পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-৪১+৪২+৪৩

0
2

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪১

কথায় বলে যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া পড়শির ঘুম নাই। বাঙালিদের বিয়েতে এই কথাটা যথাযথ উপযুক্ত বিয়ের কণে আছে বিরহে আর বরের কোনো পাত্তা নাই। তবে হইহুল্লোর করে মাতিয়ে রেখেছে সবাই। বিয়ে উপলক্ষ্যে সবাই হাজির চন্দ্রের নানা বাড়ির খুব একটা লোক নেই তদাপি জরুরি তলপে তারা হাজির হতে পারেননি।।
ছোট্ট পরিসরে বিয়েটা হলেও মোটামুটি একশর মতো মানুষের আয়োজন হচ্ছে। বাইরে হলুদের জন‍্য স্টেজ সাজানো হয়েছে পুনম ও চন্দ্রের হলুদ এক স্টেজেই হবে তবে চন্দ্রের আগে পুনমের পরে। সবাই সেটাই আলোচনা করে ঠিক করেছে।।
রান্না ঘরে ঢুকে চাদনী বেগম রেনু ও মিনুর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটু আগেও তারা ঝগড়া করেছে। মিনু মতে ঐ খ‍্যাকখ‍্যাক কন্ঠে কথা বলা চন্দ্র অতো ভোলাভালা পুনম আপার বিয়ে কখনো দেয়া উচিৎ না।
আর রেনুর কথা হলো ওমন সুন্দর চাদ ভাইয়ের জইন‍্য অতো ভালা পুনম আপাই ঠিক।

— রেনু রোজিনাকে এইটু ডেকে আন তো,,,

পারভেজ সাহেব বের হয়ে গেলেও রোজিনা বেগম মেয়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটার জন‍্য সে কিছুই করেনি কিন্তু এখন কিছু করতে মন চাচ্ছে।
রোজিনা এগিয়ে পুনমের মাথায় হাত রাখে পুনম মাথা উচু করে তাকায়
— তোমার জন‍্য এই পযর্ন্ত আমি কিছুই করতে পারিনি সবসময় মায়ের দায়িত্বে অবহেলা করেছি যা করেছে তোমার বাবাই করেছে তাকে অন্তত অসম্মান করো না।

পুনম ফের মাথা নিচু করে। কিছু একটা ভেবে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায় বারান্দায় দাড়িয়ে এদিন ওদিক দেখে কোনো ড্রোন দেখতে পায় কিনা না পেয়ে হতাশ হলো। সেখানেই বসে পড়ল।
রোজিনা বেগম পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল রেনুর ডাকে সে তার সাথে চলে যায়। রান্নাঘরে ঢোকে রোজিনা বেগম চাদনী বেগমের উজ্জল মুখস্রী দেখে ভালোলাগা কাজ করে এই মহিলাটি পুনমকে ছেলের বউ বানানোর জন‍্যে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

মাগরিবের পরপরই পুনমকে সাজানোর জন‍্য ঝিনুক রিমি মুক্তি রুপশা আসে। একটু পরেই চন্দ্রের হলুদ শুরু হবে তার পরপরই পুনমকে হলুদের জন‍্য নিয়ে যাওয়া হবে তাই আগে ভাগেই তাকে রেডি করাতে এসেছে।
পুনম সেই দুপুর থেকে বারান্দায় বসে শের “এ আলী সাহেবের অপেক্ষায় আছে। কোনো খবরাখবর পায় না। ওরা এসেই পুনমকে ঘরে খুজল ওয়াশরুমে খুজেঁ না পেয়ে বারান্দায় খোঁজে সেখানে পেয়ে যায়।

— পূর্ণ
রুপশার ডাকে চমকে ওঠে পুনম এলোমেলো ভঙ্গিতে বসে ছিলো পুনম। তাকে দেখেই ডাক দেয় পুনম। রুপশা বেশ অবাক হয় পুনমের অবস্থা দেখে সাথে রিমি ঝিনুক ও। তবে মুক্তি অবাক হয়না সে জানতো পুনম এমন অবস্থায় থাকবে
— আরে রুপ পুনম জানতো না বিয়ের ব‍্যাপারে হঠাৎই জেনে গেছে তাই মানতে কষ্ট হচ্ছে।

মুক্তির কথা শুনে রুপশা মুচকি হাসে পুনমের সামনে বসে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে
— সব ঠিকই হবে ইনশাআল্লাহ,, তুই সুখী হবি পূর্ণ চন্দ্র ভাই তোকে অনেক ভালোবাসে।

পুনম তাকায় রুপশার দিকে আবার মুক্তির দিকে তাকাতে কেনো জানি মুক্তি নজর সরিয়ে নেয়। পুনম চুপচাপ উঠে দাড়ায়।
রিমি ঝিনুক অনেক কথা বলে খুব পচায় পুনম কথা বলে না তারা ভাবে লজ্জা পেয়েছে।
কলাপাতা রঙা পাড়ের হলুদ শাড়ি চোখে মোটা করে কাজ। রজনী গন্ধা ও গোলাপ মিশিয়ে কাচা ফুলের গয়না সাথে হালকা সাজ।
সচরাচর যারা সাজে না তাদের বুঝি হালকা সাজেই বেশ লাগে
— মাশাল্লাহ্ আজ চন্দ্র ভাই চোখ ফেরাতে পারবে না,,,,

