অনুভূতির খাঁচা
পর্ব-৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
মধ্যরাতে শান্ত-মনোরম সমুদ্রের ঢেউ দেখে সমুদ্রবিলাস করছিল ইনারা। তাদের রিসোর্ট সমুদ্রের পানির উপর। তাই যেদিকেই তার দৃষ্টি যেয়ে আটকায় সেদিকেই নীল ঢেউখেলানো সমুদ্র। আচমকায় সভ্য তাকে পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে। তার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে বলে, “কী দেখছেন মহারাণী?”
“স্বপ্ন। এত সুন্দর পৃথিবী কেবল স্বপ্নেই হতে পারে তাই না?”
“কেন? আমি তো নিজের এত সুন্দর পৃথিবীকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছি। এটা তো স্বপ্ন নয়।”
ইনারা হাসে। পিছনে ফিরে সভ্যের কাঁধে হাত রেখে বলে, “খুব রোমেন্টিক কথা শিখেছন তাই না?”
“আমি তো শুরু থেকেই রোমেন্টিক।”
“হয়েছে হয়েছে। এখন জলদি তৈরি হন। মালদ্বিপের সৌন্দর্যের কথা অনেক শুনেছি। আজ নিজ চোখে দেখব। ভেবেই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছে আমার মন। চলুন না বাহিরে যাই, সূর্যোদয় দেখব।”
সভ্য তার কোমরে হাত আবদ্ধ করে তাকে নিজের কাছে টেনে নেয়, “আজ বাহিরে যাবার প্রয়োজন আছে? আজ এখানেই থাকি। কেবল তুমি আর আমি…” সে ইনারার ঠোঁটে চুমু খেতে যাবে এর পূর্বেই ইনারা তার ঠোঁটের সামনে হাত রেখে বলে, “আমরা এখন বাহিরে যাচ্ছি।”
“একটু থাকি না।”
“অসভ্যতামি একদম করবেন না, যান।” ইনারা তাকে ঠেলে জোর করে পাঠালো তৈরি হতে। তারপর মৃদু হেসে বলল, “পাগল একটা।”
সভ্যর আসতে আসতে সে-ও তৈরি হয়ে নিলো।
ইনারা ও সভ্য বাহিরে আসে। তাদের সমুদ্রের মাঝে। কাঠের সেতুর রাস্তা দিতে যেতে হয় সব জায়গায়। তার মধ্যে একটি সেতুর রাস্তা সমুদ্র মাঝস্থানেও। ইনারা প্রকৃতির এই অদ্ভুত চিত্র মুগ্ধ চোখ দিয়ে দেখছিল। তার পিছনে ছিল সভ্য। দেখছিল তার চক্ষুকে শান্তি দেওয়া ইনারার মুগ্ধতা ছড়ানো মুখ। হাঁটতে হাঁটতে তারা সেতুর শেষ প্রান্তে আসে। আকাশে রক্তিমা লালাইমা ছড়ায়। সূর্য উঁকি দেয় মেঘ ঠেলে। সে রক্তিমা আকাশের প্রতিচ্ছবি সাজে নীল সমুদ্রের জলে। কী মুগ্ধময় সে দৃশ্য!
ইনারা হাত বাড়িয়ে তার পাশে দাঁড়ানো সভ্যর হাত খুঁজে। তবুও দৃষ্টি সরে না এই মনোরম দৃশ্য থেকে। হাতে হাত ছোঁয়। ইনারা তার ছোট আঙুল দিয়ে সভ্যর আঙুল ধরে, “কী অপরূপ দৃশ্য!”
“সত্যিই অপরূপ। তোমার একটু লজ্জা লাগা উচিত। এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিকেও তোমার জন্য একটু দৃষ্টি আটকাতে পারি না।”
ইনারা তার দিকে তাকায়। সভ্যর দৃষ্টি তার দিকেই আটকে আছে। সে হাসে। তার খিলখিল হাসির শব্দ মিলে যায় সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনে। ইনারা তার কাঁধে মাথা রেখে বলে, “ওয়াদা করুন, জীবনের শেষ সূর্যোদয়টা দেখার সময়ও আপনি এভাবেই আমার পাশে থাকবেন। সাথে থাকবেন। এভাবেই ভালোবাসবেন।”
.
.
পরদিন অফিসে এসেই সুরভি আহনাফের কেবিনের দিকে যায়। অভ্র তাদের তারিখ পরিবর্তন করেছে তা জানানোর জন্য। কিন্তু কেবিনে যেয়ে সে আবারও দেখতে পায় বিধিকে। বিধিকে আহনাফের রুমে দেখে এক মুহূর্তের জন্য বিশ্বাস হচ্ছিল না তার। গতকাল বিধির সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না বলে আজ অফিসেই নিয়ে এলো? রাগে, বিরক্তিতে সে কিছু না বলেই বের হয়ে গেল কেবিন থেকে। তার পিছনে এলো বিধি। দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়াল, “সুরভি রাইট? তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
“সরি কিন্তু আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই।”
“আমি তোমার সাথেই কথা বলার জন্য আজ এসেছি। আমরা কি কোথাও বসে কথা বলতে পারি? প্লিজ।”
সুরভি তাকায় বিধির দিকে। তার গালে লালচে আঘাতের স্থান দেখতে পায়। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে আহনাফের কথা, বিধির ফিয়োন্সে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তার কেমন মায়া হলো। তার রাগ সহানুভূতিতে পরিবর্তন হলো। সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
অফিসের কাছের এক কফি শপে বসে আছে বিধি ও সুরভি। সুরভি বলে, “বলুন, কী বলতে এসেছেন?”
বিধি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাকায় সুরভির দিকে, “আমি চাই না আমার কারণে তোমার ও আহনাফের মাঝে কোনো সমস্যা হোক। আসলে আমার বাগদত্তা আমার উপর প্রায়ই হাত তুলে। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে অতিরিক্ত করেছিল একারণে আবেগের বশে আমি আহনাফকে কল করে বসি। তখন কেবল আমার ও আহনাফের স্মৃতিগুলো মনে পড়ছিল। ও আমাকে কতটা ভালোভাবে ট্রিট করতো। আমি কখনো তোমাদের মাঝে আসতে চাই নি। এতবছরের বিচ্ছেদের পর ওকে কল করাটাই আমার উচিত হয় নি। যেখানে তুমি আছো ওর জীবনে। আই এম সরি, এরপর আর এমন হবে না। কিন্তু আমার কারণে তোমাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হোক আমি চাই না। তোমরা নিজেদের মাঝে সব ঠিক করে নেও।”
“আপনার বাগদত্তা আপনার উপর হাত তুললে নিজের পরিবারকে জানান নি কেন?”
