রেড হার্ট পর্ব-৩১

0
1

#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_একত্রিশ
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা

ভ্রমের সামনে সারিসারি কতগুলো বিল্ডিং। আমরিনের দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী সামনের বিল্ডিং টা তে তাকে যেতে হবে। পায়ের গতি বাড়িয়ে দ্রুততার সাথে বিল্ডিং-এ প্রবেশ করলো। ম্যাসেজ টা চ্যাক করে দেখলো সাত তলায়। এগিয়ে গিয়ে লিফট এ উঠে গেল। লিফটের দরজা বন্ধ হবার সাথে সাথে সে এক হাত বাড়িয়ে দরজা টা বন্ধ হওয়া আটকালো। কালবিলম্ব না করে বাইরে বেরিয়ে আসলো। মস্তিষ্ক এইটা জানালো যে আমরিন আন্দাজ করবে যে সে শর্টকাট নিতে লিফট ইউজ করবে। আর তখন যদি তাকে লোক নিয়ে ধরে ফেলে? একা তো কোনো কিছুই সম্ভব হবে না। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে সিড়ি দিয়ে সে উঠছে। সাত তলা। যেতে একটু কষ্ট হবে। তবে দু’জনের প্রাণের কাছে সাত তলা কিছুই না।

নির্দিষ্ট কক্ষে প্রবেশ করে ভ্রম থ হয়ে গেল। পুরো রুমে কেবল সোফা সেট ছাড়া আর কোনো ভারী আসবাব নেই। স্ট্যান্ডে ঝুলে আছে লাল রঙের শেরওয়ানি, পাগড়ি, পাজামা। আমরিনের গায়ে লাল লেহেঙ্গা, ভারী গহনা আর মেকআপ। সে সোফায় বসে একমনে ফোন চাপছে। নজরে ভ্রম কে পড়তেই সে ফোনটা তৎক্ষণাৎ রেখে দিল। এক দৌড়ে ভ্রমের অতি নিকটে এসে দাড়ালো। মুচকি হেসে ভ্রমকে শুধালো,

” আমি জানতাম, তুমি আসবেই আসবে! দ্যাটস্ মাই কিং। ”

জড়িয়ে ধরতে এলেই ভ্রমা বাধা দিল। হাত উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলল। জানতে চাইলো ফুপু, আয়না আর তার সন্তান কোথায়। ভ্রমের প্রশ্নে সে সোফায় গিয়ে বসলো। পায়ের ওপর পা তুলে টেবিলে থাকা মিষ্টির প্যাকেট থেকে একটা মিষ্টি ওঠালো। রসটা চিপে পুরোটা মুখে দিয়ে বললো,

” আগে বিয়েটা করে নিই ভ্রম ডার্লিং? ”

ভ্রমের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। শিরা, উপশিরা দৃশ্যমান হলো। হাতদুটো মুষ্টিবদ্ধ করে আমরিনের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বিপরীতে বসলো। কণ্ঠে দ্বিগুণ কাঠিন্যতা মিশসিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

” ফুপু, সন্তান আর আয়না কোথায়? ”

আমরিনের পুনরায় একই উত্তর দিল। মেজাজ চড়ে গেল তার। তবে তা প্রকাশ করলো না। আমরিন কিছু একটা ইশারা করলো। সাথে সাথে কতগুলো গার্ড এসে অবস্থান নিয়ে দাড়ালো। আমরিন ভ্রমকে শোধালো গার্ড চারিদিকে ছড়িয়ে আছে, চাইলেই সে বাইরে যেতে পারবে না। তা শুনে ভ্রম ফিচেল হেসে প্রতিত্তুর করলো।

” তুই যদি ওদের কে আমার সামনে অক্ষত অবস্থান না আনিস তো আমি বিয়ে করবো না। এই আমি শুয়ে গেলাম। ”

