#অভিলাষী (২য় পর্ব)
#আরশিয়া_জান্নাত
ডিম লাইটের আলোয় তৈমুর ঘুমাতে পারেন না বলে রাতে ঘরে মৃদু আলোর কোনো ব্যবস্থা করা নেই। আমি বেঘোরেই ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ কারো কান্নার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙ্গে। আমি আঁধারেই হাঁতড়ে দেখি তৈমুর আমার পাশে নেই। আমার মনে ভয় ঢুকে যায় জ্বিনভূত এলো নাকি ঘরে। আমার দাদী শাশুড়ি রোজ বলেন দোয়া কালাম পড়ে গা বন্ধ করতে, পোয়াতি মহিলাদের উপর নাকি এসব জিনিসের আকর্ষণ বেশি থাকে। আমি ভয়ের চোটে আয়াতুল কুরসির বদলে কবরস্থানের দোয়া পড়তে শুরু করেছি। আমার অস্তিত্ব টের পেয়ে হঠাৎ কান্নার শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার কাঁধে উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পেতেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। তৈমুর দ্রুত আমার মুখ চেপে বলে, “করছো টা কি! এমন চিৎকার করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে নাকি?”
উনি দ্রুত ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে বলল,” কি হয়েছে ভয় পেয়েছিলে?”
আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করেই কেঁদে ফেললাম। আমি কি পরিমাণ ভয় পেয়েছিলাম বলে বোঝানো সম্ভব না। তৈমুর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি আছি তো।”
তার কথায় আশ্বস্ত হলেও আমি তার বুক ছাড়লাম না, বরং আদুরে বিড়ালের মতো আরো ঘেঁষে বললাম, “আমার অনেক ভয় লাগছে।”
উনি মিনিটখানেক নিরব থেকে বললেন, “মৃত্তিকা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সঠিক উত্তর দিবে?”
“হুউ”
“তোমার কী এখানে অসুবিধা হচ্ছে? আই মিন মা তোমাকে বাবার বাসায় যেতে পারমিশন দেয়নি বলে কী তুমি আপসেট হয়েছো?”
“হঠাৎ এই কথা কেন?”
“জিজ্ঞেস করছি জবাব দাও পাল্টা প্রশ্ন কেন?”
“নাহ আমি একটুও আপসেট হই নি। বরং খুশিই হয়েছি মা আমাকে যেতে দেয়নি বলে।”
“কেন!”
“ডেলিভারির সময় মেয়েদের বাপেরবাড়ি পাঠানো হয় দুটো কারণে, ১)মানসিক আর শারীরিক শান্তি সেখানে বিদ্যমান ভেবে, ২) শ্বশুরবাড়ির লোকজন ডেলিভারির আগের/পরের পরিচর্যা করতে অনীহা দেখাতে পারে ভেবে।”
“হুম এটাই তো মিথ। তো তুমি খুশি হবার কারণ কী?”
“আমাকে রেখে দেওয়ার মানে হলো মা আমার এই দুটো দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিয়েছেন। তার মনে আমার জন্য মমতা জন্মেছে এটাই তার বহিঃপ্রকাশ। এই ভেবে ই আমি আনন্দিত।”(আমারও যে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না সেটা আর বলিনি তাকে)
উনি আমার কথা শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। আমি উঠে বললাম, “আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? এখানে কান্নার শব্দ আসছিল শুনেছেন?”