কেমন তাচ্ছিল্য হাসে বিধি, “আমার ফ্যামিলির উপর আমার কথা চললে এই মানুষের সাথে বিয়েই ঠিক হতো না। আমি কখনোই আহনাফকে নিজ ইচ্ছায় ছাড়ি নি। যাই হোক, এখন আর এসব কথা বলে লাভ নেই। তুমি আমার জন্য প্লিজ তোমাদের দুইজনের সম্পর্ক নষ্ট করো না। ও সেদিন তোমাকে মিথ্যা বলেছে যেন তুমি কষ্ট না পাও। সুরভি,” বিধি তার হাত ধরে বলে, “তুমি খুব লাকি যে আহনাফকে জীবনসাথী হিসেবে পেয়েছ। ও তোমার খুব কেয়ার করে। সেদিন যখন আমরা দেখা করতে গিয়েছিলাম বারবার তোমার কথা বলছিল। বলছিল যে তোমার কারণে ওর এলোমেলো জীবনটা কত সুন্দর হয়ে গেছে। বিদেশ থেকে আসার পর ওর মা’য়ের মৃত্যু বেদনা এবং আমার সাথে ব্রেকাপের কারণে ওর জীবন দুঃস্থ হয়ে গিয়েছিল। তুমি ওর জীবন সুন্দর করেছ। আমার কারণে এই সুন্দর জীবনটা এলোমেলো করে দিও না। আমার অনুরোধ রইল।”
সুরভি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁটের কোণে হাসি আঁকে। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। বিধিও একগাল হাসি নিয়ে বলে, “আচ্ছা তাহলে আমি যাই। তোমার সাথে দেখা করে ভালো লাগলো। খুব মিষ্টি মেয়ে তুমি। বুঝতে পেরেছি আহনাফ তোমার এত প্রশংসা করছিল কেন।” কথাটা হেসেই বলেছিল বিধি। কিন্তু তার হাসির পিছনে চোখের বিষণ্নতা স্পষ্ট বুঝতে পাড়ছিল সুরভি। কিন্তু সে কিছুই বলল না। উল্টো হাসি ফেরত দিলো।
বিধির যেতেই সেখানে এসে হাজির হলো আহনাফ। বোধহয় বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। সে এসে চেয়ার টেনে বসলো সুরভির সামনে। এসেই প্রশ্ন করল, “তারপর?”
“তারপর কী?”
“আমাকে ক্ষমা করেছেন ম্যাডাম?”
খানিকটা ভাব নিলো সুরভি, “এখনো না, চিন্তা করে বলব।”
“চিন্তা করে? আর অপেক্ষা আমাকে দিয়ে সম্ভব না। তুমি জানো, অভ্যাস হয়ে গেছে তোমার। তোমার সাথে কথা না বললেও দম আটকে আসে। তুমি বলো কীভাবে ক্ষমা করবে আমাকে। তুমি বললে আমি সবার সামনে এখানে কান ধরে উঠবস করতে রাজি।”
“তাই? তাহলে তাই করুন।”
থতমত খেয়ে যায় আহনাফ, “তুমি সিরিয়াসলি চাও এই ভরা রেস্টুরেন্টে আমি কান ধরে উঠবস করি?”
“আপনিই তো বললেন। এখন করুন।”
আহনাফ জোরপূর্বক হাসে। আশেপাশে তাকিয়ে বলে, “তুমি মজা করছ তাই না?”
সুরভি ডানেবামে মাথা নাড়ায়। তার ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি।
আর কিছু করার নেই। আহনাফের উঠতেই হলো। সে লজ্জিত হয় বরাবর। আশেপাশে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে কান ধরে। বসতে নিলেই সুরভি শব্দ করে হেসে দেয়। থামায় আহনাফকে, “মজা করছিলাম। এমন কিছু করার দরকার নেই।”
আহনাফ প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে, “জান বের করে দিয়েছিলে। এভাবে কেউ দুষ্টুমি করে? সবার সামনে সম্মানের বারোটা বেজে যেত।”
সুরভি আরও বেশি হাসে। তার মিষ্টি হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে আহনাফ, “তোমাকে হাসলে খুব সুন্দর লাগে। যেকোনো পুরুষ তোমার হাসির প্রেমে পড়তে বাধ্য।”
“লাভ কি? আপনি তো আজ পর্যন্ত প্রেমে পড়লেন না।”
কথাটা শুনে মলিন হয়ে যায় আহনাফের মুখ। সে আমতা-আমতা করে কিছু একটা বলতে যাবে আর সুরভি বলে, “সেদিনের ডিনার পরিকল্পনা অপূর্ণ থেকে গিয়েছিল। যদি ডিনারে নিয়ে যান তাহলে মাফ করবার কথা ভাবতে পারি। ডিনারে যাবার জন্য নতুন শাড়ি কিনেছিলাম, পরতে তো হবে।”
খুশি হয়ে যায় আহনাফ, “তুমি যেভাবে বলো। তোমাকে শহরের বেস্ট রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাব। আমার ট্রিট।”
সুরভি মৃদু হেসে তাকায় আহনাফের দিকে, “দেখুন আহনাফ, আমরা আগেই ডিসাইড করেছিলাম আমাদের মাঝে সবার আগে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে। আর বন্ধুত্বে কেউ একে অপরের সাথে মিথ্যা বলতে নেই বা কিছু গোপন রাখতে নেই। আমার কাছে সম্পর্কে ভালোবাসা থেকেও বিশ্বাস বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি, আমার বিশ্বাস ভাঙবেন না, নাহয় এই সম্পর্ক ভাঙার পূর্বে আমি আর ভাববো না।”
.
.
রাতে হোটেলে আসার পরই ইনারা ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। তলিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে। সভ্য তার উপর কম্বল জড়িয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর কল দেয় তার বন্ধু জোহানকে।
“কী খবর? কেমন ঘুরাঘুরি করছিস?” কল ধরতেই প্রশ্ন করে জোহান।
“বলিস না মহারাণী সারাটাদিন আমাকে খাটিয়ে নিজে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।” বলে হাসে সভ্য। আবার জিজ্ঞেস করে, “সাইদ থেকে শুনলাম তুই চৌধুরী এন্টারটেইনমেন্টে জয়েন করেছিস।”
“মাইন্ড করিস নি তো? আমি কেবল চাই নি তোর কোম্পানি জয়েন করে সবকিছু সহজভাবে পেতে। এইবার আমি নিজ থকে কিছু করতে চাইছি। এছাড়া তোর কোম্পানি জয়েন করলে সবাই বলবে প্রথমে নিজের বাপের কোম্পানিতে সুবিধা ভোগ করেছে এখন বন্ধুর কোম্পানি পেয়েছে। এইবার আমি যা অর্জন করব নিজের পরিশ্রমের বিনিময়ে করতে চাই।”
“আর আমি তোর এই সিদ্ধান্তে গর্বিত। আমি খুশি হয়েছি শুনে। কিন্তু ডাক্তার তোকে এখন রেস্ট করতে বলেছিল। আগামী মাস থেকে জয়েন হতে পাড়তি।”
“চিন্তা করিস না, আমি নিজের খেয়াল রাখবো।”
“আচ্ছা মায়া চৌধুরীর সাথে তোর নিশ্চয়ই দেখা হয়েছে। সে কেমন রে?”
