আবছা আলো পর্ব-০৪

0
1

আবছা_আলো ৪র্থ পর্ব

Nazmul Huda

পরেরদিন বিকেলে বাবা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে গেলেন।ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে বাবা গাড়ির জানালা দিয়ে দেখিয়ে বললেন….

-ওই যে ওই ছেলেটা হচ্ছে আতিফ।

– বাবা আপনি আতিফ স্যার কে চিনেন?

– হ্যাঁ আমি নিজের চোখেই দেখেছি তুবা আতিফের সাথে আমাদের বাসার গেটের সামনে এসেছে।

– আপনি কি আতিফ স্যারের বাসা চিনেন?যদি আপনি চিনেন তাহলে আমার পক্ষে ভালো হয়।

– না আমি চিনি না তবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি তুবা আর আতিফ দুজনেই স্কুল থেকে চাকরি ছেড়ে দিছে।

-আচ্ছা ঠিক আছে।

-মিহির ডাক্তার যে ঔষধ গুলো দিয়েছে সে গুলা কন্টিনিউ সেবন করবে।তাহলে তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারবে।

-জি বাবা ঠিক আছে।

আমরা বাসায় ফিরছি। আর আতিফ স্যার অপর পথ থেকে অন্য কোথাও যাচ্ছে। তুবা যে স্কুলে জব করতো সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে আমার যোগাযোগ করতে হবে আর আতিফ স্যারের বিষয়ে আমার ভালোভাবে জানতে হবে তার ঠিকানা তার বাসা কোথায় সব কিছুই আমার জানতে হবে।

ইদানিং বাসাটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। জানিনা তুবা আমাকে এসব বিষয়ে কেন বলেনি।যদি আমাকে বলতো তাহলে হয়তো আমি এর ভালো একটা সমাধান দিতে পারতাম। আর আমার বাবা-মা আমার উপরে এমন দুটো অপশন দিয়েছে যে দুইটা অপশন এর মধ্যে কোনোটাই বেছে নিতে পারব না। না পারবো আমি তুবাকে ছাড়া থাকতে না পারবো আমি আমার বাবা মাকে ছাড়া থাকতে। তবুও তুবা আমাকে না বুঝে না বলে অনেক দূরে চলে গেছে।

যদি তুবা এমন একটা কাজ করে থাকে তাহলে আমার বাবা-মা যে তুবার মায়ের সঙ্গে তুলনা করে তা কিঞ্চিৎ পরিমাণ ভুল হবেনা। কারণ তুবার মা বিয়ের তিনবছর পরেই তার ভালোবাসার মানুষের সাথে পালিয়ে যায় তুবাকে রেখে গেছে তার বাবার কাছে। তুবার বাবা আবার করে বিয়ে করে। বিয়ে করার পরে তুবা ওর সৎ মার কাছে বড় হয়। তুবার সৎ কখনো বুঝতে দেয়নি যে সে তার সৎ মা। তুবার বাবা যখন বাসায় থাকতো না তখনো তুবার সৎ মা তুবাকে অনেক ভালবাসতো।

আমরা যখন বিয়ে করি তখন তুবা ওর সেই সৎ মাকে জানিয়ে দেয় যে তুবা আমাকে বিয়ে করেছে।তুবার বাবা জানার পরে সে মেনে নিতে পারে নি।এমনকি তুবাকেও পরিচয় দেওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু তুবার মা ওর বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ম্যানেজ করেছে।কিন্তু আমাকে মেনে নেয়নি ওর বাবা।তুবাকে কয়েকবার যেতে বলেছিলো আমাকে রেখে আর যায়নি।

তুবার মা চলে যাওয়ার পর আর কখনো তুবার খোঁজখবর নেন না।তুবা কেমন আছে কি করছে কিছুই জানতে চায় নি। দুই বছর বয়সে তুবাকে বাসায় রেখে তোমার মা অন্যের কাছে চলে যায়। কিন্তু এতোটুকু বাচ্চার উপর কোন মায়া মমতা কি তুবার মায়ের ছিল না? তুবার মায়ায় কি একটাবার ওর কাছে টানলো না?

তুবার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে আমার একটা ফ্রেন্ডের মাধ্যমে।তুবার বান্ধবী ছিলো আমার ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড।কিন্তু ওদের রিলেশন আর শেষ পর্যন্ত টিকে নি।

তুবা যে স্কুলে জব করতো সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আমি আবার ফোন দিলাম।

-স্যার আসসালামু আলাইকুম!

-ওয়া আলাইকুমুস-সালাম।তো কি খবর মিহির সাহেব?

-স্যার আপনার সাথে আমার সামনাসামনি বসে জরুরি কথা ছিলো।

-উম্ম সময় করে একসময় আমার বাসায় চলে আসুন।

-আসলে স্যার।আমি তো একটা পঙ্গু মানুষ।আমি তো চলাফেরা করতে পারি না।

-সো স্যাড।তাহলে আপনি আপনার বাসার ঠিকানা দিন।আমি রাত আটটার দিকে আসতে পারবো।

-ধন্যবাদ স্যার।আসলে আমি অনেক উপকৃত হবো।

সময় মত স্যার চলে আসলেন।ড্রয়িং রুমে আমরা দুজনে বসে আছি।

-স্যার আসলে আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।

-আরে না না ঠিক আছে।

-আসলে স্যার কিভাবে বলবো বুঝতেছি না।

-লজ্জাবোধ না করে বলুন। আমার তাড়া আছে,মেঘ করেছে।যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে।

-স্যার তুবার কোনো খোজ খবর পাচ্ছি না চারদিন ধরে।

-কি বলেন?

