#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ২৯
#লেখিকা_দিশা_মনি
দৃঢ়তা বিমর্ষ মনে বসে আছে একটি রুমের মাঝে। তার মনে এখন নানারকম ভাবনা কাজ করছে। যবে থেকে নিজের আসল পরিচয় জানতে পেরেছে তবে থেকে দৃঢ়তা নিজেকে স্থির থাকতে পারছে না। নিজের মা-বাবার একটি ছবি হাতে নিয়ে দৃঢ়তা বলে,
“তোমরা কোথায় আছ মা-বাবা? আমি কি আদৌ কখনো তোমাদের আবার ফেরত পাবো? কখনো তোমাদের কোলে মাথা রাখতে পারবো?”
দৃঢ়তার ভাবনার মাঝেই ইউভান এসে তার পাশে বসে। বর্তমানে দৃঢ়তা ঢাকায় একটি হোস্টেলে অবস্থান করছে। ইউভান ও সে পৃথক দুটি রুমে থাকে৷ তবে ইউভান মাঝে মাঝেই দৃঢ়তার খোঁজ নিতে আসে। সে মিষ্টিকে ভরসা দিয়ে বলে,
“তুমি কোন চিন্তা করো না, দৃঢ়তা। আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি যাতে তোমার মা-বাবার সম্পর্কে কোন তথ্য খুঁজে বের করতে পারি।”
দৃঢ়তা কোন প্রতিত্তোর দেয় না৷ শুধুই আবেগঘত চোখে তার মা-বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে এবং সেখানে হাত বোলায়৷ দৃঢ়তার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করেই তার কিছু একটা মনে পড়তেই সে ইউভানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমার একটা হেল্প করতে পারবেন আপনি?”
“কি হেল্প বলো? আমি চেষ্টা করবো।”
“আসলে এই ঢাকা শহরে আমার আপন বলতে গুটিকয়েক শুধু কয়েকজন মানুষই রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন আনিকা চৌধুরী..যিনি আমার জীবনে দেখা সবথেকে শক্তিশালী একজন মহিলা। যার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আপনি কি তার সাথে আমার দেখা করানোর একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?”
“হুম, আমি চেষ্টা করবো। বলো, তার জন্য কি করতে হবে ”
“আমার কাছে তো ফোন নেই..আপনি একটা কাজ করুন। আমি আপনাকে ওনার ফোন নম্বর দিচ্ছি আপনি একটু ওনার সাথে যোগাযোগ করুন..আর বলুন আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই৷”
★★
দৃঢ়তাকে নিয়ে চৌধুরী বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে একটি পার্কে এসেছে ইউভান। এই স্থানেই আনিকা চৌধুরী দৃঢ়তার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন। দৃঢ়তা ইউভানের সাথে সেখানে দাঁড়িয়ে আনিকা চৌধুরী জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
কিছু সময় পর আনিকা চৌধুরী আসেন। দৃঢ় দৃঢ়তা তাকে দেখামাত্রই তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
“চাচি..”
আনিকা চৌধুরী দৃঢ়তাকে বুকে টেনে নেন। পরম আবেশে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“তুমি ভালো আছ তো দৃঢ়তা? আজ কতদিন পর তোমায় দেখলাম।”
“এতক্ষণ ভালো ছিলাম না। কিন্তু এতক্ষণ পর আপনাকে দেখে একটু ভালো লাগছে।”
“আগের বার তো যাওয়ার সময় একবার আমার সাথে দেখা করে গেলে না..”
“আসলে সেই সময় এতোটা বিধ্বস্ত ছিলাম যে..তাছাড়া ভেবেছিলাম আপনাকে বললে হয়তো আপনি আমায় যেতে দেবেন না।”
“এখনো তো তোমাকে বিধ্বস্তই লাগছ!”