বলার সাথে সাথে ভ্রম সোফায় লম্বা হয়ে আয়েশ করে এমনভাবে শুয়ে গেল যেন সে ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমরিন অবাক হলো। বুঝতে পারছেনা কি করবে। মিনিট খানেক ভেবে আবার ইশারা করলো গার্ডদের। তারা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আয়না, ফুপু আর বাবুকে নিয়ে আসলো। সবাই অক্ষত অবস্থায় থাকলেও মুখে টেপ আর হাত পা বাঁধা আছে। দু’জনকেই হুইল চেয়ারে আনা হয়েছে। বাবু কেবল একটা পুরুষ গার্ডের কাছে। আমরিন ভ্রমকে উঠে দেখতে বললো। ভ্রম উঠলো। চেনা মানুষদের কাছ থেকে দেখে তার দৃষ্টি শীতল হয়ে আসলো। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো যেন। ফুপু আর আয়না তাদের চোখের মণিকে জীবন্ত অবস্থায় দেখে কিছু বলতে চাচ্ছে। যা তাদের চোখে স্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠেছে। ভ্রম চোখ সরিয়ে আমরিনের চোখে চোখ রাখলো। বললো,

” এবার পুরো কাহিনী এক্সপ্লেইন কর। কারণ আমার ফুপু তো সব জানে না। তোকে বিয়ে করার পর ঘর সংসার তো তোকে নিয়েই করবো। তো শুরু থেকে শেষ অব্ধি তোর প্ল্যান বল। ফুপু, আয়না দুজনের ই জানা দরকার। ”

আমরিন কিছুটা ভাবুক হলো। ভ্রমকে বললো তার কাছে ইলেক্ট্রিক্যাল যা কিছু আছে তা যেন দিয়ে দেয়। ভ্রম তাকে অনুসরণ করলো। পকেটে থাকা ফোন আর মাইক্রো রেকর্ডার টা টি-টেবিলে রাখলো। আমরিন ফিচেল হাসলো। বললো,

” আর যা যা লুকিয়ে এনেছো, তাও বের করে দাও। ”

ভ্রম বড় একটা শ্বাস নিয়ে না বোধক মাথা নাড়ালো। আমরিন তুষ্ট হলো না। সে একটা চাল চাললো। বললো,

” ওকে, যদি আমার গার্ড তোমার কাছে লুকায়িত কিছু পায় তো ডিরেক্ট তোমার সন্তান কে শ্যুট করবো। ”

ভ্রম এতে অতি সাহস ব্যাপার টা দেখিয়ে দিল। আমরিনের কথায় সম্মতি জ্ঞাপন করলো। তার কানের ভাঁজে ছোট করে একটা মাইক্রোফোন আর রেকর্ডার আছে। যেটায় আমরিনের কথা রেকর্ড হবে, সেইসাথে সারাফাত তার সিক্রেট রুমে সরাসরি শোনা যাবে। যেখানে তার রক্তের সম্পর্কের আরো কয়েকজন রয়েছে। সত্য জানবার অপেক্ষায়।

এবার একটি গার্ড এগিয়ে আসলো। ভ্রমকে চেক করতে নিলে ভ্রম নির্বিকার চিত্তে সঠান হয়ে দাড়ালো। যা দেখে আমরিন ভ্রু কুঁচকে নিল। কিছু একটা ভেবে গার্ড কে ফিরে যেতে বললো। গার্ডটি নিজ অবস্থানে ফিরে আসলো। এবার আমরিন পুরোটা বলতে শুরু করলো।

” ভ্রমকে আমি সেই মেডিকেলের প্রথম বর্ষ থেকেই ভালোবাসি। ওর জন্য আমি কলেজ মাইগ্রেট করেছি। তারপর হুট করে জানতে পারি ও বিয়ে করেছে। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এতোদিন যাকে ভালোবাসি বলবো বলে অপেক্ষা করছিলাম, তাকে অন্য কেউ নিয়ে নিলো? কিছুতেই এইটা মানতে পারছিলাম না। তাই একদিন খুব রাগারাগি করে সুইসাইড এটেমপড করি। তারপর হসপিটালে ইয়াদের কাছে শুনি ভ্রম নাকি এই বিয়েটা মানে না। তখন একটু আশার আলো খুঁজে পাই। আব্বু-আম্মু আমার ব্যাপার গুলো আগাম জানতো। তাই সেদিন হসপিটালেই আমার আব্বু-আম্মু ওকে আমার জন্য প্রোপোজাল দেয়। কিন্তু সে? একে তো বিয়ে করে সে শান্তিতে নেই, তার ওপর আমার ভালোবাসা গ্রহণ করলো না। আব্বু-আম্মুকে যা নয় তা বলে অপমান করলো। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় সে ব্রডকাস্টে শেয়ার করলো। আমার আব্বু-আম্মুর সম্মানহানী হলো। তার পরেও চুপ ছিলাম। কিন্তু যেদিন বন্ধুমহলে ভ্রম বকুল কে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিল তখন আমার সহ্য হয়নি। যা বোঝার বুঝে গিয়েছিলাম। সারা দেশে ওরা যেভাবে বিচরণ করছিলো, তখন তাদের খারাপ বানাতে হাতিয়ার হিসেবে পরকীয়া টাই অবশিষ্ট ছিলো। তাই এইটা কে কাজে লাগাই। ভ্রম আর বকুল, দুজনের ডিএনএ কালেক্ট করে আমার ভেতরে ভ্রমের ডিএনএ আর বকুলের মধ্যে দিগন্তের ডিএনএ প্রবেশ করিয়ে সেরোগেটিং পদ্ধতি অনুসারে গর্ভধারণ করি। বকুল কে আবার দিগন্তের সাহায্যেই আমার কাছে আনাই। এছাড়াও, অবশ্য ভেবেছিলাম বকুল সত্যিকারের মা হলেও আমি মা হবার অভিনয় করবো। পরবর্তী তে আব্বু বলে যে রিস্ক যেন না নেই। তাই এইটা করেছিলাম। তারপর প্ল্যানমাফিক তারা দুজইনেই সকলের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে যায়। সবকিছু ঠিকই চলছিলো। কিন্তু একদিন ডাক্তার কল করে সব এলোমেলো করে দেয়। তিনি জানান। আমার মধ্যে দিগন্তের ডিএনএ আর বকুলের মধ্যে ভ্রমের ডিএনএ দিয়ে….। আমি আবারো ভেঙে পড়ি। আব্বু কে সবিটা জানাই। তিনি এ বাড়ির প্রত্যেকের ছবি চান। তার মধ্যে বকুল কে দেখে বাবা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। জিজ্ঞাসা করলে তিনি এক অসম্ভব কথা বললেন। বাবার কালো টাকার কারবারির সব এভিডেন্স বকুলের বাবা কালেক্ট করেছিল। তার থেকে বাঁচতে তিনি পরিকল্পনা করে পুরো পরিবার কেই নিঃশেষ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বকুল কিভাবে বাঁচলো তাই তিনি বুঝতে পারলেন না। তারপর শুরু হয় আমাদের বাবা মেয়ের প্রতিশোধ। আব্বু আগের নিয়ম ই আমাকে অনুসরণ করতে বললেন। তাই আমি ভ্রম কে বাঁচিয়ে পুরো পরিবার কে ধ্বংস করতে বোম ব্লাস্ট করাই। আমি আগ থেকেই ভ্রম কে সেইফলি অন্য জায়গায় রেখে আসি। তারপর ভাগ্যক্রমে ফুপু, বকুল আর আয়না বেঁচে যায়। বাকীরা মারা যায়। এই কেইসে বাবার বন্ধু ছিলেন ইনচার্জ। তাই তিনি ভুয়া খবর ছড়ালেন। মনগড়া তথ্য দিয়ে বাঁচিয়ে দিলেন। এদিকে ভ্রম কে মেমোরি লসের মেডিসিন দিইয়ে অতীত মুছে ফেলতে শুরু করি। বাবার সাহায্যে তার চাকরি জোগাড় করে দিই। নতুন নামকরণ করে নাম দিই ধ্রুব। বাবা-মা সহ সকলেই ওর সামনে ভালো হবার চেষ্টা করি। হয়েও ছিলাম। কিন্তু মাঝে কি এমন হলো তা টের পেলাম না। বুঝতেই পারিনি ভ্রমের স্মৃতি ভুলার পরিবর্তে স্মৃতি ফিরে এসেছে। তারপর কলেজে প্রথমদিন জয়েন হয়ে ভ্রমের সাথে দেখা করতে গেলাম। সেখানে মিহাদ কে কোলে দেখে শেল্ফের আড়ালে গিয়ে লুকোলাম। তারপরই তাদের বাবা-ছেলের কথাগুলো শুনে ফেলি। কিছু না বলেই রাগে ক্রোধে স্বশব্দে বেড়িয়ে বাবা কে কল করি। যাবার সময় এতোদিন ধরে আটকে রাখা দিগন্ত কে ফের কলেজে দেখতে পাই। এখানেও কাঠখড় পোড়াতে হয়। বকুলের নাম করে ডেকে তাকে সরিয়ে দিই। তারপর কিডন্যাপ করি ফুপু আর আয়না কে। শেষমেষ বাবা মিহাদ কেও আনতে বললেন, তাই মিহাদকে মায়ের থেকে কৌশলে নিয়ে এসেছি। এবার বিয়ে করবো। বিয়ের পর এখান থেকে বেরিয়ে মিহাদ কে বোর্ডিং এ দিয়ে আসবো, বকুল কে মেরে দিয়ে, আমি, আব্বু-আম্মু, ভ্রম, ফুপু, আয়না একসাথে থাকবো। সুখে সংসার করবো। ”

