পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-২৯+৩০+৩১

0
2

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৯

ক‍্যানটিনে বসে আছে পুনম পাশে মিহি বসে এদিক ওদিক দেখছে তবে পুনম মাথা নিচু করে বসে আছে। তাকে অবশ‍্য রিশান বসিয়ে দিয়ে গেছে বলে গেছে তাদের জন‍্য খাবার আনতে গেছে এর মধ‍্যেই কোথা থেকে একঝাঁক মেয়েদের দল এসে পুনম মিহির সামনে দাড়ায়।
— এই তোমাদের মধ‍্যে চন্দ্র ভাইয়ের আত্মীয় কে??

মেয়েটির কথা শুনে মাথা উচু করে পুনম। পুনম মিহি একে অপরের দিকে তাকায়
— কি হলো বলছো না কেনো?? সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি,,, বলে টেবিলে চাপর দিতে পুনম শান্ত স্বরে বলল — আমি,, আমি চন্দ্র ভাইয়ের আত্মীয়,, কেনো কী প্রয়োজন আপনার??

মেয়েটার গলার স্বর হঠাৎই যেনো চেঞ্জ হয়ে গেলো মধুর কন্ঠে বলল — তুমি কি হও চন্দ্র ভাইয়ের??

— বোন আইমিন চাচাতো বোন

মেয়েটি খুশী হলো। হাসি মুখেই বলল — তাহলে তো তোমরা চন্দ্র ভাইয়ের ব‍্যপারে এ ঠু জেড সবই জানো তাইনা।।
মাথা নাড়ে পুনম হ‍্যা জানে। মেয়েটি যেনো আরো খুশী হলো গদগদ স্বরেই বলল — তোমরা চন্দ্র ভাইয়ের বউকে আমাকে একটু দেখাতে পারবা??

পুনম মিহি মেয়েটির কথা শুনে টুকুর টুকুর চোখে তাকিয়ে রইল। কি বলে এই মেয়ে চন্দ্র ভাইয়ের বউ আর তারা জানে না। তাহলে কি সত‍্যিই চন্দ্র ভাইয়ের স্পেশাল কেউ আছে ভেবেই কপাল খানা কুচকে গেলো পুনমের।
— কি হলো তোমরা ওকে একবার ক‍্যাম্পাসে আনতে পারবা?? যাষ্ট একবার দেখব কার জন‍্য আমার প্রোপোজাল রিজেক্ট করেছে,,,,

— আমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে এতো কেনো কিউরিসিটি তোমার এলিনা??

পিছন থেকে চন্দ্রের কথায় এলিনা ভরকে গেলো। এলিনা সেই মেয়ে যে ভরা ক‍্যাম্পাসে চন্দ্রকে প্রোপোজ করার মত সাহস দেখিয়েছে। অথচ ভার্সিটির একেকটা বেঞ্চ পযর্ন্ত জানে চন্দ্র নিজের পাশে কোনো মেয়ে সহ‍্য করতে পারে না।
সামনে ফিরে এলিনা জোর করে হাসি টানল ঠোঁটের কোণে। এতেও যেনো মেয়েটাকে চমৎকার লাগল
— কি হলো বললে না তো এতো কেনো কৌতূহল আমার প্রতি,,,,??

— যাকে ভালোবাসি তার প্রতি কৌতূহল থাকবে না। কে সেই মেয়ে যার জন‍্য তুমি আমাকে রিজেক্ট করেছ তাকে দেখার ইচ্ছা পেশন করতেই পারি আমি,,,,

মাথা নাড়ে চন্দ্র — থাকতেই পারে তবে আমি কৌতূহল জিনিসটা বড্ড অপছন্দ করি। ইভেন আমার লাইফে তিন নারী ছাড়া কারো আগমন আমি পছন্দ করি না তাহলে আমার পছন্দের দিকটাও খেয়াল রাখা উচিৎ। আর যদি না রাখো কিভাবে খেয়াল রাখতে হয় তা এই চন্দ্রের বেশ ভালোভাবে জানা আছে
বলেই ঘাড় বাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে পুনমের দিকে তাকায়। পুনম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এলিনার দিকে এতো সুন্দরী মেয়েও চন্দ্রের কাছে পাত্তা পায়নি তাহলে চন্দ্র ভাইয়ের পছন্দের মেয়েটা নিশ্চয়ই আগুন সুন্দরী।।

— খাবার গুলো দ্রুত শেষ করে চল,,
চন্দ্রের ডাকে ধ‍্যান ভাঙে পুনমের। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে এলিনা নামক মেয়েটা চলে গেছে। নিজের ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিল যে মেয়েটা কখন চলে গেছে খেয়াল করল না।।
খাওয়া শুরু করল পুনম মিহিও পাশে বসে নিঃশব্দে খাচ্ছে তার পাশে শিহাব শিহাবের পাশে রিশান তার পাশে চন্দ্র চন্দ্রের পাশে পুনম। পুনম পাশে ফিরে চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — চন্দ্র ভাই ভাবীকে বাসায় কবে আনবেন??

