অনুভূতির খাঁচা পর্ব-২৫+২৬

0
287

অনুভূতির খাঁচা
পর্ব-২৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“তুমি থামবে? কোথায় যাচ্ছো বলো তো?” মায়ার মেজাজ এই মুহূর্তে খিটখিটে মনেই হচ্ছে।
জোহানেরও মন মেজাজ তখন বিশেষ ভালো ছিলো না। সে মায়ার হাত ছেড়ে রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করে, “ওই ছেলে তোমাকে খারাপভাবে ছুঁয়েছিল, তুমি তখন সহ্য করলে কেন? তোমার প্লান বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো?”
“অফকোর্স, এটা একটা মেয়ের জীবনের প্রশ্ন। ওই ছেলের সাথে মালার বিয়ে হয়ে গেলে কি হতো তুমি বুঝো? আমি ওর কান্ডের শিক্ষা ওকে যথাসময়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিলাম। দিয়েছিও। কিন্তু এখানে তোমার পড়ার দরকার কি ছিলো?”
“তুমি এসে না থামালে আরও কয়টা দিতাম।”
“তুলতে যা মন চায় তাই করতে পারো না। তুমি একজন সেলিব্রিটি, তোমাকে সেভাবেই থাকতে হবে।”
“ওহ তুমি চিন্তায় আছো এই নিউজ আউট হলে তোমার কোম্পানির লস হবে?”
“তুমি…. ইউ নো হোয়াট। যা ইচ্ছা করো। আমি তোমাকে বোঝাতে পাড়ব না।”
সে যেতে নিলে জোহান তার কণুই ধরে তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। রাগ রাগ ভাব নিয়ে বলে, “না তুমি বুঝাও। কী বুঝাতে চাও বুঝাও।”
“এত বুঝ থাকলে কী এই কান্ড ঘটাতে তুমি? তুমি বললে গান তোমার ভালোবাসা। সেদিন এলবামের কথা শুনে তোমার চোখে মুখে যে খুশি দেখেছি তা আর কখনো দেখিনি। এমনিতেই তোমার আশেপাশে এত খারাপ খবর জড়িয়ে আছে, এরমধ্যে আরেকটা ব্যাড ইমেজ কেন ক্রিয়েট করতে চাও তুমি? আই নো তোমার শুনে মেজাজ খারাপ হয়েছিল কিন্তু আমি তো ওকে শাস্তি দিয়েছিলামই। এই নিউজ যদি আউট হয় তাহলে কয়জন তোমার দিক বুঝবে বলোতো?”
“তুমি…তুমি আমার কথা ভাবছিলে?” জোহানের রাগটা গলে যায়।
মায়া জোহানের থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে, “বাদ দেও।এমনিতেই ঝামেলা ক্রিয়েট করেছ।”

সে কথা না বাড়িয়ে রুমে এসে পড়ে। তন্নি তাকে দেখে জিজ্ঞেস করে, “তো দুইজনে কোথায় সময় কাটালি? কেউ একজন কারও জন্য প্রটেক্টিভ হচ্ছিল।”
“আর ওটা মজার বিষয় না।” মায়া তার গয়না খুলতে খুলতে বলে।
“তুই কী ওর উপর রাগ দেখিয়েছিস? ও যাস্ট তোকে প্রটেক্ট করছিল।”
“আর নিজের ক্যারিয়ারকে নষ্ট করছিল। ভবিষ্যতের কথা না ভেবে হঠাৎ একশন নিলেই হয় না।”
“মায়া ও তোর কেয়ার করছিল আর তুই…” মায়া তার কথা কেটে বলে, “দেখ তুই এসব বুঝবি না। তুই এই ইন্ডাস্ট্রিতে নেই। আমি জানি, ও এমনিতেই অনেক খবরের সাথে জড়িত। বেশিরভাগ খারাপ। ক’দিন আগে ওকে কোম্পানি থেকে বের করার জন্য বোর্ড মিটিং বসেছিলো। আমি কীভাবে ওকে রেখেছি আমি জানি। পজিটিভ পি-আর করাতে হয়েছে যেন আগের খবর সবাই ভুলে যায়। এখন এই খবর বের হলে কী হবে তুই জানিস? ওর দুইমাস পর এলবাম রিলিজ হবার এনাউন্সমেন্ট করাও হয়েছে। এবার ওর কামব্যাকের আগে কোনো ঝামেলা হলে ওর ক্যারিয়ার এখানে শেষও হতে পারে।”
তন্নি কথাগুলো শুনে বুঝতে পারে না ঠিক কি বলবে। সে আমতা-আমতা করে বলে, “আমি তো এসব বুঝি না, তাই বুঝাতে চাইছিলাম। তুই রিলেক্স কর, এমন কিছু হবে না আমি শিউর।”
“আমার মাথা ব্যাথা করছে। আমি রেস্ট নিতে যাচ্ছি।”
“আমি আশরাফকে বলে কফি আনাই?”
“লাগবে না।”
.
.
সুরভি ঘুমিয়ে ছিলো। হঠাৎ ফোনে ঘুম ভাঙে তার। সে ঘুমঘুম চোখে দেখে তাইফা কল দিয়েছে। সে কল ধরে ঘুমন্ত কন্ঠে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম, এতরাতে কল দিচ্ছিস সব ঠিক আছে তো?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। দোস্ত জানিস কী হয়েছে?”
“তুই না বললে আমি কীভাবে জানব?”
“তুষার স্যার কল দিয়েছিল, একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে বলল ক্যামেরাম্যানসহ তা কভার করতে। এখানে এসে কাদের দেখেছি জানিস? গতকাল তোকে যাদের ছবি দেখিয়েছিলাম তাদের মধ্যে তিনজন এক্সিডেন্ট করেছে।”
কথাটা শুনে সুরভি চমকে উঠে বসে, ” কী বলছিস?”
“আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। দুইজন ছেলে পার্টি করে আসছিল, ড্রিংকস করে গাড়ি চালানোর কারণে সামনের গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছে। আর জানিস সামনের গাড়িতে কে ছিলো? গায়ক রুপন। ওদেরই সে বন্ধু যে ওই কান্ডে জড়িত ছিলো। তাকে এখন হাস্পাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল আমরা এই ব্যাপারে কথা বললাম আজ দেখ তারা নিজের পরিণতি পেয়ে গেছে। কর্ম কাওকে ছাড় দেয় না।”
“হুম…”
“আচ্ছা দোস্ত আমি তাহলে নিউজটা কভার করে নেই। ব্যাপারটা জেনে যে খুশি লাগছিল ভাবলাম তোকে আগে জানাই।”
তাইফা কল কাটার পর সুরভি অবাক হয়ে বসে থাকে। একদিনেই কীভাবে এতকিছু ঘটতে পারে? আসলেই কি সব ভাগ্য? তার সারারাতে ঘুম আসে না। সে কেইসটা নিয়েই ভাবতে থাকে। মধ্যরাতে উঠে কেইসের ফাইলটা দেখে। ফাইল ঘাটে। নিউজ ছেড়ে ঘটনা স্থান দেখে।এতদিনে কিছু হয় নি হঠাৎ করে একরাতে কীভাবে পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই পরিণতি পেল। একদিনে হঠাৎ করে দুই বন্ধুর গাড়ি আরেক বন্ধুর গাড়িতে লেগেছে। আর এত মিডিয়াও জেনে গেল? এমনটা হয় কী করে? যে বড়লোকের ছেলেদের একটা কুকর্মের কথা কারো কানে যায় না আজ তা ন্যাশনাল টিভিতে। ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না সুরভির। এটা কেবল ভাগ্যের খেলা কিছুতেই মানতে পারছে না সে।
.
.
রাত গভীর হয়েছিল। তারপর মায়ার ঘুম আসছে না। সে এদিক থেকে ওদিক করছে কেবল। হঠাৎ এত রাতে তার ফোন বেজে ওঠে। সে দেখে, জোহানের ফোন। ফোন কেটে সাইলেন্ট মোডে দেয়। তাও তার ফোন থামে না। তন্নির ঘুম ভেঙে যাবে বলে সে বারান্দায় চলে যায়। ফোন ধরে বলে, “এতরাতে ফোন দিচ্ছো কেন?”
“সরি বলার জন্য।”
“আমি ঘুমাচ্ছি। কল দিবে না।”
“তাহলে বারান্দায় কী তোমার ভূত দাঁড়ানো?”
মায়া তার বামপাশে তাকায়, জোহান পাশের বারান্দায় দাঁড়ানো। চন্দ্রিমার মৃদু রশ্মিতে আবছা দেখা যায় তাকে। সে এককান ধরে ফোনে ‘সরি’ বলে।
মায়া বলে, “সরি বলার কিছু নেই। যেয়ে ঘুমাও।”
“তোমারও ঘুম আসছে না, তাইতো? লেকের পাশে আসো, দেখা করি। কথা আছে।”
“এইরাতে? কোনো প্রয়োজন নেই। যেয়ে ঘুমাও।”
“তুমি আসবে না’কি আমি আসবো?”
“আমি আসব না।”
“তাহলে আমি আসছি।”
জোহান তার বারান্দার বর্ডারে পা দিয়ে উঠতে নেয় আর মায়া আতঙ্কিত স্বরে বলে, “না না আমি আসছি…আমিই আসছি।”
“গুড গার্ল। আমি আগে দিয়ে যাচ্ছি, তুমি আসো।”