পুরোটা কথা উপস্থিত সকলেই মনযোগ দিয়ে শুনলো। ভ্রম কেবল পলক ফেলে একটা মিষ্টি উঠিয়ে মুখে নিল। খেতে খেতে পানিও খেলো। আয়েশ করে বসে বলতে প্রস্তুত হলো নিজের অজানা কাহিনী। তখনই একটা গার্ড দ্রুত এগিয়ে আসলো। আমরিন কে জানালো কেউ একজন এখানে প্রবেশ করার জন্য দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি কে জিজ্ঞাসা করাতে গার্ডটি প্রতিত্তুর করে বললো যে তিনি ভ্রমের মেডিসিন চেকার।

আমরিন কিছু একটা ভেবে আসার অনুমতি দিল। তার কিছুক্ষণ পরেই উপস্থিত হলো স্বয়ং সারাফাত। ভ্রম একপল সেদিকে তাকিয়ে বলা আরম্ভ করলো,

” আমার কাহিনীর টুইস্ট শুরু আমরিনের বোম রেডি করা থেকে। রাতে বকুল আমায় লেবু জল খাওয়ানোতে নেশার ভাব ভোরেই কেটে গিয়েছিল। তারপর নিচে পানি খেতে যাওয়ার সময় আমরিনের প্ল্যান শুনে ফেলি। পানি না খেয়েই নিজের রুমে এসে ভাবতে শুরু করি। মাথায় এলো মা-বাবার মিথ্যে মৃত্যু আর কায়দা করে বকুল, ফুপু,আয়না কে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া। তারপর কন্টাক্ট করি সারাফাতের সাথে। ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ে। ছোট বেলার বেস্টফ্রেন্ড সে। তখন কিছুদিন আগেই তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়। পুরোটা ওকে খুলে বলি। সে দায়িত্ব নিয়ে আব্বু-আম্মু কে সরিয়ে নিজের বাসায় গিয়ে রেখে দেয়। তারপর বাকিদের বাহিরে পাঠিয়ে দিই। জীবনের রিস্ক নিয়ে শুয়ে থাকি ঘুমের ভান ধরে। তার কিছুক্ষণ পরেই আমরিনের লোকেরা সে অবস্থায় ঘুমের ওষুধ ইনজেক্ট করে আমায় তুলে নিয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি ক্যালেন্ডারের পাতায় পাঁচ মাস এগিয়ে। আগের কিছু মনে করতে পারছিলাম না। ওদিকে আমার পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে সারাফাতের অবস্থা যায় যায়। সে থেকেই সে তার বাবাকে সবটা জানিয়ে আমার আব্বা আম্মাকে যতটুকু পেরেছে জানিয়ে পুরনো বাড়িতে একটা সিক্রেট রুম বানিয়েছে, আমাদের নতুন বাড়িতে যাওয়া আসা করেছে। একদিন শপিং মলে আমরিনের সাথে আমায় দেখে ও হতবাক হয়ে যায়। আমাদের পিছু পিছু গিয়ে বাসার ঠিকানা জোগাড় করে নেয়। আমাদের ব্যাপারে স্টাডি