পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-৩৫+৩৬+৩৭

0
19

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৫

চাচার কথার সমীকরণ মিলাতে মিলাতে পুনম নিজের ভাবনায় ডুবে গেলো। চাচা কার সাথে চন্দ্র ভাইয়ের বিয়ের কথা বলছে রুপশা আপু ও নিশা বাদে একমাত্র সেই বাকী আছে। চিন্তা করে আবার চন্দ্রের দিকে তাকায় দেখে চন্দ্র ও তার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন তীক্ষ্ম নজর। কি যেন ছিল ঐ নজরে পুনম নিজের চোখ সরিয়ে নিল। পুনম আর ভাবতে পারছে না সে আর চন্দ্র ভাই কোনো ভাবেই সম্ভব না। পুনম শের “এ আলী সাহেবের সাথে এই কয়দিনে বেশ ভালোভাবে জড়িয়ে পরেছে তাকে ছাড়া কাউকে ভাবতেও পারছে না। মনে মনে ভাবল পুনম।

আবারও পূর্বের গলা ফাটিয়ে চিৎকারের ফলে ধ‍্যান ভাঙ্গে পুনমের। এতোক্ষণ তারা সবাই ড্রয়িং রুমেই ছিলো ঘুম ভাঙায় কারোই ঘুম আসছিল না তাই সবাই গল্পই করছিল তবে পুনম ছিল নিজের ভাবনায় ডুবে।
— ওলে লে আমার ভাইয়ুটা কাদে কেনো কে মেরেছে ভাইয়ু কে??

পুনমের আহ্লাদী স্বরে কান্না থামিয়ে পূর্ব ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে থাকল। সবাই অবাক এই ছেলে মায়ের কোলে থাকছেই না শুধু খাওয়াটা বাদে। তবে পারভেজ সাহেবের ভাবান্তর হলো না যেন এটা হওয়ারই ছিলো।
পূর্ব আবার পুনমের কোলেই ঘুমিয়ে যায়। এবার আর কেউ রিক্স নিতে চায়না। তাই রুপশা বলল
— পুনম তোর কাছেই পূর্বকে রাখ দেখ আর কাদে কিনা,,??

— হ‍্যা আম্মাজান সেটাই ঠিক হবে
পারভেজ সাহেব বলে রোজিনা বেগমের দিকে তাকায়। রোজিনা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা দেখে পারভেজ সাহেবের ঠোঁটের অদ্ভূত হাসি ফুটে উঠল।

— হ‍্যা এবার যে যার মতো ঘুমাতে যাই
মিরাজ সাহেব হামি দিতে দিতে বলল। তার কথা শুনে নিপা বেগম ফোরণ কেটে বলল — হ‍্যা সেতো ঘুমাবেই তোমার মতো সবাই ঘুম কাতুরে কিনা,,,

নিপা বেগমের কথা শুনে সবাই হাসিতে মেতে ওঠে। মিরাজ সাহেব ছোট ছোট চোখে তাকায় নিপা বেগমের দিকে। পুনম সবার আগে পূর্বকে নিয়ে চলে যায় চন্দ্রও বিরক্ত হয়ে পুনমের পিছু পিছু যায় — ছ‍্যাহ এখন এই চাচাতো ভাই শালা আমার বউয়ের উপরেও ভাগ বসিয়েছে,,,, নিজ মনে বিড়বিড় করে ঘরে গিয়ে গেট লাগিয়ে ধপ করে শুয়ে পরল।

পুনম ঘরে ঢুকে পূর্বকে শুয়িয়ে নিজেও শোয়। এর মধ‍্যে একবারও পূর্ব নড়াচড়া করে নাই।

_______________________

একজন নারীর মাতৃত্ব পরিপূর্ণ পায় মাতৃ দুগ্ধ তার শিশু সন্তানকে খাওয়ানোর মাধ‍্যমে। আজ থেকে রোজিনা বেগম সেটার থেকেও বঞ্চিত হলেন।
সকালে ঘুম থেকে পূর্ব খাওয়ার মুখেই নিচ্ছে না গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। বাসায় কেউ নাই পুনম মুক্তি গিয়েছে নিজ নিজ ভার্সিটি চন্দ্র কোচিং সেন্টার গেছে ।
মিরাজ সাহেবরাও সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়েছেন নিজ বাসস্থান উদ্দেশ্যে। পারভেজ সাহেব কামরুল সাহেব গেছে দোকানের উদ্দেশ্যে।

— কিরে রোজী খাওয়াতে পারলি??

— না ভাবী খাইতেছে না। কি যে করি এমন কাদলে তো অসুস্থ হয়ে পরবে এমনিতেই আটমাসে হয়েছে ওজন কম,,,,
চিন্তিত স্বর রোজিনা বেগমের। চাদনী বেগমও চিন্তিত হলেন এইটুকু বাচ্চা এখানো না খেয়ে আছে বেলা এগারোটা বাজতে চলল।

— আচ্ছা এককাজ কর গোসল করিয়ে দে দেখ গোসল করলে খিদে লাগলে খায় নাকি??