“রাস্তার কুকুর একটা কান্না করছিল। আমিও শব্দ শুনে গিয়েছিলাম চেক করতে।”
“ওহহ।”
উনি চুপচাপ লাইট অফ করে অপরদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লেন। আমি মনে মনে ভাবছি কুকুরের কান্না এ ঘরে এতো স্পষ্ট শোনা যাবে কীভাবে! উনি কী আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিলেন? হঠাৎ কী মনে করে উনি আমার দিকে ফিরে আমাকে কাছে টেনে নিলেন। আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, “এই সময়টা খুব সেনসিটিভ বুঝলে? অনেক আজেবাজে চিন্তা মাথায় আসে। মুড সুইং বেড়ে যায়। এসব খুব স্বাভাবিক। সবকিছু এতো সিরিয়াসলি নিও না, নিশ্চিন্ত থাকো।”
তার কথায় দরদ ছিল বলবোনা, কিংবা সে আদরমাখা কন্ঠেও বলেনি। বয়জ্যেষ্ঠরা যেভাবে উপদেশ দিয়ে বলেন সেভাবেই বলেছেন। কিন্তু ভালোবাসার কাঙাল আমিটা তার এই কথায় ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছে এতো মাস পর উনি আমার মনের মতো একটা কাজ অন্তত করেছেন। আমি উনার বুকে নাক ঘষে বললাম, “আচ্ছা আপনার কী শখ ছেলে নাকি মেয়ে?”
“যা আমাদের হাতে নেই তা নিয়ে শখ করা কী ঠিক? বরং এটা বলে একটা আফসোস তৈরি করার মানে হয়না। যে ই আসার সুস্থ সবলভাবে নিরাপদে আসুক এটাই কাম্য।”
আমি রয়ে সয়ে তাকে বললাম, “আচ্ছা একটা কথা বলি,অনেকেই তো ডেলিভারির সময় মারা যায়। আমার যদি কিছু হয় আপনি কী আবার বিয়ে করবেন? বাবুকে কার কাছে দিবেন?”
উনি আমার এই কথার কোনো জবাব দিলো না। বরং আমাকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে গেল। আমি আর কথা বাড়ানোর সাহস পেলাম না। নিজের উপর নিজেরই ভীষণ রাগ হচ্ছিল কেন যে এ কথা বলতে গেলাম।
ডালি আপার রাজপুত্রের মতো ফুটফুটে সুন্দর একটা ছেলে হয়েছে। আমার তিন ভাইয়ের টাইমলাইনে সেই রাজপুত্রের ছবি আদরমাখা ক্যাপশনের সাথে শোভা পাচ্ছে। তিনজন ই ভাগ্নে পেয়ে মহাখুশি। সকালে মা ফোন করে বলেছিল আজ আপাকে মেডিকেল নেয়া হবে যেন দোয়া করি আপার জন্য। সে ঐ খবরটুকু বলতেই কল করেছিল। আগেপিছে আমার সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করেনি, না জিজ্ঞেস করেছে কেমন আছি। ভাবতে পারেন এমন বিপদের দিনে কুশল বিনিময় নিয়ে নিজের মায়ের দোষ ধরছি, তা নয়। আমাকে ওরা কল ই করে কালে ভাদ্রে। এমন নয় রোজ কলে কথা হচ্ছে বা দেখা হচ্ছে। তাছাড়া এখন আমিও মা হবার স্টেজে আছি। উপস্থিত না থাকুক কল করে তো খোঁজখবর নিতে পারে তাই না? মানুষ বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকলেও পরিবার এমনভাবে কানেক্ট থাকে বোঝাই যায় না দূরত্ব সহস্র মাইল। আর আমি তো এক শহরেই