করে ও কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। তারপর বাবার সহযোগিতায় আমার ডাক্তারের সাথে মেডিসিন চেকার হিসেবে যোগ দেয়। সুযোগ বুঝে ও একদিন আমায় এক এক করে ওর সাধ্যমতো সব জানায়। সব মেডিসিনের ছবি নিয়ে ভালো একজন ডাক্তারের সাথে কন্টাক্ট করে। তিনি জানান যে ওগুলো স্মৃতি শক্তি হ্রাসের ওষুধ। ও এসে এসব আমাকে জানালে চিন্তায় পড়ে যাই। তারপর ও দায়িত্ব নিয়ে কৌশল করে ওষুধ গুলো পালটে দেয়। স্মৃতি ইমপ্রুভের মেডিসিন ছিল ঠিকই তবে গায়ে লেখা ছিল স্মৃতি হ্রাসের ওষুধ। এই করতে করতে আমার স্মৃতি পুরোপুরি ফিরে পাই। তারপরই সব ক্লিয়ার হয়ে যায়। এরমধ্যে আমরিনের বাবা মা আমায় চাপ দিতে থাকে যেন ওকে বিয়ে করে নিই। আমি সময় চাই। চাকরি তে জয়েন হই। মুখোমুখি হই বকুলের। চিনবো না ভেবে আমরিন নিশ্চিন্ত থাকে। এদিকে আমি আমার প্রমাণ জোগাড় করতে শুরু করে দিই। বকুলের বাবা – মা কে পরিবারসমেত হত্যার প্রমাণ আর আমাকে পরকিয়ার জালে ফাঁসানোর প্রমাণ। আলহামদুলিল্লাহ, পেয়েও যাই। কিন্তু মাঝে ঘেটে দেয় বকুল। চতুর বান্ধবী রিমি কে নিয়ে আমার সিক্রে রুমে প্রবেশ করে। হাই সিকিউরিটি দেওয়াতে টের পেয়ে যাই। তারপর সেদিন বাবার বন্ধু শায়ক আংকেল কে দেখি। মাথা পুরো উলটে যায়। ওদের কে আটকাতে সেখানে যাই। অজ্ঞান করে ওই রুমে রেখে দিই। তারপরই মেসেজ পাই আমরিনের। সব ফেলে সারাফাত কে কল করে ওদের সবাই কে প্রোটেক্ট করতে বলে চলে আসি এখানে। আমার তো কেবল দরকার ছিল স্বীকারোক্তির। ব্যস কাজ হয়ে গেছে। এবার আমরিন তুমি যেতে পারো। বিদায়ের ক্ষণ এসেছে তোমার দুয়ারে। ”

ভ্রমের মুখে চোখে নজরকাড়া হাসি। সে অট্টহাসি হাসছে। আমরিন ভয় পেয়ে যায়। জিজ্ঞাসা করে এর মানে কি। প্রতিত্তুরে ভ্রম কেবল হাসলোই। সারাফাত এগিয়ে এসে ভ্রমের পাশে বসে বললো,

” সরি টু সে ম্যাম, সেই সারাফাত আর কেউ না। আমিই! ”

উপস্থিত ফুপু, আয়নার চোখে স্বস্তির দৃষ্টি। আমরিন খানিকক্ষণ ভাবলো। ভাবতে ভাবতে বললো, তোমার বাবা-মা তো বেঁচে নেই! ভ্রম হাসি থামিয়ে দৃষ্টি কঠিন করলো। বললো,

” কানে তোর ময়লা জমেছে কিংবা বুদ্ধিতে ঘুণ ধরেছে। মাথা ঘাটা! ভাব কি বলেছি। আমার বাবা-মা বেঁচে আছে! বুঝেছিস? ”