চাদনী বেগমের কথা শুনে মাথা নাড়ায় রোজিনা বেগম তার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

______________________

বেলা বারোটা বেশ কয়েক ঘন্টা না খাওয়ার ফলে পূর্বের কান্নার জোর আরো বেড়ে যায়। রোজিনা বেগম ও চাদনী বেগম কোনো মতেই ঠাণ্ডা করতে পারছে না।
কিছুক্ষণ পরেই পুনম বাসায় চুকে ভাই থাকায় আজ মিহির সাথে আড্ডাও দেয়নি সে আবার শের “এ আলী সাহেবের চিঠিও পায়নি তাই একপ্রকার খারাপ লাগা নিয়েই পুনম বাসায় ঢোকে সে বুঝেছে কাল রাতে চিঠির উত্তর না পাওয়ায় সাহেবের অভিমান হয়েছে।
পূর্বের কান্না শুনে দৌড়ে সেদিকে যায় পুনম কাধের ব‍্যাগটা কোনো রকম রেখে ভাইকে কোলে নেয় পুনম কোলে নেয়ার পাঁচ মিনিটের মধ‍্যেই কান্না কমে আসে পূর্বের আঙ্গুল মুখে দিয়ে ফুপাতে থাকে

— আম্মু ভাইয়ুর খিদে পেয়েছে,,,,

— খিদে পেয়েছে তো খাচ্ছে না কেনো মুখেও তো নেয় না।
রোজিনা বেগমের ক্লান্ত স্বর। — এই পুনম মা একবার শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবি দেখবি এতো কাদে ক‍্যান দুই দিন আগেও তো ভালোই ছিল।
— হ‍্যা চাচী নেওয়াই যায় তুমি রেডী হয়ে নেও মুক্তি আপু আসলেই আমরা যাবোনে,,,,

— দ্বারা মুক্তিকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করি কই আছে??
বলেই মুক্তিকে কল দেয় চাদনী বেগম। মুক্তি রিসিভ করে জানায় সে দশ মিনিটের মধ‍্যেই পৌঁছে যাবে। তাই চাদনী বেগম রেডী হতে চলে যায় পুনম মায়ের দিকে তাকায় কেমন করে তাকিয়ে আছে পূর্বের দিকে পুনমের খারাপ লাগে। পুনম বোঝানোর স্বরে বলে — ভাই ঠিক হয়ে যাবে আম্মু চিন্তা করো না,,

রোবটের মতো মাথা নাড়ায় রোজিনা বেগম। ফের পুনমের দিকে তাকায় মেয়েটা ভার্সিটি থেকে এসে একদন্ড বিশ্রামও নিতে পারেনি।
— এখানে বস
নিজের পাশের জায়গাটা দেখিয়ে বলল।
— না বসা লাগবে না তাহলে যদি ভাই আবার কাদেঁ!!

মুক্তি আসার পরপরই তারা বেড়িয়ে যায় পূর্বকে নিয়ে।
ডাক্তারের কেবিনে বসে আছে পুনম চাদনী বেগম। ডাক্তার পূর্বকে ভালোমতো চেকআপ করে দেখল।
— নাহ পেটে গ‍্যাস ও হয়নি তাহলে খাচ্ছে না কেনো। আপনারা বরং এককাজ করেন ফর্মূলা খাইয়ে দেখতে পারেন খায় কিনা।
বলেই প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনী ঔষধ ও দুধের নাম লিখে দিল।
চাদনী বেগম আসার সময় নিয়ে আসল ফার্মেসী থেকে পুনম পরিমাণ মতো দুধ গুলিয়ে ফিটার মুখের সামনে নিতেই পূর্ব চু চু করে খাওয়া শুরু করল।
খাওয়ার পর থেকে সারাদিন পূর্ব পুনমের কাছেই ছিলো। খাওয়ার পরপরই আবার ঘুমিয়ে যায়। পুনম তখন ফ্রেশ হয় খাওয়া দাওয়া করে ভাইয়ের পাশে ঘুম দেয়।।
দুই ভাইবোনের ঘুম ভাঙে আসরের আজান শুনে পূর্ব ও হিসু করে ওঠে। পুনম পূর্বকে চেঞ্জ করিয়ে মায়ের কাছে দিয়ে আবার ঘরে যায় নামাজ পরতে।
নামাজ পরে এসে পূর্বের খাওয়ার রেডী করতে করে তাকে খাওয়াতে পূর্ব আবার ঘুমিয়ে যায়।
— চাচী ভাই এতো ঘুমায় কেনো??

