সুপ্ত প্রেমের অনুরাগে পর্ব-০২

0
1

#সুপ্ত_প্রেমের_অনুরাগে🕊️
#পর্ব:দুই
#লেখনীতে: তামান্না ইসলাম কথা

নতুন ভোর, নতুন দিন, নতুন স্বপ্ন এক নতুন পথ চলা। প্রতিটি মানুষ এক নতুন দিনের অপেক্ষায় থাকে। যেই অপেক্ষায় মিশে থাকে এক নতুন পথ চলার গল্প। ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দ। রিকশার কিরিং কিরিং শব্দ। যান্ত্রিক শহরে শুরু হয় যান্ত্রিক মানুষের দৈনিক রুটিন মাফিক কাজ। ছুটে চলে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে।
সকালের মিষ্টি রোদ এসে চোখে মুখে পড়তেই চোখ দুটো খিচে নিলাম। কিন্তু রোদ যেন আজ পন করেছে তার ছোঁয়া দিয়ে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিবে। কিন্তু মাঝে মাঝে জানালার পর্দা সেটার ঘোর বিরোধ করছে। তবুও রোদ পর্দাকে বারবার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমার মুখে এসে লাগছে। বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে নিতেই ভয়ে আতকে উঠলাম। গায়ে থাকা চাদর শক্ত করে খামচে ধরে নিলাম। চোখ থেকে ঘুম গুলোও পালিয়ে গেল। একটু আগে যেই ঘুমের জন্য চোখ মেলতে ইচ্ছে করছিল না সেই ঘুম বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টাটা! বাই! বাই করে বিদেয় নিলো। অসভ্য লোকটাকে নিজের এতো কাছে দেখে হার্ট বিট দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করল। কি হলো বুঝতে পারলাম না কিন্তু অসভ্য লোকটা ঠিক বুঝতে পেরেছে আমি চিৎকার করে উঠব। যার জন্য আমার মুখ চেপে ধরলো।

“একদম শব্দ করবে না। আমার বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে।তাই কোন শব্দ হবে না।”

মুখটা আমার মুখের কাছে নিয়ে ধীরে ধীরে কথাটা বললো আদভিন। আদভিনের মুখে “আমার বাচ্চা” কথাটা শুনতেই ভাবনাতে পরে গেলাম এইটা ভেবে যে, মাত্রই আমাদের বিয়ে হলো এর মাঝে বেবি হলো কি করে?

“এই তো বিয়ে হলো এখনো কাছেই এলেন না তাহলে আমাদের বেবি এলো কি করে? অনলাইনে অর্ডার করেছিলেন?”

নিজের ভাবনায় বিভোর থেকেই আদভিনকে প্রশ্নটা করলাম। আমার প্রশ্ন শুনে আদভিনের কি হলো বুঝতে না পারলেও আদভিনের কপালে ভাঁজ ঠিক দেখতে পারলাম।

“আর ইউ কিডিং উইথ মি?”

আমার দুই বাহু চেপে ধরে কপালে ভাঁজ ফেলে কথাটা বললো আদভিন। নিজে কথাটা মনে হতেই দাঁত দিয়ে জিভ কেটে নিলাম। আমি তো সব কিছু ভুলে গেছি।
এই ভুলে যাওয়ার রোগ আমার ছোট থেকেই।‌ব্রেন‌ ড্যামেজ অল্প অল্প। যার জন্য আমার ভুলে যাওয়ার সমস্যা আছে।‌ আদভিনের দিকে তাকিয়ে বোকা হাসি দিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি দু’টো বাচ্চা কি সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। বাচ্চা দুজন দেখতে সম্পূর্ণ এক। বাচ্চাদের প্রতি আমার বরাবরই একটু বেশি দুর্বলতা কাজ করে। তাদের নরম তুলতুলে শরীর আমার বড্ড আদুরে লাগে। তাদের ছোট ছোট হাত-পা নেড়ে খেলা করে। আবার কখনো কখনো তাদের ছোট হাত গুলো গালে ছুঁয়ে দেয়।
বাচ্চা দু’টো দেখে নিজের অজান্তেই কপালে চুমু খেয়ে নিলাম। চুমু দিতেই হালকা নড়ে চড়ে উঠলো।

” বাবা-মা নিচে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমাদের নিচে যেতে হবে।”

“কিন্তু এরা?”

আমাকে কথাটা বলে আদভিন নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিল মাত্র। কিন্তু আমার কথা শুনে একবার বাচ্চা দু’টোর দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো।

“তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমরা এক সাথেই বাইরে যাবো। আর অয়ন সয়ন ঘুম থেকে উঠে যাবে একটু পরেই।”

আদভিনের কথা শুনে একটু অবাক হয়ে গেলাম। আমি ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে ওরা দুজন উঠে যাবে? এতো কনফিডেন্স? আদভিনকে আর কিছু না বলে চুপচাপ বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। কিছু বলতে গেলেই আবার কি থেকে কি বলে দিবে জানা নেই।

“এই যে অভদ্র লোক!”

ওয়াশরুমের দরজা কিংচিৎ ফাঁক করে বাচ্চাদের পাশে বসে ল্যাপটপে নিয়ে কাজ করা আদভিনকে ডেকে উঠলাম। কিন্তু আদভিন আমার কথার উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা ফিরে তাকিয়ে দেখলো না। মনে হচ্ছে আমার ডাক তার পর্যন্ত পৌঁছায়নি।

“এই যে বুড়ো ব্যাটা।”

এবারের ডাকটা যেনো টোটকার মতো কাজ করলো। ডাকটা শুনেই আদভিন ঝটপট আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো।

“বুড়ো ব্যাটা? তুমি এখানে বুড়ো ব্যাট দেখলে কোথায়? আর এলোই বা কোথা থেকে?”

“এখানে কি তৃতীয় কোন ব্যক্তি আছে? নেই তো। এখানে আপনি ছাড়া আর কে আছে? নাহ! তাহলে এবার লাগেজ থেকে আমার শাড়ি দিন।”

এক প্রকার বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আদভিনকে বললাম। কিন্তু আমার কথা সম্পূর্ণ আগ্ৰহ্য করে আদভিন নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। ভাবখানা এমন যেন কাজ আমার সবার আগে।

“নিজের জিনিস নিজে নিয়ে নাও। বুড়ো বয়সে এতো হাঁটা চলা করতে আমার অসুবিধা হয়।”

কথাটা বলতে বলতে ল্যাপটপে সমান তালে টাইপ করে চলেছে আদভিন। কথার টুনে বুঝতে পারলাম বুড়ো ব্যাটা বলাতে গায়ে লেগেছে। লাগুক তাতে আমার কি? বুড়োকে তো বুড়োই বলব। একটু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জামাকাপড় নিতে ভুলে গেলাম। আসলেই কি তাড়াহুড়ো? উহু! মনে এক রাশ বিষন্নতা নিয়ে উঠে যেতে হয়েছে। গতকাল আসার পর থেকে মায়ের সাথে আর কথা হয়নি। জানিও না মা কেমন আছে। চাচি আবার কোন কিছু করলো না কি তাও জানিনা। এসব ভাবতে ভাবতেই জামাকাপড় রেখেই চলে গেলাম। মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। আর এই সুযোগ লোকটা কাজে লাগাচ্ছে।

“ও গো শুনছেন! বলছিলাম একটু আমার শাড়িটা দিয়ে যাবেন।”

কথাটা একটু ন্যাকামি করেই বললাম। আমার এভাবে কথা শুনে আদভিন মুচকি হাসতে শুরু করলো। খচ্চর লোক একটা।

“শোন বউ গতরাতে তোমার যা দেখার তা তো আমি দেখেই নিয়েছি তাই এভাবে রুমে এলেও আমার সমস্যা ছিল না। এন্ড বাই দা ওয়ে বউ কালকে রাতে চুমু খাওয়া হয়নি তার আগেই তুমি ভয়ে ছিটিয়ে গেলে। থিস ইস নট ফেয়ার বউ।”

একটা মেরুন রঙের শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে এসে কথা গুলো বললো আদভিন। আদভিনের চোখে মুখে দুষ্টুমি বিদ্যমান। অপরদিকে আদভিনের কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেল সেই সাথে লজ্জারা এসে হানা দিলো আমার সমস্ত মুখ জুড়ে। লোকটা যে আমাকে লজ্জায় ফেলতেই কথা গুলো বলছে সেটা আদভিনের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আদভিনকে কিছু না বলে তার হাত থেকে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম। দরজার ওপাশে থেকে বাচ্চাদের কান্না ভেসে এলো। বুঝতে পারলাম অয়ন সনয় উঠে পড়েছে।

🍁🍁🍁🍁🍁

মাথায় কাপড় টেনে সয়নকে কোলে নিয়ে নিচে ড্রায়নিং টেবিলের সামনে আসতেই দেখি শশুর বাবা শাশুড়ি মা বসে আছেন। আমার মতো বয়সি একটা মেয়ে তাদের সামনে খাবার দিচ্ছে। আর আমার পাশেই অয়নকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আদভিন। ঘুমন্ত বাচ্চাদের যতটা না শান্ত মনে হয় জেগে গেলে ততটাই দুষ্টু হয়ে উঠে। তেমনি সয়ন। কোলে নেওয়ার পর থেকে হাত পা ছোড়াছুড়ি শুরু করছে। ভিজে থাকা চুল গুলো বাঁধা সম্ভব হয়নি বলে চুল গুলো ছাড়া ছিল। কিছু সামনে আসতেই সয়ন সেগুলো ধরে টানছে।

“আদি তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো তাড়াতাড়ি করে নাস্তা করো বৌমাকে নিয়ে। দুপুরের দিকে তো তরুর বাড়ি থেকে লোকজন চলে আসবে।”

আদভিনকে তাড়া দিয়ে কথাটা বললো আমার শাশুড়ি মা। উনার পোশাকে আভিজাত্য বোঝা যাচ্ছে। সে-ই সাথে এইটাও বোঝা যাচ্ছে উনি পোশাকাশে বেশ সৌখিন।

“আপনারে সবাই খেয়ে নিন আমি অয়ন স,,,”

“অয়ন আর সয়নকে রাখার জন্য লোক আছে বৌমা। তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। ঐতো ওরা এসে পড়েছে তুমি নানু ভাইদের ওদের কাছে দিয়ে আমাদের সাথে বসে পরো।”

শাশুড়ি মায়ের কথা বলার মাঝেই দুজন মেয়ে এগিয়ে আসতেই আদভিন অয়নকে তার কোলে দিয়ে আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো অপরজনের কাছে সয়নকে দিতে। কিন্তু সয়ন আমার কোল থেকে যেতে একটু রাজি না। মেয়েটি কোলে নিতে এলেই কান্না শুরু করে দিলো। কিন্তু মাথার মধ্যে হুট করেই শাশুড়ি মায়ের বলা “নানু ভাই” শব্দটা ঘুরপাক খেতে লাগল। অপরদিকে আদভিন বারবার চোখের ইশারায় বসতে বললো। তাই বাধ্য হয়ে সয়নকে কোলে নিয়ে নাস্তার টেবিলে বসে পরতে হলো।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

“গতরাতের কাজটা আজকে করি বউ?”

#চলবে