রিমির রসিকতায় কোনো তফাৎ হলো না পুনমের। বাইরে থেকে ডাক পরতেই তারা বেড়িয়ে যায় তবে যাওয়ার আগে ঝিনুক একবার পুনমের দিকে তাকায় তার কেমন জানি গোলমাল লাগছে ব‍্যাপারটা। মনের মধ‍্যে হাজারো সন্দেহ বাসা বাধছে তবুও পুনমের স্বভাব অবগত থাকার জন‍্য সেগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।।

সাদা স‍্যান্ডু গেঞ্জি লুঙ্গি পরিহিত চন্দ্র বিরক্তি আদলে বসে আছে স্টেজে বসার আসনে। ফর্সা মুখখানা হলুদ রাঙা। চোখ ব‍্যতিত পুরো মুখটাই হলুদে ঢাকা একটু আগেই শিহাব লাগিয়েছে।

এবার রিশান উঠে স্টেজে অপর পাশে ঝিনুকের দিকে চোখ মারে। চন্দ্রর সামনে হেসে বলে — ভাই তোর তো হলো এবার আমার একটা হিল্লে কর। তুই বিয়ে করে বউ নিয়ে ঘুরবি আর সিঙ্গেলদের অন্তর পুড়াবি তা কেমনে হয়।
যাহ আমার সেটিং করানোর উপহার হিসেবে তোর মুখে এক খাবলা হলুদ উপহার দিলাম।
বলেই মুঠো ভর্তি হলুদ নিয়ে চন্দ্রর মুখ আরো ভরে দেয়।

এবার রাগে ফেটে পড়ে চন্দ্র লুঙ্গির গিট্টু খানা মুঠ করে ধরে রিশানকে দৌড়ানি মারে। উপস্থিত সবাই উচ্চস্বরে হেসে দেয়।
— চন্দ্র তোর লুঙ্গি
পিছন থেকে শিহাব বলতে চন্দ্র হাতের মুঠো আরো শক্ত করে রিশান হাসতে হাসতে চন্দ্রর সামনে দাড়ায়
— কি হে চাদ মামা,, লুঙ্গি সামলা
পিছন থেকে শিহাব ও আসতে চন্দ্র বাকা হেসে লুঙ্গি ছেড়ে দিয়ে গিট্টু খুলে দেয় ঠাসস করে লুঙ্গি নিচে পরে যায় বের হয় হাটু থেকে দুই ইঞ্চি উপরে ডেনিম প‍্যান্ট। রিশান শিহাব চিৎকার দেয়।
— মোরোন”স চোখ খোল,,, বলেই রিশানের পশ্চাৎদেশে একটা জোড়ালো লাথি মারে।
পরেই শিহাবের পাশ্চাতেও লাথি মারে। দুইজনে লাথি সামলাতে সামলাতে পরপর আরো তিন চারটা মারে চন্দ্র। রিশান শিহাবও সুযোগ বুঝে দৌড় দেয়।

হলুদে উপস্থিত পাড়া প্রতিবেশীদের মধ‍্যে কেউ বিরক্ত তো কারো হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে।
এভাবেই হাসি ঠাট্টার মাঝে শেষ হয় চন্দ্রের হলুদ দেয়া। তার একঘণ্টা পর পুনমের হলুদ হবে। তাই সবাই সেই তোড়জোড়েই লেগেছে। সকল প্রস্তুতি আগেই করা ছিলো তবে লাষ্ট ফিনিশিং দিয়ে রিমি ঝিনুক মিলে পুনমকে আনতে যায়।

নির্জিব পায়ে পুনম হেটে আসে স্টেজের সামনে। পারভেজ সাহেব একটু হেসে মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে প্রথম হলুদ ছোঁয়া দেয়। এরপর রোজিনা বেগম। একে একে সবাই তাকে হলুদের ছোয়া দেয় তবে পুনম প্রত‍্যেক বারেই কেদেঁ ভাসিয়েছে।
পুনমের কান্না দেখে সবাই ভেবেছে বিয়ে হচ্ছে এজন্য কাদছে কিন্তু উপস্থিত কেউ জানে না পুনমের মনে কাল বৈশাখী ঝড় উঠেছে প্রণয় ভাঙ্গা ঝড়।।

রাত তিনটা ঘোর তমসাচ্ছন্ন ধরনী তবে বৈদ‍্যতিক বাতিতে আলোকিত চারপাশ। এরমধ‍্যে পানি কাজ শেষ করে ঘরে যাচ্ছিল রোজিনা আজ পূর্বকে পুনমের সাথে রাখেনি আর পুনমও আজ একা শুয়েছে।। রোজিনা বেগম কি মনে করে উকি দেয় পুনমের ঘরে দেখে পুনম বারান্দায় বসে হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে।

রোজিনা বেগম সামনে যেতে শুনতে পায় পুনমের ফুপানি। মাথায় হাত বুলাতে পুনম মাথা তুলে তাকায় মাকে দেখে অস্রুসিক্ত চোখ বিষাদের হাসি হাসে।
— কথা হয়েছে??

