বাতাস বলে দেয় পর্ব-১৮

0
18

#বাতাস_বলে_দেয়
#ফারহানা_কবীর_মানাল

১৮.
বাইক থামল থানার সামনে। নাইমা শান্ত ভঙ্গিতে বাইক থেকে নামল। সহজ গলায় বলল, “আপনি ওখানে কি করছিলেন? বাইক কোথায় পেয়েছেন?”

হামজা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “অদ্ভুত একটা মেয়ে! একদমই অকৃতজ্ঞ! নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচিয়ে নিয়ে এলাম, সামান্য ধন্যবাদটুকু দিতে চাইছে না। উল্টো আমাকেই জেরা করছে।”

“কৌতুহল থেকে জানতে চেয়েছি। তাছাড়া আজকের জন্য আমি ঋণী থাকবে না। সময় হলে শোধ করে দেব।”

“হাহ! তানজিলা আপু বলেছিল– আপনাকে যেন থানায় নিয়ে আসি৷ তাই কলেজে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম কোথাও যাচ্ছেন। তাই পিছু নিয়েছি।”

“বাইক নিয়ে পিছু নিয়েছেন? কিন্তু যাওয়ার সময় তো আমি আমার পেছনে কোন বাইক দেখিনি।”

“ভবিষ্যৎ ভালো। আশা করি সময়ের সাথে অনেক শত্রু বানাতে পারবেন। এখন থানার ভেতরে চলুন। এসব কৈফিয়ত পরে কখনো দেব।”

নাইমা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে থানার ভেতরে ঢুকল। দারোগা সাহেব বললেন, “মনে হয় সবাই চলে এসেছে। আরিফ সাহেব, সবাই এসেছে তো?”

আরিফ ক্ষীণ গলায় বলল, “এসেছে।”

নাইমার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। আকরাম সাহেব রেশমা বেগমের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন। তানজিলা ইনানকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসা। সুমির হাতে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। মোহন, সবুজ, প্রদীপ, সিমা এরা সবাইও আছে। নাইমা তার অপরিচিত লোকদের ভালো করে দেখতে লাগল। নাহ! কারো সাথে ওই মাস্ক পরা লোকদের চেহারা মিলছে না। সে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস গোপন করল।

দারোগা সাহেব বললেন, “সুরভির খু’ন কে করেছে? সুমি আপনি করেছেন নাকি আরিফ?”

আরিফ বলল, “আমি করেছি। টাকা মা’র হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমার মন-মেজাজ খারাপ থাকত। দুশ্চিন্তার কারণে নিজের সংসারেও অনেক অশান্তি করেছি। তানজিলাকে নানান কথা শুনেছি। সবকিছু মিলিয়ে আমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। এরপর হঠাৎই একদিন জানতে পারলাম সুরভি আপা আগে থেকেই টাকা মা’র হওয়ার ব্যাপারটা জানত। জেনে বুঝে আমাদের সবাইকে ইনভেস্ট করতে বলেছেন যেন উনি সেখানে থেকে লাভের অংশ নিতে পারেন। এই ব্যাপারটা আমি সহ্য করতে পারিনি।”

নাইমা বলল, “সুরভি এমন করেছে কথাটা আপনি কবে জানতে পেরেছেন?”

“সুরভিকে খু’ন করার তিন সপ্তাহ আগে জানতে পেরেছি। সেদিন উনি অফিসে বসে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। আমি সেখানে ছিলাম এটা উনি খেয়াল করতে পারেননি। সবটা শোনার পর সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম– যে টাকার জন্য উনি এতগুলো মানুষের সাথে প্র’তা’র’ণা করলেন। সে টাকা আমি উনাকে ভোগ করতে দেব না। ছু’রি ছোঁড়া জানতাম। তাই ওটাকেই নিজের অ’স্ত্র বানালাম। প্রাকটিস শুরু করলাম। তারপরের সবকিছু তো আপনারা জানেন।”

দারোগা সাহেব বললেন, “সবকিছু জানি না। তারপর বলতে থাকুন।”

তার কন্ঠ অত্যন্ত গম্ভীর শোনাল। আরিফ বলল, “ইচ্ছে ছিল দুই সপ্তাহ প্রাকটিস শেষে চূড়ান্ত আ’ঘা’ত করব। কিন্তু তার আগের দিনই সুরভি আপা আমাদের বাড়িতে আসে। মায়ের কাছে দাওয়াত দিয়ে যায়। আমি অবশ্য ওদের যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ওরা আমার কথা শোনেনি৷ তানজিলা আর হিমি দু’জনে ওই বাসায় যায়। আমি ওখানে আগে থেকেই সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম।”

“তারপর কি হলো?”

“সুরভি ওদের নিয়ে খেতে বসে। নানান কথায় তানজিলার কাপড়ে ঝোল লেগে যায় আর সে কাপড় পরিষ্কার করতে বাথরুমে চলে যায়। হিমি ইনানকে কোলে নিয়ে একমনে খাবার খাচ্ছিল। সুযোগে আমি আমার কাজ শেষ করি তারপর ওখান থেকে পালিয়ে যাই।”

আরিফ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তানজিলা জড়ানো গলায় বলল, “তুমি এমন করলে কেন? টাকাপয়সা সম্পত্তি এসব নতুন করে পাওয়া যায় কিন্তু এখন কি হবে ভাবতে পারছ? ইনান ওর বাবাকে চিরদিনের জন্য হারাবে। আমি, আম্মা, আব্বা, হিমি একবারও কি তোমার আমাদের কথা মনে পড়েনি?”

সে মুখ ফিরিয়ে নিলো। অসহায় এবং ক্লান্ত গলায় বলল, “এতকিছু ভাবলে মানুষ খু’ন করা যায় না।”

দারোগা সাহেব বাঁকা চোখে সুমির দিকে তাকালেন৷ তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, “আপনার ব্যাপারটা কি? কেন ইনানকে বি’ষ দিয়েছেন?”

সুমি হাতজোড় করে বসে পড়ল৷ কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি এসবের কিছু জানি না। রোজকার মতো সেদিনও অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎই আরিফ ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়াল। মুখে মাস্ক, মাথায় ক্যাপ করে আছে৷ আমি তাকে দেখে বিস্মিত গলায় বললাম– আরিফ ভাই! আপনি এখানে? শুনলাম আপনি নাকি নিখোঁজ ছিলেন। কোথায় গিয়েছিলেন?”
আরিফ ভাই আমার মুখ চেপে ধরে রাস্তার পাশে নিয়ে গেলেন। ফিসফিসিয়ে বললেন– আমার আব্বা জায়গাজমির ব্যাপারে সবকিছু জেনে গিয়েছেন। আমি উনার সামনে পড়তে চাই না৷ তাই গা ঢাকা দিয়েছি। বুঝতে পারছ?
আমি মাথা দোলালাম। আমার বাড়ির পরিস্থিতি জানি তাই সন্দেহ করিনি। আরিফ ভাই আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে উনার বাড়িতে রেখে আসতে বললেন। এর বেশি আর কিছু জানি না। আমি কিছু করিনি।”

“কিছুই করেননি?”

“সত্যি বলছি। আমি কিছু করিনি।”

“তাহলে পালিয়েছিলেন কেন?”

“আমি কোথাও পালিয়ে যাইনি। আমার এক আত্মীয় অসুস্থ, তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।”

“কোন আত্মীয় অসুস্থ? নম্বর দেন৷ আমি যোগাযোগ করে দেখতে চাই।”

সুমি নম্বর দিলো। দারোগা সাহেব কল দিয়ে কথা বললেন। জানা গেল সত্যিই সুমি আত্মীয় অসুস্থ। সুমিকে কল দিয়ে যেতে বলার সুমি তাকে দেখতে গিয়েছে। দারোগা সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। কঠিন মুখে বললেন, “মিষ্টিতে বি’ষ কি করে এসেছে? আপনি কি কিছুই জানেন না?”

“জানি না। সত্যি বলছি জানি না। দোকান থেকে কিনে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাছাড়া আমি বি’ষ পাব কোথায়?”

দারোগা সাহেবের কপালে ভাঁজ পড়ল।

“মিষ্টিতে অ্যন্টিমনি পটাসিয়াম টারট্রেট যৌগের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। সাধারণত এটা ব্যবহার নিষিদ্ধ। সবখানে পাওয়াও যায় না।”

হামজা বলল, “মিষ্টির দোকানে খোঁজ নিলে জানা যেতে পারে। তাছাড়া কেউ বাইরে থেকে এটা শুধু উপরের মিষ্টিগুলোতে এর উপস্থিতি পাওয়ার কথা।”

দারোগা সাহেব বললেন, “বেশ ভালো বলেছেন। ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী উপরের মিষ্টিগুলোতে অ্যন্টিমনি পটাসিয়াম টারট্রেটের উপস্থিতি বেশি। নীচের মিষ্টিতে এর উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় কেউ মিষ্টি তৈরির পরে এই কাজ করেছে।”

হামজা চুপ করে গেল। সুমি বলল, “আমি শুধু আরিফ ভাইয়ের কথামতো কাজ করেছি। এর জন্য আমাকে যে শা’স্তি দেবেন মাথা পেতে নেব। তবে বি’ষ অথবা খু’নের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। বিশ্বাস না হলে আরিফ ভাইকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।”

দারোগা সাহেব আরিফের দিকে তাকাল। আরিফ বলল, “সুমি সত্যি কথা বলছে। এসবের সাথে কারোর কোন সম্পর্ক নেই। যা করার আমি করেছি। আশা করছি ন্যায়বিচার পাব।”

দারোগা সাহেব ঘর কাঁপিয়ে হাসলেন। তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, “অপরাধী ন্যায় বিচারের কথা বলছে? বেশ ভালো।”

মোহন, সবুজ, প্রদীপ, সিমা এরা সবাই উপস্থিত থাকলেও কেউ কোন কথা বলল না। দারোগা সাহেব তাদের কিছু জিজ্ঞেসও করলেন না। বোধহয় যা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই করে নিয়েছেন।

নাইমা বলল, “একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। মিষ্টিতে বি’ষ এলো কোথা থেকে? কে বা কারা এই কাজ করেছে সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপারটার সাথে কে’সের সম্পর্ক রয়েছে।”

দারোগা সাহেব বললেন, “আরিফ, আপনি কিছু বলতেন চান?”

আরিফ মাথা দোলালো। তানজিলার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, “তুমি হয়তো কখনোই জানবে না তোমার নিয়ে সংসার সাজানোর তীব্র থেকে তীব্রতর ইচ্ছে নিয়ে আমি হারিয়ে গিয়েছি। অযোগ্য লোকেরা সংসার সাজাতে পারে না। প্রিয় মানুষের সাথে বিষন্ন দুপুর কাটানোর সুযোগ পায় না৷ তারা শুধু হারিয়ে যেতে জানে এবং হারিয়েই যায়! পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

তার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল৷ তবে কেউ দেখার আগেই সে অশ্রু মুছে ফেলল।

নাইমা আঁড়চোখে হামজার দিকে তাকাল। চোখের ইশারায় কিছু বলার চেষ্টা করল। হামজা বলল, “কেউ আরিফ ভাইকে ফাঁ’সা’নোর চেষ্টা করছে। হয়তো উনাকে ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বলেছে। আমার কাছে এমন একটা প্রমাণ আছে যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যাবে এই খু’নের সাথে আরিফ ভাইয়ের কোন সম্পর্ক নেই।”

দারোগা সাহেব বললেন, “ওই শার্টের ব্যাপারে বললে ভুলে যান। আমি খুব ভালো করে খোঁজ নিয়েছি আরিফই মোহন সেজে শার্ট অর্ডার করেছিল। হয়তো সে এই খু’নের জন্য মোহনকে ফাঁ’সা’তে চাইছিল।”

হামজা চুপ করে গেল। আরিফ বলল, “ওটা আমার পছন্দের শার্ট। খুব ভালো লাগে বিধায় অর্ডার দিয়ে আনিয়েছিলাম। খু’নের আগেরদিন সুরভির বাসার পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে ফেলে এসেছি। শার্টটা তানজিলার হাতে পড়বে বুঝতে পারিনি। তাই মোহনের নাটক সাজাতে বাধ্য হই।”

নাইমা বলল, এটাও সাজানো। আরিফ ভাই মিথ্যে বলছে। সুরভির যে বাসায় থাকত সেই জানালা বরাবর ফাঁকা মাঠ। ঘটনার দুদিন আগে সেই মাঠে কয়েকটা ছেলে ক্যামেরা লাগিয়েছিল। ওদের উদ্দেশ্য ছিল রাতের পরিবেশ ক্যামেরা বন্দী করে ভিডিও তৈরি করবে। সেই ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে স্পষ্ট খু’নির চেহারা দেখা গিয়েছে। ওই ক্লিপটা হামজা ভাইয়ের কাছে আছে। আমি ঠিক বলছি?”

নাইমা হামজার দিকে তাকাল। হামজা বলল, “আমি এটাই বলতে চাচ্ছিলাম। মাঝপথে দারোগা সাহেব আমাকে থামিয়ে দিলেন। আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন। আমি গিয়ে ওই ভিডিও ক্লিপটা নিয়ে আসছি।”

দারোগা সাহেব তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। স্বাভাবিক গলায় বললেন, “ঠিক আছে। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি। আপনি যেতে পারেন। প্রয়োজন পড়লে দু’জন কনস্টেবলকে সাথে নিয়ে যান।”

“দরকার নেই। যে কাজটা করেছে সে এখানেই আছে। তবে প্রমাণ ছাড়া আঙুল তুলতে চাই না।”

দারোগা সাহেব হাসলেন। নাইমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাল। একটু আগে তাকে যারা আ’ক্র’ম’ণ করেছে তাদের সাথে এখানের কারোর চেহারা মিলছে না। মাস্কের বাইরের চেহারাও মিলছে না। নাকি তার ভুল হচ্ছে? মিলছে তবে ধরতে পারছে না। সে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবল না। হামজা বেরিয়ে যাওয়ার পরপর বলল, “সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। ভাইয়া আমায় নিতে এসেছে। আমি চলে যেতে চাই।”

তার কথা শেষ হতেই হাবিব থানায় ঢুকল। দারোগা সাহেব তাকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। নাইমা ভাইয়ের হাত ধরে বেরিয়ে গেল।

থানার বাইরে খানিকটা দূরে তারা তিনজন মিলিত হলো। হামজা বলল, “এতে কি কাজ হবে? আরিফ ভাই যেভাবে স্বীকারোক্তি দিচ্ছে বা সে-সব প্রমাণ পেয়েছি তাতে তাকেই দোষী মনে হয়।”

নাইমা বলল, “এক ব্যাপার খেয়াল করতে পারছেন না। আরিফ ভাই যদি জানালা দিয়ে ছু’রি ছোঁড়ে তবে সে হিমি ইনান এবং তানজিলাকেও দেখতে পেত। ওরা বাসার ভেতরে থাকতে সে কেন ছু’রি ছুঁড়বে? যেখানে খু’ন হলেই দোষ ওদের উপর পড়ত। আরিফ ভাই কি একটা দিন অপেক্ষা করতে পারত না?”

“হয়তো তার হাতে সময় ছিল না। ওইদিনই কাজটা করতে চাইছিল।”

“শুধু তাই নয়। এর বাইরে ছু’রি ইনান হিমি এদের গায়েও লাগতে পারত। আরিফ ভাই সেই ঝুঁকি কেন নিবে? সেখানে সে নিজের মায়া না করে ইনানকে দেখতে হাসপাতালে এসেছে যেখানে এই ব্যাপারটা বেমানান লাগছে।”

“বুঝতে পেরেছি। কিন্তু দারোগা সাহেব সবাইকে থানায় আ’ট’কে রেখেছে। ওদের মধ্যে কেউ হলে কিভাবে আসবে?”

“আসবে। যে কোন উপায়েই তাকে আসতে হবে। আর একটা ব্যাপার। আরিফ ভাইয়ের হাতের দাগগুলো খেয়াল করেছেন? দাগগুলো বেশ গভীর কিন্তু অস্পষ্ট। মনে হয় কেউ উনাকে বেঁ’ধে রেখেছিল।”

হামজা আর দাঁড়াল না। সোজা আরিফদের বাড়িতে চলে গেল। নাইমা হাবিবের সাথে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল যেখানে তার সাথে রোহানের প্রথম দেখা হয়েছিল।

ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর হাবিব বলল, “গলা শুকিয়ে গেছে। পানি আছে তোর কাছে?”

নাইমা মাথা দোলালো। তার কাছে পানি নেই। হাবিব বলল, “বড় রাস্তার দিক চল। পানি না পেলে বুকের ছাতি ফে’টে ম’রে যাব।”

সে বাইকে উঠল। হাবিব দোকানের সামনে বাইক থামিয়ে এক বোতল পানি কিনল। হাতে মুখে পানি ছড়িয়ে পাশে তাকিয়ে দেখল নাইমা নেই। সে পানির বোতল ফেলে বাইকে উঠল। বাইক স্টার্ট নিচ্ছে না। বোধহয় তেল শেষ হয়ে গিয়েছে। হাবিব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

অনেকক্ষণ হলো সন্ধ্যা নেমে গেছে। আজ পূর্নিমা। চাঁদের আলো বেশ তীক্ষ্ণ। চারদিকে ছড়িয়ে আছে। সবকিছু প্রায় স্পষ্ট দেখা যায়।
একটা লোক মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। মাথা মাথা নিচু করা। একজন লোক তার দুই হাত পিঠের সাথে মুচড়ে ধরে আছে। অন্যজন গলা চে’পে ধরছে।

নাইমা নিঃশব্দে হেঁটে গিয়ে একজনের কাঁধে আ’ঘা’ত করল। লোকটা মাটিতে পড়ে যেতে যেতে বলল, “কানা নাকি তুই? চোখে দেখিস না?”

সে একটু বেখেয়ালি হতেই হামজা তাকে আ’ক্র’ম’ণ করে বসল। বুকের খাঁচা বরাবর বেশ কয়েকটা ঘু’ষি দিলো। কিন্তু তার সাথে পেরে উঠল না। আ’ঘা’ত করার চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু মাত্র নিজেকে বাঁচাতে লাগল। লোক দু’টোর মুখে কাপড় বাঁধা। নাইমা বেশ ভালোই লড়াই করছে। তার কৌশলগুলো বেশ পরিপক্ব। এক পর্যায়ে সে লোকটাকে মাটিতে ফেলে দিলো। অন্যজন এগিয়ে এসে নাইমাকে ধরতে যাবে। তখনই কেউ একটা লোকটার মাথায় বা’ড়ি মা’র’ল। লোকটা এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে দৌড়ে পালিয়ে গেল। হামজা তার পিছনে যেতে গিয়েও গেল না। পড়ে যাওয়া লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখল।

রোহান বলল, “ঠিক সময়ে এসেছি। কি বলো? হ্যাঁ? তোমার কিন্তু আমাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।”

নাইমা তার কথার জবাব দিলো না। হামজার দিকে তাকিয়ে বলল, “বলেছিলাম না ঋণ রাখব না।”

হামজা মুখ বেঁকিয়ে লোকটার মুখের কাপড় সরালো। বিস্মিত গলায় বলল, “তাহলে তুমি!”

ততক্ষণে হাবিব চলে এসেছে। সে প্রায় দমবন্ধ অবস্থায় বলল, “নাইমা ঠিক আছিস? সবকিছু ঠিক আছে?”

নাইমা অল্প হাসল। লোকটার মুখে আলো ফেলে বলল, “ঠিক আছি ভাইয়া। তুমি কি একে চিনতে পারছ? এতকিছু করেও শেষে বোকা বনে গেল।”

রোহান বলল, “বড়ই আফসোস!”

চলবে