আমরিন চুপসে গেলো। তার বাবা-মা যে এই ফ্ল্যাটেই আছে। তাদেরকে সে ঘরবন্দি করে রেখেছে। ওদেরকে মুক্তি না করলে যে ওরা ফাঁসিতে ঝুলবে! সে চকিতে দাঁড়িয়ে যায়। দ্রুততার সাথে দরজার কাছে যেতেই দরজার তালা বরাবর গুলি এসে লাগে। ভয়ে পেছন ফেরে তাকায়। গুলিতে সাইলেন্সার থাকার ফলে গুলির আওয়াজ হয়নি। হলে বোধহয় মিহাদ বাবুর কানে সমস্যা হতো! পেছনে দরজা ঠেলে দাঁড়িয়ে আছে শ’তেক খানেক পুলিশ। টাকা দিয়ে কেনা গার্ডদের অধিকাংশ দের তারা বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছে। কেবল উপস্থিত আছে পুলিশ ফোর্স, ভ্রম, আমরিন, ফুপু, আয়না, মিহাদ। কয়েকজন পুলিশ রুমগুলো চেক করতে উদ্যত হলো। সাথে সাথে আমরিন নিজের গলায় ছুড়ি ধরলো। বললো, রুম চেক করলে সে সুইসাইড করবে। পুলিশ অফিসার মুচকি হাসলেন। তাদের কে নিজেদের কাজ করতে অনুমতি দিলেন। এরম কতশত আমরিন কে তিনি দেখে রেখেছেন! এ তো পায়ের ধুলো! তারপর রুম থেকে পাওয়া যায় আমরিনের বাবা-মা কে। লেডি কন্সটেবল গিয়ে ফুপু আর আয়নার বাঁধন খুলে দেন। বাকিদের এরেস্ট করে পুলিশের জিপে ওঠানো হলে আমরিনের বাবা অভিশাপ দিয়ে গেলেন। সুযোগ পেলে তিনি আবারো মারবেন। আবারো! আর আমরিন রাগে, কান্নায় কনের সাজে জিপে ওঠলো। আমরিনের মা এখনো সব দোষ ভ্রমকে দিয়ে যাচ্ছেন। যা দেখে তাকে মেন্টাল ট্রিটমেন্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফুপু এসে ছেলে আর সারাফাত কে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। আয়না গিয়ে মিহাদ কে কোলে নিল। কিছুক্ষণ মতবিনিময় আর অভিযোগের পালা শেষে রওয়ানা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। অতএব, আলহামদুলিল্লাহ, সকলেই নিরাপদ এখন!

এদিকে ছেলেকে না পেয়ে বকুলের পাগলপ্রায় অবস্থা। বাসায় এসে ফুপু আয়না কে না পেয়ে অবস্থা আরো গুরুতর হলো। রিমি কে কল করে বলাতে সে মুখ ফসকে বলে দিল, হয়তো তাদের কে কিডন্যাপ করা হয়েছে। সে থেকেই বকুল দেয়ালে মাথা ঠুকে রক্ত বের করে দিয়েছে। পড়নের সাদা এপ্রোন টাও তার খোলা হয়নি। এপ্রোনে লেগে আছে এবড়ো থেবড়ো দাগ। শেষ আপনজন বলতে কেবল ফুপু, আয়না আর মিহাদ ই ছিল। এরা আর কেউ নেই! ভাবতেই বকুলের মাথা ঝিম ধরছে। ও আর একমুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলো না। মস্তিষ্কে একটা কথাই ঘুরছে। সবাইকে যখন হারিয়ে ফেলেছে তখন সে কেন একা বাঁচবে? তার তো বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এই ভেবেই সে ছাদে উঠলো। বাসাটা তাদের আটতলা। এখান থেকে পড়ে গেলে নিশ্চয়ই তার ফের শ্বাস নিতে হবে না! ভাবতেই তার নিঃশ্বাস ভর্তি দীর্ঘশ্বাস আর প্রশান্তি বেড়িয়ে এলো। জীবনের সবচেয়ে বড় সাহস টা দেখিয়ে বসে পড়লো রেলিং এ। চোখ বন্ধ করে একবার মিহাদের মুখখানা স্মরণ করলো। গালে কান্নার শুকিয়ে যাওয়া দাগ বিদ্যমান। সেইসাথে টপটপ করে একের পর এক অশ্রুপাত হচ্ছে! সে একগাল হেসে নিচের দিকে অগ্রসর হলো!

চলবে ইন’শা’আল্লাহ।