পানি খাচ্ছিল রিশান ফিক করে সব পানি শিহাবের গায়ে পরল। সাথে সাথে কাশিও উঠে গেলো। রিশানের দিকে তাকিয়ে আবার চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — বিয়ে করলেন একটাবার আমাদের কাউকে জানালেন না এটা কি ঠিক??

রিশানের কাশি বন্ধ তিনজনই পুনম ও চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে চন্দ্র নিজের ফোনে কমেন্টের রিপলাই দিতে ব‍্যস্ত।
— আচ্ছা ভাবি কি আমাদের ভার্সিটির কেউ??

মোবাইল খানা পকেটে পুরে চন্দ্র জবাব দিল — হ‍্যা,,
— স‍ত‍্যিই কে,,

— আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ তার জন‍্য একরাশ ভালোবাসা গচ্ছিত হৃদয় এবং চোখের সামনে আনাচে কানাচে শুধু সেই,,,

বোকা পুনম আশেপাশে খুজল। চন্দ্রের নজর অনুসরণ করেও খুজল কাউকে পেলো না।
— কই কাউকেই তো পেলাম না,,,

— না পেলে নাই আমিও বললাম না বলেই সেখান থেকে চলে গেলো। আর পুনম নাক কুচকে চন্দ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল
— ব‍্যাটা তিতা করলা বলবিনা তাহলে এতো ভনিতা করার কি দরকার। ফাজিল কোহানকার,,

________________________ সন্ধ্যা সাতটা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চন্দ্র বাড়িতে ঢুকল,,,
নিচে কেউ নেই মিনু রান্নাঘরে আছে শুধু সে ছুটিতে ছিলো আজই এসেছে।।
পুনম বইয়ে মুখ গুজে আছে মুক্তি ফোন চালাচ্ছে। হঠাৎই পুনম বলল — জানো আপু চন্দ্র ভাই বিয়ে করে ফেলেছে,,,,

পুনমের কথাটা কর্নে যেতেই জোরেশোরেই ভিসম খেলো মুক্তি। বলে কি পুনম চন্দ্র ভাই আবার বিয়ে
বহু কষ্টে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে মুক্তি
— এসব কি বলছিস তুই কোথা থেকে শুনেছিস??

— আরে হ‍্যা আজকে ভার্সিটির একটু আপু চন্দ্র ভাইয়ের বউয়ের কথা জিজ্ঞাসা করল প্রথমে আমি মানতেই পারিনি পরে চন্দ্র ভাইকে জিজ্ঞাসা করতেই সেও সম্মতি জানাল,,,

পুনমের কথা শেষ হতে না হতেই হায় হায় করে ওঠে মুক্তি একি শুনল সে। সারাবছর এক রকম স্বপ্ন দেখিয়ে এখন সব ভাঙচুর করে দিল। দাড়িয়ে বলল — দাড়া আমি এক্ষুনি ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করছি

— হ‍্যা হ‍্যা চলো আমিও আসছি,,,
বলেই মুক্তির পিছু পিছু যায়। চন্দ্র বৃষ্টির এসেছে মাথায় বৃষ্টির পানি পরেছে বিধায় গোসল করে বের হলো টিশার্ট শরীরে চাপিয়ে ট্রাউজারে হাত দিতেই ধপাধপ শব্দ হতে লাগল।
বেশ বিরক্ত হলো চন্দ্র ট্রাউজার পরে নিয়ে গেট খুলে মুক্তিকে দিলো জোরে এক ধমক। ধমকের চোটে বাঘীনি মুক্তি চুপসে বিড়াল হয়ে গেছে চিউচিউ করে বলল — ভাইয়া এটা কি ঠিক করলা তুমি সারাবছর একজনকে ভাবী বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে বসে আছো।। বিয়ে আমরা কিছুতেই মানি না মানব না তুমি লাগলে আমাদের পছন্দ মতোই বিয়ে করে আবার তাও ওকেই বিয়ে করা লাগবে,,,,

এই ওসময়ে মুক্তির প‍্যানপ‍্যানানি বিরক্ত লাগল চন্দ্রের তবুও বিরক্ত চেপে কোণা চোখে পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — বিয়ে যাকে করার কথা তার কথাই বলেছি তবে কিছু কিছু মানুষ এতোটাই বেকুব যে সব কিছু ধারনাও করতে পারে না।
মুক্তি একবার পুনমের দিকে তাকিয়ে আবার চন্দ্রের দিকে তাকায়। চন্দ্র চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখ এই মেয়ে এখনো কিছু বুঝে নাই। মাথা নাড়িয়ে পুনমকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় মুক্তি। চন্দ্র দরজায় হ‍্যালান দিয়ে তাদের যাওয়া দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল বিড়বিড় করে বলল
— এই ছয়টা মাস যে কবে শেষ হবে,, কবে তুমি আমার বুকে থাকবে জোহরা। তুমি বিহীন চন্দ্র বিলীন।