পুনম বুঝে কথা হয়েছে এর মানে তবে পুনম কি জবাব দেবে কোন মুখে বলবে লোকটার আজ কোনো খবর নেই।
— সে চিঠি পাঠায়নি আম্মু,,,

রোজিনা বেগমের খারাপ লাগে। — তাহলে আর কি করার চন্দ্রকে বিয়ে করে নাও,,,

— লোকটাকে কোনো সময় সেই নজরে দেখিনি। তার প্রতি কোনো ইন্টারেষ্ট কোনোকালে ছিলো না তার সাথে মানের মিলও নেই কিভাবে সংসার করব আম্মু। আর বড় কথা হচ্ছে শের “এ আলী সাহেব ছাড়া কাউকে মেনে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
বলেই হাউমাউ করে কেদেঁ দেয়। মায়া লাগে রোজিনা বেগমের মায়ের মনতো একটু হলেও টান লাগে।
কিছুক্ষণ পুনমের কান্না দেখে ঘরে যায় আলমারি থেকে কিছু টাকা নিয়ে পুনমের ঘরে আসে একটা ব‍্যাগে পুনমের কাপড় ভরে পুনমের হাত ধরে উঠায়
— কি হয়েছে আম্মু??

প্রশ্নাত্বক চোখে তাকায় পুনম। রোজিনা বেগম ধীর পায়ে তাকে নিয়ে বের হতে হতে বলে
— পালিয়ে যাও পুনম কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাক বিয়ের কথা মিটমাট হলে এসো।

পুনম অবাক চোখে তাকায় মায়ের দিকে। পালিয়ে যাবে সে খুজবে শের “এ আলী সাহেবকে কোথায় খুজবে সে তো কিছুই জানে না সর্বপরি তার বাবা সম্মান ভেবেই থেমে যায় পুনম।

— আম্মু আব্বু,,,

— তোমার আব্বুকে আমি বুঝাব মেয়ের সুখের আগে তার কাছে কিছুই নেই।
বলেই গেইট পেরিয়ে এগোতেই পিছন থেকে ডাক দিলো কেউ
— হেরে যাওয়া যোদ্ধার মতো পালিয়ে যাচ্ছো বুঝি,,,

কন্ঠস্বর শুনে চমকে ওঠে রোজিনা বেগম ও পুনম। সেখানেই দাড়িয়ে পরে পিছন ফিরে দেখার সৎ সাহস হয় না।
পারভেজ সাহেব দাড়ায় পুনমের সামনে মুচকি হাসে। সেই হাসি তাদের নজর ঝুকাতে বাধ‍্য করে।

— তুমি আমার মা। হুবহু আমার মায়ের মতো দেখতে মা পাগল ছেলে ছিলাম আমি মায়ের মৃত্যুর পর সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে ভবঘুরে হয়েছিলাম।
আবার রোজিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল
— মনে আছে বিয়ের পর রুপ মা হওয়ার আগ পযর্ন্ত ও আমি তোমার প্রতি উদাসীন ছিলাম।

রোজিনা বেগম মনে করে বিয়ের শুরুর সময়কাল। সেই সময় গুলো তার কাছে দূর্বিসহ ছিলো। টাকা পয়সার অভাব না থাকলেও ছিলো সুখের অভাব একটু ভালোবাসার অভাব তাদের মধ‍্যকার সম্পর্ক কেমন জানি ফ‍্যাকাশে হয়ে ছিলো। তবে সেটা চেঞ্জ হয়,,,,,,,,,,,
পরোক্ষণেই রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেবের দিকে তাকায়। পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগমের মনোভাব বুঝে তবে তাকে কিছু বলে না পুনমের দিকে তাকিয়ে বলে — রোজিনার প্রতি আমার এমন মনোভাব দেখে ও ভাবতো মেয়ে হওয়ায় বুঝি আমি এমন করছি। তবে ও ভুল ছিলো শ‍্যামবর্ণা মায়াময়ী ও মমতাময়ী মা হারিয়ে আমি এমন হয়েছিলাম।
তুমি হওয়ার পরে যখন এই মহিলা ছেলে,,ছেলে
করে কান্নাকাটি করেছে। তখন আমি তোমাকে কোলে নিয়ে পেয়েছিলাম এক ফালি সুখ,,,,,
তখন মনে হয়েছিল একটুকরো জান্নাত আমার ঘরে এসেছে। তোমার মধ‍্যে পেয়েছিলাম আমার সেই মমতাময়ী মায়ের প্রতিচ্ছবি।
আল্লাহর এই অমূল্য দানকে আমি অস্বীকার করতে পারিনি। তবে আজ মনে হচ্ছে সেই সময় আসলেই একটা ছেলে হলে ভালো হতো অন্তত এইভাবে মান সম্মান যাওয়ার ভয় থাকত না।

বলেই থামে পারভেজ সাহেব। সারাদিন মেয়ের চিন্তা বিয়ের হাজার কাজকর্ম সব মিলিয়ে কাজ শেষ করে একটু আগেই ঘুমাতে গিয়েছিল তিনি তবে রোজিনা বেগমকে পুনমকে নিয়ে বাইরে যেতে দেখে এগোয়। তখনই সব বুঝতে পারে এও বুঝতে পারে এই কারসাজির পেছনে পুরোটাই রোজিনা বেগমের হাত।
রোজিনা বেগম হাউমাউ করে কেদেঁ ওঠে। পুনম হাটু ভাজ করে আব্বুর পায়ের কাছে বসে পরে
— আমাকে মাফ করে দাও আব্বু আমি কোথাও যাব না সব ভুলে যাব শুধু তুমি এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিও না,,,,,,