-জি স্যার।গত রবিবার আপনার স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছে, সে আর বাসায় ফিরেনি।

-তুবা তো একসপ্তাহের জন্য স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে।আমি আবার তুবাকে গতকাল জরুরী কাজের জন্য ফোন দিলাম কিন্ত ফোন গেলো না।

-স্যার তুবার নাকি একটা বান্ধবী আপনার স্কুলে জব করে?সেই বান্ধবীর সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন?

-তুবার তো কোনো বান্ধবী নাই।তুবার সাথে তো আতিফের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক রয়েছে।আতিফই তো তুবাকে আমাদের স্কুলে জব পাওয়ার সুযোগ করে দিছে।

-তাহলে কি তুবা আমাকে মিথ্যে বললো?

-আচ্ছা আপনি থানায় জিডি করেছেন?

-না স্যার আসলে জিডি করার মত অবস্থা নয়।অন্য একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।

-ওহ আচ্ছা, বলুন আমি আপনার কি হেল্প করতে পারি।

-স্যার!আতিফ স্যারের বাসার ঠিকানা আপনার জানা আছে?

-আতিফ তো বেশ কিছুদিন আগেই চাকরি থেকে রিজেইন নিলো।ওর দেশের বাড়িতে নাকি ব্যবসা শুরু করবে।

-কিন্তু আজ বিকেলে যে বাবা আতিফ স্যারকে দেখেছে।

-আমি তো জানি না।কোনো কাজের জন্য আসতে পারে।

-আপনি কি কোনো ভাবে আতিফ স্যারের ডিটেইলস দিতে পারবেন?তার ডিটেইলস পেলে আমার খুব উপকার হতো।

-সে চাকরি রিজেইন নেওয়ার পরে সব কাগজ পত্র অফিস থেকে উঠিয়ে নিয়েছে।তারপরেও কালকে আমার অফিসে গিয়ে দেখতে হবে।

-প্লিজ স্যার একটু কষ্ট করে দেখুন।

-জি আমি বুঝতে পেরেছি।

তিনি চলে গেলেন। নিরবে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি।আমার বাবা বাহির থেকে বাসায় এসে আমার সামনাসামনি বসে আছেন।মায়ের কাছে দুইকাপ চা চেয়ে আমাকে বললেন..

-মিহির আমি কাগজপাতি রেডি করতে দিয়েছি।তোমার চিকিৎসার জন্য আমি কথা বলেছি।তোমাকে নিয়ে আমি দেশের বাহিরে যেতে চাই।

-বাবা আমার জন্য যথেষ্ট কিছু করেছেন।আমি চাই না আমার জন্য আর কিছু করেন।

-কিসব বলছো তুমি?চিকিৎসা না করে কি সারাটি জীবন এভাবে থাকবে?না আমরা তোমাকে এভাবে দেখতে পারবো না।

-আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।আমার যা হবার হবে।বাবা আরেকটি জরুরি কথা ছিলো আপনার সাথে।

-হ্যা বলো।

-আমি একটা যায়গা কিনেছিলাম।আমার এক্সিডেন্টের মাস দুয়েক আগে।এই ব্যাপারে আমি কাউকেই কিছু জানাই নি।

-কিসব বলছো?আর কিভাবে?

-আমার এক কলিগের জমি সেটা।হঠাৎ করে যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে কোনো ডকুমেন্টস থাকবে না।আমি চাই জমিটা আপনার নামে নিয়ে নিন।

-উহু আমার এসব কিছুই চাই না।তোমার পাসপোর্ট টা আমাকে কালকে দিবে, আমার কিছু কাজ আছে।

-আচ্ছা সকালে নিয়ে নিয়েন।

হঠাৎ করে বাবার পরিবর্তন টা দেকে আমি অবাক হলাম।বাবা আমার সাথে আগে প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাই বলতো না।আর হঠাৎ করে চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরের কথা চিন্তা করলেন।

উহু আমার ভালো চিকিৎসার দরকার নেই।আমি যাবো না বাহিরে।বাবাকে কালকেই সব কিছু বলে দিবো।আর দুই একদিনের মধ্যেই আমি এই বাসা থেকে অন্য কোথাও চলে যাবো।কোথায় যাবো কি করবো তা কিছুই জানি না।তবে আমার আর এক মুহুর্ত এই বাসায় থাকতে ইচ্ছা করছে না।আমার রুমে যে দিকে তাকাই সেদিকেই মনে হয় তুবা রয়েছে।তুবার কাপড়চোপড় সহ অন্যান্য সব কিছু রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

তুবার স্কুলের প্রধান শিক্ষন আমাকে কল দিয়ে জানালেন আতিফ স্যারের দেশের বাড়ির ঠিকানা যানতে পেরেছে।সমস্ত ঠিকানা আমাকে ম্যাসেজ দিলেন।

আমি বাবাকে বলেও বুঝাতে পারলাম না যে আমি দেশের বাহিরে যাবো না।বাবা খুব তাড়াতাড়ি কাগজ পত্র রেডি করে ফেললেন দুদিনের মধ্যেই।এবং আমাকে জানিয়ে দিলেন আগামী সপ্তাহে আমাদের ফ্লাইট।

আমি আর আতিফ স্যারের দেশের বাড়ির সম্পর্কে জানতে পারলাম না।আর কিছু জানার সুযোগই পাইনি।প্রায়টা সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছি।

তবে তুবা ছুটি শেষে আজকে নাকি আবার ক্লাস করেছে।কথাটা বললেন ওর স্কুলের প্রধান শিক্ষক…..

[চলবে……]