ঘুমানো প্রস্ততি নিচ্ছে পুনম। বিছানা ঝেড়ে মশারি টানিয়ে সাইড গুলো গুজে দাড়াতে পুনমের পিঠে একটা কিছু বারি খেল। পুনম দেখল সেই সকালের মতো একটা বল আকারে মুড়ানো পেপার। হাত বাড়িয়ে সেটা উঠিয়ে নিলো।
— এই মেয়ে এতো বোকা কেনো তুমি তোমার সামনে বসেই তোমাকে কেউ আগাগোড়া স্ক‍্যান করে তুমি টের পাওনা এতোটা বোকা হয়না জোহরা বেশী করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করেতো।

পুনম অবাক আবার সকালের মতো চিঠি পেয়ে দৌড়ে বারান্দায় যায় নিচে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে পায়না আবার ফিরে আসতে নিলে আরেকটা কাগজ এসে পরে। পুনম খুলে দেখে সেখানে লিখা
— শোনো মেয়ে আমাকে এতো খুজতে যেয়ো না পরে আমাতে নিজেকে হারিয়ে ফেললে আর পাবে না আমি কিন্তু মানুষ ভালো না,,,,,

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩০

আকাশ জুড়ে আজ মেঘের ঘনঘটা। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় বৃষ্টি পড়বে তবে বৃষ্টি আসার না নেই ধূসর রঙা আকাশ দেখে আজ পুনমের ছাদে বসে ছবি আকতে মন চাচ্ছে। তাই ব্রাশ ক‍্যানভাস ও রং প‍্যালেট নিয়ে উঠে পড়ে ছাদে আজকে প্রায় একসপ্তাহ ধরে পুনম পেইন্টিং করে না তাই মুক্তি পিছন পিছন এসেছে ভিডিও করবে। পুনমের এই দিকে কোনো ধ‍্যান নেই সবসময়েই মুক্তি করে।

ছাদে পাটি বিছিয়ে বসে পড়ে দুইবোন। সময়টা বিকালের দিকে হলেও হালকা বাতাস ধূসর রঙা আকাশের কারণে সন্ধ‍্যে হবো হবো ফিল আসতেছে।
— এই পূর্ণ কফি খাবি,,

— না আপু চা হলে চলবে,, কফি তেতো। নাক মুখ কুচকে বলল পুনম

— এই তোদের এতো অমিল হলে কেমনে হবে রে,,

— মানে কিসের অমিল বলছ,,

মুক্তি কথা ঘুরিয়ে বলল — চন্দ্র ভাইয়ের হাতের কফি অনেক মজা জানিস?? আর চন্দ্র ভাইতো কফি লাভার

— জেনে লাভ নেই চন্দ্র ভাইয়ের মতো তিতা করলা। তিতা খাবারই পছন্দ করবে এতে অবাক হওয়ার কিছু না আর জানারও কিছু নাই

চন্দ্রের প্রতি এমন উদাসীনতা দেখে মুক্তি হতাশ তবুও হাল না ছেড়ে বলল — এই পুনম জানিস আমার ভাইয়ের সৌন্দর্যের কারণে সেই নবম শ্রেণিতে থাকতেই প্রেমের প্রস্তাব আসত,,,

— তো আমি কি করব। তাকে সেভাবে কোনোকালে খেয়াল করা হয়নি চন্দ্র ভাইয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেষ্ট নাই,,,

মনের কথা মুখে বেফাঁস বলেই ভয় পেল পুনম ভীতি চোখে মুক্তির দিকে তাকাতেই দেখে মুক্তি কটমট চোখ পুনমের দিকে তাকিয়ে আছে। বোকা হাসল পুনম তবুও মুক্তিকে চেয়ে থাকতে দেখে আবারও নিজের কাজে মনোনীবেশ করল। মুক্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেলো চা আনতে এদিকে ক‍্যামেরা সেট করা। রেকর্ডিং অপশনে ভিডিও রেকর্ড হচ্ছে।।

রান্নাঘরে এসে দেখে আগোছালো চুলে গ্রে কালারের টিশার্ট পড়া চন্দ্র কফি মেশিন দ্বারা বিট করছে । মুক্তিকে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞাসা করল
— কফি খাবি??
ভাইয়ের হাতের কফি মুক্তি কখনও মিস করে না একগাল হেসে মাথা নাড়াতেই চন্দ্র আবার কফি বানানোতে মনোযোগ দিল। মুক্তি পাতিলে এককাপ পরিমান পানি নিয়ে চুলায় বসিয়ে চন্দ্রের উদ্দেশ্যে বলল — পুনমের সাথে একটু বেশী বেশী চিপকে থাকতে পারো না,,,??