পুনমের প্রশ্নে হাসে চাদনী বেগম। — একমাস পযর্ন্ত ওর এই কাজ চলবে খাওয়া আর ঘুম এরপরে একটু একটু হাত পা নাড়াচাড়া করবে তাকিয়ে থাকবে।
— ভাইয়ু তাড়াতাড়ি বড় হও আপার জন‍্য চকলেট কিনে আনবে না,,
পূর্বের নাকে নাক ঘষে পুনম।

_______________________

রুপালি থালার মতো চাদঁ উঠেছে আকাশে পুনম ভাইকে ঘুম পারিয়ে বারান্দায় এসেছে। ঘর থেকে উকি দিয়ে দেখে এগারোটা বেজে দশ মিনিট এখনো শের “এ আলী সাহেবের চিঠি আসল না।।
— এতো অভিমান সাহেবের একটাবার খোঁজ ও নিল না,,,
এর মধ‍্যেই ল‍্যান্ড করে ডিজিটাল কবুতর। গটগট শব্দ করে পুনম মিষ্টি হাসে চাকার চিপা থেকে চিরকুট বের করে

— তোমাকে আমার কি করতে মন চায় জানো??

এমন প্রশ্নে ভরকে যায় পুনম। ফের লিখে — কি করতে মন চায়??

— বুকের ভিতর ঢুকিয়ে পিষে ফেলতে মনে চায়। পাষাণী জোহরা

— অভিমান হয়েছে শের “এ আলী সাহেবের??

— তো ভাঙাও

— কিভাবে??

— আমি কি জানি,,,

পুনম চিরকুটটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবল। বারান্দায় রেলিঙে হ‍্যালান দিয়ে বসে লিখল
— আপনার ঐ অভিমানী দুই চোখে একটুখানি ছুয়ে দিলে চলবে মন মোনোহর।

— মন সম্মোধনে তাকেই ডাকা যায় যে অন্তরস্থলে বসবাস করে,, তবে আমিও কি জোহরার অন্তরস্থলে বসবাস করার অনুমতি পেলাম।

চিঠি খানা পড়ে পুনম লাজুক হাসে। এই কয়দিনে অন্তরস্থলের অনেকক্ষাণি জুড়েই শের “এ আলী সাহেবের বসবাস। তবে সেটা জানান দিতে নারাজ এই লজ্জাবতী তাই একটা রাগি ইমুজি লিখে পাঠিয়ে দেয়।
সেটা দেখে বারান্দায় বসে চন্দ্র হো হো করে হেসে দেয়।

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৬

প্রানীবিদ‍্যা বিভাগের প্রানী ভুগোল ক্লাসে আজ নতুন টিচার আসবে। সেই নিয়েই ক্লাসে গসিপ চলছে টিচার কেমন হবে ইয়াং নাকি মধ‍্য বয়স্ক সব মিলিয়ে বেশ উল্লাস যুক্ত একটা পরিবেশ। ভার্সিটি লাইফ হোক আর স্কুল কলেজ হোক প্রত‍্যেকটা স্টুডেন্টসদেরই নতুন টিচারদের প্রতি কৌতুহল থাকে। উচ্ছাস থাকে।
পুনমের সেদিকে খেয়াল নেই সে এদিক ওদিক উকি ঝুঁকি মারছে। কেনো মারছে সে নিজেও জানে।
হঠাৎই গটগট পায়ে মধ‍্যবয়স্ক একজন লোক ক্লাসের ভিতরে প্রবেশ করল। চোখে রিমলেস চশমা আভিজাত্য চেহারা এই মধ‍্যবয়স্ক চেহারায় গাম্ভীর্যতা ভরপুর। সেটা দেখেই অনেকে ভয় পেলো তাদের আশা ছিলো একজন ইয়াং টিচারের তবে সেগুরে বালি।

— হ‍্যালো স্টুডেন্টস আম নাওয়াজ শেখ ইয়‍্যুর নিউ টিচার,,,
গম্ভীর গমগমে স্বর কাপিয়ে তুলল ক্লাসরুম জুড়ে। ছাত্রছাত্রীরা কেনো যেনো ভয় পেলো। ছাত্রছাত্রীদের ভয় পেতে দেখে নাওয়াজ শেখ মিষ্টি হেসে বলল — ডোন্ট অ‍্যাফরেইগ্ক আম ইয়‍্যুর টিচার নট অ‍্যা ডেমন,,

