অনুভূতির খাঁচা পর্ব-১৩+১৪

0
25

অনুভূতির খাঁচা
পর্ব-১৩
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

সুরভি হতবাক। সে এসেছে ইনারার বাড়িতে। আর ইনারা তাকে ছেড়ে হঠাৎ কোথায় যাচ্ছে? সে উঠে যায় ইনারার পিছনে। জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
ইনারা ক্রোধিত কন্ঠে বলে, “ওই আহনাফকে কিছু মুহূর্তের জন্য জাহান্নামের দর্শন করিয়ে হাস্পাতালে ভর্তি করতে।”

ইনারা একটি গাড়িতে উঠে যায়। সুরভী তাকে থামায়। কিন্তু ইনারা তো থামার মানুষ না। সে গাড়িতে উঠে রওনা দেয়। সুরভি ডাকতে থাকে ইনারাকে বারবার। কিন্তু সে থামে না। গাড়িতে করে চলে যায়।
কিন্তু তার এত ডাক শুনে বেরিয়ে আসে সভ্য বাড়ির ভেতর থেকে। সুরভিকে এমন অসহায় অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করে, “কী হলো তোমার? আর ইনারা তোমাকে ছেড়ে কোথায় গেল?”
“ভাইয়া বড় সমস্যা হয়ে গেছে। আপনি ওর পিছু যেতে পারবেন?”
“পারব তো ঠিক আছে। কিন্তু হলোটা কী?”
“সেসব আপনাকে গাড়িতে বলব। এখন চলুন।”
সভ্যও একটি গাড়ি বের করে যায় ইনারার পিছনে। তারপর সুরভিকে জিজ্ঞেস করে, “এবার তো বলো কী হয়েছে?”
“ভাইয়া আপনি তো জানেন আহনাফের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ক’দিন আগে অন্য মেয়ের সাথে….ক’দিন আগে আমার উপর চিটিং করেছিল। তাই বিয়ে ভেঙে দেই। ইনারাকে ব্যাপারটা এখনই জানাতে চাই নি। কিন্তু আমার মুখ দেখে বুঝে যায় ও। আর কি, চলে যায় ওকে শিক্ষা দেবার জন্য। আপনি তো জানেন ওর মেজাজ কেরকম। এখন কি করবো আমি ভাইয়া?”
“কী আর করবে? দোয়া করো ওই ছেলের জন্য। ইনারার আক্রমনের পরে যেন বেঁচে থাকে।”

ইনারা অফিসে পৌঁছে গাড়ি পার্ক না করেই ভিতরে ঢুকে যায়। এত বড় অভিনেত্রী হঠাৎ এভাবে আসায় স্বাভাবিকতই অফিসে সকলে বিস্মিত হয়। বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। এত বড় অভিনেত্রী কাওকে না জানিয়ে এই অফিসে কী করছে? তার আগমনে সকলের মাঝে হৈচৈ সৃষ্টি হয়। অফিসের সকল কর্মীরা একত্রিত হয়ে যায়। তার সাথে কথা বলার জন্য উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু ইনারা সোজা এগোয় আহনাফের রুমের দিকে। তার মাথায় অগ্নি বুদবুদ করছে। ক্রোধে কাঁপছে তার শরীর। আহনাফের কেবিনের বাহিরে তুষার এসে দাঁড়ায়, “ম্যাম আপনি এখানে? আপনি এখানে কীভাবে? আপনি আগে জানালে আমরা আপনার স্বাগতমের ব্যবস্থা করতাম। আপনি এসেছেন আর আমরা কিছুই করলাম না।”
ইনারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তুষারের দিকে৷ মনে হচ্ছে এক্ষুনি তার চোখ দিয়ে অগ্নিশিখা বের হয়ে ভশ্ম করে দিবে তাকে। সে কঠিন গলায় আদেশ জারি করে, “সামনে থেকে সরুন।”

তুষার আর কথা বলার সুযোগ পায় না। ভয়ে সরে যায়। ইনারা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখে আহনাফ কাজ করছে আয়েশে তার চেয়ারে বসে। ইনারাকে দেখে সে উঠে দাঁড়ায়, “মিস ইনারা আপনি এখানে?”
ইনারা তখনই কোন উত্তর দেয় না। তার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। শান্ত গলায় বলে, “আমি শুনেছি আপনার এবং সুরভির বিয়ে ভেঙে গেছে?”
আহনাফকে বিব্রত হতে দেখা যায়। সে আমতা-আমতা করে বলে, “আসলে ওর একটু মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। ভুল বুঝছে ও।”
ইনারা হেসে মাথা নাড়ায়, “ভুল বুঝেছে তাই না?” বলে এক ঘুষি দেয় তার নাকে, “বলেছিলাম না আমার বান্ধবীকে কষ্ট দিলে তোর জীবন হারাম করে দিব শয়তান। আমার বান্ধবীকে ধোঁকা দিলি তুই? তোর সাহস কত বড়!”

সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে আহনাফ। ব্যাথায় বসে পড়ে। আ*র্তনাদ করে উঠে।
এমন সময় সুরভিও ঢুকে দরজা দিয়ে। তার এই কান্ড দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে। দৌড়ে যেয়ে সামলায় ইনারাকে, “দোস্ত বাদ দে প্লিজ। তুই আয় আমার সাথে।”
কে শুনে কার কথা? সে নিজের মতো মারতে থাকে আহনাফকে। আহনাফ ক্ষমা চায় বারবার। কিন্তু সে থামে না। সুরভি আর উপায় না পেয়ে সভ্যর কাছে যায় দ্রুত। সে দরজার বাহিরেই দাঁড়ানো। তাকে যেয়ে বলে, “ভাইয়া প্লিজ ইনারাকে বুঝান। আসলেই হাস্পাতালে পাঠাবে ওকে।”

সভ্যর তো খাতিরদারি হচ্ছিল জোরেশোরে। সে এক চেয়ারে বসা ছিলো। সকলে তার আশেপাশে মৌমাছির ম ম করছে। বিশেষ করে মেয়েরা। তুষার তাকে আপ্পায়নের ব্যস্ত হয়ে পরেছে। সুরভি দরজা দিয়ে বের হয়ে এমন অবস্থা দেখে থতমত খেয়ে যায়। একদিকে ইনারা একজনকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিচ্ছে, কেউ তাকে না থামিয়ে সবাই সভ্যর দিকে ধ্যান দিচ্ছে?
সে সভ্যর দিকে ছুটে আসে, “ভাইয়া আপনি এখানে বসে আছেন? ওদিকে ইনারা ওই ছেলের ভর্তা বানিয়ে দিচ্ছে।”
“এখন এমন তো না যে ও এটা ডিসার্ভ করে না?” সভ্য আয়েশে পা’য়ের উপর পা তুলে জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে।
“দুলাভাই প্লিজ…”
“উফফ ওই বোম্বের কাছে গেলে আমার উপর ফুটবে। তাও তুমি যেহেতু বলেছ তাই যাচ্ছি।” সে উঠে যায়। সভ্য যাবার পরই তার পিছনে যেতে নেয় সুরভি। কিন্তু তাইফা এসে তার হাত ধরে নেয়, “তুই সভ্য এবং ইনারাকে কীভাবে চিনিস?”
সুরভি পড়ে গেল আরেক বিপদে। সে এর পূর্বে কাউকে জানাইনি এই যে অভিনেত্রী ইনারা তার বান্ধবী হয়। আসলে সে চায় নি সকলে তাকে এজন্য বিশেষভাবে ট্রিট করুক। নিজের যোগ্যতায় এক পর্যায়ে যেতে চায় সে। কিন্তু এই মুহূর্তে কী করবে সে। সকলের নারাজ হওয়াটা অন্য বিষয় কিন্তু তাইফা তার ভালো এক বান্ধবী। সে নারাজ হলে কষ্ট পাবে সে। আহনাফের সাথে বিয়ে ভাঙার পর সে প্রতিদিন তাকে কল দিতো। ইনারার ব্যাপারটা সে তাইফাকে বলতে চেয়েছিল। কখনো বলা হয় নি। এইভাবে ব্যাপারটা তাইফা জানুক সে চাইতো না। সুরভি তার হাত ধরে বলে, “প্লিজ দোস্ত কিছু মনে করিস না আমি তোকে পরে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলব।”
তারপর সে চলে যায়। দরজায় দেখে সভ্য ইনারাকে টেনেটুনে বের করছে। সুরভি যেয়ে ধরে ইনারাকে। ধমক দিয়ে বলে, “তুই এখনই এইখান থেকে চল, নাহলে তোর সাথে আমার কথা বলা বন্ধ।”
“আমি ওই লোকের হাড্ডিগুড্ডি এখনো ভাঙি নি।”
“ইনু… তুই এত বড় অভিনেত্রী। এসব মানায় তোকে। মানুষরা জানলে কী ভাববে?”
“জাহান্নামে যাক সবাই। ওই লোকের সাহস কত বড় তোকে কষ্ট দিয়েছে?”
“ইনু…” চোখ রাঙিয়ে তাকায় সুরভি ইনারার দিকে। সাথে সাথে ইনারা মুখ ফুলিয়ে নেয়।
সুরভি আদেশের সুরে বলে, “গাড়িতে যা এক্ষুনি। যা।”

ইনারা না পেরে মুখ ফুলিয়েই যায় সেখান থেকে। তার যাবার পর সুরভি সকলকে অনুরোধ করে বলে, “প্লিজ ইনারার ব্যাপারটা কেউ বাহিরে জানিয়েন না। ওর রেপুটেশন নষ্ট হয়ে যাবে। ও আমার কথা চিন্তা করে এমনটা করেছে। আমি এতমাস আপনাদের সাথে কাজ করেছি প্লিজ আমার জন্য এতটুকু করুন।”
তাইফা বলে, “ভুল কী করল? লোকটা এটারই যোগ্য।”
এক দুইজন তার সাথে তাল মেলায়।”
সভ্য তুষারের সামনে এসে দাঁড়ায়। তার কাঁধে হাত রেখে বলে, “উনাকে একটু হাস্পাতালে নিয়ে যেয়েন। যা খরচ আসবে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েন।” একটি কার্ড বের করে বলে, “এই নিন আমার নাম্বার। ”
“স্যার আপনি এবং ইনারা ম্যাম একসাথে একদিন আমাদের চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিতেন তাহলে খুব ভালো হতো।”
কথাটা শুনে রাগ উঠে যায় সুরভির, “কেন আপনি কী নিজের মুনাফা ছাড়া কিছু বুঝেন না? মানবতার খাতিরেও তো কাজটা করে দিতে পারেন।”
সভ্য থামায় তাকে। শান্ত গলায় বলে, “অসুবিধা নেই। আপনি কল দিয়েন, আমি দেখব। আসো সুরভি।”
“ভাইয়া আপনি যান। আমি উনাকে হাস্পাতালে চিকিৎসা করিয়ে বাসায় দিয়ে আসি।”
“ওই লোক তোমার সাথে এতকিছু করেছে তাও?” হতভম্ব হয়ে যায় সভ্য।
“উনি যা করেছে তার পরিণতি উনাকে আল্লাহ দিবে। উনি নিজের শরম হারিয়েছে কিন্তু আমি আমার মানবতা নয়। আপনি ইনারাকে নিয়ে যান।”
“তুমি যা ভালো মনে করো।” সভ্য চলে গেল।

সুরভি তুষারের সাথে আহনাফকে হাসপাতাল নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা করানোর পর ডাক্তার তাকে এক বেড এ কিছু ঘন্টার জন্য রেস্ট করতে বলে। তুষার যায় তার জন্য ঔষধ আনতে। তাকে একটি কেবিনে রাখা হয়েছিল। সুরভি বসেছিল তার পাশেই। সে আহনাফকে বলল, “আমার জন্য আপনার এই অবস্থা আমি ক্ষমা চাচ্ছি।”
আহনাফ সুযোগ পেয়ে খপ করে তার হাত ধরে নেয়, “সুরভি আই এম সরি। আই এম সো সরি। সেদিন মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমার কি হলো আমি বুঝতেই পারছিলাম না। ক্ষমা করে দেও আমায়। আর কখনো হবে না। আমি বিধির দিকে ফিরেও তাকাব না। ওর সাথে যা হয় ওর ব্যাপার। প্লিজ সব ভুলে আমরা নতুন এক জীবন শুরু করি আসো।”
“হাত ছাড়ুন আমার।” কঠিন গলায় বলে সুরভি।
“সুরভি প্লিজ। তোমার দূরে যাবার পর থেকে আমার সব অস্বস্তিকর লাগে। দয়া করো। আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি জানি তোমার এখনো আমার প্রতি অনুভূতি আছে। তাইতো এখানে এসেছ।”
“আমার কারণে আপনার এই অবস্থা আজ। তাই এসেছি।”
“তুমি মিথ্যা বলছ। আমি জানি আজও তুমি আমাকে ভালোবাসো।”
“আপনাকে ভালোবাসি?” তাচ্ছিল্য হাসে সুরভি, “আপনি কারো ভালোবাসার যোগ্য? আপনি কারও ভালোবাসার যোগ্য না। না আপনি কখনো আমায় ভালোবেসেছেন, আর না বিধিকে। ভালোবাসলে তার এই পরিস্থিতিতে তাকে ছাড়ার কথা মাথায়ও আনতেন না। আপনার মতো মানুষকে আমি ভালোবাসব?” সুরভি উঠে দাঁড়ায়। আবার বলে, “মনে হচ্ছে আপনার এখন অনেকটা ভালো লাগছে। আমি চলে যাচ্ছি।”
কিন্তু হাত ছাড়ে না আহনাফ। উল্টো আরো জোরে হাত ধরে বলে, “তুমি আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না।”
অগ্নিদৃষ্টিতে সুরভি তাকায় তার দিকে, “ইনারা আপনার নাক ভেঙেছে। আমার মাথা গরম করলে হাতটা ভেঙে দিব। হাত ছাড়ুন।”
আহনাফ ভয়ে সাথে সাথে তার হাত ছেড়ে দেয়।
.
.
জোহান জানতে পারে আজ অনেকদিন পর মায়া অফিসে এসেছে। সে জন্মদিনের রাতের পর আর দেখা দেয় নি সে। অফিসেও আসে নি। মেয়েটা কী আজব! আজ রাতে তার এনগেজমেন্ট। সব কাজ চলছে এনগেজমেন্ট নিয়ে। সভ্য তাকে দাওয়াত করেছে কল দিয়ে। সে না-কি কাজের ব্যস্ততায় দম ফালাতে পারছে না। আর মেয়েটা এতদিন বাদে অফিসে এলো তাও তার এনগেজমেন্টের দিন?

“আসতে পারি?” জোহান নক দেয় দরজায়।
“আসুন।” অনুমতি পেয়ে ঢুকেও যায়। যেয়ে চেয়ার টেনে বসে। মায়া কাজ করতে করতেই এক পালক তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কী চাই?”
“একটা প্রশ্নের উত্তর। সব ঠিক আছে তো? এতদিন কোথায় ছিলেন?”
“আপনাকে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি না।”
“মা জিজ্ঞেস করছিল।”
মিথ্যা কথা। তার মা এ ব্যাপারে কোন প্রশ্নই করেনি। সে নিজের কৌতূহল মেটানোর জন্য প্রশ্নটা করল।
“আমার বন্ধুরা কল করেছিল। সে রাতে স্যারপ্রাইজ পার্টির ব্যবস্থা করল। পরেরদিন বাসায় এসে কাপড়চোপড় গুছিয়ে গেলাম কক্সবাজার ট্যুরে। বন্ধুদের সাথে। পূর্বে তো আন্টির সাথে দেখা করে গিয়েছিলাম।”
“তাইতো বলি আপনার রঙ এত পুড়ে গেছে কেন? এনগেজমেন্ট এর আগে মেয়েরা রূপচর্চা করে আর আপনি রূপ পুড়িয়ে এলেন। আর আপনি পার্লারে যাবেন না? সন্ধ্যায়ই তো এনগেজমেন্ট।”
“যার বিয়ে তার শখ নেই আর পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নেই। নিজের চরকায় তেল দেন। আমার জন্য এনগেজমেন্ট থেকে কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
“কাজ এত গুরুত্বপূর্ণ হলে কক্সবাজার গেলেন কেন?”
“কারণ আমার বন্ধুরা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা আমার কাছে সেসময় ছিলো যখন কেউ ছিলো না।” সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, “যাই হোক এখন রফাদফা হন এখান থেকে। বকর বকর করবেন না, আমি কাজ করতে পারছি না।”
“আমার মনে হয় আপনার এখন কাজ বাদ দিয়ে সাজতে যাওয়া উচিত।”
“আপনার কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছি আমি?”
“আজব তো আমি আপনার ভালোর জন্য বলছি আর আপনি চেত দেখাচ্ছেন আমার উপর।”
“আপনাকে পরামর্শ দিতে বলেছি?”
“লোকেরা ঠিকই বলে আপনি আস্তো এক রাক্ষুসি। এত ভালো কথা বললাম তাও আমার উপর রাগ দেখাচ্ছেন।”
“আর আপনি কী খোক্কসরাজা?”
“আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা।”
“আপনাকে বলেছি আমার সাথে এসে কথা বলতে?”
“যত্তসব!” জোহান রাগে বিড়বিড় করে মায়াকে বকে চলে যায়। যাবার পূর্বে দরজা খুলে একবার পিছু ফিরে দেখে মায়াকে। সামির কথা মনে পড়ে তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। খারাপ লাগতে শুরু করে তার মায়ার প্রতি। এত হাসিখুশি মেয়েটার আজ এই অবস্থা! সে দরজা লাগি দেয়। বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।
.
.
অভ্রর গাড়ির জন্য প্রবেশদ্বার খোলা হয়। এনগেজমেন্টের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করা হচ্ছে অভ্রদের বাসায়। আজ দুইদিন ধরে তাকে কল দেবার পর তার আসার সময় হলো। ভেতরে ঢুকতেই দাদীজানের ক্রোধের স্বীকার হয় সে, “নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ মেহমানদের আসার সময় আছে? তোর কী মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি আছে? তোর এনগেজমেন্ট এর সকল ভার সামলেছে সভ্য। তোর ছোট ভাই। আর তুই মেহমানদের আসার সময় আসলি।”
তবে অভ্রকে দেখে মনে হয় নি সে কথাটা গায়ে মাখল। সে বেখেয়ালি আচরণ ছাড়ল না। বলল, “দাদীজান তোমার বকার সেশন শেষ হলে আমি উপরে যেতে পারি? আমার দাদাজানের সাথে কিছু কথা আছে।”
দাদীজান বলে, “আমার কথা তো শুনে যাও। শেষ হয় নি। তোমার মেয়ে পছন্দ তো?”
“পছন্দ অপছন্দ দিয়ে কিছুই আসে যায় না আমার। নিজের কাজ হলেই হলো।”
বলে সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করে। তখনই, হঠাৎ তার সামনে এসে পরে সুরভী। সে-ও নামছিল সিঁড়ি দিয়ে। দু’জন একে অপরকে দেখতেই থমকে যায়। অভ্র পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে সুরভিকে। সাদা রঙের লেহেঙ্গায় সোনালি রঙের কাজ। কুন্দনের ছোট কানেরদুল পরেছে সে। সাথে হাল্কা সাজ। তাকে দেখে অভ্র আর চোখ সরাতে পাড়ল না। চোখ দুটো বড়বড় করে তাকিয়েই রইল। আচ্ছা এক মুহূর্তের জন্য কী তার হৃদপিণ্ড স্পন্দিত হতে ভুলে গেছে?

সুরভি তাকে দেখে সিঁড়ি দিয়ে না নেমে পিছনের পথে হাঁটতে শুরু করে। অভ্রও যায় তার পিছনে, “আমাকে দেখে পালাচ্ছো?”
“কেবল আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছা নেই।”
“বাহ আমার এনগেজমেন্টে এসেছ আমার সাথে কথা না বলেই চলে যাবে?
” আমার এখানে কেবল ইনারার জন্য আসা।”
“জ্বর কমেছে তোমার?”
“আপনার থেকে মতলব?”
“আবারও এভাবে কথা বলছ আমার সাথে? শিক্ষা এখনো হয় নি তাই না?”
সুরভি থেমে যায়। অভ্রর দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে বলে, “দেখুন মিস্টার অভ্র, আপনার সাথে আমার কোন ধরনের শত্রুতা নেই। আপনি নিজের জীবনে খুশি থাকুন, আমি আমার জীবনে সুখে থাকি। একে অপরের জীবনে দখল না দেই। আমি আপনার সাথে আর কোনো কথা বলতে চাই না। ঠিকাছে?”

অভ্র কোনো উওর দেবার পূর্বেই দাদাজান এসে পড়ে সেখানে, “অভ্র কখন এলে?”
দুজনের দৃষ্টি যেয়ে আটকায় দাদাজানের উপর। সুরভি সুযোগ পেয়ে বলে, “আপনারা কথা বলুন আমি আসি।”
সে যেতে নিলেই দাদাজান ডাক দেয় তাকে, “সুরভি একটু ইনারাকে বলো তো অভ্রর শেরোয়ানিটা দিয়ে যেতে। ওর কাছেই যত্নে রাখা।”
“জ্বি দাদাজান।” বিনয়ের ভঙ্গিতে বলল শুরু সুরভি।
সুরভি যাবার পর অভ্র দাদাজানের কাছে আসে, “আপনার সাথে কথা ছিলো। আমার ফান্ডের ব্যবস্থাটা হয়েছে?”
“সে কথা পরে। আমার রুমে আসো।”
দাদাজান নিজের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করে। অভ্র হাঁটে তার পাশেই, “কিন্তু দাদাজান আপনি কিন্তু ওয়াদা করেছিলেন মনে রাখবেন।”
“তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? আগে বিয়েটা সেরে নেও। এই মুহূর্তগুলো অনুভব করো। এসব মুহূর্ত আর ফিরে আসবে না।”
“আমার এসব মুহূর্ত ফেরত লাগবেও না। আমার যা লাগবে আপনি জানেন।”
“জানি তো বাবা। পেয়ে যাবে।” সে পিছনে ফিরে একবার সুরভিকে দেখে বলে, “মেয়েটাকে তোমার দাদীজান খুব পছন্দ করেছিল তোমার জন্য।”
“কাকে?”
“ঐ’যে ইনারার বান্ধবী, সুরভি। আমাদের সকলেরও ভালো লেগেছ। তখন তো ওর বিয়ে ঠিক ছিলো।এখন না’কি ভেঙে গেছে। আগে এমনটা হলে আমিই তোমাকে ওর সাথে বিয়ে করতে বলতাম।”
অভ্র সেখানেই থেমে যায়, “আপনি আমাকে সুরভির সাথে বিয়ে করতে বলতেন? ওর সাথে বিয়ে করলে ফান্ডিং দিতেন আপনি?”
“যা হবার নয় তা জিজ্ঞেস করছ কেন?”
“মানে আপনি দিতেন তাইতো?”
“হ্যাঁ আমাদের তো তোমাকে বিয়ে করার থেকে মতলব কেবল।”
“দাদাজান আপনি রুমে যেয়ে বসেন আমি এখনই আসছি।”
“কোথায় যাচ্ছো?”
“আসছি। কিছু মিনিটেই আসছি।”
অভ্র দ্রুত যায় সভ্যর রুমের দিকে। সুরভি সেখানেই ইনারার সাথে দেখা করে তার শেরোয়ানি আনতে গেছে। রুমে যেয়ে দেখে সেখানে আর কেউ নেই। সুরভি আলমিরা থেকে তার শেরোয়ানি বের করছে। তাকে একা দেখে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় অভ্র।

হঠাৎ শব্দ শুনে সুরভি তাকায় দরজার দিকে। অভ্রকে কিভাবে দরজা বন্ধ করতে দেখে সে আঁ*তকে উঠে, “কী করছেন আপনি? দরজা লাগাচ্ছেন কেন?”
“তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
“কথা থাকলে কথা বলবেন কিন্তু দরজা লাগানোর কি দরকার?”
“কারণ তুমি কম বুঝো। না বুঝে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেও।”
“আপনি দরজা খুলিন, নাহলে আমি আসলে চিল্লাবো।”
সে চিৎকার করতে চিলেই অভ্র তার কাছে এসে তার চুপ চেপে ধরে।
সুরভি অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।তার পিঠে হাত অনুভব করে অভ্রর। কিন্তু তার খুব অস্বস্তি লাগছে। ভয়ে তার জান গলায় আটকে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় অভ্রর দিকে। চোখে চোখ পড়ে। হয় মিষ্টি নয়নবন্ধন, “দেখো লক্ষ্মী মেয়ের মতো আমার কথা চুপচাপ শুনো। তারপর যা বলার বলবে। সুরভি, আমাকে বিয়ে করবে তুমি?”

চলবে….

অনুভূতির খাঁচা
পর্ব-১৪
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

ভয়ে তার জান গলায় আটকে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় অভ্রর দিকে। চোখে চোখ পড়ে। হয় মিষ্টি নয়নবন্ধন, “দেখো লক্ষ্মী মেয়ের মতো আমার কথা চুপচাপ শুনো। তারপর যা বলার বলবে। সুরভি, আমাকে বিয়ে করবে তুমি?”

কথাগুলো শুনে কিছু সময়ের জন্য সুরভি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে অভ্রর দিকে। সে কী বাজে এক স্বপ্ন দেখছে? না’কি অভ্র টিটকারি করছে তার সাথে? এইটা কী রসিকতার বিষয়? সে রেগেমেগে অভ্রর হাত ধরে তার মুখ থেকে সরায়,
“আপনার মাথায় সমস্যা হয়েছে বুঝলেন? মশকরা হলেও, এমন বাজে মশকরা করার সময় না এখন। কিছু মুহূর্ত পরই আপনার এনগেজমেন্ট। আর আমার সাথে এসেছেন ফাজলামো করতে?”
বলে সুরভি বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে সেখান থেকে চলে যেতে নেয় অভ্রর পাশ কাটিয়ে। আর অভ্র তার বাহু ধরে নেয়। সুরভির বিরক্তির সীমা বাড়ে, শেষ পর্যায়ে চলে যায়, “কী চাই আপনার?”
“আজ আমার সাথে এনগেজমেনন্টটা করো, আমি সিরিয়াসলি বলছি।”
“আপনি পাগল? মাথা খারাপ আপনার? অন্য এক মেয়ের সাথে আপনার এনগেজমেন্ট হতে যাচ্ছে আজ আর আপনি আমাকে বলছেন যেন আমি…”
“হ্যাঁ তুমি। আমি তোমার সাথে এনগেজমেন্ট করতে চাই।”
“কিন্তু কেন?”
“এমনিতেই।”
“এমনিতেই মানে কী?” সুরভি এই লোকটার ভাবসাব দেখে অবাক না হয়ে পারে না।

“মানে দাদাজান বলল তারা চাইছিল তোমার সাথে আমার বিয়ে হোক। কিন্তু তোমার বিয়ে অন্য ছেলের সাথে ফিক্সড ছিলো তখন। এখন নেই।”
বলে অভ্র তার বাহু ছেড়ে যেয়ে বসে বিছানাতে। পা’য়ের উপর পা তুলে। ছোট এক নিশ্বাস ফেলে আবারও তাকাল সুরভির দিকে। ভারী বেখেয়ালি কন্ঠে বলল,
“দেখো এক ময়দানে দুই তলোয়ার থাকলে লড়াই তো হবেই। ওর বুদ্ধি অনেক, সাথে ক্ষমতাও আছে তাই বিয়ের পর আমি ওকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।”
তার ভাবসাব দেখে হতভম্ব হয়ে যায় সুরভি,
“মানে আমি গাঁধা?”
“ভালোই হলো নিজেই তো নিজের ব্যাপারে জানো। আমার তাহলে আর প্রশংসা করার দরকার নেই।”
ক্রোধে চোখ দিয়ে অগ্নিশিখা বের হবার উপক্রম হলো সুরভির,
“আপনি একটা শয়তান। না, আপনাকে শয়তান বললে শয়তানেরও ইনসাল্ট হবে। আপনার সাথে বিয়ে করব আমি? অসম্ভব। আমি মরে গেলেও আপনার মতো ব্যক্তির সাথে বিয়ে করব না।”
“উফফ… এত প্রশংসা হজম হবে আমার?” সে উঠে সুরভির সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। তার দৃষ্টি কেমন শীতল। সে এক আঙুল দিয়ে সুরভির কপালের চুল সরাতে চাইলেই মেয়েটি পিছে সরে যায়।
তাচ্ছিল্য হাসে অভ্র। বলে,
“ঘন্টাখানিকের মাঝে আমার পরিবার তোমার সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব দিবে। আর তুমি হ্যাঁ বলবে।”
“কল্পনা করুন কেবল।”
“আহা, কল্পনা তুমি করো যদি তোমার এক বেয়াদবিতে আমি তোমাকে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে মাফ চাওয়াতে পারি, তাহলে আমার কথা না মানলে কি করতে পাড়বো? ভালো মেয়ের মতো হ্যাঁ বলে দিও কেমন?”
অভ্র সুরভির গাল টেনে হুমকির সুরে বলে।

সুরভি চটে উঠে। রাগে দাঁত কিড়মিড়য়ে বলে,
“শুনে নিন, আমার বাবার কাছে তার ছেলেমেয়ে সবচেয়ে দামী। পৃথিবীর সবকিছু একদিকে আর তার ছেলেমেয়ে আরেকদিকে। তাই আপনার আগের খেলা এখানে চলবে না। আপনার কী মনে হয় বিয়ে পুতুল খেলা? এটা সারাজীবনের বন্ধন। বাবা যদি জানে আমি তার জন্য আমার সারা জীবন নষ্ট করছি সে এমনিতেই মরে যাবে। তাই দয়া করে আমাকে মাফ করুন।”

অভ্র বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে,
“আমি কবে বললাম বিয়ে করতে? বলেছি বাগদানের কথা। সিম্পল। আমি দাদাজান থেকে আমার মতলবের কাজটা বের করা পর্যন্ত আমার সাথে থাকো। কাজ শেষে তুমি তোমার রাস্তায়, আর আমি আমার।”
“এতে আমার কোনো লাভ নেই। তাই মাফ করবেন।”
সুরভি যেতে নিলে আবারও অভ্র তার সামনে এসে দাঁড়ায়,
“কে বলেছে তোমার মতলব নেই? তোমার পরিবারের জন্য অনেক ভালো সুযোগ আসতে পারে। তোমার সম্পর্ক ভাঙার পর নিশ্চয়ই তোমার পরিবার ছেলে খুঁজবে। আর আমি নিশ্চিত তুমি এখন বিয়ের জন্য মোটেও রেডি না। এই নাটকে অন্তত কিছু বছর বিয়ে এড়াতে পারবে। এছাড়া তুমি তোমার জব ফিরে পাবে। আরও উঁচু পদবিতে যেতে পারবে। এখন এটা বলো না আহনাফের উপর তুমি কোনো প্রতিশোধ নিতে চাও না।”
সুরভি আমতা-আমতা করে বলল,
“আমার এমন কোনো ভাবনা নেই।”
“ওহ সুইটহার্ট তুমি মিথ্যাও বলতে পারো না। হাউ সুইট!”
সুরভি বিরক্তি নিয়ে তাকায় অভ্রর দিকে। কিন্তু আবার চিন্তায় পড়ল। প্রস্তাবটা নিতান্ত খারাপ না। গভীর ভাবনায় ডুবল।
অভ্র তার দিকে একটুখানি ঝুঁকে আরও বলতে থাকল,
“ভাবো…ভাবো, এই সুযোগ আর পাবে না।”
“না, না এইটা সম্ভব না। ইনারা জানলে আমাকে খুন করে ফেলবে।” প্রায় চিৎকার করে উঠে সুরভি।
অভ্র তার বুকে হাত রেখে বলে,
“এই মেয়ে আস্তে। এভাবে কেউ চিৎকার করে? আমার তো হার্টে মিনি আট্যাক আসতো এখনই। আর ইনারা জানবে না এই গ্যারান্টি আমার। আমার কথায় বিশ্বাস রাখো।”
“হ্যাঁ আপনার কূটনামি বুদ্ধির উপর আমার ভরসা তো আছে। কিন্তু না…”
“আবার কী হলো?” বিরক্তিবোধটা বাড়ে অভ্রর।
“মায়ার কী হবে?”
“ও আমার কাছে এক শর্তের বিনিময়ে বিয়ে করতো। আমি বিয়ে ছাড়া ওর শর্ত পূরণ করে দিব। এতে ওরই লাভ। তুমি ওর উপকারই করছ।”
“উপকার তো করছি। আপনার মতো মানুষের সাথে বিয়ে না হলে তো ওর জীবনটাই বেঁচে যাবে।”
“এই মেয়ে, এর মানে কী?”
“আচ্ছা আমি রাজি। আপনার থেকে পিছু ছাড়াতে পারব এর থেকে বড় কিছু হয় না। আর আমার পদোন্নতির প্রয়োজন নেই। আমাকে জবটা ফিরিয়ে দিলেই হবে। কিন্তু আমারও এক শর্ত আছে, আমাদের বিয়েটা হবে না কোনোমতে মাথায় থাকে যেন। পৃথিবীর শেষ পুরুষ হলেও আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না।”
“উফফ জান আমি তো মরে যাচ্ছি তোমাকে বিয়ে করার জন্য।” অভ্র সুরভির দিকে খানিকটা ঝুঁকে বলল।
সুরভি পিছিয়ে যায়। মুখ বানিয়ে বলে,
“দ্বিতীয় শর্ত, আমার কাছে আসবেন না।”
“তোমার কাছে আসার জন্য আমি যেন মরে যাচ্ছি। তোমার সাথে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা আমার নেই। আমি যেয়ে বাহিরের দিকটা সামলাই।” বলেই অভ্র চলে যায়।
সুরভি তার যাওয়া দেখেও মুখ বানায়। বলে, “এভাবে বলল যেন আমিই ডেকেছি। আচ্ছা আমি এখানে কেন এসেছিলাম যেন? যাহ এই রাক্ষসটার চক্করে ভুলেই গেছি।”
.
.
অনুষ্ঠানে মেহমানদের ভীড় জমতে শুরু করে। মায়ার পরিবারও আসে সেখানে। সকলে তাদের স্বাগত করার জন্য এগিয়ে আসে। এই প্রথম মায়া সবাইকে দেখছে। এমনকি দাদাজান ছাড়া কেউ তাকেও সামনা-সামনি দেখে নি। ছবিতে দেখে এত খুশি না হলেও সামনা-সামনি মায়াকে দেখে দাদীজানের ভাল্লাগে। দেখতে বেশ সুন্দরী। ইনারার মতো ওর মুখেও একটু পুতুল পুতুল ভাব আছে। তবুও কেমন তীক্ষ্ণ ধারালো প্রভাবও বিদ্যমান। মায়া সালাম দিলে সে তার থুতনিতে হাত রেখে বলে, “মাশা-আল্লাহ দেখতে তো ভীষণ সুন্দর তুমি। একটু হাসো, আরও সুন্দর লাগবে।”
সভ্যর মা’ও কথায় সম্মতি দিলেন। হাসি হাসি মুখে বললেন,
“আসলেই হাসলে তোমার এই সৌন্দর্য হাজারোগুণ বেড়ে যাবে।”
এরমাঝে কথা ঢুকালেন ফুপি,
“এত প্রশংসার কী আছে? মেকাপের গোডাউন মেখে আসলে সুন্দর তো লাগবেই।”
কথাটা শুনে মায়া আড়চোখে তাকাল ফুপির দিকে। কী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি! দৃষ্টি দেখেও কেমন ভয় করতে লাগল ফুপির। সে এক ঢোক গিলে বলল,
“এ…এভাবে কী দেখছ?”
“দেখছি আর ভাবছি যে আপনিও তো মেকাপের গোডাউন মেখে এসেছেন তাও সুন্দর লাগছে না কেন? ওহ হ্যাঁ চেহেরাও সুন্দর থাকা লাগে।”
কথাটা শুনে থতমত খেয়ে গেল ফুপি। সে হতভম্ব হয়ে চিকনসুরে বলে, “কী বেয়াদব মেয়ে দেখেছ? এখনও বিয়ে হয় নি। এনগেজমেন্টের জন্য এসে ছেলেপক্ষের লোকেদের অপমান করছে।”
“যে যেমন ভাষা বুঝে আমি তার সাথে সে ভাষাতেই কথা বলি।”
মায়ার বাবা এবার ধমক দিলো মেয়েকে,
“মায়া চুপ করো। উনি তোমার বড়। এখনই ক্ষমা চাও।”
মায়া তাকেও তোয়াক্কা করল না। সে বলল, “আমার একটা জরুরি ফোন কল করতে হবে। আমি আসি।”

ফুপি আবারও সভ্যর মা’কে বলল, “ভাবি একটা থেকে একটা বউ পেয়েছেন বটে। দুই বউয়ের মুখে যা আসে তাই বলে। একজনও বড়দের সম্মান কীভাবে করে জানেই না।”
“আহা ফুপি আপনি কত ভালোবাসেন আমাকে। আমি অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও আমাকে মনে করছেন। হাউ সুইট।”
ফুপি পিছু ফিরে দেখে ইনারা আসছে। তিনি বিরক্ত হয়ে বলে, “হ্যাঁ মনে করব না। তোমার আরেক কপি আসছে তো এঘরে। দুইজনই একরকম। এ বাড়িতে আমার আর আসা লাগবে না। আসলে তো দুইজনে মিলে আমার চব্বিশটা বাজিয়ে দিবে।”

মায়া ফোনে নাম্বার ডায়াল করতে করতে যাচ্ছিল। পিছু না ফিরেই সে বলল, “একই রক্ত। এক তো হবোই।”
কথাটা শুনে হকচকিয়ে যায় ইনারা। অবাক হয়ে তাকায় মায়ার দিকে।
দাদাজান বলে, “ইনারা তোমাকে জানাতাম। তোমার বাবার চাচাতো ভাই-ই হলো মায়ার বাবা। আমিও দুইদিন আগেই জেনেছি। ভাবলাম একবারে পরিচয় করাব।”
কথাটা শুনে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে ইনারার। সে এগিয়ে এগিয়ে যেয়ে দাঁড়ায় মায়ার বাবার কাছে। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি আপনি আমার আত্নীয়? আমি কতখুশি বুঝাতে পারব না। আমি আমার কোনো আত্নীয়র সাথে আগে দেখা করিনি তো। আর আপনি তো আমার চাচা হন। তাই না?”
মায়ার বাবার মুখে হয়তো এমন হাসি ছিলো না। মনে হচ্ছিল জোর করে তার সাথে কথাটা বলছে, “হুম, দেখা হয়ে ভালো লাগল।”
এতটুকুই। তারপর সে দাদাজানের দিকে ফিরে তাকালেন, “আংকেল আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো বলতে পারি?”
“অবশ্যই।”
তিনি চলে গেলেন দাদাজানের সাথে। পিছনে চলল মায়ার ভাইও। মায়ার মা ইনারার হাত ধরে বলল, “তুমি উনার কথায় খারাপ মনে করো না। আসলে অনেক বছর পূর্ব হতেই তুই পরিবারের মাঝে ঝগড়া বিবাদ চলছে। একে অপরের খোঁজও নেয় না। আমরা জানতামও না যে ইমতিয়াজ ভাইয়ের এত সুন্দর একটা মেয়ে আছে।”
একথায় ইনারা একটু হাসে। মায়ার মা’য়ের কথা শুনে স্বস্তি পায়। তার পাশ থেকে মিতা লাফ দিয়ে সামনে এসে বলে, “আরে মা শুধু সুন্দর। উফফ ইনারা আপুর মতো সুন্দর মেয়ে জীবনে দেখেছ তুমি। কি চোখ, কি হাসি, কি সুন্দর দেখতে! আর কী এক্টিং করে। উফফ আল্লাহ আমার মন ঘায়েল করে দেয়।”
সে দৌড়ে এসে ইনারার সামনে দাঁড়ায়। বলে, “এজন্যই তো সে প্রথম ছবি থেকে আমি আপনার বিগ ফ্যান। আমি না আপনার নামে দুইটা ফ্যানপেইজও চালাই। একটা কেবল আপনার। আরেকটা আপনার এবং সভ্য। সভ্রা নামে।”
ইনারা হাসে, “সভ্রা… ইন্টারেস্টিং। থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। ফলো তো করতে হবে। সভ্যকে দিয়েও ফলো করাব।”
খুশি নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যর্থ চেষ্টায় জুটেছে মিতা। খুশি ধরতে না পেরে লাফিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমি কি আপনার সাথে হাত মিলাতে পারি। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন।”
সে হাত বাড়ালে ইনারা তা এড়িয়ে যায়। সোজা জড়িয়ে ধরে বলে, “তোমার মতো কিউট ছোট বোন পাওয়াও আমার অনেক আগের স্বপ্ন।”
.
.
ফোনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল মায়া। কাউকে কল করছিল বোধহয়। এ কারণেই তার দৃষ্টি সামনের দিকে ছিলো না। এ কারণেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায় সে। চমকে উঠে পিছিয়ে বলে, “আই এম সো সরি…”
সামনে তাকিয়ে দেখতে পায় ওয়াহেদকে। তাকে দেখতে মায়ার চোখে মুখে বিরক্তি ভেসে ওঠে। এই পৃথিবীতে সে শেষ মানুষ হলেও তার চেহেরা দেখতে চায় না। বিষয়টা অদ্ভুত। একসময় তাকে দেখার জন্য, যার সাথে সময় কাটানোর জন্য সে সুযোগ খুঁজতো। আজ তার থেকে দূরে থাকার বাহানা খুঁজে।
সময় কী অদ্ভুত…. মানুষকে বদলে দেয়, সাথে সম্পর্কও।

মায়া চুপচাপ পাশ কাটিয়ে যেতে নেয়। কিন্তু ওয়াহেদ কী তাকে এত সহজে যেতে দিবে? সে দাঁড়ায় মায়ার সামনে। বলে,
“নিজের ধ্যান রাখতে পারিস না? ফোনে তাকিয়ে হাঁটার ফলে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে?”
মায়া তার কথা এড়িয়ে যায়। উত্তর দেয় না। উওর না পাওয়া সত্ত্বেও ওয়াহিদ আবারও বলে, “আমি জানি মিষ্টি তুই আমার মুখও দেখতে চাস না। কিন্তু আমি আবারও বলছি অভ্রর সাথে তোর বিয়ে করাটা বোকামি। তোকে ওর সাথে বিয়ে দিচ্ছে কোম্পানির উন্নতির জন্য। নিজেদের স্বার্থপরতার জন্য তোকে ব্যবহার করছে।”
মায়া এবার তাকায় তার দিকে। হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে বলে,
“এতে তো আপনারও লাভ। কোম্পানির লাভ মানে আপনার লাভ। তাহলে আপনি আমাকে মানা করছেন কেন?”
“তুই জানিস মিষ্টি সবকিছুর আগে আমি তোকে নিয়ে ভাবি। হয়তো আমি কখনো তোকে ভালোবাসতে পারিনি। কিন্তু ভালোবাসা ছাড়াও অনেক সম্পর্ক হয়। তুই আমার জন্য সবচেয়ে বেশি স্পেশাল।”
তাচ্ছিল্য হাসে মায়া,
“এজন্য সেদিন যখন সবাই তোর জন্য আমার সম্মান নিয়ে কথা তুলেছিল তুই চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিলি? দোষ তোর, ভালোবাসা তোর, আমার সাথে তো ভুল হয়েছিল তাহলে সব কষ্ট আমার ভাগে এসে কেন পড়লো? আমি তো সম্পর্কে লয়াল ছিলাম, ধোঁকা দিয়েছিলি তুই ও দিয়া, আমার দুই প্রিয় বন্ধু তাহলে সব অপমান আমার কেন সহ্য করতে হলো?”
“মিষ্টি আমি জানি আমি ভুল করেছি, কিন্তু আমাকে কী একবার মাফ করা যায় না? আমরা বন্ধু হতে পারি না? ”
“না। আমরা কখনো বন্ধু হতে পারি না, আর আমি কখনো তোকে শত্রু ভাবতে পারি না। আমরা অচেনা হয়ে থাকতে পারি। হাজারো স্মৃতিসহ অচেনা দুটো মানুষ। নাউ প্লিজ এক্সকিউজ মি, আমার বন্ধুরা আসবে। তাদের নিতে যাচ্ছি।”
“আর আমি? আমি তোর বন্ধু না? আমি কি তোর কিছুই হই না?”
“বন্ধুত্ব মানেটাই তুই জানিস না। না তুই আমার বন্ধুত্বের যোগ্য আর না….ভালোবাসার। দুই সম্পর্কই একতরফা ছিলো।”
মায়া একনজর তার দিকে তাকাল, তারপর তাকে এড়িয়ে সামনে এগোল। দুই কদম এগোতেই তার সামনে দাঁড়ানো জোহান। সে জোরপূর্বক হেসে বলে, “তোমার মাথা গরম মনে হচ্ছে। কোল্ডড্রিংক লাগবে?”
তাকে দেখে মায়ার মাথা আরও গরম হয়ে যায়। সে দাঁতে দাঁত ঘেঁষে বলে,
“সে কোল্ডড্রিংকে চুবিয়ে চুবিয়ে তোমাকে ঠান্ডা করে দিব।”
“আরে তোমার ঝগড়া হলো তোমার এক্স ফিয়োন্সের সাথে। ওরসাথে এত শান্ত গলায় কথা বললে, আর আমার উপর চড়তেছ কেন?”
“তো তুমি এলাকার কিছু কান লাগানো আন্টিদের মতো আমার সব কথায় কান লাগাও কেন?”
“আরে যাও যাও আমার তোমার লাইফে দুই পয়সার ইন্টারেস্ট নেই।”
“ষ্টুপিড।”
মায়া বিরক্ত হয়ে যাবার পর জোহান বিড়বিড় করে বলে, “রাক্ষুসি।”
সে সামনে তাকিয়ে দেখে ওয়াহিদও তার দিকে কক্ষাপাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে বিড়বিড় করে বলে, “ভাই আমি আবার কী করলাম? এত বিখ্যাত গায়ক আমি তাও কেউ ইজ্জত দেয় না।”

ইনারা মিতার সাথে সেদিকেই আসছিল। তাকে দেখে জোহান খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। একবার ভাবে এখান থেকেই চলে যাবে। পরে আবার কি ভেবে গেল না। ইনারা সামনে থেকে এসে তাকে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছো জোহান?”
“ভালোই। শুনলাম তুমি না’কি অনেক বড় হিস্টোরিকাল প্রজেক্ট এর জন্য সাইন করেছ তাও মেইন লিডে। যাস্ট ওয়াও। এত কম সময়ে এত সাফল্যতা অনেক বড় ব্যাপার।”
“বাট আমি কিন্তু তোমার গানের অপেক্ষা করছি। যত যাই হোক, তুমি কিন্তু আমার সর্বপ্রথম ফেভারিট গায়ক ছিলে। একথা আবার সভ্যকে বলো না কিছু। জ্বলে-ভুনে ছাই হয়ে যাবে।”
দু’জনেই হাসে। পরিস্থিতি স্বাভাবিকই থাকে। ইনারা মিতাকে পরিচয় করিয়ে বলে, “ও আমার চাচাতো বোন। তোমাদের পঞ্চসুরের না’কি বিরাট বড় ভক্ত। তোমাকে দেখে পরিচয় করাতে নিয়ে আসলাম।”
মিতা জোহানের দিকে তাকিয়ে একনিশ্বাসে বলে,
“আরে আমি তো বাচ্চাকাল থেকে আপনাদের গান শুনে বড় হয়েছি। বাচ্চাকাল বলতে এই বারো তেরোবছর। আপনি আর সভ্য তো আমার ফেভারিট। বলতে গেলে চাইল্ডহুড ক্রাশ। এখন সভ্য তো দুলাভাই হয়ে গেল। তার উপর লাইন পারলে পাপ হবে। আপনার উপর কি আমি লাইন মারতে পারি।”
জোহান হাসে, “উফফ এত সুন্দর মতো আর লাইন মারার কথা আর কেউ কখনো বলে নি।”
সে একবার ইনারার দিকে তাকিয়ে তার কথা পরিবর্তন করে বলে, “এই কয়েকবছরে কেউ বলে নি। কয়েকবছর আগে একজন বলেছিল।”
ইনারা কথাটা ধরতে পেরে নিজের বাচ্চামোর কথা ভেবেই লজ্জা পায়। তখন কতটা আজেবাজে বকতো সে।

মিতা আবারও বলে, “জানেন আমার বোন ও আমি সারাদিন কেবল আপনাদের গান শুনতাম। আর আমার বোন তো আপনাদের গান থেকে নতুন লিরিক্স বানিয়ে গাইতোও। তার গানের গলা চমৎকার।”
“তাহলে তো তার সাথে দেখা করতে হয়। আজ এসেছে?”
“সে না আসলে কীভাবে হয়? তারই তো এনগেজমেন্ট।”
“কিন্তু এনগেজমেন্ট তো অভ্র এবং মায়ার। ওয়েট, ওই রাক্ষুসি তোমার বোন। অসম্ভব।” বলে সে জিহ্বায় কামড় দিলো, “ওহ সরি, ও তোমার বোন।”
“আরে সরি কেন? ঠিকই বলছেন। আপি আজকাল যা মুখ করে রাখে রাক্ষুসির নানির মতো লাগে।”
“তাই না বলো? আই মিন ও তোমার আর ইনারার বোন কীভাবে হতে পারে। কোথায় তোমারা এত কিউট, সুইট, মিষ্টি করে কথা বলো আর কোথায় ও সারাটাক্ষন মুখটা এমন করে রাখে যেন সামনে কাওকে পেলেই চিবিয়ে খাবে।”

ইনারা দুইজনের কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারে না। সে এখনো মায়ার সাথে কথা বলে নি। তাই খানিকটা অবাকই হয়। মানে তাকে দেখেই বুঝা যায় যে একটু সিরিয়াস টাইপের কিন্তু এত ভয়ানক হবে বুঝতে পারে নি।

মিতা তার ধ্যান ভঙ্গ করে একটি ছেলে-মেয়েকে দেখিয়ে বলে, “সব তাদের দোষ। অতীতে আমার আপুর মতো হাসি-খুশি মেয়ে আর একটাও ছিলো না। সবচেয়ে খারাপ থেকে খারাপ পরিস্থিতিতেও আমার আপির মুখ থেকে হাসি যেতো না। আমার সে আপির মুখে আজকাল হাসিই থাকে না। এদের দুইজনের জন্য আমার আপি কত কি না করেছে আর তারাই আমার আপিকে ধোঁকা দিলো। বিশেষ করে ওয়াহিদ ভাইয়া। তাকে নিজের জীবন থেকে বেশি ভালোবাসতো আপি আর সেই….সে আমার আপুর জীবন শেষ করে দিয়েছে।”
ইনারা আর জোহানের ধ্যান তাদের দিকেই ছিলো। জোহানের আসলেই খারাপ লাগে মায়ার জন্য। তার সকালের রাগটা ভেঙে যায়। তবে তার ধ্যান ভাঙে মিতার শব্দ করে কান্না করে করে উঠায়। এমন ভ্যাঁ ভ্যাঁ শব্দ শুনায় সে ভয় পেয়ে যায়। বাচ্চাদের মিতো কান্না কাটি।
“আরে তুমি কাঁদছ কেন?”
জোহান ও ইনারা দুইজনই তাকে থামানোর অপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু সে থামে না। এরই মাঝে দুইজনে একে অপরের দিকে তাকায়। এই মুহূর্তে তাদের হাসি আসা উচিত না কিন্তু এমন কান্না শুনে নিজেকে থামাতেও পারে না। ফিক করে হেসে দেয়।
.
.
মায়া ফোনে কথা বলা শেষ হলে পুনরায় তার মা’য়ের কাছে যাচ্ছিল। এমন সময় কেউ তার হাত ধরে নেয়। সে পিছনে তাকিয়ে দেখে অভ্র। সে চোখমুখ কুঁচকে বলে, “এটা কোন ধরনের বেয়াদবি?”
অভ্র তার কানের এয়ারপড খুলে বলে, ” কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোমায়, তুমি হেঁটেই যাচ্ছো। কথা আছে তোমার সাথে।”
“কী কথা?”
“এখানে বলা যাবে না। একটু আসো আমার সাথে।”

অভ্র মায়াকে নিয়ে বাগানের পিছনের দিকে যায়। সে বিভ্রান্তে ছিলো এত বড় কথা কীভাবে বলবে সে? একটা মেয়ের জন্য বিয়ের ভাঙার কথাটা অনেক বড়। কে জানে মায়ার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?
মায়া বিরক্তির স্বরে বলল, “এখন বলবেন কেন ডেকেছেন? আমার নষ্ট করার মতো এত সময় নেই।”
অভ্র আমতা-আমতা করে বলে, “আই নো এটা অনেক বড় কথা। তোমার কষ্ট লাগলে আমি অগ্রিম সরি বলছি। কিন্তু এটা আমার জন্য অনেক জরুরী।”
“আপনার কথার জালে জনগণকে ভোটের সময় ভাসিয়েন। আমার এতো পেঁচানো কথা পছন্দ না। যা বলার সোজাসাপটা বলুন।”
অভ্র গভীর নিশ্বাস ফেলে বলে, “আমি এনগেজমেন্টটা করতে চাচ্ছি না।”
কথাটা শুনে কপাল কুঁচকে যায় মায়ার। সে ক্ষেপে যাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “ফাজলামো করছেন? বাহিরে এত মানুষ এবং আমাদের বিজনেস ডিলও আজ হবে। না এগোতে হলে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বললেন কেন?”
“আসলে আমি অন্য কাওকে পছন্দ করি। প্লিজ মায়া আমার ব্যাপারটা বুঝো।”
মায়ার সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়, “এতদিন তো আপনার কেবল নিজের টাকার থেক মতলব ছিলো। এখন কী আকাশ থেকে ভালোলাগাটা টপকে পড়ল?”
“আসলে হয়েছে কী….” অভ্র অন্যদিকে ফিরে। ভাবে কী বলবে? অন্যকোনো মেয়ে হলে তাও বুঝানো যেত। এই মেয়ে যে চতুর তাকে বোকা বানানোটা মুশকিল বটে। সে রাজি না হলে তার সব ভাবনায় পানি ঢেলে যাবে।
অভ্র কিছুটা ভেবে বলে, “আমি অস্ট্রেলিয়া থাকতেই ওর সাথে যোগাযোগ হয়। কথা হয়। পছন্দ করি। কিন্তু হঠাৎ করে একটা ঘটনার পর সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ওকে হারিয়ে ফেলি। অনেক বছর পর ওকে দেখতে পেয়েছি তাই হারাতে চাই না।”
অভ্র কথাগুলো বলেও চিন্তায় পড়ে। মায়ার মন তো আর কোনো স্বাভাবিক মেয়ের মতো নরম নয়। ওকে যতটা দেখেছে, বুঝেছে তাতে এই ভালোলাগা, ভালোবাসাতে মায়ার অন্তত কিছু আসে যায় না। আর মায়ার ইচ্ছা ছাড়া সে এই বিয়ে ভাঙতেও পারবে না। সে নিজের বিয়েটা ভাঙতে গেলে সে নিজের লক্ষ্যে কখনো পৌঁছাতে পাড়বে না।

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]