#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_উনত্রিশ
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
হঠাৎই বকুলের লক্ষ্য হলো ধ্রুব স্যার দ্রুততার সাথে মিহাদকে কোলে নিয়ে এগিয়ে আসছেন। বকুল অবাক হয়। সে থম মেরে দাঁড়িয়ে যায় সেখানেই। এদিকে ধ্রুব স্যার মিহাদকে তার কোলে দিয়ে এককথায় দৌড়ে কলেজের বহিরাপথের দিকে যায়। স্ট্রেইঞ্জ! এইরকম ব্যবহারের মানে কি। সামান্য কথাও কি তিনি বলতে পারলেন না? নিমিষেই মন খারাপ হলো তার। তবে তা আর বেশিক্ষণ টিকলো না। রিমি ডাক দিল। ক্যান্টিনে যেতে ডাকছে। দিগন্ত নাকি কিসব এক্সপ্লেইন করবে। বকুলের মুখে বিরক্তির মাত্রা ক্রমশ বাড়লো। দিগন্ত তো একটা অন্য রকমের ক্রিমিনাল। একে পুলিশে তো দেওয়াই উচিত! রাগ, ক্ষোভ নিয়ে সে পা বাড়ালো ক্যান্টিনের দিকে। মিহাদ আবার পেছনের দৃশ্য দেখে দেখে আঙুল চুষছে। বোধহয় পৃথিবীতে সবচেয়ে দারুণ মুহূর্ত, অনুভূতি এইটাই!
_________
বকুলকে বার কয়েক কল করার পরেও যখন রিসিভ করছিল না। তখন ওনার খেয়ালে আসে যে এই টাইমে তো বকুল মেডিকেলে। শত কল করলেও পাওয়া যাবেনা। এদিকে তিনি ওদের নতুন বাসার ঠিকানা তিনি জানেন না। তাই যেতেও পারছেন না। কল দিলেন ফুপুর নম্বরে। রিসিভ করলে তিনি নিজের পরিচয় জানান। তারপর বকুলের বলা সব কথাই এ টু যেড সব কথাই বললেন। সব শুনে ফুপুর মাথায় হাত। বকুল তাকে লুকিয়ে এই অব্ধি এসেছে অথচ সে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি! মেয়েটা তার ভাই-ভাবি, স্বামীর মৃত্যুর খুনীদের ধরিয়ে দিতে এতোটা তৎপর হয়ে ওঠলো অথচ মেয়েটা কিছুই জানালো না? এক আকাশ সমান অভিযোগ, অভিমান এসে উপচে পড়লো ওনার মুখে। তিনি জানতে চাইলেন,
“এখন কি করবেন?”
“আপনাদের পুরনো বাড়িতে তল্লাশি চালাবো আর সিক্রেট রুমটায় যাবো।”
“আমিও আপনার সাথে যাবো। কোথায় আছেন বলুন!”
“না না! আপনাকে আসতে হবেনা। শুধু শুধু কষ্ট করবেন। ওখানে আমি আর আমার একটা পুলিশ বন্ধু যাচ্ছি। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবই ভালো হবে।”
“আচ্ছা, রাখলাম।”
ফোন কেটে গেল। শায়ক ফোনটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে পুলিশ বন্ধু আসিফের দিকে তাকালেন।
“এখন ঘটনাস্থলে যাবো আমরা?”
“হ্যাঁ!”
“ঠিক আছে, চল। যাওয়া যাক।”
অতঃপর খানিক সময় বাদে শায়ক আর ওনার বন্ধু আসিফ পুরনো বাড়িতে প্রবেশ করে। খুঁটিগে খুঁটিয়ে তল্লাশি চালায়। তারাও সন্দেহভাজন কিছু পেল না। তারপর বকুলের ডিরেকশন অনুযায়ী সেই সিক্রেট রুমে যায়। তারা সিক্রেট রুমে প্রবেশ করে চারিদিকে চোখ বুলাতেই বুঝে যায় যে এই রুমটা বেশ পরিকল্পনা করে বানানো হয়েছিল। তারা এক এক করে কিনারা গুলো চেক দিল। যখনই দরজার পাসওয়ার্ডের কাছে গেল। তখনই নিজ থেকে দেয়াল খুলে কেউ প্রবেশ করলো। পড়নে তার কালো রঙের জ্যাকেট, প্যান্ট আর মাস্ক। চেনা যাচ্ছেনা লোকটি কে। উপস্তিতি পেয়ে তারা দুজইনেই চমকে তাকায়। একইসাথে দুজন এগিয়ে যায় লোকটির কাছে। আর এটাই যেন ওদের সবচেয়ে বোকামি একটা কাজ! সুযোগ বুঝে লোকটি দক্ষ হাতে লুকায়িত স্প্রে টা স্প্রে করে দেয় ওদের মুখে। ওরা সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারায়। লোকটা পাজাকোলে করে দুজনকেই অন্য একটি রুমে নিয়ে যায়। বের হয়ে সে রুমে নিজের মন মতো একটা পাসওয়ার্ড দিয়ে দিল। তারপর মুখের মাস্ক টা সরিয়ে ফেলে দিল ফ্লোরে। উন্মুক্ত হলো চেনা একটু মুখ! ধ্রুব স্যারের মুখ। তিনি নিজের চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করলেন। রাগে তার কপালের শিরা, উপশিরা ফুলে উঠলো। চেঁচিয়ে বলে উঠলেন।
“বকুল! কেম এমন টা করলে। এক্ষুণি তো সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল না! কেন এত বেপরোয়া তুমি?”
