#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_তেরো
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
বকুলের কথাগুলো শুনে মুহুর্তের মধ্যেই ভ্রম রুড হয়ে গেল। কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বকুলকে শোধালো,
– বেশি বাড় বেড়ো না।
– কেন, কেন?
– গজিয়ে যাওয়া পাখনা ছেটে দেবো।
হাতটা শক্ত করে মুচড়িয়ে ভ্রমের থেকে ছাড়িয়ে নিল। নাকের উপর আঙুল ঘষে শোধালো,
– সেই অসৎ সাহস আছে আপনার?
– অসৎ সাহস?
– যে লোক স্ত্রীর গাঁয়ে হাত তুলতে চায় তার সাহস কে কি সৎ বলে আখ্যা দেওয়া যায়?
ভ্রম রেগে গেল। চোখদুটো বড় বড় করে শোধালো,
– ত্যাদড় মেয়ে একটা!
– তাতে আপনার কি?
– চলো আমার সাথে।
– কোথায়?
– গেলেই দেখতে পাবে।
– না বললে যাবো না।
– আরেঃ সমস্যা কি তোমার ভাই?
– কোনো সমস্যা নাই আপা।
– কি সাহস! আমাকে আপা বলছো?
মুহূর্তের মধ্যেই রাগটা ছড়িয়ে গেল। এদিকে বকুল’ও রাগ টা দারুণভাবে উপভোগ করছে।
– আমার রাগ বাড়িয়ে দিয়ো না মেয়ে। চলো আমার সঙ্গে।
– ঠিক আছে, চলুন।
বকুল সম্মতি দিতেই ভ্রম তার হাতটা নিজের কব্জায় নিয়ে নিল। সোজা হাঁটা ধরলো। যাওয়ার পথে দেখা হলো দিগন্ত আর রিমির সাথে।
– বকুল কে নিয়ে একটু কাজে যাচ্ছি। টেনশন করো না।
ভ্রম কে এদিকে যেতে দেখে কিছুটা ভয় পেয়েছিল রিমি। তবে পরমুহূর্তেই ভ্রমের কথায় কিছুটা সামলে উঠেছে। প্রতিত্তুরে সে মাথা নাড়িয়েছে। যা দেখে দিগন্ত কিছুটা ভড়কে গেল। রিমি কে জিজ্ঞাসা করলো,
– রিমি, বকুল অপরিচিত কার সাথে যাচ্ছে?
দিগন্তের কথায় রিমি ওদের দিকে চেয়ে দিগন্ত কে হাতে চড় দিলো। তাতে লাফিয়ে উঠে শোধালো,
– আরে মারছো কেন?
চমকে গেল রিমি। দৃষ্টি সরিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো দিগন্তের পানে। জোরপূর্বক হেসে বললো,
– সরি, সরি। ভেরি সরি! খেয়াল করিনি। আর কি বললে যেন?
– বকুলকে অপরিচিত লোকের সাথে যেতে দিলে কেন?
– আরে না না। অপরিচিত কোথায়!
– তাহলে কে ওটা?
– ওই ভাইয়া টা?
– হ্যাঁ।
– ওটা ওর বর। আই মিন হাসবেন্ড।
ভীষণ রকম অবাক হলো দিগন্ত। কি রিয়াকশন দেবে তা ভেবে পাচ্ছে না। অবাকতার সুর মুখে টেনেই জিজ্ঞাসা করলো,
– ও তাহলে মিসেস?
– হ্যাঁ, মিসেস। মিসেস ভ্রম তালুকদার।
– ওয়াও গ্রেট নেইম!
– ইয়াহ।
হাঁটতে হাঁটতে পা ভেঙে ফেলার উপক্রম হলো বকুলের। ভ্রম কে থামিয়ে দিল।
– আরে, আর কত হাটাবেন! আমি আর যেতে পারছি না। শাড়ি পড়ে এতদূর হাঁটা যায়?
বকুলের কথায় এক রহস্যময় হাসি উপহার দিল ভ্রম। মাথা উপর-নিচ নাড়িয়ে বিনাবাক্য ব্যয়ে বকুলকে কোলে তুলে নিল। আচমকা এহেন ঘটনায় তাজ্জব বলে গেল বকুল। ভ্রমের কোলে থেকেই নাড়াচাড়া করে শোধালো,
– আরে কি করছেন টা কি। ফেলে দিবেন নাকি। কোলে তুলেছেন কেন?