— তাহলে কাল কোনো ঝঞ্ঝাট ছাড়া বিয়ের পিড়িতে বসবে,,,
পারভেজ সাহেবের কথা শেষ হতেই পুনম দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায়। দরজা আটকে সেখাই বসে পড়ে।
— এই কয়েক মাসের ভালবাসার জন‍্যে আমি আমার আব্বুর আঠারো বছরের ভালোবাসা অবহেলা করতে পারিনা।
নিজের উপর ধিক্কার জানিয়ে বলল — ছিঃ পুনম এই তোর আব্বুর প্রতি ভালোবাসা

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪২

ঘুমিয়ে আছে রাতের আকাশ নিয়ন আলোয় জ্বলজ্বল করছে পুনমের বারান্দা। সেখানেই বসে রেলিঙে হ‍্যালান দিয়ে বসে আছে পুনম। বারান্দায় বসে ঐ দূর আকাশে শশীর দিকে তাকিয়ে
বলল — আপনি আমার না পাওয়া অদ্ভুত শূন্যতা যার মোহে আমি নিজেকে হারিয়েছি।

রেলিঙের খুটি গুলো আলতো হাতে ছোয় পুনম এই বারান্দার প্রত‍্যেকটা ইট জানে পুনমের রাত জাগা গল্পগুলো। চিঠি লেখার সময় পুনমের লাজুক রাঙা আদল খনে খনে চিঠি পড়ে মুচকি হাসে সবকিছুর সাক্ষী এই বারান্দার প্রত‍্যেকটা কোণা।
— ভুলে যাব। ভোলা কি এতোই সহজ যদি ভোলার ছিল তাহলে তার প্রতি অনুভূতি জন্মালো কেন আল্লাহ্,,,?? বিড়বিড় করে চোখ বন্ধ করে যদি মন ও দেহের ক্লান্তিতে একটু ঘুম আসে।
উহু ঘুম আসে না ক্লান্তিতে চোখই বন্ধ রাখে পুনম। এভাবেই কতক্ষণ ছিলো জানা নেই পুনমের তবে ফজরের আজানের ধ্বনিতে তার ব‍্যাঘাত ঘটে।

ঢলতে ঢলতে ওয়াশরুমে যায়। শাওয়ার ছেড়ে বসে পড়ে চোখ বন্ধ করে দশ মিনিট এভাবেই থেকে কাপড় ছেড়ে ওযু করে বের হয় নামাজে দাড়ায়। আজ নামাজ শেষে পুনম মুনাজাতটা বেশ দীর্ঘ করেছে প্রত‍্যেকটা সিজদাও দীর্ঘ করেছে বিড়বিড় করে কি বলেছে নিজেও জানে না।
জায়নামাযেই কখন লুটিয়ে পরে টের পায়না।। আজ পুনমের কেনো যানি গভীর ঘুম হচ্ছে এই বাবা চাচারা নামাজ থেকে ফিরে এসেছে টের পাচ্ছে পুনম। বাবাকে জৈন ভিজানো পানি দেওয়া লাগবে ভেবেই উঠে দাড়ায়।

— আব্বু পানি,,,,
পারভেজ সাহেব মেয়ের দিকে কোণা চোখে তাকিয়ে পানি নেয়। বাসায় কেউ এখনো উঠে নাই মহিলারা ছাড়া তারা সকালে রান্নার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। আজ পারভেজ সাহেব পানি নিয়ে মেয়ের ললাটে চুমু খেলো না। পুনম বুঝে বাবা রেগে আছে তা দেখে ঠোট কামড়ে কান্না আটকায়। কামরুল সাহেব ও মিরাজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল — চাচ্চু,, বড় চাচা চা দিব,,

— নাহ চা খাব না,,,যেই মেয়ে হবু শশুরকে বড় চাচা ডাকে তার হাতে চা আমি খাব না।।

ঢোক গিলে পুনম সবাই নিজ নিজ সম্পর্ক তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে এই দিকে সে কোন যন্ত্রণায় আছে তা কাউকে দেখাতে ও বুঝাতে পারছে না। পুনমকে চুপ করে নত মস্তকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মিরাজ সাহেব বলল — আহ ভাইজান দেখেন মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে আর এতোদিন চাচা ডেকেছে হঠাৎই সম্মোধন পরিবর্তন করা যায় নাকি,, আবার পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — তুই যা মা!!

পুনম রান্নাঘরে চলে যায়। চাদনী বেগম পুনমকে দেখে হেসে বলল — চা বানাবি

পুনম জোড় করে হেসে মাথা নাড়ায়। পুনম সামনে এগোলে চাদনী বেগম দেখে পুনমর ভেজা চুলে হিজাব ভিজে গেছে।
— পুনম সকাল সকাল গোসল করেছিস মা??