স‍্যারের কথা হাসিতে মুখোরিত হলো পুরো ক্লাসরুম। পুনম ও হাসল হঠাৎই নাওয়াজ শেখের সেদিকে নজর যেতেই সে ভ্রু কুচকে গম্ভীর স্বরে বলল — আজকের মতো হাসাহাসি শেষ নাও লেট”স স্টার্ট দ‍্যা ক্লাস।
বলেই নিজের মতো পড়াতে লাগলেন। সবাই মনোযোগ হলো ক্লাসে স‍্যারের পড়ানোর স্টাইলটা একটু ভিন্ন তাই সবার ভালোও লাগল।
ক্লাস শেষে জানানো হলো আজ আর ক্লাস হবে না। তাই পুনম লাইব্ররির দিকে গেলো মিহির কিছু বই লাগবে।।
পথিমধ‍্যে নাওয়াজ শেখের সামনাসামনি পড়লে সে ভ্রু কুচকে সাইড কাটিয়ে চলে যায়। মিহি পুনম যায় লাইব্রেরিতে। পুনম আনমনা হলেও মুখে লেগে আছে মুচকি হাসি ভালো লাগে তার এই লাইব্ররিতে এলে এখানেই তো শের “এ আলী সাহেবের সাথে প্রথম লিপি দেয়া নেয়া হয়েছে।

পুনম সেই প্রথম দিনের বইটা হাতে নেয়। মলাটে হাত বুলিয়ে প্রথম পৃষ্ঠা সরাতেই আজকেও ধূসর রঙা চিঠি পেল।
— হৃদয়ে পুরে ঝড় উঠেছে জোহরাকে প্রণয় রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার ঝড়। জোহরা কি সেই রঙে নিজেকে রাঙাবে??

মুচকি হাসে পুনম লিখতে শুরু করে — প্রণয়ের রঙ কি প্রণয় সখা?? জানতে ইচ্ছুক জোহরা,,,
ধূসর রঙা চিরকুটের অপর পাশেই লিখে যেভাবে ছিলো সেভাবেই রেখে দিলো পুনম।। রেখে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকল তবে আশানুরুপ কাজ না পাওয়ায় সেখান থেকে চলে আসল। অথচ সে টেরই পেলো না তার প্রস্থানের পরপরই কেউ চুপিসারে এসে বইয়ের ভাজের থেকে চিরকুটটা নিয়ে গেলো।।
— ভাই ভাবী মনে হয় আজ আপনেরে দেখার আশায় ছিলো অনেক্ষণ দাড়ায় ছিলো চিঠি লেইখা।

রাব্বির কথা শুনে হাসে চন্দ্র তার বোকা জোহরা তাকে দেখার জন‍্য ব‍্যাকুল হয়ে আছে। সে জানে তবে সে এখন দেখা দিতে নারাজ তাদের প্রণয়টা আরো গভীর হোক। জোহরা তার হোক সে দেখা দিবে তার জোহরাকে।।

_______________________

পুনম বাসায় ঢুকে দেখে মা চাচী মুক্তি আপু ও তাদের হেল্পিং হ‍্যান্ড শিউলি খালা বসে আছে। শিউলি খালা ছুটা কাজ করে দিয়ে যায় তবে এখনো বসে থাকতে দেখে পুনম অবাক হয়।।

— কি ব‍্যাপার খালা তুমি সো স্ট্রেইট ফোরওয়ার্ড মানুষ তোমারে দশ মিনিটের জন‍্যও বাকা করা যায় না। আজ এখনো বাসায়,,,?
টেবিলের কাছে পানি খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করল পুনম।

— কইয়েন না ছোঠ আম্মা মার ভাইঝি আইব এহন থেইক্কা আপনেগো বাসায় বান্দা কাম করব। ওর লইগাই বইয়া আছি,,,,,

— ওওওওও

সোফায় বসে কথোপকথন চলে তাদের পুনম ঘরে যায় ফ্রেশ হতে নিচে ভাইকে না পেয়ে মায়ের ঘরে আসে। দেখে পূর্ব ঘুম তার মাথায় চুমু খেয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে সকাল বেলা তার ভাইটা তাকে ছাড়তেই চায়নি একদম অনেক কষ্ট করেই যেতে হয়েছে।

পুনম গোসল করেই বের হয় মাথায় গামছা পেচিয়ে ঘর থেকে বের হয়। — আম্মু দুপুরে খেয়েছ?,

রোজিনা বেগম কেমন ক্লেশ মাখা স্বরে বলল — হ‍্যা,,
পুনম তাকায় মায়ের দিকে ভাইটা একদমই মায়ের কাছে থাকে না সারাদিন পুনমের কাছে আর সে না থাকলে চাচী ও মুক্তি আপুর কাছে থাকে।
খারাপ লাগে পুনমের।
— চাচী আপু তোমরা খেয়েছ??

