ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-১১

0
2

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ১১
#লেখিকা_দিশা_মনি

দৃঢ়তা মান্যতার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে জাবিরের পাশ দাড় করায়। অতঃপর কান্না লুকিয়ে মেকি হেসে বলে,
“তোমাদের দুজনকে একসাথে কত সুন্দর মানায়। একদম আল্লাহর তৈরি করা জুটি তোমরা। যদি মান্যতা আপু এই বোকামিটা না করত তাহলে তোমরা এতদিনে এক হতে…যাইহোক, এতদিন যা হয়নি তা এবার হবে। তোমাদের এক হবার পালা এবার।”

আনিকা চৌধুরী এগিয়ে এসে দৃঢ়তাকে টেনে ধরে বলেন,
“এসব তুমি কি বলছ দৃঢ়তা? নিজের স্বামীকে এভাবে অন্য কারো হাতে তুলে দেবে তুমি?”

“জোর করে আমি কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাই না। দুজন ভালোবাসার মানুষের পথেও বাধা হতে চাই না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি চাচি।”

আমিনা চৌধুরী বলেন,
“তুমি একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ দৃঢ়তা। তুমি চিন্তা করো না,প্রয়োজনে আমরা আরো ভালো ছেলে দেখে দেব তোমার জন্য। তোমার দেনমোহরও মিটিয়ে দেয়া হবে।”

“আপনাদের মহানুভবতার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু সেসবের প্রয়োজন নেই। দেনমোহরের হিসেব নাহয় তালাকের পরই হবে। এখন আপাতত আপনারা আপু আর মিস্টার জাবিরের বিয়ের ব্যবস্থা করুন।”

জাবির মান্যতার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
“আমি আর দেরি করতে চাই না। যত দ্রুত সম্ভব এই বিয়েটা হবে ততোই ভালো।”

ললিতা চৌধুরী বলেন,
“আমি মান্যতার মা-বাবার সাথে যোগাযোগ করছি। ওনাদের অংশগ্রহণ ছাড়া তো কোন কিছুই সম্ভব নয়।”

★★
আলমগীর খান ও মনোয়ারা বেগম এসে উপস্থিত হন চৌধুরী বাড়িতে। আলমগীর খান আসতেই মৌনতা ছুটে গিয়ে নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আলমগীর খান তো এভাবে নিজের মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে যান। বলে ওঠেন,
“মান্যতা তুই? তুই কোথায় চলে গেছিলি মা আমার? আর এখন আবার ফিরে এলি তাও এখানে?”

“সেসব অনেক কাহিনি আব্বু। আমি তোমায় পরে সব বলব।”

এদিকে মনোয়ারা বেগম রেগে বলেন,
“পরে বলবি মানে কি? দৃঢ়তার শাশুড়ী আমাদের জরুরি তলব করায় আমরা এখানে এলাম। কিন্তু এখানে এসে তোকে দেখতে হবে জানলে কখনোই আসতাম না।”

“আম্মু!”

“চুপ। একদম আমাকে আম্মু বলে ডাকবি না৷ তুই জানিস, তোর জন্য আমাকে আর তোর আব্বুকে কত অপমান সহ্য করতে হয়েছে। আমাদের কথা বাদই দে, তুই বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাওয়ায় দৃঢ়তাকে এই বিয়েটা করে নিতে হয়েছে। তারপর ও কত কষ্ট সহ্য করেছে জানিস? আর তুই এখন আবার ডেং ডেং করে চলে এসেছিস। কেন এসেছিস তুই?”

মান্যতা কান্নারত স্বরে বলে,
“আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আম্মু। কিন্তু এবার আমি ফিরে এসেছি সব ভুল শুধরে দিতে।”

“কিভাবে সব ভুল শোধরাবি তুই?”

“আমার নাতিকে বিয়ে করে।”

হঠাৎ করে আমিনা চৌধুরী সেখানে প্রবেশ করে কথাটা বললেন। তার কথা শুনেই মনোয়ারা বেগম হতবাক সুরে বলেন,
“এসব কি বলছেন টা কি আপনি? ”

“হ্যাঁ, আমরা তো মান্যতার সাথেই জাবিরের বিয়ে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু মান্যতা পালিয়ে যাবার কারণে আপনারা ঐ অনাথ মেয়েটাকে..মানে দৃঢ়তাকে আমাদের নাতির ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেন। এখন যখন মান্যতা আবার ফিরে এসেছে তখন সবকিছু ঠিক করে নিলেই হয়। তাছাড়া জাবিরও তো মান্যতাকেই ভালোবাসে।”

মনোয়ারা বেগম রাগী কন্ঠে বলেন,
“পাগল হয়ে গেছেন নাকি আপনারা? দৃঢ়তার সাথে জাবিরের বিয়ে হয়েছে আর এখন মান্যতার…ছি! আপনারা এসব ভাবলেনও বা কি করে। আমি এটা কিছুতেই হতে দেব না।”

আমিনা চৌধুরী বলেন,
“শুনুন,আপনাদের অনুমতি নেয়ার জন্য এখানে ডাকা হয়নি। আপনাদের মান্যতার মা-বাবা হিসেবে এই বিয়েতে অংশগ্রহণের জন্য ডাকা হয়েছে। আপনারা মানুন বা না মানুন মান্যতা আর জাবিরের বিয়ে হবে। তাও এক সপ্তাহের মাঝে।”

মনোয়ারা বেগম আরো কিছু বলতে যাবেন এমন সময় আলমগীর খান বলে ওঠেন,
“আমি এই বিয়ের প্রস্তাবে রাজি। এমনিতেও, জাবিরকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছিল। আমার মেয়েটার বোকামোর জন্য..যাইহোক এখন যদি আপনারা ওকে নিজেদের বাড়ির বউ করতে চান তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।”

মনোয়ারা বেগম বলেন,
“এসব তুমি কি বলছ মান্যতার বাবা? একবার ভেবে দেখেছ লোকে কি বলবে? এসব কথা সমাজে ছড়িয়ে পড়লে আমরা কাউকে মুখ দেখাতে পারব আদৌ? আর তুমি দৃঢ়তার কথাটাও একবার ভাবো।”

“ভাবার কি আছে এখানে? দৃঢ়তাকে তো জাবির স্বেচ্ছায় বিয়ে করে নি আর না দৃঢ়তা করেছে। নেহাতই…”

“তাই বলে এখন তুমি নিজের মেয়ের সংসার গড়ার জন্য নিজের ভাতিজির সংসার ভাঙবে?”

“দেখো,আমি তোমার মতো এত মহান নই। তোমার যদি মহানুভবতা দেখাতে গিয়ে নিজের মেয়ের সুখ সহ্য না হয় তাহলে সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমার কাছে আমার মেয়ের সুখই প্রাধান্য পাবে। এমনিতেই ও একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন যদি ওকে আবার আমরা বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাই তাহলে কি ভবিষ্যতে আর কেউ ওকে বিয়ে করবে? আর সেখানে এই চৌধুরী পরিবারের বউ হলে ও যা সুখ আর ঐশ্বর্যে থাকবে..তা তো আর কোথাও পাবে না। আর আমিও ব্যবসায়িক দিক দিয়ে লাভবান হব।”

“ছি! তোমার মতো একটা নীচ মানসিকতার লোকের সাথে এতদিন সংসার করেছি ভাবতেও আমার লজ্জা করছে। শুধুমাত্র তোমার কথা রাখতে দৃঢ়তা এই বিয়েটা করেছিল আর তুমি…”

“দৃঢ়তা..দৃঢ়তা..দৃঢ়তা..আমার ভাইয়ের মেয়ের প্রতি আমার যতোটা টান নেই তার থেকে বেশি টান তোমার দেখি। ওকে যে ওর মা-বাবার মৃত্যুর পর আমি মেয়ের মতো বড় করেছি সেটাই অনেক। তার জন্য এটা করা ওর কর্তব্য ছিল৷ আমি যদি ওর দেখভাল না করতাম তাহলে তো এতদিনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত।”

“বাহ, তোমার কথা যত শুনছি ততো অবাক হচ্ছি। মেয়েটার দেখভাল করেছ জন্য ওর জীবন এখন তুমি নষ্ট করে দেবে।”

মান্যতা এবার বিরক্তের স্বরে বলে,
“আম্মু তুমি বেশি ভাবছ। দৃঢ়তার এই বিয়েতে কোন অসুবিধা নেই। বরঞ্চ ও তো নিজেই বলেছে ও আমার আর জাবিরের মধ্যে থেকে সরে যাবে। ও নিজেই এই বিয়ের আয়োজন করছে।”

“কি?!”

মনোয়ারা বেগম হতবাক হয়ে যান।

★★
মান্যতা মনোয়ারা বেগম ও আলমগীর খানকে গেস্টরুমের দিকে রেখে আসল৷ যদিওবা মনোয়ারা বেগম এখানে থাকতে চাইছিলেন না কিন্তু স্বামীর জোরাজুরিতে বাধ্য হন। মান্যতা এভাবে হেটে হেটেই যাচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ কেউ একজন তার হাত ধরে টান দেয়। মান্যতা ভয় পেয়ে বলে,
“কে?!”

কিন্তু কেউ তার মুখ চেপে ধরে। মান্যতা এবার ভালো করে খেয়াল করে দেখে এটা জাবির। মান্যতার ভয় দূর হয়। জাবিরও তার মুখ থেকে হাত সরায়। মান্যতা লাজুক স্বরে বলে,
“আপনি!”

জাবির বলে,
“হ্যাঁ, আমি। এতগুলো দিন অনেক কষ্ট দিয়েছ আমায়..বিয়ের মঞ্চে আমায় বসিয়ে রেখে পালিয়ে গেছ। কিন্তু এবার আর আমি তোমায় পালাতে দেব না..”

বলেই টান দিয়ে জাবির মান্যতাকে নিজের বুকের আরো কাছে টেনে নিয়ে বলে,
“এবার আমি তোমাকে নিজের এত কাছে আনব যে তুমি চাইলেও আমার থেকেই দূরে যেতে পারবে না..”

বলেই জাবির মান্যতার কপালে একটা চুমু খায়৷ এমন সময় হঠাৎ কোন কিছু একটা পড়ে যাবার শব্দ পেয়ে দুজনের ধ্যান ভাঙে। জাবির দূরে সরে যায়। মান্যতা একটু এগিয়ে এসে দেখে দৃঢ়তা ফ্লোরে পড়ে থাকা একটা ভাঙা গ্লাস তুলছে। মান্যতা বলে,
“উফ! দৃঢ়তা। তুইওনা। একটা কাজও দেখে করতে পারিস না।”

এমন সময় একটা কাচ লেগে দৃঢ়তার হাত কেটে যাওয়া দেখে মান্যতা বলে,
“আরে..হাত কেটে ফেললি..দেখি..খুব ব্যথা হচ্ছে তাই না?”

জাবিরও ততক্ষণে সেখানে এসে দড়ায়। দৃঢ়তা তার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে,
“হুম, খুব…”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