— জ্বি চাচী কেমন জানি অস্বস্তি লাগছিল হলুদের কারনে তাই,,,

— আচ্ছা সমস্যা নেই তবে চুল গুলো তো মুছবি!! বলে পুনমকে বসিয়ে পুনমের কোমরের থেকে একটু নিচে পড় চুলগুলো মুছতে থাকে নিজের শাড়ির আচল দিয়ে। ততক্ষণে পুনম পানি চরিয়ে দিয়েছে চুলায়।
পানি বলক আসলে চাদনী বেগম তাকে আবার ছেড়ে দেয়।
চা নিয়ে যেতে নিলে চাদনী বেগম পিছন থেকে বলে — চা দিয়ে ঘরে যেয়ে রেষ্ট নিবি সারাদিন অনেক ধকল যাবে।
পুনম সামনের দিকে ফিরেই মাথা নাড়ে। সত্যিই চা দিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।।

_________________
কাল রাতে হইহুল্লোর করে ঘুমাতে ঘুমাতে সবার দেরী হয়ে যায়। তার দারুন উঠেও সবাই দেরীতে। শিহাব রিশানকে উঠিয়ে রমিজ সাহেব পাঠিয়ে দেয় হাউজিং এর ক্লাব ঘর সাজাতে। রিমি ঝিনুক রুপশা মুক্তি অন‍্যান‍্য কাজ হাত বাটাচ্ছে। সবাই কিছুনা কিছু কাজ করে চলেছে।
পুনমকে হলুদ গোসলের জন‍্য তৈরী করতে আসে তার বোনেরা কাল রাতের শাড়ি পড়িয়ে দেয় আজ আর সাজায়নি একটু পরেই হলুদে মুখ মাখামাখি হবে তাই।

রোজিনা বেগম কাদতে কাদতে আচল ধরে আছে। তার আচলের নিচেই চুপচাপ বসে আছে পুনম সকলে কত প্রকার কথা বলে চলেছে আজ সেদিকে কোনো ধ‍্যান নেই পুনমের। গোসল শেষ হতেই পুনমকে রুপশ ও একজন প্রতিবেশী ভাবি নিয়ে যায় পুনমের ঘরে। পুনমের হাতে ব্লাউজ পেটিকোট দিয়ে বলল গোসল করে পড়ে আসতে। পুনম সেই অনুযায়ী কাজ করে শাড়ি পড়াতে পড়াতে ভাবীটা বলল
— আমাদের চন্দ্র ভাই তাহলে পুনমকে বেশ ভালোবাসে

— কিভাবে বুঝলে ভাবী তুমি চন্দ্র ভাই আর পুনমের বিষয়ে জানো।
মাথা নাড়ে তিনি বলল — আরে দেখো না পুনমের হাতের মেহেদী রঙ বেশ গাঢ় হয়েছে চন্দ্রের নামটা যেনো জ্বলজ্বল করছে,,,,,

রুপশা সহ পুনমও নিজের হাতের দিকে তাকায় হলুদবর্ণ হাতের তালুতে চন্দ্রের নামটা উজ্জল চাদেঁর মতই জ্বলজ্বল করছে
— তা বেশ বলেছো ভাবী আসলেই চন্দ্র ভাই আমার বোনটাকে অনেক ভালোবাসে।
এভাবেই তাদের অনেক কথোপকথন চলতে থাকে সেদিকে পুনমের ধ‍্যান নেই সেতো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হাতের দিকে চন্দ্র নামটার দিকে।।

একটার দিকে যোহরের নামাজ পড়েই বর যাত্রী বের হবে সেই জন‍্য পুনমকে বারোটা বাজেই ক্লাবঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। একজন মেকআপ আর্টিষ্ট সেখানেই পুনমকে সাজাবে।।
ভারী লেহেঙ্গা হালকা ব্রাইডাল সাজ গায়ে সোনার গহনা সব মিলিয়ে পুনমকে বেশ রাজকীয় লাগছে।
দুপুর দুইটা নাগাত বর যাত্রী বের হলে থেকে যায় শুধু রোজিনা বেগম ও চাদনী বেগম। পূর্বকে মুক্তি আজ সারাদিন নিজের কাছে রেখেছে।। তাই পূর্বকে মুক্তি নিয়ে যায় ক্লাব ঘরে।

পূর্বকে নিয়ে যখন মুক্তি পুনমকে যেই ঘরে রাখা হয়েছে সেখানে যায় দেখে একটা মুর্তীয়মান বধূ বসে আছে যার মুখে কোনো হাসি নেই। মুক্তি দেখে ভাইয়ের নামের নাকফুলে একদম মানিয়েছে পুনমের মোটা নাকে।

— আপুর উপরে রাগ পূর্ণ,,
মুক্তি পাশে বসতেই পুনম ভাইকে কোলে নিল। মাথা নাড়িয়ে না সম্মোধন করল। মুক্তি তা দেখে মাথায় হাত বুলায় রুপশা এসেই পুনমকে ঝাপটে ধরে কেদেঁ দেয়। কান্না একটা ছোয়াছুয়ি রোগ রুপশার কান্না দেখে পুনম ও মুক্তিও কেদেঁ দেয়।
সমান তালে তিনবোনের কান্না চলছে তাদের কান্না দেখে ছোট্ট পূর্বও ঠোট ফুলিয়ে কেদেঁ দেয়।।
তখনই ঝিনুক রিমি আসে আপু বর এসেছে বর এসেছে বলেই তারা চলে যায় গেট আটকাতে।

গেটে দাড়ানো রিমি মিহি ঝিনুক আরো কয়েকজন পাড়া প্রতিবেশী মেয়েরা উকি ঝুঁকি দিচ্ছে — এই শিহাব ভাই চন্দ্র ভাই কই??