মায়া নিচে লেকের কাছে যেয়ে দেখে জোহান দাঁড়িয়ে আছে লেকের পাশে। সেও যেয়ে দাঁড়ায় তার পাশে। বিরক্তির সুরে জিজ্ঞেস করে, “রাত কয়টা বাজে দেখেছ? এক্ত রাতে কেউ কাওকে ডাকে?” তারপর গভীর নিশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, “কেন ডেকেছ?”
“সরি… তখন আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি।”
মায়া কিছু না হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে সামনের দিকে তাকায়। জোহান আবারও বলে,
“সে মুহূর্তে আসলেই আমি কিছু ভাবি নি। রক্ত মাথায় উঠে গিয়েছিল।”
মায়া তার দিকে মুখ ফিরিয়ে কেবল জিজ্ঞেস করে, “কেন?”
“কেন মানে? তুমি তো এখন আমার ফ্রেন্ড। তোমার অনুমতি ছাড়া এমন করবে কেন?”
মায়া কিছু না বলায় জোহান আবার জিজ্ঞেস করে, “রাগ কমেছে?”
“আমি রাগই করিনি।”
জোহান পকেট থেকে একটি চকোলেটের প্যাকেট বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “তোমার জন্য…”
মায়া চকোলেট নিয়ে বলে, “তোমাকে কে বলল এটা আমার ফেভারিট চকোলেট? আশরাফ না’কি তন্নি? আগে সবসময়ই খেতাম।”
“কেউ বলে নি। এটাই আমার কাছে ছিলো।”
মায়া চকোলেট নিজের পকেটে রেখে বলল, “কালকে খাব। আজ অনেক রাত হয়েছে। এখন কথা শেষ হয়ে রুমে চলে যাই।”
“উঁহু, কথা শেষ কিন্তু একটা কাজ অপূর্ণ হয়ে আছে।”
“কী?”
জোহান তার হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “উইড ইউ লাইক টু ডান্স?”
মায়া হাসে, “না করা পর্যন্ত বিরক্ত করা ছাড়বে না, তাইতো?”
“একদম ঠিক।”
মায়া তার হাত জোহানের হাতে রাখে। আগের মতোই তার এক হাত জোহানের কাঁধে রাখে আর অন্যহাত ধরে। জোহানও তার কোমরে হাত রেখে নিজের দিকে টান দেয়। চাঁদের মৃদু আলোয় দেখা যাচ্ছিল জোহানকে। তার চোখে চোখ এবারও বেশিক্ষণ রাখতে পারে না মায়া। তার ফর্সা গাল দুটোয় গোলাপি আভা ছড়ায়। হৃদয়ের স্পন্দন বাড়ে ধীরে ধীরে।