আছি, তাও কত দূরের। বাবা মায়ের কথা বাদ আমার ভাইয়ারা পর্যন্ত আমাকে একটা দিন দেখতে আসেনি। ওদের ব্যস্ততা কী এতোই বেশি বোনকে দেখার বা কল করার ফুরসত নেই? আমি জানি না আমার বেলাই কেন ওদের সবার এতো অবহেলা। আমি কী ওদের আপন কেউ নই? নাকি ডালি আপার মতো সারাক্ষণ ন্যাকা-কান্না করিনা বলে আমার কোনো ব্যথা নেই, যন্ত্রণা নেই? আমাকে যত্ন করতে হয়না, আমার বার্থডে তে গিফট পাঠাতে হয় না। আমাকে কল করে জিজ্ঞেস করতে হয়না কেমন আছি! আমার ইমিউনিটি হাই, আমার রোগবালাই নেই, আমি একদম ফিট ছোট থেকেই। তাই আমাকে শীতে গ্রীষ্মে এক্সট্রা কেয়ার নেয়া লাগেনি। একটু হিম পড়লে গাঁয়ে কাঁথা টেনে দেওয়ার প্রয়োজনও কেউ কোনোদিন বোধ করেনি। ঈদের শপিং এ নিজের পছন্দের জামা নেওয়ার বদলে যা দিয়েছে তাতেই হ্যাপি থাকতে হয়েছে। অথচ ডালি আপার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরতে ঘুরতে শেষে চড়া দাম দিয়ে কিনতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি কেউ।
আর ভাইদের কথা কী বলবো, যে যেখানেই বেড়াতে যেত ফেরার সময় আপার জন্য স্পেশাল কিছু না কিছু আনতোই, আর আমাকে চকলেট বা আচারের প্যাকেট দিয়ে দায়সারা হতো। যদি কখনো ভুলেও চেয়ে বসতাম আপার মতো আমাকেও দাও বা আবদার করতাম এই জিনিসটা চাই, বলা হতো আমার পেটে প্রচুর হিংসা। সবকিছু তে ভাগ বসানোর স্বভাব!
আমি চোখের পানি গিলে প্রতিবাদ করে বলতাম, “দুইবোনের ঘরে একটা জিনিস আসলে বিবাদ তো হবেই। তোমরা দু’টো করে আনোনা কেন?”
বড় ভাইয়ের মুখে মুখে তর্ক করার অপরাধে দুটো থাপ্পর গালে পড়তো দুইদিক থেকে একই সময়ে, আমি তখন হেসে ফেলতাম। আমাকে শাসনের বেলা বাবা-মা দুজনেই খুব এক্টিভ এই ভেবেই হাসি আসতো।
এ বাড়িতে আসার পর সবসময় দেখি ওরা যাই আনে সব বোনদের জন্য হিসাব করে আনে। চাচাতো আপন কোনো ভেদাভেদ নেই। যে যাই আনবে সবকয়টা বোনের জন্য আনবে। আপুরা শ্বশুরবাড়িতে আছে বলে তাদের ভাগেরটা যত্ন করে তুলে রাখা হয়, তবুও আনা মাফ নেই। কী সুন্দর না ব্যাপারটা?
আমার ভাইদের তো এতো গুলো বোনের জন্য আনার দরকার পড়েনি, দুটোই তো বোন তাদের। তাও আপন বোন! আমি যখনই ওদের ভাইবোনের খুনসুটি দেখি আমার চোখ ভিজে আসে। আমি মনে মনে বারবার বলি আমার নজর না পড়ুক ওদের ভালোবাসায়, ওরা চিরদিন এমনি থাকুক।
উঠোনে বসে দাদীজানের সাথে গল্প করছিলাম, উনি উনার সংসার জীবনের নানান গল্প বলে মজা পান। আমিও চুপচাপ তার গল্প শুনি। আমাকে এই মানুষটা কেন জানি শুরু থেকেই একটু বেশি ভালোবাসে। সময় পেলেই আমার চুলে তেল লাগিয়ে দেয়, পান বানিয়ে বলে,”লও সখী পান খাইয়া ঠোঁট লাল করো দেহি!”
আজকে আমার মন খারাপ ব্যাপারটা তিনি কেমন করে যেন বুঝে ফেলেছেন। অথচ আমি সারাক্ষন ই হাসছি। উনি আমার গাল টিপে বললেন, “তোর জীবনের সব দুঃখ একদিন উবাইয়া যাইবো দেহিস। মানুষের জীবন অর্ধেক কাটে সুখে অর্ধেক দুঃখে। কারো আবার মিলেঝিলে চলে। তোর দুঃখের পাইল্লা ভরি গেছে, এবার তোর সুখের পাইল্লা ভরনের সময়।”
আমি হেসে বললাম, “দাদীজান কিছু অভাগী আছে যারা যেখানেই যায় সাগরের ও পানি শুকায়। সুখের দিন আসুক বা না আসুক দুঃখ না আসলেই হলো।”
দাদীজান দাঁতহীন মুখে হাসি দিয়ে বললেন, “এই বুড়ি ততদিন থাকি বা না থাকি আমার কথা তুই ঠিকই মনে করবি দেখিস।”
রাতে আমি ফের সেই কান্নার আওয়াজ পেলাম। আজকে ভয় না পেয়ে বরং কৌতুহলবোধ করছিলাম। নিরবে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছিলাম শব্দটা কিসের। বহু চেষ্টা করে বুঝেছি এটা মানুষের কান্নার শব্দ। আরো গভীর মনোযোগ দেওয়ার পর বুঝলাম আমি অযথাই ভয় পাচ্ছিলাম, এটা মূলত মোনাজাতের কান্না ছিল। কেউ হয়তো তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছে। কৌতূহলবশত পাশে হাত বাড়িয়ে দেখি তৈমুর নেই। তবে কী উনিই নামাজ পড়ছিলেন? বেশ কিছুক্ষণ পর পায়ের শব্দ পেয়ে ঘুমের ভান ধরে তাকে বুঝতে দিলাম না আমি জেগে আছি। উনি ধীর পায়ে আমার পাশে এসে বসলেন। আমার পেটের উপর হাত রেখে ঠাঁয় হয়ে বসে রইলেন অনেকক্ষণ। আমি তার ফুঁপিয়ে উঠার শব্দ পাচ্ছিলাম। মনে মনে ভীষণ অবাক হচ্ছিলাম এই ভেবে উনি কী আমার জন্য দোয়া করে কান্না করছিলেন? নাকি অনাগত সন্তানের জন্য?
উনি নিজেকে শান্ত করে আমার কপালে চুমু দিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি সেই রাতে তৈমুরের অন্যরকম একটা দিক আবিষ্কার করলাম বটে!
দেখতে দেখতে আমার ডেলিভারির ডেট এগিয়ে আসে। আমি খেয়াল করে দেখি ডেট যত এগিয়ে আসছে তৈমুর ততোই অস্থির হচ্ছে। আজকাল সে আমাকে বুকছাড়া করেনা। যতোই বলি পেটের জন্য এমনিতেই আযাব লাগে, সে তবুও পাত্তা দেয়না। এ কেমন আদিখ্যেতা বুঝি না! যখন পেট খালি ছিল তখন তো এমন জড়িয়ে ঘুমায়নি, এখন নিজের দম ফেলতেই কষ্ট তার উপর আরেক যন্ত্রণা শুরু। হসপিটালে যাওয়ার আগে মাকে কল করেছিলাম, বলেছিলাম আজকে অন্তত আসতে। মা ব্যতিব্যস্ত গলায় বললেন, “রাতুল পটি করছেনা কাল রাত ধরে, ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। ফ্রি হয়ে তোকে কল করবো।”
আমি হেসে ফোন রেখে দেই। দাদীজান আমার মাথায় হাত রেখে বলেন, “আল্লাহর হাওলা আল্লাহর কাছে আমানত, সহীহ সালামত ফিরে আয় সেই দোয়া করি। আর যে দোয়া শিখাই দিছি ঐটা যিকির করতে থাক। দেখবি সব মুশকিল আসান হই গেছে।”
মেয়েদের এই কঠিন মুহূর্তে সবচেয়ে আপনজন কাছে থাকা কতটা জরুরি আমি সেদিন তীব্রভাবে টের পেয়েছিলাম। তৈমুর আসার আগ অবধি সবাই আমায় ঘিরে থাকলেও আমার মনে শান্তি মিলছিল না, ও যখন তড়িঘড়ি করে এসে আমার হাত মুঠোয় নিয়ে বলে, “চিন্তা করোনা কিচ্ছু হবেনা। আমি আছি তো…” আমার বুকের বোঝা যেন অর্ধেক নেমে গিয়েছিল। আমি ঝাপসা চোখে ওকে দেখছিলাম, ওর এলোমেলো চুল, ঘামে ভিজে লেপ্টে যাওয়া শার্টের বুকের অংশ…. আমার মনে হচ্ছিল আমি আর কখনো ওকে দেখবোনা এটাই আমাদের শেষ দেখা।
।
আমার যখন হুঁশ ফেরে তখন তাকিয়ে দেখি দাদীজান আমার দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসছে। আমি ক্লান্ত গলায় বললাম, “আমি কষ্টে মরে যাচ্ছি আর তুমি এভাবে হাসতেছো? তুমি এতো পাষাণ?”
“যে ঘটনা ঘটছে তুই শুনলে তুইও হাসবি। ”
“কী হইছে বলো শুনি?”
“পরে কমু, আগে দেখ তোর মাইয়ারে। কইছিলাম না তোর ঝিঁ হইবো? দেখ আমার কথাই ফলছে।”
আমি চারদিকে তাকিয়ে বললাম, “উনি কোথায়? আর বাকিরাও কেউ নাই যে?”
উনি এবার হো হো করে হেসে উঠলেন, তার হাসির শব্দে চারপাশ মুখোরিত হয়ে উঠলো। তখন পাশের বেডের একজন বলল,”ঘটনা শুনো আমি বলি, তোমার হাজব্যান্ড এর কাহিনী এখন হাসপাতালের ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেছে। আমি আমার জীবনে এমন ঘটনার সাক্ষী হই নাই…..”
পুরো ঘটনা শুনে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার ভাগ্য আসলেই আমাকে প্রায়োরিটি লিস্টে থাকতে দিবেনা। কোথায় আমি আজকে সবার ফার্স্ট প্রায়োরিটি হবো তা না তৈমুর সেটাও কেড়ে নিলো! আমাকে ওটিতে ঢোকানোর কিছুক্ষণ পরেই নাকি সে সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছে। করিডরের বেঞ্চিতে আঘাত পেয়ে মাথাও নাকি অনেকটা কেটে গেছে। তাই বর্তমানে সবাই তাকে নিয়ে ই ব্যস্ত! সিরিয়াসলি ম্যান??
মাথায় ৪টা সেলাই নিয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে তৈমুর যখন আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকে ভস্মীভূত করছিলাম। সবাই চলে যাওয়ার পর সে আমার পাশে বসে বলল, “মৃত্তিকা তোমাকে একটা কথা কী বলা হয়েছিল?”
“কী?”
“তুমি দেখতে ভীষণ মায়াবী?”
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম, “আপনার এসব চালাকিতে আমি ভুলবো না। এটা কোনো কথা? সবাই কেমন হাসছে দেখুন। কী লজ্জা কী লজ্জা!”
“আমি কী বাসায় চলে যাবো? এখানে আমার নিজের ও ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। তুমি রাগ করো কি না সেই কারণে যেতে পারছিনা।”
“নাহ এক পা ও নড়বেন না।”
উনি আমার গালে হাত রেখে বললেন, “অনেক কষ্ট হয়েছে না?”
“হুম…”
“অসংখ্য ধন্যবাদ সোনা, আমাকে এতো সুন্দর একটা রাজকন্যা উপহার দিলে….”
আমি উনার দিকে চেয়ে হাসলাম। মনে মনে বললাম এই লোকটা একদম ভালো না মৃত্তিকা সে একটা ছদ্মবেশী। সে তার আসল চেহারা সবসময় লুকিয়ে রাখে। তুই তাকে একটুও ভালোবাসবি না একটুও না…..
চলবে,,