স্বামীর চোখ দেখে চাদনী বেগমের বুঝতে বাকি থাকে না এই কাজ কার।
অন‍্যদিকে বাকী ছোটরা ঘুমে,,,,,,,, চাদনী বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে এই ছেলেটা এতো পাগলামি কেনো করছে ও কি বুঝতে পারছেনা ওর এই আচরণ ওর আর পুনমের মাঝে বিশাল দেয়া সৃষ্টি করবে,,,,,,

— আপা কি হচ্ছে বলোতো,,,,?

ছোট জা নিপার কথায় চাদনী বেগমের হুশ আসে।
— জানিনা রে ছোট জীবন কোন দিকে যাচ্ছে ভবিষ্যতে কি হবে ভেবেই ভয় লাগছে,,,,,,

আনমনে কথাটা বলে ফেলে চাদনী বেগম,,, নিপা বেগম তার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝেনা,,,,,,

— হু কি বললা???

হুশে ফেরে চাদনী বেগম আমতা আমতা করে বলল — কিছু না,, চল রান্না বসাই ছেলে মেয়ে গুলো উঠেই খাওয়ার চাইবে,,,,,,,

নিপা বেগম তার সাথে চলে যায় রান্নাঘরে,,, দুই জা একত্রে রান্না করতে থাকে। একে এক চারবোন ঘুম থেকে উঠে পড়ে পুনম ঘুম থেকে উঠে আগে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়।

রান্নাঘরে যেয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল — বড় চাচি,,,,,, আম্মু আব্বু,,,,, বড় চাচা ছোট চাচা কই????

— হঠাৎই নিশার হাত পুড়ে গেছে কিভাবে যেনো তাই ওরে নিয়ে হাসপাতালে গেছে,,,,,

— কি কিভাবে????
বলেই কান্না করে দেয় চাদনী বেগম এগিয়ে এসে পুনমকে শান্ত করে
— বড় চাচী আমি নিশাকে দেখতে যাব,,

— যাবি তাহলে চন্দ্রকে ডেকে দে ও তোকে নিয়ে যাক,,,,,,

পুনম মাথা নাড়িয়ে চন্দ্রের ঘরের দিকে যায়।। নিচে তোষক পেতে একা চন্দ্র ঘুমিয়ে আছে। খাটে রাইয়‍্যিন রিশান শিহাব,,, গত কাল পুনমের ফুপি চলে গেলেও শিহাব রিশান থেকে গেছে ওরা চন্দ্রর সাথে ঢাকা যাবে,,,,,,

পুনম হাটু গেড়ে বসে, — চন্দ্র ভাই চন্দ্র ভাই,,,

পরপর দুইবার কাঙ্খিত ডাক ঘুম পাতলা হয় চন্দ্রের। পিটপিট করে তাকিয়ে পুনমে চিন্তিত চেহারা দেখে মিষ্টি হাসে,,,,,

সেই হাসির দিকে খেয়াল নেই পুনমের সে বোনের চিন্তা চিন্তিত।
— ইশশ এরকম সকালটা যদি প্রতিদিন আসতো??
বিড়বিড় করে বলল চন্দ্র পুনম এবার জোড়েই চন্দ্রকে ডাক দেয়,,,

— গাভীর মতো চেচামেচি করছিস ক‍‍্যান আমি বধির না,,,,

— কখন থেকে ডাকছি শুনেন না ক‍্যান,,,, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলেন নিশার হাতে কি যেনো হয়েছে,,,,,,,

— উহ বেশী কিছু না দুই একদিন গেলেই ঠিক হয়ে যাবে,,।।। আড়মোড়া ভেঙ্গে বলে চন্দ্র।

— আমার বোনটা হাসপাতালে আর আপনি এমন কথা বলছেন যান আপনার নিয়ে যাওয়া লাগবে না আমি শিহাব ভাইকে বলছি

বলেই শিহাবের গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে যায়। চন্দ্র জোরে একটা চিল্লানি দেয়।
— ধরছিস ক‍্যান ওরে না ধরে ডাক দেয়া যায় না আমাকে তো একবারও ধরিস নি,,,??

চন্দ্রের চিল্লাচিল্লি শুনে ঘুম ভাঙে বাকি তিনজনের।
— কি হয়েছে চন্দ্র
বুঝতে না পেরে শিহাব বলে। চন্দ্র হিংস্র চোখে একবার পুনমের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে শিহাব চন্দ্রের দিকে একবার তাকিয়ে পুনমের দিকে তাকায় দেখে পুনম কাপা পায়ে দাড়িয়ে আছে চোখ জোড়া ছলছল।

শিহাব বুঝে কিছু একটা হয়েছে।।। চন্দ্র রাগ কন্ট্রোল করে গম্ভীর স্বরে বলল — রেডী হো নিয়ে যাব,,, আমার সামনে এরকম ফ‍্যাচফ‍্যাচ করে কাদবি না একদম চোখে সুপার গ্লু দিয়ে চোখ বন্ধ করে দিব তখন দেখব এরকম চোখের পানি কিভাবে পড়ে।। যাহহহহহ

চন্দ্রের এরকম থ্রেড ও চিল্লাচিল্লি শুনে পুনম দৌড়ে ঘরের থেকে বেড়িয়ে যায়। শিহাব রিশান পুনমের যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে এখন চন্দ্রকে কিছু বলা মানে হীতে বিপরীত হওয়া পরিস্থিতি।

#চলবে