ভ্রম উত্তর দিলো না। কিন্তু বকুল থামলো না। পুরো গোগ্রাসে এটা ওটা বলতেই থাকলো। শেষে বকুলকে থামিয়ে দিতে ভ্রম রেগে মেগে এক লাগামহীন কথা বলেই দিল।
– বউকে কোলে নিয়েছি। যদি কাজে বিঘ্ন ঘটিয়েছো তো তোমার বরের দ্বিতীয় বিবাহ সম্পন্ন করবো। কোলে আছো, কোলেই থাকো।
– আপনি কিন্তু…
– হুট করে কোল থেকে নিচে পড়ে গেলে তখন বুঝবে মজা। তখন কিন্তু পতি পরমেশ্বর এসে কোনো সাহায্য করবে না।
কথা বললো না বকুল। তার তাল্লুক মশাই যে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে এতেই যেন খুশিতে আট্টিখানা সে। তবে তা প্রকাশ করতে পিছপা হলো। কলেজের সবাই তাদের দিকে গোলগোল করে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তো বলেই দিচ্ছে,
“ওই দেখ, দেখ! ভ্রম আর তার ওয়াইফ বকুল। পারফেক্ট জুটি। তাদের অনলাইন কেমিস্ট্রি অনলাইনের থেকেও দারুণ।”
“যেমন?”
“অনলাইনে দেখবি অন্যরা এদের হাইলাইট করছে, আর অফলাইনে দেখবি আর নিজেরাই হাইলাইট হয়ে বসে আছে।”
“যা বলেছিস! এদের তো একসাথে দেখাই যায়না। কি বল তো, আমি যদি বকুলের জায়গায় থামতাম তাহলে তো পুরো কলেজ মাথায় তুলে নাচতাম। টপার+ক্রাশের বউ বলে কথা। কিন্তু এইসবের কিছুই বকুল মেয়েটার মধ্যে দেখিনা।”
“এইজন্যই তুই ভ্রমের বউ না বন্ধু হওয়ার সুযোগ পেয়েছিস।”
মুহূর্তেই হেসে উঠলো বন্ধুমহল। ভ্রমের ব্যাচমেট রা তাদের নিয়ে বলছিলো। এদিকে কিছুটা পথ এগিয়ে ভ্রম থেমে গেল। সতর্কতার সাথে বউকে কোল থেকে নামিয়ে দিল।
– কি হয়েছে?
– আমার সামনে একটু দাড়াও তো।
– কেন?
– আগে দাড়াও, তারপর বলছি।
বকুল স্বামীর কথা মতো তার বরাবর দাড়ালো। ভ্রম বকুলকে পুরোটা পরখ করে নিলো। শাড়ি হিজাব সবই ঠিক আছে, তবে এইভাবে বন্ধুদের সামনে নিয়ে যেতে মন চাইছে না। একমাত্র বউ বলে কথা। নজর তো দেওয়াই যাবেনা। ঠোঁট কামড়ে বকুলকে জিজ্ঞাসা করলো,
– এপ্রোন কোথায় তোমার?
– কেন? ওটা তো… ওটা ব্যাগে।
ভ্রম কথা বাড়ালো না। নিজের পড়নের এপ্রোন টা খুলে বাড়িয়ে দিল বকুলের দিকে।
– এইটা পড়ে নাও।
কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে নিল বকুল।
– কেন? শাড়িতেই ঠিক আছি আমি।
– কথা না বাড়িয়ে পড় তো। বউ আমার না তোমার।
– নিঃসন্দেহে আপনার।
– তাহলে স্বামীর কথা মানো।
বকুল অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো ভ্রমের পানে। লোকটার মনে মনে যে এই থাকবে, তা তো জানা ছিল না।
– এটা হবে আমার গাঁয়ে?
বলেই পড়তে শুরু করলো। উত্তর দিল ভ্রম,
– হবে। ঢিলেঢালা হলেও এইটা পড়তে হবে।
– এইতো পড়ে নিলাম।
– হুম, এইবার চলো।
বলেই পা বাড়ালো সামনের দিকে। গোল হয়ে বসে থাকা কতগুলো ছেলের দিকে তারা এগিয়ে গেল। ভ্রম কে দেখেই চিল্লিয়ে উঠলো বন্ধুসকল।
– আরে ইয়ার। তোর এখন আসার টাইম হলো?