সাথে সাথে ধ্রুবের ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো আমরিন নামটি। এই সময়ে আমরিনের ফোনকল? চিন্তিত হয়ে রাগী মুখ নিয়েই কলটা রিসিভ করলো। ‘বলো’ বলার আগেই আমরিনের কণ্ঠ ভেসে আসলো।
“তোমার খেলা শেষ ভ্রম! তোমার চালাকি ধরে ফেলেছি। তা বেশ! তোমার ফুপু, বাড়ির কাজের লোক এদেরকে আমি কিডন্যাপ করেছি। তোমার কাছে সময় বিশ মিনিট। হয় তুমি আমায় বিয়ে করে ওদের উদ্ধার করবে, নয়তো তোমার জেদের কারণে দুটো নিরীহ মানুষের প্রাণ যাবে। যা করবে ভেবে করো। বাবা-মা কে তো হারিয়েছোই, এবার বাকিদের হারাবে? এজ ইউর উইশ! আব… হ্যাঁ! বকুল বোধহয় রাস্তায়। বাড়ি ফেরার পথে। ওর সাথে যা খুশি তাই হতে পারে। মাইন্ড ইট! গুড বাই! বেস্ট অফ লাক!”
ধ্রুবের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত চললো। তড়িতবেগে ডায়াল করলো সারাফাত নামক সেইভ করা নম্বরে!
চলবে ইন’শা’আল্লাহ।
#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_ত্রিশ
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
সারাফাত আর ভ্রম দু’জনেই বাল্যকালের বন্ধু। কিন্তু ওই যে পড়াশোনার তাগিদ? যে কারণে আলাদা হয়ে যায় দু’জন। তারপর তকদিরের জোরে দু’জনের আবার দেখা হয়ে যায়। দায়িত্ব নেয় পরিবারকে বিপদ থেকে মুক্ত করবার। ততদিনে ভ্রম সকল রহস্যের সমাধানে নিজেকে পুরোটা সপে দেয়, আর পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব দেয় সারাফাত কে।
সারাফাত বেস্টফ্রেন্ডের কল পেয়ে দ্রুত রিসভ করে নেয়। ফোনটা কানে দিতেই শুনতে পায় ভ্রমের তাড়া দেওয়া আওয়াজ।
“তুই দ্রুত আমাদের সিক্রেট রুমে আয়। আয়না আর ফুপু কে আমরিন কিডন্যাপ করেছে। আমাকে দ্রুত যেতে হবে ওখানে। ”
সারাফাত সতর্ক হয়।
“কি বলিস কি! কিভাবে ও বুঝে গেল তোর স্মৃতি ফিরে এসেছে?”
“আমি তা জানিনা সারাফাত। আপাতত কোনো কিছু মাথায় আসছে না। তুই সিক্রেট রুম থেকে ওদের হসপিটালে ট্রান্সফার করে এন্টিডোট টা ইঞ্জেক্ট করে দে। এক ঘন্টার মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে। তারপর তোর সময় হলে তুই আমার ফরওয়ার্ড করা লোকেশন এ চলে আসিস, পুলিশ নিয়ে।”
সারাফাত আচ্ছা টুকু বলার’ও সময় পেল না। ফোনটা কেটে দিল ভ্রম। সারাফাত কিছু একটা ভেবে নিল। অতঃপর রওয়ানা দিল ভ্রমদের পুরনো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
__________
মিনিট খানেকের মধ্যে আমরিনের নম্বর থেকে ভ্রমের জন্য একটি লোকেশন চলে আসলো। ভ্রম কালবিলম্ব করলো না। সিক্রেট রুম থেকে বেরিয়ে রওয়ানা দিল সেই উদ্দেশ্যে। তবে যাবার আগে লোকেশন টা ফরোয়ার্ড করে দিল সারাফাত কে।
হসপিটালে এক এক করে পাক্কা চারজনের বডি গেল। সারাফাত ছুট্টে গিয়ে ডাক্তার কে ডেকে এনেছেন। চারজন কে ভালো ভাবে দেখতে দিলেন তারপর আড়ালে নিয়ে কানে কানে ভ্রমের এন্ডিডোটের কথা বলেন। ডাক্তারটি ঝামেলা করলো না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তিনি সেগুলো চারজনের শরীরে ইঞ্জেক্ট করে দিবেন বলে জানিয়েছেন। তারপর সারাফাত বুদ্ধি করে পুলিশ কল করে নিরাপত্তা চাইলো। সেখানে আবার দেরি হলো এক ঘন্টা। অবশেষে উপযূক্ত কারণ পেয়ে পুলিশ সেই চারজন পেশেন্ট কে কড়া নিরাপত্তায় রাখলো। সে স্বত্বির শ্বাস ফেলে এবার নিজের ড্রেসআপ চেইঞ্জ করতে ওয়াশরুমে গেল। আপাতত সেই স্থানে তাকে ভ্রমের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে এক্টিং করতে হবে।
ভ্রম যত দ্রুত পারে পৌছাঁলো। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় টা দেখে নিল। যে জায়গায় তাকে আসতে বলেছে সেখানে সে দু’মিনিট আগে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু এখন অব্ধি তাকে নিতে কেউ আসলো না। বিরক্তিতে সামনে থাকা পাথর টায় লাথি মেরে দূরে কোথাও সরিয়ে দিল। খানিকক্ষণ পর তাকে নিতে আসে একটা হোয়াইট নেভি ব্লু’র এডজাস্ট করা একটি কার। ভ্রমের কিছু বলার আগেই, গাড়ির লোকেরা তাকে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। ভ্রম কিছু করতে গেলে তাকে বারবার না করা হচ্ছে। ব্যাপারটা মস্তিষ্ক বুঝলেও মানতে চাইছে না ব্যথিত মন। তখনই তার একটা কল আসে। ছ্যালাগুলো বলায় সে কলটা স্পিকারর দেয়। আমরিনের কণ্ঠ শোনা গেল।
“কংগ্রেটস মিস্টার ভ্রম! আপনার সুইট সান এখন আমার বাড়িতে, আমার রুমের দোলনায়। আর মা বকুল একা রাস্তার একটি গাছতলায়, আহারেহ! বেচারি, ছেলে কে হারিয়ে চোখে সরষে ফুল দেখছে।”
“কি চাইছিস তুই”
“তোকে!”
ভ্রম রাগে কলটা কেটে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিল গাড়িতে। কেউ সেটা একবার’ও তোলার আগ্রহ পেলনা। তবে লোকেরা এবার তাকে স্প্রে করে শুইয়ে দিল নিজেদের উরুতে! সে পুরোপুরি জ্ঞান হারায়নি। ভাবছে, কল্পনার সাগরে ডুবছে। কিন্তু সে বুঝতে পারলো না এমনটি হচ্ছে কেন! তারপর ই খেয়াল হলো, এইটা হয়তো স্প্রে করা মেডিসিনের প্রভাব।
________
বকুল রাস্তায় এদিক সেদিক খুঁজছে। দুটো মহিলা এসে তাকে কিছু একটা শুকিয়েছিল। তারপরই সে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা ওর কোল থেকে মিহাদ কে নিয়ে নিচ্ছিল, তবুও সে কিছু করতে পারছিল না। আর বাবুকে নিয়ে যাওয়ার আধা ঘন্টা পরে ধীরে ধীরে ও বাস্তবে ফিরে। মহিলা দুটোর মুখে মাস্ক ছিল, পোশাক আশাকে গেয়ো গেয়ো ভাব ছিল। ওদের সাথে তার তো কোনো শত্রুতা নেই, তবে মিহাদ কে কেন নিয়ে যাবে? বকুলের মাথায় কিছু ঢুকলো না। তার হাত পা কাঁপছে। সেভাবেই দৌড়াতে দৌড়াতে কলেজে প্রবেশ করলো। ধ্রুব স্যারের নাম্বারের আশায়। তারপর একটা নাম্বার পেয়েও গেল। নাম্বারটায় ডায়াল করতেই থাকলো, একের পর এক। কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করলো না। বকুলের এবার পাগলপ্রায় অবস্থা।
চলবে ইন’শা’আল্লাহ।