ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-২২

0
1

ওরা মনের গোপন চেনে না
#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ২২
#লেখিকা_দিশা_মনি

মোহনা জাবিরের রুমে প্রবেশ করল। জাবির তখন ড্রেস চেঞ্জ করছিল। মোহনাকে এভাবে আসতে দেখে ভড়কে গিয়ে বলল,
“এভাবে চলে আসলেন কেন? মিনিমাম ভদ্রতাটুকু শেখেন নি? কারো রুমে আসার আগে যে নক করে আসতে হয় সেটা কি ভুলে গেছেন?”

মোহনা ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বললো,
“আমাক্স আপনার ভদ্রতা শেখাতে হবে না মিস্টার জাবির। আর আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার বিবাহিত স্ত্রী,তাই আমি যখন খুশি যেভাবে খুশি আপনার রুমে আসতে পারি।”

জাবির বলে,
“কিন্তু আমি এই বিয়েটা মানি না৷ আমি দৃঢ়তাকেই এখনো অব্দি মন থেকে আমার স্ত্রী মানি।”

“আপনার মানা বা মানায় তো কিছু যায় আসে না। আমি আপনার স্ত্রী আর এটাই হলো সত্য। তাই ভালো হয় যদি আপনি বাস্তবতাকে স্বীকার করুন।”

বলেই মোহনা জাবিরের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার পরনের টাওয়াল ধরে টান মারে। যার ফলে জাবির সম্পূর্ণ বিব্রত অবস্থায় পড়ে যায়। মোহনা বলে,
“এবার একদম ঠিক আছে।”

জাবির রাগী স্বরে বলে,
“এটা কি ধরনের অসভ্যতা?”

“অসভ্যতার কিছু তো আপনি এখনো দেখেন নি। এবার বুঝবেন আসল অসভ্যতা কাকে বলে।”

কথাটা বলেই মোহনা দরজাটা লাগিয়ে জাবিরের দিকে এগোতে থাকে। জাবির পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়। মোহনা জাবিরের অনেক কাছে চলে আসে। এপর্যায়ে জাবিরও নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোহনাকে কাছে টেনে নেয়। মোহনার কপালে একটা চুমু খায়৷ অতঃপর মোহনার শাড়ির আঁচল সরাতে যাবে এমন সময় মোহনা জাবিরকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। জাবির মোহনার এই ব্যবহারে হতবাক হয়। সাথে নিজের হুশেও ফিরে আসে। আর বলে,
“এটা আমি কি করতে যাচ্ছিলাম।”

মোহনা বাঁকা হেসে বলে,
“কি হলো? নিজের আসল চরিত্র বেরিয়ে এলো তো? এটাই রিয়্যাল আপনি। মুখে যতোই বলুন, দৃঢ়তা নামের মেয়েকে ভালোবাসেন, তাকে স্ত্রী হিসেবে মানেন কিন্তু আসলে আপনি শুধু নিজেকেই ভালোবাসেন আর কাউকে না। যদি সত্যি আপনি দৃঢ়তাকে ভালোই বাসতেন তাহলে এভাবে আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতেন না বরঞ্চ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে আমায় দূরে ঠেলে দিতেন। আপনার আমার সাথে এই ঘনিষ্ঠতাই প্রমাণ করে দেয় যে, আপনি এক নারীলোভী, চরিত্রহীন পুরুষ। আপনার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আপনাকে সত্যটা উপলব্ধি করানোই আমার উদ্দ্যেশ্য ছিল। এনিওয়ে, আপনিও প্রস্তুত হয়ে নিন, Karma বলে একটা শব্দ আছে, যত অন্যায় করেছেন আপনি জীবনে তার ফল একদিন না একদিন পাবেনই। আমার কথা মিলিয়ে নেবেন।”

বলেই মোহনা তেজ দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। জাবির মোহনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,
“কি বলে গেলো মোহনা মেয়েটা? এসবের মানে কি?”

এদিকে রুমের বাইরে এসে বলে,
“আমার কথার অর্থ হয়তো আপনি এখন বুঝতে পারছেন না মিস্টার জাবির। তবে সময়ের সাথে সাথে ঠিকই বুঝে যাবেন।”

★★
৩ মাস পর,
জাবির ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে অফিসের ডেস্কে এসে বসলো। আজকাল মোহনা অফিসের দায়িত্ব নিয়েছে। সবটাই আমিনা চৌধুরীর ইচ্ছায়। মোহনা অফিসের দায়িত্ব নিয়েছে থেকে জাবিরের জীবনটা পুরো হেল করে রেখেছে। অফিসে সবসময় তাকে অপমান অপদস্থ করে চলে। রোজকার এটা নিত্যদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাবির এখনো অপেক্ষা করছে কখন মোহনা তাকে ডেকে কিছু তিক্ত কথা শুনিয়ে দেয়। এজন্য বেশি অপেক্ষাও করতে হলো না। একটু পরই মোহনা জাবিরকে ডেকে পাঠালো। জাবির মোহনার কেবিনে যেতেই মোহনা জাবিরের মুখের উপর কিছু ফাইল ছুড়ে মেরে বলল,
“কি করেছেন এসব? কাজে তো দেখছি আপনার কোন মন নেই। শুধু শুধু মাস গেলে এতগুলো টাকা বেতন নেন।”

জাবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এটা আমার পারিবারিক কোম্পানি।”

“সেটা জানি আমি৷ কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয়, আপনি বিজনেস করার জন্য জন্মান নি। এই বিজনেস আপনার জন্য নয়। তার থেকে ভালো একটা কাজ করুন, চুরি শাড়ি পড়ে রাস্তায় গিয়ে নাচ দেখান। সেটা আপনাকে বেশি ভালো মানাবে।”

“মোহনা!”

“এই আওয়াজ নিচে। মোহনা ম্যাডাম বলে ডাকবেন আমায়৷ এটা বাড়ি নয় অফিস আর এখানে আমি আপনার বস।”

জাবির রেগে ডেস্ক থেকে বের হতেই চেয়ে দেখলো অফিসের বাকি সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তো মুচকি মুচকি হাসছে। এই অপমান আর সহ্য হলো না তার। জাবির এবার অফিস থেকেই বেরিয়ে গেল। মোহনা নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে জাবিরকে যেতে দেখে বললো,
“এটা তো কেবল শুরু মিস্টার জাবির। আনিকা চৌধুরীর কাছে আমি সব শুনেছি আপনি কত অন্যায় করেছেন। সেসব কিছুর জন্য এটুকু তো আপনার পাওনা ছিলোই। তবে শুধু আপনাকেই শাস্তি দিলে তো হবে না সাথে আপনার মা-দাদির ব্যবস্থাও করতে হবে। সেটাও আমি করছি।”

বলেই সে ফোন বের করে ললিতা চৌধুরীর নাম্বারে কল করল। ললিতা চৌধুরী ফোনটা রিসিভ করতেই মোহনা বলে,
“আজ আমার কিছু গেস্ট আসবে। তাদের জন্য খাশির কাটলেট, গরুর কালো ভুনা, মুরগীর রোস্ট, হাসের তরকারি, পোলাও, চিকেন শর্মা, চাউমিন, চিলি চিকেন….এসব কিছু যেন হয়ে যায়।”

“কি বলছ তুমি? আমি একা হাতে এত কিছু করব? বাতের ব্যাথাটা যে বড্ড বেড়েছে।”

“চুপচাপ যা বলছি করুণ। আর বাড়িঘর ইদানীং বেশ নোংরা দেখছি সব ধুয়ে মুছে সাফ করবেন।”

বলেই সে ফোনটা রেখে বলে,
“আমিনা চৌধুরীর জন্য এর থেকেও বড় ঝটকা অপেক্ষা করছে। তবে সেটা আপাতত তোলা থাক।”

★★
দৃঢ়তা মিষ্টি ও রাফার চুল সুন্দর করে খোপা করে দিচ্ছিল। রাফা তো দৃঢ়তার এই গুণ দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়ে বলে,
“বাহ, আন্টি। তোমার হাতে তো যাদু আছে। আমাকে কি সুন্দর করে সাজিয়ে দিলে। একদম বার্বির মতো লাগছে আমায়।”

দৃঢ়তা বিনিময়ে হেসে বলে,
“কি যে বলো! তুমি তো বার্বির থেকেও বেশি সুন্দর।”

দূর থেকে দৃঢ়তাকে এভাবে হাসতে দেখে ইউভান ভীষণ খুশি হয়ে বলে,
“এই হাসিটাই সবসময় আপনার মুখে দেখতে চাই।”

ভাবনার মাঝেই সে এগিয়ে এসে মিষ্টিকে কিছু একটা ইশারা করে। মিষ্টি ইউভানের ইশারা বুঝে দৃঢ়তাকে বলে,
“দৃঢ়তা তোমার ভাইয়া কাল রাতে বলছিল, এখন তো সামার ভ্যাকেশন চলছে রাফার স্কুলও অফ। তাই আমরা সবাই মিলে যদি কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি তাহলে অনেক ভালো হয়।”

দৃঢ়তা খুশি হয়ে বলে,
“বাহ, বেশ ভালো তো। আপনারা সবাই গিয়ে ঘুরে আসুন।”

“এই মেয়ে মার খাবে কিন্তু। তুমিও যাচ্ছ আমাদের সাথে আর ইউভানও যাবে। কি ইউভান বলো।”

ইউভান বলে,
“অবশ্যই। সমুদ্র আমায় ডাকছে। সেই ডাকে তো সাড়া দিতেই হবে।”

দৃঢ়তা বলে,
‘বেশ, আমারও কোন আপত্তি নেই যেতে।’

ইউভান খুশি হয়ে বলে,
“এবার এই কক্সবাজারেই তোমার জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজের আয়োজন করব। যা আপনি সবসময় মনে রাখবেন। ওয়েট ফর কক্সবাজার! ”

*★
“কক্সবাজারে!”

জাবির হতবাক স্বরে বলে। আমিনা চৌধুরী বলে ওঠেন,
“হ্যাঁ, তুমি আর মোহনা তো বিয়ের পর একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওনি তাই এই সময় যাও কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসো। ভালো লাগবে।”

“আমি ঐ মেয়েটার সাথে কোথাও যাব না। অফিসে উঠতে বসতে আমায় অপমান করে। আজ তো সব সীমাই অতিক্রম করে দিয়েছে।”

“আমি যা বলছি তাই করো জাবির। আমি তোমায় অনুরোধ না আদেশ করছি।”

বলেই তিনি উঠে দাঁড়ান। তিনি চলে যেতে নেবেন এমন সময় ললিতা চৌধুরী এসে বলেন,”
“ঐ মেয়েটাকে এতো তোল্লাই দিচ্ছেন কেন আম্মা?”

“তোল্লাই নয় বৌমা, খাল কেটে কুমির ডেকে নিয়ে এসেছিলাম তো। এবার সেই কুমিরকে আবার খালে পাঠানোর পালা। তবে জ্যান্ত অবস্থায় নয় মৃত অবস্থায়।”

বলেই একটা অন্যরকম হাসি দেন তিনি।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