ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-২৪

0
2

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ২৪(চমক)
#লেখিকা_দিশা_মনি

দৃঢ়তা জাবিরকে একটু হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে খানিক দূরে সরিয়ে দিল। অতঃপর বলল,
“আপনি এখানে?”

জাবির বললো,
“এই প্রশ্ন তো আমার তোমাকে করা উচিৎ দৃঢ়তা। তুমি আমাদের কাউকে কিছু না বলে এভাবে পালিয়ে এত দূরে চলে এলে। আর এত দিন ধরে আমার থেকে পালিয়ে বেড়ালে।”

“এখানে পালিয়ে বেড়ানোর কিছু নেই৷ আপনার সাথে তো এখন নিশ্চয়ই মান্যতা আপুর বিয়ে হয়ে গেছে।”

“না, আমার আর মান্যতার বিয়ে হয়নি।”

দৃঢ়তা হতবাক স্বরে বলে,
“হয়নি মানে?”

এমন সময় জাবির বলে ওঠে,
“তুমি সেদিন পালিয়ে আসার পরই জাবিরের প্রেমিক আবির ফিরে আসে৷ আর যার কারণে মান্যতা বিয়েটা ভেঙে দিয়ে চলে যায়৷ এরপর আমি তোমায় অনেক খুঁজে বেরিয়েছি। কিন্তু কোথাও তোমার কোন খোঁজ পাই নি। আমি নিজের সব ভুল বুঝতে পেরে গেছি দৃঢ়তা। তুমি প্লিজ আমার জীবনে ফিরে আসো।”

দৃঢ়তা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারে না। তার মাথা একদমই কাজ করছিল না। এমন সময় ইউভান এগিয়ে এসে বলে,
“দৃঢ়তা..কে এই লোকটা? আর উনি আপনাকে কি বলছেন? আপনি কি চেনেন ওকে?”

জাবির বলে ওঠে,
“আপনি কে? আমি স্বামী হই দৃঢ়তার।”

ইউভান হতবাক স্বরে বলে,
“স্বামী! ওহ,মানে আপনিই সেই মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ ব্যক্তি যিনি দৃঢ়তার এত কষ্টের কারণ। যতদূর জানি,আপনার তো এখন নিজের পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে৷ তাহলে ৩ মাস পর হঠাৎ আবার দৃঢ়তাকে দেখতে পেয়ে এভাবে জড়িয়ে ধরলেন কেন? একদম ফুলের মতো চরিত্র তো আমার।”

“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। আমাকে এসব বলার আপনি কে বে? দৃঢ়তা স্ত্রী হয় আমার আর আমি ওর স্বামী। আপনি কোথাকার কোন হরিদাস পাল যে আমাদের মাঝে কথা বলছেন।”

এমন সময় হঠাৎ করে মোহনা সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“যদি দৃঢ়তা আপনার স্ত্রী হয় তাহলে আমি কে?”

কথাটা শুনেই জাবির মোহনার দিকে তাকায়। মোহনার সাথে মিষ্টি ও রাফসানও ছিল। মোহনা এগিয়ে এসে জাবিরের মুখোমুখি হয়ে তার শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
“এদিকে আমার উপর গুণ্ডারা আক্রমণ করে আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে, আর এদিকে আমার স্বামী তার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে..ছি আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে। আজ যদি এনারা(মিষ্টি ও রাফসানের দিকে ইশারা করে) সঠিক সময় আমাকে বাঁচাতে না আসতেন তাহলে যে আমার কি হতো! ভাবতেই তো দম বন্ধ হয়ে আসছে। আপনি আর আপনার পরিবার মিলেই এসব করেছেন তাই না?”

জাবির বলে ওঠে,
“দৃঢ়তা আমার প্রাক্তন স্ত্রী নয়। আইনত ও এখনো আমার স্ত্রী।”

দৃঢ়তা যেন আজ একের পর এক অবাক হচ্ছিল। একেই এত গুলো দিন পর জাবিরের মুখোমুখি হওয়া। তার উপর জানতে পারা যে,জাবিরের সাথে তার মান্যতা আপুর বিয়ে হয়নি। এখন আবার এই অচেনা-অজানা মেয়ের হঠাৎ করে নিজেকে জাবিরের স্ত্রী বলে দাবি করা সব বিষয় তাকে অবাক করছে। দৃঢ়তা বলে ওঠে,
“এসবের মানে কি?”

জাবির বলে ওঠে,
“দৃঢ়তা আমায় একটু সুযোগ দাও। আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি।”

মোহনা বলে,
“যা বলার আমি বলছি, আমি মোহনা। জাবিরের বর্তমান স্ত্রী। ”

দৃঢ়তা জাবিরের দিকে তাকায়। জাবির ছটফট করছিল কিছু একটা বলার জন্য। এমন সময় ইউভান বলে ওঠে,
“বাহ, মিস্টার জাবির চৌধুরী, আপনার চরিত্র তো যতটা সুন্দর ভেবেছিলাম তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি সুন্দর। প্রথমে দৃঢ়তার মন নিয়ে খেললেন তারপর ওর বড় বোন মান্যতার আর এখন এই মহিলার। আপনার প্রশংসা না করে পাচ্ছি না।”

মিষ্টি দৃঢ়তাকে বলে,
“দৃঢ়তা জানো, এই মেয়েটাকে আজ সমুদ্রের কাছে কে বা কারা যেন আক্রমণ করেছিল। ভাগ্য ভালো আমি আর রাফসান সঠিক সময় সেখানে পৌঁছে যাই নাহলে যে আজ কি হয়ে যেত!”

দৃঢ়তা নিশ্চুপ থাকে। সে কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। এরইমধ্যে জাবির বলে,
“আমাকে তো কেউ নিজের দিকটা ব্যাখ্যা করার সুযোগই দিচ্ছে না। আমি মোহনাকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করি নি। শুধুমাত্র পরিবারের চাপে বাধ্য হয়ে আমায় এই বিয়েটা করতে হয়েছে। কিন্তু মন থেকে এই বিয়েটা আমি মানি নি। আমি এখন বুঝতে পেরেছি আমি নিজের আসল ভালোবাসা চিনতে ভুল করেছি। দৃঢ়তা আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাবার পরই আমি উপলব্ধি করেছি আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি। আমি দৃঢ়তাকে নিজের করে ফেরত পেতে চাই। আর মোহনাকেও ডিভোর্স দিতে চাই।”

মোহনা বলে,
“আপনি যদি ভেবে থাকেন এত সহজে আমি আপনাকে মুক্তি দেব তাহলে ভুল ভাবছেন। আপনি অনেকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন কিন্তু আর না। অন্তত আমার জীবন নিয়ে আপনি ছিনিমিনি খেলতে পারবেন না।”

জাবির সব উপেক্ষা করে মিষ্টির সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ে বলে,
“মিষ্টি..তুমি অন্তত কিছু বলো। এভাবে চুপ করে থেকো না। ভুল তো মানুষ মাত্রই হয় বলো, আমিও ভুল করেছি৷ কিন্তু আমি জানি, তুমিও আমায় ভালোবাসো। তাই আমার এই ভুলটা ক্ষমা করে দাও। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, তোমার প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি রাখব না। দয়া করে আমার কাছে ফিরে এসো।”

এবার আর মিষ্টি চুপ না থেকে জবাব দেয়,
“জীবন কি আপনার কাছে ছেলেখেলা মিস্টার জাবির? আপনার যখন ইচ্ছা যাকে খুশি কাছে টেনে নেবেন, যখন খুশি দূরে ঠেলে দেবেন..এসবের কি কোন মানে হয়?” আপনি কি নিজেও জানেন আপনি কি চান? নাহ, জানেন না।”

“আমি জানি, আমি শুধু তোমাকেই চাই।”

মোহনা বলে ওঠে,
“তাহলে আমার কি হবে? আমাকে কেন বিয়ে করলেন আপনি? নিজের পরিবারকে বলতে পারতেন বিয়েটা না দিতে। আমি কেন শুধু শুধু ভুক্তভোগী হবো?”

দৃঢ়তা বলে,
“এবার আর কেউ ভুক্তভোগী হবে না। মিস্টার জাবির, আমি আপনার জীবনে আর কখনো ফিরব না৷ এই কথা কান খুলে শুনে রাখুন আর নিজের মাথাতেও ঢুকিয়ে নিন। আমি আপনার হাতের খেলনা পুতুল নই, আমাকে যখন একবার আপনি নিজের থেকে দূরে সরিয়েছেন তখন হাজার চেষ্টা করেও আর আমায় কাছে টানতে পারবেন না। ভালো এটাই হবে যে, আপনি নিজের বর্তমান স্ত্রীকে নিয়ে খুশি থাকুন। আর ৩ মাস তো হয়ে গেছে আর ৩ মাস পর আমি আপনাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেব। ”

বলেই দৃঢ়তা চলে আসতে নেবে এমন সময় জাবির তার পথ আটকে দাঁড়ায়। ইউভান রেগে জাবিরকে বলে,
“ওর পথ আটকাচ্ছেন কেন? শুনতে পান নি ও কি বলছে? দৃঢ়তা আর আপনার জীবনে ফিরবে না।”

জাবির বলে,
“সবাই অনেক কিছু বলে নিয়েছে। এবার আমি কিছু বলব, সবাই মন দিয়ে শুনুন। আমি দৃঢ়তাকে ভালবাসি, দৃঢতা এখনো আমার স্ত্রী। তাই ওর উপর আমার অধিকারবোধ আছে। দৃঢ়তাকে আমি ডিভোর্স দেব না, ওর সাথেই আমি সংসার করবো। সেটা দৃঢ়তার ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় আর এটাই আমার শেষ কথা। এটা করা থেকে কোন আইন আমায় আটকাতে পারবে না।”

“মিস্টার জাবির!”

দৃঢ়তা রাগী চোখে জাবিরের দিকে তাকায়। জাবির সেসবকে পাত্তা না দিয়ে দৃঢ়তার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
“আমার কাছে ফিরে এসো তুমি। এটাই তোমার জন্য ভালো হবে।”

মোহনা বলে,
“আপনি দৃঢ়তা ডিভোর্স দেবেন না, তাই তো? তাহলে আমার কথাও শুনে রাখুন, আমিও আপনাকে ডিভোর্স দেব না।”

“বেশ তো, কোন অসুবিধা নেই। আমি নাহয় দুই বউ নিয়ে সংসার করলাম!”

জাবিরের কথা শুনে দৃঢ়তা ও মোহনা দুজনেই তার দিকে ঘৃণার সাথে তাকায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