#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ২১
#লেখিকা_দিশা_মনি
দৃঢ়তার সাথে ইউভানের বন্ধুত্ব যেন দিন দিন গাঢ় হচ্ছে। ইউভানের সাথে সময় কাটিয়ে দৃঢ়তা এখন অনেক ভালো অনুভব করে। ইউভানও দৃঢ়তার সঙ্গ পেয়ে খুশি। আজ হঠাৎ করে ইউভান দৃঢ়তাকে বলে ওঠে,”আপনি আমার সাথে কক্সবাজারে ঘুরতে যাবেন?”
প্রস্তাবটা শুনে দৃঢ়তা থমকায়। জীবনের নানা ব্যস্ততায় কখনো তার কক্সবাজার যাওয়া হয়নি৷ সে সত্যিই সেখানে যেতে চায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সে যেতে চাচ্ছে না। ইউভান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দৃঢ়তাকে বলে,
“ওহ, বুঝতে পেরেছি। ব্যাপার না, যেদিন আপনি আমায় সম্পূর্ণ ভরসা করতে পারবেন সেদিন নাহয় যাবেন।”
দৃঢ়তা বলে,
“আপনাকে ভরসা করি না এমন নয়। আসলে একা একটা ছেলের সাথে..বুঝতেই তো পারছেন৷ যতই হোক আমি এখনো তো একজনের বিবাহিত স্ত্রী৷ যতোই সে অন্য কাউকে বিয়ে করুক, তার সাথে এই সম্পর্ক টিকে থাকা অবস্থায় আমি বিতর্কিত কিছু করতে চাই না। আপনাকে আমি শুধু একজন বন্ধুই ভাবি এবং বন্ধু হিসেবে আপনি আমার পাশে থাকুন তাহলেই হবে।”
বলেই দৃঢ়তা সেখান থেকে চলে যায়। ইউভান দৃঢ়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,
“আপনাকে যতো দেখছি ততোই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি দৃঢ়তা। সত্যিই আপনার মতো মেয়ে হয়না। এত কিছুর পরেও আপনি কতোটা লয়্যাল। বেশ, আমিও আপনার এই সততায় পাশে থাকব। আমি আপনার বন্ধু হয়েই আপনার পাশে থাকব। আর যেদিন আপনি এই সম্পর্কের বাঁধন থেকে বেরিয়ে আসবেন সেইদিনই কয়েক ধাপ সামনে আগানোর চেষ্টা করব। তার আগে নয়।”
বলেই ইউভান মুচকি হাসে।
★★
আমিনা চৌধুরী মোহনার কাধে হাত রেখে বলে,
“তুমি কিছু চিন্তা করো না, মোহনা। আমি জাবিরকে বোঝাব..”
মোহনা রেগে গিয়ে বলে,
“আপনি একদম কিছু বলবেন না। আপনারা সবাই প্রতারক৷ আপনারা আমার আর আমার বাবার সাথে প্রতারণা করেছেন। আমার বাবা আপনাদের উপর কতোটা ভরসা করে আমাকে আপনার নাতির সাথে বিয়ে দিয়েছে। আর আপনারা এত বড় সত্যটা আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখলেন। আপনাদের নাতি আগে থেকেই বিবাহিত, সে তার আগের স্ত্রীকেই ভালোবাসে। তবুও আপনারা তার সাথে আমার বিয়ে দিলেন। এভাবে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলেন।”
ললিতা চৌধুরী বলেন,
“না, মোহনা মা৷ তুমি ভুল বুঝছ৷ আমরা তোমার জীবন নষ্ট করতে চাই নি৷ জানি না, ঐ দৃঢ়তা নামের মেয়েটা কি যাদুটোনা করেছে আমার ছেলের উপর। নাহলে বিয়ের পর তো ও ঐ মেয়েটাকে সহ্যই করতে পারত না। ঐ মেয়েটার চরিত্রও তো ভালো না। এইজন্যই তো ওর সাথে আমরা জাবিরের ছাড়াছাড়ি করিয়ে দিয়েছি।”
আনিকা চৌধুরী এবার আর চুপ থাকেন না। এগিয়ে এসে বলেন,
“এতক্ষণ ধরে তোর আর আম্মুর অনেক বাজে কথা আমি সহ্য করেছি ছোট। কিন্তু আর না, মোহনা আমি তোমাকে সব সত্যটা বলছি। এসব আমার আরো অনেক আগেই বলা উচিৎ ছিল। তাহলে হয়তো তোমার জীবন নষ্ট হতো না কিন্তু আমাকে এনারা সেই সুযোগটাই দেন নি। তোমার বাবাকেও আমি সবটা বলার চেষ্টা করেছিলাম।”
বলেই আনিকা চৌধুরী জাবির আর দৃঢ়তার বিয়ে, জাবিরের মান্যতাকে বিয়ে করতে চাওয়া, বিয়ের আসরে মান্যতার প্রেমিক আবিরের আগমন সহ সব ঘটনা খুলে বলেন৷ সব শুনে মোহনা বলে,
“বাহ, আপনাদের ছেলের চরিত্র তো আগে থেকেই মাশাল্লাহ। যখন সে দৃঢ়তার সাথে ছিল তখন তার বোন মান্যতাকে চেয়েছে, আর যখন আমার সাথে তার বিয়ে হয়েছে তখন সে আবার দৃঢ়তাকে চাইছে! আমার তো দৃঢ়তা মেয়েটার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। না জানি, আপনাদের চরিত্রহীন, লম্পট ছেলের জন্য সে কত কষ্ট সহ্য করেছে। তবে আমাকে দৃঢ়তা ভাববেন না, আমি মোহনা। আমি নিজের অধিকার এত সহজে ছেড়ে দেব না। লন্ডনে আমি ” আইন” নিয়েই পড়াশোনা করেছি। আপনাদের ছেলে যদি বেশি তেড়িবেড়ি করে তাহলে তাকে জেলের ভাত খাওয়াতে দু মিনিট সময় নেবো না।”
ললিতা চৌধুরী ভয়ে গলা শুকিয়ে ফেলেন। মোহনাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
“এভাবে কেন বলছ মা? ও তো তোমার স্বামী হয়।”
“আরে রাখুন তো স্বামী। এরকম স্বামীর উপর আল্লাহর লানত পড়ুক। আমি এতদিন চুপ ছিলাম শুধু আমার বাবার কথা ভেবে৷ কিন্তু আমার সেই চুপ থাকাকে আমার দূর্বলতা ভেবে আপনারা ভুল করবেন না। আমি যদি শান্তিতে থাকতে না পারি তাহলে আপনাদের ছেলে বা আপনাদের কাউকেই শান্তিতে থাকতে দেব না। আমার জীবন কাউকে এত সহজে নষ্ট করতে দেবো না আমি।”
বলেই মোহনা নিজের চোখের জল মুছে নেয়৷ অতঃপর আমিনা চৌধুরীর চোখে চোখ রেখে বলেন,
“তো বলুন, এখন কি আমি আপনাদের নামে প্রতারণার কেইস করব?”
আমিনা চৌধুরী বলে ওঠেন,
“এসব কি বলছ তুমি? তোমাকে আমি কতোটা স্নেহ করি আর তুমি…”
“আরে রাখুন আপনার স্নেহ। এসব লোকদেখানো নাটক অন্য কারো সামনে করবেন। একেই আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেন এখন ন্যাকামি করছেন। শুনুন, আমি একজন বিজনেসম্যানের মেয়ে, তাই বিজনেস ডিল খুব ভালোই বুঝি। যদি আপনারা চান, আমি আপনাদের নামে কোন কেইস না করি তাহলে আপনাদের আমার কথামতো চলতে হবে।”
আমিনা চৌধুরী রেগে বলেন,
“তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছ?”
“হ্যাঁ, দিচ্ছি। শুনুন,আপনার তো বয়স হয়েছে। তাই আপনার স্ট্রেস আমি একটু কমাতে চাই। শুনেছি, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের সব সম্পত্তি আপনার নামে। তো সেখান থেকে ৫০% সম্পত্তি আমার নামে করে দিতে হবে।”
“মোহনা!”
“গলা নামিয়ে কথা বলুন। নাহলে আবার স্ট্রোক না হয়ে যায়।”
“তোমার তো সাহস..”
“আমার সাহস তো এখনো পুরোপুরি দেখাই নি। আর এই যে মিসেস ললিতা চৌধুরী..”
ললিতা চৌধুরী বলে ওঠেন,
“আমি তোমার শাশুড়ী হই, আমাকে নাম ধরে ডাকছ কেন?”
“আরে ইয়ার রাখুন তো শাশুড়ী,আজ থেকে আপনি আমার স্পেশাল কেয়ার করবেন। আপনার ছেলে আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তার ফল তো আপনাকেও পেতে হবে।”
আমিনা চৌধুরী বলেন,
“তুমি কি সীমা ছাড়াচ্ছ।”
“সীমা তো আমি এখনো ছাড়াই নি। আপনি বয়স্ক জন্য আপনাকে একটু ছাড় দিলাম। আপনাকে কোন কায়িক শ্রম করতে হবে না। শুধু সম্পত্তির একটা অংশ চেয়েছি। যদি সত্যিই সীমা ছাড়াতাম তাহলে আপনাদের সবার কোমড়ে দড়ি পড়িয়ে জেলে পাঠাতাম।”
আমিনা চৌধুরী রেগে এগিয়ে এসে মোহনার গায়ে হাত তুলতে যান। মোহনা আমিনা চৌধুরীর হাত ধরে ফেলে বলেন,
“এই বয়স্ক হাতে এত শক্তি নেই, তাই
শুধু শুধু এত পরিশ্রম করিয়েন না। এই হাত দিয়ে থাপ্পড় না মেরে সম্পত্তি লিখে দিন। আর নাহলে জেলের ভাত খাওয়ার প্রস্তুতি নিন।”
বলেই মোহনা ললিতা চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“এই বাড়ির যে কাজের মেয়েটা আছে একদম ভালো রান্না করতে পারে না। আপনি তো আমার বৌভাতের দিন বেশ সুন্দর বিরিয়ানি করেছিলেন যান আজ আবার আমার জন্য বিরিয়ানি বানান।”
“আমি পারবো না।”
“পারতে আপনাকে হবেই। দাদীমা আপনার বৌমাকে বোঝান।”
আমিনা চৌধুরী ললিতা চৌধুরীকে আদেশ দিয়ে বলেন,
“মোহনা যা বলছে তাই করো।”
অগত্যা ললিতা চৌধুরী শাশুড়ীর আদেশ পালন করেন। আনিকা চৌধুরী এগিয়ে এসে আমিনা চৌধুরীর কানে কানে বলে,
“এতদিন শুধু প্রবাদই শুনেছি খাল কেটে কুমির ডাকা,আজ নিজের চোখে দেখেও নিলাম। এই মেয়েকে নিজের নাতির সাথে বিয়ে দিয়ে আপনি নিজের কবর নিজেই খুড়েছেন আম্মা। এবার ফল ভোগ করুন।”
আমিনা চৌধুরী গরম চোখে তাকায়। কিন্তু তার এই সব রাগ এখন ভিত্তিহীন।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