— হ‍্যারে আমরা সবাই খেয়েছি তুই বস তোকে আমি বেড়ে দেই,,

— লাগবে না আপু তুমি বস আমি নিয়েই খাব। বলেই মুক্তিকে বসায় টেবিলে ভাত তরকারি টেবিলেই ছিল সেখান থেকে নিয়ে খাওয়া শুরু করল।
এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল। মুক্তি গেট খুলল চন্দ্রকে দেখে ভ্রু কুচকে আবার ঘড়ির দিকে তাকায়।
— এই সময় ভাইয়া
চন্দ্র মুক্তির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল — সর আমার বাসা আমি যখন খুশী তখন আসব।

মুক্তি ঝাড়ি খেয়ে সরে গেলো। চন্দ্র চড়ুই পাখির মতো কুটকুট করে খেতে থাকা পুনমের দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। চন্দ্রের পরপরই প্রবেশ করে একটা মেয়ে
— আচচালামু আলাইকুম ফুআম্মা,,
শিউলী খালার সামনে দাড়িয়ে তাকে লম্বা করে সালাম দিয়ে বলল। চ শব্দে সালাম শুনে সবাই সেদিকে তাকায় শিউলী খালা বলে — খালাম্মা হেয়ই আমার ভাইঝি রেনু ওর কথাই কইছি,,,

চাদনী বেগম মুচকি হেসে আলাপচারিতা সারে। এরমধ্যেই উপর থেকে নামে চন্দ্র সিড়ি বেয়ে কাউকে নামতে দেখে মুক্তি পাশ দিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকায় রেনু। হঠাৎই কথা বন্ধ করায় মুক্তি রেনুর দিকে তাকায় ঘাড় বাকিয়ে মুক্তির পাশ দিয়ে চন্দ্রকে দেখতে দেখে মুক্তি হতবাক হয়। মুক্তিও ঐপাশ হেলে যায়। রেনু আরেকপাশ হেললে মুক্তি ও তাই করে তিনচার বার এরকম চলতে যায়। শেষে না পেরে মুক্তি বলল — এই মেয়ে সোজা হয়ে বসো

মুক্তির ঝাড়ি খেয়ে সোজা হয়ে বসল রেনু মুক্তি সেখান থেকে পুনমকে বলল — পূর্ণ ভাইকে খেতে দে,,,

— এই চন্দ্র বাবা উপর একটু যা না দেখ পূর্ব উঠেছে কি না,,,

চন্দ্র আবার উঠে যায় পূর্বকে দেখতে। রেনু আবার সেদিকে তাকিয়ে থাকে ঘাড় বাকিয়ে মুক্তি ও সোজা হলে রেনুর সামনে বসলে রেনু বলল
— চমচ‍্যা কি আপনের

— এই মেয়ে সোজা হয়ে বসো একদম আমার ভাইয়ের দিকে তাকাবা না নাহলে চাকরী নট

চাকরী নট শুনে রেনু মন খারাপ করে চুপচাপ বসে পড়ে থাক এই হান্ডচাম বেটারে দেখতে হইলে তার এই বাড়ি থাকতে হইব। মনে মনে ভাবে রেনু।
পুনম খেতে খেতে একবার রেনু একবার চন্দ্র ও একবার মুক্তির দিকে তাকায়। মিটিমিটি হাসে চন্দ্র ভাইয়ের দেওয়ানী এসেছে।।

— আম্মু পূর্ব ঘুম

— আচচালামু আলাইকুম চাদ ভাই,,,

— ভাইয়া তুমি খেতে যাও পূর্ণ ভাইকে খেতে দে,,,
চন্দ্র ভ্রু কুচকে একবার বোনের দিকে তাকিয়ে টেবিলে বসে পুনম মিটিমিটি হাসতে হাসতে চন্দ্রের খাবার বাড়ে।
— চমচ‍্যা কি আপনের চাদ ভাইয়ের লগে কথা কইবার দেননা ক‍্যলা,, হেয় আমার দেহা চবচেয়ে চুন্দর পুরুষ হের পাঙ্খা আমি,,
রেনুর কথা শুনে মুক্তি মুখ বাকিয়ে বলল — চাদ ভাইয়ের হাতে দাবাং মার্কা চড় খাইয়া বেহুচ হইয়া যাইবা। তখন চুইটা যাইব পাঙ্খা গিরি।

মুক্তির কথা শুনে পুনম খিলখিল করে হেসে উঠল। চাদনী বেগম ও রোজিনা বেগমও মুচকি হাসল শিউলী খালা ভাইঝিকে চোখ রাঙাল।।
পুনমের হাসির দিকে চন্দ্র অনিমেষ তাকিয়ে রইল। তখনই পূর্বের কান্নার আওয়াজে পুনম হাসি থামিয়ে ভাইয়ের কাছে ছুটল।

— ছ‍্যাহ এই চাচাতো ভাই শালা দেখী বোনের মতোই আমার প্রেম বিরোধী।

_____________________

ভাইকে শুয়িয়ে নিচে তাকায় পুনম তার ঘরে আজ চন্দ্রের পাঙ্খার আগমন ঘটেছে। সে নিজে মায়াবী আপা চাতে ঘুমাতে বলে আগে আগে ডেরা গেরেছে পুনমের ঘরে। নিচে বিছানা করে নিজের মতো শুয়েও পড়েছে।।