দৃঢ়তা মলিন হেসে বলে,
“আসলে কিছু মানুষ থাকেই এমন যাদের জীবনে সুখ ডুমুরের ফুলের মতো অধরাই থেকে যায়। আমিও তেমন একজন।”
“মোটেই এমন ভাববে না। তোমার জীবনে নিশ্চয়ই সুখের দেখা মিলবে। নিজের ভাগ্য আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।”
কথাটা বলতে বলতেই তিনি কিছুটা দূরে দাঁড়ানো ইউভানের দিকে তাকান। ইউভানও তার দিকে স্মিত হেসে তাকায়৷ আনিকা চৌধুরী বলে ওঠেন,
“এই ছেলেটা কে?”
দৃঢ়তা ইউভানকে ইশারা করে কাছে ডাকে। অতঃপর তার সাথে আনিকা চৌধুরীর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন,
“উনি হলেন ইউভান..আমার বন্ধু..”
বলেই সে এবার তার জীবনে এতদিনের সব ঘটনাগুলো আনিকা চৌধুরীকে খুলে বলতে থাকে। আনিকা চৌধুরী কথাগুলো শোনার পাশাপাশি অবাক চোখে ইউভানের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছেলেটাকে দেখে কেন জানি তিনি অদ্ভুত টান অনুভব করছেন। ফোনে যখন ছেলেটা কথা বলছিলো তখনো তার এমন অদ্ভুতই লাগছিল। মনে হচ্ছিল নিজের কত বড় আপনজনের সাথে যেন কথা বলছে। তাছাড়া ইউভানের চেহারার মাঝে যেন কারো একটা ছায়া দেখতে পাচ্ছেন তিনি। সেই একই বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, স্মিত হাসি..সব তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে তার জীবনের সেই বিশেষ মানুষটার কথা যে আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কথাগুলো ভাবতেও তার চোখে জল জমে। আনিকা চৌধুরীর চোখের জল ইউভানও খেয়াল করে। তার যেন হঠাৎ করে ভীষণ খারাপ লাগে। ইউভানও আনিকা চৌধুরীর প্রতি একটা বিশেষ টান অনুভব করছিল যেন।
দৃঢ়তার থেকে সব ঘটনা শোনার পর আনিকা চৌধুরী আর নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে ইউভানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। আর বলেন,
“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বাবা! মেয়েটাকে এতদিন এভাবে দেখে রাখার জন্য। সবটা শুনে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। মেয়েটা না বড্ড অভাগী৷ ওকে দেখার মতো কেউ নেই। তুমি এভাবেই ওকে আগলে রেখো। দোয়া করি তুমি সুখী হও জীবনে।”
ইউভান আবেগপ্রবণ হয়ে বলে,
“ধন্যবাদ…এই প্রথম আমার জন্য কেউ দোয়া করল। আপনাকে দেখে কেন জানি ভীষণ মা মা ফিলস হচ্ছে। আমার তো মা নেই..তবে যদি আমার মা থাকত তিনিও নিশ্চয়ই আপনার মতো মমতাময়ী হতো। দৃঢ়তার থেকে আমি শুনেছি কিভাবে আপনি ওর খেয়াল রেখেছেন। যা আমার মনে আপনার জন্য একটা সম্মানের স্থান তৈরি করে যা আজ আপনাকে দেখার পর আরো উঁচু হয়ে গেল।”
আনিকা চৌধুরী সামান্য হাসেন। এরমধ্যেই হঠাৎ দৃঢ়তার ব্যাগ থেকে তার মা-বাবার ছবিটা পড়ে যায়। আনিকা চৌধুরী সেটা খেয়াল করে ছবিটা তুলে বলেন,
“এই ছবিটা তোমার ব্যাগ থেকে..”
বলতে গিয়ে থেমে যান তিনি। ছবিটা দেখার পর তার অন্তরাত্মা কেপে ওঠে। দৃঢ়তা ছবিটা নিয়ে বলে,
“হায় আল্লাহ! এটা কি হতে যাচ্ছিল৷ আমি সত্যিই ভীষণ কেয়ারলেস। আর একটু হলে তো ছবিগুলো হারিয়ে যেত আর তাহলে আমি নিজের মা-বাবার শেষ চিহ্নটুকুও হারিয়ে ফেলতাম।”
আনিকা চৌধুরী এদিকে বিড়বিড় স্বরে বলে ওঠেন,
“দেলোয়ার!”