মুক্তির এমন তারা কথায় হতবাক চন্দ্র মুক্তি আর যাইহোক চন্দ্রের সাথে কখনও এমন কথা বলেনি। ভাইকে অসম্ভব ভালোবাসলেও বেশ ডিসটেন্স মেনটেইন করেই চলেছে সে। আর গম্ভীর চন্দ্রও খোলামেলা হতে পারেনি তবে আজ এমন কথা বলল কেনো,??

চন্দ্রের ভাবনা মাঝেই মুক্তি আবার বলল — এতো সুন্দর হয়ে লাভ কি যেই সৌন্দর্যতা দিয়ে পূর্ণকে পটাতে পারো না।
মুখটা সাইটে নিয়ে একগাল হাসল চন্দ্র ফের এদিকে ফিরিয়ে বলল — পুনম পটলে কি হবে??

— প্রেম হবে ভালোবাসা হবে,, আটকে রাখার থেকে নারীদের ভালোবেসে রাখলে জীবন সুন্দর হয় বুঝলে।

— হু
গম্ভীর স্বরে বলে কফি মগ মুক্তির দিকে বাড়িয়ে দেয়। ততক্ষণে পুনমের চাও হয়ে গেছে মুক্তি তার কফি মগ ও চায়ের কাপ সাথে কুকিজ ট্রেতে নিতে পিছন থেকে চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — ঐ গাধীর সামনে সারাদিন খালি গায়ে বসে থাকলেও ও আমার দিকে ফিরে তাকাবে না।

— তো তাকানোর ব‍্যবস্থা করো,,,
মুক্তির কথার উত্তরে চন্দ্র ভ্রু নাচিয়ে চলে গেলো তবে মনে মনে হাসল সেই ব‍্যবস্থা তো শুরু হয়ে গিয়েছে।

____________________

সকালে উঠে পুনম বড় চাচীর সাথে সাহায্য করে। নাশতা বানানো শেষ হলে টেবিল গুছিয়ে রোজিনা বেগমের জন‍্য নাশতা নিয়ে যায়। আজ রোজিনা বেগমের শরীরটা ভালো না ।। পারভেজ সাহেব রেডী হচ্ছে রোজিনা বিছানায় বসা
— আব্বু আসব,,?

— আসো আম্মাজান জিজ্ঞাসা করা লাগে।
বাবার কথায় বিস্তর হাসে পুনম রোজিনা বেগমের সামনে বসিয়ে তাকে খাওয়াতে নিলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রোজিনা বেগম।
— কি হলো আম্মু খাও
রুটির টুকরো সামনে ধরে বলল।
— রুটি খাব না ভাত খাব পান্তা ভাত লবণ মরিচ দিয়ে।

মায়ের কথা শুনে পুনম চিন্তায় পরে যায়। বলে কি তার মা এখন পানি ভাত কই পাবে তবুও বলল
— আচ্ছা বসো দেখি চাচীকে জিজ্ঞাসা করে আছে নাকি,,,

পুনম উঠতে নিলে বাধ সাধে রোজিনা বেগম। আবার কি হলো। প্রশ্ন চোখে তার দিকে তাকাতেই তিনি বলল — এগুলোই দে মা এখন খাই পরে পান্তাভাত খাব তোর ভার্সিটি দেরী হয়ে যাচ্ছে।

পুনম কিছু না বলে একগাল হেসে খাওয়াতে শুরু করে। পারভেজ সাহেব বসে বসে মা মেয়ের কান্ড দেখে কিছু বলে না এরমধ্যেই রুপশা ফোন দেয়।
তিনজন মিলে রুপশার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে থাকে রুপশাকে আসতে বললে সে জানায় লিমনের ইদানীং চাপ বেড়েছে তাই এখন আসতে পারবে না পরে আসবে।

উপর থেকে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে নামছে চন্দ্র পরনে ডার্ক কফি কালারের শার্ট। পুরুষটার বেশীর ভাগ কাপড় ডার্ক কালারের অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ার দারুন তাকে মানায় ভালোই।।
পুনম পারভেজ সাহেবের পাশে বসে ব্রেকফাস্ট করছে চন্দ্র একদম সোজা পুনমের সামনে বসে। পুনম ফিরে তাকায় না এই লোকটাকে সে ভয় পায়। তাই খুব একটা কথা বলে না আবার চন্দ্র গম্ভীর টাইপের হওয়াতে কারো সাথে সখ্যতা নেই। একমাত্র শিহাব রিশান বাদে।।

তবুও পুনমের ফিরে না তাকানো চন্দ্রের বুকে লাগল এই রমনীটি এমন কেনো ভেবে পায়না চন্দ্র।
খাওয়া দাওয়া শেষে পারভেজ সাহেবের সাথে পুনম বেড়িয়ে যায়। চন্দ্র একা একাই যায় ভার্সিটিতে বাইক থামতেই শিহাব রিশান এসে হাজির সাথে কিছু জুনিয়র।