রিমির কথায় শিহাব নাক কুচকে বলল — ঐ চাঁদ মামার কথা কইস না গাড়ি থেকে বেরই হইল না বলল তোরা এই গ‍্যাঞ্জাম সেট কর।

শিহাবের কথা শুনে সবাই হতাশ তবুও লিমন বলল — শালিকারা দ্রুত গেট খুলার দরদাম শুরু করো আমাদের দুলা অধৈর্য‍্য হয়ে যাচ্ছে।।

লিমনের কথা শুনে একদফা হাসির রোল পড়ে গেলো যাই হোক কোনো দামাদামি হয়নি মেয়েদের চাওয়াই পূরণ করেছে লিমন। বীনা বিগ্নে ঢুকে পড়ে তারা চন্দ্র যখন নামে তখনই লিমন বক্সে গান সেট করে
_!পিছে বারাতি আগে ব‍্যান্ড বাজা
— আয়‍্যে দুলহে রাজা
“” গোরী খোল দারওয়াজা

গানটা শুনে মুক্তির হঠাৎই কেনো জানি হাসি পেলো। বর্তমানে পুনমের অবস্থা গানের ঐশ্বরিয়া রায়ের মতো আর চন্দ্রের অবস্থা সানজেয় দাট্টের মতো। — ইশশ ঐ শের না বাঘ যদি উপস্থিত থেকে যদি আজেয় ডেবগান গ‍্যাপটা ফিল করে দিতো।
পরেই আবার ভাবে — না বাবা না উপস্থিত নাই ভালো হয়েছে নাহলে আমার ভাই ভিলেন হয়ে যেতো। আমার হিরো মার্কা ভাই ভিলেন কেন হবে।।
মুক্তি তো আর এসবই তার ভাইয়ের কারসাজি।

— এই মুক্তি কখন থেকে ডাকতেছি কি বিড়বিড় করে চলেছিস চোখ বন্ধ করে।

— হু,,, হে হে কিছু না

— চল বিয়ের কাজ শুরু হবে।
দেনমোহর ধার্য করে সব লেখালেখি শেষ করে কাজী চলে যায় পুনমের কাছে অধৈর্য‍্য বসে থাকে চন্দ্র।।
— টেক ইট স্লো ব্রো দিনের এখনো অনেক বাকি,,, বাসর রাত পন্ড হবে না তোর
বলেই মিচকে হাসে শিহাব।

— তোরা ভাই ব্রাদার তোর সব ঠিক করবি না তো কে করবে,,, চন্দ্র ভ্রু নাচায়।। — কিরে কাজী এখনো আসল না ক‍্যান?? মিনিট পাচেঁর পর চন্দ্র অধৈর্য‍্য হয়ে বলল।

— থাম ভাই মেয়ে মানুষ কবুল বলতে একটু সময় নেয়।

— তাই বলে এতো সময় পাঁচ মিনিটে পঞ্চাশ বার কবুল বলা যায় তাও আবার থেমে থেমে।

রিশান লিমনের দিকে তাকিয়ে বলল — ভাই এরে বুঝান তো

— শালা বাবু তোমার থালায় যদি আস্তো খাশি না থাকে তাহলে কিন্তু আজকে তোমার বাসর পন্ড।

লিমনের কথায় শিহাব রিশান হতাশ আর চন্দ্র বিড়বিড় করে বলল — এরা সবাই আমার বাসর নিয়ে পড়ে আছে কেনো আমি এমনিতে ভয়ে আছি সত‍্য জানতে পারলে আবার ঘরে জায়গা হবে কিনা এরা আছে বাসর পন্ড করার পায়তারায়। আরে বাসর এমনিতে লন্টভন্ট হয়ে যাবে। ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এরমধ্যেই ভিতর থেকে খবর এলো কনে এখনো কবুল বলছে না।
দম যেনো গলায় আটকে গেলো চন্দ্রের। পারভেজ সাহেবের কানে যেতেই তিনি দ্রুত মেয়ের কাছে যান।।
বাবাকে দেখেই তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে পুনম। পারভেজ সাহেব মাথায় হাত বুলায় বুঝায় কবুল বলতে ।। পুনমও বাবার বুকে থেকে কবুল বলল।

কাজী সাহেবকে হাসি মুখে ফের চন্দ্রের সম্মতি চাইতেই চন্দ্র এতোক্ষণ আটকে রাখা দম ফূসস করে ছেড়ে কবুল বলল।

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৩

বিয়ের সকল কার্যক্রম শেষ। আপাতত সকলে মিলে মালা বদল ও আয়না দেখার আয়োজন করেছে। মালা বদলের জন‍্য যখন চন্দ্রর সামনে পুনমকে দাড় করানো হলো সামনাসামনি পুনম ঠিক চন্দ্রের বুক সমান তা দেখে চন্দ্র বিড়বিড় করে বলল — বুক পকেটের জোহরা,,,,

— আগে চন্দ্র ভাই মালা পড়াবে,, ঝিনুক রিমি চিল্লিয়ে বলল।
সেই অনুযায়ী চন্দ্র পিঙ্ক গোলাপ ও মতি গাথায় মালা থালা থেকে উঠিয়ে পুনমের গলায় দেয়। সাথে সাথে করতালির আওয়াজ ভেসে আসে এবার পুনমের পালা পুনম নিচে তাকিয়ে আছে নিজের লেহেঙ্গা খামচে ধরে।
— পুনম ভাইয়াকে মালা পরা,,, মুক্তি কানে ফিসফিসিয়ে বললে পুনম মাথা উঠিয়ে মুক্তির দিকে একপলক তাকিয়ে মালা নিয়ে পড়িয়ে দেয় চন্দ্রর গলায়। সাথে সাথে আবার করতালির আওয়াজ ভেসে আসে সকলের অগোচরে রিশান ঝিনুকের কানে কান বলল — কবে আইব আমার পালারে কবে দিমু গলায় মালারে,,