পুনম ভাইয়ের দুই পাশে বালিশ দিয়ে তাকে সংরক্ষিত করে পা টিপে টিপে বারান্দায় যায়। দেখে হেলিকপ্টারে দুইটা চিরকুট।
— তুমিময় অপেক্ষা এতো প্রশান্তির কেনো বলতে পারো মাই জোহরা,,,

— অপেক্ষা মানেই তো একগুচ্ছ আশা

— উহুম অপেক্ষা মানে জোহরা

চিঠি পড়ে ফের লাজুক হাসে পুনম। চিঠিতে লিখে
— আপনাকে দেখার তৃষ্ণা জেগেছে আপনার জোহরার মনে তাকে কি একটু দেখা দেওয়া যায়। আপনাকে কি একটু ছুতে পারি,, আপনিময় উপস্থিতি অনুভব করতে পারি?? কুড আই ফিল ইয়‍্যু শের “এ আলী সাহেব।

পুনমের চিঠি পড়ে চন্দ্র হাসল ফের লিখল
— অফকোর্স মাই জোহরা,,,,,,

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৭

সকাল সকাল পূর্বের থাবায় ঘুম ভাঙ্গে পুনমের। পুনম চোখ মেলে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে চৌদ্দ দিনের পূর্ব ড‍্যাবড‍্যাব করে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাইয়ের নাকে নাক ঘষে পুনম
— আসসালামু আলাইকুম ভাইয়‍ু শুভ সকাল,,,

প্রতিত্তোরে পূর্ব আরো বড় চোখ করে তাকায় মানে তার খিদে পেয়েছে। পুনম মুচকি হাসে উঠে ফ্লাক্স থেকে পানি নিয়ে ফিটার ধুয়ে দুধ বানিয়ে নেয়। পুনমের ঘরেই এখন পূর্বের সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থাকে।
পূর্বকে খায়িয়ে দুই পাশে বালিশ দিয়ে নিজে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইলে সময় দেখে আটটা বাজতে দশ মিনিট বাকি। পূর্বকে নিয়ে নিচে নামে পুনম রোজিনা বেগম ড্রয়িং রুমেই বসা ছিলেন চাতক পাখির মতো ওয়েট করছিলেন কখন পুনম ঘরের দরজা খুলবে।

— আম্মু ভাইয়ুকে রাখো আমি দেখি চাচীর কোনো কিছু লাগবে কিনা।
রোজিনা বেগম যেনো এই সুযোগেই ছিলেন — হ‍্যা হ‍্যা দে

পুনম মায়ের কোলে ভাইকে রেখে রান্নাঘরে যেতে যেতে দেখল রোজিনা বেগম পূর্বের পুরো মুখে চোখ আদর করছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল পুনম কেনো তার ভাইটা তার মায়ের কাছে থাকে না এটা বুঝতে পারে না পুনম।
— শুভ সকাল চাচী,,, কি করছ?? আমি কিছু সাহায্য করি

— লাগবে নারে মা সব শেষ করা আর সবজি রোজি কেটে দিয়েছে এখন শুধু টেবিলে রাখব চন্দ্র একটু পরেই ভার্সিটির জন‍্য বেরোবে সামনে ওর এক্সাম তো তাই। তোর আজকে ক্লাস আছে??

— না আজ নেই কাল অ‍্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়া লাগবে সেটাই করব বসে বসে আপু উঠে নাই,,,

— নাহ নবাবের মেয়ে কি এতো সকালে উঠে দেখ গিয়ে ঘুম সামনে যে লাষ্ট ইয়ারের পরীক্ষা আসবে সেটা নিয়েও কোনো চিন্তা নেই।

চাচীর কথায় পুনম মুচকি হাসে। হাতে হাতে বাটিগুলো টেবিলে রাখে চন্দ্র দৌড়ে বড় বড় পায়ে সিড়ি দিয়ে নামে — আম্মু দ্রুত খেতে দাও পনেরো মিনিটের মধ‍্যে পৌছানো লাগবে,,,
হাতের ঘড়ির বেল্ট লাগাতে লাগাতে চেয়ারে বসে বলল।
চাদনী বেগম খাবার দিতে নিলে উপর থেকে ডাক পরল কামরুল সাহেবের।
— মা একটু চন্দ্রকে খেতে দে আমি আসছি দেখী তো চাচা ডাকে ক‍্যান,,,

চাচীর কথায় মনে মনে অসন্তোষ হলো পুনম তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল — আচ্ছা
চাদনী বেগম যেতেই পুনম চন্দ্রকে খেতে দিয়ে পাশ থেকে সরে যেতে নিলে চন্দ্র খেতে খেতে বলল — কোনো গাবুররে খেতে দিয়েছিস নাকি যে খেতে দিয়েই চলে যাবি,,

চন্দ্রের কথায় বিরক্ত পুনম তবুও বসে পরল দুই চেয়ার পরে। এরমধ‍্যেই পারভেজ সাহেব বাইরে থেকে আসলেন তিনি ঐ বাড়ি গিয়েছিলেন সকাল সকাল।
— কোথা থেকে আসলা আব্বু??