ইউভান তার বলা কথাটা শুনে নেয়। বলে ওঠে,
“আপনি চেনেন ওনাকে?”
আনিকা চৌধুরী হুশে ফিরে কাপা কাপা স্বরে বলেন,
“না..”
“কিন্তু এইমাত্র আমি আপনাকে ওনার নাম মুখে নিতে শুনলাম।”
এদিকে দৃঢ়তা থতমত খেয়ে যায়। আনিকা চৌধুরীর মুখে তার বাবার নাম! তাহলে কি আনিকা চৌধুরী তার বাবাকে চেনে? দৃঢ়তা আনিকা চৌধুরীর মুখোমুখি হয়ে বলে,
“চাচি..আপনি কি এনাদের ব্যাপারে জানেন কিছু? এই দেখুন..এনারা হচ্ছেন দেলোয়ার চৌধুরী আর অনিকা খান।”
আনিকা চৌধুরী ছটফটে বলে ওঠেন,
“নাহ, আমি চিনি না এনাদের..”
ইউভান বলে,
“কিন্তু আমি যে আপনাকে ওনার নাম মুখে নিতে শুনলাম।”
“ভুল শুনেছ তুমি। আমি চিনি না এনাদের।”
“তাহলে এত অস্থির হচ্ছেন কেন?”
আনিকা চৌধুরী এবার রাগী স্বরে বলেন,
“তুমি কি আমাকে জেরা করছ? একটু ভালো ব্যবহার কি করেছি আর তুমি নিজেকে কি ভেবে নিয়েছ? আমি আসছি।”
বলেই আনিকা চৌধুরী যাওয়ার জন্য পা বাড়ান। তখন দৃঢ়তা তার পথ আটকে ধরে হাতজোড় করে বলে,
“প্লিজ চাচি..আপনি আমার থেকে কিছু লুকাবেন না। আপনাকে তো আমি নিজের মায়ের মতো ভেবেছি..আপনার কাছ থেকে মায়ের স্নেহও পেয়েছি৷ তাহলে আমার আসল মাকে খুঁজে পেতে আমায় সাহায্য করুন।”
“তোমার আসল মা মানে? তোমার মা তো মারা গেছেন।”
“না, আমার মা-বাবা হয়তো মারা যান নি। এই যে দেলোয়ার চৌধুরী আর অনিকা খান এনারাই হলেন আমার মা-বাবা।”
কথাটা শোনামাত্রই আনিকা চৌধুরীর মাথায় যেন বাজ পড়ল। তিনি কিয়ংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে তাকিয়ে রইলেন দৃঢ়তার দিকে। বলে উঠলেন,
“কি বলছ এসব তুমি?”
“হ্যাঁ, ঠিক বলছি।”
দৃঢ়তা এবার মনোয়ারা বেগমের বলা সব কথা আনিকা চৌধুরীকে খুলে বলেন। সব শুনে আনিকা চৌধুরী একদম পাথর হয়ে যান। মনে মনে ভাবেন,
“তাহলে দৃঢ়তা দেলোয়ারের মেয়ে! চৌধুরী বাড়ির রক্ত!”