— সাবার কারিয়ে জনাব

ঝিনুকের কথা শুনে রিশান মুখ ভেঙচি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল — এই সাবার করতে করতে তো আমার জাওয়ানি খতম,,,,
তাদের কথোপকথন ব‍্যাঘাত ঘটে আয়না দেখার পালায়। এবার চন্দ্র ও পুনমকে পাশাপাপাশি বসিয়ে আয়না সামনে ধরে চন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করল — আয়নায় কাকে দেখতে পায় জামাই ভাইয়া,,,

— আমার জোহরা
কথাটা পুনমের কর্ণপাত হতেই অবাক দৃষ্টিতে চন্দ্রের দিকে তাকায়। চন্দ্র সেই দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাতে পারে না এবার পুনমকে জিজ্ঞাসা করলে পুনম বিড়বিড়িয়ে বলল — একজন সুস্রি ধোকাবাজ
কথাটা সকলের কানে না পৌছালেও চন্দ্রর কানে ঠিকই পৌঁছে যায়। মনে মনে ভয় পায় ঝড়ের পূর্বাভাস। ঝড়ের আগে যেমন গোটা ধরনী শান্ত থাকে তেমনি পুনম শান্ত।।
দূর থেকে একজন ছলছল চোখে পুনম ও চন্দ্রের দিকে তাকায়
— কি দেখছিস ভাই?? ভুলে যা মেয়েটা বিবাহিত।।

— জীবনে এই প্রথম কাউকে দেখে চোখ আটকে গিয়েছিল ইহান সে এতো সহজে মন মস্তিষ্ক থেকে যাবে না।

ইহান কাইফির কাধ চাপড়ায়। দুই ভাই একে অপরকে দেখে মুচকি হাসে।।
সকল কার্যকারিতা শেষ এখন বিদায়ের পালা। যেহুতু একই বাড়ীতে যাবে কোনো ঝুট ঝামেলা নেই তবুও পারভেজ সাহেব বাবা হিসেবে পুনমকে চন্দ্রর হাতে তুলে দিবেন।
পুনমের হাত ধরে চন্দ্রের হাতে দিয়ে বলে — বাবা হিসেবে এটুকুই বলব যদি কখনো বোঝা মনে হয় অবহেলা না করে আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিস আব্বা,,,

চন্দ্র পুনমের হাতটা শক্ত করে ধরে পারভেজ সাহেবকে ঝাপটে ধরে বলল — তুমি জানো মেঝ আব্বু তুমি আমাকে কি দিয়েছ ও আমার জন‍্য কি!!
মুচকি হাসে উপস্থিত সকলে তবে পুনম তাকিয়ে থাকে চন্দ্রর হাতে শক্ত করে ধরে আছে পুনমের হাতটা যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে। চন্দ্র পারভেজ সাহেবকে ছাড়তে পুনম বাবাকে ধরে কেদেঁ দিল।
— ধুর মেয়ে সেই একই বাড়িতেই তো যাবি শুধু সম্পর্ক গুলো শেষ হবে বড় চাচা থেকে শশুর আব্বা হয়েছি
পুনমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল কামরুল সাহেব। পুনম চাচাকে জড়িয়ে ধরতে নিলে চন্দ্রর ধরা হাতটা বাধা পড়ে পুনম মুচরাতে বাধন আরও শক্ত করে চন্দ্র।
— আব্বাজান হাতটা একটু ছাড়েন আপনার বউ পালিয়ে যাচ্ছে না
মিরাজ সাহেবের কথায় হাসির রোল পরল উপস্থিত সকলের মাঝে তবে বেহায়া চন্দ্রের তার কোনো ফারাক পড়ল না। লাজে রাঙ্গা হলো পুনমের আদল সেদিকে ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে থাকল চন্দ্র।।
তা দেখে আরেকদফা হাসির আওয়াজ আসল।। এই হাসি ঠাট্টার মাঝেই চন্দ্র নিজ গৃহে নিজের প্রান বধূয়া নিয়ে প্রবেশ করল।
বেলা তখন পাচঁটা বিশ নতুন বধূকে বরণ করে ঘরে তুলল চাদনী বেগম মুখে উজ্জল হাসি যেনো বহু কাঙ্খিত জিনিস আজ পেয়ে গেছে তিনি।

পুনমকে চন্দ্রের ঘরে নিয়ে যাওয়া হলে চন্দ্র ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।
— শালা বাবু হাউ ইজ দ‍্যা ফিলিং??

— কান্ট সে

— হয় হয় কাঙ্খিত জিনিস পেলে এমনি হয়!!
বলেই আরো হাসি তামাশা চলতে থাকে ড্রয়িং রুমে বসে ম‍্যানলি আলাপ করতে পারবে না ভেবেই চারজন ছাদে চলে যায়।

___________________

ফুলে ফুলে সাজানো চন্দ্রের ঘরটা সাথে আর্টিফিশিয়াল মোম।
— কি দেখছিস??
পুনম এতোক্ষণ ঘর দেখছিল। মুক্তির ডাকে ধ‍্যান ভাঙ্গে আলমারি থেকে একটা নতুন পাট ভাঙা তাতির শাড়ি দিয়ে বলল — লেহেঙ্গা পাল্টে ফ্রেশ হয়ে আয় জানি এতে তোর অস্বস্তি হচ্ছে,,,

পুনম কিছু না বলে শাড়ি সহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। এই দুইদিন শাড়িটা মোটামুটি রপ্ত করতে পেরেছে পুনম তাই আগোছালো কুচিতেই বের হয় ওয়াশরুম থেকে।

— আপু আমি আমার ঘরে যাই??