– একটু লেট হয়ে গেল।
– আয়, বোস।
বলেই বন্ধুরা জায়গা করে দিল। পাঁচজন ছেলের মাঝে একজন মেয়েকেও চোখে পড়লো বকুলের। মেয়েটা আগ বাড়িয়ে ভ্রম কে জিজ্ঞাসা করলো,
– হে! তুমি তাহলে বকুল। রাইট?
মেয়েটার কথায় মৃদ্যু হাসলো বকুল। তার বলার আগেই ভ্রম বলে দিল,
– হ্যাঁ, আমার বউ। মিসেস ভ্রম /তালুকদার /ইহান যাই বলিস না কেন।
– ফাইনাললি বউ পেয়ে গেলি দোস্ত।
হেসে দিলো ভ্রম। বকুলকে সকলের পরিচয় দিতে বললো,
– লুক বকুল। এরা হচ্ছে আমার ঢাকার ফ্রেন্ড। ইয়াদ, ফাহাদ, আমরিন, ফায়াজ আর তিলক।
ভ্রমের কথা শেষ হতেই কুশলাদি বিনিময় করে নিল বকুল। ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করতে লাগলো একে অপরকে।
~~
খানিকটা চিন্তিত হয়ে চেয়ারের হাতলে ভর দিয়ে কপালে হাত ঠেকিয়েছেন আমরিনের বাবা। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ওনার সহধর্মিণী। শাড়ির আঁচল আঙুলে পেচিয়ে পেচিয়ে স্বামী কে শোধালেন।
– ব্যাট্যা তো ওখানে গেল। সামলাতে পারবে তো? চোখের সামনে ভ্রম ছেলেটার সাথে অন্য মেয়েকে সহ্য করতে পারবে? ও আমরিনের বাবা। আমার না খুব চিন্তা হচ্ছে। যা করার করো আমি কিন্তু আমার মেয়ের কষ্ট লাঘব চাই। মেয়েটা আমার বড্ড আদুরে। ভীষণ রকম ভালোবাসি আমি।
– হ্যাঁ হ্যাঁ! ভালো তো আমিও বাসি। তুমি চিন্তা করো না। আমি থাকতে আমার মেয়ে আর তোমাকে চোখের জল ফেলতে হবে না। আমরিন কে ওখানে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়েছি। আশা রাখছি প্ল্যান A শুরু হয়ে গিয়েছে। যদি কাজে না আসে তবে প্ল্যান B এবং C তো আছেই। শুরু থেকে পিছিয়ে যত যাবে মেয়েটা তত ভয়ানক প্ল্যানের স্বীকার হবে। তবে আমার মতে সহজেই মেয়েটার মরে যাওয়া উচিত। তবুও মেয়ের আনন্দের স্বার্থে প্রতিটা প্ল্যানে দারুণ দারুণ মৃ/ত্যু কে স্বাগত জানিয়েছি। মেয়েটা সরে গেলেই রাস্তা ক্লিয়ার। তারপর আমার মা আমরিন আর ভ্রম ছেলেটা। বিয়ে দিয়ে একদম নাতি-নাতনিদের কথা বলবো।
চকচক করে উঠলো আমরিনের মায়ের মুখ।
– সত্যি বলছো তো?
– তবে আর বলছি কি! আর শোনো, ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে নাও। আমরা মেয়ের কাছে যাচ্ছি।
স্বামীর কথায় আনন্দে প্রতিত্তুর করলেন না। বিবেকহীন মনটা নিয়ে গোছগাছ করতে গেলেন; কারোর সংসার ভাংতে!
ইন’শা’আল্লাহ চলবে।
পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। পরবর্তী তে কি হতে যাচ্ছে তা আন্দাজ করুন!
#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_চৌদ্দ
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
বন্ধুমহলে পরিচিতি এবং আনন্দসময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমরিন আওয়াজ তুললো। কণ্ঠে তার রহস্য লেপ্টে আছে।
” গাইস! অনেক তো হলো চলো তবে একটু আধটু এঞ্জয় করা যায়। ”
আমরিনের কথায় সকলে সম্মতি দিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
” ইয়েএএ। ”
বকুল ভ্রু উঁচিয়ে আমরিনের পানে তাকালো। যা দেখে আমরিন পেছনে হেলে হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করলো,
” বকুল কি কিছু বলবে? ”
বকুল চোখযুগল ছোট ছোট করে নেয়। স্পষ্ট ভাষায় বলে,
” এঞ্জয়? ”
” হ্যাঁ! এঞ্জয় বলতে বুঝিয়েছি সবাই বিয়ার খাবে। আমি অলরেডি অর্ডার দিতে বলেছি। কলেজ ক্যাম্পাসে তো খাওয়া যাবে না তাই আমরা বাহিরে লেকের পাড়ে গিয়ে খাবো। সেই এরিয়া টা আমার চাচ্চুর তাই কোনো চাপ নেই। ”
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বকুল কিছু বলতেই নিচ্ছিলো কিন্তু তার বলার আগেই ভ্রম আওয়াজ তুললো,
” না না, আমরিন। একদমই না! বাসায় যেতে হবে। আজ বিয়ার ছাড়াই এঞ্জয় হোক! ”
প্রতিবাদ করলো সবাই। ইয়াদ ভ্রমের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো,
” আরে দোস্ত। কিছুই হবে না। তুই তো এর আগেও খেয়েছিস, আজ না করছিস কেন তবে? ভাবি সাথে বলে! ”
হেসে উঠলো সবাই। ভ্রম ইয়াদের হাতটা সরিয়ে নিল। বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে শোধালো,
” তুই একটু বেশিই বুঝিস ভাই। ওর জন্য কেন খাবো না? ও আমায় কিছুই বলবে না। জাস্ট আমার মুড নেই আজ, তাই খাবো না। ”
” তাহলে আজ খেয়ে প্রুভড করে দে তোর কথার এ-ই সত্যতা। ”
ভ্রম ওর কথায় হাত বাড়িয়ে নামিয়ে নিল। ভ্র দুটো সংকুচিত করে শোধালো,
” মাথা ফাথা গিয়েছে? ”
” না না। কোনো কিছুই মানি না। ইয়াদ যা বলেছে সলিড কথা বলেছে। তোকে তাই করতে হবে! ”
তিলক মাঝে কথা বলে উঠলো। (শুভ্রের ফ্রেন্ডস— ইয়াদ, ফাহাদ, আমরিন, ফায়াজ আর তিলক।) ফ্যাসাদে পড়লো ভ্রম। আজ মাথাটা তার দারুণ চক্কর দিচ্ছে। বাসায় গিয়ে তার অনেক কাজ। অনেক মানে অনেক। বকুলকে তার আজ অনেক কিছুই বলার আছে। তার যে মত বদলেছে তা অতি শীঘ্রই জানানো উচিত। তাইতো আজ নেশাদ্রব্য কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। এদিকে আমরিনের হাবভাব ও তার ভালো ঠেকলো না। এইতো কয়েকদিন আগেই তাকে পেতে কত পাগলামি আর আজ? যেনো কিছুই হয়নি!
বকুলের প্রশ্ন কানে এলো ভ্রমের।
” আপনারা বিয়ার খান? ”
ভ্রম বকুলের পানে তাকালো। প্রশ্নটা সে তার দিকে তাকিয়ে করছে তবে উদ্দেশ্য সকলকে। মেয়েটা চোখ ছোট ছোট করে আছে। ফাহাদ তখন উত্তর দিলো,
” আরে ভাবি বিয়ার ই তো। খাওয়াই যায়। ”
বকুল নিঃসংকোচে নাক সিটকায়। তার চোখে মুখের রাগের ছাঁপ স্পষ্ট প্রকাশিত হলো। সেভাবেই সে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমর (রাঃ) বর্ণিত রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করেছে অতঃপর তা-থেকে তওবা করে নি, সে আখিরাতে তা-থেকে বঞ্চিত থাকবে।[মুসলিম ৩৬/৮, হাঃ ২০০৩, আহমাদ ৪৬৯০]’