— ভাই ভাবী আসতেছে
জুনিয়র রাব্বীর কথায় পিছন ফিরে তাকায় চন্দ্র পুনম রিক্সা থেকে নামছে। পারভেজ সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় দিয়ে সেই রিক্সা দিয়েই চলে গেলো।
পুনম পাচঁ মিনিট দাড়াতে মিহি আসলে দুজনে একসাথেই ভিতরে ঢুকল।
পুনম আশেপাশে তাকাতে তাকাতে ভিতরে ঢুকছে আজকে চিঠি ওয়ালার কোনো খোঁজ নেই।

— কি হলো পরপর দুইদিন লোকটা চিঠি দিলো আজ কি হলো নাকি কোনো সমস্যা হয়েছে।। ভাবতে ভাবতে মিহির থেকে পিছনে পরে যায় নিজের মতো হাটতে হাটতে মিহি পাশে তাকিয়ে পুনমকে না পেয়ে পিছন ফিরে দেখে পুনম কি যেনো ভাবতে ভাবতে হাটছে।
— অ‍্যাই পুনু কি ভাবছিস??

— হু কিছু না চল
বলেই তারা ক্লাসে চলে যায়। পরপর তিনটা ক্লাসের পর জানায় আজ আর ক্লাস হবে না পুনম ফোন বের করে টাইম দেখল। এগারোটা বাজে এখন বাসায় যেতে মনে চাচ্ছে না।। মিহিও হলে যাবে না এখন লাইব্রেরিতে যাবে তাই পুনমও মিহির সাথে যাওয়ার পরিকল্পনা করল।

লাইব্রেরিতে নিরবতা বেশীর ভাগই টেবিল খালি সবাই মাঠে আড্ডা দিচ্ছে শুধু পড়ুয়া স্টুডেন্ট”সরাই লাইব্রেরিতে আসে। মিহি সেল্ফে নিজের প্রয়োজনীয় বই খুজে টেবিলে বসে লিখতেছে।
পুনম বই দেখতে দেখতে একটা বই টান দেয় অপর পাশ থেকেও বইটা টান দেয়। পুনম ভ্রু কুচকে ফাকা দিয়ে তাকালে কাউকে দেখতে পায় না আবার বইটা টান দেয় এবার সহজেই পেয়ে যায় প্রথম পাতা উল্টাতেই দেখে ধূসর রঙা এক ভাজ করা পেপার।
পুনম কাগজের ভাজটা খুলে,,,,,
— ডিড ইয়‍্যু মিস মিই জোহরা,, আমি যদি জানতাম কেউ একজন অধির আগ্রহে আমার অপেক্ষায় আছে তাহলে আমার জোহরা ভার্সিটিতে পা দেয়ার সাথে সাথে বান্দা তার জোহরার চিরকুট রেডী রাখত।

পুনম ” তার জোহরা ” নামের উপর হাত বুলায় এই লেখাটা কেমন জানি কলিজায় লাগে পুনমের। পুনমের ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে এক মিষ্টি হাসির রেখা। পুনম কি জানে সেই হাসি কারো হৃদয়ে তোলপাড় করার জন‍্য যথেষ্ট। উহু জানে জানলে এই রমনী এতো মিষ্টি করে হাসত না কেননা এই রমনী তার সামনে আসলেই তো চুপসে থাকে।
অপর সাইটের সেল্ফে হ‍্যালান দিয়ে হাটু ভাজ করে দাড়িয়ে পুনমকে দেখে চলেছে চন্দ্র।।
— এই পুনু

মিহির ডাকে স্তম্ভিত ফিরে পুনম এতোক্ষণ সে চিঠিতে ডুবে ছিলো।।
— হু শেষ তোর??

— হ‍্যা চল বাসায় যাই

— হু
বলে বই খানা রাখতে গেলে দেখল আরেকটা চিরকুট খুলে দেখে সেখানে লেখা — রাতে বারান্দায় আসবে অপেক্ষায় থাকব মাই জোহরা,,,

পুনম দুইটা চিরকুটই হাতের ভাজে নিয়ে চটকরে ব‍্যাগে ঢুকিয়ে ফেলে।।
মিহি সেটা খেয়াল করে বলল — কি লুকাচ্ছিস

— কিছুনা চল
বলেই আগে আগে হাটতে শুরু করে।।

________________________

অপেক্ষার প্রহর বুঝি কাটতে চায়না পুনম একটু পরপর ঘড়ির দিকে তাকায় তো বইয়ে মুখ গুজে। রাত আটটা বাজে অথচ পুনম এখনই অধৈর্য‍্য হয়ে যাচ্ছে এই বুঝি প্রেমে পড়ার লক্ষণ মিটিমিটি হাসে পুনম তখনই মুক্তি তার ঘরে ঢুকে পুনমকে মিটিমিটি হাসতে দেখে সন্দেহ চোখে তাকায়।।
— কিরে এরকম একা একা হাসছিস কেনো??