“একদম পাগল। পাগলদের সর্দারনী। জানিস ও কী করেছে? ঘটনা শুন, গতকাল ট্রাফিকে গাড়ি আটকে থাকায় একটি বাইকওয়ালা থেকে লিফট চেয়েছিলাম। তখন মুখ দিয়ে ফসকে বেরিয়ে গেল যে, ‘আমার এক বন্ধু তো বলেছে কোম্পানির সকলে না’কি রাক্ষুসি বলে ডাকে।’ সে আমাকে কোম্পানি পর্যন্ত লিফট দিলো। এরপর গেস কর সে বাইকওয়ালা মানুষটা কে ছিলো?”
“মায়া চৌধুরী।”
জোহান হতভম্ব হয়ে যায়, “তুই কীভাবে জানলি?”
সভ্য হাসে, “তোর কথার ধরণেই বুঝা গেছে। সামনে বল।”
“গতকাল ইন্টারভিউর পর এত খারাপ লাগে নি। কিন্তু আজ অফিসে যেয়ে দেখি তাকে রাক্ষুসি বলায় সকলের কাজের চাপ দ্বিগুণ করে দিয়েছে। কারণ কী তাকে দেওয়া নিকনেমের মান রাখতে হবে। এর মধ্যে সবাইকে বলেছে এই কৃতিত্ব আমার। ক্যান ইউ বিলিভ ইট? স্টাফরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিল যেন ওদের বউকে নিয়ে পালিয়ে গেছি। মেয়েদেরটা কি বলব? এটাতেই বুঝে নে।”
সভ্য শব্দ করে হাসতে শুরু করে, “তাহলে তো তোর আজকের দিন খারাপই গেছে। মায়া চৌধুরীর আরও কিছু তথ্য আমাকে দিতে পাড়বি?”
“তুই ওর ইনফরমেশন দিয়ে কী করবি?”
“আমার হবু ভাবি হবার সম্ভাবনা আছে। অভ্র ভাইয়ার সাথে বিয়ের কথা চলছে।”
“বলিস কী? মেয়েটা খারাপ বলব না যাস্ট একটু কঠিন ধরনের।”
“ওটা ব্যাপার না, অভ্র ভাইয়া যে মানুষ সহজে সামলে নিবে। কেবল মনের খারাপ না হলেই হলো। খারাপ হলে পরিবারে অশান্তি হবে। আর কিছু জানিস?
জোহানের মনে পড়ে গতকালের মায়ার ও তার বাবার কথোপকথন। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত কথা সভ্যকে জানাবে না’কি তার দ্বিধায় ভুগে। ভাগ্যিস তার কিছু বলার পূর্বেই সভ্য বলে ফেলেছিল, ” আমিও না তুই একদিনে আর কতকি জানবি। ব্রো একটা সাহায্য কর, বুধবার মায়া ও অভ্র ভাইয়ার দেখা করে বিয়ে ফিক্স করার কথা। মায়া চৌধুরীর কথা শুনে আমার ভয় লাগছে। আমার ভাইও একইরকম। তুই যেয়ে দূর থেকে দেখবি দুইজনকে। তারা আবার বিয়ের কথা বাদ দিয়ে বিজনেস ডিল করতে না বসে যায়। বিয়ের মতো পবিত্র জিনিসকে বিজনেস ডিল বানাতেও আমার ভাই দ্বিধা করবে না। সে একটা জিনিস।”
জোহান হাসে, “চিন্তা করিস না। আমি যেয়ে তোকে খবর দিব নে।”
“তাহলে ফোন রাখি। নিজের খেয়াল রাখিস।”
সভ্য ফোনে রেখে ইনারার পাশে যেয়ে শোয়। তাকে দেখে মৃদু হাসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
ইনারা মিটিমিটি করে চোখ খুলে দেখে সভ্যকে। ঘুম ঘুম ভাব এখনো চোখে। সে নড়ে চড়ে যেয়ে সভ্যের বুকে মুখ লুকায়। জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?”
“জোহানের সাথে একটু ফোনে কথা বলছিলাম।”
“এখানে আপনি কেবল আমার সাথে থাকবেন, কথা বলবেন এবং আমাকে নিয়েই ভাববেন বুঝেছেন। দূরে যাবেন না।”
সভ্য হাসে ইনারার কথায়। তার কপালে চুমু খেয়ে নিজেও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, “যো হুকুম মহারাণী।”
.
.
বুধবার সন্ধ্যাবেলা, আহনাফ দাঁড়িয়ে ছিলো সুরভির বাসার সামনে। অফিসের সময় সে সবার পূর্বেই সুরভী বাসায় এসেছিল তৈরি হতে। আহনাফও তার কাজ গুছিয়ে এলো। অথচ এখনো সুরভির বের হবার নাম নেই। সে ফোন বের করে সুরভিকে কল দেবার জন্য। তখনই সুরভি গেইট খুলে বের হয়। তার পরনে একটি সাদা রঙের শাড়ি। শাড়ির পাড়ে সাদা মুক্তোর কাজ। শাড়ির সাথে হাল্কা সেজেছে সে। সাথে মুক্তোর গহনা পড়েছে। তাকে দেখে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো আহনাফ। আপনা-আপনি তার মুখ হা হয়ে গেল। সুরভি তার সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে, “বেশি দেরি করে ফেলেছি না? অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন?”
আহনাফ উওর দিলো না। বেহেয়ার মতো তাকিয়ে রইলো সুরভির দিকে।
সুরভি তার কাঁধে হাত রেখে নাড়ায়, “কোথায় হারিয়ে গেলেন?”
“আমি? না তো, কোথাও না।” তারপর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর।”
মুচকি হাসে সুরভি। লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়, “থ্যাঙ্কিউ।”
আহনাফ তার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়। গাড়িতে বসে বলে, “তুমি জানো তোমাকে শাড়িতে সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখায়। সসর্বপ্রথম তোমার প্রতি আকর্ষণবোধ করেছিলাম শাড়িতে দেখেই।”
সুরভি তার দিকে তাকায় না। মৃদু হেসে মিনমিনে কন্ঠে উওর দেয়, “জানি।”
রেস্টুরেন্টে বসেছিল মায়া। বারবার তার ঘড়ি দেখছিল।
তার পিছনের সিটে বসেছিল জোহান ও সাইদ, তাদের মুখ মেনুউ কার্ড দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। তারা এসেছে গোয়েন্দাগিরি করতে। সাইদ জোহানকে বলে, “জীবনে প্রথম দেখলাম কোনো মেয়ে সময়ে এসে পড়েছে আর ছেলে দেরি করছে। মায়া ম্যাডাম যেমনই হোক না কেন, তার এই গুণ আমার প্রচুর ভালো লাগে। আমি কেবল কল্পনাই করতে পারি আমার পরিবারের মেয়েগুলো কোনো ফাংশনের জন্য সময়ে তৈরি হয়ে বসে আছে।” সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, “শুধুই কল্পনা।”
অভ্র আসে। তার পরনে গাঢ় নীল রঙের পাঞ্জাবি। হাতা কণুই পর্যন্ত আনা। তার সাথে ফজলু মিয়াও এসেছে।
অভ্র এসে দাঁড়ায় মায়ার সামনে, “মায়া চৌধুরী রাইট? আপনার ছবি দেখেছি। বাস্তবে ছবির থেকে বেশি সুন্দর আপনি। নাইস টু মিট ইউ।” অভ্র হাত এগোয় হ্যান্ডশেকের জন্য। কিন্তু মায়া উল্টো তার ঘড়ি দেখে বলে, “ঠিক চৌদ্দ মিনিট দেরি করে এসেছেন।”
ফজলু মিয়া বলে, “গাড়ি চলে না, চলে না, চলে না ট্রাফিকে, উড়োজাহাজ তো নাই যে আসুম উড়ে উড়ে।” রসিকতার সাথে সুর করে বলে সে। পরক্ষণে মায়ার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে কাঁচুমাচু হয়ে যায়। সে কাঠকাঠ গলায় বলে, “আপনি বিয়ের জন্য এসেছেন?”
ফজলু মিয়া লজ্জা পেয়ে বলে, “আরে না আপা কি যে বলেন, ফজলুর বউ তো গ্রামে, সুন্দরী, শৃঙ্খ…”
“সাট আপ। আপনার বিয়ে না হলে অন্যকোথাও যেয়ে বসেন। এখানে আমার সময় নষ্ট করে আপনার কবিতা শুনতে আসি নি।”
ফজলু এক দৌড়ে পালায় সেখান থেকে।
অভ্র হেসে বসে মায়ার সামনের চেয়ারে, “বেচারাকে ভয় পাইয়ে দিলেন। শুনেছিলাম রাগলে মেয়েদের বেশি সুন্দর লাগে, আজ দেখেও নিলাম।”
“আপনি নিজের ফেইক কমপ্লিমেন্ট পাশে রাখতে পারেন। এইসব প্রশংসায় আমার কিছুই আসে যায় না। কাজের কথা বলি কারণ আপনি আমার সময় এমনিতেই নষ্ট করেছেন। আপনি আমাকে কেন বিয়ে করতে চান? এখন এটা বলবেন না পছন্দ হয়েছে বলে। আপনার সাথে আজ আমার প্রথম দেখা।”
“ওহ বুদ্ধিমান আছো, দাদাজানের শর্ত যেন তোমার সাথে বিয়ে করলে আমাকে ব্যক্তিগত কাজের জন্য কিছু সম্পত্তি দিবে। তোমার কথা বলো, তোমাকে দেখেও মনে হয় না অনুভূতির বশে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছ।”
“অনুভূতি?” তাচ্ছিল্য হাসে মায়া, “এসব ফালতু জিনিস। অনুভূতি থাকলে মানুষ কষ্ট ছাড়া কিছু পায় না। তাই অনুভূতিশূন্য হয়েছি আমি অনেক আগেই। আমার কাছে প্রেম ভালোবাসার বা কোনোরকম অনুভূতির আশা রাখবেন না। আমি কেবল নিজের কাজে মতলব রাখব। আর আমার স্বার্থেই আপনার সাথে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছি। আপনার কাছে ক্ষমতা আছে। আর ক্ষমতা কার না ভালো লাগে। আপনার সাথে বিয়ে করলে আমার মুখের উপর কেউ কথাও বলতে পারবে না।”
“ওয়েল, পাওয়ার তো আমারও খুব পছন্দ। তোমাকে পছন্দ হয়েছে আমার। আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস সহজে কেউ পায় না। তুমি দ্বিতীয় মেয়ে।”
“তাই? তাহলে প্রথমজন কে?”
সুরভি ও আহনাফ বসে আছে রেস্টুরেন্টে। এই রেস্টুরেন্টের ভেতরের সাথে সাথে বাহিরেও বসার স্থান আছে। বাহিরের গার্ডেনে, কৃষ্ণমেঘ দখল করা খোলা আকাশের নিচে বসে আছে তারা। এখানে ‘আরও কতগুলো কাপলও বসে আছে। জায়গাটা বেশ সুন্দর। আশেপাশে গাছপালা ভরা, রঙিন ফুলে ঘেরা, গাছপালা ফেইরি লাইট দিয়ে সাজানো। একটি চিকন পুকুরের মতো করে এর উপর সেতুও বানানোও আছে। সাথে মিষ্টি হাওয়ার মাতোয়ারা দোলা তো আছেই।
সুরভি চিন্তিত সুরে জিজ্ঞেস করে, “এত দামী রেস্টুরেন্টে আসার প্রয়োজনটা কী ছিলো?”
“তোমার অভিমান ভাঙাতে হতো। তাই দাম ইগনোর করেছি।”
“আমার অভিমান ভাঙানো এত দামী না। আপনি জানেন এমন অযথা টাকা খরচ আমার পছন্দ নয়।”
“আচ্ছা এসে তো পড়েছিই। এখন বলো।”
“কী বলব?”
“যা ইচ্ছা।” আহনাফ তার গালে হাত রেখে তাকায় সুরভীর দিকে।
সুরভি হাসে। এরপর কিছু একটা ভাবে সে। বলে, “আমি জানিনা এখন কথাটা বলা ঠিক হবে না’কি, কিন্তু সকাল থেকে একটা কথাও মাথায় ঘুরঘুর করছে। কোনো কিছু করে এই কথার মাথা থেকে সরাতে পারছি না।”
“কী? নির্দ্বিধায় বলো।”
“বিধিকে নিয়ে। তার বাগদত্তা তার উপর অত্যাচার করছে ব্যাপারটা সহ্য করার মতো না। এখন এমন কিছু করলে পড়ে কি করবে? আমার মনে হয় ওকে সাহায্য করা উচিত।”
“আমি ভেবেছিলাম তুমি ওকে সহ্য করতে পারো না।”
“এখানে সহ্য বা অসহ্য করার মতো কিছু নেই। আপনি নিজের এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমাকে মিথ্যা বলে দেখা করবেন এটা রাগ করার মতো ব্যাপারই। তাই বলে ওকে এই অবস্থায় ছাড়তে পাড়ব না। আমি রিপোর্টার হতেই চেয়েছিলাম এই কারণে যেন অন্যায়ের প্রতিবাদে সকলকে উৎসাহ দিতে পারি। এখন নিজের স্বার্থের ব্যাপার এলে আমি পিছাতে পারি না।”
আহানাফ কোন উত্তর দেয় না। কেবল তাকিয়ে থাকে সুরভীর দিকে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সুরভি অবাক না হয়ে পারে না, “কী দেখছেন?”