” আরে ইয়ার! কাম অন। সেই আদি যুগে পড়ে আছো। একটু আধটু খেলে কিচ্ছু হয়না। আর আমাদের মধ্যে ভ্রম তো সুপারম্যান। একটা কেন দশটা খেলেও ওর তাল ঠিক থাকে। তাই ভাবি কুল! ”
বকুল থামলো না। রাগটা সারা শরীরে শিরশির করে ছড়িয়ে পড়লো। ইসলাম পরিপন্থী ব্যবস্থা কে সে আদিযুগ বলে আখ্যা দিচ্ছে? রাগটা প্রকাশ করলো না। সকলের উদ্দেশ্যে ফের শোধালো,
” أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ أَنَّه“ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أُتِيَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِه„ بِإِيلِيَاءَ بِقَدَحَيْنِ مِنْ خَمْرٍ وَلَبَنٍ فَنَظَرَ إِلَيْهِمَا ثُمَّ أَخَذَ اللَّبَنَ فَقَالَ جِبْرِيلُ الْحَمْدُ للهِ÷ الَّذِي هَدَاكَ لِلْفِطْرَةِ وَلَوْ أَخَذْتَ الْخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتُكَ تَابَعَه“ مَعْمَرٌ وَابْنُ الْهَادِ وَعُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ وَالزُّبَيْدِيُّ عَنْ الزُّهْرِيِّ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত তিনি বলেন, ইস্রা (মি’রাজের) রাতে ঈলিয়া নামক স্থানে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে শরাব ও দুধের দু’টি পেয়ালা পেশ করা হল। তিনি উভয়টির প্রতি লক্ষ্য করলেন। এরপর দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলেন। তখন জিব্রীল (‘আঃ) বললেনঃ যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহ্র জন্য যিনি আপনাকে স্বভাবজাত দ্রব্যের দিকে পথ প্রদর্শন করেছেন। অথচ যদি আপনি শরাব গ্রহণ করতেন তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। [৪৮] ”
লম্বা এক কথায় আমরিন ‘চ’ সূচক শব্দ তুললো। এদিকে ভ্রমও চুপ। অন্যায় তো সে সেটা জানে। তার পরেও খেয়েছে। এখন অন্যায় করে কিভাবে অন্যায় কথা বলে সে। তাই চুপটি মেরে বউয়ের কথা শুনছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা এটে নিচ্ছে যে আর কখনোই নেশাদ্রব্য কিছু পান করবে না।
” গাইস! আমাদের ছোট ভাবি খাবে না, ইটস ওকে! আমরাও খাবো না। আমরা বরং বিয়ারের পরিবর্তে জুস আর কিছু পেস্ট্রি খাই! ”
” অওঅঅঅঅ!”
সকলের মুখটা পানসেটে হয়ে গেল। তবুও নিজেদের ওয়েট বজায় রাখতে সিদ্ধান্ত নিলো কলেজ ফাংশনের সমাপ্তি ঘটলেই তারা সবাই যাবে সিসির মিডনাইট বুফ্যে তে।
~~
কলেজ ফাংশনে বান্ধবী কে নিয়ে কত কি করবে ভেবেছিল রিমি। কিন্তু সেসবের কিচ্ছুটি হলো না। বাগড়া দিয়ে দিলো বান্ধবীর পতিপরমেশ্বর ভ্রম। ইচ্ছামতো লোকটাকে সে মনে মনে গালাগাল দিয়েই যাচ্ছে। গালাগালের কিছুটা আওয়াজ বিহীন কথায় ঠোঁট আওড়াচ্ছে। মাঝে সাঝে মুখ বাঁকিয়েও দিচ্ছে। তখনই প্রবেশ ঘটলো দিগন্তের। হাতে তার দুখানা চকলেট ফ্লেবার কোণ আইসক্রিম।
রিমির উত্তপ্ত মেজাজ কে ঠান্ডা করতেই কৌশলে আসছি বলে চলে গিয়েছিল ক্যান্টিনে। সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেল। রিমি ঠোঁট মুখে অঙ্গভঙ্গি কেমন যেনো করছে। দাঁড়িয়ে গেল সে। শব্দহীন পা ফেলে দাঁড়িয়ে থেকেই উঁকি মারলো। সাথে সাথে একটা ছোট মোটো হাত তার গাল স্পর্শ করলো। ছোট হাত, কোমল চামড়া কিন্তু ব্যাথ্যা? সেটার পরিমাণ তো বিশাল ঠেকছে।