দৃঢ়তা আনিকা চৌধুরীর পায়ের কাছে বসে পড়ে বলেন,
“দয়া করে আমার মা-বাবার ব্যাপারে কিছু জানলে বলুন..আমি ছোটবেলা থেকে তাদের ভালোবাসা পাইনি..আমি তাদের ফিরে পেতে চাই..মা-বাবার ভালোবাসা কাকে বলে সেটা বুঝতে চাই।”
আনিকা চৌধুরী কোন কথা বলে দৃঢ়তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যান। দৃঢ়তা সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#পর্বঃ৩০
#লেখিকা_দিশা_মনি
দৃঢ়তা নিজের ঘরে বসে বসে অশ্রু বিসর্জন করে চলেছিল৷ তখনো তার কাছে সত্যটা অধরা ছিল। এমন সময় ইউভান এসে তাকে এমন একটা খবর দিলো যা তার পুরো দুনিয়া বদলে দিলো। ইউভান দৃঢ়তার কাছে এসে বললো,
“তোমার বাবা-মায়ের ব্যাপারে খোঁজ আমি পেয়ে গেছি দৃঢ়তা! তোমার চাচি মনোয়ারা বেগমের দেয়া ঠিকানা মতো আমি গিয়েছিলাম তোমার মামার বাড়িতে। তোমার দুজন মামা তো শুরুতে কিছু বলতে চায় নি ভয়ে। কিন্তু পরবর্তীতে জেরা করায় সবটাই বলে দেয়। তোমার বাবা দেলোয়ার চৌধুরী, উনি নাকি চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজের মালকিন আমিনা চৌধুরীর ছোট ছেলে ছিল৷ ওনার আরো দুই বড় ভাই ছিল, ইলিয়াস চৌধুরী এবং জলিল চৌধুরী..দেলোয়ার চৌধুরী তোমার মা অনিকাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তু এই বিয়েটা তাদের পরিবারের কেউ বিশেষ করে আমিনা চৌধুরী মেনে নেন নি। তবে এই বিয়ের পর তোমার মামার বাড়ির সবার উপর ঐ চৌধুরী বাড়ির ক্ষোভ নেমে আসে। তাদের অনেক কিছু সহ্য করতে হয়৷ এজন্য তারা ভয়ে তোমার মায়ের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে নেন। তাই এর থেকে বেশি তারা আর কিছু জানেন না। তারা বললেন, বিয়ের পর থেকেই মিসেস অনিকা মানে তোমার মার কোন খবর ওনারা জানেন না..তাই এই মুহুর্তে তোমার মা কোথায় আছেন সেটা তারা বলতে পারবে না।”
দৃঢ়তা হতবাক হয়ে যায় সবটা শুনে। সেই মুহুর্তে আনিকা চৌধুরীর করা আচরণ তার কাছে স্পষ্ট হয়। দৃঢ়তা নিজের চোখের জল মুছে বলেন,
“আমাকে এক্ষুনি চৌধুরী বাড়িতে যেতে হবে৷ সেখানে গিয়েই আমি নিজের সব প্রশ্নের উত্তর পাবো।”
বলেই সে আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়ে। ইউভানও তার পেছন পেছন যায়।
★★
চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে দৃঢ়তা ও ইউভান। চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িংরুমে সেই মুহুর্তে আমিনা চৌধুরী, ললিতা চৌধুরী, জলিল চৌধুরী, জাবির সবাই ছিল। জাবির তো দৃঢ়তাকে দেখেই খুশি হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“তুমি ফিরে এসেছ দৃঢ়তা।”
কিছুটা দূরে দাঁড়ানো মোহনা দৃঢ়তাকে দেখে হতাশ হয়। এত সবার মাঝে দৃঢ়তার চোখ খুঁজছিল আনিকা চৌধুরীকে। তাকে না দেখতে পেয়ে দৃঢ়তা শীতল কন্ঠে বলে ওঠে,
“চাচি কোথায়?”
ললিতা চৌধুরী বলেন,
“ওনার রুমে।”
দৃঢ়তা আর কারো দিকে না তাকিয়ে আনিকা চৌধুরীর রুমের দিকে পা বাড়ায়। উপস্থিত বাকি সবাই অবাক চোখে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবতে থাকে, দৃঢ়তার এসব আচরণের মানে কি? এদিকে ইউভান দৃঢ়তার পেছনে ছুট লাগায়। সাথে জাবিরও উঠে বসে পিছন পিছন যায়।
দৃঢ়তা চৌধুরী আনিকা চৌধুরীর রুমে প্রবেশ করেই দরজাটা লাগিয়ে দেন। আনিকা চৌধুরী তখন নিজের রুমে বসে অতীতের ভাবনায় মত্ত ছিলেন। হঠাৎ করে দৃঢ়তার আগমনে নিয়ে থতমত খেয়ে যান এবং তাকে দরজা লাগাতে দেখে বলেন,
“এসবের মানে কি দৃঢ়তা?”