গান নেই। জোহান গুণগুণ করতে থাকে। সে তালেই হাল্কা দুলে তারা। জোহান জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলবে, আমি তোমার ফেভারিট গায়ক ছিলাম পঞ্চসুরে?”
“দ্বিতীয় ফেভারিট। প্রথম ছিলো সভ্য। ও তোমার থেকে স্কিলফুল।”
“তারপরও আমার উপরই ক্রাশ ছিলো।”
“তন্নি এটাও বলেছে তোমাকে?” মায়া চোখ বড় করে তাকায় তার দিকে।
জোহান হাসে। উওর ফেয়, “আশরাফ।”
“আগামীকাল ওর চুল সব ছিঁড়ে টাক্কুবেল করে দিব।”
“মানে সত্যি আমার উপর ক্রাশ ছিলো।”
“তখন ছোট ছিলাম তো টেস্ট খারাপ ছিলো।”
জোহান তাকে একবার ঘুরিয়ে আবারও আগের মতো নাচতে শুরু করে। বলে, “এখন তোমার টেস্ট কড়া হয়ে গেছে তাই আমাকে খারাপ লাগছে। এজন্যই চকোলেট দিয়েছি। নিজের টেস্টবাড ঠিক করো। আচ্ছা বিদেশে এতগুলো বছর ছিলে তখন কাওকে ভালো লাগে নি?”
“যে ছ্যাঁকা খেয়েছি প্রেম নাম শুনলেই ভয় লাগে। আমি আবার এক ভুল দুইবার করি না। তোমার কথা বলো, কয়টা প্রেম করলে জীবনে।”
“সিরিয়াস দুইটা ছিলো আর এমনি…. মনে নেই। অতীতে বড় এক গাঁধা ছিলাম তাই অনেক ভুল করেছি।”
“তো এখন বুদ্ধিমান হয়ে গেছো?”
“আমিও একটা ভুল তিনবার করি না বুঝেছ।”
মায়া তার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
জোহান তার হাসি দেখে নিজেও ঠোঁটের কোণে হাসি আঁকে। আবারও তাকে ঘুরিয়ে নিজের কাছে আনতে নিলে পাথরের উপর মায়ার পা পড়ায় নিচে পড়ে যেতে নেয়। জোহান শেষ সময়ে টান দিয়ে ধরে নেয়। এবার আগের থেকে বেশিটা কাছে এসে পড়েছিলো দুইজন। মায়ার চোখ যেয়ে পড়ে তার চোখে। ভয়ে তার নিশ্বাস আটকে গিয়েছিল। জোহান অবশ্য তা খেয়াল না করে বলে, “তোমাকে হাসলে বেশি সুন্দর লাগে।”
মায়ার বুকের ভেতর কেমন করে উঠে তার কন্ঠে। সে জোহানের বুকে হাত রেখে তাকে দূরে সরিয়ে বলে, “আমার ঘুম আসছে। অনেক রাত হয়ে গেছে। চলে যাই আসো।”
সে যেতে নিলে জোহান তার হাত ধরে নেয়। মায়া পিছনে তাকায়, “কিছু বলবে?”
জোহান কিছুটা দ্বিধাবোধ করে বলে, “গুড নাইট।”
“তুমি আসবে না?”
“আমার ঘুম আসছে না আজ। তুমি যাও, আমি কিছুক্ষণে আসছি।”
মায়া যাবার সময় আবার তার দিকে তাকিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।
.
.
সুরভি অফিসের বাহিরে এসে দেখে সেখানে অভ্রর গাড়ি দাঁড় করানো। সে ভেতরে উঁকি মেরে দেখে কিন্তু বাহির থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এই অভদ্র লোকটা আবার কেন এলো অফিসে? সে ফোন বের করে কল দিচ্ছিল অভ্রকে। কিন্তু অভ্র ধরছেই না। লিফট থেকে হয়ে কল দিচ্ছিলোই। দৃষ্টি ফোনে থাকায় হাঁটতে হাঁটতে একজনের সাথে ধাক্কা খায়। হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায় তার।
“সরি…” বলে সামনের দিকে তাকিয়েই দেখতে পায় আহনাফকে। তাকে দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় সুরভির।
সে মুখ বানিয়ে নিচে ঝুঁকে ফোন ধরতে নিলে আহনাফও তার সাহায্যের জন্য ফোন উঠানোর বাহানায় তার হাত ধরে নেয়।
“এটা কোন ধরনের বেয়াদবি?” সুরভি রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করে।
“তুমি আমার ফোন কেন ধরছ না?”
“তুমি যা করেছ তারপর এই প্রশ্নটা কী বেমানান নয়?”
“আই এম সরি সুরভি তখন আবেগে ভেসে ভুল হয়ে…. ” সুরভি তার কথা কেটে বলে, “ওহ তাহলে তোমার মাথায় ঢুকেছে যে তুমি ভুল ছিলে। এত বড় ভুলের পর লজ্জাও লাগে না আমার সাথে এসে কথা বলতে?”
“সুরভি সব ভুলে কী আমরা আবার আগের মতো একসাথে হতে পারি না? বাবা তোমার কথা প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে।”
“তাহলে কোনো একটা কথা বানিয়ে বলে দেও। যেমন আমাকে বলেছ, নিজে এত বড় অপরাধ করে সবাইকে আমার নামে বানিয়ে বলেছ, এখন নিজের বাবাকেও বলো। এটাতে তুমি এক্সপার্ট।”
সুরভি তার হাত ছাড়াতে নিলে আহনাফ আরও শক্ত করে তার ধরে নেয়, “আমি তোমাকে আসলে ভালোবেসেছি সুরভি…”
সুরভি তাচ্ছিল্য হাসে, “তুমি ভালোবাসা শব্দের মানেটা জানলে তো ভালোই হতো। সব শেষ, এখন আমাকে দয়া করে বিরক্ত করো না।”
আহনাফ তবুও তার হাত ছাড়ে না। সুরভি এবার মেজাজ খারাপ করে বাধ্য হয় বলতে, “আমার হাত ছাড়ও। আমি এখন অন্যকারো ফিয়োন্সে।”
আহনাফ কপাল কুঁচকে নেয়। তার হাতে দেখে ডায়মন্ডের রিং। তা দেখেই আহনাফের মাথায় রক্ত উঠে যায়। সে সুরভিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে, “তোমার লজ্জা লাগে না? আমাদের আলাদা হওয়ার একসাপ্তাহ হয় নি আর তুমি অন্যকোনো ছেলে ধরে নিয়েছ? আমি ভাবতেও পারি নি তুমি এমন মেয়ে।”
সুরভি বিরক্তি নিয়ে তাকায় তার দিকে। সে এতটুকু বুঝতে পারে এই মানুষটার সাথে কথা বলা মানে তার সময় নষ্ট। তাই সে আহনাফকে এড়িয়ে অফিসে চলে যায়।

অফিসে শেষে জানতে পারে আজ অভ্রর ইন্টারভিউ, আবারও। ব্যাপারটা সে জানতো না। অভ্র তো বলেই নি, আর অফিস থেকেও জানানো হয় নি তাকে। স্টুডিওতে যেয়ে দেখে ক্যামেরার সামনে অভ্র বসে আছে। তাদের চ্যানেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইন্টারভিউয়ার তার ইন্টারভিউ নিচ্ছি। সুরভি কে দেখে যেতে নিতে তার একজন কলিগ আটকায় তাকে। তাকে বলে, “আরে এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছ? একটুপর তো ইন্টারভিউ শেষ হয়ে যাবে। একটু আমার সাথে দাঁড়িয়ে দেখো।”
“না থাক। আমি চলে যাই।”
“থাকো না প্লিজ, তুষার স্যার আমাকে এখানে একা দেখলে বকা দিবে। তুমি তো ইনারার বান্ধবী তোমাকে কিছু বলবে না। তোমার জন্য আমিও বেঁচে যাব। গতবার তো মিস্টার অভ্রকে ভালো করে দেখতেই পারিনি। আর এবার নজরই সরছে না। ভাই দুইভাই এত হ্যান্ডসাম কেন। দেখলেই চোখ সরাতে মন চায় না।”
সুরভি সামনের দিকে তাকায়, অভ্র হেসে হেসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। সে মুখ বানিয়ে বিড়বিড় করে বলে, “কচুর হ্যান্ডসাম, অভদ্র একটা। আমি যখন ইন্টারভিউ নিচ্ছিলাম তখন তো এত হাসি আসে নি।” বলে ভেংচি কাটে।
ইন্টারভিউ শেষ হয়, অভ্র উঠে রিপোর্টারের সাথে হাতও মিলায়। সে রিপোর্টার আবার সেলফি তোলা শুরু করে অভ্রর সাথে।

“তুমি এখানে কী করছ? কে আসতে বলেছে তোমাকে এখানে?” আহনাফ জিজ্ঞেস করে তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে।
“আমি যাচ্ছিলামই…”
“তুমি এসেছ কেন? কার পারমিশন নিয়ে এসেছ? গতবার অভ্র স্যারের সামনে তামাশা করে মন ভরেনি?”
সুরভির প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়। কিন্তু সে কিছু বলে না। আহনাফের সাথে তর্কাতর্কি করার মতো সময় তার নেই। তার সে যেতে নেয়। তারপরও আহনাফ তার হাত ধরে নেয়। সে বিরক্ত হয়ে বলে, “কি সমস্যা তোমার? আমি তো চলে যাচ্ছি তাই না?”
“তুমি কাজ ছেড়ে দিয়ে এসেছো তার জন্য ক্ষমা কে যাবে?”