হাতের অধিকারীনি বোধহয় নিয়মিত কাউকে থাপ্পড় দেয়। থাপ্পড় খেয়ে হাতের দুটো আইসক্রিমের থেকে একটা মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। দিগন্ত গালে হাত দিয়েই সামনের রমনী কে শোধালো।
” মিনিট বিশেকের মধ্যে কি তোমার কোনো অসুখ হয়েছে মিস মিরি? ”
দিগন্তের গালে স্পর্শ করে ব্যাথা পাইয়ে দেওয়া রমনী স্বয়ং রিমি। দিগন্তের গলার আওয়াজ পেয়ে কল্পনার অবসান ঘটালো। ঘাড় বাকিয়ে লোকটিকে উপর নিচ দেখলো।
” আপনি আসলেন কখন? ”
দিগন্ত গালে হাত ঠেলেই উত্তর দিলো।
” থাপ্পড় টা দিলে যখন! ”
” আমি তো ওই একজনকে কল্পনায় মারছিলাম। ”
” তবে বাস্তব হলো কি করে? ”
দিগন্তের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না রিমি। তবে প্রথমে বলা কথার ত্রুটি তুলে ধরলো,
” আপনাকে আমি আর কতবার বলবো আমার নাম রিমি, নট মিরি! ”
রিমির কথায় দিগন্ত গাল ছেড়ে মাথা চুলকে নিলো। ছেলে হয়ে মেয়ের হাতস থাপ্পড়ের প্রসঙ্গ টা চরম লজ্জার। তাই এড়িয়ে গেল। রিমির চলতি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হাতে থাকা আইসক্রিম টা বাড়িয়ে দিল এবং শোধালো,
” ওই একি হলো। তোমার এতো কঠিন একটা নাম! উচ্চারণ করতে গেলে নাড়ি ভুড়িতে জটলা পাকে। আর এইটা ধরো। খেয়ে মাথা ঠাণ্ডা করো। ”
রিমির রাগটা বাড়ন্ত হয়ে সপ্তম আকাশ ছুঁলো। বড় একটা শ্বাস নিয়ে ত্যাগ করে শোধালো,
” কিহ? আমার নাম উচ্চারণে নাড়িভুড়ি তে জটলা পাকে? সিরিয়াসলি, আপনার আমার এই অতি সহজ নামটা কঠিন মনে হয়? মাত্র দুটো অক্ষর আর দুটো কার চিহ্ন। ”
দিগন্ত প্রতিত্তুরে ঠোঁট টিঁপে হেসে আইসক্রিম টা হাতে ধরিয়ে বললো,
” ফরেইনার! একটু তো সমস্যা হবে। ”
রিমি কিছু বললো না। সকাল থেকেই লোকটার সাথে সে। কথা বলতে বলতে অনেকটাই ফ্রি হয়েছে। কথার মাঝে সে লক্ষ্য করেছে লোকটা তার কথা বলার সময় হাতে মুখ ঠেকিয়ে কেমন করে যেনো তাকায়। মনের ভুল ভেবে এ অব্ধি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে এখনকার কথাটা তার কাছে আজব যুক্তি বলেই স্থান পেলো। এইতো কতো স্মুথলি কথা বললো বাংলায়। অথচ নাক উল্টোপাল্টা ডেকে দোষ দিচ্ছে বিদেশের। মাঝে মধ্যে মনে হয় লোকটা তাকে ইচ্ছে করেই ডাকে।
~~
ভ্রম কে কাঁধে করে নিয়ে আসছে একজন সার্ভেন্ট। হোটেল রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে সার্ভেন্ট টা ভ্রম কে সাদা চাদরের উপর শুইয়ে দেয়। রুমটা অবশ্য আলো-অন্ধকারযুক্ত। চারিপাশে মোমবাতি জ্বালানো। গোলাপের কড়া সুঘ্রাণ নাক বরাবর ছুঁয়ে দিচ্ছে। আজ নিজের মধ্যে নেই সে। নেশালো চোখে ঝাপসা চোখে চারিপাশে চোখ বুলালো। আড়াল থেকে কঠোর আওয়াজ আসলো এক রমনীর।
” যাওয়ার সময় দরজা টা অটো লক করে যাবে। কড়া সিকিউরিটি চাই! ”
সার্ভেন্ট টা কেবল মাথা নাড়িয়ে চোখ নিচে রেখেই পা বাড়ালো দরজার বাহিরে। সাথে সাথে আরেকটু আলোকিত হলো রুম। অল্প আলোয় দৃশ্যিত হলো আবেদনময়ী রূপ!
চলবে ইন’শা’আল্লাহ।