দৃঢ়তা হঠাৎ করে আনিকা চৌধুরীর মুখোমুখি হয়ে বলে,
“আজ আমি সত্যটা জানতে চাই, চাচি। আর আমি জানি সত্যটা কেবল আপনিই জানেন।”
“কিসের সত্য?”
“আমি জেনে গেছি আমার মা-বাবার আসল পরিচয়। আমার বাবা দেলোয়ার চৌধুরী এই বাড়ির ছেলে ছিল তাই না? আপনি তো চেনেন তাকে। আপনি কি এটাও জানেন, আমার মা-বাবার সাথে কি হয়েছে?”
আনিকা চৌধুরী বলেন,
“না, আমি জানি না কিছু।”
“অনেক কিছু লুকিয়েছেন আপনি। আর লুকাবেন না প্লিজ। আজ আমায় সত্যটা জানতে হবে।”
“বললাম তো আমি কিছু জানি না।”
“আজ যদি আপনি আমায় সত্যটা না জানান তাহলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দেব।”
“দৃঢ়তা!”
“বলুন না, আমার মা-বাবা এখন কোথায় আছে। আমি তাদের সাথে দেখা করতে চাই।”
“তুমি চাইলেও আর সেটা পারবে না।”
“কেন?”
“কারণ তোমার মা-বাবা কেউই আর বেঁচে নেই।”
কথাটা বর্জ্যপাতের মতো আঘাত হানে দৃঢ়তার মাথায়। সে বলে ওঠে,
“না, এটা হতে পারে না। আমি কত আশা নিয়ে ছিলাম আমার মা-বাবাকে ফেরত পাবো আর তারা..”
“এর থেকে বেশি আর কিছু জানতে চেও না প্লিজ। আমি বলতে পারবো না।”
“কে মেরেছে আমার মা-বাবাকে? নিশ্চয়ই আমিনা চৌধুরী? তাই না? আমি নিশ্চিত ঐ ডাইনিই মেরে ফেলেছে আমার মা-বাবাকে।”
“বললাম তো, এর থেকে বেশি কিছু জানতে চেও না।”
“বেশ, আপনার কাছে আমি আর কিছু জানতে চাইব না।”
বলেই দৃঢ়তা রুম থেকে বের হয়। দরজা খুলতেই দেখতে পায় ইউভান ও জাবির দুজনেই সেখানে দাঁড়িয়ে। দুজনেই তাদের সব কথোপকথন শুনেছে। জাবিরের সে বিস্ময়। সে এখনো কিছু বুঝতে পারছে না। হ্যাঁ, তার একজন চাচা ছিল বলে সে শুনেছে। যাকে জন্মের পর খুব একটা দেখে নি। যতদূর শুনেছিল তিনি লন্ডনে থাকে। একবার তিনি লন্ডন থেকে আসায় দেখা হয়েছিল। লোকটা বেশ ভালো ছিল৷ তার স্ত্রী এবং একটা মেয়েও ছিল৷ পরবর্তীতে জাবির জানতে পারে, তার চাচা সপরিবারে এক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। কিন্তু আজ যখন জানতে পারছে তার চাচার মেয়ে দৃঢ়তা তখন তার কাছে সবটা এলোমেলো লাগছে। সে কিছু বলতে নেবে কিন্তু দৃঢ়তা তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়। জাবির ইউভানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এসবের মানে কি?”