“দেখছি, একজন মানুষ অন্যের এত চিন্তা করে কীভাবে? তোমার স্থানে অন্যকোনো মেয়ে হলে এমন করতো বলে সন্দেহ।”
জোরে হাওয়া বইতে শুরু করে। আকাশে মেঘ গর্জে। বিদ্যুৎ জ্বলতে শুরু করে আসমানে।
আহনাফ চিন্তিত সুরে বলে, “কী অবস্থা! বৃষ্টি আসবে বোধহয়। আমাদের সুন্দর সময় কাটানোটা প্রকৃতির বোধহয় সহ্য হয় নি। ভেতরে চলো।”
“কেন? এত সুন্দর আবহাওয়া তো। বসতে ভালোই লাগছে।”
“তাহলে তুমি বসে থাকো। আমি যেয়ে ভেতরে দেখি টেবিল আছে না’কি? কারণ একবার বৃষ্টি পড়লে তো এখানে বৃষ্টির মাঝে বসে আর খাব না।” বলেই উঠে যায় সে। দ্রুত যায় ভেতরে। সুরভী পিছন দিকে তাকিয়ে কয়েকবার ডাক দেয়। কিন্তু আহনাফ এর পূর্বেই ভেতরে চলে যায়।
উপায় না পেয়ে সুরভী ও তার পিছনে যায়। কিন্তু সেতুর উপর উঠে দাঁড়ায় সে। এই স্থান থেকে জায়গাটি সৌন্দর্য স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সরু পুকুরটির আশেপাশে কতগুলো রং-বেরঙের ফুল এবং পানিতে নেচে বেড়ানো ছোট ছোট মাছ। এর উপর আকাশের দুলে মেড়ানো কৃষ্ণমেঘ এবং বাতাসের এই মিষ্টি আভাস তাকে যেন বন্দী করে রেখেছে। চাইলেও এই সুন্দর মুহূর্তটাকে ছেড়ে সে যেতে পারে না। ইশশ আহনাফও না, এত সুন্দর মুহূর্ত ছেড়ে কেউ যায় বুঝি?
মায়ার সাথে কথোপকথনের সময় অভ্রর চোখ পড়ে কাছে জানালার ওপারে। শুভ্ররঙা শাড়ি পরা এক কৃষ্ণকলির দর্শন পায় সে। সেতুর উপর দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে আকাশ পাণে। বাতাসে উড়ছে তার কৃষ্ণরঙা কেশ, উড়ছে শাড়ির আঁচল। তাকে এক দেখাতেই চিনে ফেলল অভ্র। মায়াকে বলল, “এক মুহূর্ত বসুন, আমি এখনই আসছি।” বলেই উঠে দৌড় দেয় সে বাহিরে। বেরিয়ে দেখে মেয়েটা আসলেই সুরভি। সে চুপিচুপি তার পিছনে যেয় দাঁড়ায়। তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “মিস ক্যাঁক্যাঁ আপনি এখানে কী করছন?”
আকস্মিকভাবে এমন শব্দে চমকে উঠে সুরভি। পিছনে ফিরে এতটা কাছে অভ্রকে দেখে ভয় পেয়ে পিছাতে নেয়। আর তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয়। পিছনেই পানিতে ভরা পুকুর। একটিবার পড়লে ভিজে জবজবে হয়ে যাবে সে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। তার নিশ্বাস আটকে আসে।
শেষ মুহূর্ত তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিলো অভ্র। হঠাৎ নিজের দেহে কোনো পুরুষের ছোঁয়ায় চমকে যায় সুরভি। সে চোখ খুলে। মিনমিনে গলায় বলে, “এভাবে ধরলেন কেন?”
“ছেড়ে দিব? বুঝেশুনে বলো।”
সুরভীর মনে পড়ে তাদের প্রথম দেখা। তার একবার বলায় অভ্র সত্যিই তাকে ছেড়ে দিয়েছিল। ভয়ে এইবার সে নিজেই অভ্র পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরে।
চোখে চোখ মিলে। নয়নবন্ধনের মধুর মুহূর্তে বৃষ্টিও সাক্ষাৎ দেয়। মিটিমিটি বৃষ্টি ঝরে। মিষ্টি হাওয়ায় দুলে সুরভির কৃষ্ণাঙ্গ কেশ।
চলবে….
অনুভূতির খাঁচা
পর্ব-৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
চোখে চোখ মিলে। নয়নবন্ধনের মধুর মুহূর্তে বৃষ্টিও সাক্ষাৎ দেয়। মিটিমিটি বৃষ্টি ঝরে। মিষ্টি হাওয়ায় দুলে সুরভির কৃষ্ণাঙ্গ কেশ।
“ছাড়বেন এখন?” সুরভি বলে। ত্যাক্ত, বিরক্ত সুরে।
“ছেড়ে দিব?” অভ্র তাকে ছেড়ে দেবার ভান করতেই সুরভি আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তার পাঞ্জাবি।
অভ্র হাসে। চোখ টিপ দিয়ে বলে, “কী চাও বলোতো? ছেড়ে দিতে বলে নিজেই আঁকড়ে ধরো।”
সুরভি কোনোমতে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু বেহায়া অভ্রটা তাকে এখনো ছাড়ে না। সে এবার কঠিন সুর ব্যবহার করে,
“মিস্টার অভদ্র আপনি জানেন তো, পাবলিক প্লেসে আছেন। কেউ আপনাকে আমার সাথে দেখে নিলে প্রতি নিউজ চ্যানেলের হেডলাইনে আসবেন।”
অভ্র এক দুই না ভেবে সাথে সাথে তাকে ছেড়ে দেয়। পিছিয়ে যায়।
সুরভি সোজা হয়ে তার চুল ঠিক করতে করতে বলে, “এসব বেহায়াপণা সকল মেয়েদের সাথে করেন না-কি আমাকে জ্বালাতন করতে আপনার একটু বেশিই মজা লাগে?”
“সত্যিই কারও সাহায্য করাই উচিত না। সাহায্য করেছি এর উপর কথা শুনাচ্ছে মেয়েটা। ভাবা যায়?”
“আপনি না আজ ব্যস্ত ছিলেন? তাহলে এখানে কী করছেন?”
“ব্যস্তই তো। আমার ফিয়োন্সের সাথে দেখা করতে এসেছি। তুমি এখানে কী করো? আমার পিছু করতে করতে এসেছ না’কি?”
“আমার তো আর কোনো কাজ নেই। আপনার পিছু করব। আমিও আমার বাগদত্তার সাথে এসেছি।”
“ও…যে তোমাকে মিথ্যা বলে তার এক্স গার্লফ্রেন্ড এর সাথ দেখা করতে গিয়েছিল। বাহ! তুমি তো দেখছি অনেক আন্ডারস্ট্যান্ডিং। বড্ড জলদি ক্ষমা করে দিলে।”
“এমন কিছু না। তার কাছে কারণ ছিলো। আর আমি আপনাকে এসব এক্সপ্লেন করছি কেন? আপনি নিজের ফিয়োন্সের কাছে যান এখানে কি করছেন?”
“তোমার সাথে দেখা করতে আসি নি। বৃষ্টি হচ্ছিল। আর বৃষ্টি দেখতে আমার ভালো লাগে। প্রকৃতির সৌন্দর্য বেড়ে যায়।”
সুরভি অবাক হয়ে তাকায় অভ্রর দিকে, “আপনারও বৃষ্টি পছন্দ? দেখলে বুঝা যায় না।”
“মানুষকে দেখতে বোঝা যায় যে তার কী পছন্দ আর কী অপছন্দ? ইন্টারেস্টিং, ব্যাপারটা জানতাম না।”
এমন সময় সেখানে এসে উপস্থিত হলে আহনাফ। ডাক দিলো সুরভিকে, “সুরভি… এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? ভেতরে আসো।”
“আসছি।”
সুরভি তাড়াহুড়া করে একবার তার চুল ঠিক করতে লাগলো। তার চোখে মুখে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু পানি জমেছিল, তা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে শুরু করে। তখন অভ্র বলে, “এভাবেই থাকো, সুন্দর লাগছে।”
সুরভি তাকায় অভ্রর দিকে। তার কথায় কিছুটা বিব্রত বোধ করে। কিন্তু তার কথা মেনে আর মুখ মুছে না। হাঁটতে শুরু করে আহনাফের দিকে। আহনাফ তাকে দেখে বলে, “বলেছিলাম না ভেতরে আসো, নাহয় বৃষ্টিতে ভিজে যাবে। দেখলে তো।” সে রুমাল বের করে নিজেই মুছতে শুরু করে সুরভির মুখখানা। হঠাৎ তার দৃষ্টি আটকায় তার সামনে দিয়ে হেঁটে আসা আরিফুর ইসমাত অভ্রর দিকে। এক মুহূর্তের জন্য তো নিজের দৃষ্টিকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। সুরভিকে সেখানে রেখে দ্রুত যায় অভ্রর দিকে, “স্যার আপনি এখানে? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“কেন আমার এখানে আসা বারণ না’কি?” অভ্র বলল ঠেসমারা গলায়।
“না না স্যার কি বলেন? বারণ হবে কেন? আপনাকে নিজের চোখে সামনে দেখে অবাক লাগছে।”
“আমি কি ভূত না’কি যে হঠাৎ প্রকট হয়ে গেলাম বলে, আমাকে দেখে আপনার অবাক লাগছে।”
তার এমন পেঁচালো কথার উত্তরে আহনাফ কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। সে কৃত্রিম হাসে, “স্যার আপনি একটি চ্যালেনে ইন্টারভিউ দিতে রাজি হয়েছিলেন। সে চ্যানেলের ম্যানেজার আমি। আহনাফ হোসেন।”
“ওহ মিস্টার মিটিং আপনি?” অভ্র দুষ্টু হেসে তাকায় সুরভির দিকে। আর সুরভি চোখ রাঙায়।
আহনাফ বিস্মিত সুরে বলে, “মিস্টার হোয়াট? বুঝিনি স্যার।”
“কিছু না আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগলো। আমিও এখানে ডিনার করতে এসেছিলাম। সুরভীকে দেখলাম তাই ভাবলাম এসে হাই বলে যাই। ”
“সো কাইন্ড অফ ইউ। আপনি চাইলে আমাদের ডিনারে জয়েন করতে পারেন।”
“আপনাদের সমস্যা হবে না?”
“সমস্যা? আমাদের সৌভাগ্য হবে।”
সুরভি তার পাশে এসে মৃদুস্বরে বলে, “করছেনটা কী? আমরা ডিনার ডেইটে এসেছি উনাকে ইনভাইট করছেন কেন?”
“উনি এত বড় নেতা, উনার সাথে একবার কথোপকথনের সুযোগ পেলে পরে কত সাহায্য পেতে পারি, বুঝতে পাড়ছ?”
“কিন্তু আমরা একে অপরের সাথে সময় কাটাতে এসেছি এখানে।” সুরভি বলল, রাগান্বিত সুরে।
অভ্র তাদের কথোপকথনের মাঝে বলে, “কোনো সমস্যা?”
” না স্যার, কোনো সমস্যা নেই। আপনি আসুন।” আহনাফ বিনয়ের সুরে বলে।
অভ্র হাসে, “মিঃ আহনাফ আমি রাগলে কেবল আপনার একটা ইন্টারভিউতে আমাকে পাবেন না। আর ও রাগলে নিজের বিয়েতে বউকে পাবেন না। তাই নিজের ডিনার ডেইটে ধ্যান দিন। এমনিতেও আমি একজনের সাথে এসেছি। আপনার সাথে আমাদের ইন্টারভিউতেই আবার দেখা হবে।”
অভ্র চলে যাওয়ার পর না রাগ হয়েই কথা বলে সুরভির সাথে, “এভাবে রিয়েক্ট না করলেও পারতে। উনি কি ভাববে?”
“আর উনার ভাবাতে আমাদের কেন কিছু আসে যায়?”
“কারণ উনি একজন নামকরা ব্যক্তি। আর উনার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের জন্যই ভালো হতো। কাম অন সুরভি তুমি না বুঝে তার সামনে যা তা বলে ফেলেছ। এখন দোয়া করো সে যেন খারাপ না মনে করে। আসো, ডিনার করে এখান থেকে বের হই।”
আহনাফ তার অপেক্ষা না করেই ভেতরে ঢুকে যায়। কথার ধরণে বিরক্তি স্পষ্ট।
সুরভির মন খারাপ হয়ে গেল। আজকের বিশেষ দিনটা নিয়ে আর মনের ভীতর উল্লাসটা পাচ্ছে না। তবুও ভেতরে গেল। এতটুকু কথায় হঠাৎ রাগ করে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পাড়ে না।
অভ্র ভেতর যেয়ে মায়াকে বলল, “বেশিক্ষণ অপেক্ষা করালাম না তো?”
“করিয়েছেন।”
“কিছু করার নেই। পরিচিত কাউকে পেয়েছিলাম, তাই যেয়ে হ্যালো বলতে হলো।” অভ্র দেখে সুরভি ভেতর ঢুকছে। তারা দুই টেবিল ছাড়িয়ে কোণায় যেয়ে বসলো।
তার দৃষ্টি অনুসারে তাকায় মায়াও। তীক্ষ্ণ হেসে বলে, “আপনার ইন্টারেস্ট দেখি এখান থেকে ওখানে বেশি। কে আপনার পরিচিত কেউ? ছেলেটা না মেয়েটা?।”
“কেন এখন থেকেই পজিসিভ না’কি?”
“ওহ তাহলে মেয়েটাই। বুঝলাম। দেখুন মিস্টার অভ্র, আমার কিছু আসে যায় না আপনি কার দিকে তাকান বা কার সাথে কথা বলেন। আমি বিয়ে কেবল নিজের লাভের জন্য করছি। আমি তখনই আপনাকে বিয়ে করার জন্য রাজি হবো যখন আপনি আমাকে ওয়াদা করবেন, আমার কোনো রাজনৈতিক সাহায্য লাগলে আপনি আমাকে সাহায্য করবেন। দ্যাটস ইট।”
“কাজের পরিবর্তে শর্ত দেওয়া তো আমার কাজ। অন্যকেউ আমাকে শর্ত দিচ্ছে, এর অভিজ্ঞতা তেমন নেই।”
“সবারই নতুন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। তো কী বলেন, রাজি তো?”
“রাজি। আপনার কোম্পানির কোনো সাহায্য লাগলে, আমি সবসময় সাহায্য করব।”
“কোম্পানির সাহায্যতে আমার কী লাভ? আমি কোম্পানির মালিক তো না। তাদের নিয়ে চিন্তা করার সময় এবং এনার্জি কোনটাই আমার নেই। আপনি কেবল আমার সাহায্য করবেন। আর আমি এই কথা লিখিত চাই।”
“লিখিত? আমার কথার উপর আপনার বিশ্বাস নেই?”
“নেতার কথার উপর বিশ্বাস করার মতো বোকা আমি নই।”
“এটাও ঠিক। সো ডিল কনফার্ম?”
অভ্র হাত বাড়ায় হ্যান্ডশেকের জন্য। এইবার মায়াও হেসে হ্যান্ডশেক করে, “কনফার্ম।”
জোহান এবং সাঈদ তাদেরই দেখছিল এবং কথা শুনছিল। জোহান তাদের কথোপকথন শুনে থতমত খেয়ে যায়, “এরা কি বিয়ের কথা বলতে এসেছে না’কি বিজনেসের? মনে হয় জীবন একসাথে কাটানোর প্লান না, বিজনেস ডিল করছে।”
সাঈদও মাথা চুলকে বলে, “এদের কথা শোনে তো মাথা ঘুরাচ্ছে। এরা কী ভাই! দুইটার মাথাতেই গন্ডগোল আছে। একসাথে থাকবে কীভাবে?”
সাঈদের চোখ যায় হঠাৎ সুরভি ও আহনাফের উপর, “হায় খোদা আমার বোনেরও এখানেই আসতে হতো। আর রাতে এত সেজেগুজে ডিনার করতে আসছে তাই না? বাসায় যেয়ে বুঝাচ্ছি ওকে।”
“সাট আপ ব্রো। তোমাদের বাছাই করা ছেলের সাথেই আসছে।”
“তো কি? সারাদিনই তো অফিসে একসাথে কাটায়। এরপর এত ঘুরাফেরা কীসের?”
জোহান বিরক্ত হয়ে তাকায় সাঈদের দিকে, “ব্রো সভ্য আমাদের মায়া ও অভ্র ভাইয়ের গোয়েন্দাগিরি করতে পাঠিয়েছে। তোমার বোনের না।”
মায়া এবং অভ্র রাতের খাবার শেষে উঠে যায়। অভ্র যাবার পূর্বে জিজ্ঞেস করে, “তোমাকে ড্রপ করে দিব?”
“নো, থ্যাংকস। আমার কিছু কাজ আছে। আপনি যেতে পারেন।”
“ওকে।” অভ্র ফজলু মিয়াকে কল করতে করতে বের হয়। আহনাফ তাকে যেতে দেখে সুরভিকে বলে, “সত্যি সুরভি তখন এমনভাবে বিহেভ করা উচিত হয় নি তোমার। অভ্র স্যার যাবার পূর্বে একবার তাকালও না আমাদের দিকে।”
“আজব তো, উনি আমাদের দিকে তাকাবে কেন?”
“বেশি কথা বলো না তো। উনি শুধু রাগ না করুক। রাগ করে যদি আমাদের ক্ষতি করে দেয়।”
“বেশি চিন্তা করছো তুমি।”
“আর তুমি কথা বলার আগে চিন্তাও করো না।”
এইবার ক্ষেপে যায় সুরভি। সে ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ায়, “আমার কথা শুনতে এতই বিরক্ত লাগলে নিজে একা একা ডেইট ইনজয় করো। আমি গেলাম।”
“সুরভি এখানে তামাশা করো না…সুরভি…সুরভি শুনো তো।”
সুরভি দাঁড়ায় না। রেগেমেগে বেরিয়ে যায়। বাহিরে যেতেই দেখতে পায় অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। ফোনে কিছু কাজ করছে। তাকে দেখে আরো রাগ উঠে সুরভির। লোকটাকে কে বলেছিল তার সাথে এসে কথা বলতে? সে-ই প্রধান কারণ আজকের এত বিশেষ সন্ধ্যাটাকে নষ্ট করার। সে অভ্রর উপর ধ্যান না দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেল।
“মিস ক্যাঁক্যাঁ, এত জলদি আপনার ডেইট শেষ হবার তো কথা না। আমার জন্য বুঝি এত জলদি বেরিয়ে এলেন?” অভ্রর কথায় এবার রক্ত মাথায় উঠে যায় সুরভির। সে তার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। মুখের উপর হাত তুলে বলে, “আপনি আমার আশেপাশেও আসবেন না আর?”
“কেন তোমার প্রেম প্রেম ফিল আসে না’কি আমি কাছে থাকলে? এখন তোমারও দোষ নেই। ম্যাগাজিনে দেখেই আমার উপর এত বড় ক্রাশ ছিলো তোমার। আর আমাকে না-কি সামনা-সামনি দেখতে আরও বেশি হ্যান্ডসাম লাগে। তোমারই মুখের কথা। এখন তোমার ফিয়োন্সের কী হবে? ইশশ বেচারা।”
সুরভি রাগে আগুন হয় প্রথম কিছু মুহূর্ত। এরপর অভ্রর কথায় লজ্জায় পড়ে যায়। সে কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে অভ্রর সামনে হাত জোর করে বলে, “দেখুন মিস্টার অভদ্র, আপনার সাথে তর্কাতর্কি করতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।”
“তাই বুঝি? ইন্টারেস্টিং। আমি তো ভেবেছি এটা তোমার ফেভারিট কাজ। তর্কাতর্কির সময় আমাকে এত কাছে থেকে যে দেখতে পাও।”
“উফফ বিরক্তিকর! আপনার সাথে কথা বলাটাও চরম বিরক্তির কাজ।”
সে হাঁটতে শুরু করে আর অভ্র ডাক দেয়, “এই মিস ক্যাঁক্যাঁ, লিফট লাগবে?”
“আপনার কিছুই আমার লাগবে না। কেবল আমার পিছু ছাড়ুন।”
সুরভি হাঁটতে থাকে। একটিবারও পিছু ফিরে তাকায় না। অভ্র বাঁকা হেসে বলে, “কিছু সময় পর নিজেই এসে লিফট চাইবে আমার কাছ থেকে।”
অভ্র যাবার পর মায়া চৌধুরী উঠে যেয়ে দাঁড়ালেন জোহান ও সাইদের টেবিলের সামনে। হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে কঠিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “সো মিস্টার জোহান এবং এসিস্ট্যান্ট সাইদ, আপনারা দুইজন এতসময় ধরে আমার উপর নজর রাখছেন কেন জানতে পারি? ”
তাদের মুখের সামনে এখনো ম্যাগাজিন দেওয়া ছিলো। সাইদ চিকন সুরে বলে, “সাইদ? কে সাইদ? আপনি আমাদের ভুল করে অন্যকেউ ভেবে ফেলেছেন।”
মায়া তার হাত থেকে ম্যাগাজিনটা নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “আমি ভুল করি না, মিস্টার সাঈদ।”
সাইদ তাকে দেখে ড্যাবড্যাব করে কিছু সময় তাকিয়ে রইল। আর এক দৌড়ে পালায় সেখান থেকে। জোহান ম্যাগাজিন নামিয়ে অবাক হয়ে বলে, “আর ইউ সিরিয়াস? আমাকে এভাবে রেখে চলে গেলে? মীরজাফরও এত বড় মীরজাফরগিরি করে না।”
সে ভয়ে ভয়ে তাকাল মায়ার দিকে, “আমরা এখানে ডিনার করতে এসেছিলাম। সভ্যর কথায় আপনার উপর নজর রাখতে না।” বলে জিহ্বায় কামড় দেয় জোহান, “আমি ইডিয়ট। যে শাস্তি দেবার দিতে পারেন।”
“আগামী একমাস রাত দশটা পর্যন্ত আপনার ট্রেনিং হবে।”
“নো… এই ট্রেনার একটা খাটাইশ। আপনার থেকেও বেশি… আই মিন উনার সাথে যতটুকু সময় কাটাই ওইটা শাস্তির কম না। এর উপর আপনি দুইঘন্টা সময় বাড়াতে পারেন না।”
“একদম আমি পারি। সাড়ে দশটা। আরেকবার কিছু বললে এগারোটা হবে। হ্যাপি ট্রেনিং।”
মায়া হাঁটতে শুরু করে। তার পিছনে আসে জোহানও, “আপনার নাম তো মায়া, আমার প্রতিও একটু মায়াদয়া দেখান।”
“আমার নাম মায়া, কিন্তু আমার মনে কোনো মায়া নেই।”
“ওকে বাট আপনি কখন বুঝেছেন যে আমরা এখানে বসা আছি?”
“আপনাদের এসে বসার পর থেকেই।”
“তাহলে কিছু বলেন নি কেন?”
মায়া আড়চোখে তাকায় জোহানের দিকে। তীক্ষ্ণ হেসে বলে, “দেখতে চাইলাম আপনারা কত বড় ইডিয়ট।”
প্রবেশদ্বার থেকে তারা বের হতে নিবে আর দরজায় থেমে যায় মায়া। তাদের সামনে থেকে আরেকটি জুটি আসছিল হাসিখুশি। কিন্তু মায়াকে দেখে তাদের হাসিও মলিন হয়ে যায়। তারা হাত ধরে ছিলো, তাকে দেখতেই হাত ছেড়ে দেয়। তার সামনে এসে দাঁড়াতেই বিব্রতবোধ করে। ছেলেটি নম্রসুরে জিজ্ঞেস করে, “মিষ্টি…” দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে, “কতদিন পর দেখা হলো। কেমন আছিস?”
তার পাশের মেয়েটাও এসে তার হাত ধরে জিজ্ঞেস করে, “আমাদের অনেক বছরে কথা হয় নি। কত পরিবর্তন হয়ে গেছিস।”
মায়ার চোখেমুখে বিরক্তি স্পষ্ট। সে মেয়েটার হাত ঝটকায় সরিয়ে দেয়। কঠিন গলায় বলে, “রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকলে মানুষ যাতায়াত করবে কীভাবে?”
“মিষ্টি ও তোর সাথে সুন্দরভাবে কথা বলতে চাইছিল। এখানে এত রুড না হলেও পাড়িস।”
“গিভ মি এ ওয়ে আউট।” আদেশের সুরে বলে মায়া। ছেলেটা আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং জায়গা দেয় মায়াকে। জোহানও আসে তার পিছনে, “সে লোক আপনাকে মিষ্টি বলে ডাকছিল কেন? লোকটাকে চিনেন আপনি?”
“সে লোক এই রেস্টুরেন্টের মালিক, আমাদের কোম্পানির মেজর শেয়ারহোল্ডার এবং আমার এক্স-ফিয়োন্সে।”
“ও…” হঠাৎ জোহান শেষ শব্দটা মনে করে চমকে উঠে, “হোয়াট তোমার ফিয়োন্সে? সে তো অন্যমেয়ের সাথে…”
“জানি। এই রেস্টুরেন্টেই আমাদের এনগেজমেন্ট ভেঙেছে এবং সেদিনই সে আমার ফ্রেন্ডের সাথে এনগেজমেন্ট করেছে। ড্রামাটিক রাইট?”
জোহানের খারাপই লাগে মায়ার জন্য, “আই এম সরি।”
“সরি ফর হোয়াট? আমি তো চাইতামই ওরা আমাকে এখানে দেখুক। এইজন্যই তো এই রেস্টুরেন্টে এসেছি। একটু তাড়াতাড়ি এলেই হতো, অভ্র থাকলে বেশি ভালো হতো। যাই হোক আমাকে যেহেতু এখানে দেখেছে সেহেতু খোঁজ তো নিবেই। আজ জানবে এমন নামকরা বংশে আমার বিয়ে হচ্ছে। তাও ক্ষমতাশালী ব্যক্তির সাথে। আফসোস তাদের কষ্টমাখা মুখখানা দেখতে পাড়বো না। বিশেষ করে তার বাবার। আমার এনগেজমেন্টে ওদের সবাইকে আমার নিজে যেয়ে দাওয়াত দেওয়া উচিত, তাই না?” সে তাকায় জোহানের দিকে। তীক্ষ্ণ হাসে। সে হাসিতে এক ধরনের তৃপ্তির ছোঁয়া। সে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কী মনে হয় যাওয়া উচিত?”
জোহান কি বলবে বুঝতে পারে না। সে অসহায়ভাবে হাসে, “আমি কী বলব? আর কিছু বললেও আপনি তো মানবেন না।”
“একদম ঠিক উওর। আমি যতটা ভেবছি আপনি এতবড় ইডিয়টও না বোধহয়।”
চলবে….
[দয়া করে ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্প নিয়ে মন্তব্য জানাবেন। ভালো অথবা খারাপ।]