— হু কই নাতো
হরবরিয়ে বলেই আবার বইয়ে মুখ গুজে।। রাতের খাবার খেতে বসেছে সবাই খাওয়া শেষে চন্দ্রকে বাইরে যেতে দেখে চাদনী বেগম জিজ্ঞাসা করলেন
— এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস??

— ঐ বাসায় আজ ঘুমাব বাসাটা খালি পড়ে আছে তাই ভাবলাম আমি শিহাব রিশান একটা রাত থাকি,,,

— শিহাব রিশান কই
কামরুল সাহেবের কথায় চন্দ্র তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। তার তাকানোর মানে এই যে তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছ। কামরুল সাহেবও ভ্রু নাচায় তার মানে এই যে তুমি বিশ্বাস যোগ্য কোনো কাজ করেছ।
চন্দ্র সেই দৃষ্টি পাত্তা না দিয়ে চলে যায়।।

ঠিক রাত এগারোটায় ঠাসস করে কিছু পড়ার শব্দে পুনম বারান্দায় যায়। দেখে একটা হ‍্যালিকপ্টার ড্রোন চাকার মাঝে একটা চিঠি আটকানো।
পুনম ফ্লোরে বসে রেলিং এ হ‍্যালান দিয়ে চিরকুট খুলে
— অপেক্ষা করিয়েছি বুঝি মাই জোহরা,, আই অ‍্যাপোলোজাইস,, তবে তোমার অপেক্ষা আমার মনে শীতলতা সৃষ্টি করেছে,,

পুনম হাসে দৌড়ে ঘর থেকে পেন পেপার আনে লিখতে শুরু করে — আপনি কে?? আপনার নাম কি?? কিছুই তো জানা হলো না,,,

চিঠিটা হেলিকপ্টারে চাকায় গুজে দিতে সেটা সাথে সাথে উড়তে শুরু করে।। মিনিট খানিক পরে উত্তর আসে — আমি মানুষ,,, তিমিরে ঢাকা ধরনীকে প্রজ্বলিত করার একমাত্র অধিশ্বর যে ঐ সুদূর অম্বরে বিরাজমান।

পুনম ভ্রু কুচকে একবার আকাশে তো একবার চিঠির দিকে তাকায়। অপর পাশে ড্রোনের মাধ‍্যমে পুনমকে দেখতে থাকা চন্দ্র হাসে মনে মনে। তার বোকারানী কিছুই বুঝে নাই।
পুনম এবার লিখে — এটা আবার কেমন নাম কিছুই বুঝিনি,,,,

এবার উত্তর আসে — তো কি নামে ডাকবেন আপনিই ঠিক করেন মাই জোহরা,,,
চিঠিটা হাতে নিয়ে পুনম কিছুক্ষণ চিন্তা করে পরোক্ষনেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে,, লিখতে শুরু করে — আপনি তো আমায় জোহরা ডাকেন,, তো আমি আপনাকে আলী ডাকি শের”এ আলী,,,,

কাগজটা আটকে দিতেই তা উড়ে চলে গেলো। আবার মিনিট দুইয়ের মধ‍্যে উত্তর আসল
— অফকোর্স মাই জোহরা,,,,,,,,

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩১

ফজরের আজানের ধ্বনি কানে যেতেই নড়েচড়ে ওঠে পুনম ঘুম ঘুম চোখে এদিক ওদিক তাকাতেই নিজের অবস্থান বুঝে অবাক হয়।
কাল রাতে চন্দ্রের সাথে চিঠিতে কথা বলতে বলতে কখন যে বারান্দায় ঘুমিয়ে গেছে বলতে পারবে না।।
পুনম ঘরে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচটা তিন বাজে পুনম আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে যায় ওযু করে নামাজে দাড়ায়। নামাজ পরে ঢুলতে ঢুলতে আবার ঘুমিয়ে যায় ঘুম পাগলী পুনম যে অর্ধ রাত জেগে চন্দ্রের সাথে কথা বলেছে তাই ঢের।
ওদিকে চন্দ্র ঘুমিয়ে আছে ঘুমের মধ‍্যেও প্রশান্তি চেহারা বিরাজমান। শিহাব দশটার দিকে ঘুম থেকে ওঠে চন্দ্রকে বারান্দায় ঘুমাতে দেখে অবাক হয় সবচেয়ে বেশী অবাক হয় এখনো ঘুমাতে দেখে চন্দ্র কখনও আটটার উপরে ঘুমায় না সে যতরাতেই ঘুমাক।।
শিহাব ভয় পেলো আবার জ্বরটর এলো নাকি এই ছেলের জ্বর ভয়ানক। বারান্দায় গিয়ে শান্ত চন্দ্রের গায়ে হাত দিয়ে দেখল নাহ কোনো জ্বর নেই আর মুখটাও বেশ শান্ত।
উঠে দাড়িয়ে যায় এই ব‍্যাটা যদি দেখে তাকে ধরেছে শিহাব তাহলে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে ছাড়বে।।

— চন্দ্র এই চন্দ্র উঠ এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছিস কেনো??