ইউভান বলে,
“আমি নিজেও সবটা জানি না।”
★★
দৃঢ়তা ড্রয়িংরুমে নিচে নেমে আসে। আসার সময় কিচেন থেকে একটা চাকুও নিয়ে আসে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৃঢ়তা আমিনা চৌধুরীর গলায় চাকু ধরে বলেন,
“তুই আমার মা-বাবার খুনি তাই না? তুই মেরেছিস আমার মা-বাবাকে!”
“এসবের মানে কি?”
বলে ওঠেন ললিতা চৌধুরী। জলিল চৌধুরীও হতবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন। আমিনা চৌধুরী ভয়ে তটস্থ। ইউভান, জাবির এবং আনিকা চৌধুরীও নিচে নেমে আসেন।
দৃঢ়তা চাকুটা আমিনা চৌধুরীর গলার আরো কাছে এনে বলে,
“মায়ের পায়ের নিচে নাকি সন্তানের বেহেশত হয়। কিন্তু মা যদি হয় তোর মতো তাহলে তো বেহেশতও জাহান্নামের চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে ওঠে। তোর মতো মা হওয়ার থেকে তো…”
“কে তুমি?”
জানতে চান আমিনা চৌধুরী। দৃঢ়তা বলে ওঠে,
“আমি দৃঢ়তা চৌধুরী। দেলোয়ার চৌধুরী এবং অনিকার মেয়ে।”
কথাটা শুনেই আমিনা চৌধুরী, জলিল চৌধুরী, ললিতা চৌধুরী সবাই চরম হতবাক হন। জলিল চৌধুরী বলে ওঠেন,
“তুমি দেলোয়ারের মেয়ে!”
আমিনা চৌধুরী সুযোগ বুঝে বলেন,
“তুমি আমার নাতনী।”
“আমি তোর নাতনী নই তোর যম। তুই মেরেছিলিস না আমার মা-বাবাকে। আজ আমি তোকে শেষ করব।”
“তুমি ভুল বুঝছ আমায়৷ আমি কেন তোমার বাবাকে মারতে যাব? ও তো আমার ছেলে ছিল। কোন মা কি পারে তার ছেলেকে মারতে?”
“তাহলে কে মেরেছিল আমার বাবাকে?”
আমিনা চৌধুরী আনিকা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“কি হলো বড় বৌমা? এমনি সময় তো তোমার মুখ খুব চলে৷ আজ চুপ কেন?”
“মানে?”
দৃঢ়তার গলায় অবাক স্বর। আমিনা চৌধুরী বলেন,
“আমি তো তোমার মা-বাবাকে মেনে নিতেও প্রস্তুত ছিলাম। এজন্য তাদের লন্ডন থেকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। হাজার হোক,মা তো। কতই আর রাগ করে থাকব সন্তানের উপর? কিন্তু আমার বড় ছেলে ইলিয়াস চৌধুরী, আনিকার স্বামী ঐ তোমার মা-বাবাকে মেরে ফেলেছিল। কারণ ও ভেবেছিল, তোমার বাবা তোমার মাকে বিয়ে করে আমাদের পরিবারের সম্মান নষ্ট করেছে। আর এজন্যই..”
দৃঢ়তার হাত আলগা হয়। সে বলে ওঠে,
“কি?!”
আমিনা চৌধুরী এই সুযোগকে কাজে লাগান। তিনি বুঝে গেছেন তার পতন আসন্ন। তবে নিজের পতনের আগে নিজের অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ করা দরকার! এজন্য তিনি দৃঢ়তার অমনোযোগের সুযোগ নিয়ে তা হাত থেকে চাকুটা কেড়ে নিয়ে বলল,
“ইলিয়াস নিজের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে নি। আমি ওর অসম্পূর্ণ কাজটা শেষ করি..”
বলেই চাকুটা ঢুকিয়ে দেন দৃঢ়তার পেটে। গলগল করে রক্ত বের হতে থাকে। উপস্থিত সবাই চিৎকার করে ওঠে। ইউভান এগিয়ে এসে আগলে নেয় দৃঢ়তাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