পারভেজ সাহেবকে বাইরে থেকে আসতে দেখে বলল পুনম। পারভেজ সাহেব একগ্লাস পানি চাইলে পুনম তাকে পানি দিলো
— কাল কাজের জন‍্য যে মেয়েটাকে রাখা হলো ও কই,,

— তিনি ঘুম

রোজিনা বেগমের কথায় অবাক পুনম পারভেজ সাহেব — বল কি??

— সকাল সকাল পুনমের ঘর থেকে এসে আবার সোফায় ঘুমিয়েছে। ভাবী ওরে ডেকে বলল– রুটি বেলে দিতে সে হেলতে হেলতে রান্নাঘরে যেয়ে ধপাস করে শুয়ে বলল — খালাম্মা ডাইকেন না এখন উঠলে আমার চোখের নিচে কালা দাগ পরব,,

— এখন কই রান্নাঘরে তো দেখলাম না আম্মু।

— ভাবী অনেক ডাকাডাকির পর উঠে ঢুলতে ঢুলতে কোথায় যেয়ে ঘুমাইছে নিজেও জানে না।

পারভেজ সাহেব উঠে গেলেন রেডি হতে দোকানে যাওয়া লাগবে। পুনম চন্দ্র পানি চাইতে সেখানে গেলো জগটা সামনেই রাখা
— কুড়ে কোথাকার সামনে জগ এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে পারে না

বিড়বিড় করে চন্দ্রকে বকে পানি ঢেলে দিলো। চন্দ্র বুঝলো পুনম তাকে উদ্ধার করছে তাই মনে মনে হাসল এই ভেবে যে চন্দ্রের প্রতি যতটা অনিহা শের “এ আলীর প্রতি ততই ভালোবাসা।

_____________________

আজ বন্ধ থাকলেও হঠাৎই মিহির সাথে বের হওয়া লাগছে পুনমের। মিহি কিছু কেনা কাটা করবে কাল সন্ধ্যার বাসে সে গ্রামে ফিরবে তার দাদী অসুস্থ। গ্রামের কথা মনে করে পুনমের বেশ মন খারাপ হলো অনেক দিন হলো সেই বাড়িটাতে যাওয়া হয়না যেই বাড়িটাতে কেটেছে তাদের শৈশব কৈশোর। তবে সেখানে পুনমের খুব একটা ভালো স্মৃতি নেই যা আছে সব নিজের একাকিত্বের প্রতিচ্ছবি মায়ের লাঞ্চনা। পুনমের মনে পরে একদিন ভুল ক্রমে তিনতলার ভাড়াটিয়াদেয় জানালার গ্লাস ভাঙ্গায় সেদিন পুনমকে দিয়ে আধঘন্টা রোদে দাড় করিয়ে সেটা ঠিক করিয়েছিল রোজিনা বেগম। সেই কথা আজও তার বাবা জানে না।। তবে সে ধৈর্য্য ধরেছিল মায়ের জন‍্য তার মনে কোনো রাগ অভিমান কিছুই নেই সে করতে পারে না রাগ। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের হাজারো কষ্ট দিয়ে একটু ভালোমতো কথা বললেই তাদের রাগ কমে যায়। পুনম হচ্ছে সেই ক‍্যাটাগরির মেয়ে।
রাগ জিনিসটা তার নেই তবে অভিমান আছে সেটাও সবার ক্ষেত্রে দেখায় না একমাত্র বাবার সাথেই।

বাবার কথা মনে পড়তেই মনে পড়ল অনেকদিন বাবার সাথে কোথাও যাওয়া হয়না আগে পুনম কলেজ থেকেই দোকানে চলে যেতো। সেখান থেকে দুই বাপ মেয়ে এদিক সেদিক ঘুরে চটপটি ফুচকা আইসক্রিম খেয়ে বাসায় ফিরত।

— পুনু এই কালারটা কেমন,,,
সিদুর লাল রঙা একটা জামা পুনমের সামনে রেখে বলল মিহি। মিহির কথায় ধ‍্যান ভাঙে পুনমের। সে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিহিকে বলল — এটাই লাষ্ট তোর কেনা কাটা