নড়েচড়ে ওঠে চন্দ্র ঘুম ঘুম চোখে শিহাবের চেহারা নজরে আসতেই লাফ দিয়ে ওঠে দ্রুত ওয়াশরুমে যায়। যেতে যেতে শিহাবকে বলে — দাড়িয়ে আছিস ক‍্যান গাধা আজকে ভাইবা আছে মনে নাই বারোটার দিকে।

শিহাব ও তড়িঘড়ি করে রিশানকে উঠিয়ে আরেকটি বাথরুমে যায়। তিনজন একেবারেই গোসল করে রেডি হয় কাল তারা পোটলা পুটলি একসাথে নিয়ে এসেছে এখানে কয়েকদিন থাকবে সেই জন‍্য চন্দ্রর কথা শুনে শিহাব ভেবেছে কোনো পার্টি টার্টি হবে তবে সেগুরে বালি দিয়ে রিশান নিজের মতো ফোনে ব‍্যস্ত আর চন্দ্র কি হেলিকপ্টার গুতাগুতি করল তাই রাগে দুঃখে শিহাব ঘুমিয়ে পরেছে।

___________________

এগারোটার দিকে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বাসায় ঢুকে চন্দ্র। পুনম সোফায় বসে টিভি দেখছে চন্দ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে টেবিলে বসে গম্ভীর স্বরে বলল — খেতে দে,,,,,

চন্দ্রের গমগমে স্বরে পুনম তার দিকে তাকায় দেখে চন্দ্র টেবিলে বসে ফোন দেখছে তাই বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে যায় রান্নাঘরে তার পরপরই শিহাব রিশান এসে হাজির। রিশান চিল্লিয়ে বলল — পুনম আমরাও আছি,,,

পুনম হটপটের থেকে রুটি বের করে প্লেটে নিয়ে ছোট বাটিতে ভাজি নেয় আরেকটা বাটিতে ছোলার ডালের ভুনা নেয়। দুই হাতে দুই প্লেট নিয়ে বের হতে চন্দ্র এগিয়ে ওর হাতের প্লেট গুলো নিয়ে নেয়। ঐদুইটা শিহাব ও রিশানের সামনে রেখে নিজের জায়গায় বসে পুনম লাষ্ট প্লেট নিয়ে আসে চন্দ্রের সামনে রাখে। চন্দ্র বিনা বাক‍্যে খাওয়া শুরু করে পুনম পাশ থেকে সরতে নিলে। চন্দ্র মাথা নিচু করেই বলে সেখানে বসতে পুনমও বিরক্তি নিয়ে বসে চন্দ্র তাকায় পুনমের বিরক্তিকর চেহারাই মনে মনে হাসে এই মেয়েটাই কালকে তার সাথে বেশ সহজ হয়ে চিঠিতে কথা বলেছে এখন দেখো কি বিরক্ত। মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন কাজ দিয়েছে তাকে।।

খাওয়া দাওয়া শেষে চন্দ্র হাত ধোয়ার জন‍্য পানি আনতে বলে পুনম তাই করে পানি এনে দিতে চন্দ্র ইশারা করে ঢেলে দিতে । পুনম পানি ঢালতে শুরু করলে চন্দ্র হাত ধোয়া শুরু করে বোলে। হাত ধুয়ে পুনমের ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে বলে — তুই খুব ভালো বউ হবি,,, শেষে বিড়বিড় করে বলে
— আমার বউ আলীর জোহরা হবি তুই,,,,

— কি বললেন??

— হু,, মা চাচী কই??

— বড় চাচী আম্মুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে আর মুক্তি আপু কলেজে,,

— পুনম বইনা এককাপ চা দিবি

— অবশ্যই দিব শিহাব ভাইয়া তুমি বসো আমি এখনই আনছি,,, রিশান ভাইয়া তুমি খাবে

রিশান আড়মোড়া ভাঙে — দিলে ভালোই হয়,,,,
চন্দ্র দাড়িয়ে দেখল চন্দ্রকে কিছুই জিজ্ঞাসা করল না চন্দ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল শিহাব ও রিশানের দিকে শিহাব রিশান মিটিমিটি হাসছে।
কিছুক্ষণ পর পুনম শিহাব ও রিশানের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে চন্দ্রের হাতে কফির মগ দিতে চন্দ্র শিহাব রিশানের দিকে তাকিয়ে ঠোট বাকায়।
শিহাব ভেংচি মারে রিশান হেসে ওঠে। হঠাৎই রিশানকে হাসতে দেখে পুনম অবাক হয় — কি হয়েছে ভাইয়া??

— হু কিছু না
কোনো রকম হাসি সামলে বলে। — চল দেরী হচ্ছে
বলেই চন্দ্র বেড়িয়ে যায় তার পিছু পিছু শিহাব রিশান ও বেড়িয়ে যায়।

________________
আজ ভ‍্যাপসা গরম পরেছে তাই চন্দ্র বাসায় এসে আগে গোসলে ঢুকেছে। শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে ভাবে আজ তার জোহরাকে জিজ্ঞাসা করবে চন্দ্রকে দেখতে না পারার কারণ।
সন্ধ্যায় পুনম পড়তেছিল তখনই হঠাৎই ফোনটা ঝংকার দিয়ে বেজে ওঠে পড়ার সময় হঠাৎই ফোন আসায় পুনম বিরক্ত হয় ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। না উঠিয়ে আবার রেখে দেয়। ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে যায়। ফের বাজে এরকম পরপর তিনবার হলে চতুর্থবারে রিসিভ করে
— হ‍্যালো আসসালামু আলাইকুম

অপর পাশ থেকে কোনো কথা আসে না স্রেফ নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। অনেকবার পুনম হ‍্যালো হ‍্যালো বললেও কোনো কথা না আসায় পুনম ফোন কাটে।।
ফোনটা পাশে রাখে আবার পড়ায় মনোযোগ দিতে নিয়েও পারে না আজ সারাদিনে শের “এ আলী সাহেবের সাথে কথা হয়নি। তাই মনটা কেমন করছে ভালো লাগছে না তার তাই বারান্দায় যায় পুনম।

খোলা আকাশের বুকে থাকা দ্বাদশের চাদেঁর দিকে তাকিয়ে আছে আজকের চাদঁটা বেশ উজ্জল মনে হচ্ছে পূর্ণিমা। হঠাৎই এই সময় হেলিকপ্টার ড্রোন ল‍্যান্ড করে তার বারান্দায়।
পুনম হাটু গেড়ে বসে বলল — কি ডিজিটাল কবুতর আজ সারাদিন পর বুঝি শের “এ আলী সাহেবের মনে পরল।
পুনম চিঠি খুলল — তুমিময় তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত আমি এর সুরাহা কি বলতে পারো এতো জ্বালাও কেনো??

— যে নিজেই দহনে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার তাকে আর কি জ্বালাব

ঘরে বসে পুনমের চিঠি পড়ে ঠোট কামড়ে হাসে চন্দ্র হ‍্যা পুনমের কথাই ঠিক চন্দ্র তো নিজেই জ্বলে পুড়ে অঙ্গার তাকে আর কি জ্বালাবে। চন্দ্র এবার একটা ধূসর রঙ্গা পেপার নেয় গুটিগুটি অক্ষরে লিখে — সেই দহন যে জোহরা বিহীন মিটবে না। যেদিন আমার জোহরা এই বুকে মাথা রাখার লাইসেন্স পাবে সেদিনই এই দহনে প্রলেপ পরবে।

চন্দ্রের চিঠি পড়ে বুকে জড়ায় পুনম কেউ তাকে এতোটা ভালোবাসে। আচ্ছা তার কপালে এতো ভালোবাসা সইবে তো???

— আপনি কে???

পুনমের হঠাৎই প্রশ্নে চন্দ্র থমথমে থাকে কিছুক্ষণ ফের ঘুরিয়ে পুনমকে চিঠি লিখে — আচ্ছা চন্দ্র কে??

পুনম ভ্রু কুচকায় চন্দ্রের চিঠি দেখে এই লোকটা চন্দ্রকে চিনে কিভাবে?? পুনম উত্তরে লিখে
— চন্দ্র আমার চাচাতো ভাই কেনো আপনি তাকে চিনেন??

চন্দ্র মনে মনে হাসে চন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করছে চন্দ্রকে চিনে কিনা। চন্দ্র জবাবে লিখে — হ‍্যা খুব চিনি তুমি কিন্তু চন্দ্রর থেকে দূরে থাকবে বলা তো যায়না কখন ক্রাশড হয় যাও,,,,,

চন্দ্রের চিঠি পড়ে পুনম নাক কুচকে নেয়। লিখে
— শের “এ আলী সাহেবের ঐ ব‍্যাটা তিতা করলা সেজে গুজে মেকআপ করে আমার সামনে বসে থাকলেও তার দিকে আমি ফিরে তাকাই না। আমি বুঝি না ঐ তিতা করলার জন‍্য মেয়েরা এতো পাগল কেনো আমার তো একদমই ইন্টারেষ্ট নাই।

পুনমের এমন কথায় চন্দ্রের বেশ চিন্তা হয় এই মেয়ে সত্যিটা জানলে তুলকালাম বাধিয়ে ফেলবে ভেবেই ঢোক গিলল চন্দ্র। সারা দুনিয়ায় ড‍্যামকেয়ার ভাবে চলা চন্দ্র একটা পুচকে মেয়েকে ভয় পাচ্ছে যে কিনা তার থেকে সাত আট বছরের ছোট।

#চলবে