“কার ক্ষমা চাওয়া লাগবে আর কেন?” অভ্র তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে। আহনাফ হঠাৎ করে তাকে সামনে পেয়ে থতমত খেয়ে যায়। সে আমতা আমতা করে বলে, “স্যার আসলে ও গতবার আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করেছিল তাই ওর এখানে আসা বারণ ছিলো। এবারও যদি কিছু করে? তাই এখানে আসার সময় ক্ষমা চাচ্ছিলাম।”
অভ্র বাঁকা হেসে তাদের কাছে এসে সুরভির হাতটা তার হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়। ঠোঁটে হাসি রেখেই এমন সরু চোখে তাকায় যেন তার প্রাণ বের করে আনবে।
সে বলে, “আমার হবু বউ আমাকে দেখতে আসলে তাকে মানা করার তুমি কে?”
কথাটা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ে। বিশেষ করে সুরভি। সে ভাবে নি অভ্র সবার সামনে তাকে এভাবে বলবে। সে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে অভ্রর দিকে। কথা বলার ভাষা ও যেন হারিয়ে ফেলেছে।

অভ্র তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে তার কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে আনে। আর কঠিন কন্ঠে আহনাফকে বলে, “আমার হবু বউকে কেউ টাচ করার সাহস রাখুক অথবা তাকে ধমক দেবার ক্ষমতা রাখুক তা আমার পছন্দ না।”
“হবু..হবু বউ? আপনার?” অবিশ্বাসে যেন তার চোখদুটো বেরিয়ে আসবে। তবুও যখন তোর হুঁশ আসে সে অভ্রর সামনে মুখ খোলার দু:সাহস করে, “স্যার এই মেয়ে পুরোই ক্যারেক্টরলেস। একমাস আগে আমার সাথে ছিলো। এখন আপনার টাকা দেখে….”
তার কথাও শেষ হয় না অভ্র তার কলার ধরে চোখ গরম করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি কার ব্যাপারে কী বলছ জানো? ও মিসেস ইসমাত হতে যাচ্ছে। আমার ওয়াইফ। ওর নামে মুখ দিয়ে একটা বাজে কথা বের করলে তা তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুতাপ বানিয়ে দিব।”
সুরভি তার হাত ধরে বলে, “অভ্র ছাড়ুন। মানুষ দেখছে। এসব লোকের সাথে কথা বলে লাভ নেই।”
অভ্র তাকে ছেড়ে গভীর নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে সুরভির দিকে তাকিয়ে হাসে। সুরভির পাশে দাঁড়ানো মেয়েটা অবাক হবে বলে, “সত্যি সুরভি আপনার ফিয়োন্সে? মানে এই শুক্রবার আপনার সাথে সুরভির এনগেজমেন্ট হয়েছে?”
“জি।” এক শব্দে মেয়েটিকে উওর দিয়ে সে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি ওকে আগের থেকেই পছন্দ করতাম। তাই আমিই ওকে প্রাপোজ করেছি।”
স্টুডিওতে দাঁড়ানো কারও যেন কথাটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না। ব্যাপারটা তাদের কল্পনার বাহিরে। অভ্র সুরভির কপালের একপাশে চুমু খেয়ে বলে, “সুইটহার্ট তুমি কী এখন ফ্রী আছো না’কি আমি তোমার জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করব।”
সুরভির মুখ দিয়ে শব্দ বের হয় না। সে ভেবে উঠতে পারে নি অভ্র সবার সামনে তাকে ‘হবু বউ’ বলবে এর উপর তার কপালে চুমুও খাবে। তাও সবার সামনে। লজ্জায় ও বিস্ময়ে এই মুহূর্তে তার অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে।
চলবে…

অনুভূতির খাঁচা
পর্ব-২৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

অভ্র সুরভির কপালের একপাশে চুমু খেয়ে বলে, “সুইটহার্ট তুমি কী এখন ফ্রী আছো না’কি আমি তোমার জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করব।”
সুরভির মুখ দিয়ে শব্দ বের হয় না। সে ভেবে উঠতে পারে নি অভ্র সবার সামনে তাকে ‘হবু বউ’ বলবে এর উপর তার কপালে চুমুও খাবে। তাও সবার সামনে। লজ্জায় ও বিস্ময়ে এই মুহূর্তে তার অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে।

তুষার স্যার দ্রুত বলে উঠে, “আপনি অপেক্ষা করবেন কেন স্যার? আমি ছুটি দিচ্ছি সুরভি ম্যামকে। যতদিন আপনি চান ততদিনই ছুটি কাটাতে পারেন।”
“ওহ আপনি দেখি ভালোই বুদ্ধিমান।”
তুষার নিজের টাই ঠিক করে বিনয়ের সাথে একগাল হেসে বলে, “ধন্যবাদ স্যার।”
“তো মিস্টার…”
“তুষার…তুষার আমার নাম স্যার।”
“তো মিস্টার তুষার যদি আজকের ঘটনা এই রুমে কারো বাহিরে যায় অথবা সুরভির অনিচ্ছায় ওঁকে কোথাও দেখানো হয় তাহলে আপনার চ্যানেলের জন্য, আর যে নিউজ পাব্লিক করবে তার জন্য মোটেও ভালো হবে না।” সে কথাটা বলে নিউজ এনক্যারের দিকে তাকায়। সে ভিডিও করছিল। অভ্রর কথা শুনে সে সাথে সাথে মোবাইল নিচে রেখে দেয়। ফজলু তবুও তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে ভিডিওটা ডিলিট করে।
অভ্র আরও বলে, “আমি কেবল মুখে কথা বলার মানুষ না। আমার কথা হাল্কায় নিলে জীবনে অনেক অনুতাপ করতে হবে।” সে আবার তাকায় আহনাফের দিকে, “আর তোমার মুখে সুরভির নামও না আসে। যারা আমার জীবনের অংশ তাদের জন্য আমি অনেক প্রটেক্টিভ। তাদের জন্য আমি যেকোনো পর্যায়ে যেতে পারি। নিজের জীবনের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সামলে থাকো, ওকে?”
সে সুরভির দিকে তাকিয়ে বলে, “আসো…”