— হ‍্যা,,

— আচ্ছা তাহলে তুই হোষ্টেলে চলে যা আমি আব্বুর কাছে যাব,,

মিহি পুনম সম্পর্কে অবগত তাই আর প্রশ্ন করল না রিক্সা ডেকে চলে গেলো। মিহি যেতেই পুনমও রিক্সা নিলো। দোকানের ঠিকানা বলে উঠে পরল।

শুক্রবার হওয়াতে দোকানে মোটামুটি ভীর ছিলো। পারভেজ সাহেব কাষ্টমার হ‍্যান্ডেল করছিল। তন্মধ্যে মেয়েকে দেখে তাকে ভিতরে গোডাউন রুমে বসার ইশারা করল। পুনম বাবার ইশারায় যেয়ে বসল সেখানে পারভেজ কাষ্টমার বিদায় করেই মেয়ের কাছে গেলো
— কি হয়েছে আম্মাজান হঠাৎই দোকানে আসলে,,
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল পারভেজ সাহেব।
পুনম মুচকি হেসে বলল — ঘুরতে যাব আব্বু তোমার সাথে অনেক দিন ঘুরতে যাই না,,,

— এখন
পুনম মাথা নাড়ায় পারভেজ সাহেব দোকানের ছেলেকে ডেকে সব বুঝালেন। ফের মেয়েকে নিয়ে বের হয় পড়লেন পথিমধ‍্যে কল করলেন রুপশাকে
— হ‍্যালো রূপ মা কোথায় আছো??

— বাসায় আব্বু একটু পর তোমার জামাই অফিস থেকে আসবে তার জন‍্য টুকটাক নাশতা রেডী করছি,,,,

— ওও ফ্রি থাকলে বাপ মেয়েরা মিলে ঘুরতে যেতাম

— ইশশ মিস করে গেলাম নেক্সট টাইম অবশ্যই। রুপশা আফসোস করে ফোন রাখল।
পারভেজ সাহেব পুনমকে নিয়ে সাভার স্মৃতি সৌধে গেলেন। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরে বাপ মেয়ে ছবি টবি তুলল
— ইশশ আব্বু রংতুলি নিয়ে আসলে ভালো হতো,,

— হ‍্যা আর্টিস্টদের সব জায়গাই রংতুলির প্রয়োজন,,

বাবার কথায় পুনম খিলখিল করে হাসল। পারভেজ মন ভরে মেয়ের হাসি দেখল স্মৃতিসৌধ ঘোরাফেরা করে আরো কিছু জায়গাই ঘোরাঘুরি করে বাবা মেয়ে বাজী ধরে ফুচকা আইসক্রিম খেয়ে রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরল। এদিকে যে তাদের কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে বাড়ির সবাই চিন্তিত বিশেষ করে পূর্ব কেদেঁ কেটে গলা দাবিয়ে ফেলেছে।
পুনম পারভেজ সাহেব। কামরুল সাহেবের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। কামরুল সাহেব বকে চলেছেন দূইজনকে
— আক্কেল জ্ঞান আছে তোর মেয়েটা নাহয় ছোট তুই তো বুড়ো দামরা হয়েছিস বাসায় কাউকে একবার ফোন করে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না,, ছেলেটা সেই কখন থেকে কাদছে। সেই সাথে রোজিনাও কাদছে শেষে না পেরে চাদ আমাকে ফোন দিয়েছে।

— আসলে ভাই সময় কখন চলে গেছে টেরই পেলাম না,,
এবার কামরুল সাহেব ঝাড়ি মেরে বললেন — তা টের পাবি কিভাবে দামরা হয়ে বাচ্চাদের মতো দাপিয়ে বেড়ালে তা টের পাবি কিভাবে,,

চাচার কথায় পুনম এবার গাল ফুলায় বাবাকে ডিফেন্স করে বলে — আব্বুর কোনো দোষ নেই চাচা আমিই নিয়ে গেছিলাম সরি

— হুম আর যেনো না হয়
গম্ভীর স্বরে বললেন কামরুল সাহেব। এই বয়সে ছেলে মেয়েদের সামনে ঝাড়ি খেয়ে পারভেজ সাহেব মুখ লুকিয়ে পালালেন। পুনম যায় ভাইয়ের কাছে। পারভেজ সাহেব পালাতেই পুনম বাদে উপস্থিত চারজন হেসে দেয় উচ্চস্বরে। ঠিক তখনই উপর থেকে আওয়াজ আসে
— আম্মু আমি পড়ছি ডিস্টার্ব হচ্ছে,,,

চন্দ্রের কথা শুনে পুনম মুখ ভেংচি মেরে চলল
— আম্মু আমি পড়ছি ডিস্টার্ব হচ্ছে,, আরে তোর ডিস্টার্ব হলে কানে তুলো গোজ আমরা হাসবই,,, বিড়বিড় করে বলল।

#চলবে
এডিট করতে পারিনি ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন