বেলাশেষে পর্ব-০৯

0
38

#বেলাশেষে
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ০৯

অনিরুদ্ধ পারমিতাকে নিয়ে গিয়ে উঠল কুয়াকাটার একটা হোটেলে। বাড়ি থেকে কিছুই আনেনি পারমিতা। দুই সেট রেডিমেট জামা কিনে দিল অনিরুদ্ধ। তারপর পারমিতাকে নিয়ে হোটেল রুমে গেল। একটানা অনেকক্ষণ জার্নি করে পারমিতা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। হোটেল রুমে গিয়ে বিছানায় বসল। অনিরুদ্ধ ঘরের দরজা আটকে দিয়ে আচমকা জাপ্টে ধরল পারমিতাকে। পারমিতার ওড়ানাটা গা থেকে একটানে খুলে ফেলে পারমিতার বুকের ভাঁজে মুখ গুঁজল অনিরুদ্ধ। আবেশে বিভোর হয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“এতদিন ভয়ে ভয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি। আদর করেছি। আজকের পর থেকে আর কোনো ভয় নেই।”
কথাটা বলেই পারমিতার গা থেকে ওড়নাটা টেনে খুলে ফেলল।

পরাগ যখন ওদের ব্যাপারে জানতে পারল। তার কিছুদিন পরেই পারমিতাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ঘুরতে যাওয়ার নাম করে একদিন কালী মন্দির থেকে বিয়েটা সেরে ফেলেছিল অনিরুদ্ধ। নিজের বিয়ে করা বউকে এতদিন শুধু দূর থেকেই ভালোবেসেছে অনিরুদ্ধ। আজ এত কাছে পেয়ে একদম হুঁশ নেই। পারমিতার কোমর জড়িয়ে ধরে, ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল অনিরুদ্ধ। পারমিতা খুব ছটফট করতে করতে একসময় থেমে গেল। অনিরুদ্ধ পারমিতার ঠোঁট ছেড়ে গলায় ছোটো ছোটো চুুমুতে ভরিয়ে দিল। পারমিতা বেসামাল হয়ে জড়ানো কণ্ঠে বলল,
“আমার খুব ভয় লাগছে।”
অনিরুদ্ধ পারমিতাকে কোলে তুলে নিল। বলল,
“ভয় নেই আমি আছি তো।”
আদরে, আবেশে পারমিতাকে পুরোপুরি উন্মাদ করে দিল অনিরুদ্ধ। অসহনীয় আদরের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলল পারমিতা। অনিরুদ্ধ নিজের মাঝে নেই। পারমিতার ননীর শরীরের বাঁকে বাঁকে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে দিতে ও অন্যএক জগতে চলে গেল। হুঁশ ফিরল রক্ত দেখে। পারমিতা দুইহাতে মুখ ডেকে শব্দ করে কেঁদে দিল। অসহ্য ব্যথায় পেট জ্বলে যাচ্ছে। এই প্রথম অনিরুদ্ধ বিরক্ত হলো। এত ন্যাকা মেয়ে অনিরুদ্ধ খুব কম দেখেছে। বয়স কম, একটু ন্যাকা তো হবেই স্বাভাবিক।

পাঁচদিন ওরা কুয়াকাটা রইল। তারপর রওনা হলো অনিরুদ্ধর বাড়ির উদ্দেশ্যে।

পারমিতার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পেশায় উকিল। ওনি অবশ্য বলেছিল, ছেলের নামে কেস দিতে। বাকিটা তিনি সামলে নেবে। পারমিতার বাবা রাজি হয়নি। মেয়ে যদি সবার সামনে অনিরুদ্ধকে চায়৷ তখন তার সম্মান থাকবে না। এমনিতেই তো মানসম্মান চলে গেছে। এর থেকে দুজনকে কোর্টের মাধ্যেমে বিয়ে দিতে চান তিনি। যেন অনিরুদ্ধ কখনো পারমিতাকে ছাড়তে না পারে। পারমিতার বয়স কম। আপাতত কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। তিনি স্ত্রীকে সাথে নিয়ে পারমিতার শ্বশুরবাড়ি গেলেন। সেখানের একটা মন্দিরে ধর্মীয় ভাবে পারমিতার বিয়ের ব্যবস্থা করা হলো। অনুরুদ্ধর হাতে পারমিতাকে তুলে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে চলে এলেন তিনি। সবাই কত জোড়াজুড়ি করল, কিছু খাওয়া জন্য। অন্তত মিষ্টিমুখ করার জন্য। ভুলেও কিছুই খেলেন না তিনি। মেয়ে যখন নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে। সংসার করুক। যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে। তখন কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া যাবে।
বাবা-মা চলে যাওয়ার পরে, পারমিতার একটু মন খারাপ হলো। তবে বাবা যে ওদের বিয়েটা এত সহজে মেনে নেবে পারমিতা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। অনিরুদ্ধর বাড়ির সবাই অবশ্য পারমিতাকে দেখে পছন্দ করেছে। শুরু হলো পারমিতার নতুন সংসার জীবন। প্রথম প্রথম বেশ কিছুদিন ভালো কাটলেও ওদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়ে গেল। একটা কাজে ভুল হলেই কথায় কথায় পারমিতার শাশুড়ি অনিরুদ্ধর কাছে পারমিতার নামে নালিশ দেয়। পারমিতা এই কাজ পারে না। ওই কাজ পারে না। এমন অকর্মার ঢেঁকিকে কি দেখে বিয়ে করেছে অনিরুদ্ধ। আসলে ওনার ক্ষোভ অন্য জায়গায়। ওনি ভেবেছিলেন, পারমিতার বাবার অবস্থা ভালো। যেহেতু বিয়েটা মেনে নিয়েছে। তাহলে অবশ্যই মেয়েকে কিছু না কিছু দেবে। অথচ বিয়ের একমাস হতে চলল, এখনো মেয়েকে কিছুই দেয়নি। আর না মেয়ে-মেয়ের জামাইকে নেমন্তন্ন করেছে। এই ক্ষোভ থেকেই তিনি পারমিতার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগলেন। প্রথম প্রথম শাশুড়ির কটুবাক্য শুনে অনিরুদ্ধকে বলে দিত পারমিতা৷ অনিরুদ্ধ পারমিতার হয়ে প্রতিবাদ করলেই ভদ্রমহিলা রেগে যেতেন খুব। ছেলের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতেন। ছেলেকে শাপশাপান্ত করে তারপর মরা কান্না জুড়ে দিতেন। প্রায় প্রতিদিনই সংসারে অশান্তি লেগে থাকতো। একসময় অনিরুদ্ধ বিরক্ত হয়ে মাকে কিছু না বলে উল্টো পারমিতাকেই বকাঝকা করতো। মানিতে নিতে বলত। পারমিতা ঠিকমতো কাজ যেহেতু করতে পারে না। বড়দের কথা একটু আধটু শুনতেই হবে। পারমিতার জেদ প্রচুর। ঝগড়া লাগলেই না খেয়ে থাকতো। নিজের হাত নিজে কেটে ফেলতো। প্রথম প্রথম অনিরুদ্ধ সময় নিয়ে পারমিতার রাগ ভাঙাত। কিন্তু আস্তে আস্তে মনের দিক থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যেতে লাগল। ইদানীং রাতে বাড়িতে থাকে না অনিরুদ্ধ। কোথায় যায়, সারারাত কোথায় থাকে, কি করে বলে যায় না। ফোন বন্ধ করে রাখে। চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে যায় পারমিতা। কেঁদেকেটে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলে। পরেরদিন বাড়িতে ফিরে এলে, পারমিতা কতভাবে জিজ্ঞেস করে, ‘কোথায় ছিলে সারারাত?’ অনিরুদ্ধ এক গাদা মিথ্যা কথা বানিয়ে বলে। পারমিতার বিশ্বাস হয় না। জেদ চেপে যায়৷ মুখে যা আসে তাই বলে দেয় অনিরুদ্ধকে। অনিরুদ্ধ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। পারমিতার গায়ে হাত তুলে। পারমিতা স্তব্ধ হয়ে যায়। এই অনিরুদ্ধকে চিনতে বড়ো কষ্ট হয়৷ অনিরুদ্ধ যে নিয়মিত নেশা করে বিয়ের পরে বেশ বুঝতে পারে পারমিতা। এই নিয়ে কিছু বললে পারমিতাকে মারধর করে অনিরুদ্ধ। আবার যখন নেশা কেটে যায়। রাগ নিয়ন্ত্রণ হয়। পারমিতার পা ধরে ক্ষমা চায় অনিরুদ্ধ। এভাবেই দিনগুলো যাচ্ছিল। একদিন অনিরুদ্ধকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল। অনিরুদ্ধর কাছে নেশাদ্রব্য পাওয়ার অপরাধে। অনিরুদ্ধর দাদা অনিরুদ্ধকে জামিন করিয়ে এনে রিহ্যাবে দিয়ে দিল। অনিরুদ্ধ কিছুতেই রিহ্যাবে যেতে চাইল না। লোকগুলো জোর করে অনিরুদ্ধকে নিয়ে গেল। দাদাকে শাসিয়ে গেল অনিরুদ্ধ। এসে যদি পারমিতাকে না পায়। পারমিতা যদি ভুল করেও অনিরুদ্ধর জীবন থেকে চলে যায়। দাদাকে নিজের হাতে খুন করবে অনিরুদ্ধ।

খবর পেয়ে পারমিতার বাবা পারমিতাকে নিয়ে গেল। তবে পারমিতার কি হলো কে জানে! শাশুড়ির হাত ধরে অভয় দিয়ে গেল। অনিরুদ্ধ রিহ্যাব থেকে ছাড়া পেলে পারমিতা আসবে। অনিরুদ্ধ যদি সত্যি সত্যিই ভালো হয়ে যায় পারমিতা অনিরুদ্ধর সাথেই সংসার করবে।

অনেকগুলো দিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে আবেগে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল আলোকপর্ণা দেবী। তবে মেয়েকে আর বলা হলো না। মেয়ের তোষকের তলায় তিনি অনেকগুলো হাবিজাবি লেখা কাগজ পেয়েছেন। কাগজ এমন ভাবে ভাঁজ করে সুঁতো পেঁচানো হয়েছে৷ খুলতে খুব বেগ হতে হয়েছে। তাবিজ পেয়েছেন সাথে আরও অনেককিছুই পেয়েছেন। তবে এই কাজ কে করেছে তিনি জানেন না। শুধু মনে হয়, অনিরুদ্ধই একাজ করেছে মেয়েকে বশ করার জন্য। মেয়েটা অনিরুদ্ধকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। এখনো বুঝে না। মেয়ের সাথে যখন অনিরুদ্ধর সম্পর্ক ছিল তখন অনিরুদ্ধকে ভালো লাগলেও এখন আর ভালো লাগে না। তিনি অনিরুদ্ধর প্রতি বড্ড বিরক্ত হয়ে পড়েছেন।

চলবে