— চল
মুক্তি পুনম বের হয় ঘর থেকে পুনম নিজের ঘরে যায় আর মুক্তি নিজের ঘরে। সবাই নিচে ইহানদের আপ‍্যায়নে ব‍্যস্ত পুনম নিজের ঘরে ঢুকে দেখে রিমি ঝিনুক হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে।।

— তোরা একটু আপুর ঘরে যা তো,,,

— কি ইম্পরট‍্যান্ট কাজ করবে হু হু
ভ্রু নাচিয়ে ঝিনুক বলল। — একটু আগে রিশান ভাইয়াকে দেখলাম বিয়ে বাড়িতে আসা একটা মেয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলছে,,

তড়াক করে উঠে বসল ঝিনুক — কই কই শা*ল লু*চ্চা আজকে ওর খবর আছে। বলেই বেড়িয়ে গেলো।
তার পিছু পিছু রিমিও বেড়িয়ে গেলো। পুনম আলমারি খুলে চিঠির বাক্সটা নিলো। এতোদিন প্রত‍্যেকটা চিঠি পুনম সযত্নে রেখেছে আজ এগুলো পুড়াবে তবে এমন মানুষের সামনে পুড়াবে যাতে এই দগ্ধ চিঠি দেখে তার হৃদয়ে জ্বলন সৃষ্টি করে।

মেহমানরা বিদায় নিলে রাত দশটায় পুরো বাড়ি খালি হয়। পুনমকে চন্দ্রর ঘরে দিয়ে বোনেরা পাহারাদাড়ের মতো অপেক্ষা করছে চন্দ্রের।
চন্দ্র নিচে নেমে নিজের ঘরে সবাইকে দেখে ভ্রু কুচকে বলে — কিরে এখানে কি সবাই??

— বোন যখন ভাবি টাকা চাওয়ার দাবি

— তোদের বংশ কি ডাকাত বংশ এভাবে আটকে টাকার দাবি করিস।
গর্জে উঠল চারবোন সাথে চন্দ্র ও — এই বংশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবি না ভুলে যাসনা ফুপীর কানে গেলে কেলিয়ে ঘর থেকে বের করে দিবে।
চন্দ্রের কথায় শিহাব ও রিশানের মুখটা ফুসস হয়ে যায়। চার বোনের মুখে হাসি ফুটে তারা ভাবে চন্দ্র বুঝি টাকা দিবে তবে তাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের অন‍্য মনস্কতার সুযোগ নিয়ে চন্দ্র চট করে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়।
যতক্ষণে তারা বুঝল কি হয়েছে ততক্ষণে চন্দ্র দরজায় খিল দিয়েছে।
চারিদিকে তাকায় চন্দ্র কাঙ্খিত বধূয়াকে না দেখতে পেয়ে কপাল কুচকে তাকায়।
কি মনে হতে বারান্দায় যায়। বারান্দায় দাড়িয়ে আছে পুনম সুগন্ধি ক‍্যান্ডেল দিয়ে সাজানো বারান্দায় ঘ্রাণে ভরপুর।
পুনম এলোমেলো অবস্থায় দাড়িয়ে খোলা চুল অবিনস্ত পিঠময় ছড়িয়ে আচলটাও আড়াআড়ি ভাবে কাধে ঝুলছে। ঢোক গিলল চন্দ্র বেশ মোহনীয় লাগছে পুনমকে
— পুনম
আদুরে স্বরে ডাকে পুনমকে। পিছন ফিরে পুনম ধীর স্বরে বলল — ক‍্যান আই ফিল ইয়‍্যু শের “এ আলী সাহেব

চন্দ্র ঘোর থেকেই স্বভাবসুলভ জবাব দিলো
— অবকোর্স মাই জোহরা
ঘোর ভাঙল চন্দ্রের কি বলে ফেলেছে সে। একটু আগেও চিন্তা করেছে পুনমকে এখন কিচ্ছু জানাবে না।।
ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে পুনমের বিষাদের হাসি। সেই হাসিতে থতমত খায় চন্দ্র।
— বেশ আয়োজন করেই আমাকে ধোকাটা দিলেন চন্দ্র ভাই

— পুনম আমার কথাটা শুন

— কি শুনব হ‍্যা কি শুনব কিভাবে কিভাবে ধোকা দিয়েছেন নাকি এটা শুনব আমার অনুভূতি নিয়ে এই গেমটা কেনো খেললেন।

— আমি কোনো গেম খেলিনি শুধু তোকে হাসিল করেছি বাই হুক অর বাই ক্রুক

— আমি বুঝি কোনো জড়বস্তু যা আপনি হাসিল করেছেন

— পুনম
বলেই দুই পা এগোলে পুনম চার পা পিছিয়ে যায়।
— ধরবেন না আপনি আমাকে কোনো ধোকাবাজদের স্পর্শ সহ‍্য হবে আমার। কেনো করলেন আমার সাথে এমন কেনো কেনো বলতে বলতে ঢলে পড়ল পুনম। খুব যত্ন করে তার জোহরাকে আগলে নিলো চন্দ্র।

#চলবে