সুরভি সবাইকে একবার দেখে তার পিছনে যায়। ফজলু মিয়া দৌড়ে এসে অভ্রর জিনিসপত্র নিয়ে। তুষার স্যারও তাদের পিছনে আসে। অভ্রকে ধন্যবাদ বলে তার জন্য তো গাড়ির দরজা খুলে দেয়-ই। সাথে সুরভির জন্যও খুলে দেয়। তুষার যাবার পর সুরভির রাগ ফুটে অভ্রর উপর, যদিও সে উঁচু স্বরে অভ্রর সাথে কথা বলার সাহস রাখে না। স্বাভাবিক কন্ঠেই ক্ষিপ্ত সুরে বলে, “আপনি সবার সামনে বলতে গেলেন কেন আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে?”
“কেন হয় নি?”
“হয়েছে কিন্তু আসলে তো না। সব তো নাটক।”
“বাট হয়েছে তো। তো মিথ্যা বলিনি।”
সুরভি গভীর নিশ্বাস ফেলে বলে, “আপনার সেখানে কথা বলারই দরকার ছিলো না। সবাই কীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো দেখেছেন? আমি কেবল স্বাভাবিকভাবে একজায়গায় কাজ করতে চাই। আপনার জন্য এখন আর আমি ওখানে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পাড়ব?”
“কেউ এখন তোমার সাথে ঝামেলা করবে না, কিছু শুনাতে পাড়বে না, তুমি নিজের ইচ্ছা মতো কাজে যেতে পাড়বে, সবাই তোমার থেকে ভয় পাবে। আর কী চাই?”
“আমার এসব কিছু চাই না। আমি এত পড়াশোনা করেছি, কষ্ট করেছি অন্যের দয়ায় বা ভয়ে সবকিছু হাতেনাতে পেয়ে যেতে না। আমি নিজের যোগ্যতায় যা করার করতে পারি।”
অভ্র হেসে তার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
“আমি কী মশকরা করছি? আপনি হাসছেন কেন?”
“এখন কী আমি হাসতেও পাড়ব না? দেখো তুমি যা বলেছ ভুল না, তখন আমার যা মনে হয়ে, তাই করেছি।”
“আপনার ঠিক মনে করলেই তো হবে না। তা ঠিক হতেও হবে। আর আপনি শেষে ওই জিনিসটা কেন করলেন?”
“কোন জিনিস?”
“ওই…” সুরভি তার কপালে হাত দিয়ে বুঝাতে যেও লজ্জায় চুপ করে যায়। অন্যদিকে ফিরে বলে, “গতকালও ভালোভাবে অফিস করতে পাড়লাম না আর আজও আপনার জন্য এসে পড়তে হয়েছে, নাহয় সবাই এত্তগুলা প্রশ্ন করতো আর এলিয়েনের মতো তাকিয়ে থাকতো। আচ্ছা এটা তো আমার বাসার দিক না।”
“রাইট কারণ আমরা তোমার বাসায় যাচ্ছি না।”
“তাহলে কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“সেটা গেলেই দেখতে পাড়বে।”
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। এখনই গাড়ি থামান, আমি নেমে যাব।”
অভ্র তাকায় সুরভির দিকে। তার কাছে যেয়ে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “দেখো সুরভি, তোমার সাথে আমি এত সুন্দর মতো ব্যবহার করছি তার সম্মান করো। কারণ আমি তোমার ভাবনার থেকে অনেক বড় কিছু করতে পারি। তোমার সাথে ভালোমতো ব্যবহার করছি, মানে এই নয় যে এটা তুমি আমার সাথে তর্ক করবে। ওকে? চুপচাপ বসে থাকো।”
সুরভি সত্যিই ভয় পায়। তাই সে চুপ হয়েই বসে থাকে এখন। গাড়ি যেয়ে থামে একটি শো-রুমের সামনে। শো-রুমটি শাড়ি, গাউন, লেহেঙ্গার। দেশের বিখ্যাত একটি ব্রান্ড। তারা গাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু শো-রুমের ভেতরে ঢুকে দেখে সেখানে কর্মী ছাড়া কেউ নেই। অভ্রকে দেখেই ম্যানেজার দৌড়ে আসে তার কাছে, “আপনারই অপেক্ষায় ছিলাম স্যার। আপনার কথা মতো এই সময় স্টোর বন্ধ রেখেছি।”

অভ্র পিছনে ফিরে সুরভির হাত ধরে সামনে টেনে আনে, “ও আমার ফিউচার ওয়াইফ। ওর জন্য পার্টি শাড়ি দেখান।”
“পার্টি শাড়ি দিয়ে আমি কী করব?” সুরভি অবাক হয়। ম্যানেজার তাদের নিয়ে বসায়। সুরভি মৃদুস্বরে তাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কি ফেইক এনগেজমেন্ট করে হয়নি, ফেইক বিয়েও করবেন?”
অভ্র তার দিকে মুখ বানিয়ে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়, “ষ্টুপিডের মতো কথা বলো না-তো। এই শুক্রবারে আমার একটা পার্টিতে যাওয়ার কথা, তুমি আমার সাথে যাবে।”
“অসম্ভব! প্রথমত, আপনার চেহারা দেখতে আমার বিরক্ত লাগে। দ্বিতীয়ত, আপনার সাথে পার্টিতে যে আমি কি করবো? আর আপনার সাথে তো আমার বিয়ে হবে না তাহলে আপনি কেন সবার সাথে আমার পরিচয় করাতে চাচ্ছেন? তৃতীয়ত, শুক্রবারে ইনারা আগে থেকে আমাকে আপনাদের বাড়িতে ডেকেছে। ওর প্রেগন্যান্সি এনাউন্স করবে। আমি সেখানে যাব।”
“দেখো সেদিন দাদাজান আসবেন পার্টিতে। তোমাকে নিয়ে না গেলে উনি সন্দেহ করবেন তাই তোমার যাওয়া লাগবে। আর রইল ইনারার প্রেগন্যান্সির কথা পার্টি শেষে ওখানে একসাথে যাব। কারণ মা আমাকে ফোন করে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করেছে সবাই আসছে আমি না আসলে ফ্যামিলি ইনকমপ্লিট লাগবে। সো এনোয়িং! আর রইল আমার চেহেরা দেখতে তোমার বিরক্ত লাগে…” অভ্র তার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে বলে, “কেন? আমার চেহেরার গঠন কী খারাপ লাগে তোমার কাছে? অস্ট্রেলিয়ায় কতজনের ক্রাশ ছিলাম তুমি জানো?”
সুরভি সবার সামনে তার এত কাছে আসাতে অসস্থিতে পড়ে যায়। সে সরে বসে। আর শাড়ি কতগুলো এনে এক কর্মী যখন তাকে ডাক দেয় তখন সে দৌড়ে উঠে যায়।

তারপর শুরু হয় সুরভির আরেকটি বিরক্তির পর্ব। একের পর এক শাড়ি তার উপর দেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু মিস্টার অভদ্রর একটা শাড়িও পছন্দ হয় না। প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে এমন করতে করতে তার সাথে কর্মীরাও ক্লান্ত হয়ে যায়। সুরভির মেজাজটাও খারাপ হচ্ছিল কিন্তু কিছুক্ষণ পূর্বে অভ্র যে হুমকি দিয়েছিল তার জন্য সে নিজেও ভয়ে আছে।

অবশেষে একটি সাদা শাড়ি বের করে কর্মী। সাদা রঙের শাড়িতে রূপালী রঙের কাজ। অভ্র মোবাইলে কাজের মাঝখানে মাঝখানে শাড়িগুলো দেখছিল। সে নিজেও বিরক্ত হচ্ছিল। এতগুলো শাড়ির মাঝে একটাও মন মতো শাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না। যখন সে কাজের মাঝখানে শাড়িটা এক নজর দেখে প্রত্যাখ্যান করে আমার মোবাইলে নজর দিবে তখন সে কাজ বন্ধ করে আবার তাকায়। আর মোবাইলটা পাশে রেখে উঠে দাঁড়ায়। সুরভির কাছে যেয়ে ভালো করে তাকে দেখে। হাত উঠিয়ে দু’টি আঙুল দিয়ে ফজলুকে ইশারা দেয়। তখনই ফজলু মিয়া তাড়াহুড়ো করে সবাইকে বলে বের হয়ে যেতে। কিছু মিনিটে সবাই সেখান থেকে চলে যায়। সুরভি তো কিছু বুঝেই উঠতে পারে না। কী হচ্ছে? অভ্র তার কাছে আসতেই সুরভি অসস্থিবোধ করে পিছাতে চায়। কিন্তু অভ্র তাকে ধরে নেয়, “সোজা দাঁড়িয়ে থাকো।” কড়া সুরে বলে।

সুরভি তাই করে। অসস্থি লাগলেও সে নড়ে না। অভ্র তার পিছন দিকে যেয়ে শাড়ির আঁচল নিয়ে তার মাথায় দিয়ে সামনে এসে দেখে।
সুরভির কেমন যেন লাগছিল। অভ্র যখন তার মাথায় আঁচল দিয়ে সামনে আসে তখন তার মুখ দেখে তার বিরক্তি লাগছিল না। উল্টো গাল ভারী হয়ে আসছিল।

অভ্র বাঁকা হেসে বলে, “এখন আমার বউয়ের মতো লাগছে?”
“কী?” সুরভি বিস্মিত সুরে বলে।
“পার্টিতে সবাই তো জানবে তুমি আমার হবু বউ। এত রিয়েক্ট করার প্রয়োজন নেই।”
সুরভি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে প্রাইস ট্যাগ দেখে চেঁচিয়ে উঠে। তার চিৎকারে ভয় পেয়ে যায় অভ্রও।

“কী হলো তোমার?” অভ্র ভীত সুরে জিজ্ঞেস করে।
“এই শাড়ির দাম দেখেছেন আপনি? আমার তিনমাসের বেতনের সমান। আমার তো মিনি হার্ট অ্যাটাক এসে পড়েছে। এটা নিব না, অসম্ভব।”
“আমি কিনছি, তুমি না।”
“আপনার কেনা জিনিস আমি কেন পরব? যা কিনবো আমার নিজের টাকা দিয়ে কিনব। আমি অন্যের দয়া নেই না।”
“এই মেয়েটা….” অভ্র নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে বলে, “আচ্ছা আমার কাজে যেহেতু যাচ্ছি তুমি শুধু ওদিন পরো তারপর ফিরিয়ে দিও। ওকে?”
সুরভি কিছুক্ষণ ভেবে মাথা নাড়ায়। তারপর পিছনে ফিরে নিজেকে আয়নায় দেখে বলে, “আসলেই অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িটা। আপনার চয়েজ ভালো, তা মানতে হবে।”
অভ্র তার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে তাকেও আয়নায় দেখতে থাকে। তারপর বলে, “শাড়িটা সুন্দর, কিন্তু তুমি পরায় বেশি সুন্দর লাগছে।”
সুরভি আয়নায় অভ্রকে দেখে পিছনে তাকায়। তাকে এতটা কাছে দেখে পিছনে সরে যেতে নিলে অভ্র তার কণুই ধরে নেয়, পিছাতে দেয় না।
সুরভি তার দিকে তাকায়। অভ্র তার দিকে ঝুঁকে আসে। কম্পন উঠে সুরভির বুকে। কী করতে যাচ্ছে এই লোকটা?
এই মুহূর্তে তার পিছিয়ে যাওয়া উচিত কিন্তু এই ব্যাপারটা এখন তার ভাবনাতে নেই। শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত। অভ্র ঝুঁকে পিছনে হাত নিয়ে তার মাথা থেকে প্রথমে ওড়নাটা সরিয়ে দেয়, তারপর তার খোঁপা খুলে দেয়। থলথল করে বয়ে পড়ে তার কৃষ্ণকালো আঁকাবাঁকা কেশ। অভ্র তার সামনের কিছু চুল আঙুল দিয়ে খেলতে খেলতে তার মুখের কাছেই আনে।

সুরভি বহু কষ্টে মুখ খুলে, “কী করছেন?”
“কী করছি?” অভ্র মৃদুস্বরে বলে। তার এই স্বরটা ভীষণ ভয়ংকর। মনে হয় যেকারো মন বিমোহিত করে ফেলবে।
“এত কাছে আসার প্রয়োজন আছে?”
“কেন তোমার বুকের স্পন্দন বাড়ছে?”
“প্রশ্নের পরিবর্তে প্রশ্ন করছেন কেন?”
“আমাকে এত বিরক্ত লাগলে তোমার মুখ লাল হয়ে আছে কেন?”
“এত আজেবাজে প্রশ্ন করছেন কেন?”
“তাহলে সরাসরি প্রশ্ন করি, প্রেমে পড়ছো না’কি?”
দৃষ্টিবন্ধন ভাঙে। সুরভি চোখ সরিয়ে বলে, “আপনার প্রেমে? অসম্ভব। আমার অসস্থি লাগছে।”
কথাটা শুনে অভ্র তার হাত ছেড়ে দেয়। সুরভি পিছিয়ে যেয়ে শাড়িটা একটি টেবিলে রাখে।

এতক্ষণে ফজলু মিয়া দৌড়ে ঢুকে রুমে। এসে বলে, “অভ্র ভাই… অভ্র ভাই খোঁজ নিছি আমি আমার লোক দিয়া, শুক্রবার আইব মেঘলা আপা নিশ্চিত এডা।”
কথাটা শুনে সুরভী তাদের দিকে তাকায়। অভ্রও অপ্রস্তুত হয়ে যায়, সে সুরভীর দিকে তাকায়। তারপর ফজলুকে চোখ রাঙিয়ে বলে, “ম্যানেজারকে বলো এই শাড়িটা নিব। এটা প্যাক করতে।”
ফজলু মিয়া তার চোখ রাঙানো দেখে বুঝে যে সে কিছু ভুল করে ফেলেছে। তাই দৌড় দিয়ে সেখানে চলে যায়। অভ্র সুরভির দিকে তাকায় আবারও। সুরভি তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও পরে চোখ সরিয়ে নিয়ে তাকে এড়িয়ে যায়।
.
.
মায়া ও তন্নি জামা কাপড় গুছাচ্ছিল। যেহেতু এখন আর অনুষ্ঠান হবে না তাহলে এখানে না থাকাটাই উচিত কাজ হবে। তখনই দরজায় নক পড়ে। দরজা খুলে দেখে সেখানে মেহেদী ও তার মা দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভিতরে ঢুকে ব্যাগ গুছাতে দেখে মায়া ও তন্নিকে। মেহেদীর মা বলে, “বিয়েতে তো ক্যান্সেল হয়ে গেছে তাই স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠান হবে না। তাই অনেকে চলে যাচ্ছে।”
“আমরাও যাচ্ছিলাম আন্টি।” তন্নি বলে।
“না না তোমরা যেও না।”
তন্নি ও মায়া একে অপরের দিকে তাকায়।
মেহেদীর মা আবার বলে, “এই দুইদিনের জন্য এই রিসোর্ট তো বুক করাই আছে। আর এমন ছেলের সাথে বিয়ে ভেঙেছে তা আরও আনন্দের বিষয়। নাহলে আমার মেয়েটার জীবন যার শেষ হয়ে যেত। তাই তোমরা থেকে মজা করো। আমি তোমাদের জন্য আজ বোট ভাড়া করেছি, আজ ও আগামীকাল বোট করে ঘুরবে।” সে আবার মায়ার কাছে যেয়ে তার হাত ধরে বলে, “আমাকে মাফ করে দাও মায়া। আমি তোমার নামে গতকাল রাতে যা মুখে এসেছে তাই বলেছি। আর তুমি আমার মেয়ের জীবন বাঁচালে। তোমাকে কোন মুখে ধন্যবাদ বুঝতে পাড়ছি না।”
“না আন্টি, আপনি আমার বড়। আপনি আমাকে ধন্যবাদ বলার দরকার নেই। আর মালা তো আমারও ছোট বোন তাই না? এটা আমার দায়িত্ব ছিলো।”
“তুমি এভাবে চলে গেলে আমি ভাববো তুমি আমাকে মাফ করো নি। তোমরা ঘুরাঘুরি করো এই দুইদিন, ঠিকাছে।”
মায়া রাজি হয়। মাথার আগে সম্মতি দেয়।
মেহেদী তাড়া দেয় তাদের, “এখন তোরা জলদি জলদি করে তৈরি হয় নে। তোদের মেয়েদের আবার তৈরি হতে দুই ঘন্টা লাগে।”
তন্নি বলে, “ভাই আন্টি এখানে আছে বলে এমন ভাববি না যে তোকে মারতে পাড়ব না ওকে? আমরা দশমিনিটে বাহিরে আসছি অপেক্ষা কর।”

তারা বাহিরে এসে দেখে তিনটা ট্রলার ভাড়া করা হয়েছে। মেহেদী জানায় ছোট ট্রলারটা তাদের বন্ধুদের জন্য বুকিং দিয়ে রেখেছে সে। মায়া তাদের সাথে কথা বলছিল এমন সময় সে দেখে মালা আলাদা যেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মন খারাপ করে। সে তার বন্ধুদের রেখে তার কাছে যায়। আর পাশে দাঁড়ায়, লেকের দিকে তাকিয়ে বলে, “অনেক সুন্দর দৃশ্য তাইনা?”
মালা এতক্ষণে তার দিকে খেয়াল করে। সে নিজের পৃথিবীতে হারিয়েছিল এতক্ষণ। তাকে দেখে জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলে, “ওহ আপু আপনি? আপনাকে ধন্যবাদ জানাতাম। আপনি না থাকলে আজ… আজ একটা বড় ভুল হয়ে যেত।”
মায়া মৃদু হেসে বলে, “আমি জানি, বুকে কত বড় একটা পাথর রেখে কথাটা বলছ। তুমি কেমন কষ্ট অনুভব করছো তা আমি বুঝতে পারি। এক সময় আমারও এমন একটা পরিস্থিতি পাড় করে যেতে হয়েছে। তবু তুমি ভাগ্যবতী জানো? আমার সময় তো আমার এই বন্ধু তিনজন ছিলো কেবল, আর আমার ছোটবোন, অন্যকেউ কেউ আমার পাশে ছিল না। অথচ তোমার বাবা-মা, ভাই তোমার জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।”
“আপু আপনি সে সময় কি করেছিলেন?”
“বোকামি করেছিলাম। তা জানতেও চেও না, যে গাঁধা ছিলাম। আমি বলব, তুমি আমার থেকে অনেক বুদ্ধিমান।” বলে হাসে সে। আবারও বলতে থাকে, “কিন্তু জানো জীবনে আছে না এমন ধাক্কা একটা সবার প্রয়োজন, নাহলে জীবনে আগানো যায় না। আমি যখন নিজেকে সামলেছি, নিজের শক্তি বুঝেছি, তখন নিজের গন্তব্য পেয়েছি। আজ আমাকে সফল বলাটা ভুল হবে না তাই না?”
“আপু তোমার মতো সাকসেসফুল বিজনেসওমেন দেশে কয়টা আছে?”
“তুমিও নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করো, একসময় তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়ে যাবে। কী হতে চাও তুমি?”
“হয়তো…. ফ্যাশন ডিজাইনার।”
“আমি জানি তুমি পাড়বে। চেষ্টা করে দেখো। মন থেকে পরাজিত হয়ে গেলে জীবন থেকেও পরাজিত হয়ে যাবে।”
“বাবা মা রাজি হবে?”
“না হলে তোমার ভাই আছে তো মানিয়ে নিবে। জানি আমি ছেলেটা গাঁধা, কিন্তু ওর মতো আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর কেউ না। জানো আদিলের কথা শুনে তোমার ভাই তো ওকে মারতে যাচ্ছিল।”
কথাটা শুনে মালার মুখে হাসি ফুটে ওঠে, “সত্যি? ভাইয়া আসলেই বেস্ট। থ্যাঙ্ক ইউ আপু। তুমি আমার জন্য যা করছো সব কিছুর জন্য।”
মায়া হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “তাহলে চলো, সেদিকে যাই।”
তারা দুজন লেকের পাশে আসে। সবাই দুই ট্রালারে উঠেছে। মালা তার মা বাবার সাথে যাবে। কেবল সেই ট্রলারে উঠা বাকি। সে উঠার পূর্বে একবার মায়াকে ডাকে, “মায়া আপু?”
“হুঁ?”
“তুমি বলেছিলে গন্তব্যের দিকে ছুটলে একদিন আমি সফলতার সাথে সত্যিকারের ভালবাসা পাব। তুমি তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েছ?”
কথাটা শুনে মায়া থতমত খেয়ে যায়। তার মুখ থেকে হাসিটা উড়াল দেয়। প্রশ্নটায় তার আশেপাশের সবার দৃষ্টি তার উপর যে আটকায়। সে সবার দিকে এক নজর দেখে বলে, “না…” আবার থেমে কিছুটা ভেবে বলে, “জানি না।”
“জানলে আমাকে বলবে কিন্তু, ঠিকাছে?”
মায়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। প্রথম দুইটো চলার পর তার সব বন্ধুরাও ট্রলারে উঠে।

স্নিগ্ধ রেদ্দুরে সচ্ছ জল চিকচিক করছে। চারপাশে জল জল। বহুদূরে যে চোখ যায় সেখানে ছোট ছোট গাছপালা দেখা যায়। এই দৃশ্যটি বর্ণনা দেওয়াও বৃথা হবে। প্রথমে সব বন্ধুরা মিলে গান গায় ও দৃশ্য উপভোগ করে। শহরের ব্যস্ত জীবনে এমন মনমুগ্ধকর দৃশ্য কয়বার দেখা হয়? সকলের মন যেন আজ সতেজ হয়ে গেল। তারা দুপুরে একপাশে নেমে উপজাতি রেস্টুরেন্টে খেয়ে নেয়। আবারও ট্রলারে উঠে ঘুরতে থাকে। ট্রলারটি দোতলা। খাবার খাওয়ার পর অনেকক্ষণ ছেলেরা দোতলায় বসে থাকলেও আকাশটি মেঘলা দেখলে তারা নিচে নেমে আসে। জোহানকেও আসতে বলে। সে নামে না। পাশে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে যায়। বিদেশে যাবার পূর্বে সে তার মায়ের সাথে প্রায় ঘুরতে আসত রাঙ্গামাটিতে। শৈশবের সে স্মৃতিগুলো হাল্কা উঁকি মারে তার মস্তিষ্কে। হঠাৎ মায়া বলে উঠে, ” আমিও উপরে উঠব।”
তন্নি বলে, “গায়ে বৃষ্টি পড়ে ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”
“কিছু হবে না।”
তন্নি তাকে আর বাঁধা দেয় না। সে নিজেও চায় মায়া জোহানের সাথে সময় কাটানো শুরু করুক।
জোহান তাকে উঠতে সাহায্য করে। দুজনে উপরে বসে অনেকক্ষণ মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিচে তিনজনে মিলে চেঁচামেচি করলেও তাদের মাঝে নীরবতা।

নীরবতা ভেঙ্গে হঠাৎ জোহান বলে উঠে, “মালার জবাব এইভাবে দিলে কেন?”
“কীভাবে?”
“জানো না বললে যে?”
“কোনো অপরাধ করলাম?”
“তা বলেছি না’কি? জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম, ক্লিয়ার এন্সার দেও নি একারণে। সন্দেহ আছে যে কাওকে ভালোবাসো? কে সে?”
“ভূত। আশেপাশেই ঘুরছে। তোমার কথা শুনলে তোমার ঘাড়ে ভর করবে।”
“এত খারাপ মজাতেও হাসতে হবে?”
“আমি বলেছি হাসতে?”
জোহান গভীর নিঃশ্বাস ফেলে, “তোমাদের মেয়েদের সাথে তর্কে জীবনেও বিজয়ী হওয়া যাবে না।”
মায়া হাসে।
জোহান বলে, “জানো আম্মুর সাথে মাঝেমধ্যে রাঙামাটিতে আসতাম।”
“তাই? ”
“আম্মুর ফেভারিট জায়গা ছিলো রাঙামাটি। আর আমুর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল সাইয়ারা আন্টি। ইনারার আম্মু। তার ফেভারিট জায়গা সাজেক। দুই বান্ধবী একাধিকবার ঘুরেছিল এই জায়গায়। আমিও এসেছি। ছোটবেলার কথা তো আমার মনে নেই। কিন্তু বিদেশ থেকে এসে তাদের সাথে একবার দেখা হয়েছিল। তখন ইনারার সাথে দেখা হয়।”
“তারপর থেকেই পরিচয়?”
“সে বিশাল কাহিনি। বলে শেষ হবে না।”
“ওহ, তো এখন ইনারা আর সভ্যকে একসাথে দেখলে খারাপ লাগে?”
“খারাপ লাগবে কেন? আমার বন্ধুকে এত খুশি দেখলে আমারও খুশি লাগে। এত বছর আমি বুঝতাম না, আপনি কারও খুশিতে নিজে খুশি হতে পারলে জীবনটা কত সুন্দর হয়ে যায়। আর অন্যের ক্ষতি করলে আমরা নিজের জীবন নরক করে তুলি।”
কথাটা শুনে মায়া আমার তাকায় তার দিকে। গম্ভীর সুরে জিজ্ঞেস করেন, “আর যদি তারা আপনাকে কষ্ট দেয়? আপনার জীবন নরক করে তুলে? তার পরিণতি ফেরত দিলেও কী আপনি ভুল?”
জোহান অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে, “মানে?”

তখনই ঝুম করে বৃষ্টি নামে। জোহান ও মায়া দুইজনেই আকাশ পানে তাকায়। বৃষ্টির টুপ টুপ পানির ফোঁটা তাদের দেহে এসে ছোঁয়ায়। চারদিকে বৃষ্টির প্রথম মিষ্টি মাতাল ঘ্রাণ ছড়ায়। মায়ার একগাল হাসি ফুটে ওঠে। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে থাকে বৃষ্টির ফোঁটা।

নিচ থেকে তন্নির শব্দ ভেসে আসে, “জোহান, কী মুগ্ধকর দৃশ্য! এই মুগ্ধকর দৃশ্যে তোমার মুগ্ধকরা গলায় গান হয়ে যাক?”
জোহান তাকায় মায়ার দিকে। তন্নির প্রশ্নের উওর দেয়,
“আজ অন্যকারো মোহিত কন্ঠে গীত বেশি মানাবে না?”
মায়া তাকায় তার দিকে। জোহানের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে সে-ও হেসে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সুর ধরে সে। আর তার সুরের সঙ্গী হয় আকাশের বুক চিরে ঝরা বৃষ্টি,

অসময়ি এ বৃষ্টিতে আমি, অসময়ি এ বৃষ্টিতে তুমি,
কিছু না বলা কথা দিলাম ভাসিয়ে
ধুয়ে যাক না এ মন অভিমানী
মেঘলা আকাশ, হালকা হাওয়া
যাই ভিজে আর নিজেকে ফিরে পাওয়া
আধখোলা কাঁচ, বৃষ্টি ছোঁয়াচ
তোমার নামে মেঘের খামে চিঠি দিলাম আজ
আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর
আধভেজা তুমিও, আর আধভেজা আমার সফর….

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ]